বিজয় দিবস | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস বাঙ্গালীদের কাছে সবচেয়ে গৌরবের একটি দিন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। তাই প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি বিজয় দিবস পালন করে। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, লক্ষ লক্ষ নারীর ইজ্জত এবং মায়ের কোল খালী করে বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করেছিল। বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীরা নির্বিচারে হত্যা করেছিল আমাদের দেশের সোনার ছেলেদের। বিজয় অর্জন করার জন্য আমাদের দেশের সোনার ছেলেরা সবকিছু ত্যাগ করে ঝাপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি বাহিনীদের বিরুদ্ধে। লক্ষ লক্ষ মানুষ শহীদ হলেও আমাদের দেশে সোনার ছেলেরা পিছিয়ে পড়েনি। তারা আমাদের আমাদের জন্য আমাদের দেশকে স্বাধীন করার জন্য বিজয়ের মালা এনে পরিয়েছিল আমাদের গলায়। লক্ষ লক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা বিজয় অর্জন করতে পেরেছি। তাদের আত্মত্যাগ কখনো ভোলার নয়। তাদের আত্নত্যাগের জন্য আমরা গর্বিত। আমাদের দেশের বীর সাহসী ছেলেরা যদি যুদ্ধে না যেত, তাহলে সারাজীবন পাকিস্তানিদের কাছে মাথা নিচু করে বাস করা লাগতো। তাদের আত্নত্যাগের জন্য সারাবিশ্বের কাছে বানাদেশের নাম জ্বলজ্বল করে জ্বলছে৷ মাতৃভূমিকে ভালবেসে জীবন বিসর্জন দেয়ার মত মহান কাজ করেছিল আমাদের দেশের বীরপুরুষরা৷ তাই মহান বিজয় দিবস এলে বাঙালিরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরন করে৷ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যেশ্য করে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশব্বিদ্যালয়, অফিস আদালত ছুটি ঘোষনা করা হয়৷ প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আনন্দের সাথে মহান বিজয় দিবস পালন করে। বিজয় দিবস উপলক্ষ করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেমন : নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করা হয়। সকাল বেলায় সব অফিস আদালত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উড়ানো হয়। মহান বিজয় দিবস প্রতিটি বাঙালির জন্য গর্বের দিন। বিজয় দিবস আসলে আত্মত্যাগ ও মাতৃভূমির মর্যাদা রক্ষার কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।
বিজয় দিবস | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য
বাংলাদেশের ইতিহাসে বিজয় দিবস একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকেই বাঙালিরা পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিল। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালিদের উপর গণহত্যা শুরু করে। এরপর বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এই দিনটিকে বাংলাদেশের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৭১ সালের বিজয় দিবসের ভাষণ দেওয়া হয়েছিল ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এই ভাষণটি দেন তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ভাষণটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। এই ভাষণে তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সুসংবাদ প্রদান করেন এবং নতুন স্বাধীন দেশের সামনের চ্যালেঞ্জগুলির কথা তুলে ধরেন। বিজয় দিবস বাংলাদেশের স্বাধীনতার অমর স্মৃতি। ভাষণের শুরুতে তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, “আজ ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১। আজ সারা বিশ্বের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। আজ থেকে পাকিস্তানের শোষণ-বঞ্চনার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জনগণ আত্মপ্রকাশ করল।”এই দিনে আমরা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তারাই আমাদের এই স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঢাকায় রাজপথে কুচকাওয়াজ, মিছিল, ও সমাবেশের মাধ্যমে বিজয় দিবস পালিত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ও সামাজিক সংগঠন বিজয় দিবস উদযাপন করে। অনেক স্কুল ও কলেজ বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশেষ প্রোগ্রাম পরিচালনা করে। যেমন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সাক্ষাৎ, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান পরিদর্শন, এবং মুক্তিযুদ্ধের ওপর আলোচনা সভা। বিজয় দিবস আমাদের জন্য একটি গৌরবময় দিন। এই দিনে আমরা আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত রাখি। আমরা আমাদের দেশকে আরও সমৃদ্ধ ও উন্নত করার জন্য কাজ করি। বিজয় দিবসের তাৎপর্য অনেক। বিজয় দিবস আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকে জাগ্রত করে। এই দিনে আমরা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তারাই আমাদের এই স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। বিজয় দিবস আমাদের দেশপ্রেম ও ঐক্যবদ্ধতা বৃদ্ধি করে। এই দিনে আমরা সবাই এক হয়ে আমাদের বিজয় উদযাপন করি। বিজয় দিবস আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে সাহায্য করে।
বিজয় দিবস | অনুচ্ছেদ -৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য
বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৬ ডিসেম্বর একটি অমোঘ, অবিস্মরণীয় দিন। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালে এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে জন্ম নিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। এ দিনটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য শুধু বিজয়ের দিন নয়, এটি আমাদের জাতীয় জীবনে বিজয়ের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গৌরবময় প্রতীক। বিজয় দিবসের সকালে সোনালি সূর্য উদয় হয় বাংলার আকাশে। প্রতিটি বাঙালির মনে জাগরিত হয় শহীদদের স্মৃতি, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব। জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয় দেশের প্রতিটি কোণে কোণে। সারা দেশের বিজয় স্মৃতিস্তম্ভগুলোতে ফুল দেয়া হয়। বিশেষ করে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে রাষ্ট্র কর্তৃক শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরেও ফুল দিয়ে সম্মান জানানো হয়। এ দিনে রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে বিশেষ বানী প্রদান করেন। তাঁরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরেন এবং ভবিষ্যতের জন্য দিকনির্দেশনা দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। এই প্যারেডে নৌ, সেনা ও বিমান বাহিনীর প্রদর্শনী মিছিল দেশের শক্তি ও ঐক্যের বার্তা দেয়। বিজয় দিবসে দেশের সব স্কুল-কলেজে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মিছিলের আয়োজন করা হয়। ছাত্র-ছাত্রীরা মুক্তিযোদ্ধার বেশভূষায় সেজে জাতীয় সংগীত ও মুক্তিযুদ্ধের গান গায় এবং কুচকাওয়াজে অংশ নেয়। তাঁরা প্যারেড, নাটক ও কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে। যা নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস সম্পর্কে জানতে ও স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে সাহায্য করে। এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা শহীদদের স্মৃতি ধারণ করে রাখি এবং তাঁদের আত্মত্যাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। বিজয় দিবসে বাংলাদেশী জনগণ একাত্মক উৎসবে মাতোয়ারা হয়। দেশজুড়ে বিজয় মিছিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মানুষজন নতুন পোশাক পরে, একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায়। বিকেলে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের গান, নাচ, এবং নাটক পরিবেশন করা হয়। মানুষজন এই অনুষ্ঠান উপভোগ করে এবং তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গৌরবকে স্মরণ করে।বিজয় দিবস শুধুমাত্র আনন্দের দিন নয়, এটি শোক ও শ্রদ্ধার দিনও। এদিন আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের কথা স্মরণ করি যারা স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন। আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং তাদের স্মৃতি রক্ষায় প্রতিশ্রুত হই। বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় সংহতির দিন। এদিনে আমরা সকল ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে উঠি। আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসি এবং দেশের উন্নয়নে কাজ করার অঙ্গীকার করি।