ঢাকা মেডিকেল কলেজের সকল তথ্য 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ

 ঢাকা মেডিকেল কলেজ 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (Dhaka Medical College) ১৯৪৬ সালের ১০ জুলাই একক ভবন দিয়ে যাত্রা শুরু করে। এখন প্রায় ২৫ একর জমির উপর স্থাপিত একটি কলেজ ভবন, নতুন এক্সটেনশন, একটি অডিটোরিয়াম, একটি পারমাণবিক মেডিসিন সেন্টার, ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য আবাসিক হল, বার্ন ইউনিট ইত্যাদি নিয়ে গঠিত। দেশসেরা এই মেডিকেল কলেজে মেডিকেল শিক্ষার পাশাপাশি, প্রতিদিন প্রায় ৩৫০০+ রোগীকে  চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ সংক্ষিপ্ত ইতিহাস  

ঢাকা মেডিকেল কলেজ বাংলাদেশের প্রথম সরকারি মেডিকেল কলেজ, এটি ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাসে অবস্থিত।

১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর, অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। শুরুতে কলেজটিতে কোনো নিজস্ব ভবন ছিল না। শিক্ষার্থীদের ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের ২২ নং ওয়ার্ডে ক্লাস করতে হতো।ফিজিওলজি ও এনাটমি বিভাগের জন্য কোনো শিক্ষক ছিল না।ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচটি ছিল সম্পূর্ণ নতুন শিক্ষার্থী। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যাচ থেকে পঞ্চম ব্যাচ পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থী ছিল কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে মাইগ্রেটেড।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে  এই মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের অনেক অবদান আছে। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজের সকল তথ্য  

       ঢাকা মেডিকেল কলেজ

ঢামেক (DMC)

প্রতিষ্ঠাঃ ১৯৪৬ সাল

প্রতিষ্ঠাতাব্রিটিশ ভারত সরকার 
ধরনমেডিকেল কলেজ
প্রাতিষ্ঠানিক অধিভুক্তিঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
অধ্যক্ষমোঃ শফিকুল আলম চৌধুরী
পরিচালকব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক
শিক্ষক (সংখ্যা)২৩৪ জন 
শিক্ষার্থী (সংখ্যা)১০০০ + (প্রতি বছর ২৩০ জন ভর্তির সুযোগ পান)
ইন্টার্ন (সংখ্যা)১৫০ জন 
কর্মকর্তা ও কর্মচারী৫৬০ জন নার্স ও ১১০০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী
স্নাতক কোর্স ১ টি এমবিবিএস ( কিছু ডিপ্লোমা কোর্স আছে)
স্নাতকোত্তর কোর্স ৪২টি 
ঠিকানাসেক্রেটারিয়েট রোড, ঢাকা, বাংলাদেশ
যোগাযোগ নম্বর০২ ৫৫১৬৫০০১ 
হট লাইন০২ ৫৫১৬৫০৮৮ 
ইমেইলprincipal@dmc.gov.bd
ওয়েবসাইটwww.dmc.gov.bdwww.dmc.edu.bd (নতুন)

আসন সংখ্যা 

২০২১ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ২৩০ জন ছাত্র ছাত্রী ভর্তি হয়। এর মধ্যে ১৯০ জন সাধারণ ও ৪০ জন কোটাধারী। ২০২০ সাল থেকে ১২৮ জন বিদেশী ছাত্র ছাত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরত আছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা

বাংলাদেশের যেকোনো শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান সহ উত্তীর্ণ হলে বাংলাদেশে মেডিকেল কলেজে গুলোতে ভর্তির জন্য আবেদন করা যায়। সারাদেশে মম্মেলিত পরীক্ষা হয়, তার মধ্যে নিজ নিজ পছন্দ বাচাই করতে হয়, সাধারণত ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হবার জন্য সেরা ২০০ এর মধ্যে রেজাল্ট থাকতে হয়। 

 ২০২৩ সালের জন্য, এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৯.০ থাকতে হবে। পার্বত্য জেলার প্রার্থী বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তা থেকে আগত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এই জিপিএ ৮.০। তবে কোন পরীক্ষায় গ্রেড পয়েন্ট ৩.৫ এর চেয়ে কম হলে শিক্ষার্থী আবেদনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তাছাড়া এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান বিষয়ে কমপক্ষে গ্রেড পয়েন্ট ৩.৫ থাকতে হবে।

বিদেশ থেকে পরীক্ষা 

বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিক এবং ‘ও’ লেভেল ’এ’ লেভেল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা মেডিকেলে ভর্তি হতে আগ্রহী হলে, তারা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো হলো এসএসসি এবং এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি, ‘ও’ লেভেল বা ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি, পাসপোর্টের সত্যায়িত কপি এবং ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডার। আবেদনপত্র স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে। আবেদনপত্র পূরণ করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে ব্যাংকে জমা দিতে হবে। বিদেশি নাগরিকদের জন্য আবেদন ফি ২০০০ টাকা এবং ‘ও’ লেভেল বা ‘এ’ লেভেল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য আবেদন ফি ২০০০ টাকা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা

একটি আবেদনের মাধ্যমে সকল মেডিকেল কলেজে আবেদন করা যায়। আবেদন এবং প্রবেশপত্র গ্রহণের পরে শিক্ষার্থীদের একটি পরীক্ষায় (এমসিকিউ) অংশগ্রহণ করতে হয়। ১০০ নম্বরের এই পরীক্ষার সময়সীমা ১ ঘন্টা। আর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ১০০ নম্বর। পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান থেকে ৩০, পদার্থবিদ্যা থেকে ২০, রসায়ন থেকে ২৫, ইংরেজি থেকে ১৫ এবং সাধারণ জ্ঞান, ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিষয় থেকে ১০টি প্রশ্ন থাকে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির খরচ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ। তাই এখানে ভর্তির জন্য বেশি অর্থ প্রদানের প্রয়োজন নেই। শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র ভর্তি ফি হিসেবে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। এই ভর্তি ফি দিয়ে মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সরঞ্জাম ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়।

পড়ার খরচ

ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীদের অন্যান্য খরচ বহন করতে হয়। যেমন, থাকার খরচ, খাওয়ার খরচ, বইপত্রের খরচ, এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত খরচ। এই খরচের পরিমাণ শিক্ষার্থীর পড়াশোনার মেয়াদ, থাকার ব্যবস্থা, এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত পছন্দের উপর নির্ভর করে।

সাধারণভাবে, ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। এই খরচের মধ্যে থাকার খরচ, খাওয়ার খরচ, বইপত্রের খরচ, এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

প্রথম বর্ষের জন্য একটি মানব কঙ্কাল কিনতে হয়, জা কিনতে প্রায় ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা লাগতে পারে। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অনুষদ ও বিভাগ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ  বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং মর্যাদাপূর্ণ মেডিকেল কলেজ। কলেজটিতে চারটি অনুষদ এবং ২২টি বিভাগ রয়েছে।

অনুষদ ও বিভাগসমূহ

  • চিকিৎসা অনুষদ:
    • শারীরিক চিকিৎসা বিভাগ
    • অস্ত্রোপচার বিভাগ
    • শিশুরোগ বিভাগ
    • স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ
    • চক্ষুরোগ বিভাগ
    • নাক, কান, গলা বিভাগ
    • দন্তচিকিৎসা বিভাগ
    • মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগ
    • রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগ
    • প্যাথলজি বিভাগ
    • ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ
    • কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ
    • মেডিক্যাল প্যাথলজি বিভাগ
    • বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগ
    • মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ
    • প্যাথলজিক হিস্টোলজি বিভাগ
    • ফার্মাকোলোজি বিভাগ
    • অ্যানাটমি বিভাগ
    • ফিজিওলজি বিভাগ
  • প্যারামেডিক্যাল অনুষদ:
    • নার্সিং বিভাগ
    • ফার্মেসী বিভাগ
    • রেডিওথেরাপি বিভাগ
    • মেডিক্যাল ইমেজিং বিভাগ
  • অন্যান্য বিভাগ:
    • ডিপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজি (ডিএইচটি) বিভাগ
    • ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল টেকনোলজি (ডিএমটি) বিভাগ
    • অনার্স ইন নার্সিং (বিএন) বিভাগ
    • অনার্স ইন ফার্মেসী (বিফার্ম) বিভাগ

ঢাকা মেডিকেল কলেজের কোর্স ও বিষয়

ঢামেকের কোর্স ও বিষয়গুলি নিম্নরূপ:

কোর্স

  • ৫ বছর মেয়াদি এমবিবিএস কোর্স

বিষয়

প্রথম বর্ষ

  • অ্যানাটমি
  • ফিজিওলজি
  • বায়োকেমিস্ট্রি
  • প্যাথলজি
  • মাইক্রোবায়োলজি

দ্বিতীয় বর্ষ

  • ফার্মাকোলজি
  • কমিউনিটি মেডিসিন
  • ফরেনসিক মেডিসিন
  • সার্জারি
  • ওষুধবিজ্ঞান

তৃতীয় বর্ষ

  • মেডিসিন
  • সার্জারি
  • শিশুরোগ
  • স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা

চতুর্থ বর্ষ

  • মেডিসিন
  • সার্জারি
  • শিশুরোগ
  • স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা

পঞ্চম বর্ষ

  • ইন্টার্নশিপ

ঢাকা মেডিকেল কলেজের আবাসিক হল

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক)-এর পাঁচটি আবাসিক হল রয়েছে। এগুলি হল:

  • ড. আলিম চৌধুরী হল
  • ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম হল
  • ড. এম.এ. রশিদ হল
  • ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ হল
  • ড. জাহানারা ইমাম হল 

প্রতিটি হলের নিজস্ব একটি ক্যান্টিন, লাইব্রেরি, জিম এবং খেলার মাঠ রয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের লাইব্রেরী

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক)-এর একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি রয়েছে। লাইব্রেরিটিতে প্রায় ৫০,০০০ বই, জার্নাল এবং অন্যান্য প্রকাশনা রয়েছে। লাইব্রেরিতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে বই রয়েছে। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ পরিচালিত গবেষণা 

ঢামেকের গবেষণা বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার দ্বারা অর্থায়ন করা হয়। এছাড়াও, ঢামেকের গবেষকরা আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুদানের জন্য আবেদন করেন।

ঢামেকের কিছু উল্লেখযোগ্য গবেষণার মধ্যে রয়েছে:

  • কালাজ্বরের চিকিৎসায় অ্যাম্বিজোম ও প্যারোমোমাইসিন প্রয়োগের কার্যকারিতা পরীক্ষা
  • কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন ওষুধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতির পরীক্ষা
  • টিউবারকুলোসিস, ম্যালেরিয়া এবং ডায়রিয়া রোগের প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য নতুন পদ্ধতির উন্নয়ন
  • ক্যান্সারের নতুন ওষুধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়ন

ঢামেকের গবেষণা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ঢামেকের গবেষণার মাধ্যমে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ওষুধ আবিষ্কার করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের মানুষকে আরও ভালো স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে সহায়তা করছে।

ঢামেকের কিছু গবেষণার ফলাফল আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও, ঢামেকের গবেষকরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সম্মেলনে তাদের গবেষণা উপস্থাপন করেছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংগঠন 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলামনাই ট্রাস্ট

ট্রাস্টটির অফিস ঢাকা মেডিকেল কলেজ ভবনের নিচতলায় অবস্থিত। ট্রাস্টটির একটি পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে, যা ট্রাস্টটির কার্যক্রম পরিচালনা করে। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত হন।

ঢামেকসু

ঢামেকসু ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পরপরই ঢামেকসু বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নেয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ঢামেকসুর তৎকালীন সহ-সভাপতি গোলাম মাওলা সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন।

স্বাধীনতার পর ঢামেকসু দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ঢামেকসু বিভিন্ন শিক্ষামূলক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ছাত্রদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে।

ঢামেকসু একটি গৌরবময় ইতিহাসের অধিকারী। এটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ঢামেকসু ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করে এবং দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়নে অবদান রাখে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের বিশিষ্ট প্রাক্তনী 

    • ড. এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামান (১৯০৬-১৯৬৯): বাংলাদেশের প্রথম কৃষিমন্ত্রী।
    • ড. আবদুল লতিফ চৌধুরী (১৯০৬-১৯৭৫): বাংলাদেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
    • ড. আবদুল মান্নান (১৯০৬-১৯৭৫): বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী।
    • ড. এম. এ. রউফ (১৯১৩-১৯৭৪): বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি।
    • ড. মোহাম্মদ নাসিম (১৯৩৭-২০১৫): বাংলাদেশের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
    • ড. মোহাম্মদ ফারুক খান (১৯৪০-২০২০): বাংলাদেশের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
    • ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী (১৯৪২-২০২৩): বীরমুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসাবিদ, ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা।
  • ড. দিপু মনি, শিক্ষামন্ত্রী(২০১৯-), পররাষ্ট্রমন্ত্রী(২০০৯-২০১৩)

ঢাকা মেডিকেল কলেজের নানা আন্দোলনে অবদান 

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন

১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৯৪৮ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ধর্মঘট পালন করে। ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন এম আই চৌধুরী, আবু সিদ্দিক, আলী আসগর, জসিমুল হক ও ফরিদুল হক। এই ছাত্রদের কারাবরণের ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেল (যা ব্যারাক নামে পরিচিত ছিল) ভাষা আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা মিছিল ও সমাবেশের মাধ্যমে রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে প্রতিবাদ জানায়। এই মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রফিক, জব্বার, সালাম ও শফিক। এই ঘটনার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা আন্দোলন জোরদার করে।

১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে মিলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের স্মরণে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে। এই শহীদ মিনার এখন বাংলাদেশের জাতীয় স্মৃতিসৌধ।

ষাটের দশকের বিভিন্ন আন্দোলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের ভূমিকা

ষাটের দশকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা বিভিন্ন আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আইয়ুব খানের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

১৯৬২ সালে সামরিক শাসন ও হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে মেডিকেল কলেজ ও ছাত্রাবাস ছিল ছাত্রনেতাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল এবং সভার স্থান। অনেক ছাত্র জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনে অংশ নেয়।

১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান নিহত হন। মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা শহীদ আসাদুজ্জামানের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে প্রথম শোক মিছিল বের করে।

এই দশকে সরকার প্রায়ই ঢাকা শহরে কারফিউ জারি করত। ছাত্র-জনতা কারফিউ ভেঙ্গে মিছিল বের করলে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ এমনকি গুলিবর্ষণ পর্যন্ত করত। তখনকার ছাত্র-চিকিৎসকরা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সেই কারফিউর মধ্যেই ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে আসত।

মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অবদান

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক, ছাত্র ও কর্মচারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

  • ছাত্র ও চিকিৎসকরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তারা বিভিন্ন সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন।
  • অনেকে হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করেছেন। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই কাজ করেছেন।
  • ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি গোপন সেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছিল। এই কেন্দ্রে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করা হতো।

মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ২৩ জন চিকিৎসক, ছাত্র ও কর্মচারী শহীদ হন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল। মেডিকেল শিক্ষায় দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্বে অন্যতম।  হাসপাতালটিতে ২৮টি বিভাগ এবং ৪২টি ওয়ার্ড রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।

হাসপাতালে ২৩৪ জন ডাক্তার, ২০০ জন ইন্টার্নি ডাক্তার, ৫৬০ জন নার্স এবং ১১০০ জন অন্যান্য কর্মচারী নিয়োজিত আছেন। তারা প্রতিদিন প্রায় ৩৫০০ জন রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করেন।

বর্তমানে, হাসপাতালের প্রায় ২৩০০ শয্যা রয়েছে, তবে এটিকে ৫০০০ শয্যার হাসপাতালে রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এটি হলে, হাসপাতালটি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাসপাতাল গুলোর মধ্যে একটি হবে।

তথ্যসূত্রঃ 

Also Read : Dhaka University 

Scroll to Top