মেট্রোরেল রচনা | ২০ টি পয়েন্ট | উক্তি সহকারে ২৫০০+ শব্দ | pdf download

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা হাজির হয়েছি “মেট্রোরেল” রচনা নিয়ে।  রচনাটি ২০ টি পয়েন্ট সহকারে সর্বশেষ তথ্য নিয়ে লেখা। এসএসসি HSC সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য রচনাটি আশা করছি শিক্ষার্থীদের পূর্ণাজ্ঞ প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে।  

মেট্রোরেল রচনা – রচনা 

 

সূচনা 

উন্নয়নের পথে অদম্য গতিতে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করছে একের পর এক মেগা প্রকল্প।  পদ্মা সেতু , কর্ণফুলী টানেল ও রুপুর পারমানিব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পর মেট্রোরেল আরেকটি আলোচিত প্রকল্প।  ঢাকা নগরবাসীকে অসহনীয় জামের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দিতে মসিহ রূপে আবির্ভুত হয়েছে মেট্রোরেল।

মেট্রোরেলের ধারণা 

মেট্রোরেল একটি দ্রুতগামী, অত্যাধুনিক যাতায়াত ব্যবস্থা যা সাধারণত শহরের অভ্যন্তরে বাণিজ্যিক এলাকা ও জনবহুল এলাকাগুলোকে সংযুক্ত করে। মেট্রোরেল সাধারণত ভূগর্ভস্থ বা উড়ালপথে চলাচল করে। মেট্রোরেলের ধারণাটি ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে উদ্ভব হয়। লন্ডনে ১৮৬৩ সালে বিশ্বের প্রথম মেট্রোরেল লাইন চালু হয়। তখন থেকে বিশ্বের অনেক বড় শহরে মেট্রোরেল ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের ইতিহাস 

২০১২ সালে অতি জনবহুল ঢাকা মহানগরীর ক্রমবর্ধমান যানবাহন সমস্যা ও পথের দুঃসহ যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় যার অধীনে প্রথমবারের মত ঢাকায় মেট্রো রেল স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর একনেক সভায় ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২১.২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন ৬ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়।

মেট্রোরেলের ব্যায় 

ঢাকা মেট্রোরেলের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এই ব্যয়ের মধ্যে জাইকা অধিকাংশ অর্থায়ন করবে এবং বাকি অংশ করবে বাংলাদেশ সরকার।

বর্তমানে, ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণকাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

মেট্রোরেলের অর্থায়ন 

ঢাকা মেট্রোরেলের অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার এবং জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)।

ক. বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন: মোট ব্যয়ের ২৫%। অর্থাৎ, ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার মধ্যে ৬ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা

খ. জাইকার অর্থায়ন: জাইকা মোট ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার মধ্যে ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে। এই অর্থের মধ্যে ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ এবং ৫ হাজার কোটি টাকা অনুদান।

মেট্রোরেলের ব্যয় বৃদ্ধির কারণ 

মূলত, ঢাকা মেট্রোরেলের প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। কিন্তু, ঢাকা মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকটি কারণে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • মেট্রোরেলের লাইনের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি
  • মেট্রোরেলের ট্রেনের গতি বৃদ্ধি
  • মেট্রোরেলের ট্রেনগুলোর প্রযুক্তিগত উন্নতি সাধন
  • মেট্রোরেলের লাইন এর অবস্থান পরিবর্তন
  • মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের জটিলতা বৃদ্ধি

প্রকল্পের নির্মাণ কাজ

২০১৬ সালের ২৬ জুন এমআরটি-৬ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে শুরু হয় ঢাকা মেট্রোর নির্মাণ কাজের সূচনা। প্রকল্পের নির্মাণ কাজ দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১.৭৩ কিলোমিটার অংশ নির্মাণ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৯.৫৩ কিলোমিটার অংশ নির্মাণ কাজ চলছে।

মেট্রোরেলের গুরুত্ব 

সাম্প্রতিক গবেষণায়। গবেষণাটি অনুসারে, ঢাকা শহরের বাসিন্দারা প্রতিদিন গড়ে ৩২ মিনিট বেশি সময় যানজটে আটকে থাকেন। গবেষণাটি আরও বলছে, ঢাকার যানজটের কারণে প্রতিবছর প্রায় ৮০০ বিলিয়ন টাকা ক্ষতি হয়। এই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে, উৎপাদন ক্ষতি, কর্মীদের অপচয়, জ্বালানি অপচয় এবং দূষণের কারণে স্বাস্থ্য খরচ।

যার ফলে ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার যানজট সমস্যা সমাধানে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে। মেট্রোরেলের মাধ্যমে যাত্রীরা দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য ভাবে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করতে পারবে। ফলে ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার কমবে এবং যানজট সমস্যা কমবে।

মেট্রোরেলের সুযোগ সুবিধা 

ঢাকা মেট্রোরেলের ফলে যে সুযোগ সুবিধা সমূহ পাওয়া যাবে, তাদের মধ্যে অন্নতম হলঃ 

  • সময় বাঁচবে: মেট্রোরেলের মাধ্যমে যাত্রীরা দ্রুত গতিতে যাতায়াত করতে পারবেন, ফলে সময় বাঁচাতে পারবেন।
  • যানজট কমবে: মেট্রোরেলের মাধ্যমে ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার কমবে, ফলে যানজট কমবে।
  • অফিসে সময়মতো পৌঁছানো: মেট্রোরেলের মাধ্যমে কর্মীরা সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে পারবেন।
  • ক্লাসে সময়মতো পৌঁছানো: মেট্রোরেলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সময়মতো ক্লাসে পৌঁছাতে পারবেন।
  • জ্বালানি খরচ কমবে: মেট্রোরেলের মাধ্যমে ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার কমবে, ফলে জ্বালানি খরচ কমবে।
  • পরিবেশ দূষণ কমবে: মেট্রোরেল একটি পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবস্থা, ফলে পরিবেশ দূষণ কমবে।
  • ব্যবসা বাড়বে: মেট্রোরেলের মাধ্যমে যাতায়াত দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য হবে, ফলে ব্যবসা বাড়ার সুযোগ পাবে।
  • স্বাস্থ্যকর পরিবেশ: মেট্রোরেলের মাধ্যমে যানজট কমবে ও পরিবেশ দূষণ কমবে, ফলে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত হবে।
  • সমাজিক উন্নয়ন: মেট্রোরেলের মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন অংশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়বে, ফলে সামাজিক উন্নয়ন হবে।
  • শহরের উন্নয়ন: মেট্রোরেলের মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন অংশের উন্নয়ন হবে।

 

মেট্রোরেল প্রকল্প পরিচিতি 

 ঢাকা মেট্রোরেলের ব্যবস্থাকে বলা হয় ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) এবং  মেট্রোরেলের পরিচালনা ব্যবস্থার নাম কমিউনিকেশন বেজড ট্রেন কন্ট্রোল সিস্টেম (CBTC) । 

  • প্রকল্পের নাম: ঢাকা মেট্রোরেল
  • প্রকল্পের ধরন: দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা
  • প্রকল্পের স্থান: ঢাকা, বাংলাদেশ
  • প্রকল্পের দৈর্ঘ্য: ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার
  • প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয়: ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা
  • প্রকল্পের নির্মাণ সময়: ২০১২-২০২৪

ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের নাম হল ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি ২০২২ সালের ১৯ জুলাই অনুমোদিত হয়। দ্বিতীয় দফায় উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হবে। এই লাইনে ১টি স্টেশন থাকবে। এই স্টেশনটি হল কমলাপুর (পূর্ব)।

স্টেশন সংখ্যা 

ঢাকা মেট্রোরেল বা এমআরটি-৬ লাইনের মোট স্টেশন সংখ্যা ১৭টি। এই স্টেশনগুলো হল:

  • উত্তরা উত্তর
  • উত্তরা সেন্টার
  • উত্তরা দক্ষিণ
  • পল্লবী
  • মিরপুর-১১
  • মিরপুর-১০
  • কাজিপাড়া
  • শেওড়াপাড়া
  • আগারগাঁও
  • বিজয় সরণি
  • ফার্মগেট
  • কারওয়ান বাজার
  • শাহবাগ
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
  • মতিঝিল

ভাড়া ও সময়সূচি

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) নির্ধারণ অনুযায়ী, মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা এবং কিলোমিটার প্রতি ভাড়া ৫ টাকা। অর্থাৎ, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যাওয়ার ভাড়া ৬০ টাকা।

মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা। এটি উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাওয়ার ভাড়া। পূর্ণাঙ্গ ভাবে এখনও চালু হয়নি, চালু হলে সকাল ৬ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত ১০ মিনিট পর পর ট্রেন পাওয়া যাবে। 

নারীবান্ধব মেট্রোরেল 

ঢাকা মেট্রোরেল নারী বান্ধব হবে এবং নারী যাত্রীরা নিরাপদ ও আরামদায়ক যাতায়াত করতে পারবেন। মেট্রোরেলে নারীদের জন্য আলাদা কামরা থাকবে, যেখানে নারী যাত্রীরা নিরাপদ ও আরামদায়ক অনুভূতি করতে পারবেন। মেট্রোরেলের প্রথম লোকোমোটিভ ড্রাইভার একজন মহিলা। এটি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হবে। পাশাপাশি, মেট্রোরেলে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে, যা নারী যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

এই পদক্ষেপগুলো নেওয়ার ফলে ঢাকা মেট্রোরেল নারীদের জন্য আরও নিরাপদ ও আরামদায়ক হয়ে উঠবে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বান্ধব মেট্রোরেল

ঢাকা মেট্রোরেলের বিভিন্ন সুবিধার মধ্যে রয়েছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে:

১. বিশেষ লিফ্ট

মেট্রোরেলের সকল স্টেশনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ লিফ্ট রয়েছে। এই লিফ্টগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হয় এবং এগুলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সহজেই ব্যবহার করতে পারেন।

২. র‍্যাম্প 

মেট্রোরেলের সকল স্টেশনে এবং ট্রেনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য র‍্যাম্প রয়েছে। এই র‍্যাম্পগুলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ট্রেনে ওঠা-নামা করতে সহায়তা করে।

২. হুইল চেয়ার রাখার ব্যবস্থা 

মেট্রোরেলের সকল স্টেশনে ও ট্রেনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের হুইল জন্য চেয়ার রাখার ব্যবস্থা রয়েছে এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা আসনের ব্যবস্থা আছে। 

এছাড়াও, ঢাকা মেট্রোরেলের কর্মচারীরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তা করার জন্য প্রশিক্ষিত। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যদি কোনো সহায়তা প্রয়োজন হন, তাহলে তারা মেট্রোরেলের কর্মচারীদের কাছে সহায়তা চাইতে পারেন।

মেট্রোরেলে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি 

ঢাকা মেট্রোরেলে বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রযুক্তিগুলো মেট্রোরেলের কর্মক্ষমতা এবং যাত্রীদের সুবিধা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করেছে।

ই-টিকেটিং: ঢাকা মেট্রোরেলে এ-টিকেটিং ব্যবস্থা চালু আছে। যাত্রীরা মোবাইল অ্যাপ, ওয়েবসাইট বা স্টেশনের টিকিট কাউন্টার থেকে মেট্রোরেলের টিকিট কিনতে পারেন।

র‌্যাপিড পাস: ঢাকা মেট্রোরেলে র‌্যাপিড পাস ব্যবস্থা চালু আছে। র‌্যাপিড পাস ক্রয় করলে যাত্রীরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মেট্রোরেলে অবাধ যাতায়াত করতে পারবেন।

অত্যাধুনিক ট্রেন: ঢাকা মেট্রোরেলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্মিত ট্রেন চলাচল করে। এই ট্রেনগুলোতে উচ্চ গতির ক্ষমতা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং আরামদায়ক সিট রয়েছে।

ডিজিটাল ড্যাশবোর্ড: ঢাকা মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোতে ডিজিটাল ড্যাশবোর্ড রয়েছে। এই ড্যাশবোর্ড ও সাউন্ড সিস্টেম গুলোতে ট্রেনের সময়সূচি, গন্তব্য এবং অন্যান্য তথ্য প্রদর্শিত হয়।

এছাড়াও, ঢাকা মেট্রোরেলে আরও অনেক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রযুক্তিগুলো মেট্রোরেলের নিরাপত্তা, কর্মক্ষমতা এবং যাত্রীদের সুবিধা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করেছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা 

ঢাকা মেট্রোরেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এই ব্যবস্থাগুলো মেট্রোরেলের যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করেছে।

অটোমেটিক ফায়ার কন্ট্রোলার: ঢাকা মেট্রোরেলের স্টেশন এবং ট্রেনগুলোতে অটোমেটিক ফায়ার কন্ট্রোলার রয়েছে। এই সিস্টেমটি কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অগ্নিকাণ্ড নিয়ত্রন হবে প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিস সেন্টারে কল যাবে।

অটোমেটেড সিস্টেম: ঢাকা মেট্রোরেলের ট্রেনের চলাচল এবং নিয়ন্ত্রণ অটোমেটেড সিস্টেমের মাধ্যমে করা হয়। এই সিস্টেমটি ট্রেনের গতি, দূরত্ব এবং অন্যান্য তথ্য পর্যবেক্ষণ করে এবং ট্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।

ব্যাকআপ পাওয়ার স্টেশন: ঢাকা মেট্রোরেলে ব্যাকআপ পাওয়ার স্টেশন রয়েছে। এই স্টেশনটি মূল বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে মেট্রোরেলের চলাচল চালু রাখবে।

এছাড়াও, ঢাকা মেট্রোরেলে আরও অনেক আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এই ব্যবস্থাগুলো মেট্রোরেলের যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে এবং মেট্রোরেলকে একটি নিরাপদ যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব

ঢাকা মেট্রোরেলের দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ঢাকা মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকার যানজট কমে যাবে। এতে যানজটজনিত যানবাহন জ্বালানি খরচ, সময় নষ্ট এবং দূষণ কমবে। ফলে অর্থনীতিতে সাশ্রয় হবে এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ঢাকা মেট্রোরেলের কারণে ঢাকায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। কারণ, মেট্রোরেল ঢাকাকে একটি আন্তর্জাতিক মানের শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ঢাকায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে। ঢাকা মেট্রোরেলের নির্মাণ ও পরিচালনায় ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এছাড়াও, মেট্রোরেল চালু হলে মেট্রোরেলের স্টেশন এবং এর আশেপাশের এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও সেবা খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এবং এর কারণে ঢাকায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ হবে। কারণ, মেট্রোরেল ঢাকাকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।

এছাড়াও, ঢাকা মেট্রোরেলের কারণে ঢাকার পরিবেশ দূষণ কমবে, জীবনযাত্রার মান উন্নতি হবে এবং ঢাকা একটি আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে উঠবে।

পরিবেশের উপর প্রভাব 

ঢাকা মেট্রোরেলের পরিবেশের উপর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় প্রভাব পড়তে পারে।

ইতিবাচক প্রভাব

 ঢাকা মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকার যানজট কমে যাবে। এতে যানজট জনিত যানবাহন জ্বালানি খরচ, সময় নষ্ট এবং দূষণ কমবে। ফলে বায়ু দূষণ,এবং শব্দ দূষণ কমবে।

  • পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা বৃদ্ধি পাবে: ঢাকা মেট্রোরেল একটি পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা। এটি বিদ্যুৎচালিত ট্রেন দ্বারা পরিচালিত হয়। ফলে বায়ু দূষণের মাত্রা কমবে।
  • নগর পরিকল্পনায় উন্নতি হবে: ঢাকা মেট্রোরেল ঢাকার নগর পরিকল্পনায় উন্নতি আনবে। এটি ঢাকাকে একটি আধুনিক শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। ফলে ঢাকার পরিবেশের মান বৃদ্ধি পাবে।

নেতিবাচক প্রভাব

  • শব্দ দূষণ হতে পারে: মেট্রোরেল চলাচলের সময় শব্দ দূষণ হতে পারে। তবে, মেট্রোরেল নির্মাণের সময় শব্দ দূষণ কমাতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
  • পরিবেশগত ক্ষতি হতে পারে: মেট্রোরেল নির্মাণের সময় পরিবেশগত ক্ষতি হতে পারে। 

সামগ্রিকভাবে, ঢাকা মেট্রোরেলের পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাবই বেশি বলে আশা করা হচ্ছে।

যানজট সমস্যার সমাধান 

ঢাকা মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকার যানজট সমস্যা কিছুটা হলেও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ, মেট্রোরেল একটি দ্রুতগতির এবং আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা। এটি ঢাকার প্রধান প্রধান সড়ক গুলোর উপর দিয়ে চলাচল করবে। ফলে, মেট্রোরেলে যাত্রীরা দ্রুত ও সহজে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন। এতে করে ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপ কমবে এবং যানজট কমবে।

মেট্রোরেলের উদ্বোধন 

ঢাকা মেট্রোরেল এমআরটি-৬ লাইনের প্রথম পর্যায়ের দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশ ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ জনসাধারণের চলাচলের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। এটিই বাংলাদেশের সর্বপ্রথম মেট্রোরেল, যা পরদিন জনসাধারণের জন্যে খুলে দেওয়া হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রোরেলের কর্তৃপক্ষ জানান, প্রথম পর্যায়ে দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ রুটে ১৬টি স্টেশন থাকবে। পরবর্তীতে, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রুটে আরও ৬টি স্টেশন যোগ হবে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে মেট্রোরেলের সবগুলি স্টেশন চালু হবে।

প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা 

ঢাকা মেট্রোরেলের কাজ প্রায় ৯০% শেষ হয়েছে। ঢাকা মেট্রোরেল এমআরটি-৬ লাইনের প্রথম পর্যায়ের দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশ পুরোপুরি ও মতিঝিল পর্যন্ত সকাল ১১ টা পর্যন্ত জনসাধারণের চলাচলের জন্য চালু হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রুটে আরও ৬টি স্টেশন যোগ হবে। এই অংশটি ২০২৪ সালের মার্চের শেষের দিকে পুরোপুরি চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ নভেম্বর, ২০২৩ সালে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট) এর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। এই লাইনটি ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা এই প্রকল্পে ১৪০ কোটি ডলার ঋণ প্রদান করবে।

এই লাইনটি হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা হয়ে গাবতলী, মিরপুর-১০, গুলশান পর্যন্ত যাবে। এটি ঢাকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করবে এবং ঢাকার যানজট সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে।

এই লাইনটি অর্ধেক উড়াল এবং অর্ধেক পাতালে নির্মাণ করা হবে। ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পথ মাটির নিচ দিয়ে এবং বাকি ৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার উড়াল রেল নির্মাণ করা হবে।

২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেলের রুট চালুর পরিকল্পনা

সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেলের রুট চালুর পরিকল্পনা করছে। এই রুট গুলোর মোট দৈর্ঘ্য হবে ৭১ কিলোমিটার। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা।

এই ছয়টি রুট হলো:

  • এমআরটি-৬ (দিয়াবাড়ি-পূর্বাচল)
  • এমআরটি-১ 
  • এমআরটি-২ 
  • এমআরটি-৩ (মিরপুর-পূর্বাচল)
  • এমআরটি-৪ (গাজীপুর-কেরানীগঞ্জ)
  • এমআরটি-৫ (হেমায়েতপুর-ভাটারা): এই লাইনটি সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত যাবে। লাইনটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ২০ কিলোমিটার এবং মোট স্টেশন হবে ১৪টি।

উপসংহার 

সমৃদ্ধির পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ আর এই গতিকে আরও গতিশীল করেছে আমাদের স্বপ্নের মেট্রোরেল প্রকল্প। জ্যামজটের নগরী ঢাকা ইতিমধ্যে এর সুফল ভোগ শুরু করেছে, সবগুলো স্টেশন চালু হলে ঢাকার জনজীবন মান আরও উন্নত হবে, বাঁচবে মূল্যবান কর্মঘন্টা, ঢাকাকে আরও বাসযোগ্য করবে মেট্রোরেল।  

Scroll to Top