Dreamy Media BD

গোপালগঞ্জের দর্শনীয় স্থান

বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্স

গোপালগঞ্জ জেলাটি বিল ঝিল ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সুশোভিত একটি জেলা এবং এখানে রয়েছে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য। গোপালগঞ্জে রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান তার মধ্যে ৫টি সুপরিচিত স্থান হলো বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্স, জমিদার গিরিশচন্দ্র সেন এর বাড়ি, মধুমতি নদী, উলিপুর জমিদার বাড়ি এবং লাল পদ্মবিলসহ আরও অনেক ভ্রমণের স্থান। 

 প্রধানমন্ত্রীর জন্মস্থান হওয়ায় গোপালগঞ্জ জেলাকে আমরা কম বেশি সকলেই চিনি। কিন্তু গোপালগঞ্জের থাকা দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। তাই ভ্রমণ পিপাসু এবং দর্শনার্থীদের জন্য গোপালগঞ্জের সেরা পাঁচটি দর্শনীয় স্থান এবং ভ্রমণের গাইড লাইন নিয়ে আমার আজকের এই লেখা।

বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্স

গোপালগঞ্জ শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টুঙ্গিপাড়া গ্রাম। বীর বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালে মার্চ মাসের ১৭ তারিখ গোপালগঞ্জের এই টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের আগস্টের ১৫ তারিখ সংগ্রামী জীবনের অবসান ঘটে ঘাতকের বুলেটে এবং মা-বাবার কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হয়। 

এর পর থেকেই টুঙ্গিপাড়া বদলে গেছে। দেশ বিদেশ থেকে প্রতিনিয়ত প্রায় ৫ হাজারের ও বেশি মানুষ টুঙ্গিপাড়া আসেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। টঙ্গীপাড়ার বাইগারন দীর তীরে নির্মিত হয়েছে এ সমাধিসৌধ। স্থাপত্য শিল্পের আদলে সাদা-কালো টাইলস এবং লাল সিরামিক ইট দিয়ে সৌধের কারুকার্য নির্মিত হয়েছে যা এক বেদনার চিহ্ন বহন করে।

কমপ্লেক্সের সামনের উদ্দ্যান পাড় হলেই চোখে পড়ে বঙ্গবন্ধুর কবর এবং পাশেই রয়েছে তার মা-বাবার কবর। এক গম্বুজ বিশিষ্ট সমাধি সৌধের ওপর দেয়ালে রয়েছে জাফরি কাটা আর এই জাফরি কাটা ভেদ করেই সূর্যের এসে পোঁছায়। তিনটি কবরই রেলিং দিয়ে ঘিরে রাখা আছে।

এখানে রয়েছে একটি পাঠাগার ও একটি জাদুঘর। পাঠাগারে প্রায় ৬ হাজার বই রয়েছে যেগুলো বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার লেখা। আরও রয়েছে প্রদর্শনী কেন্দ্র, উন্মুক্ত মঞ্চ,গবেষণা কেন্দ্র,পাবলিক প্লাজা, প্রশাসনিক ভবন ইত্যাদি। 

সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত প্রতি নিয়ত সমাধি সৌধ খোলা থাকে এবং সকাল নয়টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পাঠাগার খোলা থাকে। আপনি চাইলে যে-কোনো সময় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ দেখে আসতে পারেন এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি আত্মার মাগফেরাত কামনা করতে পারেন।

 জমিদার গিরিশচন্দ্র সেন এর বাড়ি

জমিদার গিরিশচন্দ্র সেনকে, গিরিশচন্দ্র সেন নামে বেশির ভাগ মুসলিম চিনে থাকেন। কারন তিনি সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনের বাংলা অনুবাদসহ এবং আরও অনেক ইসলাম ধর্মের গন্থের অনুবাদ করেন। আবার এই ধর্ম নিয়ে অনেক রিসার্চ ও করেছেন।

যাইহোক, গোপালগঞ্জ জেলার ভাটিয়াপাড়া থেকে এক কিলোমিটার উত্তরে ছোট কাঁচা রাস্তা ধরে জমিদার গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়িতে যেতে হয়। এবাড়িটি কবে নাগাদ তৈরি হয়েছে তা এখনো সঠিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি। জমিদার গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়িটি মধুমতি নদীর তীরে অবস্থিত। 

ভাটিয়া থেকে মধুমতি নদীর পূর্ব পাড় দিয়ে একটু সামনে এগুলো চোখে পড়বে বাম পাশে জমিদার গিরিশচন্দ্র সেনের বাড়ি। বাড়িতে নির্মাণ কাজ ছিল ইংরেজি “U” আকৃতির এবং দক্ষিণমুখী, যার নকশা সেকালে সবার কাছে দৃষ্টিনন্দন ছিল এবং নজরকারা ছিলো। জমিদার বাড়ি সাদা রঙের বাহারি নকশা খচিত এবং প্রাচীর বেষ্টনী দিয়ে ঘেরা ছিলো।

এ জমিদার বাড়ির এক পাশে ছিল একতলা ভবন বিশিষ্ট মন্দির এবং অন্য পাশে ছিল ছনের ছাউনি দিয়ে তৈরি কাচারিঘর। আর এই বাড়িটির মাঝখানের অংশে ছিলো দুইতলা ভবন এবং তার দুই পাশে ছিলো একতলা বিশিষ্ট দুইটি ভবন।

জমিদার বাড়িতে ছিলো আরও ছিলো একটি বৃহৎ আকার শান বাঁধানো পুকুর। এ পুকুরটি জমিদার পরিবার ব্যবহার করলেও এলাকার জনগনের জন্যও উন্মুক্ত ছিলো। আর চার পাশে ছিলো বাহারি রকমের ফল ও ফুল গাছের সারি।

তবে বর্তমানে জমিদার বাড়িটিতে বসবাস করছেন এম.এ খালেক ডিগ্রী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ।

মধুমতি নদী গোপালগঞ্জ

গল্প গানে এবং কথায় আমরা অনেক সময় মধুমতি নদী নাম শুনেছি বটে তবে কোথায় এ মধুমতি নদী আর কি বা তার রহস্য তা আমরা অনেকেই জানি না। তবে আজকে জানুন মধুমতী নদীর রহস্য।

বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে মধুমতী নদী প্রবাহমান। এটি গোপালগঞ্জ, মাগুরা, নড়াইল, ফরিদপুর ও বাগেরহাটে জেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর উৎপত্তি স্থল হলো মাগুরা জেলার নাকোল ইউনিয়নের গড়াই নদী। এই নদী গঙ্গা নদীর বাংলাদেশের অংশের প্রধান শাখা। এর দৈঘ্য ১৩৭-১৭০ কিঃমি এবং প্রস্থ ৪০৮-৫০০ মিটার আর এর গভীরতার গড় ১০.৫ মিটার।

 শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ কিছুটা কম থাকলেও বর্ষার পানিতে নদী থাকে ভরপুর এবং এমনও হয় যে দুই কূল উপচে বন্যার আকার ধারন করে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি পানি প্রবাহিত হয় এ নদীতে।

মধুমতী নদীতে একসময় স্টিমার চলতো কিন্তু এখন পানির নাব্যতা কমে যাওয়া স্টিমার চলাচল বন্ধ তবে প্রায় সারাবছর ছোট নৌকা, বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকা এমনি লঞ্চ ও নির্বিঘ্নে চলাচল করে। আপনি চাইলে মধুমতীতে এসে নৌভ্রমণেও অংশ নিতে পারেন।

 নদীর স্বচ্ছ পানি ও এর ঢেউ আপনাকে করে তুলবে মুগ্ধ। তাছাড়া বিষন্ন মনে নদী পাড়ে কিছুক্ষণ বসে থাকলে প্রকৃতি ছোয়ার মনটা এমনিতেই হালকা হয়ে যায়।তাই আমি বলব মধুমতি শুধু গানের কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না স্ব শরীরে দেখে আপনার ভ্রমণ পিপাসু মনকে সতেজ রাখুন।

উলিপুর জমিদার বাড়ি গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জের উলিপুর গ্রামে অবস্থিত প্রাচীন বাংলার আভিজাত্যের প্রতিক উলিপুর জমিদার বাড়ি। গোপালগঞ্জ শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলেই যেতে পারবেন উলিপুর গ্রামে। বিভিন্ন দার্শনীক এবং ঐতিহাসিকদের মতে প্রায় উনিশশো শতকে জমিদার প্রতিশচন্দ্র রায় চৌধুরী এ জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। 

প্রায় ২০০ একর জায়গা জুড়ি নির্মিত এ সুবিশাল জমিদার বাড়ি এবং এখানকার জমিদারেরা ১০০ ঘর শরীক ছিলেন। সময়ে পরিবর্তনে সেই জাঁকজমকপূর্ণ জমিদার বাড়িটি বিলীন হলেও ঐতিহাসিক নির্দশর্ন হিসেবে তৎকালীন জমিদারের প্রতিষ্ঠা করা এ জমিদার বাড়ির ভবন গুলো এখনো স্বগর্বে দাড়িয়ে আছে। 

উলিপুর জমিদার বাড়ির ৮০ শতাংশ স্থাপনা প্রায় ধ্বংস হয়েছে। তবে এখানকার বেশ কয়েকটি ভবন বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রুপে সচল আছে। তার মধ্যে স্বাস্থ্য কেন্দ্র, সাব পোস্ট অফিস, পুরনো ইউনিয়ন বোর্ড অফিস, সরকারি শিশু সদন এবং উলিপুর তহশীল অফিস। এর মধ্যে কেবলমাত্র উলিপুর পি পি হাই স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত ভবনটি ভালো আছে।

লাল পদ্মবিল গোপালগঞ্জ  

পদ্ম পরিচিত নাম হচ্ছে শাপলা যাকে জলস ফুলের রানী বলা হয়। প্রাকৃতিক ভাবেই জন্ম নেয় এসব পদ্মফুল বিভিন্ন বিলে,ঝিলে ও নদীতে। এ ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়া খুব সাধারণ বিষয়। এমন কোন মানুষ পাওয়া কঠিন যে পদ্মফুলকে ভালোবাসে না।

এই পদ্ম ফুল গোপালগঞ্জের সৌন্দর্যকে হাজার গুন বাড়িয়ে তুলেছে এবং বাড়িয়ে তুলেছে বিলের সৌন্দর্য ও চারপাশের পরিবেশের কাঠামো। দূর থেকে পদ্ম ফুলের এই রুপ দেখলে মনে হবে কেউ যেন ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে। আর দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য দর্শনার্থীরা এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে ভিড় জমা করে এখানে। 

শুধু একটি বিল নয় পুরো গোপালগঞ্জ জেলার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এরকম অসংখ্য পদ্ম ফুলের বিল। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বলাকইড় বিল। এই বলাকইড় পদ্মবিলটি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় অবস্থিত। গোপালগঞ্জ শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই দেখা মিলবে এ অসম্ভব সৌন্দর্যময় পদ্ম বিলের। ১৯৮৮ সালের বন্যার পর থেকে প্রতি বছর বর্ষাকালে এই বিলের অধিকাংশ জমিতে প্রাকৃতিকভাবে লাল,গোলাপি এবং সাদা পদ্ম ফুল জন্ম নেয়।

ফুলের রং গোলাপি এবং লাল হওয়ায় দূর থেকে দেখতে অনেকটা লাল বর্ণেরই মনে হয়। এজন্য এ বিলকে সবাই লালপদ্ম বিল বলে থাকেন। বর্ষা মৌসুমী যেদিকেই চোখ যায় শুধু পদ্ম আর পদ্ম, পুরো এলাকাটি জুড়ে গোলাপের রঙের পদ্ম ফুলের বাহার দেখলে মন ও চোখ জুড়িয়ে যায়। 

প্রকৃতির এরকম অপরূপ দৃশ্য যারা একবার দর্শন করেছে, প্রকৃতি তাদের বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তাই গোপালগঞ্জ আসলে এই পদ্ম বিলটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভুলবেন না।

 উজানী রাজবাড়ী গোপালগঞ্জ 

মহারানী ভিক্টোরিয়ার সময় উপনিবেশিক আমলে, যশোর থেকে দুজন জমিদার বংশধর গোপালগঞ্জ জেলা এসে বসতি স্থাপন কর। তাদের একজনের নাম রায় গোবিন্দ ও অন্যজনের নাম সুরনারায়ন। তারা মাকসুদপুরে তাদের বসতি স্থাপন করার পরে তেলিহাটি পরগনা নিয়ে তারা জমিদারি শুরু করেন। 

তবে তাদের এই তেলিহাটি পরগনাটি ছিল পত্তনীভূমি। সেই সুবাদে জমিদারদের বসতের জন্য দালান বাড়ি নির্মাণ হয় আর সেই বাড়ি এখন উজানী রাজবাড়ী নামে পরিচিত। তাদের আরো কিছু নির্মাণ কাজের মধ্যে রয়েছে বৈঠকখানা, শান বাঁধানো ঘাট, সমাধি মোট, মন্দিরসহ আরও অনেক ভবন।

সমরেন্দ্র রায় ছিলেন জমিদার সুর নারায়ণের প্রোপৌত্র। দেশ বিভক্তের পর এবং যখন জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হয় তখন অনেক জমিদাররা ভারতে চলে যান। তবে তিনি তার পৈতৃক নিবাস ও তাদের স্মৃতিচিহ্ন ছেড়ে যান নি। তিনি বলেন, সেই সময়ের প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর এলাকা নিয়ে তাদের জমিদারী ছিলো এবং বর্তমানেও এসব এলাকায় তাদের কিছু স্থাপনা দৃশ্যমান হয়ে আছে। 

উজানী রাজবাড়ীটির প্রাচীন আমলের নির্মিত মঠটির ছাদ ভেঙ্গে পড়েছে অনেক আগেই। তাছাড়া স্থানীয় লোকজনসহ আরও বেশ কিছু এলাকার মানুষ গুপ্তধনের আশায় অনেক খোড়াখুড়ি এবং ভাংচুর করে মঠটিকে প্রায় বিলীন করে ফেলেছে। এবং মাটি থেকে প্রায় ৩০ হাত নিচে দেবে গেছে মঠটি। তাছাড়া এই জমিদার বাড়ির কালীমন্দিরটিরও একই দশা, এই মন্দিরের কষ্টিপাথরের কালী মূর্তিটি অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। 

সুদীর্ঘ দিন ধরে এগুলোর কোনো সংস্করণ না হওয়ায় উজানী রাজবাড়ীর বিভিন্ন নির্মান ও স্থাপনা এগুলো এখন বিলুপ্ত প্রায়।তবে জমিদারের জমিদারি এবং জমিদারগণ না থাকলেও তাদের এসব স্থাপনা এখনো আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ঠিকিয়ে রেখেছে। তারা আমাদের এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য রেখেছেন তার ইতিহাস ও সভ্যতার নির্মাণ।

শেখ রাসেল শিশু পার্ক 

শেখ রাসেল শিশু পার্কটি মধুমতী নদীর তীরে টংঙ্গীপাড়ায় অবস্থিত। মূলত এই পার্কটি একটি পারিবারিক বিনোদনের জন্য সুব্যবস্থাপূর্ন পার্ক। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকল বয়সের মানুষ এখানে সমানভাবে বিনোদন নিতে পারেন। দৃষ্টিনন্দন এবং চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে গড়ে উঠা এ পার্কে বিনোদন নিতে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে জমায়েত হোন, সেই সাথে পার্কটিও সতেজও মুখর হয়ে উঠে।

এই পার্কটি প্রায় ৫ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত। এখানে মেরীগো রাউন্ড মাল্টি স্লাইড, ওয়ান্ডার হুইল, প্যাডেল বোর্ড, স্প্রিং কার, ফ্লাইবাই এবং দোলনাসহ প্রায় ১৪টির ও অধিক আকর্ষনীয় রাইড রয়েছে। 

শেখ রাসেল শিশু পার্কটি প্রতিদিন সকাল ৯টা – বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এবং প্রবেশ ফি মাত্র ১০ টাকা জনপ্রতি।

বধ্যভূমি স্মৃতি সৌধ

গোপালগঞ্জের সদর উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ৭১ এর বধ্যভূমি বা জয়বাংলা পুকুর হলো এলাকাবাসীর এক স্মৃতিময় স্থান। অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষ এই বধ্যভুমিতে আত্মনহুতি দিয়েছিলেন। পাকবাহিনীরা এ বধ্যভুমির নাম দিয়েছিলো জয়বাংলা পুকুর। কারন বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করত এবং মৃত দেহ টেনে হেচড়ে এই বধ্যভূমিতে ফেলে তারা জয় উল্লাস করত।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাঙালিদের প্রথম বিজয় দিবস উপলক্ষে এখানে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মিত হয় এবং এক কুচক্রী দল সেটাকে ধ্বংস করে ফেলে। এরপর, দীর্ঘ চেষ্টার অবসান ঘটিয়ে ১৯৯০ সালের ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয় এবং ৩ জন বিশেষ ব্যক্তির অবদানে এই স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হয়। তারা হলেন, আলহাজ্ব সাইদুর রহমান (চানমিয়া), মাননীয় জেলা প্রশাসক জনাব সা জ ম আকরামুজ্জামান এবং সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মো: সাইফুল ইসলাম।

মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও আত্নহুতির এই বধ্যভূমি বাঙালীদের জন্য সত্যি এক অসামান্য স্মৃতিচারন করে।

ঢাকা থেকে কিভাবে যাবেন গোপালগঞ্জ?

রাজধানী ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ যেতে হলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে সায়দাবাদ ও গাবতলী কাউন্টারে। সায়দাবাদ থেকে কয়েক প্রকার পরিবহন গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্য রওনা হয়। যেমন দোলা পরিবহন, বনফুল পরিবহন, মধুমতী পরিবহন ইত্যাদি। এসব গুলো বাস মুন্সিগঞ্জ ও মাওয়া হয়ে গোপালগঞ্জ যায় এবং সর্বনিম্ন ভাড়া হচ্ছে ২০০ টাকা।

ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ বাসের সময়সূচী 

প্রতিটি পরিবহন তাদের নিজস্ব সময় সূচি মেনে চলে। তাই ভ্রমন প্রিয় যাত্রীদের সুবিধার জন্য আমি ঢাকা টু গোপালগঞ্জ রুটের কয়েকটি বাসের সময়সূচি নিচে টেবিল আকারে প্রদান করলাম।

বাসের নাম ঢাকা থেকে ছাড়ার সময় গোপালগঞ্জ পোছানোর সময় বাসের ধরন
কম্ফোর্ট লাইন সকাল ৬ টা ১০ মিনিট  সকাল ১০ টা ৫৫ মিনিট  নন এসি বাস
টঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস  সকাল ৬টা ১০ মিনিট দুপুর ১২টা ২০ মিনিট এসি বাস
দোলা পরিবহন সকাল ৭টা ১০ মিনিট দুপুর ১২টা ১০ মিনিট ননএসি বাস
কোটালীপাড়া স্টার লাইন সকাল ৭ টা ৪৫ মিনিট দপুর ১টা ৪৫ মিনিট নন এসি বাস
ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ এসি বাসের ভাড়া 

আমরা অনেকেই জানি যে সাধারন বাসের তুলনায় এসি বাসের ভাড়া সব সময় বেশি হয়ে থাকে। কেননা এসি বাসের সুযোগ সুবিধা সাধারণ বাসের তুলনায় কিছুটা ভিন্নতরো হয় এবং যা উন্নতমানের। এসব বাসে ভ্রমন করা খুব আরামদায়ক এবং নিরাপদ। যা একজন যাত্রীর ভ্রমণকে করে তোলে স্মরনীয়। তাই ভ্রমণ প্রিয় যাত্রীদের ঝামেলা এড়াতে এসি বাসের ভাড়া নিম্নে আলোচনা করা হলো।

বাসের নাম রুট ভাড়া
কম্ফোর্ট লাইন ঢাকা টু গোপালগঞ্জ  ৫০০ টাকা
সাইন্ট মার্টিন হুন্দাই  ঢাকা টু গোপালগঞ্জ ১২০০ টাকা
টুংগীপাড়া এক্সপ্রেস  ঢাকা টু গোপালগঞ্জ ৬৫০ টাকা
ঢাকা টু গোপালগঞ্জ নন এসি বাসের ভাড়া 

সাধ্যের মধ্যে ননএসি বাসে ঢাকা টু গোপালগঞ্জ রুটে চলাচল করলে আপনি বেশ কয়েকটি বাস পাবেন যাদের ভাড়া খুব সাশ্রয়ী মূল্যের। এতে করে আপনি আপনার বাজেটের ভিতরে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ ভ্রমন করে আসতে পারবেন। তাই এ রুটে পরিচালিত কয়েকটি বাসের আপডেট ভাড়া নিচে প্রদান করা হলো। যাতে করে আপনার ভ্রমণটা সহজ ও নিরাপদ হয়।

বাসের নাম রুট ভাড়া
কম্ফোর্ট লাইন ঢাকা টু গোপালগঞ্জ  ৪০০ টাকা
টঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস  ঢাকা টু গোপালগঞ্জ ৪০০ টাকা
দোলা পরিবহন ঢাকা টু গোপালগঞ্জ ৩৮০ টাকা
কোটালীপাড়া স্টার লাইন ঢাকা টু গোপালগঞ্জ  ৪০০ টাকা
ঢাকা টু গোপালগঞ্জ অনলাইন বাস টিকিট 

আপনি নিশ্চয় জেনে থাকবেন যে বর্তমানে বাসের টিকিটের জন্য আর কাউন্টারে যেতে হয় না। অনলাইনে ঘরে বসে বাসের টিকেট বুক করা যায়। প্রায় সব ধরনের পরিবহনে আপনি অনলাইনে বাসের টিকেট বুক করার মত একটি সুবিধা পেয়ে থাকবেন। 

এই প্রসেসটি অনেকটা সময় সাশ্রয়ী, নিরাপদ এবং ঝামেলা মুক্ত হওয়ায় অনলাইনে বাস টিকেট বুকিং প্রসেসটি খুব জনপ্রিয়

কিভাবে অনলাইনে বাসের টিকিট বুক করতে হয় তা আমি সংক্ষেপে আলোচনা করছি। এর জন্য আপনাকে কয়েকটি প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হবে সেগুলো হল: 

  •     প্রথমে আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত বাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হব। 
  •  এরপর আপনার গন্তব্য স্থান লিখে সার্চ করতে হবে।
  • এরপর আপনার যাত্রার সময় ও তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
  •  এখান থেকে আপনি আপনার কাঙ্খিত বাসের সিট সিলেক্ট করবেন।
  •     তারপর আপনি অনলাইনে পেমেন্ট করতে পারবেন আপনার টিকিটের মূল্য। আপনি মোবাইল ব্যাংকিং অথবা ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, কিংবা বিকাশ পেমেন্টসহ আরও অন্যান্য উপায়েও টিকিটের মূল্য পরিশোধ করতে পারেন।
  • এরপর আপনার পেমেন্ট প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে, আপনার মোবাইলে একটি এসএমএস পাবেন।

 পরবর্তীতে আপনার সুবিধামতো টিকিটটি ডাউনলোড করে অথবা ফটোকপি করে নিতে পারে। যাত্রার সময় যেটি আপনার সঙ্গে থাকা আবশ্যক।

গোপালগঞ্জে কোথায় থাকবেন এবং কি খাবেন?

কম বাজেটের ভিতরে থাকতে চাইলে টুঙ্গিপাড়াতে থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার সর্বনিম্ন ভাড়া ২০০ থেকে সর্বচ্চো ১৮০০ টাকা লাগতে পারে।

মানসম্মত পরিবেশে থাকার জন্য গোপালগঞ্জ শহরে অনেক ভালো ভালো হোটেল আছে। আপনি চাইলে আপনার পছন্দমত হোটেল বেছে নিতে পারেন। আপনার সুবিধার্থে নিচে হোটেলের লিস্ট ও যোগাযোগ নাম্বার, ঠিকানাসহ প্রদান করছি।

হোটেল নাম পরিচালনাকারীর নাম ঠিকানা মোবাইল নং
হোটেল পার্ক মোকলেচুর রহমান আলিয়ামাদ্রাসা রোড, গোপালগঞ্জ ০১৭১৬৬৯৯৭৫০
সম্পা হোটেল মো: ছবুর মোল্লা চৌরঙ্গী রোড, গোপালগঞ্জ। ০১৭১২৬০১২৯১ 
হোটেল লুচি তারা মিঞা       চৌরঙ্গী রোড, গোপালগঞ্জ ০১৭১৭৭৫৩১৭৫
জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, জনাব হীরু শেখ গোপালগঞ্জ সদর ০৬৬৮৬১২০৪
মৌসুমী আবাসিক হোটেল মো: তোফাজ্জেল করিম সিকদার লঞ্চঘাট, গোপালগঞ্জ ০১৭৬২৩৪১০১৪
হোটেল রিফাত  জনাব হাসমত আলী সিকদার চন্নু চৌরঙ্গী গোপালগঞ্জ। ০২-৬৬৮৫৬২৪
হোটেল সোহাগ জনাব সোহরাব হোসেন পোষ্ট অফিস রোড, গোপালগঞ্জ ০৬৬৮-৬১৭৪০

খাবারের জন্য আপনাকে কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না। কারন গোপালগঞ্জের যেকোনো হোটেলে থাকলে ওখানেই আপনি ভালো মানের খাবার পাবেন। তাছাড়া এ জেলার সর্বত্তই পর্যাপ্ত খাবারের ছোট বড় অনেক হোটেল রয়েছে।

সর্বপরি

শ্রদ্ধেয় ভ্রমনপ্রিয় বন্ধুগণ, গোপালগঞ্জ জেলায় ভ্রমনের যাবতীয় গাইডলাইন ও প্রয়োজনীয় তথ্য আমরা প্রদান করেছি যাতে আপনি একটি আনন্দ মূখর ভ্রমণ করতে পারেন নিরাপদের সাথে। হাতে কিছু সময় নিয়ে বের হলো গোপালগঞ্জের প্রায় সবকয়টি জায়গা একই সাথে ভ্রমণ করে আসতে পারবেন।

 যদি আরোও কোনো তথ্য জানার থাকে, অবশ্যই কমেন্ট বক্সে আমাদের জিজ্ঞেস করতে ভুলবেন না। যতদ্রুত সম্ভব আমরা আপনার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। সুস্থ থাকুন এবং নিরাপদে ভ্রমণ করুন।

আরো পড়ুন –

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents