পদ্মা সেতু | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতু। বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষের স্বপ্ন দিয়ে তৈরি এই পদ্মা সেতু। তাই পদ্মা সেতুর অপর নাম স্বপ্নের পদ্মা সেতু৷ এই সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার কোনো ধরনের বৈদেশিক অর্থের সাহায্য গ্রহন করেননি। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহত্তম প্রজেক্ট। পদ্মা সেতুর মুল অবকাঠামো তৈরি করা হয় ৪২ টি পিলার এবং ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান দিয়ে। পদ্মা সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ৬.১৫০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ কিমি। সেতুটি দুই স্তর বিশিষ্ট। মুন্সিগঞ্জ জেলার মাওয়া থেকে এবং শরিয়তপুর জেলার জাজিরা পর্যন্ত দুটি স্তর রয়েছে। উপরের স্তরে রয়েছে চমৎকার চার লেনের একটি সড়ক এবং নিচের স্তরে রয়েছে একটি রেলপথ। পদ্মা সেতুর নকশা করেন এইসিওএমের একটি সংস্থা। যারা বড় বড় আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরামর্শকদের মতামত অনুযায়ী পদ্মা সেতুর নকশা করেন। চায়না মেজর ব্রিজ নামক একটি কোম্পানি চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড এর আওতায় বাংলাদেশের সাথে চুক্তিবদ্ধ করেন। পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট খরচ হয়েছিল ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। এই সেতুটি নির্মান হওয়ার ফলে বাংলাদেশের সাথে এশিয়া ও দক্ষিন এশিয়ার আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়াও পদ্মা সেতু নির্মানের ফলে বাংলাদেশের ২১ টি জেলার প্রায় তিন কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছে। এ জন্যই কোটি কোটি মানুষ পদ্মা সেতু নির্মানের জন্য বহুদিন প্রতিক্ষায় ছিল। এই সেতুর ফলে দক্ষিন অঞ্চলের মানুষের সাথে অন্যান্য বিভাগের স্বাস্থ্য, শিক্ষার সাথে জরিত হতে পেরেছে। যার কারনে এতদিনের পিছিয়ে পরা দক্ষিনাঞ্চল এখন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা ছাড়াও অন্যান্য পরিষেবা গুলো উন্নত করতে পারছে। স্বপ্নের পদ্ম সেতু বাংলাদেশের জিডিপি উন্নয়নেও অবদান রাখছে৷
পদ্মা সেতু | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য
বাংলাদেশকে উন্নতির কয়েক ধাপ সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। দেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে জীবনের অন্যতম বড় আকাঙ্ক্ষা গুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু একটি। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের বৃহৎ একটি বহুমুখী সেতু। পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ার কারণে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলকে রাজধানী ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য অংশের সাথে যুক্ত করেছে। যার কারণে পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এখন সহজে যেকোনো জায়গায় যেতে পারছে। কয়েক দশক থেকেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করার আলোচনা চলছিল। কিন্তু বাংলাদেশের যথেষ্ট অর্থ না থাকায় পদ্মা সেতুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ২০০৭ সালের বাংলাদেশ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বাজেট ধরা হয়েছিল ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ সরকার বিশ্ব ব্যাংক থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে চেয়েছি। কিন্তু পরবর্তীতে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বিশ্ব ব্যাংক আর্থিক সহায়তা করতে রাজি হয়নি। বাংলাদেশ সরকার কোনো সহায়তা ছাড়াই পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে দেয়। ২০১৪ সালের পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল এবং ২০২২ সালে ২৩ শে জুন শেষ হয়। দীর্ঘ আট বছর পর মানুষের এত দিনের স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তব রূপ নেয়। স্বপ্নের এই পদ্মা সেতুর মোর দৈর্ঘ্য ৬.৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০মিটার। পদ্মা সেতুতে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১ টি স্প্যান ও ৪২ টি পিলার আছে। পদ্মা সেতুটি দুই স্তরে বিভক্ত। সেতুর উপরে যানবাহনের জন্য চার লাইনের একটি সড়ক এবং সেতুর নিচে রয়েছে রেল চলাচলের জন্য একটি রেলপথ। পদ্মা সেতুতে রয়েছে ফাইবার অপটিকাল কেবল গ্যাস ও পাওয়ার ট্রান্সমিশন। পদ্মা সেতুতে জরুরি প্রক্রিয়ার জন্য একটি পরিষেবা এরিয়া রয়েছে এবং পথচারীদের হাঁটার জন্য একটি পথ রয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ বাংলাদেশ সরকারের জন্য অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিল । কারণ যখন এই প্রকল্পটি চলে তখন বাংলাদেশ সরকারকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। যখন পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা ছিল তখন এর বাজেট ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ধরা হলেও পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট খরচ হয়েছিল ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা। যা ছিল বাংলাদেশ সরকারের কাছে অসম্ভবকে সাধন করার মত একটি কাজ। বাংলাদেশ অর্থ বিভাগের থেকে সেতু বিভাগ এক শতাংশ সুদের হারে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ নেয়। চুক্তিতে বলা হয়েছে সেটি বিভাগ ৩৫ বছরের মধ্যে শোধ করবে। পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের ভ্রমণ করতে সময় আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ পদ্মা সেতু নির্মাণের আগে জরুরী কাজে ঢাকা বা অন্যান্য বিভাগে সহজে যাতায়াত করতে পারতেন না। এমনকি অসুস্থ রোগীকে সহজে ঢাকাতেও নিয়ে আসতে পারতেন না। যার কারণে শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার কারণে হাজার হাজার মানুষ উন্নতি চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে৷ কিন্তু স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এখন সহজেই ঢাকা সহ অন্যান্য বিভাগের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে। যার কারণে শিক্ষা চিকিৎসা ও অন্যান্য পরিষেবায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পদ্মা সেতু এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে৷
পদ্মা সেতু | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য
পদ্মা সেতু শুধু কংক্রিটের কাঠামো নয়, এটি আমাদের স্বপ্ন, আত্মবিশ্বাস ও গর্বের প্রতীক। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাকে দেশের অর্থনৈতিক মূলধারার সাথে সংযুক্ত করে দিয়েছে এই কীর্তি। সেতুটি মুন্সিগঞ্জের মাওয়া, লৌহজংকে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর কাজ উদ্বোধন করেন। পদ্মা নদীর বুকে ৪১টি স্প্যানের উপর দাড়িয়ে এই সেতু, প্রতিটি স্প্যান ১৫০ মিটারেরও লম্বা, দাঁড়িয়ে আছে ৪২টি শক্তিশালী পিলারের উপর। ৬.১৫ কিমি দীর্ঘ এই কীর্তি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু এবং বিশ্বের গভীরতম পাইলের সেতু। এর নির্মাণ খরচ প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এর বেশি। ফসল দ্রুত ও কম খরচে ঢাকার বাজারে পৌঁছানোর ফলে লাভ বৃদ্ধি পাবে তাদের। চট, চামড়া, মাছ ও শিল্প পণ্যের রফতানি বাড়বে, দেশের আয় বৃদ্ধি পাবে। মংলা বন্দরের সাথে সহজ যোগাযোগ এর ফলে রফতানি বেড়ে যাবে, দেশের বিদেশি মুদ্রার আয় আরও বৃদ্ধি পাবে। বিকল্প অর্থনৈতিক কেন্দ্র গড়ে উঠবে দক্ষিণাঞ্চলে, তাই ঢাকার উপর চাপ কমবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের টাকা ছাড়া, নিজেদের টাকায় সেতু, আমাদের আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দিয়েছে। নিজের অর্থে এই বিশাল সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। কমেছে বিদেশি ঋণের বোঝা, নিজের পথে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের জিডিপি ১.২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এখন মোংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে কাঁচামাল দ্রুত ও কম খরচে ঢাকায় পৌঁছানো যাবে। ফলে আরএমজি উৎপাদনে সময় ও খরচ কমবে, মুনাফা বাড়বে। এছাড়াও, পণ্য রপ্তানি চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি মোংলা বন্দর দিয়েও করা যাবে, যা আরও বেশি সুবিধার। পদ্মা সেতু শুধু দুই পাড় বেঁধে দেয়নি, এটি দক্ষিণ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পেরও দুয়ার খুলে দিয়েছে। বিশেষত সুন্দরবন, বাগেরহাট, এবং কুয়াকাটার মতো মনোরম স্থানগুলো আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে, পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে মানুষের মাথা লাগার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এই গুজবটি মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। গুজবটি ছড়িয়ে পড়ার ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অপহরণকারী ধারণা করে অনেক মানসিক ভারসাম্যহীনদের মারধর ও গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। আবার সেতুর পাইলিং করতেও অনেক সমস্যার মুখমুখি হতে হয়। করোনা ভাইরাসের কারনেও অনেকদিন সেতুর কাজ বন্ধ থাকে। প্রজুক্তিগত বাধা, বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ চুক্তি বাতিল, গুজব কোন কিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনি এর নির্মাণ কাজ। সকল বাধা অতিক্রম করে, ২০২২ সালের ২৫ জুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। উদ্বোধনের পরদিন জনসাধারণে জন্য খুলে দেওয়া হয়। প্রথম দিনই সেতুতে কিছু বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। গতিসীমা অমান্য করে মোটরবাইক চালাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন মৃত্যুবরণ করে। ফলে সেতুতে সেতুতে যানবাহন থামানো, পার্কিং, পায়ে হেঁটে পার হওয়া ও মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। পদ্মা সেতু শুধু ইট-পাথরের নির্মাণ নয়, এ উন্নয়নের সোনালী পথের অগ্রদূত। এটি আমাদের অতীতের কঠিন অভিজ্ঞতা জয় করে ভবিষ্যতের উন্নত বাংলাদেশের পথ দেখাচ্ছে। এটি বাংলাদেশের গর্ব, আমাদের আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। পদ্মা সেতুর নিরব কীর্তিই বলছে, বাংলাদেশ এখন আর দরিদ্র দেশ নয়, উন্নয়নের পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ।