চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক কে? 

চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক কে? 

চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক কে? 

মহান গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলা হয়ে থাকে । বর্তমান বিশ্ব সভ্যতা প্রতিটি ক্ষেত্রেই লেগে আছে বিজ্ঞানে জাদুকরী হাতের স্পর্শ । মানুষের রোগ ব্যাধি অকাল মৃত্যু প্রভৃতি ঠেকাতেও এগিয়ে এসেছে বিজ্ঞানের হাত ।বিজ্ঞানের আশীর্বাদেই  প্রাচীনকালের চিকিৎসাশাস্ত্র আজ এত উন্নত এবং মানুষের এত সুখ স্বাচ্ছন্দ ।  মানুষ অতি সহজেই এখন জটিল রোগের চিকিৎসা পাচ্ছে এবং লাভ করছে  দির্ঘায়ু ।

চিকিৎসা বিজ্ঞান 

চিকিৎসা বিজ্ঞান বা চিকিৎসা শাস্ত্র হল রোগ উপশমের বিজ্ঞান কলা বা শৈলী। মানব শরীর এবং মানব স্বাস্থ্য ভালো রাখার উদ্দেশ্যে রোগ নিরাময় ও রোগ প্রতিষেধক বিষয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে অধ্যায়ন করা হয় এবং প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইংরেজি মেডিসিন (Medicine) । মেডিসিন শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন ভাষার ars medicina শব্দ থেকে, যার অর্থ হচ্ছে “the medical art” (‘চিকিৎসা কলা’) ।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক

মহান গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলা হয়ে থাকে।গ্রীসে, গ্রীক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস যাকে পশ্চিমা চিকিৎসা শাস্রের জনক বলা হয়। তিনিই প্রথম ঔষধের যুক্তিসঙ্গত পদ্ধতির ভিত্তি স্থাপন করেন। হিপোক্রেটিসই চিকিৎসকদের জন্য হিপোক্রেটিক ওথ চালু করেছিলেন। যা এখনও প্রাসঙ্গিক এবং আজ অবধি ব্যবহৃত হয়ে আসতেছে । রোগকে তখনি প্রথম acute, chronic, endemic and epidemic হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। প্রাচীন গ্রেকো-লাতিন সংস্কৃতিরর আরেকজন বিখ্যাত চিকিৎসক হলেন গ্যালেন।

মধ্যযুগে মুসলিম বিজ্ঞানীদের হাতে চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে আবু আলী হোসাইন ইবনে সিনা সবচেয়ে বিখ্যাত। মধ্যযুগীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভিত রচনায় তার অবদান অনস্বীকার্য। তার মূল অবদান ছিল চিকিৎসা শাস্ত্রে। তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রের বিশ্বকোষ আল-কানুন ফিত-তীব রচনা করেন যা ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্তও প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল প্রতিষ্ঠানসমূহে পাঠ ছিল। আরবিতে ইবন সীনাকে আল-শায়খ আল-রাঈস তথা জ্ঞানীকুল শিরোমণি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পশ্চিমে তিনি অ্যাভিসিনা নামে পরিচিত। তাকে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক হিসেবে সম্মান করা হয়ে থাকে।

হিপোক্রেটিস কেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক? 

এশিয়া মাইনর এর কোষ দ্বীপে বর্তমান যেখানে তুরস্ক হিপোক্রেটিস এর জন্ম। তার পিতা ছিলেন একজন পুরোহিত চিকিৎসক ।এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো তৎকালীন চিকিৎসাশ্ত্র কিন্তু বর্তমান সময়ের মত ছিল না, তখনকার সময়ের চিকিৎসাশাস্ত্র অনেক জাদুবিদ্যা ও কুসংস্কার এবং  ভ্রান্ত ধারণার উপর দাঁড়িয়ে ছিল। হিপেক্রিটিস সর্বপ্রথম এ ধ্যান ধারণার বাইরে গিয়ে চুক্তি এবং উপসর্গ বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে রোগ যাচাই এবং তা অনুযায়ী তথ্য এবং চিকিৎসা করার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। বিজ্ঞান নির্ভর এই চিকিৎসাবিদ্যা প্রণয়ন করার জন্য তাকে বলা হয় চিকিৎসাবিদ্যার জনক। 

হিপোক্রেটিসের রোগ নির্ণয় পদ্ধতি 

হিপোক্রেটিস যখন চিকিৎসাশাস্ত্র অনুশীলন শুরু করেন, তখন একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসাশাস্ত্রে বিদ্যাপীঠ ছিল নিডিয়াল বিদ্যালয় গুলো।নিডিয়ান মতানুসারে মানব দেহে মূলত আলাদা স্বতন্ত্র অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমষ্টি, অর্থাৎ এক প্রতঙ্গের সমস্যা কখনো পুরো দেহের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে না। সুতরাং শুধুমাত্র ওয়ে অঙ্গের চিকিৎসা করবেই যথেষ্ট। 

অপরদিকে, তাদের রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি সন্দেহাতীত ভাবেই ছিল ভুল। কেননা, রোগীর বাহ্যিক এবং দৃশ্যমান উপসর্গগুলোকে একমাত্র বিবেচনা করা হতো। অপরদিকে অন্তর্নিহিত উপসর্গ গুলোকে বরাবরে অগ্রাহ্য করা হতো। 

হিপোক্রেটিস সবসময় নিডিয়ানের ধারণার সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তার মতে মানব শরীরকে সবসময় একটি একক গঠন হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। 

সুতরাং এর যে কোন অংশ আক্রান্ত হলে তার ফলাফল অবশ্যম্ভাবীভাবে পুরো শরীরে পড়তে পারে সুতরাং প্রতিটি অঙ্গকে বিচ্ছিন্ন এবং নির্ভরশীল এই বিবেচনা করে চিকি্তসা এবং তথ্য প্রদান করা উচিত। 

এছাড়া তিনি ফর হিউমোর তত্ত্ববিশ্বাস করতেন ।চারটি উপাদানের ভারসাম্যের উপর সুস্বাস্থ্য নির্ভর করে যথা ব্লাড, শেশ্ম, হলুদ পাচক রস এবং কালো পিত্ত রঅ। তিনি মনে করতেন, এই চারটি উপাদানের সুষম অনুপাত বজায় আছে কিনা , যেকোনো রোগের ক্ষেত্রে তার সর্বপ্রথম খুঁজে দেখতে হবে এবং তার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। 

হিপোক্রেটিস তার সময় চিকিৎসকদের সময়ের চাইতে এগিয়েছিলেন তার চিকিৎসার মূল বৈশিষ্ট্য ছিল রোগের সার্বিক কষ্ট এবং সক্ষমতা সবার আগে বিবেচনা করা এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান। রোগ সমূহকে তাদের সনাক্তকারী বৈশিষ্ট শ্রেণীবিন্যাস সর্বপ্রথম তিনি করেন, এছাড়া রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এটিওলজি এবং প্যাথলজির শৃঙ্খলা নিয়ে আসেন। 

এছাড়া তিনি সবসময় তার রোগীদের অভ্যন্তরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সুষম খাবার ডায়েট, খেলাধুলা, ব্যায়া্‌ম, সমুদ্রস্নান, হাইড্রো থেরাপি মেসাজ ইত্যাদি পথ্য  দিয়ে থাকতেন, যা আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা অনুযায়ী খুবই বিজ্ঞানসম্মত।

উপসংহার

হিপোক্রেটস ছিলেন একজন আদর্শ চিকিৎসক। একাধারে জ্ঞান, সৎ, আধুনিক মনা অন্য দিকে সেবা এবং রোগের উপসম ছিল তার একমাত্র ব্রত। মানব সভ্যতা টিকিয়ে রাখার জন্য চিকিৎসাশাস্ত্রে বিজ্ঞানের অবদান  অসামান্য ও অস্মরণীয় ।  তার বিখ্যাত শপথ হিপোক্রেটিস ওথ এখনো অনেক চিকিৎসকের অনুপ্রেরণা। আশা করা যায়, ও অদূর ভবিষ্যতে বিজ্ঞানের এ অবদানের ধারা আরও  অব্যাহত থাকবে এবং মানুষ আরো  নীরোব সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারবে ।

Read more: পূরক কোণ কাকে বলে?

Scroll to Top