Dreamy Media BD

দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ি

দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ি

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস এর ‘দেবী চৌধুরানী’ যাকে ডাকাত রানীও বলা হয়। তার রাজবাড়ী রংপুর বিভাগীয় শহর থেকে পীরগাছা উপজেলার দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। আর দেবী চৌধুরাণীর রাজবাড়ি পীরগাছা উপজেলা পরিষদ হতে মাত্র আধা কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত।

সমারোহের মাঝে প্রায় ৮০ একর সম্পত্তির উপর ইতিহাসখ্যাত  জমিদার দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ি (Devi Chowdhuryan Rajbari)। রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলা কার্যালয় ও পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশনের অনতিদুরে এ জমিদার বাড়ি অবস্থিত। পীরগাছার মন্থনার জমিদার বাড়িকে রাজবাড়ি বলে ডাকে  স্থানীয় লোকজন।

রাজবাড়ির চারি দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে দৃষ্টি নন্দিত ছোট বড় অনেক পুকুর । বাড়ির পিছনে ইতিহাসের কালের সাক্ষী হয়ে কোনমতে বেঁচে আছে দেবী চৌধুরানীর খননকৃত ঢুসমারা খাল অর্থাৎ হঠাৎ বা অকষ্মাৎসৃস্টি । দেবী চৌধুরানী এ খালে নৌকাদিয়ে নদী পথে বিভিন্ন গোপন অবস্থায় যাতায়াত করতেন ।

বিশাল এলাকা নিয়ে ছড়ানো ছিটানো এ রাজবাড়ির অসংখ্য দালান আজ ধ্বংসপ্রায়। দালানের ইট,পাথর ও সুড়কি খুলে পড়েছে ।

দেয়ালের জীর্ণতা ও শেওলার আচড়ে পরগাছা জন্মেছে । ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজবাড়ির নাট্য মন্দির ও কাচারী ঘরটি বর্তমানে পীরগাছা উপজেলার সাব রেজিস্ট্রি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজবাড়ির ভিতরে নির্মিত প্রাচীন মন্দিরগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। জমিদার জ্ঞানেন্দ্র নারায়ন রায় কর্তৃক নির্মিত অপূর্ব কারুকার্য মন্ডিত দেড় শতাধিক বছরের পুরানো দৃষ্টি নন্দিত ত্রিবিগ্রহ মন্দির ধ্বংসের অপেক্ষায় দিন গুনছে ।

এখানে অন্নপুর্ণ বিশেশ্বর, শিব ও হরিহর ৩ টি বিগ্রহ এক মন্দিরের পাশাপাশি কক্ষে স্থাপন করা রয়েছে । বাংলার মন্দির দাম্পত্য ইতিহাসে এক অনন্য বিরল দৃষ্টান্ত । ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ও তাদের এদেশীয় অনুচর দেবী সিং এর অবর্ণনীয় প্রজা পীড়নের বিরুদ্ধে তৎকালীন ভারতবর্ষে প্রথম যে নারী অস্ত্র হাতে রক্তক্ষয়ী ফকির সন্যাসী ও ১৭৮৩ সালে রংপুরর প্রজা বিদ্রোহের নেতৃতে দিয়েছিলেন সেই কিংবদন্তির অগ্নিকন্যা ছিলেন পীরগাছার মন্থনা জমিদার। মন্থনা জমিদার দেবী চৌধুরানীর আসল নাম ছিল ‘‘জয়দুর্গা দেবী চৌধুরানী’’। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় তার রচিত আনন্দমঠ ও দেবী চৌধুরানীর নামে দু’খানা উপন্যাস রচনা করেছিলেন। এখানে প্রতি বছর হিন্দু সম্প্রদায় পূজা পার্বন পালন করে থাকেন ।

দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ি

এ ছাড়াও এখানে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক,  ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন অনুষ্ঠানাদি পালন করে থাকেন। মড়হনা জমিদার জ্ঞানেন্দ্র নারায়নের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ১৯২৮ খ্রিঃ একটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যা পরে তার নামানুসারে জে এন উচ্চ বিদ্যালয় নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তীতে স্থানীয় সমাজসেবীদের প্রচেষ্টায় মন্থনা জমিদার রাজবাড়ী নামে রাজবাড়ী স্কুল প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। ঐতিহাসিক মন্থনা জমিদার প্রতিষ্ঠিত রাজবাড়ীর স্থানসমূহকে ঘিরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলাও সহজ হবে ।

দেবী চৌধুরানী এর মাতার নাম কাশীশ্বরী দেবী এবং বাবার নাম ছিলো ব্রজ কিশোর চৌধুরী। মন্থনার জমিদার নারায়ণ চন্দ্র চৌধুরীর সাথে তার বিবাহ হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর জমিদারির দায়িত্ব তার উপর এসে পড়ে। তিনি প্রজাদের খুব ভালোবাসতেন।

আরো পড়ুন …..যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (বাঘা যতীন)

তখনকার সময় রংপুর অঞ্চলের কালেক্টর হয়ে আসেন জনাথন গুডল্যাড এবং তার দেওয়ান নিযুক্ত হন দেবীসিংহ। দেওয়ান দেবীসিংহ ও তার কর্মচারী হরে রামের উপর রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব প্রদান করেন। রাজস্ব আদায়ে সময় তাদের অত্যাচারে কৃষক জেলে এমনকি জমিদাররাও অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এছাড়াও সেই সময় ইংরেজ নীলকরদের অত্যাচার বেড়ে যায়,তারা জোরপূর্বক উর্বর জমিতে কৃষকদের নীলচাষ করতে বাধ্য করা শুরু করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে দেবী চৌধুরাণী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। আর তার কারণে তিনি ব্রিটিশদের রোষানলে পড়ে। তাকে দমন করার জন্য মীর কাশিমের নেতৃত্বে একদল ইংরেজ সৈন্যবাহিনী পাঠায়। এ যুদ্ধে দেবী চৌধুরানীর সাথে রংপুরের নূর উদ্দিন বাকের মুহাম্মদ জং,ভবানী পাঠক এবং দিনাজপুর, রংপুর ও বগুড়া অঞ্চের শত শত কৃষক অংশ নেয়। ১৭৬০ সালে ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে দেবী চৌধুরাণী জয়লাভ করে। যুদ্ধে ইংরেজ ক্যাপ্টেনসহ অনেকে নিহত হন এবং মীর কাশিম পিছু হটতে বাধ্য হন। দেবী চৌধুরাণীর যুদ্ধে জয়লাভের স্থানটি এখনও মানুষের কাছে “জয়পুর” নামেই পরিচিত।

দেবী চৌধুরানীর নামে রংপুরে দেবী চৌধুরাণী ডিগ্রী কলেজ,চৌধুরাণী রেলস্টেশন,চৌধুরাণী উচ্চ বিদ্যালয়,চৌধুরাণী বাজার রয়েছে। তার খননকৃত বিশাল চন্ডিপুর দিঘি, চৌধুরাণী দিঘি এবং মন্থনার রাজবাড়ি আজো টিকে আছে কালের সাক্ষী বহন করে। দেবী চৌধুরানী ক্ষণজন্মা এক জনহিতৈষী নারী ও তেজস্বী বিপ্লবী। তিনি তার জীবনেও আলোচিত প্রথমে সংসারী ছিলেন পরে সন্নাসী হিসেবে এবং তাকে নিয়ে করা উপন্যাস, গল্প, সিরিয়াল, নাটক ও সিনেমাতে। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়ন পার হলে চন্ডীপুর বাজারে নাপাই চন্ডীর বৈশাখি মেলা হয়। এই স্থানটিতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুদ্ধ করেন দেবী চৌধুরানী। চৌধুরানী বাজারটিও এলাকায় বেশ বড় বাজার হিসেবে পরিচিত। সন্ন্যাসী বিদ্রোহের অন্যতম রূপকার ও খ্যাতিমান নেত্রী দেবী চৌধুরানীর অবাধ বিচরণস্থল ছিল পীরগাছা । নওয়ার দেবীগঞ্জও তার স্মৃতির এলাকা। করতোয়া, তিস্তা, আত্রাই ও কুড়ুম নদীতে ঘেরা এখানকার ঘন বনাঞ্চলে ব্রিটিশদের সাথে তিনি কয়েক দফা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে বিজয়ী হন। তার স্মৃতি থেকেই এর নামকরণ হয় দেবীগঞ্জ। তবে এই নামের পেছনে অন্য একটি মতও আছে। এ জনপদটি পূর্বে হিন্দু-অধ্যুষিত ছিল। কেউ কেউ বলেন, তাদের দেব-দেবীর নাম থেকেই দেবীগঞ্জ নামটি আসতে পারে। এছাড়াও রংপুরের দেবী চৌধুরানী রেলস্টেশন, চৌধুরানী ডিগ্রি কলেজ এবং চৌধুরানী বাজার আজও তার স্মৃতি বহন করে চলেছে। ইতিহাস সংরক্ষণ হোক বা না হোক, সময়ে সময়ে দেবী চৌধুরানী, ভবানী পাঠকদের মতো বিপ্লবীদের আবির্ভাব হয়েছে, যারা আড়ালে থেকে অসহায় মানুষদের রক্ষার জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, তৎকালীন জনসাধারণের শ্রদ্ধা, জনসমর্থনের এবং  ভালোবাসার কারণে ইংরেজরা ‘দেবী চৌধুরানী’কে মেয়ে ডাকাত হিসেবে চিহ্নিত করলেও শত চেষ্টা করে আটক করতে পারেনি। তবে ইতিহাস অনুসন্ধানী অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উল্লেখিত প্রফুল্ল নয় বরং ‘দেবী চৌধুরানী’ ছিলেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার জয়দূর্গাদেবী (ব্রাহ্মণাদেবী) নামের শিবুকুণ্ঠিরাম (বামনপাড়া বা ভুতছড়া) গ্রামের ব্রজ কিশোর রায় চৌধুরী এবং কাশিশ্বরী দেবীর মেয়ে।পীরগাছার জমিদার নারায়ণ চন্দ্র চৌধুরীর সঙ্গে তার বিয়ে হয় এবং সন্যাস বিদ্রোহের সময় তিনি জমিদার ছিলেন। তবে ইংরেজ সরকারের তৎকালীন দলিল দস্তাবেজে ‘দেবী চৌধুরানী’ জমিদার ছিলেন কিনা বা এতে তার সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। দেবী চৌধুরানী’ উপন্যাস সম্পর্কে লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিজেই বলেছেন, ‘দেবী চৌধুরানী’ গ্রন্থের সঙ্গে ঐতিহাসিক ‘দেবী চৌধুরানী’র মিল বড়ই অল্প। তা শ্রীযদুনাথ উপন্যাসটির ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন।

এই অঞ্চলের মানুষের কাছে প্রফুল্লই যে ‘দেবী চৌধুরানী’ ছিলেন সেটাই আজও সর্বজন স্বীকৃত। কিন্তু দেবী চৌধুরানীর ঐতিহাসিক এ ঘটনার স্থাপনা সংরক্ষণ করা হয়নি আজও। তার ফলে স্মৃতিচিহ্নগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। দেখার মতো কোনো স্থাপনা টিকে নেই। এখন এখানে শুধু মকসুদ খাঁ গ্রামে দেখতেই পাওয়া যাবে স্থাপনার জায়গায় ইটের টুকরা।

বগুড়ার শান্তাহার-গাইবান্ধার বোনারপাড়া-রংপুরের কাউনিয়া রেলরুটের রংপুরের চৌধুরানী স্টেশন থেকে বের হয়ে পাকা রাস্তা ধরে রংপুরের দিকে যেতেই হাতের ডান দিক দিয়ে হেঁটে চৌধুরানী বাজারে যেতে সময় লাগবে মাত্র ৫ মিনিট। বাজারে কৈকুড়ী ইউনিয়ন পরিষদ পার হয়ে যাওয়ার পর হাতের বাম পাশে একটি পাকা রাস্তা পাওয়া যাবে। এই রাস্তাটি গেছে জালালগঞ্জ বাজারের দিকে।

এখন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাযোগে জালালগঞ্জ রোডের রামচন্দ্রপাড়ার নুরনবীর দোকানের পেছন দিয়ে গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে যেতে হবে পূর্ব মকসুদ খাঁ হাজীপাড়ার আব্দুল মোত্তালেব, চাঁন মিয়া ও আবু দাইয়ানের বাড়ি সংলগ্ন দেবী চৌধুরানীর পুরনো স্থাপনার জায়গায়। চৌধুরানী বাজার থেকে জালালগঞ্জ বাজারের দিকে যাওয়ার সময় রাস্তার দুই পাশে দেখা মিলবে সারি সারি নারিকেল গাছ। যা দেখতে দৃষ্টি কাড়বে সবার।

এই স্থাপনার জায়গাটি থেকে পশ্চিম দিকে ঘাঘট নদীর তীরে পশ্চিম মকসুদ খাঁ ডাক্তারপাড়া গ্রামে ছিল আরেকটি স্থাপনা। এই স্থাপনার জায়গাটি এখন ঘন গাছ-পালায় পরিপূর্ণ। স্থাপনার জায়গা ঘিরে এখনো রয়েছে ‘দেবী চৌধুরানী’র আমলে তৈরি করা একটি খাল। এ ছাড়া চৌধুরানী বাজারের উত্তর পাশে মসজিদ সংলগ্ন ‘দেবী চৌধুরানী’র একটি বিশাল পুকুরের দেখা মিলবে।

গাইবান্ধা শহর থেকে পূর্ব মকসুদ খাঁ হাজীপাড়া ও পশ্চিম মকসুদ খাঁ ডাক্তার পাড়া গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৫৬ কিলোমিটার। এ ছাড়া সড়কপথে যাওয়া যাবে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের চৌধুরানী বাজারে। যেতে হবে গাইবান্ধা শহরের জিরো পয়েন্টের পুরাতন জেলখানা মোড় থেকে ম্যাজিক গাড়িতে। নামতে হবে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বাইপাস রোডে। এখান থেকে রংপুরমুখী বাসগুলো চৌধুরানী বাজারের ওপর দিয়ে যায় রংপুর শহরে।

পূর্ব মকসুদ খাঁ হাজীপাড়া গ্রামে যেখানে ‘দেবী চৌধুরানীর একটি স্থাপনা ছিল। সেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ জমি এখনো পতিত রয়েছে। সেখানে সুপারি ,বাঁশঝাড়, পেয়ারা ও কচুগাছ রয়েছে। জন্মেছে ছোট-বড় আগাছা। ডেবে যাওয়া ওই স্থানের ওপরে ও আশেপাশে ইটের টুকরা দেখতে পাওয়া যায়। পতিত জমির মালিকানায় রয়েছে চারজন। আশেপাশে গড়ে উঠেছে ব্যক্তি মালিকানাধীন অনেক বসতবাড়ি। এসব বাড়ির আঙ্গিনায় দেখা মিলবে সেই সময়ের ইটের টুকরা।

‘দেবী চৌধুরানীর আরেকটি স্থাপনা রয়েছে পশ্চিম মকসুদ খাঁ ডাক্তার পাড়া গ্রামের ঘাঘট নদীর তীরে। এখন এই স্থাপনার জায়গায় গড়ে উঠেছে নার্সারি, আম বাগান, সবজির খেত ও আখ । জায়গাটির চারপাশে রয়েছে একটি খাল। নদী ভাঙনে ‘দেবী চৌধুরানী’র স্থাপনার ইট দেখতে পাওয়া যায়। পূর্ব মকসুদ খাঁ হাজীপাড়া গ্রাম থেকে পশ্চিম মকসুদ খাঁ ডাক্তার পাড়া জামে মসজিদের পাশে দিয়ে পশ্চিম দিকে স্থাপনাটিতে হেঁটে যেতে সময় লাগবে প্রায় ১০ মিনিট।

স্থানীয়রা জানান , ‘দেবী চৌধুরানী’র স্থাপনা দুটি মাটির নিচে ডুবে গেছে অনেক আগেই। বর্তমানে ‘দেবী চৌধুরানীর স্থাপনার সম্পত্তি বংশ পরম্পরায় ভোগদখলে আছে। স্থাপনা দুটি অনেক উঁচু ছিল। সময়ের বিবর্তনে এখন স্থাপনার জায়গাগুলো নিচু হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে ভারতসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ আসেন ‘দেবী চৌধুরানী’র স্থাপনা দেখতে।

দেবী চৌধুরানীর রাজবাড়ি

দেবী চৌধুরানীর স্মৃতিচিহ্ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও পাওয়া যায়। যেমন- জলপাইগুড়ির দেবী চৌধুরানী কালী মন্দির, শিকারপুরের সন্ন্যাসী ঠাকুরের মন্দির, বেলাকোবা-রাধামালি রোডের মন্থনী মন্দির। এছাড়া দুর্গা‌পুরে তার স্মৃতিবিজড়িত স্থান ভবানী পাঠকের টিলা,সুড়ঙ্গ,ভবানী পাঠকের কালী মন্দির আছে।

বর্তমানে পীরগাছাতে দেবী চৌধুরানী গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। পীরগাছা কলেজের সাবেক্ষ শিক্ষার্থীরা তার বিষয়ে গবেষণা করছেন। দেবী চৌধুরানী গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন সাংবাদিক ও গবেষক রিবেল মনোয়ার। তিনি নিজে পীরগাছার পারুল ইউনিয়নের সন্তান। দেবী চৌধুরানী বলেন, আমার নিজের এলাকার একজন বিপ্লবীর আদর্শ আগামি প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই আমাদের প্রচেষ্টা।

‘দেবী চৌধুরানী’ মানে এক জীবন সংগ্রামীর কাহিনী। বাল্যকালেই যিনি হয়েছে পিতৃহীন লাঞ্ছনা আর অপমানের শিকার। সহায়-সম্বলহীন মায়ের সঙ্গেই বেড়ে ওঠেন তিনি।  সব প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে দুঃখ-কষ্ট জয় করে একসময় ইংরেজ ও জমিদারদের শাসন-শোষণের শিকার নিরীহ মানুষের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন।

সেসব ঐতিহাসিক ঘটনা ১৮৮৪ সালে লেখন এর মাধ্যমে ফুটে তুলেছেন লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। উপন্যাসটি গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৮৪ সালেই।

লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ইংরেজ শাসনামলে রংপুর জেলায় ম্যাজিস্ট্রেট এর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি লেখক ও একজন ইতিহাস গবেষক হিসেবে  ‘দেবী চৌধুরানী’র জীবনভিত্তিক এই উপন্যাস রচনা করেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবিতকালে এই ‘দেবী চৌধুরানী’ উপন্যাসটির ৬টি সংস্করণ প্রকাশিত হয়।

দেবী চৌধুরানী’র এই ঘটনা ১৭০০-১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে এর দিকের। প্রথমে ‘দেবী চৌধুরানী’র নাম ছিল প্রফুল্ল। তার বাড়ি ছিল রংপুরের প্রত্যন্ত এক গ্রাম দুর্গাপুরে। এই গ্রাম থেকে ৬ ক্রোশ দূরে ভুতনাথ গ্রামের জমিদার হরবল্লভ এর একমাত্র ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয় প্রফুল্লের। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলে শ্বশুর হরবল্লভ পুত্রবধূ হিসেবে প্রফুল্লকে মেনে না নিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।

এ সময় প্রফুল্ল বলেন, এখন কোথায় যাব আমি।  জবাবে হরবল্লভ  বলে, যেখানে খুশি যাও। চুরি করো, ভিক্ষে করো, পারলে ডাকাতি করো। পরে আরও বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রফুল্ল হয়ে ওঠেন ডাকাতদের রানী, নতুন নাম হয় ‘দেবী চৌধুরানী’।

ধনীদের কাছে থেকে ডাকাতি করে অর্থ এনে তনি গরিব-দুঃখী মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন ‘দেবী চৌধুরানী’। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের মকসুদ খাঁ গ্রামে ছিল এই ‘দেবী চৌধুরানী’র ভবন। ‘দেবী চৌধুরানী’ এই গ্রামেই থাকতেন।

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents