বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম
বাবা মৃত্যুর পরে তার সকল সম্পদ তার উত্তরাধিকাররা বা সন্তানরা পাবে এটি সকল দেশ, জাতি এবং ধর্মের নিয়ম। নিয়মের দিক থেকে কিছুটা আলাদা হলেও বাবার সম্পত্তি যে সন্তানরা পাবে তা নিশ্চিত। তাই এর রয়েছে নানাবিধ নিয়ম।
কিন্তু আমরা সকলে হয়তো এই জমি জমা ভাগাভাগির বিষয়ে ভালোভাবে অবগত নই। যার ফলে এটি আমাদের সমাজের একটি প্রচলিত সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে জমি জমা ভাগাভাগির ক্ষেত্রে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পিতা মৃত্যুর আগে তার সহয়-সম্পত্তি ভাগাভাগি করার সুযোগ পায় না। তাই তার মৃত্যুর পর এটি হয়ে দাঁড়ায় একটি বিশাল দ্বন্দ্বের কারণ।
তাই, এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের এ সম্পর্কে জানতে হবে।যাতে করে আমরা এগুলো এড়িয়ে চলতে পারি এবং সকল ধরনের ঝামেলা মোকাবেলা করতে পার। আজ এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো বাবা মৃত্যুর পরে তার সকল সম্পত্তি ভাগ করার নিয়ম।
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম
আমরা যেহেতু বাংলাদেশের নাগরিক তাই আমাদের বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়োগ সম্পর্কে জানা সবার আগে জরুরী। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বাবা মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারগণ তার সকল সম্পদের ভাগ পাবে। উত্তরাধিকার বলতে সাধারণত বুঝায় স্ত্রীগণ, পুত্র সন্তান, কন্যা সন্তান এবং আসাবা গণ। রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী এই সম্পদ ভাগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে ।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম। এক্ষেত্রে বাবার সম্পত্তিতে ছেলে মেয়ের অধিকার আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনা করা হলো।
বাবার সম্পত্তিতে ছেলের অধিকার
বলা হয়ে থাকে ওয়ারিশ সূত্রে বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের অধিকার বেশি থাকে। তার কারণ হলো সাধারণত মেয়েদের বিয়ের পরে সংসার এবং পিতামাতার দায়িত্ব ছেলেদের কাধে উঠে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। এ সমস্ত আরও নানা কারণে ছেলেরা বাবার সম্পত্তির ভাগ বা অংশ বেশি পেয়ে থাকে মেয়েদের তুলনায়। পরিস্থিতি অনুযায়ী এই আইনের কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।
- মৃত ব্যক্তির যদি একটিমাত্র পুত্র সন্তান থাকে তাহলে সকল সম্পত্তি তার ছেলে পাবে। এই ক্ষেত্রে পিতা সকল সম্পত্তির মালিক ওই ছেলে একাই।
- উপরে নিয়ম অনুসারে ছেলে যদি একাধিক থাকে তাহলে সে অনুযায়ী সমান ভাগে সকলে সম্পদের ভাগ পাবে । এক্ষেত্রে যদি কোন বোন না থাকে তবে ছেলেরাই বাবার সম্পত্তির মালিক।
- কোন মৃত ব্যক্তির যদি ছেলে এবং মেয়ে উভয় থাকে তবে, ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে সম্পদের অনুপাত হবে ২:১। এ থেকে বোঝা যায় দুইজন মেয়ে একজন ছেলের সমান পরিমাণ সম্পদ পাবে। যদি একাধিক ছেলে এবং একাধিক মেয়ে হয় তাহলে এ অনুযায়ী সকলের মধ্যে তার সম্পদ বন্টন করা হবে।
- কোন ভাই যদি বেঁচে না থাকে তবে তার সন্তানরা তার অংশের সম্পত্তি পাবে। এক্ষেত্রে সন্তানরাই তার অংশীদার হিসেবে গণ্য হবে ।
বাবার সম্পত্তি মেয়ের অধিকার
সম্পত্তি বন্টনে মেয়েদের ক্ষেত্রে রয়েছে ভিন্নতা ছেলেদের তুলনায়। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার নিচে তুলে ধরা হলো
- তুমি তো ব্যক্তির যদি স্ত্রী না থাকে এবং শুধুমাত্র এক কন্যা সন্তান থাকে তাহলে সে তার সকল সম্পদের অর্ধেক পাবে। বাকি অর্ধেক ওয়ারিশ সূত্রে অন্যান্য উত্তরাধিকারীগণ পাবে।
- মৃত ব্যক্তির যদি একজন স্ত্রী থাকেন এবং কন্যা সন্তান থাকেন তাহলে ওই ব্যক্তির সকলে সম্পদের আট ভাগের এক ভাগ পাবে তার স্ত্রী। তার কন্যা সন্তান পাবে সমস্ত সম্পদের অর্ধেক। এবং বাকি সম্পদ পাবেন উত্তরাধিকারীগণ।
- কোন ব্যক্তি যদি স্ত্রী জীবিত থাকে এবং কোন পুত্র সন্তান না থাকে এবং একাধিক কন্যা সন্তান থাকে এক্ষেত্রে মেয়েরা দুই তৃতীয়াংশ সম্পত্তি পাবে।
- সর্বশেষে মৃত ব্যক্তির যদি কোন অংশীদারী না থাকে তবে তার সকল সম্পত্তি তার মেয়ে বা মেয়েরা পাবে ।
মুসলিম আইনে বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম
আম যেহেতু ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। বাবার সম্পত্তি ভাগের ক্ষেত্রেও রয়েছে এর পরিপূর্ণ এবং সঠিক নিয়ম। আমরা জানি বাংলাদেশের সম্পত্তি ভাগের নিয়ম ইসলামের আইন অনুযায়ী করা হয। তাই ইসলাম ধর্মের ব্যক্তিদের উচিত মুসলিম আইনে বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা।
মুসলিম আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি তার ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া ওকে ফারায়েজ বলে। ওয়ারিশ বলতে বোঝানো হয় অংশীদারগণকে । যাদের ওই মৃত ব্যক্তির সম্পদের ভেতর নির্দিষ্ট প্রাপ্য অংশ রয়েছে। সে অনুযায়ী একজন মৃত ব্যক্তির ছেলে এবং মেয়ে তার সম্পদের গুরুত্বপূর্ণ ওয়ারিশ।
বর্তমানে প্রায়ই শোনা যায় বাবার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি ভাগ করা নিয়ে চলছে কোলাহ। কিন্তু ইসলামে রয়েছে এর সুন্দর এবং সঠিক সমাধান। তাহলে চলুন এসব কঠিন বিষয় গুলোর সহজ করতে আমরা ছেলে-মেয়েদের সম্পত্তি ভাগের ক্ষেত্রে মুসলিম আইন সম্পর্কে জেনে নেই।
ইসলামের আইন অনুযায়ী বাবার সম্পত্তি ভাগ করার নিয়ম
- মৃত ব্যক্তির সকল সম্পত্তি দার ওয়ারিসদের অর্থাৎ স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে এবং অন্যান্য অংশীদারদের নিকট সঠিকভাবে ভাগ করে দিতে হবে।
- মৃত ব্যক্তির যদি ছেলে মেয়ে উভয়ে থাকে তাহলে তাদের মধ্যে সম্পদ ভাগের অনুপাত হবে ২:১ অংশ।
- মৃত ব্যক্তির যদি কোন মেয়ে না থাকে তবে তার সকল সম্পদের মালিক হবে তার ছেলে।
- মৃত ব্যক্তির যদি শুধুমাত্র একটি মেয়ে সন্তান থাকে আর কোন সন্তান না থাকে, তাহলে তার সম্পদের অর্ধেক তার মেয়ে পাবে বাকি অর্ধেক অন্যান্য অংশীদাররা পাবে।
- মৃত ব্যক্তির যদি একাধিক মেয়ে থাকে তাহলে তারা তার সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ সম্পদ পাবে। বাকি সম্পদ অন্যান্য ওয়ারিশরা পাবে।
- মৃত ব্যক্তির যদি কোন ছেলে এবং মেয়ে উভয় না থাকে তবে তার সকল সম্পত্তি অন্যান্য উত্তরাধিকার গন পাবেন। তাদেরকে বলা হয় আসবা।
- মৃত ব্যক্তির যদি কোন উত্তরাধিকারী গণ না থাকে কাউকে সম্পদ লিখে না দেন, তাহলে তার সম্পদ পাবে তার দেশের সরকার।
হিন্দু এবং অন্যান্য ধর্মের আইনে সম্পত্তি ভাগ করার নিয়ম
বাংলাদেশের মুসলিম ধর্মের পর হিন্দু ধর্মের মানুষের সংখ্যা বেশি অন্যান্য ধর্মের তুলনায়। ধর্ম অনুযায়ী তাদের সম্পত্তি ভাগ করার নিয়ম সম্পূর্ণ আলাদা। যা বাংলাদেশের সরকারি আইনে বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়মের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন।
হিন্দু ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার সকল সম্পত্তির অংশীদার হন বা ভাগ পান তার ছেলেরা।তার পুত্র যদি জীবিত না থাকে তবে এক্ষেত্রে সম্পত্তি পাবেন তার পুত্রের পুত্র।
ওই মৃত ব্যক্তির সম্পদে তার কন্যা সন্তানদের কোন অংশীদারিত্ব থাকে না। তবে এই ক্ষেত্রে যদি ওই মৃত ব্যক্তি কোন উইল করে যান তার কন্যাদের নামে তবে সে ক্ষেত্রে কন্যারা তার সম্পদের অংশীদার হতে পারবে।
বাংলাদেশে যেহেতু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ রয়েছেন। তাদের ধর্ম হিন্দু ধর্মের মানুষদের মত একই। বৌদ্ধ ধর্মেও ঠিক একই রকম কোন ব্যক্তির মৃত্যু হলে তার সকল সম্পত্তির মালিক হন তার পুত্র এবং কন্যাদের কোন ধরনের অংশীদার করা হয় না।
খ্রিষ্টান ধর্মের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার নিয়মে একজন মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি তার ছেলে এবং মেয়ে উভয়ে সমান ভাবে পাবে। ছেলে যা পাবে মেয়ে ঠিক তার সমান অংশই পাবে।
বাংলাদেশে প্রচুর আদিবাসীদের বসবাস রয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলে । বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি আদিবাসী গোত্র রয়েছে। যা রয়েছে মাতৃবোধান এবং পৃত্তিপ্রধান উভয়। তাই এদের ক্ষেত্রেও রয়েছে সম্পত্তি ভাগের নিয়ম। তাই এই অনুযায়ী তাদের সম্পত্তি বন্টনের নিয়মেও রয়েছে ভিন্নতা। মাতৃ প্রধান আদিবাসী গোষ্ঠীর উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তির অংশীদার হয় শুধু মেয়েরা এবং ছেলেরা নয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেয়ে এবং ছেলে উভয়েই সম্পত্তির অংশীদার হন। যে সকল আদিবাসী গোত্র পিতৃতান্ত্রিক তাদের সম্পত্তির অংশীদারিত্ব শুধু ছেলেরাই পায়।
শেষ কথা
সম্পত্তি বিষয়টা কম বেশি আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সাথে জড়িত। তাই এর বন্টন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের অবগত থাকা অত্যন্ত জরুরী। এ বিষয়ে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) বলেন, উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে নিজে জানো এবং অপরকেও শেখাও, কোন জ্ঞানের অর্ধেক হলো এই জ্ঞান।
তাইতো আজ বাবার সম্পত্তি ভাগের নিয়ম, এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আলোচনা করা হলো এ আর্টিকেল। আপনি নিজে জানুন এবং অন্য কেউ জানতে সাহায্য করুন। কারণ এর মাধ্যমে আমরা নিজেদের এবং অন্যদের অধিকার সম্পর্কে জানতে পারবো এবং সম্পত্তি জাতীয় সকল সমস্যার সমাধান করতে পারব।
প্রেক্ষাপট অনুযায়ী একজন মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়ে থাকে। এটি কোন সহজ বিষয় নয়। তাই ছেলে হোক মেয়ে হোক সকলেরই এ বিষয় সঠিক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। করে আপনাকে ঠকতে না হয় বা বা কেউ সেই সুযোগ না পায়।
Also Read:ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম