Dreamy Media BD

মিরসরাই কিসের জন্য বিখ্যাত ও দর্শনীয় স্থান সমূহ

মিরসরাই কিসের জন্য বিখ্যাত

মিরসরাই কিসের জন্য বিখ্যাত ও দর্শনীয় স্থান সমূহ

মিরসরাই উপজেলা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার একটি উপজেলা। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। মিরসরাই উপজেলার উত্তরে ফেনী জেলা, দক্ষিণে সীতাকুণ্ড উপজেলা, পূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এবং পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলা ও ফটিকছড়ি উপজেলা অবস্থিত।

মিরসরাই উপজেলা একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত উপজেলা। এখানে অনেক পাহাড়, লেক, নদী, জলাশয় এবং বনাঞ্চল রয়েছে। অন্যদিকে শিল্পেও এই উপজেলা অনেক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের বৃহত্তম বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ অনেক কল কারখানা এখানে আছে। 

মিরসরাই উপজেলার বিখ্যাত কিছু বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে:

  • মহামায়া লেক।
  • খৈয়াছড়া ঝর্ণা।
  •  নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
  • বাওয়াছড়া সেচ প্রকল্প।
  • করেরহাট বনাঞ্চল।
  • সাহেরখালী উপকূলীয় বনাঞ্চল।
  • ইছাখালী নদী।
  • ফেনী নদী।

শুধু সৌন্দর্য না, পাশাপাশি মিরসরাই উপজেলা একটি শিল্পায়িত এলাকা। এখানে অনেক ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর (অর্থনৈতিক অঞ্চল)

মিরসরাইয়ের কিছু বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থানঃ মিরসরাই বড় মসজিদ

  • কদম রসুল মাজার
  • আফতাব নগর দুর্গ
  • মিরসরাই জমিদার বাড়ি

মিরসরাই এর বিখ্যাত ব্যাক্তিদের নাম 

  • দিলিপ বড়ুয়া – রাজনীতিবিদ 
  • সৈয়দ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান নিযামী শাহ – একুশে পদক প্রাপ্ত 
  • ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন – রাজনীতিবিদ 
  • মোহাম্মদ কবির – মধ্যযুগের কবি 

মিরসরাই এর বিখ্যাত বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান

মিরসরাই উপজেলা, বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত উপজেলা। এখানে অনেক পাহাড়, লেক, নদী, জলাশয় এবং বনাঞ্চল রয়েছে। মিরসরাই উপজেলার বিখ্যাত কিছু দর্শনীয় স্থানের সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ

খৈয়াছড়া ঝর্ণা | মিরসরাই এর বিখ্যাত বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান

খৈয়াছড়া ঝর্ণা, এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝর্ণা। ঝর্ণাটি ৯ টি ধাপে নেমে যায়। প্রতিটি ধাপেই রয়েছে অনন্য সৌন্দর্য। ঝর্ণার প্রথম ধাপটি প্রায় ১০০ ফুট উঁচু। ঝর্ণার প্রতিটি ধাপের চারপাশে রয়েছে সবুজ গাছপালা। ঝর্ণার পানি ঝরে পড়ার শব্দটি খুবই মনোরম। ঝর্ণার চারপাশের সবুজ গাছপালা ঝর্ণার সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

নাপিত্তাছড়া ট্রেইল | মিরসরাই এর বিখ্যাত বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান

নাপিত্তাছড়া ট্রেইল মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। এই ট্রেইলে তিনটি ঝর্ণা রয়েছে: কুপিকাটাকুম, মিঠাছড়ি এবং বান্দরকুম, যা মিরসরাইয়ের নয়দুয়ারি বাজার থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে।

ট্রেইলের বেশিরভাগ অংশই পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে খাঁদ ধরে হাটতে হয়, তবে কিছু জায়গায় পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উঠতে হয়। ট্রেইলটিতে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট ঝর্ণা এবং জলাশয় রয়েছে।

কুপিকাটাকুম ঝর্ণাটি ট্রেইলের সবচেয়ে কাছের ঝর্ণা। এটি একটি ছোট ঝর্ণা, যার উচ্চতা প্রায় ১০ মিটার। মিঠাছড়ি ঝর্ণাটি ট্রেইলের মাঝখানে অবস্থিত। এটি একটি মাঝারি আকারের ঝর্ণা, যার উচ্চতা প্রায় ২০ মিটার। বান্দরকুম ঝর্ণাটি ট্রেইলের সবচেয়ে দূরের ঝর্ণা। এটির উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার।

নাপিত্তাছড়া ট্রেইলটিতে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো বর্ষাকালে। এই সময় ঝর্ণাগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। তবে, বর্ষাকালে ট্রেইলটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায় কারন তখন এটি পিচ্ছিল হতে পারে, তাই সাবধানে হাঁটা উচিত।

মহামায়া লেক | মিরসরাই এর বিখ্যাত বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান

মহামায়া লেক মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত একটি কৃত্রিম লেক। এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। লেকটি ২৫০ একর জায়গা নিয়ে তৈরি এবং লেকের চারপাশে রয়েছে সবুজ পাহাড়। 

মহামায়া লেকে বিভিন্ন ধরনের জলযান রয়েছে। নৌকা ভাড়া করে লেকের চারপাশে ঘুরে দেখা যায়। লেকে সাঁতার কাটা এবং ক্যাম্পিং করা যায়।

মহামায়া লেক ভ্রমণের জন্য জুন থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে যাওয়া ভালো। এই সময়টাতে আবহাওয়া মনোরম থাকে এবং লেকের পানি প্রবাহ বেশি থাকে।

মহামায়া লেক একটি সুন্দর এবং মনোরম জায়গা। লেকের পানি পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ। লেকের চারপাশের সবুজ পাহাড় লেকের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

বাওয়াছড়া সেচ প্রকল্প | মিরসরাই এর বিখ্যাত বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান

বাওয়াছড়া সেচ প্রকল্প বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত একটি সেচ প্রকল্প। এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রকল্পটি ১৯৭৪ সালে নির্মিত হয়েছিল। প্রকল্পটিতে রয়েছে একটি বড় জলাধার, একটি বাঁধ এবং অনেক খাল।

বাওয়াছড়া সেচ প্রকল্পের লক্ষ্য হল মিরসরাই উপজেলার প্রায় ২০০০ একর অনাবাদি জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে এলাকার কৃষকরা বারো মাস ফসল ফলাতে পারছেন।

বাওয়াছড়া সেচ প্রকল্প একটি সুন্দর এবং মনোরম জায়গা। জলাধারের চারপাশে রয়েছে সবুজ পাহাড়। জলাধারে বিভিন্ন ধরনের মাছ রয়েছে।

করেরহাট বনাঞ্চল | মিরসরাই এর বিখ্যাত বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান

করেরহাট বনাঞ্চল চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা। বনাঞ্চলটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা এবং প্রাণী। 

বনাঞ্চলটি র আয়তন ৭,৫০০ একর , এতে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সেগুন, মেহগনি, আকাশমণি, চাপালিশ, গামারি ইত্যাদি। বনাঞ্চলটিতে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীও রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে হরিণ, বানর, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, পাখি ইত্যাদি।

করেরহাট বনাঞ্চল একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এখানে বিভিন্ন ধরনের পর্যটন কার্যক্রম পরিচালিত হয়, যার মধ্যে রয়েছে ট্রেকিং, ক্যাম্পিং, এবং বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ।

করেরহাট বনাঞ্চল ভ্রমণের জন্য জুন থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে যাওয়া ভালো। এই সময়টাতে আবহাওয়া মনোরম এবং বনাঞ্চলে গাছপালা সবুজ থাকে।

সাহেরখালী উপকূলীয় বনাঞ্চল | মিরসরাই এর বিখ্যাত বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান

এটি মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত একটি উপকূলীয় বনাঞ্চল। সাহেরহখালী উপকূলীয় বনাঞ্চলটি ৩০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। বনাঞ্চলটিতে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কেওড়া, গরান, গেওয়া, লবণাক্ত বাঁশ ইত্যাদি। বনাঞ্চলটিতে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীও রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে হরিণ, বানর, কুমির, সাপ, পাখি ইত্যাদি।

সাহেরহখালী উপকূলীয় বনাঞ্চলের কিছু বিশেষত্ব হল:

  • এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপকূলীয় বনাঞ্চল।
  • এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা।
  • বনাঞ্চলটিতে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা এবং প্রাণী রয়েছে।
  • এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।

ইছাখালী নদী | মিরসরাই এর বিখ্যাত বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান

ইছাখালী নদী বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত একটি নদী। এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। নদীটি ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ। নদীর দুই তীরে রয়েছে সবুজ পাহাড়। 

 

ইছাখালী নদী একটি সুন্দর এবং মনোরম জায়গা। নদীর পানি পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ। নদীর দুই তীরের সবুজ পাহাড় নদীর সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

ইছাখালী নদীতে বিভিন্ন ধরনের জলযান রয়েছে। নৌকা ভাড়া করে নদীর চারপাশে ঘুরে দেখা যায়। নদীতে সাঁতার কাটা এবং ক্যাম্পিং করা যায়।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর | মিরসরাই এর বিখ্যাত বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় অবস্থিত একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এটি দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং এর আয়তন প্রায় ৩০ হাজার একর।

ইতিহাস

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের পরিকল্পনা ২০০৯ সালে শুরু হয়েছিল। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, কাজ এখনও চলমান। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের সম্ভাবনা ব্যাপক। এটি আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই, বেজা ১২৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ৫,৬১৪ একর জমি বরাদ্দ করেছে এবং তাদের প্রস্তাবিত বিনিয়োগ প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের সম্ভাব্য সুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • কর্মসংস্থান বৃদ্ধি: এই শিল্পনগরটি আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
  • রপ্তানি বৃদ্ধি: এই শিল্পনগরটি ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি নিশ্চিত করবে।
  • অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: এই শিল্পনগরটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
  • উন্নত অবকাঠামো: এই শিল্পনগরটিতে উচ্চমানের ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ এবং উন্নত অবকাঠামো থাকবে।
  • পরিবেশবান্ধব: এই শিল্পনগরটি পরিবেশবান্ধব হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই শিল্পনগরটি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, রপ্তানি বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।

মিরসরাইয়ের কিছু বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থান

মিরসরাই জমিদার বাড়ি

মিরসরাই উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়নের মিয়াপাড়া গ্রামে অবস্থিত মিরসরাই জমিদার বাড়ি। এটি অষ্টাদশ শতকের আগে নির্মিত একটি দোতলা ভবন। জমিদার শেখ ওয়াসিল চৌধুরীর জন্য এই বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছিল। বাড়িটির ছাদে লোহার গার্ডার ব্যবহার করা হয়েছে, যা ছিল সেই সময়ের জন্য একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।

বাড়িটির ভেতরে বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্ম ও নকশা রয়েছে। সামনে একটি পুকুর রয়েছে এবং বাড়ির চারপাশে একটি বিশাল বাগান রয়েছে।

বর্তমানে জমিদার বাড়িটি প্রায় ধ্বংসের মুখে। সরকারি উদ্যোগে বাড়িটি সংস্কার করে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

মিরসরাই বড় মসজিদ

মিরসরাই বড় মসজিদ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এটি উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজারের অর্ধ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের পশ্চিম পাশে ও ছুটি খাঁ দিঘির পূর্ব পাড়ে অবস্থিত। 

এই মসজিদের নির্মাণকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায় না। তবে ধারণা করা হয় যে, এটি পঞ্চদশ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। মসজিদটিতে একটি বৃহৎ আয়তাকার হল রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ৩২.৫ মিটার এবং প্রস্থ ১৯.৫ মিটার। হলটির মাঝখানে একটি বিশাল গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের চারপাশে চারটি মিনার রয়েছে, যার প্রতিটির উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার।

মিরসরাই বড় মসজিদটি লোহার খুঁটি এবং কাঠের কাঠামোতে নির্মিত। মসজিদের দেয়ালগুলো ইট দিয়ে তৈরি এবং এতে বিভিন্ন ধরনের নকশা রয়েছে। মসজিদের দরজা ও জানালাগুলো কাঠের তৈরি ।

কদম রসুল মাজার

কদম রসুল মাজার মিরসরাই উপজেলার একটি ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনা যা উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের বাঁশখালী গ্রামে অবস্থিত। 

এই মাজারের ইতিহাস সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায় না। তবে ধারণা করা হয় যে, এটি ১৬শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। মাজারের কেন্দ্রস্থলে একটি পাথরের টুকরো রয়েছে, যাকে বলা হয় “কদম রসুল” বা “নবী মুহাম্মদের পদচিহ্ন”। এই পাথরের টুকরোটি একটি আরব বণিকের কাছ থেকে ঈসা খাঁ নামক একজন ব্যক্তি কিনেছিলেন।

কদম রসুল মাজারটি একটি ছোট্ট মসজিদ। মসজিদটিতে একটি আয়তাকার হল রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ১০ মিটার এবং প্রস্থ ৬ মিটার। হলটির মাঝখানে একটি বিশাল গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের চারপাশে চারটি মিনার রয়েছে, যার প্রতিটির উচ্চতা প্রায় ১০ মিটার।

আফতাব নগর দুর্গ

আফতাব নগর দুর্গ মিরসরাই উপজেলার একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। এটি উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার আফতাব নগর গ্রামে অবস্থিত। 

এই দুর্গের নির্মাণকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায় না। তবে ধারণা করা হয় যে, এটি ষোড়শ শতাব্দীতে একজন সুফি সাধক আফতাব উদ্দীন কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল।

আফতাব নগর দুর্গটি একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত। দুর্গটিতে একটি আয়তাকার প্রাচীর রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১০০ মিটার এবং প্রস্থ প্রায় ৫০ মিটার। প্রাচীরের উচ্চতা প্রায় ১০ মিটার। দুর্গের মধ্যে একটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা এবং একটি পুকুর রয়েছে।

মিরসরাই এর বিখ্যাত ব্যাক্তিদের নাম 

চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম ও সংক্ষিপ্ত জীবনী 

দিলিপ বড়ুয়া – রাজনীতিবিদ 

দিলীপ বড়ুয়া একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল-এর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৯ সালে সরকারের মন্ত্রিসভার শিল্পমন্ত্রী ছিলেন।

দিলীপ বড়ুয়া ১৯৪৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৪ সালে দশম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালীন সময়ে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের যোগ দেন। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। ১৯৬৯ সালে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৭২ সালে ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। বড়ুয়া ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত যুব ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন।

সৈয়দ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান নিযামী শাহ – একুশে পদক প্রাপ্ত 

সৈয়দ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান নিজামী শাহ্ একজন বিখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত, লেখক, ও সমাজসেবক। তিনি চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার উত্তর ইছাখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাত্র ৭ বছর বয়সে কোরআনে হাফেজ হন। তিনি ১৯৬০ সালে ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা হতে টাইটেল (কামেল) পরীক্ষায় হাদিস বিভাগে বোর্ডে প্রথম শ্রেনীতে প্রথমস্থান অর্জন করেন।

সৈয়দ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান নিজামী শাহ্ ইসলামী গবেষণায় বিশেষ অবদান রেখেছেন। তিনি পবিত্র কোরআন ও হাদীসের উপর বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • তাফসিরে মাশাহেদুল ঈমান
  • তাফহিমুল বোখারী
  • ফাতহুল বারী
  • হেদায়াতুস সুন্নাহ
  • আল-ইসলাহ

সৈয়দ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান নিজামী শাহ্ ২০২০ সালে ইসলামী গবেষণায় অবদানের জন্য একুশে পদক লাভ করেন। বর্তমানে, তিনি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত জামেয়া রহমানিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ।

ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন – রাজনীতিবিদ 

ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন হলেন একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের সাংসদ। তিনি ৭ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন ১৯৪৩ সালের ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ধুম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৫ সালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৬২ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ৩ নং সেক্টরের অধীনে মিরসরাই ও ফটিকছড়ি এলাকায় যুদ্ধ করেন।

স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি একজন সফল রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা। তিনি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখেছেন।

মোহাম্মদ কবির – মধ্যযুগের কবি 

মোহাম্মদ কবির (১৭১৮-১৭৯৪) ছিলেন একজন মধ্যযুগের কবি। তিনি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বাঁশখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন ধর্মীয় কবি। তিনি তার কবিতাগুলিতে ইসলামের শিক্ষা ও নীতিমালা প্রচার করেছেন।

মোহাম্মদ কবিরের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:

  • বুলবুল রহস্য
  • আত্মকথা
  • আখলাকুল মুয়ামিনিন
  • আল-মুসাফির
  • আল-মুহসিন

মোহাম্মদ কবিরের কবিতাগুলি বাংলা সাহিত্যে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

যেভাবে যাবেন মিরসরাই ভ্রমনে 

মিরসরাই এর যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত ভালো।  এখানে বাস, ট্রেন ও বিমান তিন ভাবেই যাওয়া যায়।

বাস: ঢাকা থেকে মিরসরাই যাওয়ার জন্য প্রচুর বাস রয়েছে। বাসে করে যেতে সময় লাগে প্রায় ৪-৫ ঘন্টা। ঢাকার সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে সরাসরি মিরসরাই যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। বাস ভাড়া প্রায় ৪০০-৫০০ টাকা। 

 

ট্রেন: ঢাকা থেকে মিরসরাই যাওয়ার জন্য সরাসরি ট্রেন নেই। তবে ঢাকা থেকে ফেনী বা সীতাকুণ্ড যাওয়ার ট্রেন পাওয়া যায়। ফেনী থেকে মিরসরাই যাওয়ার জন্য বাস পাওয়া যায়। ফেনী থেকে মিরসরাই যেতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘন্টা। ট্রেন ভাড়া প্রায় ২৫০ টাকা এবং বাস ভাড়া প্রায় ১০০ টাকা। 

বিমান: ঢাকা থেকে মিরসরাই যাওয়ার সবচেয়ে দ্রুত উপায় হল বিমানে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর, আপনি চট্টগ্রাম থেকে মিরসরাই যাওয়ার জন্য বাস বা সিএনজি ভাড়া করতে পারেন। চট্টগ্রাম থেকে মিরসরাই যেতে প্রায় ১ ঘন্টা সময় লাগে।

 

শেষ কথা | মিরসরাই কিসের জন্য বিখ্যাত

বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর জায়গাগুলির একটি মিরসরাই।  এটি প্রকৃতি, শিল্প ও ইতিহাস অনেক কিছুর জন্যই বিখ্যাত।  এই জাতীয় আরো লেখা পড়তে আমাদের ব্লগ নিয়মিত পড়ুন।  ধন্যবাদ।  

Also Read: সাজেকের সেরা রিসোর্টের তালিকা

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents