কিসমিস এর উপকারিতা ও অপকারিতা
আজকের এই লেখায় আমরা জানবো, কিসমিসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। কিসমিস একটি অন্যতম জনপ্রিয় ড্রাই ফ্রুটস যাতে প্রচুর পরিমানে পলিফেনস, এন্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস এবং ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকে। এইসব উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
কিসমিস এর উপকারিতা ও অপকারিতা
কিসমিস কি ও পুষ্টি উপাদান
কিসমিস তৈরী করা হয় এক বিশেষ প্রজাতির আঙ্গুর থেকে। কিসমিস তৈরির জন্য প্রথমে ভালো মানের আঙ্গুর বেছে সেগুলি ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া হয়। স্বাদ ও সংরক্ষণের উদ্দেশ্য প্রয়োজনে এতে চিনি ও লবন পানির সিরাপে ধুয়ে নেওয়া হয়। এরপর আঙ্গুরগুলো রোদে শুকিয়ে নিলে তা
কিসমিস হিসাবে খাবার জন্য প্রস্তুতু হয়।
কিসমিসের পুষ্টি উপাদান সমূহ:
- শর্করা: ৭৪.৯ গ্রাম (৭৩.৭%)
- প্রোটিন: ২.৩ গ্রাম (২.৯%)
- চর্বি: ০.৪ গ্রাম (০.৫%)
- ফাইবার: ২.৮ গ্রাম (১২.১%)
- ক্যালসিয়াম: ৩৬ মিলিগ্রাম (৩.৬%)
- আয়রন: ০.৯ মিলিগ্রাম (৯.২%)
- পটাসিয়াম: ২৮৬ মিলিগ্রাম (৮.৮%)
- ম্যাগনেসিয়াম: ২৫ মিলিগ্রাম (৬.৩%)
- ভিটামিন সি: 0.২ মিলিগ্রাম (০.৩%)
কিসমিস এর উপকারিতা
চালুন এবার দেখে নেই জনপ্রিয় শুকনা ফল কিসমিসের উপকারিতা সমূহ:
কিসমিস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার রয়েছে। যা আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে, কিসমিস পটাসিয়ামের একটি ভালো উৎস। পটাসিয়াম শরীর থেকে সোডিয়াম বের করে দিতে সাহায্য করে, ফলে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা কমে যায়।
কিসমিস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
কিসমিস অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভালো উৎস। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিকেল থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী হয়।
কিসমিস হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা হজমে সাহায্য করে। ফাইবার পাচনতন্ত্রের মধ্য দিয়ে খাবারকে দ্রুত এবং সহজে চলাচল করতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে দারুন ভালো কাজ করে এবং হজম শক্তি বাড়ায়।
কিসমিস শরীরকে বিষমুক্ত করে
শরীরকে দূষণমুক্ত করতে কিসমিস কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, পটাসিয়াম, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের শরীরকে ভেজাল খাদ্যর বিষ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
কিসমিসের পটাশিয়াম শরীরের তরলের ভারসাম্য বজায় রাখে।
কিসমিস দিয়ে শরীরকে দূষণমুক্ত করার জন্য, প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১০-১২ টি কিসমিস খান।
খাবার আগে, কিসমিস গুলোকে ৮-১০ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ফলে আরও বেশি উপকার পাবেন।
কিসমিস হাড়কে শক্তিশালী করে
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড়ের গঠন এবং শক্তির জন্য প্রয়োজনীয়। এটি হাড়ের কোষগুলিকে শক্তিশালী করে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি কিসমিসে বোরন নামক একটি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টও থাকে, যা হাড়ের গঠন এবং পুনর্জন্মে সহায়তা করে।
বিশেষত, চল্লিশোর্ধ নারীদের মেনোপজের পরে অস্টিওপোরোসিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। কিসমিস মেনোপজের পরে নারীদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে।
কিসমিসে অনিদ্রা দূর হয়
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা শরীরের হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে। হিমোগ্লোবিন রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি করে, যা শরীরের সমস্ত অংশে শক্তি সরবরাহ করে। শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না থাকলে ক্লান্তি এবং দুর্বলতা দেখা দিতে পারে, যা ঘুমের সমস্যার কারণ হতে পারে। কিসমিসে থাকা আয়রন শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।
এর পাশাপাশি, কিসমিসে ট্রিপটোফান নামক একটি অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা মেলাটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে। মেলাটোনিন একটি হরমোন যা ঘুমের চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। ট্রিপটোফান শরীরে মেলাটোনিন উৎপাদন বাড়িয়ে সুনিদ্রার উদ্বেগ করে।
কিসমিস রক্তস্বল্পতা বা রক্ত শূন্যতা কমাতে সাহায্য করে
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, যা শরীরের হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে। হিমোগ্লোবিন রক্তে অক্সিজেন বহন করে, যা শরীরের সমস্ত অংশে শক্তি সরবরাহ করে। রক্তে পর্যাপ্ত আয়রন না থাকলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়, যা রক্তশূন্যতার কারণ হতে পারে। কিসমিসে থাকা আয়রন রক্তে আয়রনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, যা রক্তশূন্যতার সমস্যা দূর করে।
অন্যদিকে, কিসমিসে তামা (ব্রঞ্ছ) থাকে, যা লাল রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। তামা হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন লোহিত রক্তকণিকা তৈরীতে সাহায্য করে, যা রক্তের উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
শরীরের উপকারের জন্য কিসমিস কিভাবে খাবেন
কিসমিস খাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হল সারারাত কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে সেই পানি পান করা। এই পানিতে কিসমিসের সমস্ত পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়।
আবার আপনি যদি ডায়োট ফুড মেইন্টেইন করেন তাহলে আপনার সকালের বিকালের ও রাতের হালকা খাবারের সাথে কিসমিস রাখতে পারেন।
এছাড়াও, কিসমিসকে অনেক রান্নার সাথে বেবহার করা হয়, যদিও বিশেষজ্ঞরা রান্না করা কিসমিস খেতে নিরুসাহিত করেন। কেননা তাপে কিসমিসের ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়।
কিসমিসের অপকারিতা
কিমিসের উপকারিতার পরিমানেই বেশি তবে খাবার পরিমানের উপর ভিত্তি করে এটি আমাদের শরীরের ক্ষতিও করতে পারে, যা নিম্নরূপ:
কিসমিস ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়
কিসমিস একটি উচ্চ-গ্লাইসেমিক খাবার। অর্থাৎ, এটি রক্তে শর্করার বা সুগারের মাত্রা দ্রুত বাড়াতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত পরিমাণে কিসমিস খাওয়া উচিত নয়, কারণ এটি তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
কিসমিস ওজন বাড়ায়
কিসমিসে চিনি থাকার কারণে এতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য ক্যালোরি থাকে। তাই, অতিরিক্ত পরিমাণে কিসমিস খেলে ওজন বাড়তে পারে।
কিসমিস অতিরিক্ত পরিমানে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। কিছু লোকের জন্য, অতিরিক্ত পরিমাণে ফাইবার হজমে হয় ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা করে।
কিসমিসে দাতের ক্ষতি হতে পারে
কিসমিসে চিনি থাকে, যা দাঁতের নষ্ট করে দিতে পারে। তাই, কিসমিস খাওয়ার পরে, দাঁত ব্রাশ করা বা মাউথওয়াশ ব্যবহার করা উচিত।
শেষ কথা
কিসমিস এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানতে পারলাম। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়, তাই কিসমিসের উপকার পাবার জন্য আমাদের পরিমিত পরিমানে খাওয়া উচিত। এই জাতীয় আরো লেখা পড়তে চোখ রাখুন আমাদের ব্লগে। ধন্যবাদ।
Also Read: তেতুলের উপকারিতা ও অপকারিতা