ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ৬ উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই এর প্রযুক্তির চমক নিয়ে সর্বত্রই আলোচনা চলছে। আমাদের মেট্রোরেলে ব্যবহৃত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, যা কিনা যাত্রীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করছে। আজকের লেখায় আমরা দেখবে আমাদের এই স্বপ্নের মেট্রোরেলে কি কি প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে।
মেট্রোরেলে ব্যবহৃত প্রযুক্তি
স্বয়ংক্রিয় ট্রেন পরিচালনা (ATO): এই সিস্টেমটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালকের সহযোগিতা ছাড়াই ট্রেনের গতি, ব্রেক এবং দরজা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
যোগাযোগ ভিত্তিক ট্রেন নিয়ন্ত্রণ (CBTC): এই সিস্টেমটি ট্রেন এবং নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ করে।
এনার্জি সেভিং ব্যবস্থা (ESS): এই ব্যবস্থাটি ব্রেকিং চলাকালীন উৎপন্ন শক্তি সঞ্চয় করে এবং ট্রেনে ত্বরান্বিত করতে ব্যবহার করে।
শীততাপ: সমস্ত ট্রেন এবং স্টেশন আধুনিক এয়ার কন্ডিশন আছে যা যাত্রীর আরামদায়কভাবে ভ্রমণ নিশ্চিত করবে।
বিনামূল্যে Wi-Fi: সমস্ত ট্রেন এবং স্টেশন বিনামূল্যে Wi-Fi আছে।
প্রতিবন্ধী অ্যাক্সেস: সমস্ত ট্রেন এবং স্টেশন প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য করা হয়েছে।
নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা: ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ৬-এ নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর জন্য উত্তরার ডিপোয় একটি সাবস্টেশন স্থাপন করা হয়েছে এবং মতিঝিলে আরেকটি স্থাপনের কাজ চলছে। প্রতিটি সাবস্টেশনে দুটি ট্রান্সফরমার থাকবে। একটি বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে এবং অন্যটি জরুরি প্রয়োজনে চালু হবে। অর্থাৎ কোথাও বিদ্যুৎবিভ্রাট হলেও ট্রেন চলাচল বন্ধ হবে না। জাতীয় গ্রিড বিপর্যয় হলেও ব্যাটারির মাধ্যমে চলমান ট্রেনগুলো নিকটবর্তী স্টেশনে পৌঁছাতে পারবে।
মেট্রোরেল স্টেশনে তাক লাগানো প্রযুক্তি
চিপযুক্ত টিকেটঃ ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ৬-এ মুল প্লার্টফর্মে ৩ তলায় উঠার আগে একটি গেট পার হতে হবে । এই দরজাগুলি শুধুমাত্র চিপযুক্ত টিকিট দিয়ে খুলতে পারে। স্টেশনে যাত্রীদের জন্য তাৎক্ষণিক টিকেট কাটার ব্যবস্থার ও মাসিক টিকেটও মিলবে বিশেষ ভেন্দোর মেশিনে।
প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন দরজা (PSD): এই দরজাগুলো প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রাকের মধ্যে একটি সুরক্ষিত বাধা তৈরি করে। এটি যাত্রীদের ট্র্যাক থেকে নিরাপদ ও পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
সিসিটিভি ক্যামেরা: এই ক্যামেরাগুলি স্টেশনের ভিতরে এবং বাইরে নিরাপত্তা কাজে ব্যবহার করা হবে।
টিকিট বিক্রয় মেশিন (টিভিএম): এই মেশিনগুলি যাত্রীদের দ্রুত এবং সহজে টিকিট করতে সাহায্য করে।
তথ্য প্রদর্শন ডিসপ্লে: এই ডিসপ্লেগুলি যাত্রীদের ট্রেন আগমন সময়, বিলম্ব এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
এসকেলেটর এবং লিফট: সমস্ত স্টেশনে এসকেলেটর এবং লিফটের ব্যবস্থা আছে, যাতে যাত্রীরা সহজে চলাচল করতে পারে।
নিরাপত্তাঃ ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ৬-এ স্টেশন ও ট্রেনে স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোনোভাবে আগুন লাগলে, এই ব্যবস্থাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয়ে যাবে এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে নিজে থেকেই কল করে যাত্রীদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
নয়েজ ব্যারিয়ার ওয়াল: মেট্রোরেলের পুরো লাইন জুড়ে ‘নয়েজ ব্যারিয়ার ওয়াল’ রয়েছে। এই দেয়ালগুলি ট্রেন চলাচলের সময় শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যা মেট্রোরেলের আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের জন্য একটি আরামদায়ক পরিবেশ বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এক নজরে মেট্রোরেল প্রকল্প | মেট্রোরেল সম্পর্কে সকল তথ্য
বিষয় | বিস্তারিত |
---|---|
প্রকল্পের নাম | ঢাকা মেট্রো রেল প্রকল্প |
পরিচালক সংস্থা | ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড |
প্রকল্প পর্ব | ২ টি পর্ব (MRT লাইন ১, MRT লাইন ৬) |
বাজেট | রায় ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (লাইন ৬ ও লাইন ১) | |
নির্মাণ শুরুর ও প্রত্যাশিত সমাপন তারিখ | লাইন ৬: নির্মাণ শুরু ২০১৬ সালের জুন মাসে, চালু হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে
লাইন ১: নির্মাণ শুরু ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, চালু হবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে (আশা করা হচ্ছে) |
স্টেশন | লাইন ৬: ১৬ টি স্টেশন
লাইন ১: ২৬ টি স্টেশন |
লাইন | ২ টি নির্মাণাধীন , ৫ টি পরিকল্পিত |
নির্মাণ কোম্পানি | লাইন ৬: জাপানি কোম্পানি দায়াচি ডোকোম (Daewoo Docom)
লাইন ১: জাপানি কোম্পানি মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ (Mitsubishi Heavy Industries) | |
অর্থায়নের উৎস | সরকার, ঋণ, আন্তর্জাতিক দাতা |
মুখ্য দাতা | জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (JICA) | |
যাত্রী ধারণ ক্ষমতা | প্রতিদিন যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা: ৫ লাখ জন |
চালুর তারিখ | ২৮ ডিসেম্বর,২০২২ (লাইন ৬ আংশিক) |
প্রতি ট্রেনে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা | ২,৩০৮ জন |
ওয়েবসাইট | www.dmtcl.gov.bd |
মেট্রোরেল প্রকল্প সম্বন্ধে ধারাবাহিক প্রশ্ন-উত্তর – FAQ
মেট্রোরেল সম্পর্কে ইন্টারনেটে বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন উত্তর।
মেট্রোরেল মানে কি/মেট্রোরেল কি?
মেট্রোরেল হলো এমন একটি দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা যা মেট্রো বা শহরের ভিতরে নির্দিষ্ট ট্র্যাকের উপর চলাচল করে। মেট্রোরেল সাধারণত ভূগর্ভস্থ বা উড়ালপথে চলাচল করে। মেট্রোরেল ব্যবস্থা শহরের যানজট কমাতে, দূষণ কমাতে এবং গণপরিবহন ব্যবস্থার মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশে বর্তমানে দুটি মেট্রোরেল প্রকল্প নির্মাণাধীন রয়েছে:
- ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ৬।
- ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ১।
মেট্রোরেল স্টেশন | মেট্রোরেল স্টেশন কয়টি?
মেট্রোরেল স্টেশন হলো মেট্রোরেল লাইনের একটি নির্দিষ্ট স্থান যেখানে যাত্রীরা মেট্রোরেলে ওঠানামা করতে পারে। মেট্রোরেল স্টেশন সাধারণত ভূগর্ভস্থ বা উড়ালপথে নির্মিত হয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে দুটি মেট্রোরেল প্রকল্প নির্মাণাধীন রয়েছে:
- ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ৬: এই লাইনের মোট ১৬টি স্টেশন রয়েছে।
- ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ১: এই লাইনের মোট ২৬টি স্টেশন রয়েছে।
মেট্রোরেল ম্যাপ | মেট্রোরেল কোথায় থেকে কোথায় যাবে?
ঢাকা মেট্রোরেল স্টেশন
ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ৬ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে। এই লাইনের দৈর্ঘ্য ২১.২৬ কিলোমিটার। লাইনটি উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে শুরু হয়ে পল্লবী, মিরপুর ১০, মিরপুর ১১, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয় এবং শেষ পর্যন্ত মতিঝিল পর্যন্ত যাবে।
ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ১ গুলিস্তান থেকে উত্তরা পর্যন্ত যাবে। এই লাইনের দৈর্ঘ্য ২৬.৮০ কিলোমিটার। লাইনটি গুলিস্তান থেকে শুরু হয়ে মতিঝিল, কমলাপুর, মহাখালী, গাবতলী, জোয়ারসাগর, চন্দ্রিমা উদ্যান, মিরপুর ১, মিরপুর ১০, মিরপুর ১১, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও এবং শেষ পর্যন্ত উত্তরা পর্যন্ত যাবে।
বর্তমানে ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ৬ এর দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও স্টেশনগুলি চালু রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে লাইনটি উত্তরা পর্যন্ত সম্পূর্ণ চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ১ এর সব স্টেশন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মেট্রোরেল প্রকল্প বাংলাদেশ
বাংলাদেশ সরকার শহরের যানজট কমাতে এবং জনসাধারণের পরিবহন ব্যবস্থার মান উন্নত করার জন্য মেট্রোরেল প্রকল্পের উপর জোর দেওয়া শুরু করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে দুটি মেট্রোরেল প্রকল্প নির্মাণাধীন রয়েছে:
- ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ৬: এই লাইন উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে। এই লাইনের দৈর্ঘ্য ২১.২৬ কিলোমিটার এবং এটিতে মোট ১৬টি স্টেশন রয়েছে। এই লাইনটি ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও চালু হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে লাইনটি উত্তরা পর্যন্ত সম্পূর্ণ চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
- ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ১: এই লাইন গুলিস্তান থেকে উত্তরা পর্যন্ত যাবে। এই লাইনের দৈর্ঘ্য ২৬.৮০ কিলোমিটার এবং এটিতে মোট ২৬টি স্টেশন রয়েছে। এই লাইনটি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে, এটি ঢাকার যানজট কমাতে এবং দূষণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
মেট্রোরেল কি দিয়ে চলে?
মেট্রোরেল সাধারণত বৈদ্যুতিক শক্তি দিয়ে চলে। একটি উচ্চ-ভোল্টেজের পাওয়ার লাইন থেকে শক্তি সরবরাহ হয় যা মেট্রোরেল ট্রেনগুলির ছাদে থাকা ট্র্যাকশন মোটরকে শক্তি যোগায়।
বাংলাদেশের মেট্রোরেলের দুটি প্রকল্প পরিবেশ বান্ধব বৈদ্যুতিক শক্তি দিয়ে চালিত হবে।
ঢাকা মেট্রোরেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান
প্রশ্ন: ঢাকা মেট্রোরেলের প্রথম চালক কে?
উত্তরঃ ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ৬ এর প্রথম চালক হলেন মরিয়ম আফিজা। তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্যামিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
প্রশ্ন: ঢাকা মেট্রোরেল কত সালে চালু হয়?
উত্তর: ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ৬ ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর চালু হয়। ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ১ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রশ্ন: ঢাকা মেট্রোরেল কত দূরত্বে চলবে?
উত্তর: ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ৬ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটার দূরত্বে চলবে। ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ১ গুলিস্তান থেকে উত্তরা পর্যন্ত ২৬.৮০ কিলোমিটার দূরত্বে চলবে।
প্রশ্ন: ঢাকা মেট্রোরেলের স্টেশন কয়টি?
উত্তর: ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ৬ এ মোট ১৬টি স্টেশন রয়েছে। ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ১ এ মোট ২৬টি স্টেশন রয়েছে।
প্রশ্ন: ঢাকা মেট্রোরেল কোথায় থেকে কোথায় যাবে?
উত্তর: ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ৬ উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাবে। ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ১ গুলিস্তান থেকে উত্তরা পর্যন্ত যাবে।
প্রশ্ন: ঢাকা মেট্রোরেল কত দ্রুত চলবে?
উত্তর: ঢাকা মেট্রোরেল ট্রেনগুলি প্রতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলবে।
প্রশ্ন: ঢাকা মেট্রোরেল চালানোর জন্য কত খরচ হবে?
উত্তর: ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।