২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
প্রতিটি মেয়ের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টি হল গর্ভবস্তা।এই সময়ে মা ও অনাগত শিশু উভয়েরই অনেক বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে মা ও সন্তান উভয়েরই সঠিক খেয়াল রাখা প্রয়োজন। এই সময়টাতে গর্ভবতী মায়ের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা। শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি মানসিক পরিবর্তনও হয়ে থাকে।
তাই এই সময়টাতে খাবার-দাবারের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হয়। গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে খাবার,চলাফেরা ও স্বাস্থ্য সচেতন হতে হয়।কারন গর্ভের সন্তানে ভালোভাবে বেড়ে উঠার জন্য একজন গর্ভবতী মায়ের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত এবং সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।গর্ভবস্থায় শুরুর দিকে প্রতিটি মায়ের পরিপূর্ণ পুষ্টি গ্রহন করতে হবে।
তা না হলে সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ঘাটতি দেখা দেবে। প্রতিটি মা চায় তার গর্ভের সন্তান যেন ভালোভাবে বেড়ে উঠে এবং তাদের মানসিক বিকাশ ভালোভাবে হয়। সেক্ষেত্রে প্রতিটি মাকে তাদের গর্ভবস্থায় নিয়মিত ভালোভাবে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।গর্ভবস্থায় প্রতিটি মায়ের শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরির দরকার পরে। কারন এসময়ে প্রতিটি মায়ের অমরা গঠিত হয়ে থাকে।
তাইতো অনেকে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে যে গর্ভাবস্থার প্রথম দুই মাস খাবারের তালিকায় কি কি খাবার রাখবে। আজকের আর্টিকেলে ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই চলুন দেরি না করে এখন আর্টিকেলটি শুরু করা যাক:
২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
গর্ভবতী মায়ের জন্য গর্ভাবস্থার প্রথম দুই মাস বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় গর্ভবতী মায়ের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এবং বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে থাকে। এই কারণে গর্ভাবস্থায় শুরুর দিকে গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকায় কিছু পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার রাখা প্রয়োজন। চলুন জেনে নেই গর্ভাবস্থার প্রথম দুই মাস গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকা:
১)ভিটামিন সি
ভিটামিন সি গর্ভাবস্থায় শুরুতে একটি শিশুকে নানা দিক থেকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। গর্ভ অবস্থায় গর্ভবতী মা শিশুর সব দিকে খেয়াল রাখতে পারে না তবে ভিটামিন সি খাবারের মাধ্যমে অবশ্যই শিশুর শারীরিক ত্বক হাড়ের বিকাশ এবং দৈহিক সুস্থতা বজায় রাখতে অনেক বেশি সাহায্য করে ভিটামিন সি। চলুন জেনে নিয় কোন খাবারগুলো শিশুর বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে।
১)জাম
২)আনারস
৩)পেঁপে
৪)আঙুর
৫)মাল্টা কমলালেবু
৬)কাঁচা মরিচ
৭)পুদিনা পাতা
৮)সবুজ জাতীয় শাকসবজি
২)তন্ত
গর্ভকালীন অবস্থায় গর্ভবতী মায়ের নানান ধরনের সমস্যায় যেমন হজম শক্তির সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তন্ত জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। এই খাবারগুলো খাওয়ার ফলে অবশ্যই আপনাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে। চলুন জেনে নিয় কোন খাবারগুলো তন্ত জাতীয় খাবার:
১)গাজর
২)কমলা
৩)আপেল
৪)শিম
৫)ডাল
৬)মটর
৩)ফ্যাট
ফ্যাট জাতীয় খাবার গর্ভাবস্থায় একটি শিশুর দৈহিক বিকাশের উন্নতি ঘটাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। উল্লেখ্য এখানে ফ্যাট জাতীয় খাবার বলতে কোন ধরনের ফাস্ট ফুড বোঝানো হয় না। যে সকল খাবারের মধ্যে দুধ জাতীয় খাবার তৈরি করা হয় সেই সকল খাবার ফ্যাট জাতীয় খাবার। চলুন জেনে নিয় ফ্যাট জাতীয় খাবার কোন গুলো:
১)মাংস
২)আখরোট
৩)কাজুবাদাম
৪)চিনাবাদাম
৫)জলপাই
৬)তেলের বীজ
৭)কুমড়া
৪)জিংক
জিংক জাতীয় খাবার গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।জিংক জাতীয় খাবার তখন প্রয়োজন হয় যখন সবচাইতে বেশি বমি বমি ভাব এবং বদহজম এবং নানান ভাবে পেটের সমস্যা হয়। ঠিক এই কারণে দুই মাসের গর্ভবতী মায়ের জন্য এই খাবার অনেক বেশি প্রয়োজন। চলুন জেনে নিই জিংক জাতীয় খাবার কোন গুলো :
১)সবুজ শিম
২)পেঁয়াজ
৩)আলু
৪)মিষ্টি কুমড়ার বিচি
৫)কাজুবাদাম
৬)মাশরুম
৫)প্রোটিন
প্রোটিন জাতীয় খাবার একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই প্রয়োজন। এইজন্য গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় অবশ্যই প্রোটিন জাতীয় খাবার রাখা প্রয়োজন। চলুন জেনে নিয় প্রোটিন জাতীয় খাবার কোনগুলো:
১)ওটোস
২)বাদাম
৩)পেয়ারা
৪)ফুলকপি
৫)আলু
৬)মটরশুটি
৭)মসুর
৮)মাংস
৯)মাছ
১০)ডিম
১১)দুধ
৬)ক্যালসিয়াম
গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবারের প্রচুর প্রয়োজন রয়েছে।কারন গর্ব অবস্থায় ভ্রূণের শারীরিক গঠন তৈরি হতে শুরু করে সেই কারণে অবশ্যই গর্ভবতী মায়ের সেই সময় ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার বেশি বেশি খাওয়া প্রয়োজন। তাহলে চলুন জেনে নিই ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার সম্পর্কে:
১)বেগুন
২)ব্রকলি
৩)কমলালেবু
৪)চিংড়ি
৫)সবুজ শাকসবজি
৬)মাখন
৭)ডিম
৮)দুধ
৭)আয়রন জাতীয় খাবার
গর্ভাবস্থার একজন গর্ভবতী মায়ের মর্নিং সিকনেস ও অবসাদ জনিত ক্লান্তি দেখা যায় এ সকল ক্লান্তি থেকে দূর করার জন্য অবশ্যই আয়রন জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। সকল ধরনের অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করতে এ সময় আয়রন জাতীয় খাবার বেশি সাহায্য করে । আর আয়রন জাতীয় খাবার রক্ত প্রবাহ হতে অনেক বেশি সাহায্য করে। তাই গর্ব অবস্থায় গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় অবশ্যই আয়রন জাতীয় খাবার রাখুন।তাহলে চলুন জেনে নিই আয়রন জাতীয় খাবার সম্পর্কে:
১)মাছ
২)কাজুবাদাম
৩)ফলমূল
৪)শিম
৫)মেথির শাক
৬)পালং শাক
৭)বিভিন্ন শাকসবজি
৮)স্টাচ জাতীয় খাবার
গর্ভাবস্থার শুরুতে একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অবশ্যই স্টাচ জাতীয় খাবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিনের যে চাহিদা শক্তি রয়েছে সেই চাহিদা শক্তি জোগাতে অবশ্যই স্টাচ জাতীয় খাবার অত্যন্ত বেশি গুরুত্বপূর্ণ । তাহলে চলুন স্টাচ জাতীয় খাবার গুলো সম্পর্কে জেনে নিই:
১)আলু
২)ভাত
৩)রুটি
৪)লাল আটা রুটি
৯)ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড
গর্ভাবস্থার শুরুতে গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকায় ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার রাখা অত্যন্ত জরুরী। কারণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড শিশুর বুদ্ধি ও স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে ব্যাপক সাহায্য করে। গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করলে শিশুর শৈশবে চোখের দৃষ্টিশক্তি, বুদ্ধি ও ভাষার বিকাশ খুব ভালোভাবে হয়। তাই গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকায় ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার রাখার পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা ভালো। এগুলো ছাড়াও গর্ভাবস্থায় প্রথম ২ মাসে ভিটামিন এ, ডি ও সিযুক্ত খাবার খেতে হবে।
১০)প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
গর্ভাবস্থার প্রথম দুই মাসে গর্ভবতী মায়ের প্রায় ৭০ থেকে ১০০ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন হয়। তাই প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন,মাংস, মাছ,ডিম, ডাল ইত্যাদি খেতে হবে।
১১)আঁশ জাতীয় খাবার
গর্ভাবস্থায় শুরুর দিকে কোষ্ঠকাঠিন্য খুবই কমন ব্যাপার। তাই এই সকল সমস্যা কমাতে উচ্চ গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকা ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন বাদামি ভাত, ওটস, ছোলা, সবুজ মটর,মুগ, ভুট্টা, ব্রকলি, শাক-সবজি ইত্যাদি খাবার রাখতে পারেন। এ ছাড়াও গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে।
গর্ভাবস্থার প্রথম দুই মাসে যা খাবেন না
গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকতে কী খাবেন সেটা জানার পাশাপাশি কী খাবেন না সেটা জানাও অত্যন্ত জরুরি। তাহলে চলুন জেনে নেই গর্ভাবস্থার প্রথম দুই মাস যা খাওয়া যাবে না:
১)গর্ভাবস্থার এই সময়ে অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যেমন চা বা কফি কম খেতে হবে। কারণ অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাবার গর্ভপাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।
২) এই সময় সামুদ্রিক মাছ কম খেয়ে মিঠা পানির মাছ খাবেন৷ কারণ সামুদ্রিক মাছে পারদের পরিমাণ বেশি থাকায় ভ্রুণের মস্তিষ্কের বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
৩) আধা সেদ্ধ ডিম বা মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷ ডিম ও মাংসে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া, লিস্টেরিয়া, ইত্যাদি থাকতে পারে যা গর্ভাবস্থার প্রাথমিক দিকে গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। তাই প্রাণিজ প্রোটিন ভালোভাবে রান্না করে খাবেন। ডিমের পোচ, হাফ বয়েলড ডিম বা আধসেদ্ধ মাছ, মাংস একদমই খাবেন না। আনারস, কাঁচা পেঁপে খাওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে।
সবশেষে
গর্ভাবস্থার শুরুর ২ মাস গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়টাতে গর্ভবতী মায়ের সঠিক খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে তার খাবারের তালিকায় সঠিক খাবার রাখতে হবে। কারণ শুরুর দিকে যদি মা ও সন্তান ভালো না থাকে তাহলে শেষের দিকে অনেক সমস্যা হতে পারে। তাই উপরোক্ত আলোচনা যে খাবারের তালিকা দেওয়া আছে গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকায় এইসব খাবার রাখতে পারেন। আশা করি আজকের আর্টিকেল থেকে আপনি কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন । আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
Also Read:বাচ্চাদের সর্দি কাশির ঔষধের নাম