কম্পিউটার অনুচ্ছেদ | ২ টি ভিন্ন অনুচ্ছেদ | বাংলা ২য় পত্র অনুচ্ছেদ রচনা

কম্পিউটার অনুচ্ছেদ | ২ টি ভিন্ন অনুচ্ছেদ | বাংলা ২য় পত্র অনুচ্ছেদ রচনা

কম্পিউটার | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য

কম্পিউটার হলো এমন একটি যন্ত্র যা তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, তথ্য সংরক্ষণ এবং তথ্য আদান-প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়। কম্পিউটারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা, বিশ্লেষণ করা, এবং প্রয়োজনীয় ফলাফল আদান প্রদান করা হয়। কম্পিউটারের ব্যবহার আজকাল আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। কম্পিউটারের দুটো অংশ থাকে। সফ্টওয়্যার ও হার্ডওয়্যার। কম্পিউটারের নির্দেশাবলী ও তথ্যের সমষ্টিকে সফ্টওয়্যার বলে। সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারকে পরিচালনা করা হয় এবং কম্পিউটারের দৃশ্যমান অংশকে হার্ডওয়্যার বলে। হার্ডওয়্যারের মধ্যে রয়েছে মাদারবোর্ড, প্রসেসর, মেমরি, হার্ডডিস্ক, মনিটর, কীবোর্ড, এবং মাউস ইত্যাদি।  কম্পিউটারের ব্যবহারের ফলে আমাদের জীবনযাত্রা অনেক সহজ হয়ে উঠেছে। কম্পিউটারের মাধ্যমে আমরা তথ্য আদান প্রদান করতে পারি  সাথে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারি, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারি, এবং বিভিন্ন ধরনের  শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। কম্পিউটারের ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে।  শিক্ষা ক্ষেত্রেও কম্পিউটার আমাদের সাহায্য করে। কম্পিউটারের মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হয়। কম্পিউটারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। ব্যবসায়ীরা  কম্পিউটারের মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। কম্পিউটারের মাধ্যমে হিসাব-নিকাশ, বিপণন, এবং গ্রাহকসেবা ইত্যাদি কার্যক্রম করতে পারে। কম্পিউটারের মাধ্যমে সরকারি কাজ পরিচালনা করা হয়। কম্পিউটারের মাধ্যমে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, জমি রেকর্ড, এবং কর আদায় ইত্যাদি কার্যক্রম করা হয়।  কম্পিউটারের মাধ্যমে সরকারি কাজও  পরিচালনা করা যায়। কম্পিউটারের কল্যানে এখন  জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, জমি রেকর্ড, এবং কর আদায় ইত্যাদি কার্যক্রম করা যাচ্ছে।  বাংলাদেশ এখন সমৃদ্ধশালী একটি দেশ। কম্পিউটারের মাধ্যমে শিল্পকারখানা পরিচালনা করা হয়। কম্পিউটারের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণ, এবং উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম করা হয়। কম্পিউটারের জন্য চিকিৎসাও অনেক সহজ হয়ে গেছে।  কম্পিউটারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। কম্পিউটারের দিয়ে  রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা, এবং রোগীদের তথ্যভাণ্ডার ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তাই বলা যায় কম্পিউটার আমাদের ব্যক্তিগত জীবন ও জাতীয় জীবন কে অনেক সহজ করে দিয়েছে। 

কম্পিউটার | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য

কম্পিউটার, আধুনিক যুগের জাদুকর। এই এক মেশিন আমাদের জীবনকে এমন বদলে দিয়েছে, যা কয়েক দশক আগে কল্পনাও করা যেত না। শিক্ষা থেকে শুরু করে কৃষি, অর্থনীতি, শিল্প উৎপাদন – প্রতিটি ক্ষেত্রেই কম্পিউটারের ছোঁয়া এসেছে। এটি জ্ঞান ও তথ্য আহরণের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে, কাজের দক্ষতা বাড়িয়েছে, এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করেছে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি, চার্লস ব্যাবেজ নামে একজন গণিতবিদ এক অদ্ভুত মেশিনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। নাম দেয়া হয়েছিল ‘অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন’। সেই মেশিনটাই আজকের কম্পিউটারের পূর্বপুরুষ। আর তার পাশে ছিলেন অ্যাডা লাভলেস, এক গণিতবিদ। সেই মেশিনটিকে কাজে লাগাতে এলগরিদম লিখেছিলেন তিনি। তাই এই নারিকে কম্পিউটারের প্রথম প্রোগ্রামার হিসেবে গণ্য করা হয়। এই কম্পিউটার, আধুনিক যুগের জাদুকারি যন্ত্র, এটি দুই ধরনের উপাদান নিয়ে গড়া – সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার। সফটওয়্যার, নির্দেশনা সেট, কীভাবে কাজ করতে হবে তা কম্পিউটারকে বলে দেয়। অপারেটিং সিস্টেম, অ্যাপ, গেম – সবকিছুই সফটওয়্যারের উদাহরন। হার্ডওয়্যার, মনিটর, কীবোর্ড থেকে প্রসেসর এগুলো কম্পিউটারের বাহ্যিক অংশ। এরা সফটওয়্যারের নির্দেশনা মেনে তথ্য গ্রহণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ করে।  ডেস্কটপ আর ল্যাপটপের বাইরেও কম্পিউটারের জগৎ বিশাল। মিনি কম্পিউটার কোম্পানির ডেটাবেস সামলায়, মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যাংকের হিসাব কষে, সুপার কম্পিউটার গবেষণা এগিয়ে নেয়। আর স্মার্টফোন থেকে গাড়ির আধুনিক মনিটর, ফ্রিজ বা হাতের ডিজিটাল ঘড়ি সবকিছুতেই লুকিয়ে থাকে এমবেডেড কম্পিউটার। কম্পিউটারের কাজ তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথমে, আমাদের দেয়া ইনপুট ডিজিটাল কোডে রূপান্তরিত হয়। তারপর, প্রসেসর নামের কেন্দ্রীয় অংশ হিসাব-নিকেশ করে, তথ্য তৈরি করে। শেষে, মনিটর, স্পিকার বা অন্য কোনো মাধ্যমে ফলাফল প্রদর্শন করে। এই তিন ধাপের ছন্দে চলে কম্পিউটারের জাদু, যা আমাদের জীবনকে অসম্ভব সহজ করে তুলেছে। বাংলাদেশে কম্পিউটারের ইতিহাস শুরু হয় ১৯৬০ এর দশকে। প্রথম কম্পিউটারটি ইনস্টল করা হয় ঢাকার পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রে, আন্তর্জাতিক গবেষণার কাজে সহায়তা করার জন্য। এরপর ক্রমে শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়তে থাকে। শিক্ষা ক্ষেত্রে কম্পিউটার শেখার সুযোগ, অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন, গবেষণা ও উদ্ভাবনে নতুন পথ উন্মোচন করেছে। কৃষিতে আবহাওয়া পূর্বাভাস, মাটি পরীক্ষা, ফসল রোগ নিরাময়, এবং সঠিক বাজার তথ্যের মাধ্যমে কৃষকদের কাজ সহজতর ও লাভজনক করেছে। অর্থনীতিতে ডিজিটাল লেনদেন, অনলাইন ব্যবসা, এবং স্টক মার্কেটের ব্যবস্থাপনায় কম্পিউটার অপরিহার্য। শিল্প উৎপাদন ক্ষেত্রে রোবট, অটোমেশন, এবং ডাটা এনালাইসিস এর মাধ্যমে দ্রুত ও উন্নতমানের পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। তবে, কম্পিউটারের এই অসাধারণ সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে কিছু অসুবিধাও। অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার চোখের সমস্যা, শারীরিক সুস্থতা নষ্ট, এবং মানুষের সামাজিক যোগাযোগে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ডিজিটাল নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ, হ্যাকিং ও তথ্য চুরির ঝুঁকিও রয়েছে। সুতরাং, কম্পিউটারের সুবিধা উপভোগ করার পাশাপাশি এর অপকারিতাগুলো এড়িয়ে চলা জরুরি। সচেতনভাবে, দায়িত্বের সাথে কম্পিউটার ব্যবহার করেই আমরা এর পূর্ণ সুবিধা লাভ করতে পারি এবং নিশ্চিত করতে পারি সফল ও টেকসই ভবিষ্যত।

কম্পিউটার | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য

কম্পিউটার শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ “compute” থেকে, যার অর্থ “গণনা করা”। কম্পিউটার হলো একটি যন্ত্র যা তথ্য প্রক্রিয়াকরণ, তথ্য সংরক্ষণ এবং তথ্য আদান-প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়।  কম্পিউটারের আবিষ্কারের জন্য অনেক বিজ্ঞানীর অবদান রয়েছে। তবে, কম্পিউটারের জনক হিসেবে চার্লস ব্যাবেজকে (Charles Babbage) বিবেচনা করা হয়। তিনি ১৮৩০ সালে “অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন” (Analytical Engine) নামে একটি মেশিনের পরিকল্পনা করেন। এটিকে প্রথম ডিজিটাল কম্পিউটার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আগের কম্পিউটারগুলো আজকের কম্পিউটারের তুলনায় অনেক বড় এবং জটিল ছিল। এগুলোতে অনেক বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ লাগত এবং এগুলো পরিচালনা করাও ছিল অনেক কঠিন। আগের কম্পিউটারগুলোতে সফ্টওয়্যারের পরিবর্তে হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে প্রোগ্রামিং করা হতো। আধুনিক কম্পিউটারের তুলনায় আগের কম্পিউটারগুলো অনেক বেশি ব্যয়বহুল ছিল। এগুলোর ব্যবহার ছিলও অনেক সীমিত। তবে, সময়ের সাথে সাথে কম্পিউটারের আকার, ক্ষমতা এবং ব্যবহারের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। আজকের কম্পিউটারগুলো আগের কম্পিউটারের তুলনায় অনেক ছোট, দ্রুত এবং সহজলভ্য। এগুলোর ব্যবহারও অনেক ব্যাপক। কম্পিউটার একসময় শুধু গননাকারী যন্ত্র হিসেবে পরিচিত থাকলেও এখন কম্পিউটার দিয়ে সব ধরনের কাজ করা যায়। বলা যেতে পারে আধুনিক যুগে কম্পিউটার ছাড়া কোন কাজই করা সম্ভব নয়। কম্পিউটার ছাড়া কোনো  কাজ সম্পন্ন করার কথা কেউ ভাবতেই পারে না। আমাদের আধুনিক জীবনের সাথে ওতপ্রতোভাবে ভাবে জড়িয়ে আছে কম্পিউটার। কম্পিউটার এমন একটি যন্ত্র যা মানুষের দেয়া তথ্য যুক্তিসঙ্গত ভাবে নির্ভুল উপায়ে সমাধান করে থাকে। এছাড়াও কম্পিউটার দিয়ে আসছে খুব দ্রুত তথ্য আদান প্রদান করা যায়। যেমন ইমেইল করা যায়। এখন কম্পিউটার ব্যাপকভাবে সব কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে গান শোনা, সিনেমা দেখা, গেম খেলা, দেশ বিদেশে টেলিফোন করা ইত্যাদি। কম্পিউটারের কারণে মানুষের এখন অনেক সময় অপচয় হওয়া রোধ  হয়েছে। কারণ কম্পিউটার ছাড়া তথ্য আদান প্রদান করতে অনেক সময় লাগতো কিন্তু এখন কম্পিউটারের কারণে খুব দ্রুততার সাথে তথ্য আদান প্রদান করা যায়। শুধু তাই নয় কম্পিউটারের মাধ্যমে অনেক জটিল জটিল অপারেশন করা হয়।  চিকিৎসায় কম্পিউটার ব্যবহার করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে এখন ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কারণ কয়েক যুগ আগেও  কম্পিউটার ছাড়া জটিল অপারেশন করা সম্ভব হতো না। যার ফলে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করত। কিন্তু এখন কম্পিউটারের মাধ্যমে অনেক জটিল অপারেশন করা হয়। যার ফলে মৃত্যুহার অনেক হ্রাস পেয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে কম্পিউটারের অবদান অবর্ণনীয়। শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার ব্যবহার করে অনেক জ্ঞান অর্জন করে। কোনো  শিক্ষার্থী যদি যে কোনো বিষয় সম্পর্কে জানতে চায়। তাহলে কম্পিউটারের মাধ্যমে সেই বিষয় সম্পর্কে ধারনা নিতে পারে। জটিল জটিল অংকের সমাধান নিমিষেই কম্পিউটাররের মাধ্যমে সমাধান করা যায়। প্রগ্রামাররা কম্পিউটার দিয়ে অনেক বড় ও কঠিন প্রোগ্রামিং করে থাকে। শুধু তাই নয় বিজ্ঞানীরা কম্পিউটারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গবেষনা করে থাকে। যার কারনে গবেষকদের আগের মত আর গবেষনায় অনেক সময় অপচয় হয়না। কম্পিউটার ছাড়া এখন কোনো কাজ করার কথা ভাবাই যায়না। কম্পিউটার আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। তাই বলা যেতে পারে আমাদের জীবনে কম্পিউটারের গুরুত্ব অপরিসীম। 

Scroll to Top