Dreamy Media BD

নিকোলা টেসলা: সর্বকালের সেরা আবিস্কারকের জীবনী

নিকোলা টেসলা সর্বকালের সেরা আবিস্কারকের জীবনী

নিকোলা টেসলা, সময়ের থেকে শতবছর এগিয়ে থাকা প্রযুক্তির বরপুত্র।  জনপ্রিয় স্পাইডারম্যান সিরিজের সেই বিখ্যাত “ম্যাডম্যান বিজ্ঞানী” নিকোলা টেসলারই কমিক রূপ। জন্মের সময় যে মানুষের নাম ছিল “অন্ধকারের রাজপুত্র” সেই তিনিই একই মানব বিজ্ঞান প্রযুক্তির ইতিহাসকে করেছেন আলোকিত। ইলন মাস্কের বিখ্যাত বৈদুত্যিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি তার নামে “টেসলা মোটর” নামকরণ করা হয়।  আজকের আমাদের লেখাটি সাজানো হয়েছে মহান আবিস্কারক , প্রযুক্তির জগতের আনসাং হিরো ‘নিকোলা টেসলা’কে নিয়ে।

একবার আইনস্টাইন কে বলা হয়েছিল, বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষ হিসাবে আপনার অনুভুতি কি?

আইনস্টাইন বলেছিলেন, এই প্রশ্ন নিকোলা টেসলাকে জিজ্ঞেস করুন।

আরও পড়ুনঃ কম্পিউটারঃ এক যাদুর বাক্সের পরিচিতি

নিকোলা টেসলার জীবনী

১০ জুলাই, ১৮৫৬ এক ঝড় বৃষ্টির রাতে তৎকালীন অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্য (আধুনিক ক্রোয়েশিয়া) স্মিলজান এ এক শিশুর জন্ম হয়।  জন্মের সময় প্রচণ্ড বিরুপ আবহাওয়া ছিল আকাশে ছিল বিদ্দুতের খেলা, তাই ধাত্রী ভয় পেয়ে বলেন এই শিশু হবে “চাইল্ড অব ডার্কনেস” কিন্তু  টেসলার মা বলেন, “আমার এই ছেলে একদিন পৃথিবীকে আলোকিত করবে”। টেসলার মা যে ঠিক ছিল , তা বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তির বড় বড় আবিস্কারগুলি সাক্ষী দেয়। গৃহিনী মা ও ধর্মযাজক বাবার ৫ সন্তানের চতুর্থ ছিলেন নিকোলা টেসলা।

Nikola Tesla (নিকোলা টেসলা) - Belgrade Vibes
Nikola Tesla (নিকোলা টেসলা) – Belgrade Vibes

টেসলার বাল্যকাল ও শিক্ষাজীবন

ধর্মযাজক বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলেকেও ধর্মযাজক বানাবার। ছোটবেলা থেকে প্রচন্ড মেধাবী ছিলেন তিনি।  পৃথিবীর খুব কম মানুষের ফটোগ্রাফিক মেমোরি থাকে , তাদের মধ্যে নিকোলা টেসলা অন্যতম।  এই ধরনের মানুষ কোন জিনিস একবার দেখলেই সারাজীবন মনে রাখতে পারেন (আমাদের মহান নেতা শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এর এই মেমোরি ছিল )।

সিমিলজানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার লেখাপড়ার শুরু হয়, এখানে তিনি জার্মান , গণিত ও ধর্মের উপর শিক্ষা লাভ করেন।  তারপর ১৮৭০ সালে  কারলোভাকে যান গ্রাজ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাধ্যমিক শিক্ষা লাভের জন্য।  সেখানে চার বছরের কোর্স মাত্র তিন বছরে শেষ করেন।  এখানে থাকতেই একজন পর্দাথ বিজ্ঞানের শিক্ষক প্রথম তার অসাধারণ প্রতিভার খোঁজ পান।  মেধাবী টেসলা মনে মনেই জটিল ক্যালকুলাসের সমস্যা সমাধান করতে পারতেন।

ভবঘুরে নিকোলা টেসলা

১৮৭৪ সালে বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগ দেবার থেকে বাঁচতে বাসা থেকে পালিয়ে যান।  ভবঘুরে টেসলা এই সময়টা বোন জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে মার্ক টোয়েন পড়তেন।

 সবকিছুর চেয়ে আমি বইকেই বেশি পছন্দ করি। _নিকোলা টেসলা

তার পরের বছর একটি পলিটেকনিক এ ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হন।  এখানেও শুরুতে নিজের মেধার পরিচয় দেন , প্রথম শিক্ষাবর্ষে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে । এখানে তার এক শিক্ষকের সাথে পর্দাথ বিদ্যার কোন বিষয়ে মতভেদ হলে , ল্যাবরেটরিতে ১৮ ঘন্টা কাজ করে শিক্ষককে ভুল প্রমান করেন।

কিন্তু কোনভাবে টেসলা জুয়াতে আসক্ত হয়ে পড়েন।  ফলশ্রুতিতে একবছর ড্রপ দিয়ে লেখাপড়ার ইতি টানেন।

এক নজরে নিকোলা টেসলা

তথ্য বিস্তারিত
জন্ম ১০ জুলাই, ১৮৫৬
জন্মস্থান স্মিলজান, অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্য (আধুনিক ক্রোয়েশিয়া)
পিতা-মাতা পিতা: মিলুটিন টেসলা

মা: জর্জিনা জুকা টেসলা

শিক্ষা গ্রাজ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

চার্লস-ফার্ডিন্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাগ

কর্মজীবন এডিসন মেশিন ওয়ার্কস

ওয়েস্টিংহাউস ইলেকট্রিক এন্ড ম্যানুফ্যাক্চারিং কোম্পানি

কোলোরাডো স্প্রিংস ল্যাবরেটরি

ওয়ারডেনক্লাইফ টাওয়ার প্রকল্প

আবিষ্কার এসি বিদ্যুৎ

ইলেকট্রিসিটি সিস্টেম

টেসলা কয়েল

রেডিও রিমোট কন্ট্রোল

ইলেকট্রিসিটি বেহল্ডিং

এক্স-রে ইমেজিং

বিশেষ সাফল্য পর্যায়ক্রমিক বিদ্যুত (AC) পাওয়া ট্রান্সমিশন

৩০০+ প্যাটেন্ট

আধুনিক রেডিও প্রযুক্তিতে অবদান

ফোবিয়া  germaphobe – মানুষের সাথে হাত মেলাতে ভয়
জাদুঘর নিখিলবর্গ
সম্মান IEEE এডিসন মেডেল (১৯০৬)

অর্ডার অফ টি হোয়াইট ঈগল (1920)

অর্ডার অফ টি ক্রাউন অফ ইতালি (১৯২৭)

অর্ডার অফ টি যুগোস্লাভ ক্রাউন (১৯৩৬)

ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্র তড়িৎ প্রকৌশল ও যন্ত্র প্রকৌশল
দিবস টেসলা ডে (জন্মদিন) – ১০ জুলাই
উপাধি  “The Wizard of Menlo Park” “ইলেক্ট্রিসিটির জনক”  ও “The Man Who Invented the 20th Century.”
মৃত্যু  ৭ জানুয়ারি, ১৯৪৩ , নিউ ইয়র্ক , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

নিকোলা টেসলার কর্মজীবন

লেখাপড়ার অসমাপ্ত রেখে হাঙ্গেরিতে গিয়ে একটি টেলিগ্রাফ কোম্পানিতে কাজ নেনে টেসলা।  সেখানে তিনি টেলিগ্রাফ এর এমপ্লিফায়ারের অনেক উন্নতি সাধন করেন ,যদিও এর জন্য তিনি কখনোই কৃতিত্ব দাবি করেন নি। এখানে তিনি সুনামের সাথে অনেক নতুন প্রযুক্তি ও কৌশল আবিষ্কার করে যোগদানের কয়েকমাসে কোম্পানির প্রধান ইলেক্ট্রিসিয়ান হন।  তার কারণে কোম্পানি ব্যাপক লাভজনক হয়।  দ্রুত টেসলা বুঝতে পারেন, এখানে আর তার কিছু দেবার বা শেখার নেই।

এডিসনের কম্পানিতে যোগদান ও প্রতারিত হওয়া

তাই তিনি তে ১৮৮২ সালে আরেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও ব্যাবসায়ী টমাস আলভা এডিসনের ফ্রান্স অফিসে কাজ শুরু করেন।  সেখানে একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে যোগ দিয়ে তার উদ্ভোবনী ক্ষমতা দিয়ে সবাইকে চমকে দেন।  তার দুই বছর পরে তার ডাক পরে আমেরিকায় , সুযোগ পান কোম্পানির সদর দপ্তরে আলভা এডিসনের সাথে কাজ করার।  এই নিয়ে মজার এক ঘটনা আছে, সেখানে একজন অভিজ্ঞ সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার , নিকোলা টেসলাকে একটা চিঠি নিয়ে আমেরিকা টমাস আলভা এডিসনের কাছে পাঠিয়ে দেন।  চিঠিতে লেখা ছিল “আমি পৃথিবীতে দুজন মহাজ্ঞানী মানুষকে চিনি, যার একজন তুমি , আর অপর জন যে তোমার সামনে দারিয়ে আছেন তিনি”।  যদিও, অনেকে দাবি করে , যিনি চিঠি লিখেছিলেন তিনি ছিলেন তার সাবেক হাঙ্গেরিয়ান টেলিগ্রাফ কোম্পানির কোন সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার।

১৮৮৪ সালে প্রধান শাখায়  কাজে যোগ দিয়েই, প্রখর বুদ্ধিমান টেসলা এডিসনের বিদ্যুৎ ডিসি ডায়নামোর কিছু সমস্যা দেখতে পান । তিনি এডিসনকে বলেন , সে এই যন্ত্রের আরো উন্নতি করতে পারবে , যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও লাভ দুটোই বাড়বে।

ব্যাবসায়ী মস্তিকের এডিসন, টেসলা কে চ্যালেঞ্জে দিয়ে বলেন “তুমি সত্যি যদি করতে পারো , তোমাকে ৫০ হাজার দলের পুরস্কার দিবো ”

টেসলা তার বুদ্ধি ও কৌশল দিয়ে দ্রুতই সেই কাজে সফলতা অর্জন করেন।  তারপর এডিসনের কাছে তার পুরস্কারের অর্থ চাইলে তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করে বলেন , “তুমি তুমি আসলে আমেরিকান কৌতুক বুঝতে পারোনি ” । তার বদলে এডিসন, তার বেতন সপ্তাহিক ১০ থেকে ১৮ ডলার করার প্রস্তাব দেন।

প্রতারিত হয়ে প্রচন্ড হতাশ টেসলা তাৎক্ষণিক এডিসনের কোম্পানি থেকে পদত্যাগ করেন।  তবে এটি তার জীবনের অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত ছিল এরপরই তার যুগান্তকারী আবিষ্কার গুলি দিয়ে পৃথিবীকে বদলে দেন।

Thomas Edison vs. Nikola Tesla | HowStuffWorks
Thomas Edison vs. Nikola Tesla | HowStuffWorks

এডিসন-টেসলার দ্বন্দ্ব

এডিসনের কোম্পানি থেকে বের হবার ১০ বছর পর আবার মুখোমুখি হয়েছিল টেসলা ও এডিসন।  এবার অবশ্য গল্পের ফলাফল ছিল ভিন্ন।

এডিসনের কোম্পানি উৎপাদন করতো ডিসি কারেন্ট যা জেনারেটর দ্বারা উৎপাদন হতো। কিন্তু , টেসলা গবেষণা করে শক্তিশালী এসি কারেন্ট আবিষ্কার করেন।  যেটি ডিসির তুলনায় অনেক সস্তা ও বড় এলাকা জুড়ে সরবরাহ করা যেত।

১৮৯৩ সালোর শিকাগোর জর্জ ওয়াসিংটন হাউসে ওয়ার্ল্ড কলম্বিয়ান প্রতিযোগিতায় এডিসনের ডিসি কারেন্টে হারিয়ে দেয় তার এসি কারেন্ট।  হেরে গিয়ে, এসি কারেন্টের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নামেন তিনি , লোক সমুক্ষে এসি কারেন্ট দিয়ে হাতি , কুকুর ও বিভিন্ন প্রাণী মেরে এর ভয়ঙ্কর দিক দেখান।

কিন্তু তাতেও লাভ হয় না , ততদিনে এসি কারেন্ট মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে গেছে। ফলশ্রুতিটি এডিসনের ডিসি কারেন্টের ব্যবসায় ভাটা পরে।  শেষমেষ অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, এডিসন তার নিজের কোম্পানির প্রধান পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন।

নিকোলা টেসলার যুগান্তকারী আবিষ্কার

বর্তমান পৃথিবীতে রাজ্ করা বেশিরভাগ প্রযুক্তি সরাসরি বা পরোক্ষ ভাবে মহান বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলার কাছে ঋণী।  চলুন দেখে নেই তাই কিছু বিখ্যাত আবিষ্কার:

১. এসি কারেন্ট (Alternating current)

পৃথিবীতে বিদ্যুতের কি ভূমিকা সেটার ব্যাখ্যা দেবার কিছু নাই।  এসি কারেন্টের আগে ছিল টমাস আলভা এডিসনের ডিসি বা ডাইরেক্ট কারেন্ট।  কিন্তু ডিসি কারেন্ট ৮০০ মিটারের বেশি দূরে পাঠানো যেত না , এবং জেনারেটর বা অন্য কোন উপায়ে এর উৎপাদন খরচ ছিল অনেক বেশি।  অন্যদিকে , এসি কারেন্ট হাজার হাজার মাইল দূরেও পাঠানো যায় আর উৎপাদন খরচ অনেক কম।

 ২. টেসলা কয়েল (Tesla coil)

অনেকেই এটিকে তার অন্যতম সেরা আবিষ্কার বলে স্বীকৃতি দেন।  টেসলা কয়েল ছিলি একটি উচ্চ ভোল্টেজের ট্রান্সফর্মার যা এসি কারেন্ট তৈরিতে বেবহার হতো।  রেডিও , টেলিভিশন ও এক্সরে ইত্যাদিতে এর ব্যাবহার করা হয়।

৩. ফ্লোরেন্স লাইট বাল্ব

১৮৯১ সালে তৈরী ফ্লরেন্স বাল্ব ছিল  আগের ইনক্যান্ডেসেন্ট বৈদ্যুতিক বাল্ব থেকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, টেকসই ও বেশি আলোর।

৪. রেডিও

রেডিও আবিষ্কারের স্বীকৃতি না পেলেও রেডিও প্রযুক্তি নিয়ে নিয়ে ১৮৯০ সালে কাজ করেন। তাকে আধুনিক রেডিও প্রযুক্তির পথ প্রদর্শক বলা হয়,  আধুনিক wifi প্রযুক্তি তার কাছে ব্যাপকভাবে ঋণী। পরে ,১৯৪৩ সালে আমেরিকার আদালত তার এই আবিষ্কারের স্বীকৃতি দেয়।

৫. এক্সরে (X-ray) প্রযুক্তি

১৮৯৫ সালে তিনি দুর্গতোনা বসত মানুষের হাতের এক্সরে করার মাধ্যমে এই প্রযুক্তির আবিষ্কার করেন।

৬. নিয়ন ল্যাম্প

১৮৯৫ সালে তিনি বহুল ব্যবহৃত বিখ্যাত নিয়ন ল্যাম্পের আবিষ্কার করেন।

৭. জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র  (Hydroelectric power)

পানির প্রবাহের মাধ্যমে বিদ্যুতের আবিষ্কার তারই তৈরী। বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ আটকে তাকে বিশেষ সুড়ঙ্গের মাধ্যমে প্রোপালের চাকা ঘুরিয়ে বৈদ্যুতিক জেনারেটরে মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় এই প্রক্রিয়ায়। কিন্তু সবাই জলবিদ্যুত কেন্দ্র আবিস্কারক হিসাবে চিনেন  ওয়েস্টিংহাউজ’কে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন যে, বেঁচে থাকার তাগিদে তিনি তার এই আবিষ্কারের মেধাস্বত্ব বিক্রি করেছিলেন।

৮. ড্রোন/রোবোটিক নৌকা

১৮৯৮ সালে তিনি রেডিও বা বেতার বা তারহীন প্রযুক্তির রিমোট কন্ট্রোলারের মাধ্যমে একটি নৌকা চালিয়ে দেখান।  এটিকে একইসাথে বিশ্বের প্রথম রিমোট চালিত রোবোটিক বা ড্রোন নৌকা বলা হয়।

৯. রাডার আবিষ্কার

আধুনিক যুদ্ধবিমান, নৌযান , সাবমেরিন এমনকি বাণিজ্যিক বিমান বা শিপিং জাহাজ রাডার ছাড়া কল্পনা করা যায় না। রবার্ট ওয়াটসন ওয়াট স্বীকৃত ভাবে ১৯৩৫ সালে রাডার আবিষ্কার করলেও তার প্রায় দুই দশক আগে ১৯১৭ সালে টেসলা রাডার প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছিলেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি , মার্কিন নেভিকে রাডার ব্যবহারের প্রস্তাব দেন। কিন্তু “ফালতু বেকার আবিষ্কার” বলে তার এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়।  কেননা সেই সময় মার্কিং নেভির রিসার্স ও ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান ছিলেন টমাস আলভা এডিসন, ততোদিনেও তিনি টেসলার কাছে হারার যন্ত্রনা ভুলেননি।

১০. ভূ-কম্পন যন্ত্র

নিকোলা টেসলা বলেছিলেন, আমি ইচ্ছে করলেই ভূমিকম্প কৃতিম সৃষ্টি করে মানবজাতিকে ধ্বংস করতে পারবো বা পৃথিবীকে দুইভাগ করতে পারবো।  দাবি করা হয় ,নিকোলা টেসলা কৃত্তিম ভাবে নিউ ইয়র্ক শহরে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প তৈরী করেছিলেন।

তার এই আবিষ্কারগুলি ছিল তার সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে তাই হয়তো প্রাপ্য মর্যাদা, সম্মান বা টাকা কিছুই তিনি সেভাবে পান নি।

The Madness Of Nikola Tesla - picture: Listverse
The Madness Of Nikola Tesla – picture: Listverse

নিকোলা টেসলা সুপার মানব

নিকোলে টেসলার অনেক বৈশিষ্ট তাকে সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা করে। সেগুলার মধ্যে অন্যতম:

  • প্রচন্ড মেধাবী নিকোলা টেসলা দিনে মাত্র ২ ঘন্টা ঘুমাতেন।
  • একবার তিনি টানা ৪৮ ঘন্টা বিলিয়ার্ড খেলেন
  • টানা ৮৪ ঘন্টা ল্যাবে কাজ করার নজির আছে তার
  • তিনি কোন বই একবার পড়লে হুবহু মুখস্ত বলতে পারতেন
  • তার ‘ফটোগ্রাফিক মেমোরি’  ছিল
  • ৮ টি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন
  • উচ্চতর পদার্থ বিজ্ঞানের জটিল সমীকরণ বা গণিতের ক্যালকুলাস মুখে মুখে সমাধান করতে পারতেন

নিকোলা টেসলার বিজ্ঞানে অবদান

আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক শাখায় এই মহান বিজ্ঞানীর অবদান আছে।  তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু:

  • AC বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি
  • বেতার wifi যোগাযোগের অগ্রদূত
  • এক্স-রে প্রযুক্তি বিকাশ
  • রোবোটিক নৌকা আবিষ্কার করেছিলেন
  • টেসলা কয়েল আবিষ্কার করেছিলেন
  • আধুনিক বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার
  • ইন্ডাকশন মোটর আবিষ্কার করেছিলেন
  • নিওন বাতি আবিষ্কার করেছিলেন
  • জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে অবদান
  • রোবোটিক্সের সূচনা
  • RADAR  প্রযুক্তির অগ্রদূত

নিকোলা টেসলার আবিষ্কার নিয়ে কিছু গুজব

নিকোলা টেসলার কিছু আবিষ্কার নিয়ে মনগড়া অতিরঞ্জিত কিছু ভিডিও ও লেখা সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। তিনি অবশই একজন মহান বিজ্ঞানী ও আবিস্কারক ছিলেন, তবে এখানে তাকে নিয়ে কিছু মনগড়া অতিরঞ্জিত ভাইরাল তথ্য দেওয়া হল:

জাহাজ অদৃশ্য করা

অনেকেই দাবি করে,  ১৯৪৩ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়া নেভাল শিপ ইয়ার্ডে মার্কিন নৌবাহিনীর “USS Eldridge” নামের এই যুদ্ধজাহাজটি।  টেসলা টেলিপোর্টেশন প্রযুক্তির মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডের জন্য অদৃশ্য করে দিয়েছিলেন।  তবে , এই দাবির কোনো সত্যতা নেই কেননা ওই সময় জাহাজটি বাহামা দ্বীপপুঞ্জে ছিল।

টাইডাল ওয়েভ সৃষ্টি

এই দাবিটিও ভুয়া বলে প্রমান করেছে বাংলা, ফ্যাক্ট-ওয়াচ ওয়েবসাইট। এখানে দাবি করা হয় , প্রতিপক্ষের নৌজাহাজ ডুবিয়ে দিতে তিনি কৃত্তিম ডেউ তৈরির প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছিলেন।কিন্তু বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ক্রিস্টোফার ক্লেইন এর হিস্টোরি ডট কম এ লেখা এক প্রবন্ধে এই দাবিটি মিথ্যা বলে প্রমান করেন।

ভূমিকম্প তৈরির যন্ত্র আবিষ্কার

এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমান নেই , এমনকি তার করা বিভিন্ন দেশে যে তিন শতাধিক পেটেন্ট আছে সেখানেও এই বিষয়ে কোন তথ্য নেই।

নিকোলা টেসলার উক্তি

একা থাকাই হচ্ছে আবিষ্কারের প্রথম গোপনীয়তা, একা থাকুন আপনার মধ্যে একের পর এক ধারণার জন্ম হবে।

_নিকোলা টেসলা

বড় বড় আবিষ্কারের পেছনে কোনো বিবাহিত মানুষের অবদান রয়েছে, এটা আমি ভাবতে পারি না।  _নিকোলা টেসলা

 

আপনার ঘৃণা যদি বিদ্যুতে পরিণত হয়, তবে এর আলো সারা বিশ্বকে আলোকিত করবে।

_নিকোলা টেসলা

 

আপনি যদি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের গোপনীয়তা সম্পর্কে জানতে চান তবে এনার্জি, ফ্রিকোয়েন্সি ও ভাইব্রেশনের কথা ভাবুন।

_নিকোলা টেসলা

“একজন মানুষকে তার নিজের মূর্খতা থেকে রক্ষা করা যায় না, কেবলমাত্র তার নিজের ইচ্ছাই পারে” _নিকোলা টেসলা

“আজকের বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞান চর্চাকে তাত্ত্বিক গণিতের সমীকরণের জঞ্জালে রুপার্টের করেছে, যার সাথে বাস্তবতার কোন সম্পর্ক নেই” _নিকোলা টেসলা

“একবিশং শতাব্দীতে রোবট প্রাচীন কালের দাসদের জায়গা যখন করবে” _নিকোলা টেসলা

“আমার সবাই ভুল করি, আর কিছু শুরুর ক্ষেত্রে যা কল্যানকর” _নিকোলা টেসলা

“মানুষ টাকাকে অতিমূল্যায়িত করে , আমি আমার জীবনের সমস্ত সম্বল শুধুমাত্র পরীক্ষণ ও আবিষ্কারের পিছনে ব্যয় করেছি , যেন মানুষের জীবন আরো সহজ হয়” _নিকোলা টেসলা

নিকোলা টেসলার মৃত্যু

এই মহান বিজ্ঞানীকে নিয়ে বিখ্যাত আরেক বিখ্যাত গবেষক ও চলচিত্রকার মিশায়েল ক্রজে বলেছিলেন:

  “তিনি ছিলেন স্বপ্নচারী। মানবজাতির বিবর্তনে তিনি তার অবদান রেখে”

এতো শত আবিষ্কার ও উদ্ভবনের পরেও , এই মহান মেধাবী মানুষটির শেষদিনগুলি অনেক কষ্ঠে কেটেছে। সারাজীবন অবিবাহিত এক মানুষটি জীবনের শেষ কয়েকবছর হোটেলে কাটান। মৃত্যুর সময় তার হোটেলের বিল পর্যন্ত বাকি পড়েছিল।

৭ জানুয়ারি ১৯৪৩ সালে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক সিটির এক ছোট্ট সস্তা হোটেলে ৮৬ বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে এই মহান বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে, আরও লেখা পড়ুনঃ

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents