কাজু বাদাম ও কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম
বাদাম এমন একটি খাবার বাদামমাত্রই তা শরীরের জন্য উপকারী।কাঠবাদামে রয়েছে ভিটামিন ই, ফসফরাস,ক্যালসিয়াম, জিংক, কপার, সেলেনিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই বাদাম শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, রক্তস্বল্পতা দূর করে। এটি চুল ও ত্বকের জন্য ভালো।=
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন একমুঠো করে কাঠবাদাম খেলে এই উপকারগুলো পেতে সাহায্য করবে আপনাকে। অন্যদিকে বিশ্বের স্বাস্থ্যকর খাবারগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে কাজুবাদাম। এটি ভিটামিন,প্রোটিন, খনিজ আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। পরিমিত মাত্রায় নিয়মিত কাজু বাদাম খেলে স্বাস্থ্যের জন্য নানা উপকার পাওয়া যায়।পুষ্টিবিদরা বলছেন, কাজুবাদামে রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ,ফাইবার, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপারের মতো কিছু উপকারী উপাদান।
এ ছাড়াও ভিটামিন কে, ভিটামিন বি৬-এর মতো খাদ্য উপাদানও রয়েছে কাজুবাদামে। তবে কাঠবাদাম ও কাজু বাদামের এত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে কাঠবাদাম ও কাজুবাদাম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা কাঠবাদাম ও কাজুবাদাম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। তাই চলুন দেরি না করে এখনই আর্টিকেলটি শুরু করা যাক:
কাজু বাদাম ও কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম
কাজুবাদামের উপকারিতা
কাজুবাদাম বহু উপকারী গুণাগুণ সম্পন্ন। কাজু বাদাম খেলে বিভিন্ন প্রকার রোগ বালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চলুন কাজুবাদামের উপকারিতা গুলো জেনে নিই,
১) হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করে
হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় কাজুবাদাম বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি হার্টের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে আপনি নিয়মিত কাজুবাদাম খেতে পারেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে এর উপকারিতা লক্ষ্য করবেন।
২) ব্লাড সুগার কন্ট্রোলে রাখে
কাজু বাদামে থাকা পুষ্টি উপাদান ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রাকৃতিক উপায়ে ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য নিয়মিত কাজুবাদাম খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
৩) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
কাজু বাদাম আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত কাজুবাদাম খেতে পারেন।
৪) গলেস্টোনের ঝুঁকি কমায়
গলেস্টোন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। নিয়মিত কাজুবাদাম খেলে গলস্টোনের ঝুঁকি থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া যায়।
৫) প্রচুর প্রোটিন সমৃদ্ধ
কাজুবাদাম খুবই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি খাবার। কাজুবাদাম খেলে আপনার শরীরের যাবতীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে। তাই চেষ্টা করুন প্রতিদিন কাজুবাদাম খাওয়ার।
৬) ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ
কাজু বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেল। নিয়মিত কাজুবাদাম খেলে শরীরে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হয়।
৭) ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে
কাজুবাদামে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে অল্প পরিমাণ কাজুবাদাম খেলে দীর্ঘ সময় ক্ষুধার চাহিদা থাকে না যার ফলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি বার্ন হয়। এই কারণেই কাজুবাদাম খেলে ওজন কমে।
৮) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
কাজুবাদাম প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একারনেই কাজুবাদাম স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।
৯) দাঁতও হাড় গঠনের সাহায্য করে
কাজুবাদাম হাড় এবং দাঁত গঠনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি আপনার সন্তানদেরকে নিয়মিত কাজুবাদাম খাওয়াতে পারেন এতে তাদের হার ও দাঁত মজবুত হবে।
১০) সংক্রমণ কমায়
নিয়মিত কাজুবাদাম খেলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশ কমে যায়। যারা নিয়মিত কাজুবাদাম খায় তাদের সংক্রামক রোগ অন্যদের তুলনায় অনেক কম হয়।
১১) দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে
কাজু বাদামে থাকা পুষ্টি উপাদান দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। যদি আপনার দৃষ্টি শক্তি দুর্বল থাকে তাহলে নিয়মিত কাজুবাদাম খেতে পারেন।
কাজুবাদাম খাওয়ার নিয়ম
কাজুবাদাম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। প্রতিদিন কাজু বাদাম খেলে শরীরের বিভিন্ন উপকার হয়। তবে কাজুবাদাম খেয়ে যদি আপনি উপকৃত হতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই কাজুবাদাম খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। চলুন জেনে নিই কাজুবাদাম খাওয়ার সঠিক নিয়ম গুলো সম্পর্কে,
১) সরাসরি খাওয়া যায়
আপনি চাইলে সরাসরি কাজুবাদাম খেতে পারেন। শুধুমাত্র পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে সরাসরি কাজুবাদাম খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
২) ভাজি করে খাওয়া
কাজুবাদাম ভেজেও খাওয়া যায়। ভাজা কাজুবাদাম অনেক সুস্বাদ্য হয়। সাধারণত মানুষ কাজুবাদাম ভেজে খেয়ে থাকে।
৩) সালাদের সাথে মিশিয়ে
সালাদের সাথে কাজুবাদাম মিশ্রিত করলে সালাদের পুষ্টিগুণ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। পাশাপাশি সালাদ আরো অনেক বেশি সুস্বাদু হয়ে ওঠে। সালাদের স্বাদ ও স্বাস্থ্য গুণ আরো বৃদ্ধি করতে সালাদের সাথে কাজুবাদাম মিশ্রিত করে খেতে পারেন।
৪) বাটার তৈরি করে
খুবই অল্প পরিমাণে পানি মিশ্রিত করে কাজুবাদাম ব্লেন্ড করে বাটার তৈরি করতে পারেন। কাজুবাদাম বাটার স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। কাজুবাদাম দিয়ে বাটার তৈরি করলে সেই ভাটার আপনি বিভিন্ন ধরনের খাদ্য টেস্ট ইনহেন্সার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
৫) দইয়ের সাথে মিশ্রিত করে
দই এবং কাজু বাদাম দুইটাই প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি সমৃদ্ধ। দইয়ের সাথে যদি কাজুবাদাম একত্রে মিশ্রিত করে খান তাহলে আরো অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এবং স্বাস্থ্যসম্মত হয়ে ওঠে। আপনি চাইলে দইয়ের সাথে মিশ্রিত করে কাজুবাদাম খেতে পারেন।
৬) বিভিন্ন প্রকার খাবারের সাথে মিশ্রিত করে
বিভিন্ন প্রকার খাদ্য যেমন কোন ড্রিঙ্কস বা আইসক্রিমের সাথে মিশ্রিত করে কাজুবাদাম খেতে পারেন। কোল ড্রিংকস বা আইসক্রিমের সাথে কাজুবাদাম মিশ্রিত করলে স্বাদ বৃদ্ধি পায়। এছাড়া আরো অনেক খাবারের সাথে কাজুবাদাম মিশ্রিত করে খেতে পারেন।
কাঠ বাদামের উপকারিতা
বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ কাঠ বাদাম শরীরের জন্য বেশি উপকারী। নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে আপনি অনেক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। তাহলে চলুন জেনে নেই কাঠবাদামের উপকারিতা সম্পর্কে:
১) হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। আপনি যদি আপনার হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চান তাহলে নিয়মিত কাঠবাদাম খেতে পারেন।
২) পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ
কাঠবাদামে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে। নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে আমাদের শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান পাবে।
৩) ব্রেনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
কাঠবাদাম ব্রেনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে বেশ সাহায্য করে। আপনি যদি আপনার মস্তিষ্ককে আরো কর্মক্ষম করে তুলতে চান তাহলে নিয়মিত কাঠ বাদাম খেতে পারেন।
৪) অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
কাঠবাদাম রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি এক্সিডেন্ট। আপনি যদি নিয়মিত কাঠবাদাম খান তাহলে আপনার শরীর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।
৫) ওজন কমাতে সাহায্য করে
কাঠবাদামে থাকা পুষ্টি উপাদান অল্প কিছুদিনের মধ্যে আপনার শরীরে ওজন কমিয়ে দিতে পারে। তাই আপনি যদি ওজন কমাতে চান নিয়মিত কাঠ বাদাম খেতে পারেন।
৬) ত্বক ভালো রাখে
কাঠবাদামে যে সকল পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে সেগুলো আপনার ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। ত্বক ভালো রাখার জন্য নিয়মিত কাঠবাদাম খেতে পারেন।
৭) শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে
কাঠবাদাম শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি যদি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে থাকেন তাহলে নিয়মিত কাঠ বাদাম খেতে পারেন।
৮) ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে
কাঠবাদামে থাকা পুষ্টি কোন ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
৯) দাঁত ও হাড় মজবুত করে
আপনি যদি আপনার সন্তানের দাঁত ও হাড়কে মজবুত করতে চান তাহলে আপনার সন্তানকে নিয়মিত কাঠবাদাম খাওয়াতে পারেন।
১০) রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
কাঠবাদামের উপকারিতা সমূহের মাঝে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো এটি রক্তের কোলেস্টে
রলের মাত্রা কমায়।
কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম
কাঠবাদাম প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। নিয়মিত কাঠ বাদাম খেলে শরীর স্বাস্থ্য অনেক উন্নত হয়।তবে এই জন্য কাঠবাদাম খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে চলুন কাঠ বাদাম খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিই:
১)পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া
দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত। সাধারণত 10-15টি কাঠ বাদাম দিনের সাধারণ খাদ্য মত গ্রহণ করা হয়।
২)ভিজানো
কাঠ বাদাম খাওয়ার আগে তা সাধারণত পানিতে ভিজিয়ে রেখে দেওয়া হয়। ভিজিয়ে থাকা বাদামের গুণগত মান বেশি হয় এবং তা পাচনায় সহায়তা করে।
৩)মাখানো
কাঠ বাদাম খাওয়ার আগে সাধারণত তা মাখিয়ে নেয়া হয়। মাখানো বাদামের ছিদ্রান্ত পরিমাণ কমায় এবং তার পরিমাণিত গুণ বেশি হয়।
৪)নিয়মিতভাবে সাবধানে খাওয়া
কাঠ বাদাম খাওয়ার সময় নিয়মিতভাবে সাবধানে খাওয়া উচিত। কাঠ বাদাম সঠিকভাবে চিচিং করে খাওয়া উচিত যাতে স্বাস্থ্যকর হয়।
৫)স্বাস্থ্যকর উপাদানসমূহ সংগ্রহ করতে দেখানো উচিত
কাঠ বাদাম খাওয়ার সময় স্বাস্থ্যকর উপাদানসমূহ সংগ্রহ করতে দেখানো উচিত। বাদামে অনেক প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবার থাকে যা আপনার শরীরের পুষ্টিকর প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করে।
প্রতিদিন কয়টা কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত
প্রতিদিন কতটি কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত তা সাধারণত ব্যক্তিগত পছন্দ এবং স্বাস্থ্যস্থলের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন হতে পারে। তবে, সাধারণত মানদন্ড হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ৭-১০টি কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত বলা হয়।
সবশেষে
উপরোক্ত আলোচনা থেকে সহজেই বোঝা যায় কাঠবাদাম ও কাজুবাদাম আমাদের শরীর স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী। তবে অবশ্যই কাঠবাদাম ও কাজুবাদাম নিয়ম মেনে ও নির্দিষ্ট নিয়মে খেতে হবে। অতিরিক্ত কাঠবাদাম ও কাজুবাদাম খাওয়ার শরীরের পক্ষে মোটেও উপকারী নয়। তাই উপরের আলোচনায় বলা নিয়ম অনুযায়ী কাঠবাদাম ও কাজুবাদাম খাওয়ার চেষ্টা করবে। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে আপনি কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ
Also Read: গ্রিন টি এর উপকারিতা এবং অপকারিতা