দাবা খেলায় হারার ভয়ে বালকের আঙ্গুল ভেঙ্গে দিল রোবট!
এটা কোন কাল্পনিক সংবাদ শিরোনাম না। গত উনিশে জুলাই এই ঘটনা ঘটে রাশিয়ায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, মস্কো ওপেন দাবা প্রতিযোগিতায়, মানুষ ও রোবট সবাই অংশগ্রহণ করেছিল। সাত বছরের বালকের বিরুদ্ধে খেলতেছিল এক রোবট, খেলার একপর্যায়ে দেখা যায় বালক মাত্র আর এক চাল দিলেই জিতে যাবে। তখনই রোবট এক অদ্ভুত কান্ড করে বসে, তার ধাতব দিয়ে বালকের হাতে আঘাত করে এবং তার আঙ্গুল ভেঙ্গে দেয়। রোবট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্বীকার করেছে যে, হেরে যাবার ক্ষোভ থেকেই হিংসা করে রোবট বালকের আঙ্গুল ভেঙ্গে দিয়েছে।
অন্যদিকে, চ্যাট জিপিটি,মিড জার্নি,মেশিন লারনিং ও রোবট সোফিয়া এর কথা শুনে নাই, এমন মানুষ খুজে পাওয়া ভার।
এখন যদি আপনার মনে প্রশ্ন জাগে এ গুলির সাথে,কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কি সম্পর্ক?
তাহলে এক কথায় উত্তর, দাবা খেলার রোবট, চ্যাট জিপিটি, মিড জার্নি, টেসলার চালক বিহীন গাড়ি এরা সবই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ফলাফল।
আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি? ভবিষ্যতে কি মানুষের স্থান দখল করে নেবে কিনা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা? কিভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাত থেকে আপনার চাকরি বাঁচাবেন? এইসব প্রশ্নের উত্তর জানতে এই আর্টিকেলটা শেষ পর্যন্ত পড়ুন!
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি?
বইয়ের ভাষায় বলতে গেলে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো কম্পিউটার বা মেশিনের প্রোগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত সক্ষমতা, যা মানুষের বুদ্ধির সমতুল্য কিংবা আক্ষরিক অর্থে মানুষের মত। যা কাজ বা সমস্যার, বৈশিষ্ট্য অনুসন্ধান, সমস্যা সম্পাদন, এবং সমস্যার সামগ্রিক বিষয় বুঝে নিয়ে, সমস্যা বা কাজ সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ, তথ্য বিশ্লেষণ, ও নির্ধারণ করে, পরিশেষে সমাধানে সাহায্য করতে পারে।
বইয়ের কঠিন ভাষা সহজ করতে বলতেগেলে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হল কম্পিউটারের মানুষের অনুরুপ বুদ্ধিমত্তা (যা মানুষ সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে পেয়ে থাকে)। মানুষ শিখে অভিজ্ঞতা, বাস্তবতা ও বই পড়ে। আর কম্পিউটার কে শেখাতে ‘মেশিন লারনিং’প্রজুক্তির ব্যাবহার করা হয়। আর এই শিক্ষা প্রাকিতিক (ন্যাচারাল) না বলে একে বলা হয় কৃত্রিম (আর্টিফিশিয়াল) বুদ্ধিমত্তা, জাকে ইংরেজিতে আমরা AI (Artificial Intelligence) নামে জানি।
আর এই শিক্ষার পরিশেষেই হল যন্ত্র মেশিনের যন্ত্রাংশ থেকে মানুষের সহযোগী/ প্রতিযোগী কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি এক্সপার্ট সিস্টেম
“কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি এক্সপার্ট সিস্টেম“ মানে যে সিস্টেম কোনও বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যাপক জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন করে এবং সেই জ্ঞান এবং দক্ষতাকে ব্যবহার করে সিস্টেমে নির্ধারিত কাজ সম্পাদন করতে পারে, এবং মানুষের মত প্রতিনিয়ত কাজ করতে করতে আরও বেশি ডেটা বিশ্লেষণ করে শিখতে থাকে। এই ধরনের সিস্টেমে সাধারণ বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হয় না; প্রতিটি সমস্যা এবং সম্পাদনে ভিন্ন ভিন্ন ডেটা সেট দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
উদাহরণ সরুপ বলা যায়, চ্যাট জিপিটি হল প্রশ্ন-উত্তর এর জন্য এক্সপার্ট সিস্টেম কারণ এটিকে প্রচুর পরিমাণে টেক্সট বা লিখিত ডাটা দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে তাই মানুষের সাথে আলাপচারিতায় মানুষের মতো প্রশ্ন-উত্তর করতে পারে
অপরদিকে মিড জার্নি হল ভিজুয়াল (দৃশ্যমান) ডাটার এক্সপার্ট সিস্টেম, একে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় প্রচুর পরিমাণে বিখ্যাত শিল্পীদের চিত্রকলা ও বিভিন্ন বস্তুর ছবি দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাই একে দিয়ে যেকোনো প্রকারের ছবি বানানো যায় কিন্তু আলাপচারিতা করা যায় না।
এই সিস্টেমের আরও উদাহরণ হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট, অথবা চিকিৎসা ডায়গনোসিসের জন্য বিশেষ সিস্টেম এরা শুধু নিজেদের কাজগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাথে করতে পারে।
কম্পিউটারে সর্বপ্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাবহার
কম্পিউটারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহারের সূচনা হয় গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা” শব্দটি ১৯৫৬ সালের ডার্টমাউথ কনফারেন্সে প্রাস্তাবিত হয়, যা ছিল একটি গবেষণাপত্র, পরবর্তীতে একেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের আঁতুড়ঘর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৫০ ও ৬০ এর দশকে, এলান টুরিং এবং জন ম্যাককার্থি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তত্ত্বিক দিকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেন এবং তারাই সফল এআই প্রোগ্রাম তৈরি করেন। সমসামিয়িক অ্যালেন নিউয়েল এবং হারবার্ট এ. সাইমনের অবদানও ব্যাপক ছিল। তবে, এরও আগে এই নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছিলঃ
১৯৪৩ সালে, ওয়ারেন ম্যাককালক এবং ওয়াল্টার পিটস একটি নিউরাল নেটওয়ার্কের গণনার কম্পিউটার মডেল তৈরি করেন, একেই অনেকে কম্পিউটারে সর্বপ্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাবহার হিসাবে গণ্য করেন।
শুরুর দিকে এআই প্রোগ্রামগুলি অত্যন্ত মৌলিক ছিল,তবে বর্তমানে বেবহারিত এআই সিস্টেমগুলির সাথে তুলনায় ছিল অনেক সীমাবদ্ধ। বর্তমানে শক্তিশালী সুপার/ কোয়ান্টম কম্পিউটার, প্রয়োজনীয় ডেটাসেটের বাহুল্যতা, এবং উন্নত ইন্টারনেট সুবিধা মেশিন লার্নিং কে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
ফলস্রুতিতে বর্তমানে ফেসবুক, গুগল, অ্যামাজনের, টেসলা ও মাইক্রোসফট এর মত টেকজায়ান্টরা তাদের প্রতিটা প্রোডাক্টে ব্যাপক হারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উদাহরণ ও প্রয়োগ
আচ্ছা, আপনি কি কখনো লক্ষ্য করেছেন?
আপনি হয়তো কোনো কারণে গুগলে ‘পিৎজা’ নামে সার্চ দিয়েছেন অথবা আপনার বন্ধুর সাথে মেসেঞ্জারে ‘পিৎজা’ নিয়ে কথা বলেছেন। তার কিছুক্ষণ পরে ফেসবুকে গিয়ে দেখেন,আপনার নিউজ ফিড ভর্তি পিৎজা হাট, উবার ইটস ও অন্যান্য ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের বিজ্ঞাপন।
আপনার কি মনে হয়, ফেসবুক বা গুগল আপনার জন্য একজন কর্মী রেখেছেন?
যে কিনা সব সময় লক্ষ্য করে, আপনি কি সার্চ দিচ্ছেন বা বন্ধুর সাথে কি নিয়ে গল্প করছেন। এটা সম্ভব না, ফেসবুকের প্রায় ৩০০ কোটি ইউজার তাহলে কবেই তারা দেউলিয়া হত।
আসলেই এই কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত আমাদের ফলো করতেছে । কিন্তু এর জন্য তারা কোন কর্মী বসিয়ে রাখেনি! তাদের এই গোয়েন্দাগিরি কাজ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এলগোরিদম। আর এর মাধ্যমে নির্ধারণ হয় আপনার ফিরে কি জাতীয় বিজ্ঞাপন দেখানো হবে, বা আপনার ইউটিউব, টিকটক, টুইটার এ কি জাতীয় পোস্ট বা ভিডিও সাজেস্ট করা হবে।
এবার দেখে নেই, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কিছু প্রয়োগঃ
ব্যবসার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাবহার
ব্যবসা জগতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, এর সাহায্য আমরাঃ
- ডেটা বিশ্লেষণ: লাখ লাখ গ্রাহকের তথ্য থেকে সঠিক গ্রাহক খুজে বের করা।
- গ্রাহক সেবা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-প্রযুক্ত চ্যাটবট বা ভার্চুয়াল সহযোগীর দ্বারা গ্রাহককে দ্রুত উন্নত সেবা প্রদান করা সম্ভব, পাশাপাশি কল সেন্টার পরিচালনার টাকা সাশ্রয় হয়।
- ব্যবসায়িক ব্যবস্থাপনা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবসায়ের সকল ডেটা ইনপুট হিসাবে নিয়ে সেগুলি দ্রুত বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানের কর্মক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে, যে সেবা কোন বিজনেস কন্সাল্ট ফার্ম হতে অনেক টাকার বিনিময়য়ে নিতে হয়।
- অটোমোশনঃ ডেলিভারি , অয়ারহাউজ ম্যানেজমেন্টের মত জটিল কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট ব্যাপক কার্যকর ও সাশ্রয়ী।
যুদ্ধ ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাবহার
আধুনিক যুদ্ধের ধারণা ও কৌশল ব্যাপকভাবে পাল্টে দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার। এখন যুদ্ধ হয় হাজার হাজার মাইল দূরে থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ড্রোনের মাধ্যমে। আমেরিকা, ফ্রান্স ,ইরান ও রাশিয়া তাদের যুদ্ধ বিমানগুলোতে ব্যাপকভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করতেছে তাই এগুলো আরো কার্যকারী হয়ে উঠেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন মিশাইলগুলি শত্রুর অবস্থান ও ঘাঁটিতে প্রায় শতভাগ সফল হামলা করছে। সর্বশেষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কৃত্রিম সম্পন্ন রোবট এর ব্যবহার দেখা গিয়েছে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাবহার
চিকিৎসা ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়েছে, যা লাখো মানুষের নতুন জীবন ডান করছেঃ
- রোবোটিক শল্যচিকিৎসা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি রোবোটগুলি সার্জারি এবং অন্যান্য কঠিন শল্যচিকিৎসা কাজে সাহায্য করতে পারে, অনেক জটিল সূক্ষ্ম অপারেশনে মানুষের থেকেও ভালো ফলাফল করেছে।
- ডেটা বিশ্লেষণ এবং ডায়াগনোসিস: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি চিকিৎসকদের রোগীর আগের ডেটা বিশ্লেষণ এবং রোগের ডায়াগনোসিস করতে সাহায্য করছে। রিপোর্ট দেখে ক্যান্সার হার্ডের রোগ ধরতে প্রায় ৯৯% সময় সফল হয়েছে।
- রোগতত্ত্ব গবেষণা: চ্যাট জিপিটি রোগতত্ত্ব এতটাই অভিজ্ঞ হয়েছে যে পৃথিবীর অন্যতম কঠিন পরীক্ষাগুলোর একটি, আমেরিকার মেডিকেল প্রফেশনাল পরীক্ষায় অনেক ভালো মার্ক পেয়ে পাশ করেছে।
কৃষি ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাবহার
উন্নত বিশ্বে কৃষি ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা বেশ আগেই। দেখি কিভাবে সাহায্য করছে,
- কৃষি ডেটা এনালাইসিস: আগের বছেরের ডেটা বিশ্লেষণ করে সার প্রয়োগের উপযুক্ত সময় ,মাত্রা ও ফর্মুলা প্রদান করে, যেটি মানসম্পন্ন বেশি ফসল উৎপাদনে সাহায্য করে।
- ড্রোন ব্যবহার: ড্রোনগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কৃষকদের প্রতি মুহূর্তে ফসলের সার্বিক অবস্থা মনিটর করে, কোথায় ফসলের রোগ খুজে পেলে, বা সেচের প্রয়োজন হলে, জানিয়ে দেয়।
- জলবায়ু প্রযোবেক্ষ: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৃষকদের বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, এবং অন্যান্য জলবায়ু ডেটাগুলি গবেষণা ও বিশ্লেষণ করে নিয়মিত আপডেট দিয়ে থাকে, যা দেখে কৃষকেরা ফসল উপাদনের সঠিক সময় ও আরোহন এর সময় নির্ধারণ করতে পারেন।
- রোবট কৃষক: বেশিরভাগ বড় কৃষি ফার্ম গুলি তাদের ফসল উৎপাদনে প্রায় শতভাগ রোবট এর বেবহার শুরু করছে। কেননা এগুলি ২৪ ঘন্টা ফসলের মাঠে কাজ করতে পারে, ফসল বপন , পরিচর্যা ও সংগ্রহে বোবটগুলি অনেক দক্ষ হয়ে উঠেছে।
শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাবহার
শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাপক ভাবেই ভুমিকা রাখছে। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের শেখার পদ্ধতি দ্রুত ও উন্নত করছে যা তাদের গবেষণা প্রক্রিয়া তরান্নিত করছে।
- শিক্ষা পদ্ধতি বিশ্লেষণ: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিক্ষার ডেটা বিশ্লেষণে করে শিক্ষার সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এবং শিক্ষার্থীর ফলাফল নিরীক্ষণ করতে সাহায্য করে, যা শিক্ষার গুনগত মান সম্প্রসারণে সহায়তা করছে।
- শিক্ষার্থীর ভার্চুয়াল শিক্ষক: শিক্ষার্থীকে কোন বিষয় বুঝিয়ে দিতে , বাড়ির কাজ করতে প্রয়জনীয় তথ্য সংগ্রহে , ডেমো প্রশ্ন উত্তর তৈরী করতে দারুন ভাবে সাহায্য করে।
- গবেষণা প্রক্রিয়া সহযোগিতা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কে আই ত্রিপোলির মতো বিখ্যাত জার্নালে অনেকেই সহকারী গবেষক হিসাবে দেখিয়েছেন। গবেষণার কাজে ডেটা সংগ্রহ ,বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে এর জুড়ি মেলা ভার।
তবে এটি উন্নত বিশ্বে বিতর্কিত ইস্যুতে পরিনিত হয়েছে , কারণ অনেক ইউরোপীয় দেশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চ্যাট জিপিটি কে নিষিদ্ধ করেছে আবার অনেক দেশেই ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। তবে অনেকের আসংখা এটি মানুষের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব
কৃত্রিম বুদ্ধিমতা আধুনিক মানব সভ্যতার আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে , দৈনন্দিন প্রায় প্রতিটা কাজেই এর ছোয়া। আমাদের টেক শিল্প , চিকিৎসা , শিক্ষা , উৎপাদন , বিপণন , বিনোদন , বিজ্ঞাপন কোথায় নাই কৃত্রিম বুদ্ধিমতা। দুবাই এর মতো শহরে খাবার ডেলিভারি দিতেছে ড্রোন , চীনে চোর ধরতে কৃত্রিম বুদ্ধিমতা, মোবাইল গুলি আরো উন্নত হইতেছে , এমনকি আপনার ফোনের ক্যামেরাও কৃত্রিম বুদ্ধিমতা বেবহার করছে। আমরা ইতিমধ্যে দেখেছি যুদ্ধে মানুষ মারতে বা চিকিৎসায় মানুষের প্রাণ বাঁচাতে , উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপক ভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমতা ব্যবহার হইতেছে। আর কেবল এর শুরু হয়েছে, কেননা কৃত্রিম বুদ্ধিমতা তার শৈশবেই আছে, দিনে দিনে এটি আরও পরিনিত হবে।
তাই, কৃত্রিম বুদ্ধিমতার অনেক ভালো ভালো কাজের মধ্যেও মানুষের একটা শঙ্কা দেখা দিয়েছি , তার তা হলো কোথায় যাচ্ছে আমাদের ভবিষ্যত পৃথিবী , কৃত্রিম বুদ্ধিমতা কি মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি মানুষের জায়গা দখল করে নিবে?
না!, আমার মনে হয় না, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতে মানুষকে ছারিয়ে যাবে। এটা শুধু আমার মত না, এর পক্ষে অনেক বড় গবেষক মত দিয়েছে, কেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষকে ছারিয়ে জেতে পারবে নাঃ
উদ্ভাবন আর চিন্তার ক্ষমতা
এটি একমাত্র মানুষেই করতে পারে, কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তাকে ট্রেইন দেওয়া ডেটার বাইরে তেমন নতুন কিছু আবিষ্কার বা চিন্তা করতে পারে না। ব্যাপক আকারে গবেষণা চিন্তা , বিশ্লেষণ , পরিমার্জন , সম্পাদন এর কাজগুলি কেবল মানুষের দাঁড়ায় সম্ভব। তাই মানুষ প্রথমে গাড়ি কিভাবে তৈরী করতে হয় তা আবিষ্কার করছে , আর রোবট এখন মানুষের শিখিয়ে দেওয়া উপায়ে সুন্দরভাবে গাড়ি এসেম্বল করতে পারে , কিন্তু নতুন কোন পদ্দ্বতিতে গাড়ি বানানোর ক্ষমতা তার নাই।
ভালো – মন্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এই জাতীয় অবস্থায় তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া ডেটা বা এলগোরিদম এর সাহায্য সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু মানুষ পরিস্থিতি বিবেচনা করে , ভালো মন্দ বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। হাস্যকর হলেও সত্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কেবল মাত্র ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারে , কিন্তু তার ইচ্ছে করলেও খারাপ সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা নাই।
জটিল সমস্যা সমাধান
ছোট ছোট গতানুগতিক সমস্যা সমাধান করতে পারলেও , কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জটিল সমস্যালগুলি সমাধান করতে পারে না। তাই হয়তো খেয়াল করেছেন , চ্যাট জিপিটি তে সব সোমবার সমাধান পাওয়া যায় না , সে অসহায়ের হয়ে বলে , “আমি একটি মেশিন লার্নিং ল্যাংগুয়েজ মডেল মাত্র , এই সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা আমার নাই ”
মানুষের সামাজিক জীবন
মানুষ একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে চিন্তা , শিক্ষা , ভালো , মন্দ বিনিময় করতে পারে। প্রজম্ম থেকে প্রজন্মে জ্ঞান-বিজ্ঞান ধারা রেখে যেতে পারে। অপরদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিঃসঙ্গ, সীমাবদ্ধ ও কেবল এক ভার্চুয়াল মডেল মাত্র। তাই সভ্যতায় ব্যাপকভাবে ক্ষতি বা উপকারের ক্ষমতা এর সীমাবন্ধ।
এটা একটা টুল মাত্র, বিকল্প নয়
মানুষ ভারী জিনিসের জন্য গড়াই বেবহার করে , দ্রুত যেতে প্লেন বেবহার করে , পানিতে চলে নৌকা , ঠিক এদের মতোই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাও একটি তুলে মাত্র। এটি মানুষের সহযোগী হতে পারে , কিন্তু বিকল্প হবার কোন ক্ষমতা নাই।
পরিশেষে , তবুও আমাদের কিছুটা সতর্ক হতে হবে , কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এর উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নয়তো , শুরুর রাশিয়ার বালকের মত হুমকিতে পড়তে হতে পারে।
কিভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাত থেকে আপনার চাকরি বাঁচাবেন?
সম্প্রতি টেক জয়েন্টগুলো ব্যাপক আকারে কর্মী ছাঁটাই করেছে এমাজন ,ফেসবুক, টুইটার, মাইক্রোসফট বা গুগল, সবাই প্রায় ১৫ থেকে ৩০% কর্মী ছাটাই করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলি নিজেদের করোনা পরবর্তী অথনৈতিক অবস্থা এর জন্য দায়ী করলেও , অনেক এক্সপার্ট এর বিশ্বাস এইসব প্রতিষ্ঠান ব্যাপক আকারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এর ব্যাবহার করছে মানুষের বদলে।
বিশ্লেষণে গেছে , যারা একই ধরনের রিপিটিভে জব করত তাদের জব গিয়েছে , কিন্তু যারা প্রোগ্রামমার , মার্কেট এনালাইটিক্স ও ক্রিয়েটিভ কাজে আছে তাদের আরো চাহিদা বেড়েছে। তাই বলা যায়, যারা মানুষ হয়ে মেশিনের মত কাজ করে তাদের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অবশই হুমকি।
১০০ বছর আগে যখন প্রথম ব্যাপক ভাবে গাড়ির ব্যাবহার শুরু হয় অনেক ঘোড়ার গাড়ির চালক বেকার হয় , কিন্তু যারা দ্রুত মোটর গাড়ি চালানো শিখে তারা বেকারত্ব থেকে মুক্তি পায়। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়তো কিছু ক্ষেত্রে জব কেড়ে নিবে , তেমন আরো অনেক নতুন জবের ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে।
তাই বলা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আপনার চাকরি না খেলেও , কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাবহার করে এমন কেউ আপনার চাকরি খেয়ে নিতে পারে।
তাই আমাদের উচিৎ নিয়িমিত নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কে ব্যাবহার করা।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মানুষের সহবস্থান
ভবিষ্যতের পৃথিবীতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়তো মানুষের জায়গা দখল করবে না , কিন্তু ঠিকই মানুষের পাসে শিক্ষায়-গবেষণায় সহযোগী হিসাবে একে দেখা যাবে। আর তার মাধ্যমে আমাদের মানব সভ্যতা তার সর্বাধিক উন্নতি দেখবে। ভারী কঠিন গনানুগতিক কাজগুলি থাকবে রোবটের হাতে , তারা ক্রীতদাসের মতো খাটবে , আর মানুষ তার ক্রিয়েটিভ চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞান , গবেষণায় আরো নতুন দুয়ার খুলে আনবে। মানুষের জয়জয়কার ছড়িয়ে যাবে , গ্রহ হতে গ্রহান্তরে।
শেষ করবো মহান পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিভেন হকিং এর বিখ্যাত উক্তি দিয়ে ,
“কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়তো মানব সভ্যতার সবচাইতে বিখ্যাত কিংবা কুখ্যাত আবিষ্কার!” __ স্টিভেন হকিং, পদার্থ বিজ্ঞানী
তাই আমাদের মানুষকেই নির্ধারণ করতে হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কে আমরা কতটুকু ব্যবহার করব বা কতুটুকু স্বাধীনতা দিবো।
আরো পড়ুন –