উপসর্গ কাকে বলে?
আমরা অনেকেই জানিনা উপসর্গ সম্পর্কে। আজি আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব উপসর্গ কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি এবং উপসর্গের প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করব-
উপসর্গ কাকে বলে?
কিছু অব্যয় আছে যেগুলো শব্দের আগে বা ধাতুর আগে যুক্ত হয়ে শব্দের বা ধাতুর অর্থ পরিবর্তন করে এ জাতীয় শব্দগুলোকে উপসর্গ বলে। উপসর্গের নিজস্ব কোন অর্থ নেই তবে অন্য শব্দের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে। এজন্য বলা হয় যে উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই তবে অর্থদ্যোতকতা রয়েছে।
একই উপসর্গ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে; যেমন সু, অ, প্রতি,প্র ইত্যাদি। ‘ক্রিয়া’ শব্দের আগে প্রো উপসর্গ যুক্ত করলে হয় ‘প্রক্রিয়া’ আবার এই একই শব্দ ‘ক্রিয়া’ শব্দের সঙ্গে ‘প্রতি’ যুক্ত করলে হয় ‘প্রতিক্রিয়া’। ‘অ’ উপসর্গটি ‘কাজ’ শব্দের আগে যুক্ত করলে হয় ‘অকাজ’ এবং ‘সু’ উপসর্গটি কাজ শব্দের আগে সংযুক্ত করলে হয় ‘সুকাজ’।
অতএব উপসর্গ কাকে বলে তা আমরা এভাবে বলতে পারি যে, কতগুলো অব্যয় বা নামবাচক শব্দের আগে সংযুক্ত হয়ে নতুন নতুন শব্দ গঠন করে ও অর্থের পরিবর্তন করে এই ধরনের অব্যয়কে বলা হয় উপসর্গ।
উপসর্গ কত প্রকার ও কি কি
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত উপসর্গ গুলিকে প্রধানত তিনভাবে ভাগ করা যায়। সেগুলি হল –
দেশি বা বাংলা উপসর্গ সংস্কৃত বা তৎসম উপসর্গ এবং বিদেশি উপসর্গ। এদের মধ্যে বাংলা উপসর্গ একুশটি এবং সংস্কৃত উপসর্গ বিশ টি। এই দুইটি উপসর্গের মধ্যে চারটি কমন উপসর্গ রয়েছে। অর্থাৎ এই চারটি উপসর্গ বাংলা ও সংস্কৃত উভয় উপসর্গতে রয়েছে। এই চারটি উপসর্গ হলো – সু, আ, বি, নি। অনেক সময় গরমিল হয়ে যায় বা আমরা ভুলে যাই যে সংস্কৃত উপসর্গ কয়টি এবং বাংলা উপসর্গ কয়টি। তাই এই দুইটি উপসর্গ মনে রাখার জন্য একটি ছন্দ রয়েছে। ছন্দ টি হল ‘বাংলার মানুষ কথা বলে বেশি’ এ থেকেই বোঝা যায় যে বাংলা উপসর্গ সংস্কৃত। এভাবে আমরা মনে রাখতে পারি।
১. দেশি বা বাংলা উপসর্গ
আর্যদের আগমনের আগে বাংলায় বিভিন্ন জাতি বাস করত, তাদের ভাষা হতে যেসব উপসর্গ বাংলা ভাষায় এসেছে এবং ব্যবহার হচ্ছে, সেসব উপসর্গকেই দেশি বা বাংলা উপসর্গ বলা হয়। বাংলা উপসর্গের সংখ্যা মোট ২১ টি। এগুলি হল- অ, অঘা, অনা অজ, আ, আড়, আব, আন, ইতি, উন্, কদ, নি, কু, বি, পাতি, ভর,স, সা, সু, রাম ও হা। যেমন- কুকাজ, সুকাজ, রাম ছাগল, অঘারাম, অজপাড়াগাঁ।
২. তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ
যেসব উপসর্গ সংস্কৃত ভাষা হতে বাংলা ভাষায় এবং ব্যবহার হচ্ছে, সেসব উপসর্গগুলিতে তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ বলা হয়। সংস্কৃত উপসর্গের সংখ্যা মোট 20 টি। এগুলি হল – অতি, অধি, অনু, অব, অপ, অপি, অভি, আ, উত্, উপ, দূর,নি, নির/নির্, প্র, পরি, পরা, প্রতি, সু, বি ও সম্। যেমন প্রবল, উপহার, পরাজয়, উপকূল, অনুরূপ।
৩.বিদেশি উপসর্গ
বিদেশি ভাষা হতে আগত যেসব উপসর্গ বাংলা ভাষাতে রয়েছে এবং এর ব্যবহার প্রচলিত আছে, সেসব উপসর্গগুলিকে বিদেশি উপসর্গ বলা হয়ে থাকে। এই উপসর্গগুলি হল-
আরবি উপসর্গ
আম, বাজে,লা, খাস যেমন- খাসমহল, আমদরবার, গরমিল, লাজওয়াব।
ফারসি উপসর্গ
কার, দর, নিম, ফি,বে, না,বদ, বর, ব, কম যেমন দরখাস্ত, নালায়েক, কারখানা, নিমবাজি, ফি।
ইংরেজি উপসর্গ
ফুল(full), হেড(head), হাফ(half), সাব(sub)
যেমন হাফহাতা ফুলহাতা হেডমাস্টার, সাব হেডিং, সাব ইন্সপেক্টর।
উপসর্গের বৈশিষ্ট্য
- উপসর্গের নিজস্ব কোন অর্থ নেই
- উপসর্গগুলো এক প্রকারের অব্যয় সূচক শব্দ বা শব্দ্যাংশ।
- উপসর্গগুলির মূল কাজ হল কোন শব্দের আগে যুক্ত হয়ে নতুন কোন অর্থবোধক শব্দ সৃষ্টি করা।
- উপসর্গগুলো শব্দের সাথে সংযুক্ত হয়ে মূল অর্থের পরিবর্তন ঘটায় এবং অর্থকে বিশিষ্টতা দান করে।
- উপসর্গ কৃদন্ত ওর নামবাচক পদের পূর্বে বসে।
- উপসর্গ শব্দের পরিবর্তন বা সংকোচন এবং সম্প্রসারণ।
আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানলাম উপসর্গ কাকে বলে, এর প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য। উপরের আলোচনা থেকে বলতে পারি উপসর্গ হলো একটি শব্দকে নতুন কোন অর্থ বা বিশেষ অর্থের মাধ্যকে প্রকাশ করা।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
১. বাংলা উপসর্গ মোট কয়টি?
উত্তর: মোট ২১ টি খাঁটি বাংলা উপসর্গ।
২. বিদেশি উপসর্গের সংখ্যা মোট কতটি?
উত্তর: ১৯ টি।
৩. তৎসম বা সংস্কৃত উপসর্গ সংখ্যা মোট কয়টি?
উত্তর: মোট ২০ টি।
৪. উপসর্গ কাকে বলে?
উত্তর: কতগুলো অব্যয় বা নামবাচক শব্দের আগে সংযুক্ত হয়ে নতুন নতুন শব্দ গঠন করে ও অর্থের পরিবর্তন করে এই ধরনের অব্যয়কে বলা হয় উপসর্গ।