সাবুদানার উপকারিতা অপকারিতা!
সাবু দানা নামটা শুনলেই অনেকের অসুস্থ বা রুগ্ন মানুষের কথা মনে পরে৷ আগেকার দিনে কেউ অসুস্থ হলেই সাবুদানা খেতে দেয়া হতো। রুগি অন্য কিছু খেতে পারতনা তাই সাবুদানা খেয়ে রুগি দিন পার করত। কিন্তু এখন সাবুদানার জায়গায় অনেক খাবার জায়গা করে নিলেও সাবুদানার কদর কমে যায়নি একটুও। আমাদের দেশে কারো জ্বর সর্দি হলে এই খাবার দেয়া হয়৷
সাবুদানা কি
সাবুদানা ষ্টার্চ জাতীয় খাবার। অনেকের ধারনা সাবুদানা এক ধরনের ফল। ফল থেকেই সাবুদানা তৈরি করা হয়ে থাকে। সাবুদানা পাম জাতীয় গাছের মুল থেকে তৈরি করা হয়। গাছের মুল থেকে রস সংগ্রহ করে সেই রস প্রথমে রোদে শুকানো হয়। রস শুকিয়ে গেলে সেটি ময়দা বা পাউডারের মত হয়। পরে সেই পাউডারকে মেশিন দিয়ে গোলাকার দানায় পরিনত করা হয়। সাবুদানা দেখতে গোলাকার হয়। আর সেখান থেকেই সাবুদানা বা সাগু তৈরি হয়। সাবুদানায় রয়েছে প্রচুর পরিমান কার্বহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ।
সাবুদানার পুষ্টি উপাদান
সাবুদানা পুষ্টির দিক থেকে কিছুটা কম হলেও এটি অন্যান্য সবজির সাথে মিশে পুষ্টি গুন অনেক বেড়ে যায়। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক-
- প্রতি ১০০ গ্রান সাবুদানায় রয়েছে ৩৩২ ক্যালোরি
- ১ গ্রাম প্রোটিন
- ১ গ্রাম ফ্যাট
- ৮৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
- ১ গ্রাম ফাইবার এবং ১১ শতাংশ জিংক
ভিটামিন – এর পরিমান
- ভিটামিন সি – ১ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি১- ০.০২ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি২- ০.০২ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি৩- ০.৪ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি৯- ৫ মাইক্রোগ্রাম
খনিজ – এর পরিমান
- ক্যালসিয়াম ৪৬ মিলিগ্রাম
- আয়রন ০.২ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম ৪৪ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস ৯১ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম ১২২ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম ৫ মিলিগ্রাম
- জিংক ১.১ মিলিগ্রাম
সাবুদানার উপকারিতা
সাবুদানায় রয়েছে শরীরের জন্য উপকারি ভিটামিন, খনিজ মিনারেল সহ প্রয়োজনীয় অনেক উপাদান।
সাবুদানা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে
সাবুদানায় উপস্থিত পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে৷ উচ্চরক্তচাপের সমস্যা রয়েছে এমন রুগিদের পথ্য হিসেবে সাবুদানা খাওয়ালে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে আসে।
সাবুদানা হাড় শক্ত করে
হাড়ের গঠন ঠিক মত না হওয়ার কারন হিসেবে ক্যালসিয়াম এর অনুপস্থিতিতে কে দায়ী করা হয়। কারো শরীরে যখন ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি হয় তখন হাড় ভেঙ্গে যায়, অনেক সময় হাড় দূর্বল হয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য নিয়মিত সাবু দানা খেলে হাড়ের গঠন মজবুত ও শক্ত করা যায়। সাবু দানায় উপস্থিত ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। চিকিৎসকদের মতে, সাবুদানায় উপস্থিত ক্যালসিয়াম অস্টিওপরোসিস সমস্যার সমাধান করে।
সাবুদানা ক্যান্সার নিয়ন্ত্রন করে
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দাবি করেছেন, “সাবুদানায় উপস্থিত উপাদান গুলো ক্যান্সার নিয়ন্ত্রনে সহায়ক।” সাবুদানায় রয়েছে ট্যানিন ও ফ্ল্যাভিনয়েড নামক দুটি আ্যন্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপাদান দুটি ক্যান্সারের ফ্রি র্যাডিকাল ধ্বংস করতে সহায়তা করে। যার কারনে ক্যান্সারের মত ঘাতক শরীরে প্রবেশ করতে পারেনা। বর্তমানে সারা বিশ্বে ক্যান্সার যে প্রকট আকারে ছড়িয়ে পরছে এবং মানুষ মরছে ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য সবার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। ক্যান্সার নিয়ন্ত্রন ও ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য খাদ্য তালিকায় নিয়মিত সাবুদানা রাখা উচিৎ।
সাবুদানা শরীরে শক্তি যোগায়
বহুকাল থেকেই অসুস্থ ও দূর্বল রুগিদের সাবুদানা খাওয়ানো হয়৷ সাবুদানায় পুষ্টিকর যে উপাদান গুলো রয়েছে সেগুলো রোগ নিরাময় করে শরীরে শক্তি প্রদান করে৷ সাবুদানায় থাকা ভিটামিন, মিনারেল, খনিজ যে পরিমানে থাকে তা শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। যারা নিয়মিত ব্যয়াম করেন বা শারিরীক পরিশ্রম করেন তারা সাবুদানা খেলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যয়াম বা শারিরীক পরিশ্রমের আগে বা পরে সাবুদানা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
সাবুদানা হজম শক্তি বাড়ায়
সাবুদানা হজম শক্তি ঠিক রাখতে সাহায্য করে। সাবুদানা হলো সরল শর্করা জাতীয় একপ্রকার দানা জাতীয় খাদ্য। সাবুদানা পানিতে দ্রবনীয় তন্তু না আশ। এই আশ পৌষ্টিকনালী কে পরিষ্কার রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করে। হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়। সাবু দানাতে থাকা ফাইবার হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। যাদের হজম শক্তি ভাল না অনেক দূর্বল তারা নিয়মিত সাবুদানা খেলে হজম শক্তি বেড়ে যায়।
সাবুদানা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে
সাবুদানা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। সাবুদানায় রয়েছে উচ্চ ক্যালরী যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে৷ যারা ওজন বাড়াতে চান তারা নিয়মিত সাবুদানা খেতে পারেন। যে শিশুদের ওজন বাড়েনা বয়সের তুলনায় ওজন অনেক অল্প তাদের নিয়মিত সাবু দানা খাওয়াতে পারেন। সাবুদানা খেলে ওজন বাড়বে। এছাড়াও যারা অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন যেমন ক্রিড়াবিদ তাদের উচ্চ ক্যালরীর প্রয়োজন হয়। তারা সাবুদানা খেলে শরীরে অনেক ক্যালরী জমা হয়। উচ্চশক্তির বিকল্প হিসেবে সাবুদানা উৎকৃষ্ট একটি খাবার।
সাবুদানা গর্ভবতী নারীদের জন্য ভাল
গর্ভবতী নারীদের গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের শারিরীক জটিলতা দেখা দেয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এ অবস্থায় নিয়মিত সাবুদানা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, মা ও শিশুর দেহে পরিপূর্ণ ভাবে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। সাবুদানা খেলে গর্ভবতী নারীদের শরীরের ক্লান্তি দূর হয়। সাবুদানায় থাকা ভিটামিন বি৬ এবং ফোলিট গর্ভে থাকা ভ্রুনের বিকাশ গঠনে সহায়তা করে। তবে গর্ভবতী নারীদের যদি ডায়াবেটিস এর সমস্যা থাকে তাহলে সাবুদানা না খাওয়াই ভাল।
মেয়েদের মাসিকের সময় সাবুদানার উপকারিতা
মাসিকের সময় মেয়েদের শরীর অনেক দূর্বল হয়ে যায়৷ মাসিক শুরু হওয়ার দুই বা তিনদিন পর সাবুদানা খেলে উপকার পাওয়া যায়৷ মাসিকের সময় মেয়েদের ক্ষুধা অনেক বেড়ে যায়। মাসিকের সময় প্রোষ্টাগ্লান্ডিন এর পরিমান বেড়ে গেলে পেটে ব্যথা হয়। সাবুদানা খেলে এটি প্রোষ্টাগ্লান্ডিন এর বিরুদ্ধে কাজ করে৷ যার কারনে পেটে ব্যথা হয়না।
মাথাব্যথা কমায়
সাবুদানা খেলে এটি মাথা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। মাসিকের সময় প্রোজেষ্টরনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারনে মাথা ব্যথা হয়। সাবুদানায় ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে যা মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে। মাসিকের সময় টক দইয়ের সাথে সাবুদানা খেলে মাথাব্যথা সেরে যায়।
সাবুদানা চুলের জন্য ভাল
সাবুদানা চুলের জন্য অনেক ভাল কাজ করে৷ চুল পরা, চুলে পুষ্টির অভাব, চুলে খুশকির সমস্যা, চুলের ঠিকমত বিকাশ না হওয়া সহ যত রকমের সমস্যা রয়েছে সাবুদানা খেলে উপকার পাওয়া যায়। সাবুদানা খেলে এর মধ্যে থাকা উপাদান গুলো চুল পরা বন্ধ করে দেয়, চুলে খুশকির সমস্যা থাকলে দূর করে, এবং চুল কে লম্বা করে।
সাবুদানায় ত্বকের যত্ন
সাবুদানা অনেকেই রূপচর্চায় অনেকে ব্যবহার করে থাকে। সাবুদানার ভেসজ মাস্ক ত্বকের জন্য অনেক উপকারি। ত্বক উজ্বল ও ফরসা করার জন্য সাবুদানার সাথে দুধ মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বক উজ্বল হয়, দাগ চলে যায়। এই মাস্ক সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন ব্যবহার করতে হবে।
সাবুদানায় সান ট্যান রিমুভ হয়
যাদের অতিরিক্ত রোদের কারনে সান ট্যান হয় সাবুদানা দিয়ে সান ট্যান রিমুভ করা যায়। সাবু দানা পেষ্ট করে এর সাথে মধু এবং দুধ মিশিয়ে হাত ও ফেসে ভাল করে লাগাতে হবে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সান ট্যান রিমুভ হয়।
সাবুদানায় হৃদরোগ দূর হয়
সাবুদানার উপকারিতা জানার জন্য গবেষকরা বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করেছেন এবং সেখানকার একটি ফলাফল থেকে জানা গেছে যে ” সাবুদানা কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমায়।যার ফলে সাবুদানা হৃদরোগের ঝুকি কমাতে সাহায্য করে থাকে। সাবুদানায় প্রচুর পরিমান আ্যমাইলোজ থাকার কারনে হৃদরোগ সুস্থ থাকে। তাই হৃদরোগ থেকে মুক্তি পেতে ও প্রতিরোধ করতে চাইলে সাবুদানা খাওয়া উচিৎ।
মেনোপজের সময় সাবুদানার উপকারিতা
মেনোপজের সময় সাবুদানা খেলে উপকার পাওয়া যায়। কারন মেনোপজের সময় মহিলাদের হরমোন পরিবর্তন হয়। যার কারনে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়৷ অতিদ্রুত হরমোন পরিবর্তন হওয়ার সাথে শরীর খাপ খাওয়াতে পারেনা। সাবুদানা খেলে এর মধ্যে থাকা উপাদান গুলো হরমোনাল পরিবর্তন এর মাধ্যমে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে।
সাবুদানার অপকারিতা
সাবুদানার তেমন কোনো ক্ষতিকর দিক নেই৷ তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন-
ওজন বাড়াতে পারে
যারা অতিরিক্ত ওজনের আছেন তাদের সাবুদানা খাওয়া উচিৎ নয়৷ কারন সাবুদানা অতিরিক্ততা ওজনের জন্য দায়ী। সাবুদানায় যে পুষ্টি উপাদান গুলো থাকে এগুলো ওজন বৃদ্ধির জন্য দায়ী।
সাবুদানা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়
সাবুদানা খেলে অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। সাবুদানা শর্করা জাতীয় খাবার। সাবুদানা খেলে এটি পাচন প্রক্রিয়ায় শোষিত হয়, যার কারনে মলত্যাগের জন্য যে পরিমান আশ প্রয়োজন তা কমে যায়। সাবুদানা বেশিক্ষন জ্বাল করলে এরকম সমস্যা হয়ে থাকে।
সাবুদানা ডায়াবেটিস রুগির জন্য ক্ষতিকর
যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের সাবুদানা খাওয়া উচিৎ নয়৷ সাবুদানা গ্লাইসেমিক ইনডেক্সে উচ্চ একটি খাবার। যার কারনে ডায়াবেটিস রুগির জন্য সাবুদানা খাওয়া ক্ষতিকর।
সাবুদানা খেলে এলার্জি হয়
সাবুদানা খেলে অনেক সময় এলার্জির সমস্যা বেড়ে যায়। তাই যাদের এলার্জি তাদের সাবুদানা খাওয়া উচিৎ নয়।
সাবুদানা খেলে লিভারের সমস্যা হতে পারে
সাবুদানায় অতিরিক্ত পরিমান ষ্টার্চ রয়েছে। যার কারনে নিয়মিত সাবুদানা খেলে লিভারের সমস্যা হতে পারে।
যেভাবে সাবুদানা খাবেন
সাবুদানা অনেক ভাবে খাওয়া যায়। অনেকে সবজির সাথে মিশিয়ে সাবুদানা খায়, পায়েস বা খিচুড়ি বানিয়ে খায়, আবার অনেকে সাবু দানার বড়া বানিয়েও খায়।
সাবু দানা ও সবজি রেসিপি
উপকরণ:
- সাবুদানার রেসিপি বানানোর জন্য ১ কাপ সাবুদানা নিতে হবে।
- এবার পছন্দমত বিভিন্ন সবজি (গাজর, আলু, বরবটি, মটরশুটি) ১ কাপ নিতে হবে।
- পেঁয়াজ কুচি ১/২ কাপ
- আদা বাটা ১ চা চামচ
- রসুন বাটা ১ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ
- মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ
- ধনে গুঁড়া ১ চা চামচ
- জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ
- গরম মশলা গুঁড়া ১ চা চামচ
- এবং লবণ স্বাদমতো নিতে হবে।
- সরিসা বা সয়াবিন তেল পরিমাণমতো নিতে হবে।
প্রণালী/ যেভাবে রান্না করবেন
১. একটি পাত্রে এক কাপ সাবুদানা ভালকরে ধুয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন।
২. একটি কড়াই পরিষ্কার করে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ভাজতে থাকুন যতক্ষন বাদামী না হয় ততক্ষন ভাজতে হবে৷
৩. পেঁয়াজ বাদামি হলে আদা বাটা, রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, জিরা গুঁড়া দিয়ে ভাল করে কষিয়ে নিতে হবে।
৪.এবার কষানো মসলার সাথে সবজি কুচি দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন।
৫. কষানো হয়ে গেলে পরিমাণমতো পানি দিয়ে সবজি সেদ্ধ করে নিন।
৬. সবজি সিদ্ধ হয়ে এলে সিদ্ধ সবজির মধ্যে সাবুদানা দিয়ে নেড়েচেড়ে দিন।
৭. সাবুদানা যখন সিদ্ধ হবে তেল উপরে ভেসে উঠবে তখন গরম মশলা গুঁড়া ও লবণ দিয়ে ভালো করে নেড়েচেড়ে নামিয়ে নিন।
ব্যস তৈরি হয়ে গেল সাবুদানা দিয়ে সবজি। এবার গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।
সাবুদানার পায়েস
সাবুদানার পায়েস তৈরি করতে প্রয়োজনীয় উপকরন–
- পায়েস তৈরির জন্য সাবুদানা লাগবে ১ কাপ
- গরু অথবা পাউডার দুধ ২ লিটার
- চিনি ১ কাপ নিতে হবে
- কিশমিশ ১ টেবিল চামচ
- এলাচ গুঁড়া হাফ চা চামচ
- দারুচিনি গুঁড়া হাফ চা চামচ
- কেওড়া জল ১ টেবিল চামচ
- এবং লবণ স্বাদমতো নিতে হবে।
সাবুদানার পায়েস রান্নার প্রনালী
- ১. প্রথমে একটি পাত্রে সাবুদানা ধুয়ে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।
- ২. একটি কড়াইতে পরিমান মতো দুধ জ্বাল দিতে হবে।
- ৩. দুধ ফেটে গেলে সাবুদানা দিয়ে ভালকরে নেড়েচেড়ে দিতে হবে।
- ৪. সাবুর পায়েস রান্নার সময় চুলার জ্বাল মাঝারি রেখে সাবুদানা ঘন ঘন নাড়তে হবে। সাবুদানা সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত একটু পর পর নেড়ে দিতে হবে।
- ৫. সাবুদানা সিদ্ধ হলে সাবুদানার পরিমান বেড়ে যায় বা এর আকার দ্বিগুণ হয়ে যায়। এবার এতে চিনি, কিশমিশ, এলাচ গুঁড়া, দারুচিনি গুঁড়া, কেওড়া জল ও লবণ দিয়ে ভালো করে নেড়েচেড়ে দিতে হবে।
- ৬. কয়েক মিনিট পরেই সুন্দর মিষ্টি গন্ধ বের হবে। এবার নামিয়ে পরিবেশন করুন।
সাবুদানার বড়া রেসিপি
সাবু দানার বড়া অত্যন্ত সুস্বাদু একটি খাবার। সাবু দানার বড়া বানাতে যা যা উপকরন লাগবে-
- সাবুদানা ১ বা ২ কাপ
- মাঝারি সাইজের আলু ২ থেকে ৩ টি সেদ্ধ করে হালকা তেকে চটকে নিতে হবে৷
- পেঁয়াজ কুচি করা ১/২ কাপ
- কাঁচা মরিচ ৪-৫টি যদি ঝাল বেশি খান তাহলে পরিমান বাড়াতে পারেন। কাচামরিচ কুচি করে কাটতে হবে।
- ধনেপাতা কুচি ১/২ কাপ
- লবণ স্বাদমতো
- হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ
- মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ
- জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ
- ধনে গুঁড়া ১ চা চামচ
- এবং গরম মশলা গুঁড়া ১ চা চামচ নিতে হবে।
যেভাবে সাবুদানা বানাতে হবে-
- ১. একটি পাত্রে সাবুদানা নিয়ে ভালো করে ধুতে হবে।
- ২. কড়াইতে পরিমান মত তেল দিয়ে ভালকরে গরম করে নিতে হবে।
- ৩. পেঁয়াজ কুচি নিয়ে গরম তেলে ভাল করে ভেজে নিতে হবে৷ এবার কাঁচা মরিচ কুচি, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, ধনে গুঁড়া দিয়ে কষিয়ে নিন।
- ৪. এবার মসলার মধ্যে সেদ্ধ আলু মিশিয়ে ভাল করে মাখিয়ে নিন।
- ৫. স্বাদের জন্য লবণ ও গরম মশলা গুঁড়া দিয়ে আবারও মাখিয়ে নিতে হবে।
- ৬. এবার মিশ্রনের মধ্যে সাবুদানা দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- ৭. এবার মিশ্রন গুলো হাতে নিয়ে বড়ার শেপ দিয়ে ডুবো তেলে ভাজুন।
আসল সাবু দানা চেনার উপায়
বাজারে এখন আসল জিনিস খুজে পাওয়া দায়। নকল দাবুদানা ময়দা দিয়ে বানানো হয়। নকলের ভিড়ে আসল সাবুদানা চিনতে বেশ কিছু উপায় আছে। যেমন-
- নকল সাবুদানা পানিতে দিলে গুড়ো হয়ে যায় বা গলে যায়৷ কিন্তু আসল সাবুদানা কখনো গলে যায়না।
- নকল সাবুদানা চেনার উপায় হলো পানিতে সাবুদানা দিলে পানি ঘোলাটে হয়। আসল সাবুদানা পানিতে দিলে পানি ঘোলাটে হয় না।
- নকল সাবু দানার কটু বা অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানের গন্ধ পাওয়া যায়। কিন্তু আসল সাবু দানার মধ্যে কোনো কটু গন্ধ থাকেনা। আসল সাবু দানার গন্ধ অনেক মিষ্টি বা হাল্কা হয়।
- আসল সাবুদানা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ফুলে যায় কিন্তু নকল সাবুদানা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ফুলে যায়না।
দৈনিক কি পরিমান সাবুদানা খাওয়া যায়
সাবুদানার পরিমান বিভিন্ন বয়সী মানুষের জন্য ভিন্ন হয়ে থাকে৷ যেমন একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ প্রতিদিন ১ থেকে ২ কাপ সাবুদানা খেতে পারে।
শিশুদের ক্ষেত্রে বয়স অনুযায়ী ধীরে ধীরে সাবুদানা যোগ করতে হয়৷ শিশুর বয়স যদি ছয় মাস হলে সাবুদানা খাওয়ানো যায়। ছয় থেকে এক বছর শিশুদের প্রতিদিন এক থেকে দুই চামচ সাবুদানা খাওয়ানো যাবে। দেড় থেকে তিন বছরের শিশু প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন চামচ সাবুদানা খেতে পারবে৷ তিন থেকে ছয় বছরের শিশুরা চার চামচ সাবুদানা খেতে পারবে। আর ছয় বা এর বেশি বয়সী শিশুরা প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মত সাবুদানা খেতে পারবে।
শেষ কথা
সাবুদানা অত্যন্ত উপকারি একটি খাবার। এর উপকারিতার জন্য অনেকেই একে সুপারপফুড বলে থাকে৷ সাবুদানার উপকারিতা আসলে বলে শেষ করা যাবেনা। সাবুদানা এমন একটি খাবার যা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাইকে খাওয়ানো হয় এবং সবার কাছে ব্যপক জনপ্রিয় একটি খাবার। সাবুদানা যেমন সুস্বাদু ঠিক তেমনি পুষ্টিকর একটি খাবার। তাই নিজের এবং বাচ্চার সুস্থতায় নিয়মিত সাবুদানা খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে পারেন। তবে অবশ্যই নিয়ম মেনে পরিমিত উপায়ে সাবুদানা খেতে হবে। কখনোই পরিমানের চেয়ে বেশি সাবুদানা খাওয়া উচিৎ নয়।
Also Read: পাকা কাঁঠালের উপকারিতা এবং অপকারিতা