হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়
রক্তে থাকা হিমোগ্লোবিনের নাম আমরা সকলেই কম বেশি শুনেছি। এটি রক্তের একটি বিশেষ উপাদান। যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা হিমোগ্লোবিন সম্পর্কে জানলেও তবে এর কাজ, প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব সম্পর্কে হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। এমনকি এটাও আমরা জানি না হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়।
রক্তে সঠিক পরিমাণে হিমোগ্লোবিন থাকাটা অত্যন্ত জরুরি, তা না হলে দেখা দিতে পারে রক্তশূন্যতা বা রক্তস্বল্পতার। পরবর্তীতে এই রক্তশূন্যতা বা রক্তস্বল্পতার কারণে দেখা যায় নানা ধরনের সমস্যা এবং কখনো কখনো মৃত্যু কারণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। তাই বলা যায় এত কিছুর মূল কারণ হলো রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকা।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে রক্তের হিমোগ্লোবিনের গুরুত্ব কত বেশি। আজ আমরা জানবো রক্তের হিমোগ্লোবিন সম্পর্কে, এর কাজ কি, রক্তে কি পরিমাণ হিমোগ্লোবিন থাকা দরকার, কিভাবে হিমোগ্লোবিন বাড়ানো যায় ইত্যাদি সকল বিষয়। এছাড়া হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ সম্পর্কেও আজ আমরা ধারণা লাভ করব।
হিমোগ্লোবিন কি এবং এর কাজ কি
হিমোগ্লোবিন সম্পর্কে জানতে হলে সবার আগে হিমোগ্লোবিন কি এবং এর কাজ কি এ সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক হিমোগ্লোবিন কি এবং এবং গ্লোবিনের কাজ কি।
হিমোগ্লোবিন কি
সহজ ভাষায় হিমোগ্লোবিন হল রক্তে অবস্থিত প্রোটিন বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় মেটালপ্রোটিন। যা রক্তের একটি প্রধান উপাদান । যার অবস্থান হলো রক্তের লোহিত রক্ত কণিকায়। রক্তের এই উপাদানটির কারণেই রক্তের রং লাল। এ ছাড়া এটি রক্তের ঘনত্ব বজায় রাখে। রক্তের হিমোগ্লোবিনের সাথে অক্সিজেনের সম্পর্ক রয়েছে।
হিমোগ্লোবিনের কাজ কি
আমাদের শরীরে রক্তের বিশেষ কিছু কাজ রয়েছে যা হিমোগ্লোবিন সম্পন্ন করে। গ্লোবিনের প্রধান কাজ হল ফুসফুস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করে তা সারা শরীরে পৌঁছে দেওয়া। বিভিন্ন কলায় এবং টিস্যুতে অক্সিজেন প্রবেশ করে হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে
শরীর থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হওয়ার ক্ষেত্রেও হিমোগ্লোবিনের ভূমিকা রয়েছে। শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সংগ্রহ করে তা ফুসফুসে প্রেরণ করে এবং শ্বাস-নিশ্বাস এর মাধ্যমে তা নির্গত হয়।
এছাড়া হিমোগ্লোবিন রক্তের প্রোটিনের মাত্রা ঠিক রাখে এবং ধরে রাখে। হিমোগ্লোবিন লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করে খুব শরীর বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাস নির্গত করতে সাহায্য করে।
হিমোগ্লোবিনের সঠিক মাত্রা
হিমোগ্লোবিনের সঠিক এবং স্বাভাবিক মাত্রা সম্বন্ধে আমাদের আগে জানতে হবে। পুরুষ এবং নারীদের ক্ষেত্রে গুলোবিনের মাত্রা সমান নয়। তুলনামূলকভাবে নারীদের তুলনায় পুরুষদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা একটু বেশি থাকে।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের রক্তের প্রতি ডেসি লিটারে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১৩.৫–১৭.৫ গ্রাম হওয়াটা স্বাভাবিক মাত্রা। একজন মহিলার ক্ষেত্রে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১২–১৫.৫ গ্রাম স্বাভাবিক মাত্রা।
অনেকেই ভাবেন এর থেকে কম বেশি হলে সেটাও স্বাভাবিক মাত্রা। তা সম্পূর্ণই ভুল নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম হওয়া রক্তশূন্যতা বা রক্তস্বল্পতা। এজন্য হিমোগ্লোবিন কম হলে শরীরের রক্ত দিতে হয়।তার জন্য জানা প্রয়োজন হিমোগ্লোবিন কত হলে শরীরের রক্ত দিতে হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই মাত্রার পরিসীমা পরিবর্তন হয় জীবন লিঙ্গ, বয়স, গর্ভকালীন সময় ইত্যাদি অবস্থায়।
হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়
আমরা ইতোমধ্যে পুরুষ এবং মহিলাদের সঠিক মাত্রার হিমোগ্লোবিন সম্পর্কে জেনেছি। এবং এটাও জেনেছি যে শরীরে হিব্রোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক পরিমাণে না থাকলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। একে বলা হয় রক্তশূন্যতা। এবার আসি আমাদের আর্টিকেলের আলোচিত মূল বিষয়ে। সেটা হল হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দিতে হয়।
যার ফলে শরীরে দিতে হয় রক্ত এবং এই রক্ত দেওয়াকে বলা হয় রক্ত পরিসংচালন। বিভিন্ন কারণে শরীরে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
- তবে এক্ষেত্রে যে কোন সার্জারি করার পূর্বে রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ যদি ৮ ডেসিলিটার বা এর কম হয় তাহলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন করাতে হয়।
- এছাড়া দীর্ঘদিন যদি কেউ রক্তশূন্যতায় ভোগে তাহলে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে যদি ৭ ডেসিলিটার বা এর কম থাকে তাহলে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
- গর্ভ অবস্থায় অথবা বাচ্চা প্রসবের পরে বিভিন্ন কারণে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে পারে। তখন রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
- কোন দুর্ঘটনার কারণে যদি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায় । সে ক্ষেত্রে রক্ত সঞ্চালন করা প্রয়োজন হয়।
বিভিন্ন কারণে শরীরের রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে, তবে সকল অবস্থায় শরীরের রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে রক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যাবে যে রোগীর শরীরে রক্ত দিতে হবে কিনা।
হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার লক্ষণ
এ পর্যায়ে আমরা জানব রক্তে হিমোগ্লোবিনে হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার লক্ষণগুলো কি। রক্তে হিমোগ্লোবিন কম হলে শরীরে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। এসব এসব উপসর্গ বা লক্ষণ দেখলেই আমরা বুঝবো যে তার শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাব অথবা রক্তশূন্যতা রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার লক্ষণ গুলো কি
- শরীরে সবসময় ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করা।
- হাত-পা ফুলে যাওয়া এবং সব সময় হাত-পা ঝিম ঝিম করতে থাকা।
- শরীরে ঘামে পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং অকারণে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।
- ত্বক দেখতে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটা ফ্যাকাশে লাগা। কারণ রক্তশূন্যতার কারণে মূলত ত্বক দেখতে ফ্যাকাশে লাগে।
- অকারনেই মাথা ঘোরা এবং মাথা ব্যথা করতে থাকা।
- সঠিকভাবে ঘুম না হওয়া এবং মাঝে মাঝে শ্বাসকষ্ট অনুভব হওয়া।
- চোখে তুলনামূলক কম দেখায় এবং ঝাপসা দেখা
- হৃদস্পন্দনে সমস্যা হওয়া, খুব দ্রুত বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হওয়া।
- অকারনে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া বা শরীরের তাপ অনুভব না করা।
এছাড়াও রয়েছে আরো নানা ধরনের লক্ষণ। সমস্ত লক্ষণ যদি কারোর শরীরে দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে তার রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম রয়েছে। তাহলে অবশ্যই দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারণ কি
এতক্ষণে নিশ্চয়ই আমরা বুঝতে পেরেছি রক্তে সঠিক মাত্রায় হিমোগ্লোবিন থাকাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই রক্তে হিমোগ্লোবিন কম হওয়ার কারণ কি সে সম্বন্ধেও আমাদের জানাটা অত্যন্ত জরুরী। একাধিক কারণে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম হতে পারে। এবং যেকোনো বয়সের মানুষের ক্ষেত্রেই হিমোগ্লোবিনের অভাব দেখা দিতে পারে নানাবিধ কারণে।
সাধারণত আমরা বলতে পারি সঠিকভাবে ভিটামিন যুক্ত এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ না করার ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের অভাব দেখা দেয়। মহিলাদের গর্ভাবস্থায় না না শারীরিক জটিলতার কারণেও হিমোগ্লোবিনের অভাব দেখা দেয়। এছাড়া আরো শারীরিক নানা জটিলতার কারণে এ সমস্যাটি হতে পারে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম হওয়ার কারণগুলো কি
- শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি। বিশেষ করে ভিটামিন বি 12 এর ঘাটতির কারণে।
- আইরন আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আয়রনের অভাব দেখা দিলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়।
- লিউকোমিয়া দেখা দিলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়।
- অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলেও শরীর থেকে রক্ত কমে যায় এবং এর সাথে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়।
- যেকোনো ধরনের গুরুতর রোগ যেমন : ক্যান্সার, এইডস, লিভার সিরোসিস, পেটে আলসার, পাইলস, টিউমার ইত্যাদির কারণে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায় বিশেষভাবে।
- যাদের হাইপো থাইরয়েড এর সমস্যা রয়েছে তাদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়
- থ্যালাসেমিয়া নামক রোগের কারণে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়।
ইত্যাদি আরো নানাবিধ কারণে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। এবং কখনো কখনো মানুষ মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ে। তাই আমাদের এসব কারণ সম্পর্কে সতর্ক এবং সচেতন থাকতে হবে এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ঔষধ
সাধারণভাবে পুষ্টিকর এবং এবং ভিটামিন যুক্ত খাবার গ্রহণের মাধ্যমে রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করা যায়। কিন্তু যখন অতিরিক্ত মাত্রায় রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যায় তখন আমাদের অবশ্যই ঔষধ গ্রহণের মাধ্যমে তা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হয়। আজকে আমরা জানবো রক্ত হিমোগ্লোবিনের পরিমান বৃদ্ধির কিছু ঔষধ সম্পর্কে।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম হলে অবশ্যই আমাদের সেজন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। তবে আমরা কিছু ঔষধ সম্বন্ধে জেনে রাখলে তা আমাদেরকে সাহায্য করবে জরুরী মুহূর্তে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির কিছু ঔষধ সম্পর্কে
- Tb.Normanal.
- Tb.Hemonor.
- Tb.pilestop.
- Tb.Hemorif.
- Tb.Hemorif Ds.
আমাদের মত একটি দরিদ্র দেশে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ রক্তশূন্যতায় ভোগে। যার কারণ রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম। রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকা একটি সাধারন বিষয় নয়।
আমরা এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে রক্তে হিমোগ্লোবিন কি, এর কাজ কি, এর সঠিক মাত্রা কত, হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণ ও এর লক্ষণ গুলো কি কি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হিমোগ্লোবিন কত হলে রক্ত দেওয়া প্রয়োজন ইত্যাদি সকল বিষয় সম্বন্ধে জানলাম।
আশা করি আপনি হিমোগ্লোবিন সম্পর্কে ঠিক ধারণা বা জ্ঞান অর্জন করে উপকৃত হয়েছেন যা আপনি নিজের জীবনে ব্যবহার করতে পারবেন। নিজে সচেতন হবেন এবং অন্যকে সচেতন করবেন।
also read : গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা!