Dreamy Media BD

বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলামের সমগ্র বই

কাজী নজরুল ইসলামের

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রধান বাঙালি কবি এবং সংগীতকার। ২৩ বছর বয়সে কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যিক জীবনে সৃষ্টির যে প্রাচুর্য তা অতুলনীয়। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় বিচরণ করলেও তিনি ছিলেন প্রধানত একজন কবি। তার জীবন শুরু হয়েছিল অকিঞ্চিতকর পরিবেশে। 

কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে অবিভক্ত ভারতের ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী। কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা কাব্য ও সাহিত্যে প্রচন্ড বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। দেশে স্বাধীনতা এবং মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজী নজরুল ইসলাম কলমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে।

তার কবিতা, গান ,নাদ, গজল এবং উপন্যাস প্রতিটি বাঙালির মনকে জাগরিত করে তুলেছিল। কাজী নজরুল ইসলাম একাধারে ছিল কবি, সৈনিক, শ্রমিক, সাহিত্যিক ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা একজন খাঁটি দেশ প্রেমিক। কাজী নজরুল ইসলামের রয়েছে বিভিন্ন বই সংগ্রহ। আজকে আমরা জানবো কাজী নজরুল ইসলামের বই সমূহ এবং তার সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক –

 

কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম

পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৩১৬ সালের ১৪ জৈষ্ঠ মাসে (ইংরেজিতে ১৮৯৯ সালের ২৫শে মে) জন্মগ্রহণ করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। শিশুকালে কাজী নজরুল ইসলামের ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া।  

 

কাজী নজরুল ইসলামের পিতা মাতা

কাজী নজরুল ইসলামের পিতার নাম ছিল কাজী ফকির আহমেদ এবং তার মাতার নাম ছিল জাহিদা বেগম।

চুরুলিয়া গ্রামে কাজী বংশ এককালে অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবার ছিল। কিন্তু যখন কাজী নজরুল ইসলাম শিশু হয়ে আবির্ভূত হন সেই সময় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নানারকম শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়ে দৈন্যদশার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায় কাজী বংশ।

 

কাজী নজরুল ইসলামের নাম দুখু মিয়া কেন?

কাজী নজরুল ইসলামের বড় আরও তিনজন ভাই ছিল, কিন্তু তারা জন্মের কিছুদিন পরই মারা যায়। সন্তান হওয়ার পরপরই অন্যান্য ছেলেরা মারা যাওয়ায় নজরুলের নাম তার দাদি দিয়েছিল দুখু মিয়া। এই দুখু মিয়াই একদিন মহাকবিতে রূপান্তরিত হয়। রবীন্দ্রনাথের পর কাজী নজরুল ইসলামের মতো বড় কবি বঙ্গদেশে আর জন্মগ্রহণ করেনি।

 

কাজী নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও সন্তান

কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম বিয়ে হয় নার্গিস আসার খানমের সাথে। কিন্তু তখন তিনি ঘরজামাই থাকতে অস্বীকার করেন।

নজরুলের মোট চার সন্তান ছিল। তাদের নাম হচ্ছে কৃষ্ণ মুহাম্মদ, কাজী সব্যসাচী, অরিন্দম খালেদ(বুলবুল), কাজী অনিরুদ্ধ।

 

কাজী নজরুল ইসলামের প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা

কাজী নজরুল ইসলামের কাজী হচ্ছে তাদের বংশীয় উপাধি। কাজী নজরুল ইসলামের পিতা ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও মাজারের মতোয়াল্লি। এর ফলে ছোটবেলা থেকেই কাজী নজরুল ইসলাম ইসলামিক চিন্তা ও ধারণা নিয়ে বড় হয়ে ওঠেন। বাল্যকালে কাজী নজরুল ইসলাম নিকটস্থ মক্তবে তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন। তিনি বাংলা ও আরবি ভাষার পাশাপাশি স্থানীয় শিক্ষা কেন্দ্রে ফার্সি ভাষার প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন।

১৯০৮ সালে যখন কাজী নজরুল ইসলামের বাবা মারা যান তখন তার বয়স ছিল মাত্র নয় বছর। বাবা মারা যাওয়ার ফলে সংসার আসে অভাব, অনটন ও দুঃখ দুর্দশা। যার ফলে কাজী নজরুলের লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলস্বরূপ জীবিকা অর্জনের জন্য মাত্র ১০ বছর বয়সে কাজী নজরুল ইসলামকে কাজে নামতে হয়। সেই সময় মক্তব থেকে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কাজী নজরুল ইসলাম সেখানে শিক্ষকতা করেন। তারপর কাজী নজরুল ইসলাম লেটো গানের দলে যোগ দেয় এবং খুবই অল্প সময়ের মধ্যে সুখ্যাতি অর্জন করে ফেলেন।

সে সময় লেটো গানের দলে কোন অশ্লীল গান পরিবেশন হতো না বরং বিভিন্ন পালা গান, জারি গান, মুর্শিদী গান ইত্যাদি পরিবেশন হতো । অসাধারণ প্রতিভার বলে তিনি কিছুদিন পর লেটো গানের দলের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন। লেটো গানের দলে থেকেই বিভিন্ন রকম বইপত্র করে সাহিত্য রচনা চালিয়ে যান। এ সময় কাজী নজরুল ইসলাম কয়েকটি কবিতা, ছড়া গান ও পালা গান রচনা করে অসামান্য দক্ষতার পরিচয় দেন।

এরপর তিনি শিক্ষা লাভের জন্য গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তির সহযোগিতায় রানীগঞ্জ শোয়ারশোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন। তাই তিনি হঠাৎ একদিন স্কুল থেকে উধাও হন। কিন্তু কোথায় যাবেন, কি খাবেন, কি করে চলবেন ইত্যাদি নানারকম কথা চিন্তা করে আর্থিক অনটনের কারণে তিনি আসানসোলের এক রুটির দোকানে মাত্র পাঁচ টাকা বেতনে চাকরি নেন। রুটি তৈরি করার ফাঁকে ফাঁকে কাজী নজরুল ইসলাম বিভিন্ন কবিতা, গান, গজল ইত্যাদি রচনা করেন এবং বিভিন্ন রকমের বইপত্র পড়েন যাতে তার জ্ঞান ভান্ডার দিন দিন সমৃদ্ধ হতে থাকে।

এরপর কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসে এবং ময়মনসিংহ জেলার ডালিরামপুর হাই স্কুলের তাকে ভর্তি করে দেন।

এরপর তিনি পুনরায় রানীগঞ্জের শোয়ারশোল রাজ স্কুলে ভর্তি হয়।

 

কাজী নজরুল ইসলামের সেনাবাহিনীতে যোগদান

১৯১৯ সালের বিশ্ব যুদ্ধের সময় কাজী নজরুল ইসলাম নবম শ্রেণীর ছাত্র। যুদ্ধের কারণে তার প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া করা আর হয় না।

তখন তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ৪৯ নাম্বার বাঙালি পল্টন রেজিমেন্ট এর হাবিলদার পদে প্রমোশন লাভ করেন। সৈনিক জীবনে কাজী নজরুল ইসলামকে চলে যেতে হয় পাকিস্তানি।

কিন্তু এজন্য তার কবিতা ও সাহিত্যচর্চা থেমে থাকেনি। করাচির সেনানিবাসে একজন পাঞ্জাবি মিলিটারি সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের পরিচয় হয়। তারপর থেকে কাজী নজরুল ইসলাম কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গজল এবং সাহিত্যে ব্যাপক রচনার তাগিদ অনুভব করেন।

কাজী নজরুল ইসলাম প্রাতিষ্ঠানিক তেমন শিক্ষা লাভের সুযোগ না পেলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি তার কাব্য ও সাহিত্য চর্চা চালিয়ে গিয়েছিলেন। শৈশবকালে ইসলামী দীক্ষায় দীক্ষিত হয়েও তিনি বড় হয়েছিলেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ সত্তা হিসেবে। এর সাথে সাথে তার মধ্যে বিকাশিত হয়েছিল একটি বিদ্রোহী সত্তা। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে রাজ্যদ্রোহিতার অপরাধে কারাগার বন্দি করেছিলেন। 

 

কাজী নজরুল ইসলামের কাব্য চর্চা

যুদ্ধ থেমে যাওয়ার পর ১৯১৯ সালের এপ্রিল মাসের পল্টন রেজিমেন্ট ভেঙ্গে দেওয়ার পর তিনি আবার ফিরে যান নিজ মাতৃভূমি চুরুলিয়া গ্রামে। এরপর থেকে শুরু হয় কাজী নজরুল ইসলামের একনিষ্ঠ কাব্য চর্চা। তার লেখা একাধারে দৈনিক বসুমতি, মুসলিম ভারত, মাসিক প্রবাসী, ধুমকেতু, বিজলী ইত্যাদি বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হতে থাকে।

কাজী নজরুল ইসলামের লেখা কবিতা তদানীন্তর রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের নিপীড়ন, শোষণ, নির্যাতন ও বঞ্চিত মানুষের জাগরণে কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন মহান প্রবক্তা। ১৯২১ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে কাজী নজরুল ইসলাম রচনা করেন তার বিখ্যাত অমর কবিতা “বিদ্রোহী”যা বাংলা সাহিত্যে তাকে “বিদ্রোহী কবি” হিসেবে চিরকাল অমর করে রেখেছেন।

বিদ্রোহী কবিতার লাইনগুলো এরকম ছিল

 বল বীর-

 বল উন্নত মম শির!

 শির নেহারি আমারি,

 নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রীর!

 বল বীর –

 বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি’

 চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি’

 ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া,

 খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া

 উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর!

 মম ললাটে রুদ্র-ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!

………..

 

কাজী নজরুল ইসলাম বহু গজল, গল্প, আধুনিক গান, কবিতা,  উপন্যাস ও সাহিত্য রচনা করে গিয়েছেন। এ সকল বিষয়ে তার রচনা সংখ্যা কয়েক সহস্র। তার রচনাবলীর মধ্যে অগ্নিবীণা, দোলনচাঁপা, বিষের বাঁশি, ভাঙার গান, প্রলয় শিখা, নতুন চাঁদ, ফনিমনসা, সাম্যবাদী, মৃত্যু ক্ষুধা, সর্বহারা, রাজবন্দী, জবানবন্দি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

বর্তমানে বাংলাদেশের নজরুল ইনস্টিটিউট নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাজী নজরুল ইসলামের লেখার উপর গবেষণা চালাচ্ছে।

কাজী নজরুল ইসলাম ফরাসি ভাষার মহাকবি হাফিজের কতগুলো কবিতাও বাংলায় অনুবাদ করেছেন।

তার অধিকাংশ কবিতা ও সাহিত্য রুশ ভাষাতেও অনূদিত হয়েছে। ইংরেজি ভাষাতেও কাজী নজরুল ইসলামের বিভিন্ন লেখা অনুবাদ করা হয়েছে এবং বর্তমানেও হচ্ছে।

 

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমগ্র বই সমূহ

সাহিত্যের নানা শাখায় তার বিচরণ থাকলেও মূলত কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একজন কবি।

বিংশ শতাব্দীর বাঙালির মনে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ তাকে জাতীয় কবি হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গানের জনপ্রিয়তা বাংলাভাষী পাঠকদের মধ্যে অনেক ব্যাপক। কাজী নজরুল ইসলামের মানসিকতা, উপনিবেশিক শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, নারী পুরুষের সমতার বন্দনা গত প্রায় ১০০ বছর যাবত বাঙালি মানসপীঠ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার জীবন নানারকম বই লিখে গেছেন। নিচে কাজী নজরুল ইসলামের সব বইয়ের তালিকা তুলে ধরা হলো:

 

*নতুন সংযোজিত গান

*অগ্নিবীণা কবিতা

*অগ্রন্থিত গল্প

*অগ্রন্থিত গান

*আলেয়া

*কবিতা সংগ্রহ কাজী নজরুল ইসলাম

*কাজী নজরুল ইসলাম রচনা সংগ্রহ

*কাব্য আমপারা

*কুহেলিকা

*গীতি শতদল

*গুল বাগিচা

*ঘুমের ঘোরে

*চক্রবাক

*চন্দ্রবিন্দু

*চিত্তনামা

*চোখের চাতক

*ছায়ানোট

*জিঞ্জীর

*জুলফিকার

*ঝড় কাব্যগ্রন্থ

*ঝিঙে ফুল

*ঝিলিমিলি

*দুর্দিনের যাত্রী

*দোলনচাঁপা কাব্যগ্রন্থ

*নজরুল গীতিকা

*নতুন চাঁদ

*নির্ঝর কাজী নজরুল ইসলাম

*পুতুলের বিয়ে নাটক

*পূবের হাওয়া

*প্রলয় শিখা

*ফণীমনসা

*বন- গীতি

*বনের বেদে

*বাঁধন হারা

*বাদল বরিষনে

*বাসন্তিকা

*বিদ্যাপতি

*বিবিধ

*বিষের বাঁশি

*বিয়ে বাড়ি

*বুলবুল

*ব্যথার দান

*ভাঙার গান 

*মক্তব সাহিত্য

*মধুমালা

*মরু ভাস্কর

*যুগবাণী প্রবন্ধ

*রাঙা জবা

*রক্তের বেদন

*রুদ্র মঙ্গল

*রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম

*রুবাইয়াৎ-ই-হাফিজ

*শিউলি মালা

*শেষ সওগাত

*সঞ্চিতা

*সন্ধ্যা

*সন্ধ্যামালতি

*সর্বহারা

*সাপুড়ে

*সাম্যবাদী

*সিন্ধু হিন্দোল

*সুর ও শ্রুতি

*সুর – সাকী

*হেনা

 

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের নজরুল সংগীত

কাজী নজরুল ইসলামের লেখা সকল গান নজরুল সংগীত নামে পরিচিত। তিনি তার জীবন দশায় হাজারেরও অধিক গান লিখে যান। এবং বেশিরভাগ গানের সুর তিনি নিজেই করে দিয়ে যান। কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কিছু গান হচ্ছে: “ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ” “ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ” “চল চল চল”ইত্যাদি।

 

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বাংলা নবজাগরণ

দেশপ্রেমিক কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ শাসন গোষ্ঠীর শাসন শোষণ ও জুলুমের বিরুদ্ধে তার কলম কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেন। ইতিমধ্যে সমগ্র দেশে শুরু হয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী তুমুল আন্দোলন। কাজী নজরুল ইসলাম সাপ্তাহিক ‘ধূমকেতু’ পত্রিকায় লিখতে থাকেন। ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে তিনি আরো সোচ্চার হয়ে ওঠেন। অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, অসাম্য ও অসত্যের বিরুদ্ধে লিখার মাধ্যমে কাজী নজরুল ইসলাম শুরু করে দেন প্রচন্ড বিদ্রোহ।

কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালি জাতিকে তাদের অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে শুনিয়েছিলেন জাগরণের বাণী। কাজী নজরুল ইসলাম স্বদেশবাসীকে আহবান জানিয়েছিলেন পরাধীনতার শৃংখল ভেঙে দেওয়ার জন্য।

১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিসের প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীরা এদেশের খেটে খাওয়া মানুষ বিশেষ করে কৃষকদের ক্রমান্বয়ে নিঃস্ব করে ফেলছিল। কৃষকরা প্রায় তাদের জমি ও ঘরবাড়ি সবকিছু হারিয়ে ফেলার পথে বসেছিল। সেই সময় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে কৃষক সমাজকে বিদ্রোহী হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।

 

কাজী নজরুল ইসলামের চলচ্চিত্র

কাজী নজরুল ইসলাম ধূপছায়া নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। এই ছবিতে তিনি একটি চরিত্রের অভিনয় করেছিলেন। ১৯৩১ সালে প্রথম বাংলা সবাক চলচ্চিত্র ‘জামাই ষষ্ঠী’র ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত ‘গৃহদাহ’ চলচ্চিত্রের সুরকার ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ‘ধ্রুব’  চলচ্চিত্রে কাজী নজরুল ইসলাম গীতিকার এবং সুরকার ছিলেন এছাড়াও ‘গ্রহের ফের’ চলচ্চিত্র তিনি সুরকার ও গীতিকার ছিলেন।

 

কাজী নজরুল ইসলামের অসুস্থতা

১৯৪২ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম একটি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন এবং চিরদিনের জন্য বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন।

কাজী নজরুল ইসলামকে সুস্থ করার জন্য দেশের সকল চিকিৎসা ব্যর্থ হওয়ার পর ১৯৫৩ সালে সুচিকিৎসার জন্য তাকে সরকারি ব্যবস্থা মাধ্যমে লন্ডনে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানেও আমাদের জাতীয় কবি কে রোগ মুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

 

কাজী নজরুল ইসলামের বাংলাদেশ আগমন

এরপর ১৯৭২ সালে কাজী নজরুল ইসলাম কে বিদেশ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় নিয়ে আসা হয় এবং তাকে ঢাকার পিজি হসপিটালে ভর্তি করা হয়।

 

কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যু

দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলায় ১৩৮৩ সালের ১২ ই ভাদ্র (ইংরেজিতে ২৯ আগস্ট ১৯৭৬) সালে এই বিখ্যাত কবি পিজি হসপিটালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে কাজী নজরুল ইসলাম তার একটি সংগীতে উল্লেখ করে যান যেন তাকে মসজিদের পাশে কবর দেওয়া হয় যাতে তিনি কবরে শুয়ে মুয়াজ্জিনের মধুময় আযানের ধ্বনি শুনতে পান।

 

এজন্য তিনি লিখেছিলেন,

মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই।

যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।।

আমার গোরের পাশ দিয়ে ভাই নামাজীরা যাবে,

পবিত্র সেই পায়ের ধ্বনি এ বান্দা শুনতে পাবে।

গোর-আজাব থেকে এ গুনাহগার পাইবে রেহাই।।

কত পরহেজগার খোদার ভক্ত নবীজীর উম্মত

ঐ মসজিদে করে রে ভাই, কোরান তেলাওয়াত।

সেই কোরান শুনে যেন আমি পরান জুড়াই।।

কত দরবেশ ফকির রে ভাই, মসজিদের আঙ্গিনাতে

আল্লার নাম জিকির করে লুকিয়ে গভীর রাতে,

আমি তাদের সাথে কেঁদে কেঁদে

(আল্লার নাম জপতে চাই)।।

 

কবির ইচ্ছের অনুযায়ী ঢাকা কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন উত্তর পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা সহকারে কবিকে কবর দেওয়া হয়। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ কাজী নজরুল ইসলাম কবর জিয়ারত করতে আসেন। কাজী নজরুল ইসলাম আজ আমাদের মাঝে নেই কিন্তু বাংলা কাব্যে তার অবদান তাকে আজও ওমর করে রেখেছে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে।

 

পরিশেষে

আধুনিক বাংলা কাব্য ও সাহিত্যের সবচেয়ে বড় প্রেরণা হলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার আবির্ভাবে স্বতন্ত্র কাব্য সাধনার দিগন্তে নবীনতম সূর্যের মহিমা বিচ্ছিরিত হয়েছে। ইসলামিক বিভিন্ন বিষয়গুলি তিনি প্রথমবারের মতো সাহিত্যের রূপ দান করেন।

বাংলা ভাষায় আরবি ও ফারসি শব্দের ব্যবহার, ইসলামী আদর্শ এবং মুসলিম ঐতিহ্যের রূপায়নে তার অবদান অতুলনীয়। কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিটি গান, গজল প্রায় প্রত্যেক বাঙালির মুখে আজও উচ্চারিত হয়ে থাকে। কাজী নজরুল ইসলাম হয়তো মরে গেছেন অনেক আগে কিন্তু তার কীর্তির জন্য সে সারা জীবন হাজারো বাঙালির মনে অমর হয়ে থাকবে।

 

আরও পড়ুনঃ 

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents