গ্রিন টি এর উপকারিতা এবং অপকারিতা
গ্রিন টি এর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি। গ্রিন টিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা নির্দ্বিধায় শরীরকে ফিট রাখতে সাহায্য করে। যাদের দিনে দুই তিন কাপ চা খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে তারা গ্রিন টি পান করতে পারেন। এটি শৈলের জন্য অত্যন্ত ভালো। গ্রিন টি এর উপকারিতা এবং অপকারিতা
গ্রিন টি উচ্চ রক্তচাপ এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। সঠিক নিয়মে গ্রিন টি পান করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ওজন কমে। শরীর থেকে বাড়তি কোলেস্টেরল ঝরে যায়। গ্রিন টি পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে। এবং সঠিক নিয়মে গ্রিন টি পান করলে হজম প্রক্রিয়া ভালো থাকে। কিন্তু গ্রিন টি এর কিছু অপকারিতা ও রয়েছে।
গ্রিন টি খাওয়ার জন্য সঠিক সময় এবং সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করা বাধ্যতামূলক। কে আছেন যারা গ্রিন টি পান করার সময় চিনি মিশ্রণ করে থাকেন। কিন্তু এটি মোটেও ভালো অভ্যাস নয়। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা গ্রিন টি এর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন তাহলে শুরু করা যাক:
গ্রিন টি এর উপকারিতা
গ্রিন টি এর উপকারিতা এবং অপকারিতা সকলের জেনে রাখা উচিত। চলুন জেনে নিই গ্রিন টি এর বিভিন্ন উপকারিতা গুলো কি কি:
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে: গ্রিন টি তে বিদ্যমান রয়েছে পলিফেনল নামক উপাদান। এই উপাদানটি টিউমার প্রতিরোধ করে এবং ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। স্তন ক্যান্সার এবং প্রোটেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য গ্রিন টি অনেক আগে থেকেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য আপনি দিনে ২ থেকে ৩ কাপ গ্রিন টি পান করতে পারেন।
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে: আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল থাকলে রক্তনালীতে ব্লকের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং বিভিন্ন হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রতিদিন গ্রিন টি পান করলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল গুলো আস্তে আস্তে কমে যায় এবং হৃদরোগ ও রক্তদালিতে ব্লকেজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
- ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে: আমাদের দৈনন্দিন ব্যস্তময় জীবনে ধুলাবালির কারণে ত্বকে অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: ত্বকের প্রদাহ, ব্রণ সৃষ্টি হওয়া, ত্বকের লালচে ভাব ইত্যাদি। প্রতিদিন গ্রিন টি পান করলে এই সব ধরনের সমস্যার নিমিষেই সমাধান পাওয়া সম্ভব। গ্রিন টি ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিরাময় করার পাশাপাশি ত্বকের যৌলুস এবং টোন ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- ওজন কমাতে কার্যকরী: কমবেশি সবাই জানে যে গ্রিন টিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিনিয়ত এটি পান করলে শরীরের মেদ আস্তে আস্তে কেটে যাবে। বিশেষ করে গ্রিন টি পান করলে পেটের মেদ কয়েক দিনের মধ্যেই ঝরে যায়। আপনি যদি ডায়েট করে থাকেন অথবা নিয়মিত ব্যায়াম করে থাকেন তাহলে অবশ্যই গ্রিন টি পান করতে হবে। চেষ্টা করবেন যে কোন শরীরচর্চা করার আগে গ্রিন টি পান করে নেওয়ার জন্য।
- ত্বককে ময়শ্চারাইজ করতে সাহায্য করে: কিছু কিছু উপকরণ এর সাথে গ্রিন টি মিশ্রিত করে মুখে এপ্লাই করলে এপ্লাই করলে মুখের ত্বক সব সময় ময়েশ্চারাইজ থাকবে। এক্ষেত্রে বাড়তি কোন মশ্চারাইজার এর প্রয়োজন হবে না। উপকরণগুলো হল: অর্ধেক কলা,১ চা চামচ গ্রিন টি, ১ চা চামচ মধু এবং এক চা চামচ টক দই। এই সবগুলো উপাদান একত্রিত করে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন এবং শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন তো অনেকটা মশ্চারাইজ হয়েছে
- ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে: আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা জানিনা যে গ্রিন টি ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে ৪৪ শতাংশ হৃদরোগের সম্ভাবনা কমে আসে। এবং বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত গ্রিন টি পান করে থাকেন তাদের ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। সুতরাং সুস্থ থাকতে হলে আপনাকে অবশ্যই গ্রিন টি পান করা উচিত।
- মুখের দুর্গন্ধ দূর করে: বিভিন্ন অণুজীবের আক্রমণের ফলে আমাদের মুখ গহব্বরে প্রদাহ এবং দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। এই অনুজীবের আক্রমণের ফলে দাঁতে ক্যাভিটি ধরা পড়ে। নিয়মিত গ্রীন টি পান করলে মুখ থেকে উড়াল ব্যাকটেরিয়া গুলো দূর হবে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে। গ্রিন টি ক্যাভিটি দূর করতে ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
- চুল শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে: আপনি যদি বিভিন্ন চুলের সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে গ্রিন টি হতে পারে আপনার জন্য একটা বড় সমাধান। তিন থেকে চারটি গ্রিন টি ব্যাগ এক গ্লাস পানির ভিতর ভিজিয়ে রাখুন। মাথার চুলে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করার পর গ্রিন টি ভেজানো পানি মাথার ত্বকে এবং চুলে অল্প অল্প করে এপ্লাই করুন। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যে চুল পড়া সমস্যা দূর হবে। চুলের গোড়া শক্ত হবে এবং হেয়ার ফল কমে যাবে।
- টোনার হিসেবে কাজ করে: বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে গ্রিন টি ত্বকের জন্য টোনার হিসেবে কাজ করে থাকে। এই টোনার তৈরি করার জন্য কিছু কিছু উপকরণ প্রয়োজন। উপকরণগুলো হলো: ৫ চামচ গ্রিন টি, ১ চামচ পুদিনা পাতা। এই মিশ্রণ দুটি পানির সাথে মিশ্রিত করে কিছু সময় ধরে ফুটিয়ে নিন। তারপর একটা ছাকনির সাহায্যে মিশ্রণগুলো থেকে ছেকে নিন। একটা বোতলে সংরক্ষণ করুন। প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার করে ব্যবহার করলে দেখবেন এটি একটি ভালো টোনার এর কাজ করছে।
- স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে: গ্রিন টি এর পাতাগুলো কিছুটা মধুর সাথে একত্রিত করে প্রতিদিন মুখে এপ্লাই করতে পারেন। এটি একটি ভালো স্ক্রাব এর কাজ করবে। প্রতিদিন নিয়মিত ব্যবহার করতে পারলে লোমকূপের ভেতরের ময়লা এবং মৃত কোষগুলো দূর হবে।
আমরা ইতোমধ্যে গ্রিন টি এর বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করার জন্য গ্রিন টি একটি ভালো উপাদান।
গ্রিন টি এর অপকারিতা
গ্রিন টি এর উপকারিতা এবং অপকারিতা গুলো জানাবো এই আর্টিকেলের মাধ্যমে।
অনেকেই চা খাওয়ার মত করে দিনে যতবার খুশি গ্রিন টি পান করতে থাকেন। তারা মনে করেন অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রিন টি পান করলে বেশি বেশি ওজন কমবে। কিন্তু ধারণাটি একেবারেই ভুল। চলুন দেখে নিয়ে গ্রিন টি এর অপকারিতা গুলো কি কি:
- পেট ব্যথা: আমরা অনেকেই না জেনে খালি পেটে গ্রিন টি পান করে ফেলি। খালি পেটে গ্রিন টি পান করা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ গ্রিনটিতে রয়েছে ট্যানিন উপাদান। এই উপাদানটি আপনার পাকস্থলীর অ্যাসিটি বাড়িয়ে তুলতে পারে। এসিডিটি বাড়ার কারণে আপনার পাকস্থলীতে ব্যথা অথবা পেটব্যথা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এবং এই এসিডিটির কারণে বমি বমি ভাব বা কয়েকবার বমিও হতে পারে। তাই খালি পেটে কখনোই গ্রিন টি পান করা উচিত নয়।
- আলসার বাড়িয়ে তোলে: সকালে খালি পেটে গ্রিন টি পান করলে পেপটিক আলসার বেড়ে যাওয়া সম্ভাবনা তৈরি হয়। যাদের এসিড রিফ্লেক্সের সমস্যা রয়েছে আগে থেকেই তারা ও সকালে খালি পেটে গ্রিন টি পান করবেন না। সকালে খালি পেটে গ্রিন টি পান করলে পেপটিক আলসার এবং এসিড রিফ্লেক্সের সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। তাই সকালবেলা গ্রিন টি পান করবেন না।
- আয়রন শোষণের ক্ষমতা কমে যায়: আমাদের শরীর সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন পৌঁছানো জরুরী। কিন্তু খালি পেটে গ্রিন টি পান করলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন শোষণ করতে পারে না। তার ফলশ্রুতিতে আয়রন শোষণের ক্ষমতা কমে যায়। যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন তাদের জন্য শরীরে আয়রন পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি। তাই এসব ধরনের রোগীদের গ্রিন টি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর সকালে গ্রিন টি পান করা তাদের জন্য একেবারেই ঠিক নয়।
- রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে: যাদের রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের গ্রিন টি পান না করাই ভালো। আর সকালে খালি পেটে গ্রিন টি পান করলে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। কারণ গ্রিন টিতে রয়েছে ক্যাফেইন অ্যাড্রিনাল নামক উপাদান। এই উপাদানটি স্ট্রেস হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করে। সকালে গ্রিন টি পান করলে এই স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অনেকটা কমে যাবে। ফলশ্রুতিতে আপনার রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন যে অতিরিক্ত গ্রিন টি পান করলে কি কি হতে পারে। সর্বোপরি সকাল বেলা খালি পেটে কোনভাবেই গ্রিন টি পান করা উচিত নয়। এতে শরীরের দীর্ঘমেয়াদি অনেক সমস্যা তৈরি হতে পারে।
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমানোর জন্য যারা চেষ্টা করছেন তারা অবশ্যই গ্রিন টি পান করে দেখতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার ভারি খাবার খাওয়ার দুই ঘন্টা আগে এবং খাবার খাওয়ার দুই ঘন্টা পরে গ্রিন টি পান করতে হবে।
গ্রীন টিতে রয়েছে ক্যাফিন এবং ক্যাটেচিন নামক উপাদান। এই উপাদান গুলো বিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে থাকে। তাই ওজন কমানোর জন্য খাবারের আগে এবং পরে গ্রিন টি পান করতে হবে। তবে সকাল বেলায় খালি পেটে কোনভাবেই গ্রিন টি পান করা উচিত নয়।
গ্রিন টি তৈরির নিয়ম
গ্রিন টি পান করে ভালো ফলাফল পেতে চাইলে এটি বানানো সঠিক পদ্ধতি আপনাকে জানতে হবে। এক কাপ গ্রিন টি পান করার জন্যে এক চা চামচ অথবা পাঁচ গ্রাম গ্রিন টি নিয়ে নিন।
পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে ফুটিয়ে নিতে হবে। পানি ফুটে উঠলে চুলা বন্ধ করে পানি ঠান্ডা হতে দিন। পানি উষ্ণ গরম থাকা অবস্থায় এতে গ্রিন টি যোগ করুন। তিন মিনিট থেকে পাঁচ মিনিট এই মিশ্রণটি ঢেকে রাখুন। তারপর পান করুন।
গ্রিন টি দাম কত
ভালো ব্রান্ডের গ্রিন টি কিনতে হলে আপনাকে মোটামুটি ভালো পরিমান টাকা খরচ করতে হবে। ভালো ব্রান্ডের গ্রিন টি এর দাম বাজারে বেশ চড়া। তবে গ্রিন টি প্যাকেটজাত ছাড়াও বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলোর দাম তুলনামূলক কম।
তবে এ গ্রিন টি এর সর্বোচ্চ উপকারিতা পাওয়ার জন্য প্যাকেট জাত গ্রিন টি গুলো ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।চলুন দেখে নিই গ্রিন টি দাম কত:
| ব্র্যান্ডের নাম | গ্রাম | মূল্য |
| পিওর গ্রিন টি | ১০০ গ্রাম | ৪৬৮ টাকা |
| পিওর গ্রিন টি | ১০০ গ্রাম ২০%ছাড় | ২৫৭ টাকা |
| হ্যান্ড মেড অর্গানিক ফ্লাওয়ার লিফ গ্রিন টি | ১০০ গ্রাম | ১০৭ টাকা |
| ফিনলে গ্রিন টি বক্স | ১২৫ গ্রাম | ৯৫ টাকা |
| লিপটন গ্রিন টি ব্যাগ হানি এন্ড লেমন | ৭০ গ্রাম | ২২৫ টাকা। |
শেষ কথা
গ্রিন টি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটা পানীয় এর সম্পর্কে কোন দ্বিধা নাই। কিন্তু প্রত্যেকটি জিনিস শরীরে গ্রহণ করার আগে আপনাকে এর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করতে হবে।
গ্রিন টি এর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আমরা এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। যারা ওজন কমানোর জন্য প্রতিনিয়ত গ্রিন টি পান করছেন তারা অবশ্যই জেনে নিবেন কখন কখন গ্রিন টি পান করা আপনার শরীরের জন্য ভালো।
দিনে ২ থেকে ৩ কাপ এর বেশি গ্রিন টি পান করা মোটেও উচিত নয়। যারা গ্রিন টি এর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলেন, আজকের এই আর্টিকেলটি তাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে আশা করি।
Also read: জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
