Dreamy Media BD

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

ডেঙ্গু (Dengue) হচ্ছে এক ধরনের ভাইরাস যা এডিস গোত্রের স্ত্রী মশাবাহিত একটি রোগ। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। ডেঙ্গুর জীবাণু এক মানুষ থেকে থেকে অন্য মানুষের মধ্যে মানুষের মাধ্যমে ছড়ায় না ।এটি ছড়ায় ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে যদি এডিস মশা কামড়ায় উক্ত মশা যদি কোন সুস্থ মানুষকে কামড়ায়  তাহলেই সেই মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। আমাদের দেশে করোনা মহামারীর সময় ওতটা ডেঙ্গু দেখা না গেলেও ২০২১ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্তে মৃত্যু হয়েছিল ১০৫ জনের।

ঠিক তারপরের বছর ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল ২৮১ জন। আর এই বছর এসে বলাই যায় ডেঙ্গু প্রায় মহামারী আকার ধারণ করেছে। তাই ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ সম্পর্কে আমাদের সবার জানা অত্যন্ত জরুরী। কারণ সব বয়সের মানুষেরই ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডেঙ্গুর লক্ষণ গুলো যদি জানা থাকে তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চলুন তাহলে ডেঙ্গুর কারণ, লক্ষণ ,প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নেই।

আরো পড়ুন – আয়রনের অভাবজনিত লক্ষণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু জ্বরের বিভাজন ও লক্ষণ :

ডেঙ্গু জ্বর এটি একটি মশা বাহিত ভাইরাস ঘঠিত রোগ।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রথমবার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের তেমন কোন লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় না। ডেঙ্গু জ্বরকে আমরা কয়েকটি ভাগে ভাগ করতে পারি। যেমন, ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর, ডেঙ্গুর ক্লাসিক্যাল জ্বর, ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। 

সাধার ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো হল:

১) ডেঙ্গুর প্রথম লক্ষণ হলো জ্বর। জ্বরের তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০৩ ডিগ্রী পর্যন্ত হতে পারে। কখনো কখনো জ্বর একটানা থাকে। আবার কখনো কখনো গাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেওয়ার পর আবার শরীরে জ্বর আসে।

২) ডেঙ্গুর অন্যতম লক্ষণ হল শরীরে ব্যথা। এ সময়ে মাথাব্যথার পাশাপাশি চোখের পিছনেও ব্যাথা হয়। চামড়ায় রেশ অথবা লালচে দাগও থাকতে পারে।

৩) শরীর ম্যাজম্যাজ করে ক্ষুধা কমে যায়। সারা শরীর অনেক ঠান্ডা হয়ে যায়।

৪) সিভিয়ার ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে রক্তবমি, পেট ফুলে যাওয়া,তীব্র পেট ব্যথা ,মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, শরীরের ঠান্ডা অনুভব হওয়া, শ্বাসকার্য দ্রুত হওয়া, ঘুম ঘুম ভাব, ঘাম হওয়া, চেতনা হারানো ইত্যাদ।

ডেঙ্গুর ক্লাসিক্যাল জ্বর লক্ষণগুলো:

১) ডেঙ্গুর ক্লাসিকাল জ্বরে সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যথা হয় সেইসাথে তীব্র জ্বর হয় । এ সময়ে জ্বর ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।

২) প্রচন্ড পেটে ব্যথা হয়।

৩) সারা শরীরে বিশেষ করে কোমর, হাড় ,পিঠ সহ বিভিন্ন  মাংসপেশিতে ও  অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা হয়।

৪) প্রচন্ড মাথা ব্যথা হয় সেইসাথে চোখের পিছনেও ব্যথা হয় ।

৫) এই জ্বরের অপর একটি নাম হচ্ছে ব্রেক বোন ফিভার।

৬) চামড়ার রেশ দেখা যায় সারা শরীরে লালচে লালচে বর্ণের এলার্জির মত হয়।

৭) বমি বমি ভাব হয় এবং যেকোনো সময় বমি হতে পারে।

৮) অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ হয় সেই সাথে খাবারের রুচি কমে যায়।

৯) এই জ্বর সাধারণত চার থেকে পাঁচ দিন থাকে ।কিন্তু কখনো কখনো ২-৩ দিন পর আবার জ্বর ফিরে আসে একে বাই ফিজিক ফিভার বলা হয়।

এডিস মশা

ডেঙ্গুর হেমোরেজিক জ্বরের লক্ষণ:

এই অবস্থাকে রোগীর সবচাইতে জটিল মনে করা হয়। এই জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ গুলোর পাশাপাশি আরও অনেক লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন:

১) শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে ক্রমাগত রক্ত পড়া শুরু হয়। যেমন, মুখ  দিয়ে, নাক দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত থেকে, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাইরে, রক্ত বমি, চামড়ার নিচে, নারীদের ক্ষেত্রে অসময়ে ঋতুস্রাব, এসব রক্তক্ষরণ যদি শুরু হয় তাহলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকে।

২) এই রোগের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় পেটে পানি ও বুকে পানি দেখা দেয়। অনেক সময় দেখা যায় রোগীর জন্ডিস হয় যা লিভারে আক্রান্ত হয়। আবার অনেক সময় দেখা যায় কিডনি আক্রান্ত হয়ে কিডনি ফেলিওর সহ নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়।

ডেঙ্গু শক সিনড্রোম:

ডেঙ্গু জ্বরের সবচাইতে ভয়াবহ ধাপ হল ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের সঙ্গে সার্কুলেটরি ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। এই লক্ষণগুলো হলো:

১) হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া।

২) নাড়ীর স্পন্দন দ্রুত হয়।

৩) প্রস্রাব অনেক কমে যায়।

৪) হাত-পা শরীর প্রচুর ঠান্ডা হয়ে যায়।

৫) রোগী হঠাৎ করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ অবস্থায় রোগী জটিল পরিস্থিতিতে গিয়ে পৌঁছায় যার ফলে রোগীর মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ডেঙ্গু জ্বরের তেমন কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। এই জ্বর

ডেঙ্গু হলে কখন ডাক্তার দেখাবেন

 সাধারণত নিজ থেকেই ভালো হয়ে যায়। উপসর্গ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসায় যথেষ্ট মনে করা হয়। তবে কিছু কিছু লক্ষণ আছে যা প্রকাশ পেলে খুব দ্রুতই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত যেমন:

১) শরীরের কোন অংশে রক্তপাত হলে।

২) প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে।

৩) জন্ডিস দেখা দিলে।

৪) পেট ফুলে পানি আসলে।

৫) শ্বাসকষ্ট হলে।

৬) প্রসাবের পরিমাণ খুবই অল্প হলে।

৭) শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দিলে।

৮) অতিরিক্ত পেটে ব্যথা ও বমি হলে।

ডেঙ্গুর রোগের চিকিৎসা :

হাসপাতালে যেভাবে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়

ডেঙ্গু জ্বরের তেমন কোন ঔষধ বা প্রতিশোধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি‌। তবে এ বিষয়ে গবেষকরা কাজ করে যাচ্ছেন। অধিকাংশই ক্ষেত্রে দেখা যায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘরোয়া চিকিৎসাতেই কমে যায়। এবং প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খেলে যন্ত্রণা এবং জ্বরের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ হয়। 

non – steroidal প্রদাহ প্রতিরোধ ঔষধের মাধ্যমে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে ডেঙ্গু রোগীদের অবস্থা অতিরিক্ত খারাপ হলে তখন হাসপাতালে ভর্তি এবং ডাক্তারি নজরদারিতে রাখা একান্তই জরুরী।

 হাসপাতালে চিকিৎসায় ডেঙ্গু রোগীদের শিরায় (IV) ইলেকট্রোলাইট (লবণ) তরল দেওয়া হয়। এতে করে রোগীর শরীরে প্রয়োজনীয় পানি ও লবণের যোগান বজায় থাকে।

ডেঙ্গুর রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে ডেঙ্গু জ্বর কে কাবু করা সম্ভব। চলুন দেখুন এই ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া চিকিৎসা:

১) পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিন। বেশি বেশি পানি পান করুন এবং তরল জাতীয় খাবার খান। শরীর যদি হাইড্রেটেড থাকে তাহলে মাথা ব্যথা ও পেশি ব্যথা কম হবে।

২) প্লাটিলের সংখ্যা দ্রুত বাড়াতে নিয়ম করে পেপে পাতার রস পান করুন। কারণ ডেঙ্গু রোগীর সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে প্লাটিলেট কমে যায়। সংক্রমণ তাড়ানোর ক্ষমতা বাড়াতে পারে পেপে পাতার রস।

৩) পেয়ারার শরবত পান করুন পেয়াড়াতে আছে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি রোগদমন তন্ত্র কে আরো বেশি শক্তিশালী করে তোলে যার কারণে খুব সহজেই ডেঙ্গুকে কাবু করা যায়।

৪) এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে মেথি বীজ মিশিয়ে পানি পান করতে পারেন। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং ডেঙ্গু জ্বর ও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

৫) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে এসব খাবার বেশি বেশি খান। যেমন কাঠবাদাম, সূর্যমুখী বীজ, দই, সাইট্রাস ফল, ক্যাপসিকাম, আদা, রসুন, পালং শাক, ব্রকলি, হলুদ ইত্যাদি। এসব খাবার খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে যার কারণে দ্রুত ডেঙ্গু জ্বর থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা যাবে।

৬) নিম পাতার রস পান করুন এতে রক্তের প্লাটিলেট বাড়বে। নিম পাতার রস  শ্বেতরক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। নিম পাতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও আছে। এছাড়াও নিম পাতার রসকে বহু রোগের ওষুধ হিসাবে প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার করা হচ্ছে।

৭) একটি পাত্রে গরম পানি দিয়ে সেই গরম পানির মধ্যে তুলসী পাতা ও গোলমরিচ একসঙ্গে মিশিয়ে গরম করে নিন। এবার পানি ঠান্ডা হওয়ার পর সেই পানি পান করতে পারে। এটি সংক্রমনের বিরুদ্ধে খুব ভালো লড়াই করে। এছাড়া রোগদমধতন্ত্র শক্তিশালী করতে তুলসী পাতা খুব ভালো কাজ করে।

৮) পুদিনা পাতার রস ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বেশ কার্যকর। এটি জ্বর কমাতে বেশ সাহায্য করে। এছাড়া রোগদমধতন্ত্রকে আরও বেশি শক্তিশালী করে। পুদিনা পাতার রস  প্লাটিলেটর সংখ্যা বাড়াতে পারে।

৯) বার্লি চা‌‌ ডেঙ্গু উপশমে  আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। এতে আছে ভিটামিন বি১ , ভিটামিন বি৬,ভিটামিন  বি২, ভিটামিন বি ১২, পেন্টোথেনিক এসিড, ফোলেট  ও মিনারেল সমৃদ্ধ । এই সবগুলো রক্তের প্লাটিলেট ও লৌহ রক্তকণিকা বাড়াতে খুব ভালো কাজ করে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে পদক্ষেপ

১) ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত রোগ তাই যেকোনো মূল্যে আপনার নিজেকে মশার কামড়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।

২) বাড়ির আশেপাশে বৃষ্টির পানি ও অন্যান্য পানি জমতে দেওয়া যাবে না। টবে জামা পানি ও অন্যান্য জায়গায় জমে থাকা পানিতে মশারা বংশবিস্তার করে। পানি জমতে না দিলেই মশার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। প্রতি সপ্তাহে অত্যন্ত একবার যেসব জায়গায় পানি জমতে পারে সে সব জায়গা পর্যবেক্ষণ করুন। পড়ে থাকা ফুলদানি ,গাছের টব, ফেলে রাখা  গাড়ির টায়ার ইত্যাদি স্থানে ভুলেও পানি জমতে দিবেন না।

৩) সারা শরীর ঢাকা এমন জামা কাপড় পড়ুন, যেমন, ফুল হাতা শার্ট ,ফুল হাতা গেঞ্জি, লম্বা প্যান্ট ,মোজা এবং জুতা পড়ুন।

৪) ডিঙ্গুবাহিত মশার সাধারণত সকাল ও সন্ধ্যায় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে তাই এ সময়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকুন।

৫) রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন।

৬) জানালায় মশারি ব্যবহার করুন।

৭) মশা নিরোধক কেমিক্যাল ব্যবহার করুন।

ডেঙ্গু জ্বরের যে খাবার গুলো বেশি করে খাবেন

১)ডালিম: ডালিমে থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও প্রচুর পরিমাণে মিনারেল। প্লাটিলেটার সংখ্যা বাড়াতে নিয়মিত ডালিম খাওয়া উচিত। এটি অনেক উপকারী ফল এই ফল খেলে শরীরের সকল ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হয়ে যায়। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ডালিম ফলকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

২)কমলা: কমলা এবং কমলার রস ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে অনেক ভালো উপকারে আসে। কমলা তে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট। ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো কাজ করে থাকে।

৩)পেঁপে পাতার জুস: ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীর শরীরে প্লাটিলেট কমে যায়। এ সময়ে পেঁপে পাতা অনেক উপকারে আসে। পেপে পাতা পাপাইন ও কিমোপেইন এনজাইম সমৃদ্ধ যা হজমে অনেক বেশি সহায়তা করে। এবং প্লাটিলেটের পরিমাণও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এই জন্য ডেঙ্গু রোগীদের প্রতিদিন ৩০ ml পেঁপে পাতার জুস খাওয়াতে হবে। এই জুস ঘরে বসেই তৈরি করা যায়।

৪) ডাবের পানি: ডেঙ্গু জ্বর শরীরে তরল পদার্থের শূন্যতা সৃষ্টি করে। এর ফলে হয় ডিহাইড্রেশন। এই সময় ডাবের পানি অনেক উপকারে আসে। ডাবের পানিতে আছে ইলেকট্রোলাইটের মত প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।

৫) ব্রকলি: ব্রকলি ভিটামিন কে এর ভালো উৎস। আর ভিটামিন কে রক্তের প্লাটিলেট সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ব্রুকলি এন্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ সমৃদ্ধ। ডেঙ্গু রোগীকে বেশি বেশি ব্রকলি খাওয়ানো উচিত।

৬) হলুদ: ডেঙ্গু জ্বর থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পেতে হলে নিয়মিত এক গ্লাস দুধের সাথে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে পান করুন। এটা বেশ উপকারী ।

৭) মেথি: মেথি অতিরিক্ত মাত্রায় জ্বর কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। ডেঙ্গু জ্বর হলে মেথি রোগীকে খুব সহজে ঘুমিয়ে যেতে সাহায্য করে।

৮) কিউইফল: এই ফলে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। কিউইফল এ আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। এই ফল নিয়মিত খেলে উচ্চ রক্তচাপ ও ইলেকট্রোলাইট স্তর নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই ফলটি খেলে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তাই ডেঙ্গু রোগীকে এই ফল খাওয়ানো উচিত।

৯) পালং শাক: পালংশাকে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। পালংশাক বেশি বেশি খেলে অতি দ্রুত শরীরে প্লাটিলেট এর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

ডেঙ্গু জ্বরে যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন

১)তৈলাক্ত ও ভাজা খাবার: ডেঙ্গু রোগীকে অবশ্যই ভাজাপোড়া ও তেলযুক্ত খাবার থেকে দূরে রাখা উচিত এসব খাবার রোগীকে ভুলেও খাওয়ানো যাবে না ‌। এসব খাবার খেলে শরীরে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় তাই এসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

২) ক্যাফিন যুক্ত পানিও: ডেঙ্গু হলে বেশি বেশি তরল খাবার খেতে হবে সেই সাথে ক্যাফিনযুক্ত পানিও এড়িয়ে চলতে হবে। এই খাবারগুলো আমাদের হার্ট রেট বাড়িয়ে দেয় সেই সাথে শরীরে ক্লান্তি নিয়ে আসে।

৩) মসলাযুক্ত খাবার: ডেঙ্গু রোগীদের অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার অবশ্যই এড়িয়ে চলা উচিত। এই ধরনের খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে পাকস্থলীর প্রাচীর নষ্ট হতে পারে।

 এডিস মশা কামড় দিলে কি ডেঙ্গু হয়

অনেকের একটি  ধারণা আছে যে এডিস মশা কামড় দিলেই ডেঙ্গু হয় কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল এডিস মশা কামড় দিলেই ডেঙ্গু হবে না। গবেষকরা বলছে, পরিবেশে উপস্থিতিত কোন ভাইরাস যদি কোন এডিস মশার মধ্যে সংক্রমিত হয় তাহলে ওই মশা কোন ব্যক্তিকে কামড় দিলে সেই ব্যক্তি ডেঙ্গু তে আক্রান্ত হবে। সাধারণত স্ত্রী এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাস বাহক হিসেবে কাজ করে। এরা আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্য সুস্থ ব্যক্তিতে আক্রান্ত করতে পারে।

সাধারণত ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী কোন মশা যদি কোন ব্যক্তিকে কামড়ায় তাহলে সেই ব্যক্তি ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এবার এই আক্রান্ত ব্যক্তিকে যদি কোন এডিস মশা কামড়ায় তাহলে সেই মশা ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী মশাই পরিণত হবে। এবার এই মশা যদি অন্য কোনো ব্যক্তিকে কামড় দেয় তাহলে সেই ব্যক্তিরও ডেঙ্গু হবে এভাবেই ডেঙ্গু ছড়ায়। এডিস মশা অন্ধকারে খুব কম কামড়ায় সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যার একটু আগে বেশি তৎপর হয়ে ওঠে। তবে অন্ধকার আচ্ছন্ন পরিবেশে দিনের বেলায় কামড়াতে পারে।

এডিস মশা কিভাবে চিনবেন

যদি একটু ভালো মতো খেয়াল করেন তাহলেই ডেঙ্গুর জীবাণুবাহি এডিস মশাকে খালি চোখে চিনতে পারবেন। এই মশা মাজারী আকারের সাদা কালো ডোরাকাটা এবং শুর থাকে লোমযুক্ত। এই মশার  মাথার উপরে সাদা দাগ থাকে যার কারণে আমাদের আশেপাশে থাকা মশা থেকে খুব সহজেই এই মশাকে আলাদা করা যায়।

সাধারণত সকালে এবং সন্ধ্যার ঠিক আগ মুহূর্তে এডিস মশার তৎপরতা বেশি বেড়ে যায়। অনেকে মনে করেন এডিস মশা শুধু পায়ে কামড়ায় কিন্তু এটা ভুল ধারণা  শরীরের যে জায়গা খোলা পায় সেই জায়গাতেই কামড়ায়।

ডেঙ্গুতে প্লেটলেটের সংখ্যা সাধারণত কত হয়

একজন স্বাভাবিক সুস্থ দেহের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্লেটলেট সংখ্যা হয়, দেড় থেকে সাড়ে চার লাখ প্লেটলেট প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর এই সংখ্যা ২০ হাজারের নিচে চলে যেতে পারে। এইজন্য এই সময় রক্তপাতের ঝুঁকি বেশি হয়। মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের এই সংখ্যা ২১ থেকে ৪০ হাজার পর্যন্ত হয়।

ডেঙ্গু সংক্রমণে অনেক ক্ষেত্রেই প্লেটলেট সংখ্যার দ্রুত পরিবর্তন হয়। প্লেটলেট সংখ্যা একেবারে কমে গেলে এবং রক্তক্ষরণের প্রকাশ পেলে তখন ওই অবস্থায় রোগীকে প্লেটলেট প্রতিস্থাপন করতে হয়। আবার রোগীর সুস্থ হওয়ার সাথে সাথেই শরীরে স্বাভাবিকভাবে প্লেটলেট কাউন্ট বৃদ্ধি পায়।

সবশেষে, ডেঙ্গু খুবই সাধারন একটি রোগ, কিন্তু অবহেলার কারণে এই রোগ বেশি মারাত্মক হয়। বিশেষ করে শহর অঞ্চলে এই রোগের প্রকোপ অনেক বেশি। তাই শহরের মানুষকে  একটু বেশি সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে যাদের প্রথমে একবার ডেঙ্গু হয়েছে তাদের সবচাইতে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কারণ দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু সংক্রমণ খুবই মারাত্মক হতে পারে। তাই সব সময় সচেতন থাকুন। এবং ডেঙ্গুর রোগ নিয়ে অবহেলা না করে খুব দ্রুত ডেঙ্গু টেস্ট করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

 

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents