ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (Virtual Reality) বা ভিআর (VR), যেখানে ব্যবহারকারীরা বিশেষভাবে ডিজাইন করা ডিভাইসের মাধ্যমে, সিমুলেটেড (কল্পবাস্তব) জগতের বাস্তব অনুভূতি নিতে পারে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সংজ্ঞার চাইতে একে বোঝা অনেক সহজ , কারণ ভার্চুয়াল জগতের বাস্তব অভিজ্ঞতাই হল VR, যার সাথে ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্নভাবে পরিচিত। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি দিয়ে বর্তমানে অনেক বৈচিত্রপূর্ণ কাজ করা হচ্ছে , উদাহরণস্বরূপ: চিকিৎসদের প্রশিক্ষন এ , VR গেমস, VR মুভি ও এডভেঞ্চার রাইড ইত্যাদিতে। দিন দিন এর ব্যবহারের ক্ষেত্র বেড়েই যাচ্ছে। সিমুলেটেড পরিবেশ তৈরি করতে VR গগলস ও অন্যান্য ডিভাইস ব্যবহার করা হয়, যেন মানুষ ইন্টারঅ্যাক্ট করতে পারে। “ভার্চুয়াল রিয়েলিটি” নিয়ে আজকের লেখাটি , আধুনিক প্রযুক্তি বিজ্ঞানের এই রোমাঞ্চকর জগতের রহস্য উম্মোচন করবে আপনার সামনে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি?
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সবচাইতে সহজ সংজ্ঞাটি হল, একটি সেলফ কন্ট্রোলড পরিবেশ যেখানে ব্যবহারকারী একটি VR সিস্টেমের মাধ্যমে সিমুলেটেড পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ ও বাস্তব জগতের মত অনুধাবন করতে পারে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট, গগলস ও অন্যান্য ডিভাইস, যেমন: Oculus quest 2, Hp reverb G2, এবং সিস্টেমে ব্যবহৃত সেন্সর, ডিসপ্লে এবং মোশন ট্র্যাকিং, মুভমেন্ট ট্র্যাকিং ডিভাইসগুলি ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে মানুষের সামনে আরোও বাস্তব করে তুলে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রকারভেদ
ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে বিভিন্ন প্রকারে ভাগ করা যায় যার, প্রত্যেকটির নিজস্ব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এবং অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আধুনিক কিছু প্রকারভেদ:
নন-ইমার্সিভ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
নন-ইমারসিভ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হল একটি কম্পিউটার-ভিত্তিক ভার্চুয়াল পরিবেশ, যেখানে আপনি সফ্টওয়্যারের মধ্যে কিছু চরিত্র বা কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। যদিও, এখানে ভার্চুয়াল পরিবেশ এর সাথে আপনার সরাসরি যোগ থাকে না।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি যখন পাবজি ভিডিও গেম খেলেন, তখন আপনি গেমের চরিত্রকে ও তাদের গতিবিধি এবং গুণাবলী নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপনি যদি ভায়োলেট হন, আপনি যদি কৌশলী হন আপনার গেমের চরিত্রটিও তাই হবে। টেকনিক্যালি, আপনি ভার্চুয়াল পরিবেশের সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করেন কিন্তু গেমের ভার্চুয়াল পরিবেশের মধ্যে যেতে পারেন না বা ফিল করতে পারেন না।
ইমার্সিভ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
এটি নন-ইমার্সিভ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বিপরীত, এখানে ভার্চুয়াল পরিবেশের সাথে ব্যাবহারকারির সম্পূর্ণ বাস্তবিক অনুভূতি দিয়ে থাকে। এটি আপনাকে এমন ফিল দেবে যে, মনে হবে সেই ভার্চুয়াল পরিবেশেই আছেন এবং আপনার সাথে বাস্তবেই সবকিছু ঘটছে। সাধারণত ভার্চুয়াল থিম পার্কে ভয়ঙ্কর রাইড বা স্কাই ডাইভ ভার্চুয়াল গেম গুলিতে এর বহুল বেবহার দেখা যায়। এখানে বিশেষ হেলমেট, গোগোল , গ্লাভস এবং সেন্স ডিটেক্টর দিয়ে সাজানো বডি কানেকশন ডিভাইস থাকে , এগুলির সমন্বয়ে এতটাই বাস্তব জগৎ তৈরী হয় যে, ব্যাবহারকারী ভুলেই যায় যে এটা বাস্তব না ভার্চুয়াল জগৎ। তবে এটি একটি ব্যয়বহুল ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ।
সেমি-ইমার্সিভ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
সবচাইতে বহুল ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। এটি নন ইমার্সিভ ও সেমী ইমার্সিভ এর মাঝামাধি অবস্থা। এখানে একটি ত্রিডি হেডসেট ব্যাবহারের মাথায় পরিয়ে দেওয়া হয় , তখন সে চারপাশে একটা ভার্চুয়াল পরিবেশ দেখতে পারে। এখানে কোন মোশন সেন্সর নাই , তাই কম্পিউটারের মাউস বা মোবাইল স্ক্রিন স্ক্রল করে ভার্চুয়াল জগতের বাস্তব ফিল পাওয়া যায়। এটাতে ভিজুয়ালি ভার্চুয়াল দুনিয়ার অনুভূতি পাওয়া যায় , কিন্তু শারীরিক কোন অনুভুতু পাওয়া যায় না।
কোলাবোরেটিভ ভিআর
এটা হল চ্যাটিং এর ভার্চুয়াল সংস্করণ , যে দুই বা ততোধিক ব্যাক্তি 3D চরিত্র বা এভাটারের সাহায্য একে ওপরের সাথে কথা বলতে পারে। দূরের মানুষকে ভার্চুয়ালি সামনে নিয়ে আসে , এবং সরাসরি কথা বলার অনুভূতি দিয়ে থাকে।
অনেকেই মৃত স্বজনদের ভার্চুয়াল এভাটারের করে তার সাথে কথা বলার অনুভূতি লাভ করে , অনেক প্রতিষ্ঠান এখন ভার্চুয়াল মিটিং বা কনফারেন্স জনপ্রিয় করে তুলেছে।
আর্গুমেন্ট রিয়েলিটি (AR)
এটি দ্বারা এমন একটি প্রযুক্তিকে বোঝায় যা কম্পিউটারে তৈরি ভার্চুয়াল জগতের সাথে বাস্তব-জগতের পরিবেশকে সহঅবস্থান নিয়ে আসে। ফলে ভার্চুয়াল দুনিয়ার অবজেক্টকে বাস্তব দুনিয়ার জিনিস বলে মনে হয়।
মিক্সড রিয়েলিটি (MR)
এটি আর্গুমেন্ট রিয়েলিটির বিপরীত , এর ধারণা অনেক জটিল , কিছুটা টাইম ট্রাভেলিং এর মতো।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োজনীয়তা কি?
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন বোসপুরে উপর নির্ভর করে। তবে, সাধারণভাবে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বিশেষ কিছু প্রয়োজনীয়তা দেওয়া হলো:
শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে বাস্তব-পৃথিবীর যে কোন ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির একটি নিরাপদ এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে তৈরী করা যেতে পারে। যেমন, বিমান চালানোর আগে পাইলটরা ভার্চুয়াল ককপিটে টেকঅফ , ল্যান্ডিং, ইজেকশন ইত্যাদির অনুশীলন করতে পারে। ফলে প্রশিক্ষণার্থীদের শারীরিক আঘাত বা মূল্যবান সরঞ্জামের ক্ষতি ছাড়াই প্রাথমিক প্রশিক্ষণ সমন্ন করা যায়।
আবার, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে ডাক্তাররা সার্জারি অনুশীলন করতে পারেন,নিরাপদে গাড়ি চালানো শেখা যায়, এবং সেনাবাহিনীর সৈন্যরা যুদ্ধের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে ভার্চুয়ালি তৈরী করে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।
বিনোদনে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা বাসায় বসে কোন কনসার্টে অংশগ্রহণ বা মাঠে বসে খেলা দেখার অনুভূতি পেতে পারে। ভার্চুয়াল গেম , ত্রিডি মুভি, বা ভার্চুয়াল ভ্রমণ ইত্যাদি বর্তমানে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে?
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি জটিল উন্নত প্রযুক্তির সমাহার ,এর মধ্যে রয়েছে ক্যামেরার জ্যামেতিক অবস্থান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডেটা এবং ভিশন (দৃষ্টি) বিজ্ঞান ও ইত্যাদি উন্নত প্রযুক্তি।
এইসব ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল দিয়ে 3D ভার্চুয়াল পরিবেশ তৈরি করা। এখানে দর্শকের অবস্থান কে কেন্দ্রীয় ধরে , গাণিতিক জ্যামিতিক হিসাব করে আশেপাশের বস্তুগুলির 3D ভার্সন তৈরী করা হয়। যে পরিবেশ তৈরী করা হবে , অন্নান্ন উপাদান যেমন শব্দ , গন্ধ , বাতাসের প্রবাহ , হিউমেনিটি ও প্রয়োজনে গ্রাভিটির মত জিনিসগুলি কৃত্তিমভাবে সরবরাহ করা হয়।
তারপর ভার্চুয়াল কন্ট্রোলার, ব্যবহারকারীদের প্রয়োজনের ভিত্তিতে উপরোক্ত উপাদান সমূহের মাত্রা নির্ধারণ করে , বাস্তব পরিবেশের অনুভূতি তৈরী করে। যেমন, স্নো সারভিং এর ক্ষেত্রে ঠান্ডা হাওয়া , প্রয়োজনের কৃত্রিম তুষারপাতের ব্যবস্থা করা হয় এবং কৃত্রিম সার্ফিং চেম্বারটি ব্যাবহারকারির ভার্চুয়াল মাধ্যমে অবস্থানের পরিপেক্ষিতে ডানে বামে উপরে নিচে মুভমেন্ট করে।
ফলশ্রুতিতে , ব্যাবহারকারী বাস্তবের সাথে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির পার্থক্য করতে পারে না।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়জনিয় ডিভাইসগুলি?
ভিআর প্রযুক্তিতে প্রধানত হেডগিয়ার এবং পেরিফেরিয়াল কন্ট্রোলার এবং মোশন ট্র্যাকার থাকে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রধান হার্ডওয়্যারের মধ্যে আছে : কন্ট্রোলার, হেডফোন, হ্যান্ড ট্র্যাকার, ট্রেডমিল এবং 3D ক্যামেরা।
প্রধান দুই ধরনের VR ডিভাইস রয়েছে:
স্ট্যান্ডালন – হেডসেট VR ডিভাইস Oculus VR এর তৈরী Oculus Mobile SDK এবং Samsung Gear VR হল দুটি জনপ্রিয় VR প্ল্যাটফর্ম। এইদুটি মোবাইলের সাথে বেবহার করা যায়।
টিথারড – ভার্চুয়াল রিয়েলিটি জন্য একটি পিসি বা ভিডিও গেম কনসোলের (PS5) মতো ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত হেডসেট। ভালভের স্টিম এর স্টিমভিআর, একটি জনপ্রিয় টিথারড ভিআর প্ল্যাটফর্ম। HTC, Windows অপারেটিং সিস্টেমের জন্য মিক্সড রিয়েলিটি হেডসেট বানিয়ে থাকে৷
আরও পড়ুনঃ ডার্ক ওয়েব: ইন্টারনেটের রহস্যময় অপরাধের জগৎ
অনন্যা ডিভাইসগুলি
হেডসেটের সাথে আরো যে সমস্ত ডিভাইস বেবহার করা হয়
ভিআর গ্লাভস
VR গ্লাভসের একটি সুবিধা হল যে এটি স্পর্শ বা ছোঁয়ার বাস্তব অনুভূতি তৈরি করে, যেটা আপনার ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে আকর্ষক এবং প্রাণবন্ত করে তোলে।
ট্র্যাকার স্যুটঃ সমগ্র শরীরের জন্য
এই স্যুট বেবহার করে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অভিজ্ঞতা আরো বাস্তব হয়ে উঠে কেননা পুরো শরীরে অনুভূতি পাওয়া যায় , যদিও এটি গবেষণা পর্যায়ে আছে। বাজারে কিছু ভার্সন পাওয়া যায়।
ভিআর লেন্স
এটি আপনার হেডসেটের লেন্সকে ছোট স্ক্র্যাচ এবং আঙুলের ছাপ থেকে রক্ষা করে এবং চোখের চাপ কমাতে ক্ষতিকারক আলো ফিল্টার করে। লেন্স গার্ড ইনস্টল করা সহজ।
মোশন কন্ট্রোলার
এই অ্যাড-অন গুলি ব্যবহারকারীদের মিক্সড রিয়েলিটির অনুভূতি দিতে সক্ষম। এটির বেশকিছু উচ্চ ভিজ্যুয়াল এবং ইন্ট্রাক ফিচার আছে।
Omnidirectional Treadmills (ODTs)
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মুভমেন্টের বাস্তব অনুভূতি পাওয়া যায় এই ডিভাইসটিতে। এর উন্নত সেন্সর ও ইন্ট্রিগেটেড সফটওয়্যার ভার্চুয়াল পরিবেশের সাথে সমস্য রেখে বেবহারকিরির গতি – দিক নির্ধারণ করতে পারে।
ভিআর কভার
আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে আপনার ভিআর হেডসেটটি ব্যবহার করেন, তবে সেটা ঘেমে ত্বকে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। Population One, Beat Saber, or FitXR -এর মতো উচ্চ-রেজুলেশন গেম খেলার সময় আপনার ত্বককে রক্ষা করার জন্য ভিআর কভার ব্যবহার করতে পারেন।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি কি সফটওয়্যার ব্যবহার করে?
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হলো ডিভাইস ও সফ্টওয়ারের যৌথ মিথক্রিয়ার ফলাফল। এতে ব্যবহৃত সফটওয়্যার গুলি হলো:
Viewit3D
Viewit3D হল একটি আর্গুমেন্ট রিয়েলিটি (AR) এবং 3D প্রোডাক্ট ভিজ্যুয়ালাইজেশন জন্য ব্যবহৃত এপ্লিকেশন।
Viewit3D-এর প্রাথমিক কাজ হলো: – পরিবেশের ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে 3D মডেল তৈরি করা, সেগুলি পরিচালনা করা এবং সেগুলি কাস্টমাইজ করা – এবং প্রয়োজন অনুসারে হেডসেটের মাধ্যমে প্রকাশ করা।
Unity
এটি জনপ্রিয় এন্ড্রোইড মোবাইল গেম তৈরির সফটওয়্যার। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) জন্য অ্যাপ তৈরি ( 2D, 3D) করতে এটি ব্যবহার করা হয় । Unity তে একটি ভিজ্যুয়াল স্ক্রিপ্টিং প্লাগইন রয়েছে যা গেম ডেভেলপারকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গেম তৈরি ও পরীক্ষার জন্য ইন্টারফেস সরবরাহ করে।
লাইভটুর
iStaging কোম্পানির LiveTour সফটওয়্যার দ্বারা যে কোন বাস্তব জায়গায় 360° VR-এ ভার্চুয়াল মডেল তৈরী করা যায়। যার ফলে , ব্যাবহারকারী কোন জায়গা না গিয়েও সেটার বাস্তব দৃশ্য পেতে পারে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বৈশিষ্ট্য
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বিশেষ বৈশিষ্ট সমূহ:
ভার্চুয়াল দুনিয়া
একটি দুনিয়া যা বাস্তব দুনিয়া থেকে অন্যরকম , যার অনুভব করা যায় , দেখা যায় কিন্তু বাস্তবে তার অস্তিত্ব নেই।
বিচ্ছিন্ন পরিবেশ
ব্যবহারকারীদের একটি ভার্চুয়াল স্পেসে রাখা হয় যা প্রকৃত বিশ্ব থেকে শারীরিকভাবে ডিজিটাল জগতে পরিভ্রমণের সুযোগ দেয়।
সেন্সরি ইনপুট
মানুষের ইন্দ্রিয়ে কৃত্রিম ভাবে বাস্তব অনুভূতির সৃষ্টি করতে পারে। গন্ধ , তাপমাত্রা , প্রাবল্যতা , শব্দ ও দৃষ্টির কৃতিম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
নিয়ন্ত্রণ
সিমুলেটেড ওয়ার্ল্ডে দেখার পাশাপাশি বস্তুগুলি বাস্তবের মতো নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বাণিজ্যিক ব্যবহার
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এখন আর খান ধারণা বা প্রদর্শনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিভিন্ন কাজে ব্যাপকভাবে এর ব্যবহার শুরু হয়েছে:
চিকিৎসায়: ২০২১ সালের নভেম্বরে আমেরিকান FDA, EaseVRx কে অনুমোদন করেছে, তাই প্রাপ্তবয়স্কদের ব্যথা কমানোর জন্য এখন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা যাবে। কগনিটিভ বেহেভিওরাল থেরাপি আর অন্য সব থেরাপির মতোই কিন্তু এখানে মাইন্ড শিফটিং এর জন্য ভিআর ব্যবহার করে।
ভ্রমণ: ‘Try Before You Fly’ ২০১৫ সাল থেকে টমাস কুক এই ধারণা শুরু করে। কোন বিশেষ জায়গায় ভ্রমণের আগে গ্রাহক ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে প্রাথমিক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিতে পারবে। এর ফলে তাদের, বুকিং ১৯০% বেড়ে গিয়েছিলো।
বিনোদন জগতে: সিনেমার চরিত্রগুলির বাস্তব উপস্থিতি অনুভূতি , থ্রিডি , সাইফাই মুভি , এনিমিষেণ ও মোশনের ব্যবহারে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মুভিগুলি বিনোদন জগতের এক নতুন ধারা শুরু করেছে।
প্রোটোটাইপিং: অটোমোবাইল বা গাড়ির শিল্পে নতুন কোন ইঞ্জিন বা গাড়ির মডেল তৈরির আগে এর ভার্চুয়াল প্রোটোটাইপ বানানো হয়। এতে কোম্পানিগুলির খরচ অনেক কমে যায় , কিছু ক্ষেত্রে তারা এই মডেলগুলি দিয়ে পণ্যের প্রাথমিক জরিপ চালায়। এতে পণ্য বাজারে আসার আগেই ক্রেতা তাদের মতামত দিতে পারে।
সামরিক বাহিনীতে: ভার্চুয়াল যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরী করে সৈনিকদের বাস্তব যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ও সামরিক অনুশীলন করা হয়। বিমান , ট্যাঁক , হাম্বি বা আর্টিলারি ইত্যাদি দামি যুদ্ধযান চালকদের ভার্চুয়াল ককপিটে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
মেটাভার্স: বাস্তব দুনিয়ার আরেক রেপ্লিকা। মেটাভার্স এ আপনি ঘরে বসে মার্কেটে শপিং করার অভিজ্ঞতা পাবেন , পণ্য হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে পারবেন। ফেসবুকের মেটাভার্স আপনার ডিজিটাল রেপ্লিকাকে ভার্চুয়াল জগতে যাবতীয় মানবিক আচরণে সাহায্য করে।
গেমিং: এই শিল্পে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অনেক এগিয়ে গেছে এবং খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। গেমাররা নিজেদের ভার্চুয়াল জগতে একটা চরিত্র হিসাবে দেখতে পারে , যেখান থেকে বাস্তবের মতো যুদ্ধ , সারভাইব ও ইত্যাদি বাস্তব কৌশল করা যায় ।
রিয়েল স্টেট: এই শিল্পেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অনেক উন্নতি করেছে , কারণ গ্রাহক চায় যেখানে বাস করবে , সেটা ভালোভাবে দেখতে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে তারা কেনার আগেই সেখানে বসবাসের সুযোগ পেয়ে থাকে। এক জরিপে দেখা গেছে , যেসব রিয়েল স্টেট কোম্পানি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সুবিধা দেয় তাদের বুকিং অন্যদের থেকে ৫০ থেকে ৮০% বেশি হয়ে থাকে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির (ভিআর) সুবিধা এবং অসুবিধা
অন্নান্য প্রযুক্তির মত , ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) এরও সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। একদিকে, VR অসম্ভব লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে যা বাস্তব জগতে সম্ভব নাও হতে পারে। অন্যদিকে, বাস্তব জগতে যা সম্ভব তার তুলনায় বর্তমান VR সিস্টেমের খুবই কার্যকারিতা সীমিত। আসুন ভিআর এর সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি গভীরভাবে দেখে নেওয়া যাক:
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা সমুহ
- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনেক খরচ বাঁচায় , নতুন অভিজ্ঞতার জন্য ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ে ও ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
- বাস্তব অভিজ্ঞতার কারণে শিক্ষার্থীরা জটিল জিনিস সহজে শিখতে পারে।
- বাসায় বসে বাস্তবের মতো শপিং করা যায়, ফলে সময় ও টাকার সাশ্রয় হয়।
- ভার্চুয়াল মডেল তৈরির মাধ্যমে সেরা পণ্য লঞ্চ করা যায়।
- অপটিমাইজড রিটার্ন ও ইনভেস্টমেন্ট (ROI) বৃদ্ধি অনেক বেড়ে যায়।
- গবেষণার খরচ কমে যাওয়ার পণ্য বা সেবার দাম কমে যায়।
- বাস্তব অনুভূতির কারণে দূরত্বের বাধা কমে যায়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অসুবিধা সমুহ
- উচ্চ মূল্য: ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে অনেক আধুনিক ডিভাইস ও প্রযুক্তির কারণে এটি ব্যয়বহুল হতে পারে। ফলে বিশেষ করে ছোট ব্যবসা এবং নিম্ন আয়ের মানুষ এর অভিজ্ঞতা ও সুবিধা নিতে পারে না।
- উন্নত প্রযুক্তির সাথে সামঞ্জস্যের সমস্যা: VR গিয়ার সব ডিভাইস এবং অপারেটিং সিস্টেমে কাজ নাও করতে পারে। ফলশ্রুতিতে এটি ব্যবহার সীমিত হয়ে পরে। এছাড়াও, VR সরঞ্জামগুলির কাজ করার জন্য শক্তিশালী কম্পিউটার বা অন্যান্য বিশেষ হার্ডওয়্যার প্রয়োজন।
- সীমিত রিসোর্স: VR সামগ্রী তৈরি করা অনেক জটিল, কারণ এটি তৈরি করতে বিশেষ দক্ষতা এবং প্রচুর অর্থ লাগে। ফলে বাজারে খুব বেশি ভিআর সামগ্রী প্রাপ্ততা নেই। এটি ভিআর প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলির মধ্যে একটি।
- স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব: কিছু ভিআর প্রযুক্তি, ব্যাবহারকারির মোশন সিকনেস বা অন্যান্য শারীরিক অস্বস্তির কারণ হতে পারে। VR এর দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার আপনার দৃষ্টিশক্তি এবং শারীরিক ভারসাম্য বোধের ক্ষতি করতে পারে। ডিভাইস গুলি থেকে উৎপন্ন ভাইব্রেশন , তাপ , বিকিরণ শরীরের চামড়ার ক্ষতি করে ও মস্তিক , হার্ডের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
- নেতিবাচক প্রভাব: ভিআর-এর উপর সার্বক্ষণিক নির্ভরতা ব্যাবহারকারির মানুসিক ও সামাজিক আচরণের উপর প্রভাব করতে পারে। অধিক সময় সাজানো কৃতিম পরিবেশে অবস্থতা বাস্তব দুনিয়া কে বিরক্তিকর করে তোলে।
- প্রজনন স্বাস্থ্যঝুকি: অধিক পরিমানে ভার্চুয়াল পার্টনারের উপর নির্ভরতার কারণে মানুষের প্রজনন এর উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
ভিআর এবং এআর এর মধ্যে পার্থক্য
ব্যাখ্যার সুবিধার্তে আর্গুমেন্টাল রিয়েলিটিকে , ভার্চুয়াল রিয়েলিটির একটা অংশ হিসাবে দেখানো হলেও দুটোই ভিন্ন জিনিস। দুটি ভিন্ন ধরনের ইমেজিং প্রযুক্তি যা বাস্তব বিশ্বের সাথে ভার্চুয়াল বিশ্বের সেতুবন্ধন হিসাবে কাজ করে , কিন্তু এদের প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা ভিন্ন হয়ে থাকে। যা নিচে একটা ডেটা টেবিলের সাহায্য দেখানো হয়েছে:
ফ্যাক্টর |
ভিআর |
এআর |
---|---|---|
ভার্চুয়ালটি | ভিআর সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল | AR ডিজিটাল সামগ্রীর পাশাপাশি বাস্তব-বিশ্বের কিছু উপাদান ব্যবহার করে |
নিয়ন্ত্রণ | VR ব্যবহারকারীরা সিস্টেম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় | এআর ব্যবহারকারীরা সিস্টেম কে নিয়ন্ত্রন করতে পারে |
সামঞ্জস্য | ভিআর-এর জন্য হেডসেট এর মতো সামঞ্জস্যপূর্ণ ডিভাইস প্রয়োজন | AR এর কোন নির্দিষ্ট ডিভাইসের প্রয়োজন নেই |
পরিবেশ | VR শুধুমাত্র একটি ফিকসনাল রিয়েলিটি জগত | AR ভার্চুয়াল এবং রিয়েল-ওয়ার্ল্ড এর সমন্বয় |
স্বাধীনতা | VR একটি নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে ব্যবহারযোগ্য | AR বাস্তব পরিবেশে তৈরি তাই উপাদানগুলি আশেপাশেই থাকে |
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ভবিষ্যত
যেহেতু ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এখনো তার গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে তাই দ্বিতীয় প্রজন্মের VR ডিভাইসগুলোতে নিচের ফিচারগুলো যুক্ত হবে:
- ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেটগুলি আরোও উন্নত করে তৈরি করা হবে যা আরও শক্তিশালী প্রসেসর সহ 8K ব্যবহার করতে পারবে।
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাপক ব্যবহার হবে , এটি আরো বাস্তব অনুভূতি দিতে পারবে।
- 5জি নেটওয়ার্ক এর ফলে VR এর দূরবর্তী মানুষের সাথে যোগাযোগ আরও তাৎক্ষণিক ও বাস্তব করা সম্ভব হবে।
- 3D দৃশ্যে মাধ্যমে পুরোপুরি ভার্চুয়াল শপিং করা যাবে।
- ইনডোর ম্যাপিং ইত্যাদির মাধ্যমে উন্নত জিও-লোকেশন সিস্টেম তৈরী হবে , তাই আশেপাশের ভার্চুয়াল বস্তুগুলির অবস্থান আরো বাস্তবসম্মত মনে হবে।
দিন দিন ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার আরো বেড়ে যাবে। কিন্তু যে কোন নতুন প্রযুক্তির কারণে আমাদের ব্যাক্তিগত , পারিবারিক ও সামাজিক আচরণে প্রভাব ফেলে , এটির ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম হবে না। তাই আমাদের ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বাবপ্যার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে, আরও লেখা পড়ুনঃ