Dreamy Media BD

থাইল্যান্ডের দর্শনীয় স্থান

থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ড- নামটি উঠলে, এর সাথে আপনা-আপনিই কিছু বিশেষন যুক্ত হয়ে যায়। যেমন:গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু, দুর্দান্ত খাবার, আকর্ষণীয় সংস্কৃতি এবং দুর্দান্ত সৈকতের পাশাপাশি থাইল্যান্ড কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বাধিক ভ্রমনকৃত দেশ। এটিকে আপনি হয় ‘হাসির দেশ’ ও বলতে পারেন।

 

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ডের প্রাণকেন্দ্র এই থাইল্যান্ড। যেহেতু ব্যাংকক হলো একটি আন্তঃমহাদেশীয় ফ্লাইট হাব এবং এখানে রয়েছে তুলনামূলকভাবে ভাল অবকাঠামো। তাই দেশটি বেশিরভাগ বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য এই অঞ্চলের প্রবেশদ্বার বলাই যায়। দেশটির অপরূপ সৌন্দর্যে মোহাচ্ছন্ন হয়ে যায় প্রত্যেকটি পর্যটক।

 

মনে দাগ কেটে যায় তার আবেশ। ভুলতে না পারা পকৃতির সব মোহনীয় সৌন্দর্য পর্যটকদের শরীর ও মন দুটোই ছুঁয়ে যায় পরম আবেগে। প্রকৃতির এই বিশালতার মাঝে নিজেদেরকে খুঁজে পান না আর প্রকৃতিপ্রেমীরা। স্মৃতিতে চির অম্লান হয়ে থেকে যায়। যার জন্যে প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন থাইল্যান্ডের সৌন্দর্যে নিজেদের ভ্রমন পিপাসু অন্তরাত্মার খোরাক যোগাতে।

 

তাদের দলে কিন্তু বাংলাদেশিও কম না। তবে বাংলাদেশের মানুষজন সেখানে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হোন। আজ আমরা এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে  আপনাদেরকে থাইল্যান্ডের প্রধান প্রধান পর্যটন স্থল এবং ভ্রমনগাইড সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করবো।

 

১.ব্যাংকক

 থাইল্যান্ডের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে  ব্যাংকক অন্যতম I থাইল্যান্ডের রাজধানী শহর হলো ব্যাংকক ।  প্রানবন্ত এই ব্যাংকক শহরটি থাইল্যান্ডের উপসাগরের বেশ কাছে ফ্রায়া নদীর কুল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। তবে রঙিন শহর নামেও কিন্তু বেশ একটা পরিচিতি আছে ব্যাংককের।

 

সৌন্দর্যের লীলাময় ভূমির এই শহরটি যেন কোনো এক সুন্দরী রমনীর বেশে ভ্রমনপ্রেমীদের ডেকে যায় অবিরত। আর তাই ভ্রমন পিপাসুরা এই রঙিন শহরে গিয়ে নিজেদের আরও প্রানবন্ত আরও সজীব করে তুলেন। তাদের পছন্দের তালিকায় কিন্তু ব্যাংককে সবসময়ই তারা প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

 

ব্যাংকক শহর পুরোটাই জুড়ে রয়েছে উপভোগ করার মতো সৌন্দর্য। তবে কিছু স্থানের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। সেগুলোর সাথেই আজকে আপনাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিই চলুন।

 

আরও পড়ুন -আহসান মঞ্জিল -এরইতিহাস

গ্র্যান্ড প্যালেস :

থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় সব স্থানগুলোর মধ্যে গ্র্যান্ড প্যালেস একটি অন্যতম স্থান হিসেবে বেশ সুপরিচিতি লাভ করেছে। ফ্রা নাখোন জেলায় বিদ্যমান রত্নকোসিন দ্বীপের কেন্দ্রস্থলে বয়ে যাওয়া চাও ফ্রায়া নদীর তীরে অবস্থিত এই গ্র্যান্ড প্যালেস।

মূলত ১৭৮২ সাল থেকেই এই প্যালেস থাইল্যান্ডের রাজা ও রয়্যাল কোর্টের সরকারি ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই গ্র্যান্ড প্যালেসটি থাই রাজ পরিবারের প্রধান স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে মূলত রাজা প্রথম রামা কর্তৃক জাতির রাজধানী হিসাবে ব্যাংকক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই। আর বর্তমান সময়ে, রয়্যাল ফ্যামিলি চিত্রলদা প্রাসাদে থাকে তখন,যখন গ্র্যান্ড প্যালেস আনুষ্ঠানিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।

এখানে এসে আপনি দেখতে পাবেন,গ্র্যান্ড প্যালেসের প্রাঙ্গনের মধ্যে অবস্থিত ওয়াত ফ্রা শি রাট্টানা সাতসাদারাম বা ওয়াত কায়েও বা চ্যাপেল রয়্যাল বা এমারেল্ড এর বুদ্ধ মন্দির। মন্দিরটির প্রধান ভবনটি মূলত একটি পান্না সবুজ বর্ণের বুদ্ধের মূর্তির কেন্দ্রীয় গৃহস্থল। এমারেল্ড বুদ্ধ মন্দিরের মিউজিয়ামটি কিন্তু ফ্রা থিনাঙ্গ মহা প্রসাত গ্রুপের বিপরীতে অবস্থিত। চোখে পড়বে মিউজিয়ামের একতলায় থাকা বিভিন্ন শিল্পকর্মের চিত্র প্রদর্শনী।

আবার কেন্দ্রীয় সভাগৃহটি সাদা হাতির অস্থির প্রদর্শনী হিসেবে আবিষ্কার করবেন। একসময় এই হাতিগুলির কি সুন্দর গোলাপী রং-এর কোমল চোখ ছিল। এগুলো মূলত রাজপদের এক অপরিহার্য প্রতীক ছিল এবং তাদের সম্পদশালীনতা রাজার খ্যাতিকে বেশ একটা প্রভাবিত করেছিল- যার যত সাদা হাতি থাকবে তাঁর তত প্রতিপত্তি হবে।

এদিকে আবার রাজ্যাভিষেকের পটমন্ডপ, রাজকীয় অলংকরণ ও মূদ্রা যাদুঘরে গিয়ে আপনি দেখতে পাবেন-অলঙ্কারাদি,মূদ্রা, রাজপোশাক,রাজ দরবারে ব্যবহৃত রাজকীয় অলংকরণ প্রদর্শন। আসলে এই ভবনটির একটি গুরুত্বপূর্ণ ইমারত হলো ফ্রা থিনাঙ্গ আমারিন্ উইনিটচাই মাহাইসূর্য ফিমান।

এই থাই শৈলীর সিংহাসন সভাগৃহটি নির্মিত হয়েছিলো বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য।
এছাড়াও গ্র্যান্ড প্যালেস ভবনের আরোও অন্যান্য কিছু আগ্রহদীপ্ত পরিদর্শনমূলক স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজ পরিবারের দপ্তর, সিওয়ালাই বাগিচা,সালা লূক খুন নাই, সালা সাহাথাই সামাখোম,হো শাস্ত্রখোম, হো ফ্রা দেট মোন্তিয়েন এবং হো ফ্রা দেট মোন্তিয়েন।

তবে এখানে যেতে হলে আপনাকে কিন্তু নৌকায় করে যেতে হবে। আর নৌকায় যাওয়ার সময় আপনি অদ্ভুত সুন্দর ভাবে অবলোকন করতে পারবেন গ্র্যান্ড প্যালেসের সৌন্দর্য। আপনি যদি ভ্রমনপ্রেমী হোন তাহলে ব্যাংককের এই দারুণ সুন্দর জায়গাটি দেখে আসতেই পারেন।
গ্র্যান্ড প্যালেস মূলত বছরের প্রতিদিনই সকাল ৮:৩০–বিকাল ৩:৩০পর্যন্ত খোলা পাবেন। তবে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এখানকার আবহাওয়া বেশ মনোরম থাকে। তাই এই সময়ই কিন্তু গ্র্যান্ড প্যালেস পরিদর্শনের সেরা সময়। গ্র্যান্ড প্যালেসে প্রবেশের জন্য আপনার টিকিটের মূল্য পড়বে 400 বি.এইচ.টি(জন প্রতি)।

 

ওয়াত অরুন :

এটি মূলত একটি বৌদ্ধ মন্দির। ব্যাংককে অবস্থিত এই বৌদ্ধ মন্দিরটি “দ্যা টেম্পল অফ ডন ” নামেও বেশ পরিচিত। এই মন্দিরটির বিস্তৃতি রয়েছে গ্র্যান্ড প্যালেসের বিপরিতে পুরো চাও ফ্রায়া নদী জুড়ে। এই অদ্ভুত সুন্দর স্থাপনাটির উপর যখন সকালের প্রথম আলো প্রতিফলিত হয়,তখন এক মন্ত্রমুগ্ধ পরিবেশের সৃষ্টি করে। যার জন্যে ব্যাংককের এই ওয়াত অরুণ, ভোরের মন্দির বা ঊষার মন্দির হিসাবেও পরিচিত।

আবার জানা যায়,ওয়াত অরুণ মন্দিরটির নাম উদ্ভূত হয়েছে ভারতীয় ঈশ্বর অরুণের নাম থেকে। যার অর্থ দাঁড়ায়- ভোরের দেবতা। এটি ব্যাংককের একটি প্রধান পর্যটনের আকর্ষণ। পর্যটকরা সূর্যাস্তের সময় এই মন্দিরটির শ্রেষ্ঠ দৃশ্য উপভোগ করতে চলে আসেন। ওয়াত অরুণ মূলত রাজা তৃতীয় রামার সময়কালে এসে সম্পূর্ণতা পায়। শুধু তাই নয়,এই মন্দিরটি তার কৃতিত্বের স্তম্ভগুলির জন্যও কিন্তু বেশ সুপরিচিত- যেটি নির্মিত হয়েছিল ক্ষমের শৈলীতে। ওয়াত অরুণের একটি মহিমান্বিত দৃশ্য আপনি উপভোগ করতে পারবেন থোনবুড়ি নদীর সম্মুখ থেকে। নদীর অন্য এক পারে নির্মিত এক রেস্তোঁরায় বসে ডিনারের সময় আপনি উপভোগ করতে পারেন ওয়াত অরুণ-এর একটি দারুণ মনোরম দৃশ্য।

ওয়াত অরুণের পারিপার্শ্বিক নির্মল ও শান্তিপূর্ণ বাতাবরণে ঘেরা। মাউন্ট মেরুর একটি সুন্দর স্থাপত্য উপস্থাপনা হিসাবে নকশায়িত করা হয়েছে ওয়াত অরুনকে। এছাড়াও এটি মাভেন দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করে অন্বেষিত একাগ্রতার। 79 মিটার উঁচু চারটি ছোট ছোট কীর্তিগুলি মূলত সেরামিক টাইলস ও বহু রঙের চীনামাটি ভগ্নাংশের সঙ্গে সুন্দর ভাবে সুশোভিত রয়েছে। এর বাইরের কীর্তিটিতে দেখতে পাবেন পবন দেবতা, ফ্রা ফাই-এর মূর্তি। এই মূর্তিগুলির সম্ভারও মোজাইক সজ্জার সঙ্গে বেশ প্রাচুর্যপূর্ণ রয়েছে। ধারনা মতে চিত্তাকর্ষক পৌরাণিক অথবা কাল্পনিক দৈত্যরা মন্দির ভবনটির প্রবেশদ্বারে নাকি সতর্ক পাহারা দিচ্ছে। আর দেওয়ালগুলিতে বর্ণিত রয়েছে রাজকুমার সিদ্ধার্থের মৃত্যু, জন্ম, ব্যাধি, বৃদ্ধ বয়স ও অসুস্থতার দৃষ্টান্ত। দ্বিতীয় রামার অস্থিভস্ম কিন্তু বু্দ্ধ মূর্তিটির ভিতের মাঝেই সমাহিত করা হয়। ওয়াত অরুণ পরিদর্শনের সেরা সময় হলো সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময়। এ সময় ওয়াত অরুণ খুবই চমৎকার দেখায়। দুপুরবেলায় সাধারনত তাপমাত্রা উপরে উঠতে পারে। সুতরাং খুব ভোর কিংবা সন্ধ্যাবেলা হলো ওয়াত অরুণ পরিদর্শনের একান্তই সেরা সময়। তবে ওয়াত অরুণ সকাল 8:00-টা থেকে সন্ধ্যা 6:00-টা. পর্যন্ত খোলা থাকে।

 

ওয়াট ফ্রা কাইয়ো :

এটি একটি বৌদ্ধ মন্দির। আর থাইল্যান্ডের ব্যাংকক বাসীদের কাছে এই বৌদ্ধ মন্দিরটি সবচেয়ে পবিত্র মন্দির হিসেবে পরিচিত। গ্র্যান্ড প্যালেসের ভিতরে অবস্থিত এই ওয়াট ফ্রা কাইয়োতে এক বিশেষ ধরনের গাঢ় সবুজ বর্ণের বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে যা সকল পর্যটকদের মূল আকর্ষণ। এমারেল্ড বুদ্ধের মন্দির হিসাবেও পরিচিত ওয়াত ফ্রা কেইওকে ব্যাংককের সবচেয়ে এক অন্যতম পবিত্র স্থান হিসেবে ধরা হয়। এটি বললে খুব একটা ভুল হয়ে যাবে না যে, ওয়াত ফ্রা কেইও পরিদর্শন ব্যতীত আপনার ব্যাংকক সফর কিছুটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এটিতে রয়েছে 2 ফুট উচ্চতার একটি গাঢ় সবুজ বর্ণের বৌদ্ধ মূর্তি ।

একটি কাহিনী মতে, চিয়াং রাইয়ের একটি স্মৃতিস্তম্ভের মধ্যে নাকি একসময় এমারেল্ড বুদ্ধকে একটি উপলেপণের মধ্যে আবৃত করে রাখা হয়েছিল। যা কিনা 1434 সালের এক তীব্র বজ্রপাতের প্রভাবে উন্মোচিত হয়ে পড়ে। তখন থেকেই অন্য রাজারা এটিকে তাদে দেশে স্থানান্তরণের কম চেষ্টা করেন নি। অবশেষে বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ানোর পর এই মূর্তিটির স্বায়িত্ব হয় ওয়াত ফ্রা কেইও-তে।

রাজা প্রথম রামা এমারেল্ড ওয়াত ফ্রা কেইও-র নির্মান করেছিলেন মূলত বুদ্ধের মূর্তিটিকে মন্দিরস্থ করার তাগিদে। একটা মজার ব্যপার হলো বিভিন্ন ঋতুর পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এমারেল্ড বুদ্ধের মূর্তিটিকে কিন্তু ঋতুভিত্তিক পোশাক-পরিচ্ছদে আবৃত করা হয় আর যা কিনা বছরে তিনবার পরিবর্তন করা হয়। যথারীতি গ্রীষ্মকালে মূর্তিটিকে সুশোভিত করা হয় মুকুট এবং মণিরত্ন দিয়ে, শীতকালে এটিকে আবৃত করা হয় একটি সুবর্ণ শাল এবং বর্ষার মরশুমে আপনি লক্ষ্য করবেন এমারেল্ড বুদ্ধ মূর্তিটি পোশাক ও পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় রয়েছে যেগুলো স্বর্ণমন্ডিত।

ব্যাংকক সফরে এলে ওয়াত ফ্রা কেইও পরিদর্শনের পর আপনি মন্দির ক্ষেত্রের উপর অবস্থিত তিনটি বিখ্যাত প্যাগোডা বা বৌদ্ধমন্দির দর্শন করতে পারেন। ওয়াত ফ্রা কেইও-এর পশ্চিমে বিস্তৃত ফ্রা স রাতানা ছেডি, যাতে আপনি দেখতে পাবেন বুদ্ধের দেহভস্ম। আবার মাঝখানে অবস্থিত ফ্রা মন্ডপ হল একটি গ্রন্থাগার এবং পূর্বের দিকে দন্ডায়মান রয়্যাল প্যানথোন যা চক্রী রাজবংশের প্রতিস্থাপনের স্মৃতিরক্ষার্থে নির্মিত।

ব্যাংকক গেলে পরিদর্শনের জন্যে নয়নাভিরাম সুন্দর এই ওয়াত ফ্রা কেইও তে আপনি যেতে পারেন। তবে ওয়াত ফ্রা কেইও এমারেল্ড দর্শনের সময় হলো- প্রতিদিন সকাল 8:00-টা – বিকেল 4:00-টে পর্যন্ত। আপনি সকাল দিকে যাবেন। এ সময় আবহাওয়া শীতল ও কম ভিড় থাকে। তাই এই সময়টাই পরিদর্শনের জন্যে শ্রেয়।

 

ফ্লোটিং মার্কেট বা ভাসমান বাজার :

 

ব্যাংককের একটি অন্যতম প্রধান আকর্ষণ কেন্দ্র হলো ফ্লোটিং মার্কেট বা ভাসমান বাজার। ব্যাংককে গিয়েছেন অথচ ফ্লোটিং মার্কেটে যান নি -এমন মানুষ হয়ত খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। এখানে মূলত কাঠের নৌকায় নানা ধরনের পণ্য সাজিয়ে পানির উপর কেনাবেচা। যেখানটা মুখরিত হয়ে থাকে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটকের সমাগমে৷ কি সুন্দর ছোট ছোট বোটে সাজানো থাকে রকমারি সবজি আর ফলের সমাহার!

 

আর এর সঙ্গে তো রয়েই আছে মাথায় বাঁশের টুপি পরা থাই মেয়েদের বেচা-কেনার এক সুন্দর মনোরম এক দৃশ্য৷  ১৮৬৬ সালে রাতচাবুড়ি আর সামুতসাখোন রাজ্যের মধ্যে নৌপথে যাতায়াত চালু করতেই মূলত দামনিওন সাদুয়াক নামক একটি খাল কাটা হয়৷ আবার ধরুন স্থানীয় কৃষিকাজেও এই খালের পানি খুব সহযোগীতা করে৷ আম,কলা,মালাক্কা গ্রেপ, চাইনিজ আঙুর, নারকেলসহ একাধিক ফল আর সবজিও জন্মায় এখানে৷ আর এখানকার বিক্রেতারা নানা রকমের ফল,মিষ্টি,সবজি,গোশত ছোট ছোট বোটে ভরে ফেরি করে বেড়ান। অল্প কিছুদূর এগুলেই আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে খালের পাড় ঘেঁষে বাহারি সব সাজানো দোকান। বোট থামিয়ে কেনাকাটায় বেশির ভাগই থাই ট্রেডিশন পোশাক,পাখা, হ্যান্ডিক্রাফ্ট, নারকেলের খোলার শোপিস-লাইট, ভ্যারাইটিজ টাইপের মাথার ক্যাপ, ওয়ালম্যাট,পেইন্টিং, ফ্রুটস, নৌকাভর্তি ডাব সব মিলে যেন এক এলাহিকান্ড। আর নির্জন খালের বাঁকে বাঁকে নিভৃতে দোকানগুলোতে ডল টাইপের মেয়েদের বেচাকনা দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না৷ ছোট লাঠি রাখে বোটগুলোকে দোকানে ভেড়ানো,খালের দুই ধারের অসংখ্য নারকেল গাছ, আবার মাঝে মাঝে আবাসিক বাড়ি,খালের অলিগলিও কিন্তু কম না, ৬০/৭০ বছর বয়সী বুড়ীরা নির্বিঘ্নে নিশ্চিন্তে বোট চালাচ্ছে আর যাত্রীদের কাছে ডাব বিক্রি করছে–কিরকম যেনো এক অচিন দৃশ্য! দ্বীপের মত একটা জায়গায় অসংখ্য নারকেল গাছে ভরা। সেখানে আবার খেজুরের রসের মত করে পাতিল ঝুলানো থাকে।

 

এই রস আবার গ্লাসে করে আইস দিয়ে তারা পর্যটকদের আপ্যায়ন করে৷ খেতে কিন্তু বেশ সুস্বাদু। কিছুদূর এগুলেই দেখা মেলে লাল রঙের বিভিন্ন কারুকাজের টেম্পল। এসব টেম্পলের গা ঘেঁষেই রয়েছে অনেক জাতের মাছ। খাবার দিলেই দেখতে পাবেন এদের উথাল পাথাল লাফালাফি। ভেলায় ভেসে জিনিসপত্র কিনতে কিনতে আপনি দেখে নিতে পারবেন  খালের পাশে অবস্থিত ট্রেডিশনাল থাই বাড়িঘর৷ নিজ চেখে দেখারও সুযোগ রয়েছে থাইদের নিজস্ব খানাপিনা।

 

দামনিওন সাদুয়াক থেকে আরও যে ছোট ছোট খাল বিভিন্ন দিকে বিস্তৃত হয়ে রয়েছে সেগুলোর শোভাও কোনো অংশে কম নয়!সেখানে যাওয়ার জন্যে রয়েছে বোট ট্রিপ সার্ভিস। পুরো এলাকাটি ঘুরতে আপনার ৪ থেকে ৫ ঘন্টা সময় লেগে যাবে৷ থাইল্যান্ডল যত বেড়াতে যাওয়ার জায়গা রয়েছে, তাদের মধ্যে এই দামনিওন সাদুয়াক ভাসমান বাজারটি ‘মোস্ট ফটোগ্রাফড’ ডেস্টিনেশন৷  প্রতিদিন সকাল ৭টা হতে ১০টা পর্যন্ত এই ভাসমান বাজারটি বেশ জমজমাট থাকে। আর সেখানে আপনার বোট বা নৌকা ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ২০০-৩০০ বাথ আর মটর চালিত নৌকার ভাড়া পড়বে ৬০০-৮০০ বাথ।

 

ওয়াট ফো :

এটি থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অবস্থিত আরেকটি আকর্ষণীয় বৌদ্ধ মন্দির। এই মন্দিরকেই মূলত ব্যাংককের ঐতিহ্যবাহী থাই ম্যাসাজের জন্মস্থান বলে মনে করা হয়।এই মন্দিরটিকে থাইল্যান্ডের একটি অন্যতম প্রধান মন্দির হিসেবেও গণ্য করা হয়। প্রথম রামের রাজত্বকালে নির্মিত হয়েছিল এই মন্দিরটি এবং বোহট,ওরফে অর্ডিনেশন হল নির্মিত হয়েছিলো রাজা তৃতীয় রামের রাজত্বকালে। ব্যাংককে অবস্থিত এই মন্দিরটি থাইল্যান্ডের সবচেয়ে প্রাচীনতম এবং পবিত্র মন্দিরগুলির মধ্যে একটি। যা আপনাকে সম্মোহিত করতে পারে এর মোহনীয় সৌন্দর্য এবং আনন্দের সাথে।ধর্মীয় কাঠামোর দিক থেকে এটির তিনটি উল্লেখযোগ্য নাম রয়েছে: ওয়াট ফো, ওয়াট ফ্রা চেতুন এবং টেম্পল অফ রিক্লাইনিং বুদ্ধ।

 

এই সাইটটি এক সময় অবিশ্বাস্যভাবে বিখ্যাত ছিল। কারণ বেশ কিছু স্থানীয় লোক তখন এখানে এসেছিলেন মেডিসিন এবং থাই ম্যাসেজের গ্রিপিং কৌশল  অধ্যয়ন করতে এবং শিখতে। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ঘুরতে গিয়ে আপনি এই স্থানটি চাইলে দেখে আসতে পারেন। এই ওয়াট ফো মন্দিরটি আপনি খোলা পাবেন সকাল 8.30 থেকে বিকাল 5 পর্যন্ত।

 

লুম্ফিনি পার্ক:

ব্যাংকক শহরের কোলাহল থেকে একান্ত নিরিবিলিতে থাকার জন্য একদম শান্ত প্রকৃতি প্রেমিকদের ভালো লাগার মতো সুন্দর ও আকর্ষনীয় একটি জায়গা হলো লুম্ফিনি পার্ক। এখানে ঘুরে বেরানো ছাড়াও আপনি এখানকার কৃত্রিম লেকের মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে পারবেম। এটি আসলে অন্য একটি পাবলিক পার্ক, খলং টোয়েই জেলার বেঞ্জাকিট্টি পার্কের সাথে সংযুক্ত রয়েছে সরসিন চৌরাস্তার কোণে যেখানে উইথাইউ রোড সরসিন রোড কেটেছে সেখানে ১.৩ কিলোমিটার উঁচু পথচারী হাঁটার পথ ও একটি সাইকেল লেনের মাধ্যমে।

 

লুম্ফিনি পার্ক আদতে একটি বহুমুখী পার্ক। নাগরিক এবং পর্যটকদের জন্য এখানে নানা রকম কার্যক্রম প্রদান করা হয়। এই পার্কটি একটি সবুজে ঘেরা এলাকা। এখানে আপনি দেখতে পাবেন গাছ, ফুল, হ্রদ এবং বিভিন্ন ধরনের প্রাণী। শুধু তাই নয় পার্কটিতে রয়েছে ব্যাংককের প্রথম পাবলিক লাইব্রেরি এবং নাচের হল। শীতের সময় এই লুম্ফিনি পার্কের পাম গার্ডেনটির একটি জায়গা হয়ে উঠে বার্ষিক কনসার্টের স্থান যেখানে রয়েছে ব্যাংকক সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা এবং অন্যান্য ব্যান্ডের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বৈশিষ্ট্য। সবমিলিয়ে পর্যটকদের জন্য একটি উপভোগ্য জায়গা হলো এই পার্কটি। এটি খোলা থাকে ভোর ৪:৩০- রাত ১০টা পর্যন্ত।

 

চায়না টাউন বা ইয়োওয়ারাট রোড :

 

লোক মুখে ব্যাংককের এই চায়না টাউনের কথা হয়তো সবাই শুনে থাকবেন। শহরের মধ্যেই যেনো এ আরেক শহর চায়না টাউন। এখানে আনন্দ ও মজা করার জন্য রয়েছে নানা বিনোদনের ব্যবস্থা।ব্যাংকক শহরের মধ্যেই অবস্থিত এই শহর চায়না টাউন বা ইয়োওয়ারাট রোডটি পরিদর্শন করতে গেলে আপনি দেখতে পাবেন– এখানে প্রাপ্তবয়স্কদের বিনোদনের জন্যে রয়েছে অঢেল আয়োজন। থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ভ্রমনে গিয়ে এ জায়গাটি ঘুরে আসাই যায়।

 

ব্যাংকক জাতীয় জাদুঘর :

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম জাদুঘর হলো থাইল্যান্ডের এই জাদুঘর। এই জাদুঘরের সংগ্রহশালা এতটাই বিশাল যে কেউ এটি ঘুরে ঘুরে দেখলে আপনার অর্ধেক দিন জাদুঘরেই কেটে যাবে, আর কখন যে সময় চলে যাবে টেরই পাবেন না। এতে রয়েছে মূলত থাই শিল্প ও তাদের ইতিহাসের প্রদর্শনী। এটি দখল করে আছে উপরাজের প্রাক্তন প্রাসাদ (বা ফ্রন্ট প্যালেস), যা জাতীয় থিয়েটার এবং থামমাসাট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অবস্থিত সানাম লুয়াং। যাদুঘরটি 1874 সালে প্রতিষ্ঠিত এবং খোলা হয়েছিল।

 

এর মূল কারন ছিলো রাজা চুলালংকর্ন তার পিতা রাজা মংকুটের রাজকীয় সংগ্রহ প্রদর্শন। সেখানে গেলে আপনি গ্যালারীগুলোতে আবিষ্কার করতে পারবেন নিওলিথিক যুগের থাই ইতিহাসের প্রদর্শনী। এছাড়াও সংকলনে রাজা রাম খামহেং -এর শিলালিপিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সেখানে। যা 2003 সালে নিবন্ধিত হয়েছিলো ইউনেস্কোর মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রামের তাৎপর্যের স্বীকৃতিস্বরূপ। থাইল্যান্ড ঘুরতে গেলে ব্যাংককের এই জাতীয় জাদুঘরটি কিন্তু দেখে আসতেই পারেন। জাদুঘরটি বুধবার-রবিবার সকাল ৯ টা হতে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

 

চাটুচাক সাপ্তাহিক বাজার :

এখানে ঘুরতে গিয়ে আপনি প্রায় ১৫,০০০ মতো দোকান দেখতে পাবেন এই বাজারে। আর পাবেন নানা ধরনের শিল্পকর্ম থেকে শুরু করে কেনাকাটা করার মতো সুন্দর সুন্দর এমন অনেক জিনিসের সন্ধান। এখানে ঘুরতে যাওয়ার এক অন্যরকম মজা উপভোগ করতে পারবেন আপনি। ব্যাংককে গেলে একবার এই বাজারটি ঘুরে আসতে পারেন।

 

ব্যাংকক সাফারি ওয়ার্ল্ড :

মুক্ত পরিবেশে বন্য প্রাণীদের এক অভয়ারন্য হচ্ছে এই সাফারি পার্ক। তবে এই সাফারি ওয়ার্ল্ড পুরোপুরি ভালো করে দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই হাতে সময় নিয়ে যেতে হবে তাহলেই কেবল পুরো সাফারি ওয়ার্ল্ড ঘুরে দেখতে পারবেন। সুন্দর মনোরম এর পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবে। এটি সোমবার বন্ধ থাকে। বাকি দিনগুলোতে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪:৩০/৫:০০ পর্যন্ত খোলা থাকে। এছাড়াও হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন ব্যাংককের আরও কিছু সুন্দর জায়গায়৷ যেমন-ওসান ওয়ার্ল্ড,ব্যাংকক ড্রিম ওয়ার্ল্ড,মাদাম তুসো মিউজিয়াম এদের মতো দারুণ জায়গা গুলোতে।

[table id=3 /]

 

ব্যাংকক ভ্রমণে আপনার খরচ পড়বে এভাবে-

শহরের ভিতরে আপনি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা যেতে চাইলে সেক্ষেত্রে মেট্রো রেল, স্ক্যাই ট্রেন, নৌকা ও মোটর সাইকেল সার্ভিস বেশ ভালো। বিমানে ব্যাংকক যাওয়া ও আসা মিলিয়ে খরচ পড়বে জনপ্ৰতি ১১০০০-১৫০০০ টাকার মতো। আর যদি আপনি বিমানের টিকেট আগে করে রাখেন আর  কম খরচের মধ্যে হোটেলে থাকতে চান তাহলে সবমিলিয়ে এককভাবে ব্যাংকক গেলে জন প্রতি খরচ পড়বপ ৩৫০০০-৩৭০০০ টাকার মতো। তবে এখানে যদি গ্রুপ করে যান তাহলে থাকার, যাতায়াত ও খাবারের খরচ শেয়ার করার ফলে মোটের উপর খরচ কিছুটা কম হবে। সেক্ষেত্রে ধরুন ৬/৭ জন মিলে গেলে ২৭০০০-৩০০০০ টাকার মধ্যেই হয়ে যাবে। কিন্তু যার যার ব্যাক্তিগত খরচ ও শপিং খরচ গুলো আলাদা হিসেব।

 

ব্যাংকক ভ্রমণের কিছু টিপস-

  • ব্যাংককে মোটর সাইকেল ভাড়া করে নিয়ে অনেক জায়গায় ঘুরা যায়। যা আপনার ভ্রমণ খরচ বেশ নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
  • ট্র্যাভেল ট্যাক্স জমা দিয়ে দিবেন ভ্রমনের পূর্বেই।
  • ব্যাংককের স্থানীয় মুদ্রার নাম হলো বাথ। আগেই আপনাকে ডলার বা টাকা বাথে এক্সচেঞ্জ করে ফেলতে হবে। তবে বিমান বন্দর থেকে এক্সচেঞ্জ না করে আপনার যদি পরিকল্পনা থাকে ফুকেটে যাওয়ার, তাহলে সেখানে গিয়ে ডলার কে বাথে কনভার্ট করলে ভালো রেট পাবেন।
  • আপনি যদি সাথে ডলার নিতে চান,তাহলে ডলার এনডোর্স করে নিয়ে যাবেন। তাহলে চেকিং এর সময় আপনাকে কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে না ।
  • ব্যাংকক পৌঁছে সিম কেনার সময় আপনি ইন্টারনেটের প্যাকেজের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখবেন। কারন দেশে যোগাযোগ করতে হলে আপনাকে মোবাইল ব্যালেন্সের চেয়ে ইন্টারনেটের ব্যালেন্স বেশী সহায়তা করবে।
  • আপনি যদি স্ক্যাই ট্রেন বা বোটে চলাচল করতে চান,তাহলে ভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জনের সাথে সাথে খরচও কমিয়ে আনতে পারবেন।

 

২. পাতায়া বীচ

থাইল্যান্ডের রাজধানী শহর ব্যাংকক থেকে মুটামুটি ১৫৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাতায়া  শহর। এই পাতায়া এশিয়ার মধ্যে অন্যতম একটি হানিমুন স্পট হিসেবে বেশ সুপরিচিত। সমুদ্রের অন্তহীন হাতছানির সাথে সাথে দেখা মিলে এক অন্যরকম রঙ্গিন রাতের শহরের। আর পাতায়ার এই সুবিশাল সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে প্রতিবছর প্রায় লক্ষ লক্ষ পর্যটকের সমারোহে ভরে উঠে থাইল্যান্ড এর এই সুন্দর সমুদ্র সৈকত ঘেঁষা শহর।

 

‘পাতায়া’ নামটির সাথেই যেনো গলা জড়িয়ে রয়েছে বিনোদনের প্রায় সকল আয়োজন। পাতায়াতে ‘কি আছে’ নয়, প্রশ্নটি হবে ‘কি নেই এই শহরে’! চাইলে সি বিচের ডেকচেয়ারে অতি আয়েশ করে গাঁ এলিয়ে সমুদ্র দেখতে পারেন কিংবা সৈকতের পাশে থাকা রেস্টুরেন্ট থেকে উপভোগ করতে পারেন নানা ধরনের লোভনীয় সব খাবার। আবার খুব ইচ্ছে হলে প্যারা গ্লাইডিং এর মতো দারুণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার স্বাদও নিতে পারেন। আবার মজাও নিতে পারেন রৌদ্রজ্জ্বল দিনে স্নান বাথ করার মতো।

 

আপনার যদি সময় আর টাকার অভাব না থাকে, তাহলে পুরো শহরটা ঘুরে দেখার মতো জায়গার অভাব বোধ করবেন না। যদিও পাতায়া সি বিচ টি শহরের প্রধান আকর্ষণ, তবে শহরের মাঝেও দেখার মতো অনেক সুন্দর ও মনোরম জায়গা কিন্তু আছে। চলুন, পাতায়া শহরে ঘুরে দেখার মতো জায়গাগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিই-

 

 

নং নকট্রপিকাল বোটানিক্যাল গার্ডেন:

ছোট থেকে বড় সবারই খুব ভালো লাগার একটি স্থান এটি। এই বাগানটি মূলত কয়েকটি বাগানের সম্মেলিত রূপ। এখানে রয়েছে ১৭ শতকের ফরাসি বাগান, অর্কিড ফুলের বাগান, ইউরোপিয়ান রেনেসা বাগান এবং বিভিন্ন প্রজাতি হিসেবে আলাদা বাগান। এছাড়াও আপনি সেখানে উপভোগ করতে পারবেন লাইভ শো যেখানে তলোয়ার যুদ্ধ, ঐতিহ্যবাহী থাই নাচ ও থাই কিক বক্সিং।

 

স্যাংচুয়ারি অব ট্রুথ:

সম্পূর্ণই কাঠ দিয়ে তৈরি এই পুরো স্থাপত্য শিল্পটি। দৃষ্টিনন্দন এই ভবনটি নির্মান করা হয়েছে প্রাচীন ধর্ম ও দর্শনের উপর শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে। এই জায়গা পরিদর্শন করার মাধ্যমে আপনি থাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, থাই বক্সিং দেখতে পাবেন। আর তার সাথে সাথে স্পিড বোট ও হাতি বা ঘোড়ার পিঠে ঘুরে বেড়াতেও পারবেন।

 

জোমতিয়েন বীচ:

শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিতি এই বীচে আপনি সান বাথ করার সাথে সাথে প্যারা সেলিং, জেট স্কিইং, কিইটস সার্ফিং ও উইন্ড সার্ফিংকরার মতো দারুণ কিছু রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন।

 

খাও চি সায়ান (বুদ্ধ পর্বত):

পাতায়া শহরের ধর্মপ্রাণ মানুষদের জন্য এই পর্ডতটি এক ধৰ্মীয় প্রতীক হিসেবেই দেখা হয়। এই পর্বতে খোঁদাই করা আছল গৌতম বৌদ্ধের ছবি। শুধু তাই নয়, এই পর্বতের আসে পাশের প্রকৃতিও কিন্তু দেখার মতোই সুন্দর।

 

বিগ বুদ্ধ (ওয়াট ফ্রা ইয়া):

এরি সাউথ পাতায়ার প্রাতুমনাক হিল এর উপর নির্মিত ১৮ মিটার লম্বা একটি বৌদ্ধ মুর্তি। যেটির অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ১০০ মিটার উচুতে। এই পাহাড় চূড়ায় আপনি দেখতে পাবেন পাতায়া ভিউ পয়েন্ট। এইখান থেকেই পাতায়া সিটি এবং সাগরের সম্পূর্ণ একটি সুন্দর ভিউ দেখা যায়।

 

আন্ডার ওয়াটার ওয়ার্ল্ড পাতায়া:

এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন থাইল্যান্ডের প্রথম পানির নিচে অবস্থিত আধুনিক এ্যাকুরিয়ামটি। যেখানে থাকা কার্প জাতীয় কৈ মাছ, শার্ক ও হাঙ্গর মাছ গুলোকে আপনি খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাবেন। তখন আপনার মনে হবে যেনো আপনিও ওদের সাথেই পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছেন।

 

কোরাল আইল্যান্ড:

 পাতায়া বীচের মতোই আরেকটি সুন্দর বীচ হলো কোরাল আইল্যান্ড। এখানে মূলত কয়েকটি বীচ মিলেমিশে একসাথে রয়েছে। তাই সকাল বেলা রওনা দিলে  আপনি ওখানে পৌঁছে ভালো ভাবে দ্বীপটা দেখার সুযোগ পাবেন।কোরাল আইল্যান্ড এর ফেরি ছাড়েওয়াকিং স্ট্রীট এর শেষ প্রান্ত থেকে। সময় লাগে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ মিনিট। আবার পাতায়া বীচ থেকে আপনি স্পীড বোটে করেও যেতে পারবেন এই আইল্যান্ডে।

 

মিনি সিয়াম:

থাইল্যান্ড সহ বিশ্বের বিস্ময়কর সৃষ্টি গুলো দেখতে চান যদি, তাহলে চোখ বন্ধ করে ঘুরে আসতে পারেন এই মিনি সিয়াম থেকে। এখানে আপনি দেখতে পাবেন ব্যাংককের ভিক্টোরি মনুমেন্ট, লন্ডনের টাওয়ার ব্রিজ,ওয়াট অরুন, নিউ ইয়র্কের স্ট্যাচু অফ লিবার্টি,সিডনীর অপেরা হাউজ এবং প্যারিসের ল’আর্ক দে ট্রিওম্প। তবে একদিন আগে থেকেই এখানে বুকিং দিতে হয়।

 

রিপ্লের বিলিভ ইট অর নট মিউজিয়াম:

পৃথিবীর সকল সুন্দর,অদ্ভুত ও সাড়া জাগানো জিনিসগুলো প্রদর্শনী আপনি পাবেন এই জাদুঘরে। পাতায়া শহরের এই জাদুঘরটি প্রায় সবারই বিশেষ আগ্রহের একটি জায়গা। এখানে এন্ট্রি ফি হলো জনপ্রতি ৩৫০ বাথ।

 

মিলিয়ন ইয়ার স্টোন পার্ক এন্ড পাতায়া ক্রোকোডাইল ফার্ম:

এই পার্কটি বিভিন্ন বনসাই জাতীয় গাছ, পাথর,রঙ্গিন ফুল ও পানির ফোয়ারা দিয়ে ঘেরা। দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন অসংখ্যবার এখানে কুমিরের শো হয়ে থাকে। তবে কুমির ছাড়াও অন্যান্য অনেক প্রাণীও এখানে আছে।

 

ওয়াকিং স্ট্রীট:

এই ওয়াকিং স্ট্রীটকে পাতায়া শহরের বিনোদনের কেন্দ্ৰস্থল বলা যায়।দিনের বেলা শুনশান নিরবতা পালন করা ওয়াকিং স্ট্রীট রাতে সম্পূর্ণ এক অন্য রূপ ধারন করে। বিনোদনের নানা উপকরণের সাথে সাথে আপনি এখানে আবিষ্কার করতে পারবেন এক অন্য রকম রঙ্গিন শহরের।

 

আর্ট ইন প্যারাডাইস:

এটা আসলে একটি ইল্যুশন জাদুঘর। আর তার সাথে ছবি প্রেমীদের জন্য বেশ একটি উপযুক্ত জায়গা।

 

পাতায়া ফ্লোটিং মার্কেট:

পানির উপর ভাসমান এই মার্কেটে আপনি পাবেন নানান ধরনের জিনিস।

 

টাইগার পার্ক:

এখানে গেলে আপনি বাঘ ধরার মতো মজার এক খেলায় অংশগ্রহণ করার দারুণ সুযোগ পাবেন তাও আবার বিভিন্ন প্যাকেজের মাধ্যমে। পাতায়ার পুরো শহর জুড়েই রয়েছে বিভিন্ন ক্লাব। এখানকার বেশ কিছু ক্লাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- মিক্স ডিস্কোথেক, প্ল্যানেট আর্থ বিচ ক্লাব, ক্লাব অনিদ্রা, লিমালিমা, এয়ারপোর্ট ক্লাব, এফফ্লিক ক্লিফ অ্যান্ড পুল ক্লাব, পিয়ার ডিস্কো ক্লাব। এছাড়াও শহরের মধ্যে বাচ্চাসহ বড়দের মজা করার জন্যেও রয়েছে নানা ধরনের পার্ক।

 

তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- চ্যান সিয়াম পার্ক, রামায়ণ ওয়াটার পার্ক, কার্টুন নেটওয়ার্ক অ্যামাজোন, অ্যামাজন ফিশিং পার্ক ৪ থ্রি কিংডম পার্ক। তাছাড়াও সারা বছর ধরে শহরে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ও ফেস্টিভ্যাল শো চলতে থাকে। যেমন- আলাঙ্কার্ন পাতায়া শো,দ্য টিফানি শো। এই শো গুলো দেখলে আপনার থাইল্যান্ডের সংস্কৃতির ব্যাপারে বেশ ভালে একটা ধারনা হবে।

 

এছাড়াও আপনি চাইলে যেতে পারেন এলিফ্যান্ট ভিলেজ, টেডি বিয়ার মিউজিয়াম, সেন্ট্রাল ফেস্টিভ্যাল পাতায়া বিচ, আনেক কুসন সালা, কো লান্টা আইল্যান্ড, পাতায়া পার্ক টাওয়ার, ওয়াট ইয়ানসাংওয়ারাম, পাতায়া ডলফিন ওয়ার্ল্ড, মিমোসা এর মতো জায়গায়। পাতায়ার বিশেষ আকর্ষণের কথা বললেই চলে আসে থাই স্পা, সান বাথ,প্যারাগ্লাইডিং, স্নোরকেলিং আর রাতের পাতায়া শহর। প্যারা সেলিং হলো মূলত-একটি দড়ি দিয়ে প্যারাসুটের সাথে আপনাকে বেধে দেওয়া হবে। তারপর একটা স্পীড বোটে করে তারা আপনাকে সাগরের উপর দিয়ে ঘুরাতে থাকবে। যারা এডভেঞ্চার ও থ্রিল পছন্দ করেন, তাদের জন্য কিন্তু প্যারা সেলিং নিঃসন্দেহেই খুব পছন্দ হবার  মতো একটা রাইড।

 

আবার কারো যদি ইচ্ছে থাকে সাগরের অজানা রহস্য জানার, তাহলে তিনি স্নোরকেলিং বা স্কুবা ড্রাইভিং করতে পারেন। এটা মূলত একজন অভিজ্ঞ গাইডের সাহায্যে সাগরের গভীরে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণী,মাছ ও উদ্ভিদ দেখার একটা দারুণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। সাথে নিজেদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার সাথে আপনি সেখানে ছবি তোলা, ভিডিও করার ও সুযোগ পাবেন। আর সবমিলিয়েই ভ্রমনপ্রেমীদের খুবই পছন্দের একটি স্থান হলো পাতায়া। ছুটিতে আপনিও চলে আসতে পারেন এখানে।

 

[table id=4 /]

 

পাতায়া ভ্রমণ টিপস:

  • বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার সময় থাইল্যান্ডের মুদ্রা বাথ নিজের সাথে নিয়ে যাওয়া ব্যাটার। এতে বাড়তি সুবিধা হলো বিমানবন্দরে নেমেই আপনার নতুন সিম কেনা সহজ হবে। আবার ট্যাক্সি ভাড়া করার সময়ও সুবিধা হবে।
  • সম্ভব হলে পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কাউকে আপনার সফরসঙ্গী হিসেবে নিয়ে যেতে পারেন। তাতে করে আপনার খরচ বেশ কম হবে।
  • থাইল্যান্ডরের সব জিনিসেরই অনেক দাম। তাই যা-ই কিনবেন,একটু দামাদামি করেই কেনার চেষ্টা করবেন।
  • থাইল্যান্ডরের স্থানীয়রা কিন্তু ইংরেজি কিছুটা কম বুঝে। তাই কিছু সাধারন শব্দ শিখে নিতে পারেন। চাইলে আপনি একটা ছোট নোট বুক নিজের সাথে রাখতে পারেন তাতে করে কথা বলতে সুবিধা হবে।
  • পাতায়া শহরে যেহেতু গরম খুব বেশী। তাই উপযুক্ত সান প্রোটেকশন নিয়েই ঘুরাঘুরি করবেন।
  • শহর ভালো ভাবে দেখতে চাইলে এবং বীচের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে প্রচুর হাঁটতে হবে। এজন্য একটু পর পরই আপনার পাতায়া শহরে ম্যাসাজের দোকানগুলো চোখে পড়বে। চাইলে আপনি ফুট ম্যাসাজ এবং হেড ম্যাসাজ করে দেখতে পারেন, এতে ভালো লাগবে। তবে নিজের গুরুত্বপূর্ণ জিনিস অবশ্যই নিজ দায়িত্বে সাবধানে রাখবেন। কারন ম্যাসাজ করতে গিয়ে অনেকেই আবার জিনিস হারিয়ে ফেলে বা চুরি হয়ে যায়।
  • আপনি যদি দূর্বল হার্টের হোন, তাহলে প্যারা সেলিং করাটা আপনার ঠিক হবে না। সেক্ষেত্রে প্যারা সেলিং বা প্যারাগ্লাইডিং আপনার জন্যে ইগনোর করাই ভালো হবে।
  • স্কুটি ভাড়া নিয়ে নিবেন কোরাল দ্বীপ ঘুরতে চাইলে৷ তাহলে সবগুলো বীচ ঘুরে দেখতে আপনার সুবিধা হবে।
  • কোরাল আইল্যান্ডে যাওয়ার হলে আগে থেকেই প্যাকেজের জন্য বুকিং দিয়ে রাখতে হবে। প্যাকেজের মধ্যে পাতায়া থেকে কোরাল আইল্যান্ডে যাওয়া-আসা এবং খাওয়া-দাওয়া যুক্ত থাকে। তাই যেদিন যাবেন তার অন্তত একদিন আগে বুকিং দিয়ে রাখবেন।
  • বৌদ্ধ পর্বতের সামনের মন্দিরে যেতে চাইলে যথাযথ ভাবে কাপড় পরে যেতে হবে। যাতে করে আপনার শরীরের কাঁধ হতে পা সম্পূর্ণ ঢাকা থাকে।

 

৩.ফুকেট

 ব্যাংকক থেকে প্রায় ৮৬০ কিলোমিটার দূরে থাইল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত দেশেরটির বৃহত্তম দ্বীপ,স্বপ্নের শহর ফুকেট। এই শহর যেন বিনোদনের সকল পসরা সাজিয়ে ডাকছে এখানে আসা পর্যটকদের। এখানপ সমুদ্রের নীলাভ পানির হাতছানির সাথেই রয়েছে নানা ধরনের দুঃসাহসিক সব অভিযান। যার অভিজ্ঞতার কিছুটা হলেও জীবনে একবার অন্তত নেওয়াই যায়। আর সে কারনেই পর্যটকরা প্রতিবছর যেকোনো ছুটিতে চলে এসে পাড়ি জমান তাদের স্বপ্নের এই শহর ফুকেটে।

 

পাতায়ার মতো ফুকেটেরও রয়েছে বিশ্বখ্যাতি এর অসামান্য সমুদ্র সৈকতের জন্য। কেননা,কাটা, কমলা,পাতঙ্গ, ইত্যাদি নামের পৃথিবী বিখ্যাত সব সমুদ্র সৈকতগুলোর সবগুলোই কিন্তু এই ফুকেট দ্বীপে। তবে পাতঙ্গ সমুদ্র সৈকতটি এদের মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল। হোটেল,রেস্তোরাঁ, বিভিন্ন  ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, ট্র্যাভেল এজেন্টের অফিস, পোশাক-আশাক আর হস্তশিল্পের দোকান, ম্যাসাজ পার্লার ইত্যাদিতে সারাক্ষন জমজমাট ভাবে মুখরিত হয়ে থাকে বিচ রোড।

 

ফুকেটে এসে প্রথমদিন আপনি সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করে কাটিয়ে দিতে পারেন। আর দ্বিতীয় দিন একটা সারাদিনের প্যাকেজ ট্যুর মোটর চালিত লংটেল বোটে করে চলে যেতে পারেন ফা নং বে। আন্দামান সাগরের এই জায়গাটিই মূলত সমুদ্র।থাইল্যান্ড এর ফুকেটের পুরো শহর জুড়েই রয়েছে দেখার মতো অসংখ্য জায়গা। আছে বেশ কিছু সুন্দর বীচ যেগুলোর স্বচ্ছ পানি আর মনোরম পরিবেশ আপনাকে মন্ত্রযুগ্ধ করে রাখবে। এমনই কিছু সুন্দর জায়গা আপনাদের ঘুরে বেড়ানোর সুবিধার্থে নিচে তুলে ধরা হলো-

 

ফুকেট বীচ:

ফুকেট বীচ হলো ফুকেটের সবচেয়ে বড় সৈকত গুলোর একটি। সমুদ্রের পরিষ্কার স্বচ্ছ জলের সাথে রৌদ্রজ্জ্বল চিকচিক করা বালি -এক অন্য রকম মায়াবি পরিবেশের তৈরি করে। এখানে নানা ধরনের জলকেলিতে মেতে উঠতে পারবেন। যেমন ধরুন- সান বাথ, সাঁতার,স্নোরকেলিং,জেট স্কাইং,প্যারাসেলিং,হবি ক্যাট সেইলিং এবং বানানা বোট। তবে প্রতিটি রাইডের জন্য এখানে জনপ্রতি খরচ আলাদা।

 

কারন ভিউ পয়েন্ট:

নইহার্ন এবং কাটা নই বীচের মধ্যখানে অবস্থিত এই কারন ভিউ পয়েন্টটি ফুকেতের জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলোর একটি। এখান থেকেই আপনি কাটা নই,কাটা ইয়াই ও কারন সহ তিনটি বীচের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। পর্যটকদের ছবি তোলার জন্য বেশ একটি জনপ্রিয় জায়গা হল এই কারন ভিউ পয়েন্ট। এখান থেকে আপনি আন্দামান সাগরের  চোখে পড়ার মতো অপূর্ব দৃশ্য দেখতে পারবেন।

 

কোহ পানইয়ী:

আপনি যদি থাই গ্রামীণ জীবনের আমেজ পেতে চান,তাহলে ঘুরে আসতে পারেন এই ছোট্ট ঐতিহ্যবাহী কোহ পানইয়ী গ্রাম থেকে। পর্যটকদের জন্য কিন্তু বিশেষ আকর্ষণের একটি জায়গা এই থাই গ্রাম। তবে আপনাকে হাতে বেশ কিছুটা সময় নিয়ে সকাল সকালই চলে যেতে হবে এই গ্রামে। তাহলেই কেবল প্রকৃত মজা পাবেন।

 

ফি ফি আইল্যান্ড:

এই আইল্যান্ডটি আসলপ ফিফি ডন ও ফিফি লে মিলে বিস্তৃত। এখানকার চারপাশের মনোরম সুন্দর পরিবেশ যেকোনো পর্যটকের জন্য মনোমুগ্ধকর। এখানে গেলে আপনার এর নীলচে সবুজ পানির সৌন্দর্যে হারিয়ে যেতে মন চাইবে। প্রতিদিন ফুকেট থেকে ক্রুজ চলাচল করে এই আইল্যান্ডে। তাই এখানে যেতে বিশেষ কোনো সমস্যা না হলেও এখানে থাকার জায়গা কিন্তু বেশ কম। এখানে এসে আপনি সার্ফিং,স্নোরকেলিং,ডাইভিং ইন শার্ক পয়েন্ট, এনেমনে রীফ এবং কিং ক্রুইসার রিফের মতো কিছু দারুণ এক্সাইটিং ও রোমাঞ্চকর রাইডের অভিজ্ঞতাও নিতে পারবেন।

 

জেমস বন্ড আইল্যান্ড:

এই আইল্যান্ডের অবস্থান ফাং এনগা পার্কের পাশেই। জেমস বন্ড মুভির কিছু দৃশ্যের শুটিং এখানে করানো হয়েছিলো বলে এখানকার নামকরন করা হয় জেমস বন্ড আইল্যান্ড। এখানেসাঁতার কাটার সাথে সাথে আপনি কায়াকিং, সেইলিং করার মতো মজাও করতে পারবেন।

 

রাং হিল:

ফুকেটের উত্তর দিকে অবস্থিত এই রাং হিল থেকে আপনি পুরো আইল্যান্ডের সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারবেন। এখানে বাচ্চাদের খেলার জন্য রয়েছে বার,পার্ক, কিছু রেস্টুরেন্ট, ফিটনেস জোন এবং একটি আকর্ষণীয় চত্বর।

 

বিগ বুদ্ধ:

ফুকেটের একটি উল্লেখযোগ্য মাইল ফলকের কথা যদি জানতে চান, তাহলে উত্তরে চলে আসবে বিগ বুদ্ধ নামের এই বৌদ্ধ মূর্তি। এই বিশাল বৌদ্ধ মূর্তি তৈরি করা হয়েছে সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে। এখান থেকে আপনি ফুকেট শহর ও তার আসে পাশের উপসাগর দেখার সাথে সাথে চাইলে বিগ বৌদ্ধের ইতিহাস সম্বেলিত জাদুঘরও ঘুরে আসতে পারবেন। বড়দের জন্য এখানে প্রবেশ ফি ৫৫০ বাথ হলেও ছোটদের জন্য ২৭৫ বাথ।

 

ওয়াট চালং:

এটি মূলত একটি মন্দির। আর ওয়াট চালং হলো ফুকেটের সবচেয়ে প্রাচীনতম ও প্রধান মন্দির। এখানে থাকা পোহ থান জাও এবং ননসি নামক দুটো সোনালি রঙের বৌদ্ধ মূর্তি পর্যটকদের জন্য খুব আকর্ষণীয়।

 

ফান্টাসিয়া:

ফুকেটের নানা ধরনের সাংস্কৃতিক শো এর মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য হলো ফান্টাসিয়া। মূলত একটি বিশাল বড় সাংস্কৃতিক প্রাঙ্গনে বিভিন্ন ধরনের শো হয়। আর এই সবগুলো শো একসাথে মিলে কিংডম ফান্টাসি নামে পরিচিত। এখানে আপনি নানা ধরনের মজার খেলা, দুঃসাহসিক রাইড এবং থিম নির্ভর গ্রাম ঘুরে দেখতে পারবেন। রাতের বেলায় এখানে আপনি নানা ধরনের শো দেখার সাথে সাথে বুফে রেস্টুরেন্টে খাবারের ও বেশ সুব্যবস্থা লক্ষ্য করবেন।

 

বাংলা রোড:

ফুকেটের রাতের শহর দেখতে চাইলে আপনাকেঅবশ্যই এখানে যেতে হবে। সূর্যাস্তের ঠিক পর পরই এই রাস্তায় অদ্ভুত রকম এক আবহ তৈরি হয়। নিয়ন আলোয় চারপাশটা ঝলমল করে আর হৈ হুল্লোড়ে পরিপূর্ণ থাকে রাতের এই রাস্তা। এখানকার যানি নাইট, ডি ক্লাব ও মউলিন রউগ এর মতো ক্লাবে যেতে পারেন। তবে এসব ক্লাবে বাচ্চাদের নিয়ে না যাওয়াই ভালো।

 

ফাং নং বে:

ফুকেটের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ফাং নং বে নামের এই জায়গাটি। মুটামুটি এই উপসাগরটি প্রায় ৪০টি ছোট ছোট দ্বীপের উৎস। তাই এক দিনে এই পুরো জায়গা আপনি চাইলেও ঘুরে দেখা আসলে সম্ভব না। চারপাশের গুহা আর ম্যানগ্রোভ পরিবেশ এক অন্য রকম সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে এই উপসাগরে।

 

ফুকেট ট্রিকেয়ে জাদুঘর:

আদতে এটি ফুকেটের মধ্যে অন্যতম এমন একটি জাদুঘর যা কিনা পর্যটকদের সৃজনশীলতা ও কল্পনা শক্তিকে জাগিয়ে তুলে সম্পূর্ণ নতুন করে। আর এখানে এসে পর্যটকরা থাইল্যান্ডের শিল্পের সাথে নতুন ভাবে পরিচিত হোন।

 

ফুকেট এ্যাকুরিয়াম:

আপনি যদি পানির নিচের জলজ প্রানিদের সৌন্দর্য দেখতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে এই এ্যাকুরিয়াম থেকে ঘুরে আসতে হবে। এই এ্যাকুরিয়ামের বড় একটি সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে পর্যটকরা আসে পাশে বিভিন্ন জলীয় প্রানিদের বিচরণ দেখতে পারেন। যা তাদের এক ভিন্ন ধরনের ভালো লাগার অনুভূতির পরিচয় করিয়ে দেয়।

 

জুই তুই উপাসানালয়:

ফুকেট শহরের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর উপাসনালয়ের নাম নিলেই চলে আসে জুই তুই উপাসানালয়ের নামটি। এখানে আপনি দেখতে পাবেন তিনটি মূর্তি। যেগুলো ভিন্ন ভিন্ন চীনা দেবতাদের প্রতিরূপ। আর এখানে বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে পটকা ফোটানো হয়।

 

লা মোয়েট ডে ক্রুজ:

ফুকেটের ব্যস্ততায় ঘেরা শহর থেকে আপনি যদি একটু নিরিবিলি সময় কাটাতে চান কিংবা সমুদ্রের চারপাশের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে চান,তাহলে এই ক্রুজের মাধ্যমে আপনি ঘুরে আসতে পারেন প্রশান্ত মহা সাগরের মাঝ দিয়ে। প্রতিদিন সকাল ৯টা হতে এই ক্রুজটি চলাচল শুরু করে।

 

এছাড়াও ফুকেটে এসে আপনি চলে যেতে পারেন ফুকেট ওল্ড টাউন, সুরিন বীচ,কাটা নই বীচ, কো যাই তোন (যা হানিমুন আইল্যান্ড হিসেবে পরিচিত),রায়া আইল্যান্ড, নাই হার্ন বীচ,খাও রাং ভিউ পয়েন্ট, চালং বে রাম ডিসটিলেরি (এখানে হোয়াট রাম ও ককটেল প্রোডাকশন দেখতে পারবেন)। আবার আপনি চাইলে দেখতে পারেন সিমন ক্যাবারেটের মতো শোগুলোও।

 

[table id=5 /]

 

ফুকেটে ভ্রমনের ক্ষেত্রে আপনি কিছু বিষয় খেয়াল রাখবেন–

 

  • বীচ গুলোতে বিভিন্ন রাইডে উঠার জন্য সেখানে বেশ কিছু প্যাকেজ রয়েছে। কোনো প্যাকেজে বেশী সুবিধা পাবেন আবার কোনোটাতে কম। মূলত টাকা কম বেশীর সাথে আপনি সুবিধাও কম বেশী পাবেন। তাই আপনাকে ভালো ভাবে বুঝে প্যাকেজ গুলো পছন্দ করতে হবে। আবার আপনি যদি চান নিজের পছন্দ ও সুবিধা অনুযায়ী প্যাকেজও তৈরি করে নিতে পারবেন। সেই ক্ষেত্রে দামাদামি করে নিবেন অবশ্যই।
  • আপনার যদি শারীরিক বা অন্য কোনো ধরনের সমস্যা (যেমন হাইট ফোবিয়া, হাইড্রো ফোবিয়া, শ্বাসকষ্ট) থাকলে, অবশ্যই রাইডে উঠার আগে তা ইন্সট্রাক্টরকে জানাবেন। আর প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিবেন।
  • অফ সিজন অর্থাৎ থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ছুটি কিংবা সামার ভ্যাকেশনের এই সময় গুলো এড়িয়ে ফুকেটে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাতে করে আপনার খরচ কম পড়বে।
  • ব্যাংকক থেকে ফুকেটে বাসে করে গেলে আপনার যাতায়াত খরচ অর্ধেকের মতো কমে যাবে। আবার ভ্রমণের তারিখ ফিক্সড থাকলে, ব্যাংকক থেকে ফুকেটে বিমানে করে যেতে পারবেন বাসের চেয়েও কম খরচে। সেই ক্ষেত্রে আবার বেশ কিছু দিন আগেই আপনাকে বিমানের টিকেট কাটতে হবে। তবে সাথের লাগেজের সংখ্যা যেনো বেশি না হয় সে দিক লক্ষ্য রাখবেন।
  • ফি ফি আইল্যান্ডে আপনি চেষ্টা করবেন অবশ্যই এক রাত থাকার। ফলশ্রুতিতে হবে কি,  ভালো ভাবে আপনি পুরো আইল্যান্ডটি ঘুরে দেখতে পারবেন। আর ফেরার সময়, ক্রাবি হয়ে ফেরত আসবেন। আর ফিফি আইল্যান্ড ঘোরার জন্য বোট ভাড়া করতে পারেন। কারন এতে করে আপনি একসাথেই ৯টা বীচ ঘুরতে পারবেন।
  • ফুকেটে সিটি ট্যুর কিন্তু বেশ প্রচলিত। পুরো শহরের নানা দর্শনীয় জায়গা ঘুরে দেখতে পারবেন কার ভাড়া করে। খরচ পড়বে ১০০০-১৫০০ বাথের মধ্যে।
  • ফুকেটের সমুদ্রের পাড়ে রৌদ্রতাপ অনেক বেশী থাকে। তাই অবশ্যই সানস্ক্রিম ও সানগ্লাস ব্যবহার করবেন।
  • থাইল্যান্ডের ফুকেট শহরটি বেশ পরিচ্ছন্ন। ওদের বীচ গুলো দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন। তাই যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলুন।

 

৪. ক্রাবি

থাইল্যান্ডের ফাংঙ্গা ও ট্রাং আইল্যান্ডের মাঝে, ক্রাবি নদীর তীরের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের শহর ক্রাবি। যারা ছুটিতে দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়ার কথা ভাবছেন, তারা চাইলে নিশ্চিন্তে পরিবারসহ বা একক ভাবে ঘুরে আসতে পারেন থাইল্যান্ড এর এই সুন্দর সাজানো শহর থেকে। পুরো ক্রাবি শহরে জুড়েই রয়েছে মনোরম সব অসংখ্য বীচের সমাহার। প্রতিটা বীচের সৌন্দর্য একটি অপরটির থেকে আলাদা আর যথেষ্ট নজরকাড়া। তবে বীচে ঘুরে বেড়ানো ছাড়াও আরও বেশ কিছু জায়গা রয়েছে ক্রাবি শহরে। পর্যটকদের সুবিধার্থে সেসব বিশেষ কিছু জায়গার কথা তুলে ধরা হল-

 

রাইলে বীচ ও গুহা:

ক্রাবিতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে রাইলে বীচ প্রায়  সকল পর্যটকদের মধ্যে বেশ একটা জনপ্রিয় স্থান দখল করে আছে। এখানকার সাদা বালি, স্বচ্ছ পানি, চারদিকের মনোরম পরিবেশ আর চমৎকার আবহাওয়া পর্যটকদের জন্য যেনো এক নির্মল আনন্দের উৎস। এখানে দেখতে পাবেন চুনাপাথরের গুহা ও আবিষ্কার করবেন আর নানা ধরনের ইয়ট পার্টি। তবে পায়ে হেঁটে পুরো বীচ ঘুরে দেখলে সবচেয়ে উপভোগ্য হবে এবং বেশী ভালো লাগবে।

 

ফি ফি আইল্যান্ড:

ক্রাবি শহর থেকে মাগ্র ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই আইল্যান্ড কিন্তু  ভ্রমণ প্রেমীদের প্রধান আকর্ষণের একটি জায়গা। ফি ফি লে ও ফি ফি ডন এই দুটো দ্বীপপুঞ্জ নিয়েই গঠিত এই আইল্যান্ড। প্রকৃতির মাঝে যদি আপনি হারিয়ে যেতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই যেতে হবে এই সুন্দর জায়গায়। ক্রাবি শহর থেকে ফেরিতে কিংবা নিজেরা স্পীড বোট ভাড়া করেই যেতে পারবেন এই মনোরম আইল্যান্ডে। এখানে স্কুবা ড্রাইভিং করার সাথে সাথে আপনি নানা ধরনের বীচ পার্টিতেও অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। এখানকার মায়া বে নামের সবুজ উপহ্রদ টি মূলত পর্যটকদের খুবই পছন্দের একটি জায়গা।

 

ইমারল্যান্ড পুল:

অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা এই পার্কের প্রাঙ্গন। গাঢ় সবুজ বর্ণের বড় বড় গাছ, বন্য প্রাণীর স্বাচ্ছন্দে বিচরণ ও পার্কের মাঝের সুন্দর ঝর্ণা -যেনো এক অলৌকিক সৌন্দর্যের বারিধারা সৃষ্টি করছে। প্রকৃতি প্রেমী ও ফটোগ্রাফারদের জন্য একদম  উপযুক্ত একটি জায়গা এই পার্ক। ইচ্ছে হলে আপনিও এই ইমারল্যান্ড লেকের সুন্দর সবুজ বর্ণের স্বচ্ছ পানিতে ডুব দিয়ে হারিয়ে যেতে পারেন এখানকার অভূতপূর্ব সুন্দর রাজ্যের অতলে।

 

ওয়াট থাম সুয়া বা টাইগার কেভ টেম্পল:

ক্রাবির একটি বিশেষ জায়গা হলো এই গুহাটি। যেটি “টাইগার কেভ” নামেও বেশ সুপরিচিত। এর ভিতরে বেশ রয়েছে কিছু মন্দির ও তীর্থ যাত্রীদের জন্য ঘর। কিছু সন্ন্যাসী আছেন যারা এখানে জন্ম থেকেই রয়েছেন। তবে লোকেমুখে প্রচলিত এই গুহায় নাকি ছিলে গৌতম বুদ্ধের খুব প্রিয় একটি বাঘ। তাই এই গুহার নামকরন করা হয়েছে টাইগার কেভ। গুহার শীর্ষে উঠলে আপনি বুদ্ধের পদচিহ্ন সংরক্ষিত স্থান দেখতে পাবেন।

 

ক্লোং থম হট স্প্রিংস:

এটি মূলত একটি ঝর্ণা। এই ঝর্ণাটি থাং তেয়াও ফরেস্ট ন্যাচারাল পার্ক থেকে বেশ কাছে। আপনি যদি চকচকে সাজানো পাথরের উপর দিয়ে উষ্ণ গরম পানির প্রবাহ দেখতে চান,তাহলে ঘুরে আসতে পারেন এই জায়গা থেকে। এই গরম পানির মূল রহস্য হলো ক্লং থম আগ্নেয়গিরির উত্তপ্ত চেম্বারই এই ঝর্ণার উৎস। লোকে মুখে এটাও বিশ্বাস করা হয় যে এই গরম পানি নাকি অনেক ধরনের চর্ম রোগের প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আর এর পাশেই আপনি দেখতে পাবেন শীতল পানির প্রবাহ।

 

আ নাং বীচ:

দক্ষিণ থাইল্যান্ডের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতটি হলো আও নাং। এখানে আপনি সমুদ্রে ডাইভ করার জন্য অনেকগুলো স্পট পাবেন। তাই ডাইভিং এর জন্য এই বীচ টি কিন্তু সবচেয়ে উপযুক্ত বলা যায়। বড় বড় নৌকা ভাড়া করে এখানকার চুনা পাথরের আইল্যান্ড সহ এর আসে পাশে অন্যান্য বীচগুলো যেমন – কোহ পোডা, কোহ কং এবং কোহ গাই ঘুরে আসতে পারেন। এখানে পানিতে ডাইভিং করার সাথে সাথে রক ক্লাইম্বিং ওস্নোরকেলিং ও করতে পারেন।

 

কো হং আইল্যান্ড:

এই আইল্যান্ডটি মূলত ন্যাশনাল মেরিন পার্কের একটি অংশ। এখানে রয়েছে আরও চারটি আইল্যান্ড। এজন্য এটা “দা ফোর আইল্যান্ড” নামেও বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। আ নাং থেকে লংট্রেইল বোটে বা স্পীড বোটে এখানে যাওয়া যায়। তাছাড়া এখানে আপনি কায়াকিংও করতে পারবেন।

 

নোফার্টারা বীচ:

এই বীচ মূলত একটি শুকনো নদী যা কিনা আও নাং বীচের সাথে অবস্থিত। এই বীচটি স্থানীয় লোকজন ছাড়াও বাইরের পর্যটকদের কাছে বেশ পছন্দের। এখানকার অগভীর স্বচ্ছ সুন্দর পানিতে জলখেলায় মেতে উঠতে পছন্দ করে প্রায় সবাই। এছাড়াও আপনি ঘুরে আসতে পারেন ক্রাবি শেল সিমিট্রি, জিয়ান্তা, থান বক খরানি, ওয়াট কাও করাওয়ারাম,আও লুক ম্যানগ্রোভ এন্ড কেভস, হুয়াউ তোহ ওয়াটার ফলস, টুপ আইল্যান্ড এর মতো জায়গা থেকে। তাছাড়া ক্রাবির বিশেষ আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে– ক্রাবি নাইট মার্কেট, স্কুবা ড্রাইভিং, ক্রাবি লেকেপ্যাডেল বোট চালানো,আন্দামান সমুদ্রে স্পীড বোটে ঘোরা, আর্ট লেনে ক্রাবির ঐতিহ্যবাহী নাচ ও গানও বীচের নানা ধরনের পার্টি।

 

[table id=6 /]

 

ক্রাবি ভ্রমণ টিপস:

  • অক্টোবর থেকে মে এই আট মাসের যেকোনো সময় আপনি চলে যেতে পারেন থাইল্যান্ডের ক্রাবি শহরে। এই সময়টায় ক্রাবি শহরের সুন্দর এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পরিপূর্ণ ভাবে ধরা পড়ে যায় পর্যটকদের নজরে।
  • ক্রাবিতে ঘোরার জন্য হাতে ৪দিন সময় নিয়ে ঘুরলে আপনি বেশ ভালোভাবে পুরোটা শহর ও মোটামুটি ভবে সবগুলো বীচ ঘুরে দেখতে পারবেন। আর ফিফি আইল্যান্ডে আপনি অবশ্যই ১ রাত থাকবেন। এতে করে ফিফির সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করতে পারবেন।
  • ক্রাবি পোর্টের কাছাকাছি কোনো হোটেলে উঠবেন। এতে করে আপনি হাঁটা দূরত্বের মাঝেই দোকানপাট খুঁজে পেতে ও যাতায়াত করতে বেশ সুবিধা পাবেন।
  • এখানের প্রায় সব রেস্টুরেন্টেই আপনি মুসলিমদের জন্য হালাল খাবার পাবেন। তার পাশাপাশি মুসলিমদের জন্য বসারও আলাদা সুব্যবস্থাও রয়েছে।
  • রাতের দিকে এখানে ক্যাব বা ট্যাক্সি চালক ভাড়া একটু বেশী চায়। তাই দিনের মধ্যেই ঘোরাঘুরি শেষ করার চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনার জন্যেই ভালো হবে।
  • ক্রাবির বিভিন্ন আইল্যান্ড ঘোরার জন্য আপনি প্রাইভেট স্পীডবোটের প্যাকেজ পেয়ে যাবেন। যেকোনো প্যাকেজ বেছে নিলে আপনার কম সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন আইল্যান্ড ঘুরতে সুবিধা হবে। আবার কিছু প্যাকেজের সাথে স্কুবা ড্রাইভিং, স্নোরিং ও লাঞ্চের খরচ ও অন্তর্ভুক্ত থাকে। তাই আগে থেকেই আপনাকে প্যাকেজের সবকিছু ভালো মতো বুঝে তারপর প্যাকেজ নির্বাচন করতে হবে।
  • স্পীড বোটে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণের সময় কিছু শুকনা খাবার নিজের সাথে রাখবেন। কারন স্পীড বোটে ভ্রমণের সময় আপনি কোথাও ওভাবে নেমে খাওয়ার সুযোগ পাবেন না।
  • ক্রাবি শহর বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তাই ভিন্ন দেশের পর্যটক হিসেবে আপনারাও চেষ্টা করবেন পরিষ্কার পরিচ্ছনতা বজায় রাখার।

 

৫. চিয়াং মাই

থাইল্যান্ডের রাজধানী শহর ব্যাংকক থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। সাগর থেকে ৩০০ মিটার উঁচু এই চিয়াং মাই বেষ্টিত হিমালয়ের পাহাড় দ্বারা। এখানকার বনে এখনও কাজ হয় হাতি দ্বারা। গিরিসঙ্কট, সুন্দর জলপ্রপাত, গুহা, বেষ্টিত বাগান আর সেইসাথে প্রচুর বৃক্ষরোপনই মূলত চিয়াং মাই এ একটা সুন্দর বিস্তৃত ভূ-চিত্র তৈরী করেছে।

 

চিয়াং মাই পূর্বে লান না থাই এর রাজধানী ছিল। এখানে রয়েছে দশ লক্ষ ধান ক্ষেত্র। এটি ছিল প্রথম স্বাধীন রাজ্য যাটিকে বলা হয় গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল। এটি ১৫৫৬ সাল পর্যন্ত একটা সফল  সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং ব্যবসা-বানিজ্যের কেন্দ্র ছিল । বার্মা এখানে খুব আগ্রাসন চালায়। ১৭৭৫ সালে সেই বার্মিজদের হটিয়ে দিয়ে থাইরা একে পরিণত করে থাইল্যান্ডের অবিচ্ছেদ্য এক অংশে।

 

বিভিন্ন উৎসব, সুন্দর দৃশ্য, ১৩০০ শতকের মন্দির, চমতকার ফলমুল যেমন আপেল,পীচ এবং স্ট্রবেরী, শীতল আবহাওয়া এবং সুন্দর রমনীদের দেখলে মনে হবে এটি একটি শাংগ্রী লা।ব্যাংকক থেকে চিয়াং মাই  ভ্রমণে এটিকে বরাবরই আপনার একটি নির্জন এলাকা হিসেবে মনে হবে। আপনি যদি এখানে ১৯২০ সালের আগে আসতেন, তাহলে নদীপথে অথবা হাতির পিঠে চড়ে আসতে হতো যা অনেক দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। এখানকার মানুষদের নিজস্ব ভাষা, রীতি, ঐতিহ্য,হস্তশিল্প, নৃত্য এবং খাদ্য রয়েছে।

 

যারা চিয়াং মাই ভ্রমণে আসবেন, তারা কখনো এখানে ভ্রমণের আনন্দ ভুলতে পারবেন না। এখানে বার্মিজ, মোন, শ্রীলঙ্কান এবং লান না থাই এর স্থাপত্যরীতির এক সংমিশ্রণ ঘটেছে। এখানে আপনি বিভিন্ন জিনিসের উপর আবিষ্কার করবেন  প্রচুর কাঠের খোদাই কাজ ঠিক যেনো জটিল সিড়ির মতো। চিয়াং মাই এর উৎসব দেখতেও আপনি আসতে পারেন। চিয়াং মাই এ বেশ কয়েকটির মতো বার্ষিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এদের মধ্যে তিনটা আছে উল্লেখ করার মতো। প্রথমটি হচ্ছে ফুল উৎসব যেটি অনুষ্ঠিত হয় ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে। এটি হলো নাতিশীতোষ্ণ এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফুল ফোটার উৎসব। উৎসবের সময় এখানে শোভাযাত্রা ও প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। এখানকার দ্বিতীয় উৎসবটি হলো সংক্রান। এটি অনুষ্ঠিত হয় এপ্রিলের ১৩-১৫ তারিখে। এটি মূলত হচ্ছে থাইবাসীদের নতুন বছরের উদযাপন।

 

ধর্মীয় উতকর্ষতা সাধনের জন্য তারা ৩ দিনের উৎসব, তীর্থযাত্রা, নাচ, সুন্দরীদের প্যারেড এবং অন্যান্য নির্বাধ অনুষ্ঠান সেই সাথে জল ছোড়া উৎসব তো রয়েছেই। এদের শেষ উৎসব টি হলো লয় ক্রাথং। এটি অনুষ্ঠিত হয় মধ্য নভেম্বরে। এটি অনুষ্ঠিত হয় চান্দ্র বছরের দ্বাদশ মাসের পূর্ণ চন্দ্ররের দিন। এটি এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় উৎসব। কারণ মানুষ পূর্ণ চান্দ্ররে রাতে কলাগাছের ভেলায় ধূপ, মোমবাতি, ফুল এবং একটা কয়েন ভাসিয়ে দেয় জলদেবতাকে সম্মান করে। সেই সাথে ভাসিয়ে দেয় বিগত বছরের  সব অনিষ্ট আর পাপকে।

 

এখানে গিয়ে আপনি দেখবেন শহরে রয়েছে কয়েকটা প্রধান মন্দির। এগুলোর একটির নাম হলো ওয়াত চিয়াং মান। এটি সবচেয়ে পুরাতন মন্দির। অন্য একটির নাম হচ্ছল ওয়াত চেদি লুয়াং। যেটির ১৫৪৫ সালের ভূমিকম্পের ফলে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওয়াত ফ্রা সিং এ রয়েছে ফ্রা সিং বুদ্ধম এর একটা ছবি। এটা তৈরী হয়েছিল মূলত ১৩৪৫ সালে। ওয়াত কু তাও হলো চীনামাটি খচিত সুন্দর একটি প্যাগোডা। ওয়াত সুয়ান ডক ওয়াত উমং হলো এরই একটা মন্দির। এটি তৈরি হয়েছিলো চৌদ্দশ শতকে, লান না থাই রাজের প্রমোদ বাগ হিসেবে। সবচেয়ে দর্শনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরটি হচ্ছে ওয়াত ফ্রা থাত দই সুদেপ। এটা এমন একটা ভূ-চিহ্ন যেখান থেকে শহর স্পষ্ট দেখা যায়।

 

শহর এখান থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দুরে। এই মন্দিরে রয়েছে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে এবং বৌদ্ধ পুন্যার্থিরা এখানে আসেন  সারা বছর ধরে। এখানে আসতে আপনাকে ১২ কিলোমিটার পাহাড়ী জিগজ্যাগ পথ পাড়ি দিতে হবে। চিয়াং মাই এর চিড়িয়াখানা অবশ্যই দেখতে আসবেন যেখানে খাড়া সিড়ি বেয়ে উঠতে হয়। আপনি যদি সিঁড়ি বেয়ে উঠতে না চান, তাহলে কার এ করে মন্দিরে আসবেন যেখান থেকে আপনি অবলোকন করতে পারবেন সুন্দর আর মজাদার দৃশ্য।

মন্দিরে ভ্রমণ ছাড়াও কেনাকাটার জন্য আপনি মার্কটে অথবা বড় বাজারেও যেতে পারেন।

 

আপনি এখানে অ্যান্টিক, জুয়েলারী, পাইপ, এমব্রয়ডারী,ঝুড়ি, সিল্ক, সুতি কাপড়, সেলাডন, রুপার অলংকার, ল্যাকার ওয়্যার, ফার্নিচার,খোদাইকাষ্ঠ এবং ছাতা পাবেন। আপনি চিয়াং মাই এ মানুষদের বেশ কর্মঠ আবিষ্কার করবেন। শহরের প্রান্তে দেখা যাবে বো সাং গ্রাম। আপনার কেনাকাটার কাজ শেষ হলে, শহর থেকে ৩৬ কিমি দূরে অবস্থিত সান কামফানেগ এর মৃদু আলোর প্রস্রবনে আরাম করতে পারেন। প্রস্রবনের পানি উচ্চ সালফারযুক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারক।

 

[table id=7 /]

 

অর্থাৎ অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাময় আবেশে প্রকৃতির উদার ও অবারিত রাজ্যে হারিয়ে যেতে আপনি কিন্তু ভ্রমনের জন্যে থাইল্যান্ড হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ। আপনার পিপাসাতুর মন শ্রান্ত হয়ে যাবে থাইল্যান্ডের প্রকৃতির সৌন্দর্য পানের মধ্য দিয়ে। ভ্রমনের সকল জটিলতা কাটিয়ে আপনি চাইলে উপভোগ করে আসতেই পারেন পকৃতির অসীম দান। আর তার মোহ-মায়ায় স্নান করে আবিষ্কার করতে পারেন এক নতুন নিজেকে। আপনার এ ভ্রমনটি সুস্থ এবং সুন্দর কাটুক।

 

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents