Dreamy Media BD

আলবার্ট আইনস্টাইন | আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক 

আলবার্ট আইনস্টাইন আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক

আলবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein), আপেক্ষিকতার জনক নোবেলজয়ী সুইচ-জার্মান-মার্কিন পর্দাথবিজ্ঞানী।  তিনি এমন একজন বিজ্ঞানী , বিজ্ঞান নিয়ে জানাশোনা নেই এমন মানুষও তার নাম জানেন। তার আবিষ্কার ও কর্মে নিজেকে তিনি আধুনিক বিজ্ঞানের প্রতিশব্দে পরিণত করেছেন।  ইহুদি হবার কারণে ছাড়তে হয় নিজের দেশ , পারমাণবিক বোমার সাথে জড়িয়ে আছে তার নাম এবং একজন বিখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানীর সাথে তার নাম জড়িয়ে গেছে আধুনিক পর্দাথ  বিজ্ঞানের এক শাখায়।  এইরম অনেক জানা অজানা তথ্য নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনকে নিয়ে।

আইনস্টাইন এর জীবনী বাংলায়

জন্ম: আলবার্ট আইনস্টাইন ১৪ মার্চ, ১৮৭৯ সালে জার্মানির উর্টেমবার্গের উলমে এক সেক্যুলার ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হারমান আইনস্টাইন ছিলেন প্রকৌশলী যিনি তার ভাইয়ের সাথে ফ্যাব্রিক জে. আইনস্টাইন এন্ড সি নামে একটি মিউনিখ-ভিত্তিক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির জন্য জনপ্রিয় ছিল। আইনস্টাইনের মা, প্রাক্তন পলিন কোচ ও গৃহকর্মী। আইনস্টাইনের মাজা নামে এক ছোট বোন ছিল।

আইনস্টাইনের জন্ম

আইনস্টাইন মিউনিখের লুইটপোল্ড জিমনেসিয়াম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। কিন্তু লেখাপড়া তার কাছে তেমন ভালো লাগতো না কারণ বিদ্যালয়ের কঠোর সিলেবাসের সাথে উদার মনের  এই বালক পেরে উঠছিলেন না। তার উপর ছোটবেলা থেকে তার কথা বলার সমস্যা ছিল, তাই লেখাপড়া তার কাছে আরো কঠিন হয়ে পরে।

কিন্তু, ছোট্ট আইনস্টাইন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং বেহালা বাজানোর উস্তাদ ছিলেন। যা তার জীবনের পরবর্তী বছরগুলিতে দেখা গিয়েছিলো, বেহেলা হাতে তার একটা বিখ্যাত ছবিও আছে।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটারঃ এক যাদুর বাক্সের পরিচিতি

আইনস্টাইনের প্রাথমিক শিক্ষা

১৮৮০ এর দশকের শেষের দিকে, ম্যাক্স তালমুড, একজন পোলিশ মেডিকেল ছাত্র তার গৃহশিক্ষন হন। তালমুড তার ছাত্রকে একটি শিশুদের বিজ্ঞান বই দিয়েছিলেন, এই বই থেকেই ছোট্ট আইনস্টাইন আলোর প্রকৃতি সম্পর্কে প্রথম ধারণা পান। কিশোর বয়সেই,  লিখেছিলেন তার প্রথম এবং প্রধান গবেষণাপত্র “The Investigation of the State of Aether in Magnetic Fields.”

মিউনিখে একা আইনস্টাইন

1890-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তার বাবা ব্যবসাতে প্রচুর লোকসান করেন এবং পরিবারটিকে নিয়ে ইতালির মিলানে চলে যান।

কিন্তু আইনস্টাইনকে জার্মানির মিউনিখে এক আত্মীয়ের বোর্ডিং হাউসে রেখে যান, লুইটপোল্ডে স্কুলে তার পড়াশোনা শেষ করার জন্য।

সেই সময়ে প্রত্যেক ১৮ বছেরের নাগরিক কে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হতো, তার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক এই প্রশিক্ষণ শুরু হলে মিথ্যা ডাক্তারি সার্টিফিকেট নিয়ে বিদ্যালয় ড্রপআউট দিয়ে ইতালিতে পরিবারের কাছে চলে যান।

সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ভর্তি

পরবর্তীতে আইনস্টাইন জুরিখের সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ভর্তি ভর্তির সুযোগ পান। ভর্তি পরীক্ষায়  গণিত এবং পদার্থবিদ্যার অনেক ভালো নম্বর পান যদিও তখন তার মাধ্যমিক ড্রপআউট ছিল। তাই এখইসাথে আরাউ-এর একটি হাই স্কুলে ভর্তি হন, যার যার প্রধান শিক্ষক জস্ট উইন্টেলার। আইনস্টাইন উইনটেলারের বাড়িতেই লজিং থাকতেন এবং তার মেয়ে মেরির প্রেমে পড়েন।

Albert Einstein (আইনস্টাইন) | Business Insider India
Albert Einstein (আইনস্টাইন) | Business Insider India

আইনস্টাইনের কর্মজীবন

দিনে দিনে আইনস্টাইন এর পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো খারাপ হয়ে পরে। তাই পরিবারের হাল ধরার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শেষে নিজের প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার আবেদন করেন।  জাতিতে ইহুদি হবার কারণে কোথাও ডাক পান না।  শেষে, জীবিকার তাগিদে গৃহশিক্ষক হিসাবে ছাত্র পড়ানো শুরু করেন।

সুইস পেটেন্ট অফিসের ক্লার্ক

শিক্ষকতায় সুযোগ না পেয়ে বাধ্য হয়ে আইনস্টাইন সুইস পেটেন্ট অফিসে কেরানির চাকরি নেন।  জীবনের কঠিন সময় আর কেরানির চাকরির কাজ তার বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা কমাতে পারে নি।  তাইতো, মাত্র ২৬ বছর বয়সে উন্নত ল্যাবরেটরি বা গবেষণাগার ছাড়া শুধুমাত্র খাতাকলম আর নিজের মেধা দিয়ে বিখ্যাত সাইন্স ম্যাগাজিন “Annalen der physik” তে পাঁচটি গবেষণা প্রকাশ করেন।

তার প্রথম তিনটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশের পর বিজ্ঞান সমাজে তার নাম ছড়িয়ে যায় , কিন্তু যখন তার চতুর্থ গবেষণা পত্রটি বিখ্যাত “আপেক্ষিকতার তত্ত্ব” নিয়ে প্রকাশ হয়, বিজ্ঞান জগতে তা নিয়ে শোরগোল পরে যায়।

জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

দ্রুত তার নাম ছড়িয়ে পড়লে ১৯০৭ সালে তার ডাক আসে জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।  ক্লার্কের চাকরির পাশাপাশি যোগ দেন অধ্যাপনা পেশায়, যে চাকরি তিনি একসময় তিনি হন্য হয়ে খুঁজেছিলেন।

এক নজরে আলবার্ট আইনস্টাইন

বিষয় তথ্য 
নাম  আলবার্ট আইনস্টাইন              
জন্ম ১৪ মার্চ, ১৮৭৯ ( উলম, ওয়ুর্টেমবার্গ রাজ্য, জার্মান সাম্রাজ্য)
পিতা-মাতা পিতা: হারমান আইনস্টাইন

মাতা: পলিন কোচ

পরিবার স্ত্রীঃ মাইলভা মারিচ (১৯০৩)

 দ্বিতীয় স্ত্রী এলসার,

ছেলে: হ্যান্স আলবার্ট ও এডুয়ার্ড

শিক্ষা জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডঃ ডিগ্রি অর্জন
পেশা পদার্থবিদ, অধ্যাপক, প্যাটেন্ট পরীক্ষক
বিশেষ থিওরি  আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব(১৯০৫

আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব(১৯১৫)

ফোটোইলেকট্রিক ইফেক্ট (১৯০৫)

পুরস্কার নোবেল পুরস্কার (১৯২১)

কোপলি পদক, মাট্যুচ্চি পদক, ফ্রাঙ্কলিন পদক, টাইমস এর শতাব্দীর সেরা মানুষ, ম্যাক্স প্লাংক পদক, রায়েল সোসায়েটি সদস্য, ইত্যাদি

বিজ্ঞানে অবদান ব্রাউনিয়ান গতি, কোয়ান্টাম মেকানিক্স,প্রতিষ্ঠান্তা-শক্তি সমবেশ, সমমূলক ক্ষেত্র সিদ্ধান্ত, সাধারণ সম্পর্ক সিদ্ধান্ত, ফোটোইলেকট্রিক ইফেক্ট, আইনস্টাইন-পোডলস্কি-রোজেন প্যারাডক্স, গুরুত্ব তরঙ্গ, ইপিআর প্যারাডক্স,বৃহৎবাংশিকীয় মৌলবাদ, মহাকর্ষণীয় তরঙ্গ,সৌর্যমণ্ডলী স্থিতি, ইত্যাদি
নাগরিকত্ব সুইস নাগরিকত্ব (১৯০১-১৯৫৫), আমেরিকান নাগরিকত্ব (১৯৪০-১৯৫৫ দ্বৈত নাগরিকত্ব), জার্মান ( ১৮৭৯-১৯০০  , বর্জন করেন) 
আমেরিকান যাত্রা ১৯৩৩ সালে নাজি জার্মানি থেকে মার্কিন নিউ জার্সি 
রাজনৈতিক এবং সামাজিক কর্ম নাগরিক অধিকার, যিওনিজম, শান্তি চাই, শরণার্থীদের সমর্থন, শিক্ষান্তরের স্বাধীনতা, যুদ্ধবিরোধী কর্ম,সশস্ত্র বাহিনীর বিরোধ
মৃত্যু   ১৮ এপ্রিল, ১৯৫৫ (বয়স ৭৬)

 

আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব

আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব বোঝার আগে দুইটি বিষয় নিয়ে ধারণা নেওয়া প্রয়োজন।

আপেক্ষিক কি?

এটি হল কোন কিছুর অবস্থা যা কিনা অন্য কোনো কিছুর উপর নির্ভর করে।  যা হতে পারে কোন বস্তুর ভর, শক্তি, স্থান বা সময়ের পার্থক্য।

আপেক্ষিকতা কাকে বলে?

আপেক্ষিকতা হল এমন একটি তত্ত্ব যা ভর, শক্তি, স্থান এবং সময়ের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে।

আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব ব্যাখ্যা করে যে স্থান এবং সময় আসলে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত, এবং তিনি এই যৌথ কাঠামোটিকে “স্থান-কাল” বলে ।

আইনস্টান তার বিখ্যাত আপেক্ষিক তথ্য দেন ১৯০৫ সালে তার বিখ্যাত গবেষণাপত্র “অন দ্য ইলেক্ট্রোডায়নামিক্স অফ মুভিং বডিস”-এ।

আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত:

  • আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব  (১৯০৫)এবং
  • আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব (১৯১৫)

আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব

এই তত্ত্বটি আলবার্ট আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে প্রস্তাব করেন।

আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব হল এমন একটি তত্ত্ব যা ভর, শক্তি, স্থান এবং সময়ের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে।

আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের দুটি মূল ধারণা হল:

  • সম্পর্কিততা: সময় এবং দূরত্ব পর্যবেক্ষকের গতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
  • ভর-শক্তি সমানুপাতিকতা: ভর এবং শক্তির মধ্যে একটি সমানুপাতিক সম্পর্ক বিদ্যমান। যা থেকে পাই বিখ্যাত সমীকরণ, E = mc^2।

আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম:

  • আলোর বিচ্যুতি: মহাকর্ষের কারণে আলোর পথ বক্র হয়।
  • পেরিহেলিয়ন অগ্রগতি: বুধের কক্ষপথের অগ্রগতি।
  • সময়ের বিস্তার: মহাকর্ষের কারণে সময় ধীর হয়ে যায়।

আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বটি পদার্থবিজ্ঞানের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার যা আমাদের মহাবিশ্বকে আরও ভালভাবে বুঝতে ও ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে ।

আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব (জিটিআর)

হল একটি জ্যামিতিক তত্ত্ব যা মহাকর্ষের ধারণাকে ব্যাখ্যা করে। যা তিনি ১৯১৫ সালে প্রস্তাব করেন।

জিটিআর অনুসারে,

মহাকর্ষ একটি শক্তি নয়, বরং স্থান-কালের বক্রতার একটি ফলাফল। পদার্থ এবং শক্তির উপস্থিতি স্থান-কালকে বক্র করে, এবং এই বক্রতাই মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র তৈরি করে।

জিটিআরের দুটি প্রধান নীতি হল:

  • মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের সমীকরণ
  • সমানতার নীতি

জিটিআর এর সাহায্য, পদার্থ বিজ্ঞানের যে ধারণা গুলি ব্যাখ্যা করা যায়:

কালের বিস্তার: জিটিআর অনুসারে, মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের মধ্যে সময় ধীর গতিতে চলে।

আলোর বক্রতা: জিটিআর অনুসারে, মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের মধ্যে আলোর পথ বক্র হয়।

কৃষ্ণ গহ্বর: জিটিআর অনুসারে, খুব ভারী বস্তুগুলি কৃষ্ণ গহ্বরে পরিণত হতে পারে, যেখান থেকে এমনকি আলোও পালাতে পারে না।

Remembering 1921 winner Albert Einstein
Remembering 1921 winner Albert Einstein

আইনস্টাইন এর পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল

1921 সালে, আইনস্টাইন ফটোইলেকট্রিক প্রভাবের ব্যাখ্যার জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন। তার জীবনের সেরা আবিষ্কার আপেক্ষিতার জন্য তিনি নোবেল পাননি, কেননা সেই সময় আপেক্ষিকতার বিষয়ে তার ধারণাগুলি প্রশ্নবিদ্ধ বলে বিবেচিত হয়েছিল। সেইসাথে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে পরের বছর পর্যন্ত তার পুরস্কার গ্রহণ করতে পারেন নি। নোবেলের পুরস্কারের ভাষণে তিনি ঠিকই আপেক্ষিকতা নিয়ে কথা বলেছিলেন।

আইনস্টাইন এর মজার কাহিনী । আইনস্টাইন এর গল্প

সময়টা ছিল এখনকার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, সেইসময় ছবির এতো বেশি প্রচলন ছিল না।  তাই বেশিরভাগ মানুষ আইনস্টাইন কে শুধু নাম চিনতেন।  তার প্রতিটা বক্তব্যে তার ড্রাইভার উপস্থিত থাকতেন ও মনোযোগ দিয়ে শুনতেন।  তো , একবার এক মঞ্চে মজা করে, তার বদলে তার ড্রাইভার উঠে যায়।  অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে তাকে(আসলে ড্রাইভারকে) আপেক্ষিকতা নিয়ে বলতে বলা হয়।  তখন বিপদে পরে যান, সেই ড্রাইভার।  কিন্তু চালাক ড্রাইভার দ্রুত পরিস্থিতি সামলে নেন।

বলেন,

আপেক্ষিকতার মতো সোজা জিনিস বুঝেন না , এটা তো আমার ড্রাইভারও (আসলে আইনস্টাইন) বুঝাতে পারবে।

আরেকবার, বিখ্যাত নির্বাক  চলচিত্রকার চার্লি চ্যাপলিনের এক সিনেমা সিটি লাইটস-এর উদ্বোধনী শোতে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ পান তিনি।  তখন দর্শকেরা চার্লি চ্যাপলিনকে দেখে যতটানা উৎসাশিত হয়েছিলেন, তার চেয়েও বেশি  হয়েছিলেন আইনস্টাইনকে মঞ্চে দেখে। আইনস্টাইন চার্লি চ্যাপলিনের প্রশংসা করে বলেছিলেন,

‘আপনি এত বড় অভিনেতা যে  একটি শব্দও উচ্চারণ না করে মানুষকে সব বোঝাতে পারেন।’

চার্লি চ্যাপলিন প্রতিউত্তরে বলেছিলেন, ‘কিন্তু আপনার ক্ষমতা তো আমার থেকেও বেশি। আপনার আপেক্ষিকতা কেউ বুঝতে না পারলেও পৃথিবীর মানুষ আপনাকে পছন্দ করেন।’

সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও মহান বিজ্ঞানী আইস্টাইন

বিখ্যাত বাজ্ঞালী বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু  আইনস্টাইনের সাথে অনেক গবেষণা করেছেন, একসাথে তারা বিখ্যাত  Bose-Einstein statistics নিয়ে কাজ করেন।  যা আধুনিক পর্দাথ বিজ্ঞানের অন্যতম আবিষ্কার বলে বিবেচনা করা হয়।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু আলোর কোয়ান্টাম এর উপর তার একটি গবেষণা প্রতিবন্ধ আইস্টাইনের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।  সেই গবেষণা পত্রটি তিনি এতো পছন্দ করেছিলেন যে তা জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে জার্নালে প্রকাশ করেন।

তারপর একটি চিঠিতে বসুকে লিখেন,

আমি কোয়ান্টাম অনুমান ব্যবহার করে আপনার বিকিরণের সূত্র যাচাই করেছি… আপনার ধারণাটি সত্যিই ফলপ্রসূ এবং গুরুত্বপূর্ণ।

১৯২৬ সালে, সত্যেন্দ্রনাথ বসু জার্মানিতে আইনস্টাইনের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন এবং তারা তাদের গবেষণা সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন।

When the father of physics Einstein and Tagore debated science and religion | picture source: India Today
When the father of physics Einstein and Tagore debated science and religion | picture source: India Today

রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইনের সাক্ষাৎ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও আইনস্টাইন এর মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।  তাদের মধ্যে চারবার সরাসরি দেখা হয় এবং একে অপরকে নিয়মিত চিঠি লিখতেন।

প্রথমবার, ১৯২৬ সালের  ১৪ই সেপ্টেম্বর আইনস্টাইনের সাথে কবিগুরুর প্রথম সাক্ষাৎ জার্মানির কাপুথে ‘আইনস্টাইন ভিলায়’ হয়।

দ্বিতীয়বার, ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই জুলাই রবীন্দ্রনাথের আবার জার্মানী সময় আইনস্টাইনের বাসভবনে তাঁদের সাক্ষাৎ হয়েছিল।

তৃতীয়বার, একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তাদের আবার সাক্ষাৎ হয় জার্মানিতে।

শেষবার, চুতুর্থবারের সাকাৎকারটি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে।

আইনস্টাইন ও পারমাণবিক বোমা তৈরি

পারমাণবিক বোমার জনক ওপেনহাইমার, যুদ্ধ থামাতে পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এর কাছে একটা চিঠি লিখেন যেখানে আইস্টাইন স্বাক্ষর করেছিলেন।

তবে, প্রথমে তিনি চিঠিতে স্বাক্ষর করতে চাননি। পারমাণবিক বোমা তৈরিতে তার বিখ্যাত সূত্র
E=MC*2 যে কাজ করতে পারে সেটাই তিনি বিস্বাস করতে চাননি। কিন্তু ওপেনহাইমার ও অন্নান্য বিজ্ঞানীরা তাকে বুঝিয়ে বলেন , যুদ্ধ থামাতে পারমাণবিক বোমা কতটা জরুরি।

আইনস্টাইন কেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট হতে চাননি?

 

১৯৪৮ সালে ইস্রায়েল স্বাধীনতার পর প্রথম প্রেসিডন্ট হন আইনস্টাইন এর বন্ধু আরেক বিজ্ঞানী, ভাইৎসমান।  ১৯৫২ সালে ভাইৎসমানের মৃত্যুর পর , কে হবে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট সেটা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়।

১৯৫২ সালের ১৬ নভেম্বর ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেন গুরিয়ন পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হবার জন্য আমেরিকান দূতাবাসের মাধ্যমে আইনস্টাইনকে চিঠি পাঠান।

তবে বিভিন্ন কারণে আইনস্টাইন এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে একটি চিঠি লিখেন, যার কিছু অংশ ছিল:

““আমাদের ইসরায়েল রাষ্ট্রের দেয়া প্রস্তাবে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। একইসাথে আমি দুঃখিত ও লজ্জিত বোধ করছি, কারণ এই প্রস্তাব আমি গ্রহণ করতে পারছি না।”

তিনি আসলে রাষ্ট্র চালানোর মতো গুরুদায়িত্ব নিতে প্রস্তুত ছিলেন না।

আইনস্টাইন এর সকল উক্তি

বিখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুকে নিয়ে,

“জগদীশচন্দ্র বসু যেসব অমূল্য তথ্য পৃথিবীকে উপহার দিয়েছেন তার যে কোনটির জন্য বিজয়স্তম্ভ স্থাপন করা উচিত।” __ উক্তিঃ আলবার্ট আইনস্টাইন

“ভালোবাসায় পতনের জন্য কোনোভাবেই আমরা মহাকর্ষ-অভিকর্ষকে দায়ী করতে পারি না।”  __ উক্তিঃ আলবার্ট আইনস্টাইন

 

 “যে কখনো ভুল করেনি সে কখনো নতুন কিছু করার চেষ্টাই করেনি।”  __ উক্তিঃ আলবার্ট আইনস্টাইন

 “একজন সুন্দর, আকর্ষণীয় রমণীর পাশে ২ ঘণ্টা বসে থাকুন, দেখবেন সময় উড়ে চলে গেছে। এবার গ্রীষ্মের গরমের মাঝে রাস্তায় ২ মিনিট হাঁটুন, মনে হবে আপনি অনন্তকাল ধরে হাঁটছেন!” __ উক্তিঃ আলবার্ট আইনস্টাইন

 “স্কুল থেকে জ্ঞানার্জনের পর ভুলে যাওয়ার পর যেটা মনে থাকে সেটাই হলো শিক্ষা।” __ উক্তিঃ আলবার্ট আইনস্টাইন

এই পৃথিবীতে সবাই জিনিয়াস; কিন্তু আপনি যদি ১ টি মাছকে তার গাছ বেয়ে উঠার সামর্থ্যের উপর বিচার করেন তাহলে সে সারা জীবন নিজেকে শুধু অপদার্থই ভেবে যাবে।  __ উক্তিঃ আলবার্ট আইনস্টাইন

 

 ”একটি টেবিল, চেয়ার, ফল ভরা পাত্র আর একটা বেহালা সুখী হওয়ার জন্য একটা মানুষের আর কী দরকার?“ __ উক্তিঃ আলবার্ট আইনস্টাইন

 “ বাস্তবতা নিছক একটি বিভ্রম, যদিও এটি খুব স্থায়ী “ __ উক্তিঃ আলবার্ট আইনস্টাইন

“ মহৎ ব্যক্তিরা সব সময় ভয়ানক বাধার সম্মুখীন হয় সংকীর্ণ চিন্তার মানুষদের কাছে থেকে। ” __ উক্তিঃ আলবার্ট আইনস্টাইন

”বিজ্ঞানী না হলে আমি একজন গায়ক হতাম।“  __ উক্তিঃ আলবার্ট আইনস্টাইন

”আমি কখনোই ভবিষ্যত নিয়ে ভাবিনি, এটা যথেষ্ট দ্রুত চলে আসে।“ __ উক্তিঃ আলবার্ট আইনস্টাইন

“ শান্তি কখনোই শক্তি প্রয়োগ করে আনা যায় না, সেটি একমাত্র সম্ভব হয় বোঝাপারার মাধ্যমে। ” __ উক্তিঃ আলবার্ট আইনস্টাইন

“  এটি এমন নয় যে আমি খুব স্মার্ট, এটি মাত্র এই যে আমি সমস্যার সাথে বেশিক্ষণ থাকি।” __ উক্তিঃ আলবার্ট আইনস্টাইন

“বুদ্ধিমত্তার সত্যিকারের নিদর্শন জ্ঞান নয় কল্পনা শক্তি” __ উক্তিঃ আলবার্ট আইনস্টাইন

আলবার্ট আইনস্টাইন ধারাবাহিক প্রশ্ন  FAQ

ইন্টারনেটে মহান বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনকে নিয়ে কিছু বহুল জিজ্ঞেসিত প্রশ্নের উত্তর:

আইনস্টাইন কি জন্য বিখ্যাত?

আলবার্ট আইনস্টাইন তার আপেক্ষিকতার তত্ত্ব এবং ভর-শক্তি সমতুল্যতার সূত্র , কোয়ান্টাম মেকানিক্স,প্রতিষ্ঠান্তা-শক্তি সমবেশ, সমমূলক ক্ষেত্র সিদ্ধান্ত, সাধারণ সম্পর্ক সিদ্ধান্ত, ফোটোইলেকট্রিক ইফেক্ট, আইনস্টাইন-পোডলস্কি-রোজেন প্যারাডক্স, ইত্যাদি তত্ত্ব প্রদান ও আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত।

আইনস্টাইন এর আইকিউ

বিজ্ঞানী আইনস্টাইন কখনও আইকিউ টেস্টে অংশগ্রহণ করেননি। কিন্তু তার জীবনের অর্জন ও জীবন যাপনের ভিত্তিতে গবেষণা করে দেখা গেছে তার আইকিউ স্কোর ১৬০ হতে পারে, সেটা মাত্র ০.১% মানুষের থাকে।

আইনস্টাইন কত বছর বয়সে কথা বলে?

আইনস্টাইন চার বছর বয়সে প্রথম কথা বলতে শুরু করেন। তার মা-বাবা তার কথা না বলা নিয়ে অনেক চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু একদিন, খাবার টেবিলে, তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন, “স্যুপটা খুব গরম!”

তার মা জিজ্ঞেস করেন এতদিন কথা বলোনি কেন, আইস্টাইন বলেছিলেন যে,

“এতদিন সব ঠিকঠাক ছিল তাই”

আলবার্ট আইনস্টাইন এর জন্ম কত সালে?

আলবার্ট আইনস্টাইন এর জন্ম ১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ। তার জন্ম হলো সাবেক জার্মান সাম্রাজ্যের উলম শহর।

আইনস্টাইন এর ব্রেইন

মৃত্যুর পর আইনস্টাইনের ব্রেইন চুরি হয়েছিল। তিনি ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল নিউ জার্সির প্রিন্সটন হাসপাতালে মারা যান। তার ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা প্যাথোলজিস্ট টমাস হার্ভে আইনস্টাইনের ব্রেইন গোপনে বের করে তা বাড়িতে নিয়ে যান।

তারপর, আইনস্টাইনের মস্তিষ্ককে ৪৬টি টুকরো করে কেটে ফেলেন এবং তা বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের কাছে গবেষণার জন্য পাঠান।

হার্ভে ১৯৯৬ সালে আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের বাকি টুকরোগুলি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞান বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন। এই বিভাগ এখনও আইনস্টাইনের ব্রেইন নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।

আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের ওজন কত ছিল?

আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের ওজন ছিল ১৪৯২ গ্রাম যা স্বাভাবিক মানুষের মস্তিষ্কের ওজনের চেয়ে কিছুটা বেশি। তবে, মস্তিষ্কের ওজনের উপর মানুসের বুদ্ধিমত্তা নিরভর করে না।

আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের গবেষণায় দেখা গেছে যে তার মস্তিষ্কের কিছু অংশ, যেমন করপাস ক্যালোসাম, সাধারণ মানুষের তুলনায় বেশি সুগঠিত ছিল।

আইনস্টাইন কি আবিষ্কার করেছিলেন

আলবার্ট আইনস্টাইন পদার্থবিজ্ঞানের অনেক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছিলেন। তার বিখ্যাত আবিষ্কারগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব
  • আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব
  • ভর-শক্তি সমতুল্যতার সূত্র
  • ব্রাউনীয় গতি
  • ফটোইলেকট্রিক প্রভাব:
  • বোসন বা ঈশ্বর কনা
Albert Einstein Family Photos | SuccessStory
Albert Einstein Family Photos | SuccessStory

আইনস্টাইনের স্ত্রী

আলবার্ট আইনস্টাইনের দুজন স্ত্রী ছিলেন। প্রথম স্ত্রী ছিলেন মিলেভা মারিক, একজন পদার্থবিদ ছিলেন। তারা ১৯০৩ সালে বিয়ে করেছিলেন এবং ১৯১৯ সালে তারা বিবাহবিচ্ছেদ হয়

তার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন এলসা লোয়েন্থাল, ইংরেজি ভাষার শিক্ষক । তারা ১৯১৯ সালে বিয়ে করেছিলেন এবং তাদের কোন সন্তান ছিল না।

আইনস্টাইন কিসের জনক

আলবার্ট আইনস্টাইনকে “আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক” বলা হয়। তার আবিষ্কারগুলি আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে জানার ও বোঝার  সাহায্য করেছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে, আরও লেখা পড়ুনঃ

তথ্যসূত্রঃ 

 

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents