গ্যাষ্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম!
মেথি নামটি নিশ্চই সবার কাছে বহুল পরিচিত। মেথির মতই বহুল প্রচলিত একটি রোগের নাম গ্যাষ্ট্রিক। সাধারনত খাওয়ার অনিয়ম, অতিরিক্ত তেল মশলা যুক্ত খাবার খেলে গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যা হয়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে অনেক সময় কোনো অনিয়ম ছাড়াও গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যা হতে দেখা যায়। অনেকেই আছেন যারা গ্যাষ্ট্রিকের ওষুধ ছাড়া একদিনও চলতে পারেন না। কিন্তু গ্যাষ্ট্রিকের ওষুধ নিয়মিত খেলে টাকা অপচয় তো হয়ই তার সাথে শরীরেরও অনেক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যায় টাকা দিয়ে ওষুধ না খেয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যার সমাধান হতে পারে। তেমনি একটি প্রাকৃতিক উপাদানের নাম মেথি। মেথি এমন একটি ওষধি উপাদান যা গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি রক্তস্বল্পতা, চুল পরা, ত্বকের সুস্থতা সহ আরো নানান ধরনের উপকার সাধন করে থাকে। তবে আজকের এই আর্টিকেলে আজ শুধু গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যায় কিভাবে মেথি ব্যবহার করবেন তা জানতে পারবেন। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক:
মেথির ইংরেজি প্রতিশব্দ ফেনুগ্রিক (Fenugreek) মেথির বৈজ্ঞানিক নাম হলো Trigonella foenum – graecum. বহুল পরিচিত ওষুধী গুন সম্পন্ন এই উদ্ভিদ সাধারনত এশিয়া, মধ্যরাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে বেশি জন্মে।
মেথির উপাদান সমূহ
প্রোটিন ৩ গ্রাম
ফাইবার ৩ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ৬ গ্রাম
চর্বি ১ গ্রাম
একজন মানুষের সুস্থতার জন্য প্রতিদিন গড়ে যতটুকু কার্বন প্রয়োজন তার ২০% আয়রন মেথিতে রয়েছে। এছাড়াও মেথিতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ।
গ্যাষ্ট্রিকের জন্য মেথি খাবার নিয়ম
অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস গ্যাষ্ট্রিকের প্রধান সমস্যা। গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যায় যারা নিয়মিত গ্যাসের ওষুধ খেয়ে শরীরের ক্ষতি করছেন বা গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না তারা নিয়মিত মেথি খেলে উপকার পেতে পারেন। গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যায় প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি খেলে উপকার পাওয়া যায়। যেভাবে মেথি খেলে গ্যাস দূর করবে ।
গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যার জন্য অনেক ভাবেই মেথি খাওয়া যায়। যেমন:
মেথি পানি
প্রতিদিন সকালে উঠে পরিষ্কার গ্লাস পানি নিতে হবে৷ এবার পানিতে এক চামচ মেথি মিশিয়ে আধা ঘন্টা রেখে দিন। আধা ঘন্টা পর মেথি আলাদা করে পানি টুকু খেয়ে নিন।
মেথি, মধু এবং পানি
অনেকেই আছেন যারা শুধু মেথি খেতে পারেন না। অনেকে আবার খাওয়ার পর বমি করে৷ তাই আপনি যদি শুধু মেথি খেতে না পারেন তাহলে এক গ্লাস পানির সাথে এক চামচ মেথি গুড়ো, মধু একসাথে মিশিয়ে শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। মধু দেয়ার কারনে তখন আর বমি ভাব আসবেনা।
প্রতিদিন সকালে মেথি এবং মধুর শরবত খালি পেটে খেতে হবে।
নিয়মিত সকালে এভাবে মেথি খেলে গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যা দূর হবে। যদি হজমের সমস্যা থাকে সেটাও দূর হবে। আবার যাদের কোলেস্টেরল এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত মেথির শরবত বা মেথি খেলে কোলেস্টেরল এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।
মেথি চিবিয়ে খাওয়া
প্রতিদিন মেথি পানি খেতে না চাইলে প্রতিদিন আট দশটি মেথি চিবিয়ে খেলেও গ্যাসের সমস্যা দূর হয়। যদি হঠাৎ করে গ্যাসের সমস্যা হয় তাহলে কয়েকটি মেথি দানা চিবিয়ে খেয়ে নিন। তারপর একগ্লাস পানি খান। গ্যাস কমে যাবে।
যেভাবে ব্যবহার করবেন
মেথি আগুনে ভাজলে এর উপকারীতা কমে যায়৷ তাই মেথি রোদে শুকিয়ে গুড়ো করতে হবে৷ মেথি গুড়ো এয়ার টাইট বক্সে রেখে সংগ্রহ করুন। মেথি নিয়মিত তরকারীতে ব্যবহার করলে তরকারীর স্বাদ বৃদ্ধি পাবে সেই সাথে গ্যাষ্ট্রিকের অসুখ তো দূর হবেই।
মসলা হিসেবে মেথির ব্যবহার
মেথি বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করতে পারেন আপনি। আপনি যদি খালি পেটে মেথি পানি সকালে খেতে না পারেন, সেক্ষেত্রে মেথি মসলা হিসেবে তরকারিতে ব্যবহার করলেও গ্যাসের সমস্যা দূর হবে।
মেথি শাক
মেথির মধ্যে এক রকম কটু স্বাদ আছে যার ফলে অনেকেই মেথির উপকারের কথা জানলেও মেথি খাননা। মেথি দানা যেমন অনেক উপকারী ঠিক একিভাবে মেথি শাকও গ্যাষ্ট্রিক ও অন্যান্য রোগ দূর করতে সাহায্য করে।
মেথি শাক যেভাবে খাবেন
মেথি শাক ভাল করে ধুয়ে সিদ্ধ করে নিতে হবে। এবার মেথি শাকের সাথে পরিমান মত সরিসার তেল,রসুন, পেয়াজ, কাচা মরিচ, লবন দিয়ে বাগার দিতে হবে। এখন মেথি শাক আপনি চাইলে শুধু শাক খেতে পারেন অথবা গরম ভাত দিয়েও খেতে পারেন।
মেথি শাক ও আলুর তরকারি
মেথি শাক আলু দিয়ে রান্না করে খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়৷ গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যায় মেথি শাক আলু রান্না করে খেলে উপকার পাবেন।
যেভাবে রান্না করবেন:
অন্যান্য তরকারী যেভাবে রান্না করেন সেভাবেই শাক আলু ভাল করে ধুয়ে মসলা সহ রান্না করতে পারেন।
চিকিৎসকদের মতে, ছয় সপ্তাহ নিয়মিত দুই বেলা করে মেথি খেলে মেথির উপকারিতা পরিপূরক ভাবে পাওয়া যায়।
অঙ্কুরিত মেথিবীজ
গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যায় অঙ্কুরিত বীজ খেলেও গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়। অঙ্কুরিত মেথি বীজে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, পটাশিয়াম, এমাইনো এসিড। একটি বাটিতে মেথি সহ পানি নিয়ে তা পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে তিন দিন অন্ধকারে রেখে দিন। দেখবেন মেথি বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে।
মেথির চা
মেথির চা বানাতে দুই চামচ মেথি পেষ্ট করে নিন। এবার পেষ্টের সাথে আদা, লেবু মিশিয়ে পানি সহ চায়ের মত করে গরম করুন। এভাবে মেথি চা বানিয়ে খেলেও গ্যাসের সমস্যা দূর হয়।
ইসলাম ধর্মে মেথি নিয়ে একটি হাদিস প্রচলিত আছে। যদিও এর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হাদিসে বর্নিত আছে হযরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন, “আমার উম্মাতরা যদি জানতো মেথিতে কত উপকারিতা রয়েছে তাহলে সোনার বদলে হলেও মেথি কিনে খেত।”
মেথি খাওয়ার অপকারিতা
মেথি ওষধি গুন সম্পন্ন দানা হলেও অতিরিক্ত মেথি খেলে আবার বিপরীত সমস্যাও হতে পারে। মেথি খাওয়ার সময় বিশেষ সতর্কতা:
- বিশেষজ্ঞদের মতে ছয় মাসের অধিক মেথি খাওয়া ক্ষতিকর। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে মেথি খেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার। তাই ছয় মাসের বেশি বা দীর্ঘ দিন মেথি খেলে হজমে সমস্যা হয়।
- গর্ভবতী মায়েদের মেথি খাওয়া উচিৎ নয়। কারন চিকিৎসক এর মতে, “মেথি খেলে গর্ভপাত হওয়ার সমস্যা থাকে”।
- নিয়মিত মেথি খেলে হরমোনের সমস্যা বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।
- যারা নিয়মিত বিভিন্ন রোগের ওষুধ খান তাদের মেথি না খাওয়াই নিরাপদ।
- যারা ওজন বাড়াতে চান তারা মেথি খাবেন না। কারন মেথি খেলে ক্ষুধা কমে তাই ওজন কমে যায়।
- মেথি যেমন রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে আবার অতিরিক্ত মেথি খেলে রক্ত পাতলা হয়ে যেতে পারে।
- যাদের লিভারের সমস্যা তারা মেথি খাবেন না।
- যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে তারা মেথি খেলে এলার্জি আরো বেড়ে যেতে পারে।
মেথি এমন একটি বিস্ময়কর উপাদান যাতে গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যা ছাড়াও নানান অসুখের কাজ করে। যারা গ্যাষ্ট্রিক সহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগেন তারা নিয়মিত ২.১৫ থেকে ১৫ গ্রাম পর্যন্ত মেথি খেতে পারেন। নিয়মিত সঠিক নিয়মে পরিমিত ভাবে মেথি খেলে আপনার গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যা দূর হবে। তাই নিয়ম মেনে পরিমিত মেথি খান এবং সুস্থ থাকুন। মেথির যেহেতু উপকারের পাশাপাশি অপকার রয়েছে তাই অতিরিক্ত পরিমানে মেথি খাবেন না। আর কোনো অসুখ থাকলে মেথি খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসক এর কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।
Also Read: : ৭ দিনে ব্রণ দূর করার উপায়