চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে
আমাদের সমাজের চিকেন পক্স নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। তবে এটা সত্য যে চিকেন পক্স একটি ছোঁয়াচে রোগ। চিকেন পক্স রোগে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। সে ক্ষেত্রে ১০ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
চিকেন পক্স রোগে আক্রান্ত হলে সমস্ত শরীরে গোটা অথবা ফোসকা দেখতে পাওয়া যায়। এই রোগের অন্যান্য লক্ষণ হলো প্রচন্ড মাথা ব্যথা থাকে এবং শরীর ব্যথা হয়। সাথে যোগ হয় জ্বর। শরীর প্রচন্ড মাত্রায় দুর্বল হয়ে পড়ে চিকেন পক্স রোগে আক্রান্ত হলে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে? যাবতীয় তথ্য জানতে পারবো। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
চিকেন পক্স হলে কি সাবান দিয়ে গোসল করা যাবে
অনেকেই জানতে চান চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে? এর উত্তর হলো চিকেন পক্স হলে অবশ্যই গোসল করতে হবে। এই সময় শরীর ঠান্ডা রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
চিকেন পক্স হলে সাবান সাবান দিয়ে গোসল করা উচিত নয়। এ সময় রোগীকে গোসল করাতে হবে। কিন্তু গোসল করানোর সময় খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। গোসল করানোর সময় রোগীর শরীরে ওঠা ফোসকা যেন কোনভাবেই গলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
গোসল করানোর সময় যদি সাবান ব্যবহার করা হয় অনেক সময় ফোসকা গলে যাওয়া সম্ভাবনা থাকতে পারে। তবে এ সময় রোগীকে একদম ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করানো উচিত নয়। উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে খুব হালকা হাতে রোগীর শরীর মুছে দিতে হবে।
রোগী যদি অতিরিক্ত মাত্রায় শীত বোধ করেন তাহলে গোসল না করিয়ে সে যা তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া যেতে পারে। সর্বশেষ কথা হল, চিকেন পক্স হলে গোসল করানো যাবে কিন্তু সাবান দিয়ে গোসল করানো উচিত নয়।
চিকেন পক্স এর ঔষধ
বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এর মতে চিকেন পক্স হলে তেমন কোন ঔষধ এর প্রয়োজন নেই। তবে এ সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা অত্যন্ত জরুরি। তবে রোগের তীব্রতা অনেক বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক ঔষধ খাওয়া যেতে পারে।
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আক্রান্ত রোগীগণ এন্টিব্যাকটেরিয়াল ঔষধ গুলো সেবন করে দেখতে পারেন। তবে এই রোগের স্থায়িত্ব অল্প কিছুদিনের জন্য হয়। তারপর নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। তাই এ সময় প্রচুর পরিমাণে বিশ্রামের প্রয়োজন। তবে আপনি চাইলে এই সময় শুধু হোমিওপ্যাথি ওষুধ সেবন করে দেখতে পারেন।
হোমিওপ্যাথি ওষুধগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: রাসটক্স, সালফার, ক্যালিমিউর, অ্যান্টিমটার্ট ইত্যাদি। এই সময় জ্বরের তীব্রতা অনেক বেড়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোগী নাপা ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন। নাপা ট্যাবলেট সেবন করার ফলে শরীর ব্যথা এবং মাথাব্যথা তীব্রতা ও কমে আসবে।
চিকেন পক্স হলে কি খাওয়া উচিত
চিকেন পক্স হলে খাবার নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকে এই সময় প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে নিষেধ করেন। কিন্তু এ সময় চিকেন পক্স হয়েছে এমন রোগের অবশ্যই প্রথম জাতীয় খাবার খেতে হবে। তা না হলে শরীর দুর্বল হয়ে যাবে।
তবে এ সময় চর্বি জাতীয় খাবার, ভাজা পোড়া, অতিরিক্ত লবণ জাতীয় খাবার, চকলেট, বাদাম, নারকেল, মাখন ইত্যাদি খাবার খাওয়া যাবেনা। কারণ এ ধরনের খাবার শরীরে প্রদাহ বাড়াতে সাহায্য করে। যেহেতু জল বসন্তে আক্রান্ত রোগীর শরীরে অনেক ব্যথা থাকে তাই এই ধরনের খাবার না দেওয়াই ভালো।
এই সময় সহজপাত্র সব রকমের খাবার যেমন জুস, ফলের রস, স্যুপ ইত্যাদি খাবার দেওয়া যেতে পারে। শিশুদের জল বসন্ত হলে অনেকেই মনে করেন যে তাদের বুকের দুধ দেওয়া যাবে না। কিন্তু ধারণাটি একেবারেই ভুল। এই সময় হলে শিশুদের পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকের দুধ পান করাতে হবে।
চিকেন পক্স কতদিন থাকে
চিকেন পপ ফুলের রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় সাধারণত ১০ থেকে ২১ দিনের মধ্যে। তবে এই রোগের স্থায়িত্ব বেশি দিন থাকেনা। সর্বোচ্চ সাত থেকে ১৫ দিনের মধ্যে চিকেন পক্স পুরোপুরি নিরাময় হয়ে যায়।
এ রোগে কতটুকু ক্ষতি হবে তা নির্ভর করে রোগী কেমন যত্ন পাচ্ছে তার উপর। এই সময় রোগীকে অবহেলা করা একদমই উচিত নয়। চিকেন পক্স সাত দিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যায় যদি রোগী পর্যাপ্ত পরিমাণে যত্ন পান। যত্নের পাশাপাশি রোগের খাবার-দাবারের দিকেও এ সময় খেয়াল রাখতে হবে না।
খাবারগুলো অল্প খেলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি পাওয়া যায় সেই খাবারগুলো রোগীকে খাওয়াতে হবে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকেন পক্স একমাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ক্ষেত্রে রোগীকে এন্টিবায়োটিক অথবা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ঔষধ সেবন করাতে হবে।
চিকেন পক্স একবার হলে কি আবার হয়
মানুষের শরীরে চিকেন পক্স সাধারণত একবারই হয়ে থাকে। কারণ আপনি যখন একবার চিকেন পক্স রোগে আক্রান্ত হবেন তখন প্রাকৃতিকভাবে আপনার শরীরে চিকেন পক্স প্রতিরোধের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে।
সে ক্ষেত্রে পরবর্তীতে চিকেন পক্স রোগে আক্রান্ত হওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা থাকে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দাবি, যাদের এত চিকেন পক্স হয়েছে তাদের দ্বিতীয় বার এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে বাংলাদেশে এই রোগের প্রতিষেধক পাওয়া যায়।
চিকেন পক্স রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে এই রোগের প্রতিশোধক ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু তাতে করেও চিকেন পক্স আপনার হবে না এমনটি বলা যায় না। সে ক্ষেত্রে চিকেন পক্স রোগে আক্রান্ত হলেও রোগের তীব্রতা অনেক কম থাকবে।
চিকেন পক্স হলে কি খাওয়া যাবে না
যেসব রোগীদের চিকেন পক্স হয়েছে তাদের শরীর স্বাভাবিকভাবেই খুব দুর্বল হয়ে থাকে। তাই সেই সব রোগীদের সহজপাত্র খাবার দেওয়া উচিত। তবে যেসব খাবার হজমে অসুবিধা করে বা হজম হতে দেরি হয় সেসব খাবার এ সময় না দেওয়াই ভালো।
চিকেন পক্স হলে কিছু কিছু খাবার একেবারেই রোগীকে দেওয়া উচিত নয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সব ধরনের চর্বিযুক্ত খাবার যেমন: ঘি, মাখন, চকলেট, বাদাম, পনির ইত্যাদি খাবার একেবারেই দেওয়া যাবে না। কারণ এসব খাবর শরীরে ব্যথা বাড়াতে সাহায্য করে। আবার অতিরিক্ত মসলা দিয়ে রান্না খাবারও এ সময় রোগীকে দেওয়া ঠিক নয়।
রোগীর খাবারে সব রকমের মসলা এবং তেল, লবণ এর পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। তবে এই সময় সব ধরনের উচ্চপ্রটিনযুক্ত খাবার চিকেন পক্স হয়েছে এমন রোগীকে দিতে হবে। কম কম স্নেহযুক্ত সব ধরনের খাবার এ সময় রোগীকে দেওয়া যেতে পারে। এ সময় রোগীকে ডাবের পানি বা বিভিন্ন রকমের জুস খাওয়াতে পারেন। তবে অরগিনিন আছে এমন খাবার রোগীকে এ সময় দেওয়া একেবারেই ঠিক নয়।
শেষ কথা
চিকেন পক্স একবার হলেও সবাই এই রোগে আক্রান্ত হবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে একবার আক্রান্ত হলে পরবর্তীতে আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। চিকেন পক্স কোন সাধারণ অসুখ নয়।
এই রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। তাই এই রোগ হলে মোটেও অবহেলা করবেন না। পর্যন্ত পরিমাণে বিশ্রাম এবং উপযুক্ত নিয়ম-কানুন মেনে চললে এই রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যায় সহ চিকেন পক্স নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যারা চিকেন পক্স এর তথ্য জানতে চাচ্ছিলেন আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে আশা করি।
Also read: পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়