প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে লোন নেওয়ার নিয়ম
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি বিশেষায়িত বাণিজ্যিক ব্যাংক। এই ব্যাংকের প্রধান উদ্দেশ্য বাংলদেশের সকল প্রবাসীদের বিভিন্নরকম ভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ২০১০ সালে বাংলাদেশের সকল প্রবাসীদের সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে কাজের জন্য যারা প্রবাসে যেতে চান বা প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের আর্থিক সহায়তার জন্য রয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। প্রায় দশ বছর আগে চালু করা এই ব্যাংক থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ ঋণ নিয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, যারা কাজের জন্য বিদেশে যেতে চান, কিন্তু আর্থিক সঙ্গতির অভাব রয়েছে, তারা বিনা জামানতে এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন। আমরা অনেকেই হয়তোবা জানিনা যে প্রবাসী ব্যাংক লোন দেওয়া হয় বা জানলেও এই সম্পর্কে সঠিক তেমন ধারণা নেই। যে কারণে অনেক চাইলেও এ ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারে না। তাই আজকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে লোন নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই চলুন দেরি না করে এখনই আর্টিকেলটি শুরু করা যাক:
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ
১) অভিবাসন ঋণ: যারা বিদেশ সকল ধরনের কাগজপত্র সহ ভিসা হাতে পেয়েছে অথচ আর্থিকভাবে অসচ্ছল তাদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক যে ঋনের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেটাই অভিবাসন ঋণ।
২) পুনর্বাসন ঋণ: বিদেশ যাওয়ার পর সেখান থেকে দেশে আসার পর যারা স্বাবলম্বী হতে চাচ্ছে এবং নিজে উদ্যোগী হয়ে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করছে তাদের আর্থিক সহায়তার জন্য যে ঋণ প্রদান করা হয় সেটাকে পুনর্বাসন ঋণ বলে আখ্যায়িত করা হয়।
৩) বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ: প্রবাসী কোন ব্যক্তির পরিবারের সদস্যের (মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী, স্বামী, ছেলে, মেয়ে) যে কোন প্রকার ঋণ প্রয়োজন হলে, জামানত বিহীন এবং জামানত সহ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক যে ঋণ প্রদানের সুবিধা দেয় সেটাকে বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ বলে।
৪) বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ: এটা শুরু হয়েছে ২০২০ সালে। যখন পুরো পৃথিবীতে করোনার মহামারি চলছিলো, সেসময় বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীদের দেশে ফিরে আসতে হয়েছে বা মারা গিয়েছে। এরুপ পরিস্থিতিতে তাকে অথবা তার পরিবারের কোনো একজনকে পুনর্বাসনের জন্য যে ঋণ সুবিধা দেয়া হবে সেটা হবে বিশেষ পুনবার্সন ঋণ।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে ঋণের যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১)অভিবাসী ঋণ প্রদান
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক অভিবাসী ঋণ নেওয়ার জন্য আপনার কি কি যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো,
অভিবাসী লোন নেয়ার যোগ্যতা
১) আপনাকে অবশ্যই বিদেশে চাকুরীর জন্য ভিসা লাভ করতে হবে।
২)আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়-স্বজনদের ঋন চালানোর মতো সক্ষম থাকতে হবে।
৩)এক্ষেত্রে জামিনদার ব্যক্তিকে আর্থিক ভাবে স্বচ্ছলতা থাকতে হবে।
৪)লোনের জন্য আবেদনকারী ব্যক্তির ভিসা যাচাই এর জন্য দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং ফোন নাম্বার দিতে হবে । সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে আপনার লোন নেয়ার বিষয়টি কনফার্ম করা হবে।
প্রবাসী কল্যাণ অভিবাসন ঋণ পেতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
১)ঋণ দেওয়ার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে ব্যাংকের দায়িত্বগত কর্মকর্তার কাজ থেকে একটি আবেদন পত্র সংগ্রহ করতে হবে।
২)আবেদনকারীর সদ্য তুলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং জাতীয় পরিচয় পত্র এর ডকুমেন্ট প্রদান করতে হবে।
৩) আবেদনকারী ব্যাক্তির স্থায়ী ঠিকানা এর ডকুমেন্ট প্রদান করতে হবে।
৪)আবেদনকারীর জামিনদার যে তার সদ্যতোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং জাতীয় পরিচয় পত্র ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
৫) মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে।
৬) শর্তসাপেক্ষে ঋন গ্রহণকালে ব্যক্তিকে বীমা সুবিধা নিতে হবে।
পূনর্বাসন ঋণ সুবিধা
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে পূনর্বাসন ঋণ সুবিধা নিতে আপনার কি কি যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো,
পুনর্বাসন ঋণ নেয়ার যোগ্যতা
১)এই ঋণ নেয়ার জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই বিদেশ ফেরত হতে হবে।এবং বিদেশ থেকে আসার পর সকল বৈধ কাগজপত্র সহ পাঁচ বছরের মধ্যে আবেদন করতে হবে।
২) ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ঋণগ্রহণকারী জামানত কৃত সম্পত্তির মালিকানা দলিল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে হবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে।
পূনর্বাসন ঋণ গ্রহণের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলি
১)আবেদনকারী ব্যক্তির সদ্যতোলা ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি,ভোটার আইডি কার্ড এবং বর্তমান স্থায়ী, অস্থায়ী ঠিকানা শনাক্তকরণের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য প্রমাণ ও কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
২)প্রকল্পের স্থান হিসেবে যে স্থানটি নির্বাচন করা হয়েছে সে জায়গা নিজস্ব জায়গা হলে তার কাগজপত্র এবং ভাড়া হলেন তাহলে চুক্তিপত্রের ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
৩)বিদেশ ফেরতের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
৪) ঋণ প্রত্যাশীর জামিনদার কে দুই কপি ছবি ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
৫)এছাড়াও ব্যাংকের অন্যান্য শর্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র প্রদান করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ পেতে যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১)আবেদনকারীর সদ্য তোলা ৩ কপি পাসপোর্টের সাইজের ছবি এবং জামিনদারের সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি দিতে হবে।
২)আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ৩ কপি ফটোকপি এবং জামিনদারের জাতীয় পরিচয়পত্রের ২ কপি ফটোকপি জমা দিতে হবে। আপনি চাইলে পাসপোর্টের ছবিও জমা দিতে পারবেন।
৩)আবেদনকারীর ঠিকানা প্রমাণের জন্য এলাকার চেয়ারম্যান কর্তৃক সনদপত্র জমা দিতে হবে।
৪) জামিনদার অবশ্যই ঋণ পরিশোধে সক্ষম হতে হবে।
৫)ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি জমি দিতে হবে
৬) ব্যবসা করার জন্য যে স্থান নিয়েছেন সেই জায়গায় নিজের হলে দলিল জমা দিতে হবে।আর ভাড়ায় হলে লীজের চুক্তিপত্রের ফটোকপি জমা দিতে হবে।
৭)প্রকল্পের ক্ষেত্রে ঋণ গ্রহীতার নিজস্ব বিনিয়োগের ঘোষণাপত্র জমা দিতে হবে।
৮)জামানতকারীর সকল সম্পত্তির দলিলের ফটোকপি।
৯)যদি কোনো কাজের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে তার সার্টিফিকেট।
১০)আবেদনকারীর নিজ নামের ৩টি স্বাক্ষরিত চেকের পাতা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হিসাব।
বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ পরিশোধের চার্জ ও সময়সীমা
১)প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণের সময়সীমা এবং সুদের হার ঋণ গ্রহণের পূর্বে ধারণা রাখা জরুরি। এই টাকা পরিশোধের জন্য কোনো ধরণের সার্ভিসচার্জ নেওয়া হয়না।
২)এই ঋণ গ্রহণ করলে আপনাকে ৯% হারে সুদ প্রদান করতে হবে।
৩)ভিসার মেয়াদ অনুযায়ী ঋণ পরিশোধের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। তবে ঋণ পরিশোধের সর্বোচ্চ সময়সীমা ১০ বছর।
৪)ঋণ নেওয়ার পর মাসিক কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
বিশেষ পুনর্বাসন ঋণের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
বিশেষ ঋণের জন্য আপনাকে প্রয়োজনীয় যে সকল কাগজপত্র দিতে হবে,
১)কেবল মাত্র ২০২০ সালের জানুয়ারির ১ তারিখের পর দেশে ফিরে আসা অভিবাসীদের জন্য এই ঋণ প্রজোয্য হবে।
২)আবেদনকারীর পাসপোর্টে বহির্গমন ও আগমনের সীলযুক্ত থাকবে হবে।
৩)BMET স্মার্ট কার্ড অথবা চাকরিরত দেশে আইডি কার্ড অথবা বৈধ পথে বিদেশ গমনের প্রমানপত্র থাকতে হবে।
৩)আবেদনকারীর ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ও জামিনদারের ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, উভয়ে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, পৌরসভা বা ইউনিয়ন থেকে প্রাপ্ত সনদপত্র দিতে হবে।
৪)অন্য কোনো স্থান থেকে ঋণ গ্রহন করে থাকলে সেটার ইনফরমেশন দিতে হবে।
৫)ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি দিতে হবে
৬) ঋণ গ্রহীতার স্বাক্ষরিত ৩ টি চেক পাতা প্রয়োজন দিতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে ঋণের সুবিধা
১)বিদেশে গিয়ে এই লোন পরিশোধ করা যায়।
২)সুধের পরিমান কম তথা ৪ থেকে শুরু করে ৯% পর্যন্ত।
৩)প্রবাসে থাকাকালীন কোন প্রকার আর্থিক সমস্যায় পড়লে এই ব্যাংক লোন প্রদান করে সাহায্য করে।
৪)দেশে ফিরে আবার যেতে চাইলে এই ব্যাংক থেক লোন নিয়ে যেতে পারে।
৫)দেশে ফিরে কোন ব্যবসা বাণিজ্য করতে চাইলে এই লোন সুবিধা পাওয়া যায়।
৬) কোন প্রকার জামানত ছাড়া সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোনের সুবিধা রয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুদের হার
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুদের হার শতকরা ৯ টাকা। তবে পূনর্বাসন ঋণের ক্ষেত্রে প্রকল্পের ধরন অনুযায়ী আপনার ঋণ পরিস্থিতির সময়সীমা এবং অর্থ সীমা নির্ধারণ করা হবে।তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঋণের সময়সীমা ২ বছর ধরা হয় এবং চার্জ শতকরা ৯ টাকা।
সবশেষে
আপনি যদি বিদেশ যেতে চান এবং ভিসা সহ সকল কাগজপত্র সম্পূর্ণ তাহলে উপরোক্ত বলা নিয়ম গুলো মেনে খুব সহজেই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। বিনা জামানতে এবং খুবই কম সুদে এই ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করা খুবই সুবিধাজনক। এছাড়াও প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এই ব্যাংকে। প্রবাসে যাওয়ার সময় এবং প্রবাস থেকে এসে যেকোনো সময় আপনি এই ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের সুবিধাটি নিতে পারবেন। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে আপনি কিছুটা হলে উপকৃত হয়েছেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ
Also Read : Sonali Bank Loan