Dreamy Media BD

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

পাইলস খুবই পরিচিত একটি রোগ। এটি অর্শ রোগ নামেও পরিচিত। তেমন ভয়ংকর রোগ না হলেও দীর্ঘদিন এই রোগে ভুগলে অপারেশন পর্যন্ত যেতে হয়। অনেকে আছে দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যায় ভুগলেও ডাক্তারের কাছে যেতে সংকোচ বোধ করে।মলদ্বারে যন্ত্রনা, রক্ত পড়া, ব্যথাসহ নানা উপসর্গ এই রোগের, যা রোগীর জীবনটাই বিষিয়ে দেয়। এক জড়িপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭৫% মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। 

আমাদের এশিয়া মহাদেশের এশিয়া মহাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৫ শতাংশ মানুষ তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে পাইলসের রোগে আক্রান্ত হন। ৪৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এই রোগের প্রভাব বেশি দেখা যায়। তবে বর্তমানে এই রোগ আর কোনো নির্দিষ্ট বয়সের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নেই। মলদ্বারে যন্ত্রণা, রক্ত পড়া, মলদ্বার ফুলে ওঠা, জ্বালা করা ইত্যাদি অর্শ্বরোগের সাধারণ উপসর্গ। পাইলস রোগ থেকে মুক্তির কিছু সহজ উপায় আছে। প্রথম দিক থেকে এসব ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করলে খুব সহজেই চিরতরে পাইলস রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

তাই আজকের আর্টিকেলে পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। তাই চলুন দেরি না করে এখন আর্টিকেল শুরু করা যাক:

পাইলস কি

পায়খানার রাস্তার মুখ যদি ফুলে যায় এবং সেখান থেকে রক্ত পড়ে ও পায়খানার রাস্তায় গোটার মত হয় তখন তাকে পাইলস বলা হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে হেমোরয়েড বলা হয়। জটিলাকার ধারণ করার আগে  অপারেশন ছাড়াই এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব।

পাইলসের কারণ

মলদ্বারের চারপাশের রক্তনালী গুলো চাপে প্রসারিত হয় এবং ফুলে ওঠে যা থেকে তৈরি হয় পাইলস। যেসব কারণে পাইলস হতে পারে:

১) দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য।

২) ভারী ওজন উত্তোলন।

৩) দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া।

৪) মলত্যাগ করার সময় জোরে চাপ দেওয়া‌।

৫) শারীরিক পরিশ্রম না করা।

৬) অতিরিক্ত ওজন।

৭) শক্ত বা কষা পায়খানা।

৮) পায়খানার বেগ আটকে রাখা।

পাইলসের লক্ষণ গুলো কি কি

পাইলস রোগের কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে এগুলো হচ্ছে:

১) মনের সাথে রক্ত যাওয়া।

২) মলদ্বার এবং চারপাশে বেদনাদায়ক পিণ্ড।

৩) মল যাওয়ার সময় এবং পরে অস্বস্তি।

৪) মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি।

পাইলসের সমস্যা অতিরিক্ত হলে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়:

৫) মল ও অসংযম।

৬)  মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত।

৭) মলদ্বারে ভগন্দর।

৮) সংক্রমণ।

৯) স্ট্যাংগুলেটেড হেমোরয়েড, যেখানে পায়ুর পেশি হেমেরয়েড রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

পাইলসের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম

পাইলস সারাতে কিছু এলোপ্যাথিক ঔষধ আছে। পাইলসের দীর্ঘ জ্বালাপোড়া, চুলকানি, ব্যথা, রক্তপাত সব  উপসর্গ নিরাময় করে এ ওষুধগুলো। এই ঔষধ গুলো সেবন করলে খুব তাড়াতাড়ি পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চলুন তাহলে জেনে নেই পাইলসের এলোপ্যাথিক ঔষধ গুলো সম্পর্কে:

১)Daflon 1000mg: দীর্ঘদিন ধরে যারা পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন তাদের চিকিৎসায় এ ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে, বেশি পাইলস হলে প্রথম চার দিন সকালে, দুপুরে, রাতে, ১ টি করে খান। ও পরবর্তী তিন দিন শুধু সকালেও রাতে ১ টি করে খান। দীর্ঘস্থায় পাইলসের জন্য সকালে একটি করে টানা তিন মাস খান।

২)Normanal 500mg: পাইলসের এলোপ্যাথিক ঔষধ গুলোর মধ্যে এটা বেশ কার্যকর। যাদের মলদ্বারে ফোলা, তীব্র জ্বালা যন্ত্রণা ,পায়খানা করার পর রক্ত যায় ও প্রচুর ব্যথা হয়, তাদের জন্য এই ওষুধটি।

খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে, টানা ১মাস প্রতিদিন সকালে, দুপুরে ও রাতে ১ টি করে খেতে হবে। আর যখন পাইলস মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে আসবে তখন সকালে দুপুরে ও রাতে ১ টি করে টানা এক মাস খেতে হবে।

৩)Daflon 500mg: পাইলস এর চিকিৎসায় এই ওষুধটি বেশ কার্যকর।

খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে, প্রথম তিনদিন সকালে দুপুরে ও রাতে ২টি করে খাবেন, এরপর তিনদিন সকালে ও রাতে ২টি করে খাবেন। এরপরের ১৫ দিন সকালে ১টি ও রাতে ১টি করে খাবেন।

৪) Erian: এই মলমটি পাইলসের কারণে হওয়া জ্বালাপোড়া ব্যথা চুলকানি ইত্যাদি উপশমে কাজ করে।

৫)Lignocain gel: পায়খানা করার সময় জ্বালা যন্ত্রণা কমানোর জন্য এই জেলটি ব্যবহার করতে পারেন। পায়খানা যাওয়ার 15 মিনিট আগে এটি ব্যবহার করুন।

৬)Osmolax: পাইলসের সমস্যা সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রতিদিন রাতে তিন চামচ করে এই সিরাপটি খান।

পাইলসের হোমিও চিকিৎসা

পাইলসের যার জন্য হোমিওপ্যাথি খুব ভালো চিকিৎসা আছে। কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে রাখলে এবং ২ মাস নিয়মিত হোমিও ঔষধ সেবন করলে পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যায়। পাইলস রোগের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা সাধারণত সকালে সালফার এবং সন্ধ্যায় নাক্স ভূমিকায় ওষুধটি দিয়ে থাকেন। সাধারণত এই দুইটি ঔষধ সরাসরি পাইলস নিরাময় করে না মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ের মাধ্যমে পাইলস নিরাম করে থাকে। চলুন জেনে নিয় পাইলসের কিছু হোমিও ঔষধের নাম:

১) নাক্স ভমিকা।

২)এস্কিউলাস হিপ।

২)এলু সকোট্টিনা।

৩)মিউরেযেটিক এসিড।

৪) নাইট্রিক এসিড।

৫)সিপিয়া।

৬) গ্রাফাইটিস।

৭) হেমামেলিস‌।

৮) পিউনিয়া।

৯) সালফার 

এছাড়াও পাইলসের জন্য হোমিওপ্যাথিক মলম আছে। যা সাপোজিটরির মাধ্যমে ব্যবহার করলে পাইলসের চুলকানি ,রক্তক্ষরণ দূর হয়। পাইলস দূর করার জন্য হোমিওপ্যাথিক মলম হচ্ছে, নিউ লাইফ কোম্পানির-স্কিউলাস হিপ।

পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়

১) পানি পান বৃদ্ধি করুন: প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা পাইলসের চিকিৎসায় অত্যন্ত জরুরী। এখানে খেয়াল রাখতে হবে পানি যেন জীবাণুমুক্ত ও বিশুদ্ধ পানি হয়। কোন প্রকার কোমল পানীয়, চা, কফি এবং অ্যালকোহল ইত্যাদি জিনিস পান করা থেকে বিরত থাকুন।

২) ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: খাদ্য তালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যুক্ত করুন। ফাইবার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে ১) দ্রবণীয় ফাইবার ২) অদ্রবণীয় ফাইবার। দ্রবণীয় ফাইবারের খাবারগুলো হচ্ছে, শাক সবজি, ফলমূল, ডাল ,মটরশুটি ,শিম ,ওটস, বিন জাতীয় খাবার ইত্যাদি। এবং দ্রবণীয় ফাইবার জাতীয় খাবার গুলো হচ্ছে, পূর্ণ শস্য বা হোল গ্ৰেইন খাবার, বাদাম লালাটা, বিচি সহ ফল সবজি ইত্যাদি। উক্ত খাবারগুলো আপনার খাদ্য তালিকা যোগ করতে হবে।

৩) ইসবগুলের ভুষি: পাইস রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা ইসুবগুলের ভুষি বেশ কার্যকর। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সক্ষম। এতে থাকা অদ্রবনীয় ফাইবার পাইলস রোগীদের পায়খানা নরম করে দেয় যার ফলে ধীরে ধীরে পাইলস ভালো হয়ে যায়। মাত্রা অতিরিক্ত ইসবগুলের ভুষি খাবেন না এর ফলে পেটে ব্যথা ও গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।

৪) টয়লেটে কম সময় ব্যায় করুন: পাইলসের সবচেয়ে বড় কারণ হলো টয়লেটে সময় ব্যায় বেশি করা। অনেকে আছে টয়লেটে গেলে অনেক সময় পার করেন, মোবাইল ফোনে গেম খেলে ও ভিডিও দেখে। আজ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে এসব অভ্যাস বাদ দিতে হবে।

৫) নারিকেল তেল ও হলুদের গুড়া: পাইলসের চিকিৎসায় নারকেল তেল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য আপনাকে এক চামচ নারকেল তেল ও এক চিমটি হলুদের গুড়া মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এইবার এই পেস্ট মলদ্বারের বাইরের অংশের পাইলসের উপরে লাগান। দেখবেন ধীরে ধীরে পাইলস দূর হয়ে যাবে

৬) অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরা জেল এর শীতল প্রভাবের জন্য বেশ পরিচিত। পাইলসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অ্যালোভেরা জেল ও সাথে হলুদ যোগ করে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবার প্রতি রাতে ঘুমানো যাওয়ার আগে এই পেস্টটি পাইলসের স্থানে লাগান। দেখবেন কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাইলস দূর হয়ে যাবে।

৭) দেশি ঘি: ঘি অনেক গুণাগুণ সম্পন্ন। প্রতিদিন ঘি সেবন করলে অনেক রোগ থেকেই মুক্তি পাওয়া যায়। পাইলসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পরিবার মত ঘি নিয়ে সাথে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এবার নিয়ম করে এই পেস্টটি পাইলসের জায়গায় লাগান দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই পাইলসের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

পাইলস হলে কি কি খাওয়া যাবেনা

পাইলস রোগের যে খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা:

১)পনির বা চিজের মত দুগ্ধজাত খাবার।

২)দুধ 

৩)মাংস 

৪)ময়দা ও চিনি 

৫)মদ 

৬) অতিরিক্ত মসলা যুক্ত খাবার

 ৭)চা ও কফি 

৮)ফাস্টফুড 

৯)ধূমপান

১০) আইসক্রিম 

১১)চিপস 

পাইলস যে খাবারগুলো খাবেন

প্রচুর পরিমাণে পানি ফাইবার সমৃদ্ধ ফল কিংবা শাক-সবজি, মটরশুঁটি, ডাল ,রাজমা, ঢেঁকিতে ছাটা চাল, পেপে ,কলা ,কিসমিস ,আঙ্গুর, আলুবোখারা, আপেল, টমেটো, শসা ,পেঁয়াজ ,বাঁধাকপি ,ফুলকপি, গাজর ইত্যাদি।

সবশেষে

পাইলস কোন ভয়ঙ্কর রোগ নয়। শুরুতে এর সঠিক চিকিৎসা করলে পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যায়। উপরে বলা ঘরোয়া উপায় গুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলে খুব সহজেই পাইলস থেকে মুক্তি পাবে। আশা করি আজকের  পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় আর্টিকেলটি থেকে আপনি কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Also read: রক্তে এলার্জি দূর করার উপায়!

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents