কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
পৃথিবীতে যত প্রকার খাদ্য উপযোগী ডিম আছে তার মধ্যে কোয়েল পাখির ডিম গুণে মানে এবং পুষ্টিতে সর্বপ্রথম ।কোয়েল পাখির ডিম বর্তমান সময়ে এসে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। ছোট থেকে শুরু করে সবাই কোয়েল পাখির ডিম বেশ পছন্দ করে। এবংকি কিছু কিছু মানুষ বাড়িতে কোয়েল পাখির লালন-পালন করে কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার জন্য।
ডাক্তাররা একটা সময় পর হাঁস মুরগির ডিম খেতে মানা করে তবে কোয়েল পাখির ডিম আপনি যে কোন বয়সেই খেতে পারেন। কোয়েল পাখির ডিম নিয়মিত খেলে আপনার দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়। এমনকি কোয়েল পাখির ডিম নিয়মিত খেলে কিছু কঠিন রোগ থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কোয়েল পাখির ডিম কিডনি সমস্যা,অতিরিক্ত ওজন হার্ড ডিজিজ, হার্ট ও ফুসফুসে নানা ধরনের রোগ থেকে খুব সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
এত পুষ্টি গুনাগুন থাকা কোয়েল পাখির ডিম সম্পর্কে সবাই অবগত হলেও এর উপকারিতা সম্পর্কে তেমন কেউ জানে না। তবে আজকের আর্টিকেলে কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সম্পূর্ণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। তাই চলুন দেরি না করে কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা আর্টিকেল এখনি শুরু করা যাক:
কোয়েল পাখির ডিমের পুষ্টি উপাদান
একটি কোয়েল পাখির ডিম সর্বোচ্চ ৯ গ্রাম ওজনের হয়। চলুন জেনে নিই একটি কোয়েলের ডিমে কতটুকু পুষ্টি উপাদান থাকে।
- ক্যালরিঃ ১৪
- ফ্যাটঃ ১ গ্রাম
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডঃ ৪ মিলিগ্রাম
- ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিডঃ ৮৪ মিলিগ্রাম
- প্রোটিনঃ ১.২ গ্রাম
- কোলেস্টেরলঃ ৭৬ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ও মিনারেল
- ভিটামিন এঃ ১%
- রিবোফ্লাভিনঃ ৪%
- ভিটামিন বি১২ঃ ২%
- প্যানথোনিক এসিডঃ ২%
- আয়রনঃ ২%
- সেলেনিয়ামঃ ৪%
- ফসসরাসঃ ২%
কোয়েলের ডিমে তার আকারের তুলনায় অনেক বেশি আমিষ পাওয়া যায়। একটি কোয়েল পাখির ডিম থেকে প্রাপ্ত ক্যালরির এক-তৃতীয়াংশই আসে আমিষ থেকে।ক্ষুদ্রাকৃতির এ ডিমগুলো ভিটামিন ও খণিজ লবণে পরিপূর্ণ থাকে। ৫টি কোয়েলের ডিমে আমাদের দৈনিক চাহিদার ২০ শতাংশ রিবোফ্লাভিন ও ১০ শতাংশ ভিটামিন বি১২ এর চাহিদা পূরণ হয়।
কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
১) মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা নিশ্চিতে
আমাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন বি১২, থাইমিন (ভিটামিন বি১) ও ভিটামিন বি২ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন বি১২ আমাদের স্মৃতিশক্তির ক্ষয় রোধ করতে সহায়ক। কোয়েলের ডিম ভিটামিন বি১২ এবং রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি১২) এর একটি ভালো উৎস। কিছু পরিমাণ থাইমিনও (ভিটামিন বি১) এতে বিদ্যমান।
২)রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে
কোয়েলের ডিমে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম। এই মিনারেলটি আর্টারি ও রক্তনালীকার চাপ কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেওয়া হতে প্রতিরোধ করে।
৩) শরীরের শক্তি বাড়ায়
কোয়েলের ডিম আমাদের শরীরের জন্য বেশ ভালো একটি শক্তির উৎস হতে পারে। কোয়েলের ডিম প্রোটিন ও আয়রনে সমৃদ্ধ, যা শরীরের এনার্জি লেভেল বাড়িয়ে দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সব ধরণের প্রোটিনই বহু অ্যামিনো এসিড অণুর দ্বারা তৈরি চেইন দিয়ে গঠিত হয়। কোয়েলের ডিমের অ্যামিনো এসিড প্রোফাইল তৈরি করে দেখা যায়, এতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু অ্যামিনো এসিড বিদ্যমান। শরীরের ব্লাড শুগার নিয়ন্ত্রণে এদের মধ্যে কয়েকটি অ্যামিনো এসিড বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। অন্য কয়েকটি অ্যামিনো এসিড রয়েছে যারা টিস্যুর ক্ষয়রোধ ও নতুন টিস্যু গঠন করে। এছাড়াও কোয়েল পাখির ডিমে পাওয়া যায় লাইসিন নামক অ্যামিনো এসিড, যা শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরিতে এবং হরমোন, কোলাজেন ও এনজাইম উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। নতুন রক্ত তৈরিতে আয়রনের ভূমিকা বেশ তাৎপর্যবহ।
৪)কম কোলেস্টেরল
মুরগির ডিমের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় কোয়েল ডিমে কোলেস্টেরল ১.৪% আর মুরগির ডিমে ৪% এবং প্রোটিনের পরিমান মুরগির ডিম থেকে প্রায় শতকরা ৭ ভাগ বেশী।
৫)ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
কোয়েলের ডিমে প্রাপ্ত খণিজ উপাদানগুলোর একটি হলো সেলেনিয়াম। এই খণিজ দ্রব্যটি প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। সেলেনিয়ামে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহকোষকে ক্ষয় হয়ে যাওয়া ও জারণ থেকে রক্ষা করে। এইচ আই ভি ও ক্রন’স ডিজিজ আক্রান্ত মানুষের দেহে সেলেনিয়ামের অভাব লক্ষ্য করা যায়। স্বাভাবিক মানুষের শরীরে সেলেনিয়ামের তেমন ঘাটতি পরিলক্ষিত না হলেও প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে সেলেনিয়ামযুক্ত খাদ্য রাখাটা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। সেক্ষেত্রে কোয়েলের ডিম অনেক সহায়তা করতে পারে।
৬)গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে কাজ করে
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার ঘরোয়া সমাধান হিসেবে কোয়েল পাখির ডিম খুব ভালো কাজ করবে। কোয়েলের ডিমে থাকা শক্তিশালি অ্যালকালাইন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে কাজ করে এবং খাদ্য ভালোভাবে হজম ও শোষণে ভূমিকা রাখে।
৭)বাড়ায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা
কোয়েল পাখির ডিমে উচ্চমাত্রার আয়রন থাকার ফলে এই খাদ্য উপাদানটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে কাজ করে। যাদের রক্তস্বল্পতার সমস্যা বা অ্যানিমিয়া আছে, নিয়মিত কোয়েল পাখির ডিম গ্রহণে তারা উপকার পাবেন।
৮)তীক্ষ্ণ করে দৃষ্টিশক্তি
ছোট এই ডিমে থাকা ভিটামিন-এ ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধে কাজ করে। যা দৃষ্টিশক্তিকে ভালো রাখতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।
৯)সুস্থ রাখে হৃদযন্ত্র
কোয়েল পাখির ডিমের ফ্যাটে রয়েছে ৬০ শতাংশ HDL (High density lipoprotein), যাকে উপকারী কোলেস্টেরল হিসেবে বলা হয়। এই উপাদানটি হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে ও তার ক্রিয়ায় কোন ধরনের বাধা প্রদান না করার জন্যে কাজ করে। তবে কোলেস্টেরলজনিত সমস্যা থাকলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে কোয়েলের ডিম গ্রহণ করতে হবে।
১০)কমায় প্রদাহ ও অ্যালার্জির সমস্যা
এই ডিমে থাকে ওভোমিউকয়েড (Ovomucoid) নামক বিশেষ এক ধরনের প্রোটিন। যা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অ্যালার্জিক উপাদান হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের প্রদাহ ও অ্যালার্জির প্রাদুর্ভাবকে কমাতে ভূমিকা পালন করে।
১১)যকৃত, ত্বক, চুল ও চোখের সুরক্ষা করে
রিবোফ্লাভিন, যা মূলত ভিটামিন বি ২ নামে পরিচিত, দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তিক প্রক্রিয়ার জন্য খুবই দরকারী। সাধারণত ভিটামিন বি ২ সহ অন্যান্য বি শ্রেণীর ভিটামিন আমাদের লিভার, ত্বক, চুল ও চোখের সুস্থতা নিশ্চিত করে। শরীরে লোহিত রক্ত কণিলা উৎপাদনেও রিবোফ্লাভিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোয়েলের ডিমে আকারের অনুপাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে রিবোফ্লাভিন, একের অধিক কোয়েলের ডিম নিয়মিত খেলে তা আমাদের লিভার, ত্বক, চুল, চোখের সুস্থতার জন্য যথেষ্ট।
১২)কর্মদক্ষতা
এই ডিমের মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, এনজাইম এবং এমাইনো এসিড এমনভাবে বিন্যাসিত যে এই ডিম শরীরের সব ধরণের পুষ্টির অভাব পুরণ করে শরীরের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে দেয়।
১৩)রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
কোয়েল পাখির ডিম শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করার পাশাপাশি রক্ত থেকে ক্ষতিকর ও টক্সিন উপাদান বের করতেও উপকারী ভূমিকা পালন করে। এতে করে সাধারণ শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ার হার কমে যায় অনেকখানি।
১৪)শিশুদের জন্য কোয়েল পাখির ডিম
বাচ্চাদের মানসিক, শারীরিক এবং বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে থাকে কোয়েলের ডিম। দুর্বল বাচ্চা থেকে বৃদ্ধরা প্রতিদিন তিন চারটা করে কোয়েলের ডিম খেতে পারেন।
কোয়েল পাখির ডিমের অপকারিতা
প্রতিটি উপকারী জিনিসের কিছু অপকারিতা রয়েছে। ঠিক তেমনি কোয়েল পাখির ডিমের কিছু অপকারিতা রয়েছে চলুন এগুলো জেনে নিয়
১)ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের সমস্যার কারণ
যারা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ আছে তাদের যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে হয়,তাহলে তাদের ক্ষেত্রে কোয়েলের ডিম এডিয়ে চলা উচিত। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট আছে। এই ফ্যাট ডায়াবেটিকস ও হৃদরোগীদের সমস্যার কারণ হতে পারে।
২)কোলেস্টেরল এর সমস্যা বাড়ায়
কোয়েল পাখির ১০০গ্রাম ডিমে থাকে ৮৪৪ গ্রাম কোলেস্টেরল। যা অন্যান্য ডিম থেকে বেশি। তাই যাদের কোলেস্টেরল এর সমস্যা বেশি তাদের উচিত এই ডিম অতিরিক্ত খাওয়া পরিহার করা।
সবশেষে,
কোয়েল পাখির ডিম স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর একটি খাবার। কিন্তু এটা অতিরিক্ত খাওয়া মোটেও ভালো না এতে উপকারের চাইতে বেশি ক্ষতি হতে পারে। সব সময় মনে রাখবেন কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো না। এটি অতি উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল সম্পন্ন যাও অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই পরিমাণ মতো কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার চেষ্টা করুন। আশা করি আজকের এই কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা আর্টিকেলটি থেকে আপনি কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
Also Read: রক্তে এলার্জি দূর করার উপায়!