জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
শরীরের তাপমাত্রা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় তখন তাকে সাধারণত আমরা জ্বর বলে থাকি। শরীরের তাপমাত্রা যখন ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর বেশি চলে যায় তখন তাকে জ্বর বলা হয়। শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির আগে কিছু সাধারণ লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
যেমন: শরীর খুব ক্লান্ত লাগে, চোখ দিয়ে পানি পড়ে, মাথা ব্যথা হয়, শরীরে ব্যথা অনুভব হয় ইত্যাদি। শিশুদের জ্বর আসার আগেও সাধারণ কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। যেমন: বমি বমি ভাব হতে পারে, ডায়রিয়া হতে পারে। জ্বর হলে জ্বর হলে প্রাথমিক পর্যায়ে এন্টিবায়োটিক বা যে কোন রাসায়নিক খাওয়া উচিত নয়।
তাহলে পরবর্তীতে জ্বর আসলে এই ধরনের ওষুধের প্রয়োজন হবে। তাই জ্বর আসলে ঘরোয়া উপায়ে জ্বর সারানোর চেষ্টা করা উচিত। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
আমাদের বাঙ্গালীদের রান্নাঘরে থাকা কিছু উপকরণ দিয়ে সহজেই জ্বর কমানো সম্ভব। চলুন দেখে নেই যে সব উপকরণ ব্যবহার করে ঘরোয়া জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো কি কি জেনে নেই :-
- আদা চা এবং লেবু,
- রসুন,
- মধু এবং তুলসী পাতা,
- আদা এবং মধু,
- বেশি করে পানি পান করুন,
- মরিচের গুঁড়ো,
- বেশি করে পানি পান করুন,
- বিশ্রাম,
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার অথবা ফলমূল খেতে পারেন,
- বেশি পরিমাণে তরল খাবার খান,
- উষ্ণ গরম পানিতে গোসল করুন,
- স্পঞ্জ বাথ,
- ভেজা মোজা ইত্যাদি।
আদা চা এবং লেবু
জ্বর কমানোর ক্ষেত্রে আদা চায় এবং লেবু ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কারণ লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি। যা জ্বর কমাতে সাহায্য করে থাকে। আদা চা বানানোর জন্য একটি পাত্রে পরিষ্কার পানি নিয়ে নিন।
সেই পাত্র প্রয়োজন মতো চা পাতা নিয়ে তাতে বেশি করে আদা কুচি দিন। পানি কিছু সময় ধরে ফুটিয়ে নিন। পানি ফুটে অর্ধেক হয়ে আসলে তখন একটা লেবুর চারভাগের এক ভাগ রস যোগ করুন।
এই পানীয়টি জ্বর হলে দিনে দুই থেকে তিনবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। লেবুর রসে বিদ্যমান ভিটামিন সি এবং আদা আপনার জ্বর খুব তাড়াতাড়ি কমিয়ে দিবে বলে আশা করি।
রসুন
জ্বর কমানোর ক্ষেত্রে ঘরোয়া উপাদান হিসেবে রসুন ব্যবহার করতে পারেন। কোথায় আছে রসুন ভেজানো পানি খেলে জ্বর পালিয়ে যায়। রসুন ভেজানো পানি তৈরি করার জন্য একটি পাত্রে পরিষ্কার পানি নিয়ে নিন। সেই পানিতে কয়েক টুকরা রসুন কুচি কুচি করে কেটে ভিজিয়ে রাখুন।
এই মিশ্রণটি ৩০ মিনিট ধরে ভিজিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট হয়ে যাওয়ার পর রসুনগুলো ছেকে আলাদা করে পানিটুকু পান করুন। জ্বর হলে দিনে দুই থেকে তিনবার পানি ওঠে পান করলে আশা করি জ্বর থেকে মুক্তি পাবেন।
মধু এবং তুলসী পাতা
কথাই বলে মধু হলো সকল রোগের মহৌষধ। মধু এবং তুলসী পাতা শরবত জ্বর কমাতে সাহায্য করে। সরবতি বানানোর জন্য তুলসী পাতা থেকে রস বের করে নিন। এই তুলসী পাতার রসের ভেতরে আপনার স্বাদ অনুযায়ী কিছুটা মধু অ্যাড করে নিন। দিনে দুইবার করে এটি খেলে জ্বরসসহ গলা ব্যথা, কাশি এবং সর্দি ইত্যাদি রোগের উপশম হবে।
আদা এবং মধু
আমরা সবাই জানি মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিবডি। এবং এন্টি বডি জ্বর কমাতে সাহায্য করে থাকে। আদা এবং মধু মধু একসঙ্গে পান করলে অবশ্যই জ্বর কমে যাবে। এই মিশ্রণটি তৈরি করার জন্য একটি গ্লাসে পরিষ্কার পানি নিন।
এই পানিতে এক চা চামচ আদা বাটা এবং স্বাদ অনুযায়ী মধু যোগ করুন। ভালোমতো নেড়েচেড়ে মিশ্রণটি পান করুন। জ্বর হলে প্রতিদিন একবার থেকে দুইবার এটি পান করলে আশা করি জ্বর সেরে যাবে।
বেশি করে পানি পান করুন
জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়। আমার শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে পানির অনেক চাহিদা তৈরি হয়।
এ সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে পরবর্তীতে পানি শূন্যতা সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির কমপক্ষে প্রতিদিন ৪ লিটার পানি পান করতে হবে। এতে করে জ্বরের পরিমাণও কমে আসবে।
বিশ্রাম
শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীর অনেকটা ক্লান্ত হয়ে আসে। তাই এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম প্রয়োজন হয়। জ্বর হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম না পেলে জ্বর আরো বেশি আসার সম্ভাবনা থাকে। তাই জ্বর হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিন।
মরিচের গুঁড়ো
অনেকেই হয়তো জানেন না মরিচের গুঁড়ো জ্বর কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আমরা সবাই জানি যে মরিচের গুঁড়োতে রয়েছে ক্যাপসাইসিন নামক পদার্থ। এই পদার্থ শরীর থেকে ঘাম বের করে দিতে সাহায্য করে।
একটি পাত্রে পানি নিয়ে আপনি যতটা ঝাল খেতে অভ্যস্ত ততটুকু মরিচের গুঁড়ো যোগ করুন। একটা চামচ দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে মিশ্রণটি পান করুন। এতে করে খুব তাড়াতাড়ি আপনার শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে যাবে এবং জ্বর কমে আসবে।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ
জ্বর হলে আমাদের শরীরে ভালো অ্যান্টিবডি গুলো আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যেতে থাকে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার এবং ফলমূল ভালো অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করে। ফলে আপনার যখন জ্বর হবে তখন যদি আপনি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খান তাহলে আপনার শরীরে ভালো এন্টিবডি গুলো নষ্ট হবে না।
এবং নতুন করে অ্যান্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করবে। অ্যান্টি বডি তৈরি হওয়ার ফলে জ্বরের প্রবণতা কমে আসবে এবং জ্বর থেকে মুক্তি পাবেন।
বেশি পরিমাণে তরল খাবার খান
জ্বর হলে মুখে রুচি না থাকার কারণে খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হয়। তুই এ সময় অবশ্যই খাবার গ্রহণ করতে হবে। কারণ জ্বর হলে শরীর ঘেমে যাওয়ার সময় শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়।
তাই তরল খাবার গ্রহণ করলে শরীরের পানির পরিমাণ ঠিক থাকবে। এবং শরীর দুর্বল হয়ে যাবে না। এবং শরীরের শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
উষ্ণ গরম পানিতে গোসল
জ্বর হলে উষ্ণ গরম পানিতে গোসল করতে পারেন। উষ্ণ গরম পানিতে গোসল করলে জ্বরের তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসবে। তবে বেশি সময় ধরে গোসল করা উচিত নয়।
স্পঞ্জ বাথ
জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে শীত অনুভূত হতে পারে। ফলে গোসল করার ইচ্ছা থাকে না। এ সময় স্পঞ্জ বাত অর্থাৎ তোয়ালে গামছা দিয়ে শরীর হালকা করে মুছে নিলে মুছে নিলে আরাম বোধ হবে এবং তাপমাত্রাও কিছুটা কমে আসবে।
ভেজা মোজা
জ্বর হলে ভেজা মোজা পায়ে পড়ে থাকলে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি জ্বর কমে যায়। প্রথমে একজোড়া মোজা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ভিজে গেলে পানি নিংড়ে পায়ে পড়ে থাকলে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে।
শেষ কথা
এই আর্টিকেলে আমরা জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। জ্বর হলে প্রথমে ঘরোয়া চিকিৎসা করা উচিত। কিন্তু জ্বরের লক্ষণ দেখলে বোঝা যায় কোন জ্বর স্বাভাবিক আর কোন জ্বর অস্বাভাবিক।
জ্বরের খারাপ কোন লক্ষণ অথবা কোন বিপদ চিহ্ন দেখলে তখন ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলে কাজ হবে না। তাই জ্বরের লক্ষণ এবং বিপদচিহ্ন অনুযায়ী অনুযায়ী ঘরোয়া চিকিৎসা নিন।
কিন্তু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে কাজ না হলে প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
Also Read: গলা ব্যথার ঔষধের নাম