Dreamy Media BD

সুন্দরবন ভ্রমণ এবং নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান

সুন্দরবন ভ্রমণ এবং নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান

 আপনি কি ভ্রমণ করার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন কিন্তু ভেবে পাচ্ছেন না কোথায় যাবেন প্রকৃতির প্রেম লুফে নিতে? চিন্তা বাদ দিন, আপনার কাঙ্খিত সকল সৌন্দর্য দিয়ে ঘেরা সুন্দরবনটিই আপনার জন্য উপযুক্ত এবং মনোমুগ্ধকর একটি ভ্রমণের স্থান হতে পারে খুলনার মধ্যে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা লবণাক্ত বনাঞ্চল হল সুন্দরবন।

আসুন তাহলে সুন্দরবন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়া যাক, কেন আপনি সেখানে যাবেন এবং এখানে কি রয়েছে। সুন্দরবন বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীর অন্যতম একটি নিদর্শন। সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার যা যৌথভাবে ভারত ও বাংলাদেশকে জড়িয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের আয়তনের ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার  জুড়ে রয়েছে এই সুন্দরবন। বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার সহ নানা প্রজাতির পশু-পাখি, অজগর সাপ,কুমির, স্তন্যপায়ী প্রাণী ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী সহ নানা ধরনের জীবজন্তু এবং হরেক রকম গাছের সাড়ি দিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত হয়ে দাড়িয়ে আছে এই বনটি।

প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারসহ ভ্রমন করার জন্য সুন্দরবন আসলেই একটি উপযুক্ত স্থান। এখানে ভ্রমনে আসলে আপনি সুন্দর বনের পাশাপাশি আরও কিছু আকর্ষনীয় স্থান দেখতে পাবেন। জানতে হলো পুরো লেখাটিতে চোখ রাখুন।

 

কটকা

সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে কটকা একটি অন্যতম স্থান। এটি সুন্দরবনের দক্ষিণ পূর্ব কোণে অবস্থান করছে। মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কটকা এবং সুন্দরবনের পূর্ব অভয়ারণ্যের মধ্যে প্রধান কেন্দ্র এটি।

সুন্দরবন ভ্রমণ

কটকায় রয়েছে বন বিভাগের একটি মনোরম রেস্ট হাউস। কটকার আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় খাল। যেখানে নৌকা নিয়ে ভ্রমণ প্রেমিকরা ভ্রমণ করতে যেতে পারবে এবং সবচেয়ে কাছ থেকে উপভোগ করতে পারবে সুন্দরবনের আসল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

কটকা সমুদ্র সৈকতের ৪০ ফিট উচ্চতার চারতলা বিশিষ্ট একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার আছে। টাওয়ার থেকে হরিণের পালদের ঘুরাঘুরি, শূকরের দৌড়াদৌড়ি, বানরদের খেলাধুলা ,বাঘের শিকারধরা, রয়েল

বেঙ্গল টাইগারের চলাফেরা, অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের পর্যবেক্ষণ করা যায়।

কটকার খাল গুলোর পাশ দিয়ে দেখা যায় অসংখ্য চিত্রা হরিণ  বিচরণ করছে। এছাড়া বানর ,উদবিড়াল, বন মুরগি এবং নানা ধরনের পাখি মুক্ত ভাবে বিচরণ করতে দেখা যায়। মাঝে মাঝে কটকা নদীতে কুমির ভেসে থাকতে দেখা যায়। মাঝে মাঝে রাজকীয় ভঙ্গিতে বাঘের চলার দৃশ্য উপভোগ করা যায় এবং মাঝে মাঝে তাদের গর্জনও শোনা যায়‌।,

কটকার জামতলা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে বন্যপ্রাণীর অপূর্ব দৃশ্য এবং বাঘের হরিণ শিকারের দৃশ্য দেখা যায়, যা পর্যটকদের আকর্ষণ ,করে প্রতিনিয়ত।

কটকা সমুদ্র সৈকত জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সাদা সাদা “মুক্তোর” দানা। চারিদিকে সাদা ঝিনুকের ছড়াছড়ি, যা মুহূর্তে আপনার নজর কেড়ে নেবে । আছে  অসংখ্য লালকাঁকড়া, এমনকি কালো ঝিনুকেরও দেখা মেলে এখানে। তাই সময় নষ্ট না করে সুন্দরবনের পর চলে আসুন কটকার রুপ দেখতে।

 

করমজল

আপনি যদি অল্প সময়ের মধ্যে সুন্দরবন ভ্রমণ করে ফিরে আসতে চান, তাহলে আপনার জন্য সুন্দরবনের করমজল স্থানটি সবচেয়ে উপযোগী একটি স্থান। কারণ  করমজল স্থানটি মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে খুব নিকটবর্তী হওয়ায় মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যে এটি ভ্রমণ করে ফিরে আসা যায়।

করমজল স্থানটিতে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ভ্রমণ করতে আসেন।

প্রধান আকর্ষণ গুলোর মধ্যে হরিণ, বানর, কুমির ,নৌকা চালানো ,বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, পশুর নদী,জেলেদের মাছ শিকারের দৃশ্য ইত্যাদি খুব সুন্দর ভাবে উপভোগ করা যায়। এছাড়াও

বাংলাদেশের একমাত্র কুমির প্রজনন কেন্দ্র এই করমজলে অবস্থিত যা পর্যটকদের দারুন

ভাবে আকর্ষণ করে থাকে।

বাংলাদেশী ছাত্র ও গবেষকেরা ২০ ও ৪০ টাকার বিনিময় প্রবেশ করতে পারেন অনায়াসে। কিন্তু বিদেশি গবেষকদের করমজলে প্রবেশের জন্য ৫০০ টাকা করে গুনতে হয়।বাংলাদেশের সুন্দরবনের

নৈসর্গিক করমজল উপভোগ করার জন্য বিদেশী পর্যটকরা অনেকেই দর্শন করতে আসেন।

যে কেউ করমজলে প্রবেশ করতে ১০ টাকা টিকিট কাটতে পারে। ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশের জন্য এখানে ক্যামেরা প্রতি অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়।বাংলাদেশীদের জন্য এই চার্জ ২০০টাকা এবং

বিদেশীদের জন্য ৩০০ টাকা। বলে রাখা ভালো এখানে সকল মূল্যের সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট

প্রযোজ্য থাকে। খুলনার রুপসা ফেরিঘাট থেকে সুন্দরবনের করমজল যাওয়া যায় লঞ্চ যোগে।

 

কচিখালী  সমুদ্র সৈকত

সুন্দরবন

সুন্দরবনের কটকা নদীর পূর্ব দিকে ও সুন্দরবনের স্মরণখোলা রেঞ্জে অবস্থিত অপূর্ব সৌন্দর্যের লীলাভূমি কচিখালী সমুদ্র সৈকত। সুন্দরবনের অন্যতম দর্শনীয় স্থান কচিখালী। নদীর এপার আর ওপার মিলে নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্র ও অভয়ারণ্য পর্যটকদের মন মাতিয়ে তোলে।

কিন্তু বেশিরভাগ পর্যটকদের সাধ্য হয় না মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কচিখালি দেখার কারণ , সেখানে যেতে অনেক সময় লেগে যায় কাঠের নৌকা সেখানে প্রবেশ করা নিষেধ তাই লঞ্চে করে সেখানে যেতে হয়। যা কিছুটা ব্যয়বহুল।

কটকার জামতলা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে কচিখালী সমুদ্র সৈকত হয়ে বনবিভাগের কচিখালী স্টেশন পর্যন্ত পায়ে হাটা পথ আছে। এই পথের পাশে ঘন বন দেখতে পাওয়া যায়। এই পথের পাশে বাঘ ,হরিণ ,বানর,বিষ ধর সাপ ইত্যাদি বন্যপ্রাণী দেখতে পাওয়া যায়।

এই পথে হাঁটার সময় পর্যটকদের কিছুটা ভয় ভয় মনে হতে পারে কিন্তু সাহসী পর্যটকদের প্রথম পছন্দ এই কচিখালি। কচিখালী প্রধান আকর্ষণ মনমুগ্ধকর সমুদ্র সৈকত। যে সমুদ্র সৈকতের নিরিবিলি পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মন কেড়ে নেবে মুহূর্তেই। এছাড়াও এই সৈকতে মাঝে মাঝে বাঘ বিচরণ করে থাকে। বাঘের পায়ের ছাপ যা পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে।

জেটি থেকে উঠে প্রথমে বন কার্যালয় থেকে সোজা দক্ষিণে ঘনবন চলে গেছে ভেতরে মিঠা জলের পুকুর আছে ,এই বনের শেষ সীমানায় গিয়ে ঠেকেছে সমুদ্র সৈকত । দেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তীরে কটকা-কচিখালির অবস্থান। এখানে সাগর মিশে যাওয়া কটকা নদীর মোহনায় অবিরাম ডলফিন আর শুশকের খেলা চলতে থাকে।

কচিখালি সমুদ্র সৈকতকে সুন্দরবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র বলা চলে।  একদিকে নীরবতা, অন্যদিকে বাঘের ভয়, সুন্দরী, গরান ,গেওয়া গাছের জড়াজড়ি আপনার মনে এক রোমাঞ্চকর ভ্রমণের স্বাদ দিবে অতিপ্রাকৃত ও অপার্থিবভাবে। তাই সুন্দরবন ভ্রমণ করতে গেলে আপনি অবশ্যই এখানকার অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসতে পারেন।

 

হাড়বাড়ীয়া

সুন্দরবনের আরেকটি দর্শনীয় স্থান হারবাড়ীয়া টহল ফাঁড়ির পাশেই ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র। এর সামনেই যে খালটি রয়েছে সেখানে কুমিরের অভয়ারণ্য। প্রায়ই দেখা যায় লোনা পানিতে কুমিরকে

রোদ পোহাতে। তবে কুমির দেখার ভালো সময় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি।

হারবাড়ীয়াই সুন্দরবনের বিরল মায়া হরিণের দেখা মেলে যত্রতত্র। এখানকার ছোট ছোট খাল গুলোতে আছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙ্গা সহ নানান যাদের পাখি যা দর্শকদের মুগ্ধ করে। হাড়বাড়িয়ার খালে পৃথিবীর বিপন্ন মাস্ক ফিন ফুট বা কালোমুখ প্যারা পাখিও দেখা যায়।

হাড়বাড়ীয়ার খালের পাড়ে দেখা যায় ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের সোনালী নাম ফলক। এরপর একটু সামনে এগোলেই কার্যালয়ের দপ্তর। তারপর খালের ওপর রয়েছে ঝুলন্ত সেতু। সামনের দিকে জঙ্গলের গভীরতা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ঝুলন্ত সেতু বেরিয়ে একটু সামনে এগোলেই বিশাল একপুকুর।

পুকুরের মাঝে গোল পাতার ছাওনি সমেত একটি বিশ্রামাগার রয়েছে। ঘরটির চারপাশে বসার জন্য বেঞ্চপাতা আছে ।পুকুরের পাড় থেকে কাঠের তৈরি সেতু গিয়ে ঠেকেছে ঘরটিতে। যেখানে বসে সুন্দরবনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। পুকুরের দুইপাশ থেকে সামনে চলে গেছে ইট বিছানো রাস্তা। অল্প দূরত্বে দুইটি শেষ হয়েছে কাঠের তৈরি হাঁটার পথ ধরে।

যেকোনো একদিক দিয়ে হাঁটা শুরু করলে অন্য প্রান্তে এসে শেষ হবে এইপথ ।‌ তবে ডান দিকের ইট বিছানো পথের শেষে রয়েছে তিন তলা বিশিষ্ট একটি জঙ্গল পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। কাঠের তৈরি এই টাওয়ারে উঠে ওপর থেকে জঙ্গলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা বেশি উপভোগ করে।

হাড়বাড়ীয়ার জায়গাটিতে বাঘের আনাগোনা বেশি। প্রায় বাঘের পায়ের তাজা পায়ের ছাপের দেখা যায় এখানে চিত্রা হরিণ ছাড়াও অন্যান্য বন্যপ্রাণীরও দেখা মিলবে। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া ভ্রমণ পিপাসার খোরাক হতে পারে।

নীল কমল;হীরণ পয়েন্ট

সুন্দরবন ভ্রমণ এবং নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান

সুন্দরবনের সবচেয়ে সৌন্দর্যময় ও নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে রয়েছে হিরণ পয়েন্ট। নীলকমল নদীর আশেপাশের জঙ্গলে এখনো হরিণের আধিপত্য নজর কাড়ে। এ অঞ্চলের হরিণের অবাধ বিচরণের জন্য এই স্থানকে হিরন পয়েন্ট নামে অভিহিত করা হয়।

এটি সুন্দরবনের দক্ষিণ অভয়ারণ্যের একটি বিখ্যাত প্রশাসনিক কেন্দ্র। এখানে সবচেয়ে বেশি হরিণ দেখতে পাওয়া যায়। হিরণ পয়েন্ট হিরন পয়েন্ট একটি অভয়ারণ্য হওয়ার দরুন এই স্থানে অনেক বাঘ ,হরিণ, বানর ,পাখি এবং সরীসৃপের নিরাপদ আবাসস্থল।

নীলকমলে দেখা যায় চিত্রা হরিণ, বন্যশুকর , পাখিদের মধ্যে আছে সাদা বুক মাছরাঙ্গা ,হলুদ বুক মাছরাঙা কালো মাথা মাছরাঙ্গা ,লার্জ এগ্রেট, কাঁদা, খোঁচা, ধ্যানী বক প্রভৃতি পাখিদের আনাগোনা। এছাড়া এখানে রয়েছে প্রচুর কাঁকড়ার আবাস । আর রয়েছে রং-বেরঙের প্রজাপতির মেলা।

হিরন পয়েন্ট থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কেওড়াসুঠিতে রয়েছে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, যা থেকে আশেপাশের প্রকৃতি দেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে প্রশাসন। সেখানে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালিত তিনটি ভালো রেস্ট হাউস আছে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সেখানে থাকা যায়।

 

দুবলার চর

বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের দক্ষিণে কটকার দক্ষিণ – পশ্চিমে এবং হিরন পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে

অবস্থিত একটি দ্বীপ। যা চর নামে পরিচিত এবং হিন্দু ধর্মের পূণ্যস্নান। শুধু তাই নয় রাস মেলা ও হরিণের জন্য বহু পরিচিত এই স্থান।

দুবলার চর সুন্দরবনের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁসে অবস্থিত এই দ্বীপটি মৎস্য আহরণ ও প্রক্রিয়া জাতকরণের এক ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে পরিচিত হয়ে আছে।

গুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে এটি একটি বিচ্ছিন্ন চর নামে অভিহিত। এই চরের আয়তন ৮১ বর্গ কিলোমিটার।

আলোরকোল, হলদিখালি কবরখালি ,মাজেরকিল্লা, অফিস কিল্লা, নারকেল বাড়িয়া, ছোট আমবাড়ীয়া ও মেহের আলীর চর নিয়ে দুবলার চর গঠিত। দুবলার চর মূলত জেলেগ্রাম মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুটকিশুকানোর কাজ। এখানে প্রতিবছর বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের জেলেরা অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করে থাকে এবং সাগরে মাছ ধরে যা তারা প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে বিক্রি করে।

সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ সম্পর্কে ধারণা পেতে এই স্থানটি সর্বোৎকৃষ্ট স্থান হিসেবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও এখানে রয়েছে একটি আকর্ষণীয় ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সমুদ্র সৈকত। এখানে দেখা মেলে লাল বুক মাছরাঙ্গা, মদনটাক পাখি আরো দেখা পাওয়া যায় পশুদের  মধ্যে  হরিণ আছে জেলি ফিশ।

 প্রতিবছর কার্তিক মাসে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাসমেলা এবং পূর্ণ স্নানের জন্য এই দ্বীপটি বিখ্যাত। দীর্ঘ দুইশ বছর ধরে এ রাস মেলা চলছে। প্রতিবছর অসংখ্য পূর্নার্থী রাসপূর্ণিমাকে উপলক্ষ করে এখানে সমুদ্রস্নান করতে আসেন। দুবলার চরের রাসমেলায় স্থানীয় লোকজন ছাড়াও দূর দূরান্তের শহরবাসী এমন কি বিদেশি পর্যটকরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে থাকেন। তিন দিনব্যাপী এই মেলায় অনেক বিদেশী পর্যটকদের সমাগম দেখা যায়।

 

সুপতি

সুন্দরবনের সুপতি একটি অভয়ারণ্য এলাকা। এখানে নদীতে দুর্লভ প্রজাতির ইরাবতী ডলফিন দেখা যায়। এখানে অনেক ছোট ছোট খাল আছে। খালের আশেপাশে সারিবদ্ধভাবে গোলপাতার বন পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং চারিদিকের মনোরম দৃশ্য দেখে দর্শকেরা পুলকিত হয়।

যদি কেউ সুন্দরবন গিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে বেরিয়ে চলে আসতে চায় তাহলে সুপতি তাদের জন্য হবে যথাযোগ্য স্থান। এখানে বনবিভাগ  ও কোস্ট গার্ডের একটি ক্যাম্প আছে। যা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার এবং জানমালের সুব্যবস্থা করে থাকে।

 

ডিমের চর

কটকা সমুদ্র সৈকত থেকে খুব কাছাকাছি যে সৈকতটি সেটি হচ্ছে ডিমের চর সমুদ্র সৈকত। ডিমের চর সৈকতটি অতি নির্জন এবং পরিছন্ন পরিবেশ যা মুহূর্তে আপনার মন ভালো করে দেবে। সৈকতের বেলা ভূমি জুড়ে দেখা যায় কাকড়াদের নিপুন শিল্পকর্ম।

সৈকতের অন্য পাশে রয়েছে বিশাল কাশবন যা দেখলে মনে হবে সাদা শাড়ি গায়ে দিয়ে প্রকৃতি বাতাসের সাথে খেলা করছে। সন্ধ্যায় যখন সূর্য অস্ত যায় তখন আকাশ আর প্রকৃতিকে দেখলে মনে হবে যেন বিচিত্র এই দৃশ্য আপনি কখনো দেখেননি।

জামতলা সমুদ্র সৈকত

সুন্দরবন

সুন্দরবনের মধ্যে প্রায় তিন কিলোমিটার ঘন বন-জঙ্গল অমূল্য বৃক্ষরাজি গরান, গেওয়া , সুন্দরী, কেওড়ার বন পেরিয়ে জামতলা সমুদ্র সৈকতে পৌঁছানো সম্ভব। জামতলা সমুদ্র সৈকতের পথে শুধু মাত্র ম্যানগ্রোভ বন পাড়ি দিতে হয় না, কখনো কখনো ফার্নের ঝোপও পাড়ি দিতে হয়।

 এই সৈকতের আরো একটি আকর্ষণীয় স্বকীয়তা হলো কালো বালির চাকচিক্য। সূর্যের আলো বালির ওপরে পড়লে মনে হয় যেন কালো হীরা চারদিকে ঝলমল করেছে। চারিদিকে শান্ত নিরবতা,পাখির কলকাকুলি, সামনে সমুদ্র সৈকত, সবুজ বনের হাতছানি, আর নিচে পড়ে থাকা ছোট ছোট বালির চকমকি আপনার মনকে মুহূর্তেই উদ্দেলিত  করে তুলতে পারে।

কোকিল মনি ও টিয়ারচর

সুন্দরবনের সবচেয়ে গভীরতম স্থানের মধ্যে কোকিলমনি ও টিয়ারচর একটি উল্লেখযোগ্য স্থান। এটি সুন্দরবনের অতি গভীরে হওয়ার ফলে বন্যপ্রাণী অবাধে এখানে বিচরণ করে থাকে। কোকিল মনিতে একটি বিশাল দিঘী আছে যেখানে পানি সব সময় স্বচ্ছ এবং মিষ্টি থাকে।

চারিদিকে এত নোনা পানির বিধৌত এই সুন্দরবনের মধ্যে মিষ্টি পানিতে পর্যটকরা ইচ্ছা করলে অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করার জন্য গোসল করে নিতে পারে। কোকিল মনিতে নিরাপত্তার জন্য বন বিভাগ ও কোস্টগার্ডের অফিস রয়েছে।

এদিকে টিয়ারচরে হরিণের অবাধ বিচরণ দেখা যায় । এখানে বন মোরগ, শুকর, গুইসাপ ,মদনটাক পাখি সহ অসংখ্য সরীসৃপ পশু-পাখির যত্রতত্র দেখা মেলে।

পুটনী আইল্যান্ড

পুটনি আইল্যান্ড বাংলাদেশের খুলনা জেলাতে অবস্থিত একটি দ্বীপ যা স্থানীয়দের কাছে দ্বীপচর নামে অভিহিত। পুটনি দ্বীপ সুন্দরবনের ভেতর প্রকৃতির অপার এক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এটির একপাশে গহীন জঙ্গল আর অন্য পাশে সমুদ্র সৈকতের মতো বিস্তীর্ণ এলাকা ।আর ঠিক মাঝখানে খাল গুলোর ধারে ঘন সবুজ ঘাসের প্রান্তর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

চোখ জুড়ানো ও মন ভুলানো দৃশ্য পাওয়া যাবে পুটনি আইল্যান্ডে। সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে আর পাঙ্গাসিয়া নদী এবং বঙ্গোপসাগরের মোহনায় পুটনীদ্বীপ রয়েছে। জোয়ারের সময় এটি সারা এলাকা জুড়ে ভাসমান থাকে এবং ভাটার সময় ধুধু বালুচর। ভোরের সূর্যটা একদম চোখের সামনে  উঠতে দেখা আবার বিকেলের পর সূর্য অস্ত যায় বঙ্গোপসাগরের মোহনায় এই অপার মনো মুগ্ধকর সৌন্দর্যর দৃশ্য দেখতে পর্যটকরা এখানে ভিড় করে।

আমরা অন্য দেশে প্রাইভেট আইল্যান্ড বা হলিউডের বিভিন্ন সারভাইভাল মুভিতে চর বা দ্বীপ দেখে থাকি ঠিক সেই রকম একটি জায়গা পুটনী আইল্যান্ড। এখানে অনেক কাঁকড়া দেখতে পাওয়া যায়।

কাঁকড়ার আধিক্য থাকায় অনেকে কাঁকড়া আহরন করতে এখানে যেয়ে থাকেন। পুটনি  আইল্যান্ডে গহীন জঙ্গলে যেমন পরিমাণে হরিণ রয়েছে ঠিক তেমনি এখানকার খাল গুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মাছ। মূলত পুটনি আইল্যান্ড হরিণ আর মাছের অভয়ারণ্য।

বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড

বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড এর অবস্থান খুলনা জেলায় যা দুবলার চর থেকে ২৫ কিলোমিটার এবং হিরণ পয়েন্ট থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে জেগে ওঠা একটি চর। বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড মংলা বন্দর থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এবং লম্বায় প্রায় 4 কিলোমিটার, প্রস্থে প্রায় ২ কিলোমিটার আর আয়তনে প্রায় ৭. ৮৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড  ত্রি-কোনা কৃতির এবং এটিকে ঘিরে রয়েছে অপার সমুদ্র সৈকত। তবে দ্বীপের আয়তন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে ধীরে ধীরে খরস্রোতা হয়ে পড়ছে সৈকতের ঘেউ। এই দ্বীপটির সমুদ্র সৈকত ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫০০ কিলোমিটার প্রস্থ।

বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডে সমুদ্র সৈকতের সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায় বিস্মিত নয়নে। দ্বীপটি একধারে  সবুজ শ্যামল ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, এক পাশে কাশবন। যা দর্শকদের অবাক করে দেয় অসীম সৌন্দর্যে। আপনি যদি সত্যি রোমাঞ্চকর এবং এডভেঞ্চার কোন ভ্রমণ অভিজ্ঞতার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে চান অবশ্যই সুন্দরবন ভ্রমণ আপনার জন্য একটা স্বাচ্ছন্দের ভ্রমণ হবে আশা করি।

সুন্দরবনকে জালের মত ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য সামুদ্রিক স্রোতধারা ,কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবনাক্ততা সহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। সুন্দরবনে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসে নানা জায়গা থেকে। প্রতিবছর দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য মুগ্ধ হয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ করার মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করার উদ্দেশ্যে এখানে আগমন করে  থাকে।

বাংলায় সুন্দরবনের আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দর বনভূমি এলাকা। এছাড়াও সুন্দরী গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয় যা এখানে প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। অন্যান্য সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে আরো ধারণা করা হয় , এর নামকরণ হয়তো হয়েছে ” সমুদ্র বন” বা “চন্দ্র বান্ধে (বাঁধে)” প্রাচীন আদিবাসী থেকে। তবে সাধারণভাবে ধরে নেয়া যায় যে ,সুন্দরী গাছ থেকেই আসলে সুন্দরবনের নামকরণ করা হয়েছে ।

প্রথাগত বনজ সম্পদের পাশাপাশি এ বন থেকে নিয়মিত ব্যাপকভাবে আহরণ করা হয় ঘর ছাওয়ার  গোলপাতা,মধু, মৌচাকের মোম , মাছ ,কাকড়া এবং শামুক-ঝিনুক। বৃক্ষপূর্ণ সুন্দরবনের এই ভূমি একই সাথে আমাদের প্রয়োজনীয় আবাসস্থল ,পুষ্টি  উৎপাদক, পানি বিশুদ্ধকারক, পলি সঞ্চয়কারী, ঝড় প্রতিরোধক, উপকূল স্থিতিকারী ,শক্তি সম্পদের আধার এবং পর্যটন কেন্দ্র।

ঢাকা টু খুলনা (সুন্দরবন) বাস সার্ভিস ও টিকিট মূল্য

প্রানপ্রিয় ভ্রমনপিপাসু ও দর্শনার্থীদের জন্য খুলনার আকর্ষনীয় স্থানের পাশাপাশি, ঢাকা থেকে খুলনা যাওয়ার বাস পরিবহন সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে নিচের টেবিল গুলো সাজিয়েছি। যাতে করে আপনার ভ্রমন হয় আরও বেশি আনন্দময়, আরামদায়ক এবং সময় সাশ্রয়ী।

এখানে অনেক গুলো বাসের নাম লিস্ট করা আছে যেখান থেকে আপনি আপনার বাজেটের মধ্যে যেকোনো বাস নির্বাচন করতে পারবেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক তথ্য গুলো।

ঢাকাখুলনা এসি বাসের ভাড়া ও সময়সূচি২০২২

বাসের নাম    বাসের ব্র্যান্ড   বাসের ধরণ    ভাড়া

[table id=1 /]

ঢাকাখুলনা ননএসি বাসের ভাড়া ও সময়সূচি২০২২

[table id=2 /]

বি:দ্র বাসের টিকিট যেকোনো সময় কম-বেশি হতে পারে সেক্ষেত্রে সরাসরি বাস পরিবহন কাউন্টারে টিকিট সংক্রান্ত বিষয় আলোচনা করে নিতে হবে।

সর্বোপরি বলা যায় যে, সুন্দরবন সকল বয়সের পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য একটি উপযুক্ত স্থান। ব্যস্ততম জীবন থেকে একটু ছুটি নিয়ে সময় বের করে একবার হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা অতি জরুরি।

এতে একদিকে পরিবার প্রিয়জনদের সাথে একটি আনন্দময় এবং স্মরনীয় সময় পার করা যায়। সুস্থ থাকুন নিরাপদে ভ্রমণ করুন সুন্দরবনসহ এর পার্শ্ববর্তী আকর্ষনীয় স্থান গুলো।

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents