ভিটামিন ই ক্যাপসুলের উপকারিতা অপকারিতা
ভিটামিন ই ক্যাপসুল বা ই ক্যাপ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। এই উপাদানটি আমাদের শরীর, ত্বক ও চুলের জন্য অনেক উপকারী। ত্বক ও চুলের সুস্থতার জন্য সবার কাছে ভিটামিন এ ক্যাপসুল জনপ্রিয় একটি উপাদানের নাম। এছাড়াও ভিটামিন ই ক্যাপসুল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সক্ষম।
ই ক্যাপ এর উপকারিতা
ত্বকের উজ্বলতায় ভিটামিন ই ক্যাপ:
ভিটামিন ই ক্যাপসুল ত্বক উজ্বল করতে সাহায্য করে। ত্বক উজ্বল করার জন্য রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটি ভিটামিন ই ক্যাপ নিয়ে তার সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে সারা রাত রাখবেন। এভাবে প্রতিদিন ব্যবহার করলে ত্বক আগের চেয়ে অনেক উজ্বল হেলদি হবে।
ই ক্যাপ সানস্ক্রিন হিসেবে
ভিটামিন ই ক্যাপসুল সান ট্যান দূর করতে সাহায্য করে। সেই সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুলকে সানস্ক্রিন ক্রিম হিসেবে ইউস করতে পারেন। বাইরে বের হওয়ার আগে একটি ই ক্যাপ নিয়ে ভালভাবে ফেসে এবং হাতে লাগালে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করতে পারেনা।
শীতকালে ত্বক ও ঠোটের পরিচর্যায় ই ক্যাপ
ই ক্যাপসুল শীতকালে ব্যবহার করলে ত্বক ঠোট কে শুস্ক হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে ত্বক ও ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যায়। ই ক্যাপসুল ত্বক ও ঠোঁটের কোষগুলোকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং তাদের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। ই ক্যাপসুল ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, যা ত্বককে টানটান রাখতে সাহায্য। তাই যাদের শীতকালে ত্বক ও ঠোট শুস্ক হয়ে যাওয়ার সমস্যা আছে তারা ত্বক ও ঠোঁটে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এতে ত্বক ও ঠোঁট আর্দ্র থাকবে।
ডার্ক সার্কেল দূর করতে ভিটামিন ই ক্যাপ
ডার্ক সার্কেল, বলিরেখা নির্মূল করতে ও কালো ছোপ দূর করতে ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। ডার্ক সার্কেল হলে চোখের নিচের কালো দাগ হয়। সাধারণত ঘুমের অভাব, স্ট্রেস, ক্লান্তি বা হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হয় ডার্ক সার্কেল হয়। ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করলে চোখের নিচের ত্বককে মসৃণ করে তোলে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, যা ডার্ক সার্কেল দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও যাদের মুখে বলিরেখা আছে ভিটামিন ই ক্যাপসুল সেই বলিরেখা দূর করে৷ ত্বকের ডার্ক সার্কেল দূর করার জন্য প্রতিদিন পছন্দের কোনো ময়েশ্চারাইজার বা সানস্ক্রিন এর সাথে একটি ই ক্যাপ মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে কয়েক মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এভাবে দুই বা তিনদিন পর পর ব্যবহার করলে ত্বকের বলিরেখা দূর হবে৷
স্কিন মাস্ক হিসাবে ই ক্যাপ উপকারি
ভিটানিন ই স্কিন মাস্ক বানাতে একটি পাত্রে ডিমের সাদা অংশ নিয়ে ভালকরে ফেটিয়ে নিতে হবে। এবার দুটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ডিমের মিশ্রনের সাথে ভালভাবে মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রনটি ত্বকে ভালভাবে লাগিয়ে নিন। কয়েক মিনিট রাখার পর যখন টানটান হবে তখন ওয়াশ করে নিন। এই ই ক্যাপ মাস্ক ব্যবহারের ফলে ত্বক তুলতুলে নরম হবে, ত্বকের লোমকূপ বড় হওয়ার সমস্যাও দূর হবে৷
চুলের যত্নে ভিটামিন ই ক্যাপ
যাদের চুল পরে যাচ্ছে, চুল অনেক রুক্ষ তারা ভিটামিন ই ক্যাপসুল তেলের সাথে ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। নারিকেল অথবা অলিভ অয়েল যে কোনো তেলের সাথে চার থেকে পাচটি ভিটামিন ই ক্যাপ ভালভাবে মিশিয়ে নিন। এবার তেল এবং ই ক্যাপের মিশ্রন ভালকরে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত লাগান। কয়েক ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। কয়েক দিন ব্যবহার করলেই ফলাফল পাবেন।
ক্ষতস্থান পূরনে ই ক্যাপ
ভিটামিন ই ক্যাপ শরীরের ক্ষতস্থান পুরন করতে সাহায্য করে। ক্ষতস্থানে ই ক্যাপ লাগালে বা নিয়মিত খেলে ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে যায়।
নখ ভেঙ্গে যাওয়া রোধে ই ক্যাপ
অনেকের নখ ভেঙ্গে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে। বিভিন্ন কারণে নখ ভেঙ্গে যায়। সাংসারিক কাজ, বা বাহিরে কাজ করার জন্য নখ ক্ষয় হয়ে যায় বা ভেঙ্গে যায়। এই সমস্যা দূর করার জন্য নখে প্রতিদিন ই ক্যাপ লাগালে নখ ভেঙ্গে যাওয়ার রোধ করে।
বয়সের ছাপ দূর করতে ই ক্যাপ
অনেকেরই বয়স হওয়ার আগেই ত্বক বুড়িয়ে যায়৷ ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করতে সাহায্য করে ভিটামিন ই ক্যাপ। ভিটামিন ই ক্যাপ এন্টি এজিং হিসেবে কাজ করে৷ যাদের ত্বক ঝুলে গেছে, কুচকে গেছে তারা নিয়মিত ভিটামিন ই ক্যাপ ত্বকে লাগালে ত্বক থেকে বয়সের ছাপ দূর হয়৷
বয়স অনুযায়ী ভিটামিন ই ক্যাপসুল
চিকিৎসকদের পরামর্শ অমুযায়ী, নিয়মিত কত বয়স অনুযায়ী ভিটামিন ই ক্যাপ খাওয়ার মাত্রা আলাদা। শিশুর ৬ মাস পর্যন্ত রোজ ৪ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন ই ক্যাপ খাওয়ানো যেতে পারে। ৭ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত রোজ ৫ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন ই, এক থেকে তিন বছরের বাচ্চার জন্য রোজ ৬ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন ই প্রয়োজন। চার থেকে আট বছর বয়স পর্যন্ত সাত মিলিগ্রাম করে ভিটামিন ই প্রয়োজন। ৯ থেকে ১৩ বছরের বাচ্চার জন্য রোজ ১১ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন ই এবং ১৪ বছরের ঊর্ধ্বে ১৫ মিলিগ্রাম থেকে ১৯ মিলিগ্রাম করে ভিটামিন ই প্রয়োজন।
ই ক্যাপ এর অপকারিতা
কোনো জিনিস অতিরিক্ত ব্যবহার করার ফল ভাল হয়না। ভিটামিন ই ক্যাপ এর ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। অতিরিক্ত পরিমান ভিটামিন ই ক্যাপ ইউস করলে ত্বক, চুলের অনেক ক্ষতি হয়৷ অতিরিক্ত ই ক্যাপ খাওয়ার ফলে অনেকের আমাশয়, এলার্জি দেখা দিতে পারে। এছাড়া আর তেমন কোনো অপকারিতা নেই৷
শেষ কথা
ভিটামিন ই ক্যাপ শরীরের উপকারের পাশাপাশি রূপচর্চার কাজে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহার করে আসছে। সবুজ ছোট ছোট এই ই ক্যাপ ফার্মেসি ছাড়াও সব ধরনের কসমেটিক্স এর দোকানে পাওয়া যায়। তবে যদি কারো এলার্জি, প্রেসার থাকে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ই ক্যাপ খাবেন না। তবে বাজারে এখন বিভিন্ন কালারের ই ক্যাপ পাওয়া যায়৷ অন্য কালার না কিনে সবুজ কালার ই ক্যাপ কেনাই ভাল।
Also Read: অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি