বঙ্গবন্ধু টানেল | কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান

বঙ্গবন্ধু টানেল _ কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান

বঙ্গবন্ধু টানেল এর উদ্বোধন বাংলাদেশের জন্য আরেকটি একটি মাইলফলক।  এই টানেলের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হল। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮শে অক্টবর ২০২৩ শনিবার নতুন এই মেগা প্রকল্পের উদ্ভোদন করেন।  

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বঙ্গবন্ধু টানেলের আদ্যোপান্ত ইতিহাস ও বিস্তারিত তথ্য জন্য।  আর্টিকেলটি মূলত বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষা ( বিসিএস, প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ, ব্যাংক জব ) ইত্যাদি চাকরির জন্য প্রস্তুতি স্বরূপ লেখা হয়েছে।  

বঙ্গবন্ধু টানেল  | সংক্ষিপ্ত ইতিহাস 

লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা নদী কর্ণফুলীর দুই প্রান্তকে যুক্ত করতে টানেল নির্মাণের প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি ২০০৬ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এক সভায় এই প্রস্তাব দেন।

  • ২০১৪ সালের ১০ জুন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বেইজিংয়ে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (CCCC)-এর সাথে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
  • ২০১৫ সালের ১৭ জুন: বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে।
  • ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর: কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের জন্য খনন কাজ শুরু হয়।
  • ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি: একাদশ জাতীয় সংসদের নবগঠিত মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠকে, চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল কর্ণফুলী টানেলটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণের প্রস্তাব দেন।
  • ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় টানেল প্রকল্প এলাকার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে সুইচ টিপে আনুষ্ঠানিকভাবে খনন কাজের উদ্বোধন করেন।
  • ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর নিচে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধন করেন।

বঙ্গবন্ধু টানেল  | কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান 

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্ভোদন হয় কবে? 

উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হয় ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলটি উদ্বোধন করেন।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু টানেল কোথায় অবস্থিত?

উত্তর: বঙ্গবন্ধু টানেল চট্টগ্রাম, বাংলাদেশে অবস্থিত। (এটি চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করে)

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কোনটি?

উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু টানেলের দৈর্ঘ্য কত?

উত্তর: বঙ্গবন্ধু টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার (২.০৬ মাইল)।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রস্থ কত?

উত্তর: বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রস্থ ১০.৮ মিটার (৩৫ ফুট)।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু টানেলের উচ্চতা কত?

উত্তর: বঙ্গবন্ধু টানেলের উচ্চতা ১৪.৫ মিটার (৪৭ ফুট)।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু টানেলের টিউব সংখ্যা কত?

উত্তর: বঙ্গবন্ধু টানেলের টিউব সংখ্যা ২টি।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রতিটি টিউবের ব্যাস কত?

উত্তর: বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রতিটি টিউবের ব্যাস ১২.৫ মিটার (৪১ ফুট)।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু টানেল খননের পদ্ধতি কী?

উত্তর: বঙ্গবন্ধু টানেল ডাবল-শেল ড্রিলিং পদ্ধতিতে খনন করা হয়েছে।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ ব্যয় কত?

উত্তর: বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ ব্যয় ১০,৬৮৯ কোটি টাকা।

প্রশ্ন: এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে সুদের হার কত?

উত্তর: এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে সুদের হার ২ শতাংশ।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ কাজ কবে শুরু হয়?

উত্তর: বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ কাজ ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু টানেল কবে উদ্বোধন করা হয়?

উত্তর: বঙ্গবন্ধু টানেল ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয়।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন কে করেন?

উত্তর: বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু টানেল কোথা থেকে কোথায় সংযোগ স্থাপন করে?

উত্তর: বঙ্গবন্ধু টানেল চট্টগ্রামের দক্ষিণ পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা উপজেলাকে সংযোগ স্থাপন করে।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু টানেলের অর্থায়ন কে করে?

উত্তর: বঙ্গবন্ধু টানেলের অর্থায়ন করে চীনের এক্সিম ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু টানেলের মালিক কে?

উত্তর: বঙ্গবন্ধু টানেলের মালিক বাংলাদেশ সরকার।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু টানেলে কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারে?

উত্তর: বঙ্গবন্ধু টানেলে পণ্যবাহী ট্রাক, বাস, মোটরগাড়ি (মোটরসাইকেল ব্যতীত) চলাচল করতে পারে।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু টানেল চালুর ফলে কী কী সুবিধা হবে?

উত্তর: বঙ্গবন্ধু টানেল চালুর ফলে চট্টগ্রাম শহরের সাথে কক্সবাজার এবং অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলির মধ্যে যোগাযোগ সহজ হবে। এটি পরিবহন সময় ও ব্যয় কমাবে।

 

বঙ্গবন্ধু টানেল  | সংক্ষিপ্ত বিবরণ 

উপরের প্রশ্নোত্তর গুলির আলকে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণী টেবিল দেওয়া হল, যেন শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার আগে এক নজরে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেনঃ 

বিষয়তথ্য 
স্থানচট্টগ্রাম, বাংলাদেশ
দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার (২.০৬ মাইল)
প্রস্থ  ১০.৮ মিটার (৩৫ ফুট)
উচ্চতা  ১৪.৫ মিটার (৪৭ ফুট)
টিউব সংখ্যা
প্রতিটি টিউবের ব্যাস১২.৫ মিটার (৪১ ফুট)
খনন পদ্ধতি ডাবল-শেল ড্রিলিং
ব্যয়  ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা
শুরুদক্ষিণ পতেঙ্গা, ৪১ নং ওয়ার্ড
শেষকক্সবাজার সড়ক, আনোয়ারা উপজেলা
নির্মাণ কাজ শুরু২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং।
অর্থায়নচিনের এক্সিম বাংক ও বাংলাদেশ সরকার 
স্বত্বাধিকারীবাংলাদেশ সরকার
নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান  চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)
যানবাহনপণ্যবাহী ট্রাক, বাস, মোটরগাড়ি (মোটরসাইকেল ব্যতীত)
উদ্ভাবন ২৮ অক্টোবর ২০২৩

আরও পড়ুনঃ পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান  

বঙ্গবন্ধু টানেল  | অনুচ্ছেদ 

বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মুলক ও বোর্ড পরীক্ষার উপযোগী একটি  সংক্ষিপ্ত নমুনা অনুচ্ছেদ দেওয়া হল। 

বঙ্গবন্ধু টানেল

বঙ্গবন্ধু টানেল হল বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা উপজেলাকে সংযোগ স্থাপনকারী একটি সুড়ঙ্গ। এটি কর্ণফুলী নদীর নিচে নির্মিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু টানেল বাংলাদেশের প্রথম এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় সড়ক সুড়ঙ্গ।

বঙ্গবন্ধু টানেলের ইতিহাস

বঙ্গবন্ধু টানেলের পরিকল্পনা ২০০৭ সালের দিকে শুরু হয়েছিল। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করা হয়।

বঙ্গবন্ধু টানেল | চুক্তি

বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ কাজ চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) এবং চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিআরবিসি) যৌথভাবে পরিচালনা করেছে। সিসিসিসি টানেলের মূল অংশ নির্মাণের দায়িত্ব পালন করেছে, যেখানে সিআরবিসি সংযোগ সড়কগুলি নির্মাণ করেছে।

বঙ্গবন্ধু টানেল | অর্থায়ন

বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ ব্যয় ১০,৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদি ঋণ হিসাবে দুই শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাকি অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকার করছে।

বঙ্গবন্ধু টানেল | নির্মাণ

বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে ডাবল-শেল ড্রিলিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে দুটি টানেল একই সাথে খনন করা হয়। টানেলগুলির প্রত্যেকটির ব্যাস ১০ মিটার এবং দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার।

বঙ্গবন্ধু টানেল | বায়ুচলাচল

বঙ্গবন্ধু টানেলে পর্যাপ্ত বায়ুচলাচল ব্যবস্থা রয়েছে। টানেলের প্রতিটি প্রান্তে দুটি বায়ুপ্রবাহ ব্যবস্থা রয়েছে। এই ব্যবস্থাগুলি টানেলের ভিতরে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

বঙ্গবন্ধু টানেল | উদ্বোধন

বঙ্গবন্ধু টানেল ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পরদিন থেকে টানেলটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু টানেল | অর্থনৈতিক গুরুত্ব

বঙ্গবন্ধু টানেলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এটি চট্টগ্রাম শহরের সাথে কক্সবাজার এবং অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলির মধ্যে যোগাযোগ সহজ করবে। এটি পরিবহন সময় ও ব্যয় কমাবে।

টানেলের উদ্বোধনের ফলে নিম্নলিখিত অর্থনৈতিক সুবিধা গুলো:

  • শিল্প ও ব্যবসায় উন্নতি
  • পর্যটন শিল্পের বিকাশ
  • কর্মসংস্থান সৃষ্টি
  • পণ্য ও পরিষেবা সরবরাহ বৃদ্ধি

বঙ্গবন্ধু টানেল বাংলাদেশের একটি বড় অবকাঠামোগত অর্জন। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। 

Scroll to Top