গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর লক্ষণ বোঝা যায়
যারা নতুন মা হতে যাচ্ছেন বা হতে চাচ্ছেন তাদের অনেকের মনে কৌতুহল জাগে গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বুঝবো যে আমি গর্ভবতী । এ নিয়ে হবু মায়েদের কল্পনা জল্পনার শেষ থাকে না। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করব গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর লক্ষণ বোঝা যায় এবং কি কি লক্ষণ পেলে বুঝতে পারবেন যে আপনি গর্ভবতী। চলুন তাহলেই জেনে নেয়া যাক –
পিরিয়ড / মাসিকের ডেট মিস, গর্ভবতী হওয়ার লক্ষন
আপনি গর্ভবতী হয়েছেন কিনা তার প্রথম লক্ষণ হচ্ছে পিরিয়ড বা মাসিকের ডেট মিস হওয়া। অর্থাৎ প্রতি মাসে আপনার যত দিন পর পর মাসিক হয় সেই দিন বা তারিখ মিস হয়ে গেলে প্রাথমিক ভাবে ধরে নিতে পারেন যে আপনি গর্ভবতী হয়েছেন। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাসিক না হয় তাহলে ফার্মেসি থেকে ভাল বেবি টেষ্ট কিনে নিশ্চিত হওয়ার জন্য চেক করতে হবে। সকালে ইউরিন টেষ্ট করলে যদি পজিটিভ আসে তাহলে বুঝে নিবেন আপনি প্রেগন্যান্ট।
ব্রেষ্ট ভারী লাগা এবং হাল্কা ব্যথা:
গর্ভবতী হওয়ার এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ব্রেষ্ট ভারী লাগে। ব্রেষ্ট ভারী ভাব সবার নাও লাগতে পারে৷ তবে ৪০- ৫০% মেয়েদের ক্ষেত্রে ব্রেষ্ট ভারী হয়ে যায় এবং সেই সাথে তীব্র ব্যথা হয়। এক্ষেত্রে ব্রেষ্ট হাত দিয়ে ধরলে ব্যথা লাগে, ব্রা বা ব্লাউজ পরার সময়ও ব্যথা অনুভূত হতে পারে৷ গর্ভধারনের কারনে শরীরের হরমোন পরিবর্তন এর কারনে ব্রেষ্টে এরকম ব্যথা বা লক্ষন দেখা দেয়৷
বমি ভাব, গর্ভবতী হওয়ার লক্ষন
বমি ভাব গর্ভবতী হওয়ার অন্যতম লক্ষন। প্রথম মাস থেকেই এই লক্ষন প্রায় সব মেয়েদের মধ্যে দেখা যায়৷ কারো কারো ক্ষেত্রে তিন চার মাস পর অথবা শেষের মাসের দিকে প্রচুর বমি আসে। খাবার খাওয়ার সাথে সাথে বমি করে ফেলে৷
প্রস্রাবের চাপ
অনেকের ক্ষেত্রে বমি ভাব, ব্রেষ্ট ভারী হওয়ার লক্ষন দেখা না গেলেও প্রস্রাবের চাপ গর্ভবতী হওয়ার লক্ষন হিসেবে দেখা যায়। যে সব মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক হয় তারা গর্ভবতী হলে অনেক সময় বুঝতে পারেনা। মাসিক না হওয়া সাধারন সমস্যা হিসেবে ধরে নেয়। তাদের ক্ষেত্রে যদি মাসিকের ডেট মিস হওয়া এবং সেই সাথে সব সময় প্রস্রাবের চাপ আসে, তাহলে প্রাথমিক ভাবে ধরে নিতে হবে যে সেই মেয়েটি গর্ভবতী। গর্ভধারনের সময় মেয়েদের তলপেটে রক্ত চলাচল অনেক বেশি বেড়ে যায়৷ বেড়ে যাওয়ার কারনে প্রস্রাবের বেগ না থাকলেও প্রস্রাবের চাপ আসে।
পেট ফোলা ভাব, গর্ভবতী হওয়ার লক্ষন
গর্ভধারনের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে পেট ফোল লাগতে পারে। মনে হয় পেটে গ্যাস জমে আছে। যার কারনে কোমড়ের দিকে কাপড় আগের চেয়ে কিছুটা টাইট হয়ে যায়।
মুড সুইং
গর্ভাবস্থার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মহিলাদের মুড সুইং সমস্যা হয়। এই ভালো লাগছে তো এই খারাপ লাগছে। খুব অল্পতেই হেসে ফেলা বা কেদে ফেলা এরকম সমস্যা হয়ে থাকে। মুহূর্তের মধ্যেই মনের রং বদলে যায় যেন।
যোনিপথ দিয়ে হাল্কা রক্তপাত, গর্ভবতী হওয়ার লক্ষন
গর্ভ ধারনের ছয় থেকে বার দিনের মধ্যে যোনিপথ দিয়ে হাল্কা রক্তপাত হয়। মেয়েদের ডিম্বাশয়ে ডিম্বানু পরিপক্ক হয়, সেখান থেকে ডিম্বানু বের হয়ে ডিম্বনালীতে ঢোকে তারপর সেখানেই পুরুষের শুক্রানু এসে মিলিত বা নিষিক্ত হয়। মিলিত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে যখন ডিম্বনালীতে আর জায়গা না হয়, তখন ভ্রুন এসে জরায়ুতে অবস্থান নেয়৷ যার কারনে হঠাৎ প্রসারিত হওয়ার কারনে যোনিপথ ফেটে রক্তপাত হয়। অনেকে এই রক্তকে মাসিকের রক্ত ভেবে ভুল করে। মাসিকের রক্ত সাধারণত উজ্বল রঙের হয় গর্ভধারন বা ইমপ্লান্টেশন এর রক্ত হালকা গোলাপি রঙের হয়ে থাকে।
স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্লান্তি:
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে একটুতেই শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে গর্ভধারনের প্রথম দিকেই এই লক্ষন দেখা যায়। আগের যে কাজ সারাদিন করলেও হয়তো ক্লান্তি অনুভব করতেন না গর্ভধারনের পর সেই কাজ শুরু করার সাথে সাথেই শরীর অনেক ক্লান্ত বা ভারি হয়ে যাবে৷ বিজ্ঞানীরা ধারনা করেছেন, প্রজেষ্টরন নামক হরমোনের জন্য এমনটা হয়ে থাকে।
মুখের স্বাদ পাল্টে যাওয়া বা অদ্ভুত স্বাদ পাওয়া:
গর্ভধারনের শুরুর দিকে বেশিরভাগ মেয়েদের মুখের স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে আবার সবকিছুতেই অদ্ভুত কিছু স্বাদ পায়৷ আপনি হয়তো গর্ভধারনের আগে অল্প লবন খেতে পছন্দ করতেন কিন্তু গর্ভকালীন সময় দেখা যাবে আপনি আগের চেয়ে কয়েক গুন বেশি লবন খাচ্ছেন। অথবা আগে মিষ্টি খাবার হয়তো একেবারেই খেতেন না কিন্তু হঠাৎ করেই মিষ্টি জাতীয় খাবার খাচ্ছেন। অনেকে আবার মুখে অদ্ভুত স্বাদ পায়। ধাতব জাতীয় কিছু মুখে গেলে যেমন স্বাদ লাগে বাচ্চা পেটে আসলে বা গর্ভধারনের সময় সেই রকম অদ্ভুত স্বাদ মুখে লাগে। এই লক্ষন গর্ভধারনের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রকাশ পায়।
প্রখর ঘ্রানশক্তি গর্ভবতী হওয়ার লক্ষন
গর্ভবতী হওয়ার প্রথম লক্ষন গুলোর মধ্যে অন্যতম লক্ষন হচ্ছে প্রখর ঘ্রানশক্তি। অনেকের ঘ্রানশক্তির অবস্থা দেখলে মনে হতে পারে মহিলাটি হয়তো সুপার পাওয়ার পেয়েছে। খুব সামান্য গন্ধ অনেক দূর থেকে সদ্য গর্ভবতীর নাকে এসে ধরা দেয়। পচা খাবারের গন্ধ পায়, অনেকের আবার রান্না বা মসলার কোনো গন্ধই সহ্য করতে পারেনা।
খাবারে অরুচি:
গর্ভবতী প্রায় সব নারীদের মধ্যে এই লক্ষন দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় খাবারের প্রতি তীব্র অনীহা তৈরি হয়। কোনো খাবারে স্বাদ পাওয়া যায়না। অনেকের ক্ষেত্রে আবার এর উল্টোটাও হতে পারে৷ অর্থাৎ গর্ভবতী হওয়ার আগে হয়তো খাবারে কোনো রুচি ছিলনা। কিন্তু গর্ভবতী হওয়ার পরে রুচি অনেক বেড়ে যায়৷ সব ধরনের খবার খেতে পারে। সারাদিন খাবার পরেও ক্ষুধা লাগে।
শেষ কথা
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাধারণত গর্ভধারণের প্রায় ৪-৬ সপ্তাহ বোঝা যায়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে পিরিয়ডের দেরি হওয়ার কয়েক দিন আগেও কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যদি উপরের উল্লেখিত লক্ষন গুলোর মধ্যে সব লক্ষন বা একাধিক লক্ষন পাওয়া যায় তাহলে বুঝে নিবেন আপনি মা হতে চলেছেন। তবে অবশ্যই শুধু লক্ষনের উপর নির্ভর না করে প্রেগন্যান্সি টেষ্ট করতে হবে অথবা চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।
Also Read: কিভাবে নবজাতক শিশুর যত্ন নিতে হবে!