Dreamy Media BD

ফেসবুকের জনকঃ মার্ক জুকারবার্গের জীবনী

ফেসবুকের-জনকঃ-মার্ক-জুকারবার্গের-জীবনী

মার্ক জুকারবার্গের ফেসবুক, আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার সংজ্ঞা পাল্টে দেওয়া এক প্রযুক্তি। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার জন্য ফেসবুক এক ডিজিটাল রেপ্লিকা। এ যেন প্যারালাল ইউনিভার্স এর মত আর একটা প্যারালাল সোসাইটি। এখানে মানুষ মানুষে পরিচয় হয়, বন্ধুত্ব বা বিরোধ হয়, সমমনারা একই গ্রুপে এসে নিজেদের আবেগ অনুভূতি অভিজ্ঞতা শেয়ার করে, অনলাইনে কেনাকাটা করে, বন্ধুত্ব করে, টেক্সট বা ভিজ্যুয়ালি কথা বলে। মানবতার ফেরিওয়ালা থেকে পাড়ার মোড়ের বখাটে সবাই সবার কাজ ডিজিটাল ভাবে করতে পারে ফেসবুকে।

অর্থাৎ, বাস্তব সমাজের সকল ক্রিয়া, প্রতিক্রিয়ার ডিজিটাল প্রতিফল দেখা যায় ফেসবুকে।

২০০৪ সালে ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মার্ক জুকারবার্গ (Mark Zuckerberg ), যিনি বর্তমানে মেটা (ফেসবুক এর প্যারেন্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

২০২০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জায়ান্টটি প্রায় ৩০০ কোটি মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীতে পৌঁছায়। একই বছরের ডিসেম্বরে মার্ক জুকারবার্গের মোট সম্পদ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়।

ফেসবুক সম্পর্কে মানুষকে জানানোর কিছু নেই, আপনি জানেন এটা কি, আর কি করতে পারে। তাই আজকে আমরা জানব প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যতম জায়ান্ট মার্ক জুকারবার্গ সম্পর্কে। এই লেখায় তার জীবন ও ফেসবুক নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করা হবে।

প্রাথমিক বছর

মার্ক জুকারবার্গ ১৯৮৪ সালের ১৪ মে নিউ ইয়র্কের হোয়াইট প্লেইনসে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই মার্ক কম্পিউটারের প্রতি প্রবল আগ্রহী ছিলেন। নিজে নিজেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখেন। পরবর্তীতে বাড়ির কাছে একটি কলেজে প্রোগ্রামিং শিখতে শুরু করেন,  এবং মাত্র ১২ বছর বয়সে মার্ক তার বাবার অফিসের জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছিলেন। এই অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্যে তাৎক্ষণিক বার্তা পাঠানো যেত (বর্তমান মেসেঞ্জারের আদিরূপ)।

শিক্ষাজীবন

মার্ক জুকারবার্গ ১৯৯৬ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্কে আর্ডসলি হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। মার্ক একজন প্রখর মেধাবী ছাত্র ছিলেন এবং এসএটি-তে  ১৫৯০ স্কোর করেন (জাতীয় পর্যায়ে প্রথম শারীর রেজাল্ট)। তিনি আমেরিকার বিখ্যাত বিতর্ক দল এবং fencing দলেরও সদস্য ছিলেন। মেধাবী মার্ক জুকারবার্গ ২০০২ সালে  হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তার আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানের উপর। কিন্তু প্রখর মেধাবী মার্কের গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থায় মন টিকছিল না।

২০০৪ সালে মার্ক জুকারবার্গ ফেসবুক প্রতিষ্ঠার জন্য হার্ভার্ড ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে তিনি বলেছেন যে “হার্ভার্ড ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমার অনুশোচনা হয়, তবে সেই সময়ে জন্য এটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল”

মার্ক জুকারবার্গ হার্ভার্ড না ছাড়লে হয়তো ভালো একজন ইঞ্জিনিয়ার বা চাকুরীজীবী হত, কিন্তু আমরা ফেসবুক পেতাম না।

জুকারবার্গ বলেছেন, আমি ছোটবেলা থেকেই একজন স্ব-শিক্ষিত প্রোগ্রামার। প্রচুর বই পড়তাম, সেই সময়ের কমপিউটারের উপর প্রায় সব বই পড়ে শেষ করেছিলাম এবং যা পড়তাম কম্পিউটারে টেস্ট করে দেখতাম। আমি একজন বই পোকা, বছরে কমপক্ষে ৫০ টির বেশি বই পড়ি। মার্ক হার্ভার্ডে আলফা ইপসিলন পি ব্রাদারহুডের সদস্য ছিলেন।

হার্ভার্ড এ থাকাকালীন, তিনি ডেভিড জে. মালানের কাছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি ক্লাস করেছিলেন। পরবর্তীতে মালানকে তার অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে নিযুক্ত করেন।

আরও পড়ুনঃ ডার্ক ওয়েব: ইন্টারনেটের রহস্যময় অপরাধের জগৎ

মার্ক জুকারবার্গের ক্যারিয়ার

আমরা আগেই জেনেছি, মার্ক জুকারবার্গ ২০০৪ সালে দ্বিতীয় বর্ষ চলাকালীন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেন। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, নিজের ব্রেইনচাইল্ড  ফেসবুক  তৈরিতে মনোনিবেশ করা।

এটা নিয়ে একটা জনপ্রিয় গুজব বা মিথ আছে যে, মার্ক তার ২০ জন বন্ধুকে ডাকে, তার ডাকে মাত্র ৫ জন সাড়া দেন। আসলে এটা একটা আংশিক সত্য ঘটনা।

মার্ক জুকারবার্গ এবং তার রুমমেটরা  ( ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা) এডুয়ার্ডো স্যাভেরিন, এন্ড্রু ম্যাককলাম, ডাস্টিন মস্কোভিটজ এবং ক্রিস হিউজ, তাদের হার্ভার্ড ডর্ম রুমে ফেসবুক তৈরি করেছিলেন।

ফেসবুক প্রথমে The Facebook নামে পরিচিত ছিল এবং এটি শুধুমাত্র হার্ভার্ডের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত  ছিল। হার্ভার্ডে এটি ব্যাপক সাড়া পায় এবং দ্রুত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং তারপরে সাধারণ জনগণের মাঝে ছরিয়ে পড়ে। পরের গল্প সবার জানা, একসময় ফেসবুক বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইট এবং বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান কোম্পানি হয়ে ওঠে।

জুকারবার্গ২০১০ সালে টাইম, পারসন অফ দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন।

জাকারবার্গের কর্মজীবনে সাফল্য এবং বিতর্ক উভয়ে সমানভাবে এসেছে। কিন্তু করা সমালোচকরাও  তার বুদ্ধিমত্তা এবং উদ্যোক্তা মনোভাব কে প্রশংসিত করেছেন।

সংখ্যায়-সালে মার্ক জুকারবার্গ

  • মার্ক জুকারবার্গ বর্তমানে ৩৯ বছর বয়সী।
  • জাকারবার্গের স্ত্রী প্রিসিলা চ্যান একজন চিকিৎসক এবং দাতা। তাদের ২ মেয়ে আছে।
  • তিনি তার সম্পদের ৯৯% দাতব্যের জন্য দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
  • জাকারবার্গের মোট সম্পদ বর্তমানে প্রায় ১২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বিশ্বের ষষ্ঠ ধনী ব্যক্তি ।
  • ফেসবুকে বর্তমানে  ২.৯ বিলিয়নেরও বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে।
  • ফেসবুকের বর্তমান মূল্য প্রায় ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
  • ২০০৪: জুকারবার্গ হার্ভার্ড ছেড়ে দেন ফেসবুক তৈরিতে জন্য মনোনিবেশের জন্য, যখন তিনি মাত্র ১৯ বছর বয়সী ছিলেন।।
  • ২০০৬: ফেসবুক জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়।
  • ২০০৭: ফেসবুক নিউজ ফিড চালু করে।
  • জাকারবার্গ ২০০৭ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে, ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সী বিলিয়নিয়ার হয়েছেন।
  • ২০০৮: ফেসবুক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইট হিসেবে মাইস্পেসের চেয়ে এগিয়ে যায়।
  • ২০১০: জাকারবার্গকে টাইম পারসন অফ দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন।
  • ২০১৪: ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপকে ১৯ বিলিয়ন ডলারে অধিগ্রহণ করে।
  • ২০১৫: ফেসবুক ইনস্টাগ্রামকে ১ বিলিয়ন ডলারে অধিগ্রহণ করে।
  • ২০১৮: জুকারবার্গ মার্কিন কংগ্রেসের সামনে, ফেসবুকের ভুল তথ্য (গুজব) ছড়ানোর ভূমিকা সম্পর্কে সাক্ষ্য দেন।
  • ২০২২: জুকারবার্গ ঘোষণা করেন যে ফেসবুক কে মেটা নামকরণ করা হবে।
  •  ২০২৩ সালের জুলাইয়ে মার্কের, টুইটারের বিকল্প থ্রেড এর কম সময়ে ১০০ মিলিয়ন বাবহারকারির মাইফলকে পৌঁছে।

ফেসবুকের রূপান্তর

বর্তমানে, ফেসবুক কেবলমাত্র একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়। ফেসবুক নিজেকে একটি প্রযুক্তি জায়ান্ট হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছে, যা ক্রমবর্ধমানভাবে বিভিন্ন পণ্য এবং পরিষেবা প্রদান করে যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, এবং ওয়েল। ফেসবুকের “ভার্চুয়াল বিশ্ব” মেটাভারস দিনে দিনে জনপ্রিয় হচ্ছে।

মার্ক জুকারবার্গের মেটা প্রযুক্তি ভবিষ্যতে দুনিয়াতে রাজ করবে। তাই, মেটা তার ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR), কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা  প্ল্যাটফর্ম গুলিতে প্রচুর বিনিয়োগ করছে। ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইনস্টাগ্রাম প্ল্যাটফর্ম গুলিতেও নতুন নতুন ফিচার ও ফাংশন যুক্ত করছে।

ফেসবুকের আইপিও

২০১২ সালের ১৮ মে ছিল প্রযুক্তি দুনিয়ায় একটি ঐতিহাসিক দিন, এইদিনে ফেসবুকের আইপিও শেয়ার বাজারে আসে।  এটি সেই সময়ের সবচেয়ে সফল ইন্টারনেট আইপিও ছিল, যা ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মার্কেট থেকে সগ্রহ করে। আইপিও থেকে পাওয়া অর্থ ফেসবুককে আরও বৃদ্ধি এবং তার পরিসর প্রসারিত করতে  সাহায্য করে। যা পরবর্তীতে ওহাতাপ্প ও ইন্সত্রাগ্রাম অধিগ্রহণ করতে সাহায্য করে।  এবং এটি মার্ক জুকারবার্গকে বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি হতে সহায়তা করেছিল।

এই আর্থিক লাভ যে শুধু ফেকবুক আর মার্ক জুকারবার্গকে পেয়েছে তা নয়, এরফলে ইন্টারনেট ভিত্তিক অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বড় বড় বিনিয়গাকিরদের নজর পড়ে। ফলশ্রুতিতে অনেক টেক স্টার্টআপ, ফিনটেক কোম্পানি নতুন বিনিয়োগ পায়।

 

মার্ক  জুকারবার্গ  এর  সম্পদ

সবচাইতে কম বয়সে বিলিয়নিয়ার হওয়া মার্ক  জাকারবার্গ বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি, যার মোট সম্পদ প্রায় ১২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

জুকারবার্গ তার সম্পদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দাতব্য কাজে দান করেন। তিনি এবং তার স্ত্রী, প্রিসিলা চ্যান, চ্যান-জুকারবার্গ ইনিশিয়েটিভ প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা মানব বিভিন্ন মানব কল্যাণ মূলক কাজের সঙ্গে জড়িত।

তাদের ইনিশিয়েটিভ বেশ কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • শিক্ষা: বিশ্বব্যাপী শিক্ষার উন্নতির জন্য কাজ করছে। এটি শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ এবং শিক্ষার জন্য নতুন প্রযুক্তি উদ্ভবনে অর্থায়ন করে।
  • স্বাস্থ্য: বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সেবার উন্নতির জন্য কাজ করছে। এটি গবেষণা, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং রোগীদের জন্য  উন্নত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে অর্থায়ন করে।
  • সামাজিক ন্যায়বিচার: সামাজিক ন্যায়বিচারের উন্নতির জন্য কাজ করছে। এটি বৈষম্য দূর করা, সামাজিক সুরক্ষা প্রসারিত করা এবং সকলের জন্য সুযোগ তৈরি, এইসব বিসয়ের জন্য অর্থায়ন করে।

জুকারবার্গের দানশীলতা মনোভাব তার সম্পদের পরিমাণের তুলনায় অনেক বড়, তিনি তার জীবনের ৯৯% সম্পদ দানের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি, কিন্তু তিনি তার সম্পদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দাতব্য কাজে ব্যয় করেন।  তার দান গুলি মানবিক পৃথিবী প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Facebook's Mark Zuckerberg apologizes to US Congress
Facebook’s Mark Zuckerberg (মার্ক জুকারবার্গ) apologizes to US Congress

ফেসবুক-মার্কের কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি

ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য, পোস্ট এবং মেসেঞ্জার বার্তা সংগ্রহ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে, এই অভিযোগে দীর্ঘদিনের।

২০১৬ সালের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরপরই এই অভিযোগটি আরও জোরদার হয়। কিছু অভিযোগকারীর ধারন যে,  রাশিয়া ফেসবুক কে টাকা দিয়ে ট্রাম্পের বিরোধীদের নামে, ইচ্ছে করেই অনেক ভুয়া খবর ভাইরাল করে দেয়। ফলে ভোটাররা প্রভাবিত হয়ে ট্রাম্প কে ভোট দেয়।

২০১৮ সালের মার্চ মাসে বেশ কয়েকটি মিডিয়া আউটলেট কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, এরপর মার্কিন মুলুকে শোরগোল পড়ে যায়। ফেসবুক  ও মার্ক জুকারবার্গ জাতীয় ভিলেনে পরিণীত হয়।

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি কি?

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা, একটি ব্রিটিশ রাজনৈতিক পরামর্শদাতা সংস্থা,যারা  ফেসবুকের একটি অ্যাপ ব্যবহার করে প্রায় ৮৭ মিলিয়ন ফেসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ডাটা সংগ্রহ করেছিল।

এই ডাটাগুলো ব্যবহার করে, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ব্যবহারকারীদের ভোটে কালীন মনোবিজ্ঞান বোঝার জন্য একটি এআই মডেল তৈরি করে। যা ট্রাম্প ভোটের সময় রাজনৈতিক প্রচারণায় ব্যবহার করেন ও সফল হন।

২০১৮ সালে কেলেঙ্কারির ফাসের ফলে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা বন্ধ হয়ে যায় এবং এর প্রতিষ্ঠাতারা পদত্যাগ করেন। তোপের মুখে পড়ে মার্ক ও তার ফেসবুক।

এপ্রিল, ২০১৮ সালে মার্ক জুকারবার্গকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস ও সিনেট কমিটির সামনে সাক্ষ্য দিতে হয়েছিল। মার্ককে ফেসবুকের ব্যবহারকারীর ডেটা সুরক্ষার বিষয়ে ও তার উপরে আনিত অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।

চতুর মার্ক সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে, নিজেকে নির্দোষ প্রমানে সক্ষম হন।

এখানে,মার্ক জুকারবার্গ নিজের সাফাই গাইতে বলেন যে, ফেসবুক #MeToo এবং অন্যান্য দুর্যোগের সময় লোকেদের সাহায্য করেছে, একে অপরের সাথে সংযুক্ত হতে।

তিনি আরও বলেছিলেন, যে তিনি এবং ফেসবুক কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার বিষয়ে প্রথম, খবরের মাধ্যমেই জানতে পেরেছেন ।  কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা তাদের অগোচরে এই ডাটা চুরির কাজ করেছে।

তিনি নিশ্চিত করেন যে, ফেসবুক এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে না ঘটার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে।

এক নজরে মার্ক জাকারবার্গ

 

বিষয় তথ্য
নাম মার্ক এলিজার জাকারবার্গ
জন্ম ১৪ মে, ১৯৮৪
জন্মস্থান হোয়াইট প্লেইন, নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
বাবা এডওয়ার্ড জাকারবার্গ, দন্ত চিকিৎসক
মা ক্যারেন জাকারবার্গ, মনোবিজ্ঞানী
স্ত্রী প্রিসিলা চ্যান, চিকিৎসক এবং শিক্ষাবিদ
সন্তান দুই মেয়ে, ম্যাক্স ও অগাস্ট জাকারবার্গ
বাসস্থান  ক্যালিফোর্নিয়া পালো অল্টো তে অবস্থিত একটি ৫,৭০০ বর্গফুটের বাড়ি যা ১৮৯০ সালে নির্মিত।
শিক্ষা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় (২য় বর্ষে ড্রপআউট)
পেশা সফটওয়্যার প্রোগ্রামার, উদ্যোক্তা
পরিচিতি ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)
সম্পদ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (অনুমানিত)
বিতর্ক কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি, ফেসবুকের তথ্য সুরক্ষা নীতি
দাতব্য কাজ “চ্যান-জাকারবার্গ ইনিশিয়েটিভ” দাতব্য সংস্থা

 

“দ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক” মুভি

২০১০ সালে, স্ক্রিপ্ট লেখক অ্যারন সর্কিনের চলচ্চিত্র “দ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক” মুক্তি পায়। সমালোচকদের প্রশংসিত এই চলচ্চিত্রটি আটটি একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন পেয়েছিল।

সর্কিনের চিত্রনাট্য টি লেখক বেন মেজরিচের ২০০৯ সালের বই “দ্য অ্যাকসিডেন্টাল বিলিয়নেয়ার্স“-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি।

জদিও জুকারবার্গ মুভির কাহিনীতে ব্যাপক আপত্তি জানিয়েছিলেন এবং পরে নিউ ইয়র্কে টাইমের এক সাংবাদিককে বলেছিলেন যে, চলচ্চিত্রের অনেক বিবরণ অনুমানভিত্তিক অবাস্তব। উদাহরণস্বরূপ বলেন যে, মুভিতে দেখা যায় জুকারবার্গ ২০০৩ সাল থেকে তার দীর্ঘদিনের বান্ধবীর সাথে ডেটিং করছেন, যে সঠিক নয়।

জুকারবার্গ এবং ফেসবুকের সমালোচনা সত্ত্বেও মুভিটি সফল হয়। জুকারবার্গ নিজেও অনেক জনপ্রিয় হন, টাইম ম্যাগাজিন তাকে ২০১০ সালের বছরের সেরা ব্যক্তি এবং ভ্যানিটি ফেয়ার তাকে তাদের নিউ এস্টাবলিশমেন্ট তালিকায় শীর্ষে রেখেছিল।

লিব্রাঃ ক্রিপ্টো কারেন্সির দুনিয়ায় মার্ক জুকারবার্গ

২০১৯ সালের জুন মাসে, ফেসবুক ঘোষণা করেছিল যে, আমারা ২০২০ সালে লিব্রা  লঞ্চের মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসায় প্রবেশ করব। তার আর্থিক অবকাঠামোকে আরও গতিশিল করতে,  ব্লকচেইন প্রযুক্তি উন্নায়নে মনোযোগ দিয়েছ। পাশাপাশি, ফেসবুক সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা লিব্রা অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেছে। যার মধ্যে বিখ্যাত Spotify এবং Andreessen Horowitz এর মতো প্রযুক্তি জায়ান্ট এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম রয়েছে।

কিন্তু বিতর্ক আর মার্কিন কংগ্রেস মার্কের পিছু ছাড়ছিল না। এই বিনিয়োগের ঘটনা ফেসবুকের অন্য শেয়ার হোল্ডাররা আপত্তি করে, তারা মার্কিন কংগ্রেসে অভিযোগ জানায়। ফলে আবার মার্ক জুকারবার্গকে মার্কিন কংগ্রেসের আইন প্রনেতাদের সামনে জবাবদিহিতা দিয়ে হয়, নিশ্চিত করতে হয় যে, অন্য  শেয়ার হোল্ডাররা রাজি না হলে, লিব্রা অ্যাসোসিয়েশন থেকে সরে দারাবে।

কিছু অধিগ্রহণ করা কোম্পানি

ফেসবুকের সকল সার্ভিস তাদের নিজেদের নয়, তারা ছোট বড় অনেক প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করেছেন।  জুকারবার্গ এবং ফেসবুকের অধিগ্রহণ করা কিছু কোম্পানির নাম এবং সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হল:

  • হোয়াটসঅ্যাপ: বিশ্বব্যাপী ২ বিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে এমন একটি মেসেজিং অ্যাপ। ফেসবুক ২০১৪ সালে ১৯ বিলিয়ন ডলার হোয়াটসঅ্যাপ অধিগ্রহণ করে।
  • ইনস্টাগ্রাম: বিশ্বব্যাপী ১ বিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে এমন একটি ফটো এবং ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ। ফেসবুক ২০১২ সালে ১ বিলিয়ন ডলারে ইনস্টাগ্রাম অধিগ্রহণ করে।
  • অকুলাস ভিআর: একটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কোম্পানি যা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অভিজ্ঞতার জন্য হেডসেট এবং সফ্টওয়্যার তৈরি করে। ফেসবুক ২০১৪ সালের ২ বিলিয়ন ডলার অকুলাস ভিআর অধিগ্রহণ করে।
  • জিফি: অ্যানিমেটেড জিআইএফ শেয়ার করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম। ফেসবুক ২০২০ সালে ৪০০ মিলিয়ন ডলারে জিফি অধিগ্রহণ করে।
  • সিআরএমঃ কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট (সিআরএম) প্ল্যাটফর্ম। ফেসবুক ২০২০ সালে অজানা পরিমাণ টাকায় সিআরএম’কে অধিগ্রহণ করে।
  • CTRL-ল্যাবসঃ ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস প্রযুক্তি তৈরি করে এমন একটি কোম্পানি। ফেসবুক ২০১৯ সালে অজানা পরিমাণ টাকায় CTRL-ল্যাবসকে অধিগ্রহণ করে।
  • রভেলরিঃ নেটওয়ার্কার, ক্রোচেটার এবং অন্যান্য ফাইবার শিল্পীদের জন্য একটি সামাজিক নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম। ফেসবুক ২০২০ সালে অজানা পরিমাণে রভেলরি অধিগ্রহণ করে।

 

মার্ক জুকারবার্গের, টুইটারের বিকল্প থ্রেডস

৬ জুলাই,২০২৩ মার্ক জুকারবার্গ টুইটার বিকল্প থ্রেডস নিয়ে আসেন। মার্কের দাবি, এটি টুইটারের চেয়ে আরও ইউজার ফ্রেন্ডলি এবং কম টক্সিক। থ্রেডস এর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এটিকে অনন্য করে তুলবেঃ

  • থ্রেডস চ্যাট: অনেক সংগঠিত, নিশ্চিত ও সাবলীল হবে।
  • টেক্সটের উপর ফোকাস: চ্যাটের উপর ফোকাস করে, ছবি এবং ভিডিও নয়। তাই টুইটারের মত টেক্সট ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম হবে, যেখানে আরও এক্সট্রা কিছু ফিচার থাকবে।
  • মডারেশন বৈশিষ্ট্য: থ্রেডস স্প্যাম, হয়রানি এবং অন্যান্য ধরনের অপব্যবহার মোকাবেলায় বেশ কয়েকটি মডারেশন ফিচার হবে, যা একে টুইটার থেকে কম বায়াস করবে।

থ্রেডস এখনও উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে এটি ইতিমধ্যেই এটি ১০০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারীতে পৌঁছে গেছে।

জাকারবার্গ বলেছেন যে তিনি থ্রেডস তৈরি করেছেন, কারণ তিনি টুইটার অনেক টক্সিক মাধ্যম হয়ে গেছে।

মার্ক জুকারবার্গ এর উক্তি

বিভিন্ন সময়ের সেরা উক্তি গুলো: 

“বর্তমানে আপনার কাছে আপনার বাসার সামনে একটা কাঠবিড়ালির মৃত্যু, আফ্রিকায় মানুষ মরছে তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ”

_মার্ক জুকারবার্গ

“আমার কাছে ব্যবসার সেরা পরামর্শ, সহজ জিনিস গুলো আগে করুন, অনেকদূর এগিয়ে যাবেন”

_মার্ক জুকারবার্গ

 

“ফেসবুক ব্যবসার জন্য তৈরি হয়নি, এটা ছিল ছিল পৃথিবীকে উন্মুক্ত ও সারা পৃথিবীর মানুষের তৈরির মাঝে সেতুবন্ধনের অভিযান”

_মার্ক জুকারবার্গ

 

“মানুষকে ফেসবুকে শেয়ারের ক্ষমতা দিয়ে পৃথিবীকে আমরা আরো স্পট করেছি”

_মার্ক জুকারবার্গ

 

“ভেঙেচুরে দ্রুত এগিয়ে যান, যদি কিছু না ভাঙ্গে, তাহলে আপনি যথেষ্ট গতিতে লক্ষ্যে ছুটছেন না”

_মার্ক জুকারবার্গ

 

” সবচেয়ে বড় ঝুঁকিটা হল, ঝুঁকি না নেওয়া….. পৃথিবী যে গতিতে বদলে যাচ্ছে এর সমতালে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায় হল, ঝুঁকি নেওয়া”

_মার্ক জুকারবার্গ

 

প্রযুক্তি দুনিয়ার বরপুত্র মার্ক জুকারবারগ ও তার ফেসবুক প্রতিদিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। কিন্তু ইতিমধ্যে ফেসবুক নিজে ও তার ব্যবহারকারীদের কিছু কর্মকাণ্ড এর এতসব অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে। তাই ফেসবুকের উচিৎ এর ডেটা সিকুরিটি নিয়ে কাজ করা আর আমাদের উচিৎ এই সামাজিক মাধ্যমটিকে আরও সামাজিক করে তোলা।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে, আরও লেখা পড়ুনঃ

 

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents