Dreamy Media BD

ইরানি নওরোজ উৎসব: ইরানিদের নববর্ষ

ইরানি নওরোজ উৎসব

বলতে গেলে ইরানি সংস্কৃতির সবচেয়ে প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসবের নাম হচ্ছে নওরোজ। তাদের সকলের কাছে এ উৎসবটি বিশেষ অর্থবহ। তাই অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে এ উৎসবটি পালন করে থাকেন ইরানি জনগন। ফারসি এ ‘নওরোজ’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে নতুন দিন। অর্থাৎ নওরোজ বলা হয় ফারসি নতুন বছরের প্রথম দিনটিকে। আবার নওরোজের এ দিনটি হচ্ছে ঋতুরাজ বসন্তেরও প্রথম দিন। অর্থাৎ দেশটির নতুন বছর শুরু হয় মোহনীয় সৌন্দর্যের প্রতীক বসন্তের আগমনের মধ্য দিয়েই।

আজকের এই আর্টিকেলটির মধ্য দিয়ে আমরা আপনাদেরকে ইরানের ঐতিহ্যবাহী উৎসব নওরোজের ইতিহাস, ঐতিহ্য, জনপ্রিয়তার কারন ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করবো।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: এই বিষয়টি ঠিক ভাবে বলা যায় না যে ঠিক কে এবং কখন প্রথম এই নওরোজ উৎসবটি চালু করেছিলেন। তবে ঐতিহাসিক তাবারি এবং মহাকবি ফেরদৌসির অমর কাব্য শাহনামার ব্যাখ্যা থেকে জানা যায় এ উৎসবের প্রথম আয়োজক ছিলেন ইরানের প্রাচীন লেজেন্ড বাদশাহ জামশিদ। আবার কারো মতে, ইরানের হাখামানেশীয় সাম্রাজ্যের স্থাপতি সম্রাট কুরুশ বাবেল বা দ্বিতীয় সাইরাস ( খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৮ সালে)  সর্বপ্রথম  নওরোজকে  তাদের জাতীয় উৎসব হিসেবে পালন করে।

তাছাড়া, এও জানা যায় যে সাসানীয় যুগে নওরোজ উৎসবের অনুষ্ঠানমালা এবং পর্বগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি ছড়িয়েছিল।প্রথম দারিউশের শাসনামলে প্রথম পারস্য সম্রাট এ উৎসবটির আয়োজন করেন পার্সিপলিস প্রাসাদ কমপ্লেক্স বা তাখতে জামশিদে। আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এ উৎসবে এসে ইরানি সম্রাটকে নানান উপহার সামগ্রী দিতেন।

আবার ইন্দো-পারস্য সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রভাবে  নওরোজ উৎসবটি বিস্তৃত হয়েছে ইরানের বাইরের দক্ষিণ এশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। হয়তো আপনি জানেন না,এমনকি আমাদের দেশেও নওরোজ উৎসবের প্রচলন শুরু হয় মোগল আমলে। তৎকালীন মোগল শাসকদের সাহায্য সহযোগিতায় তখন বেশ ঘটা করেই পালিত হতো এই নওরোজ উৎসবটি। তবে জাতিসংঘে বিশ্ব নওরোজ দিবস হিসাবে বসন্তের প্রথম দিন ২১ মার্চ  দিবসটি স্বীকৃতি পেয়েছে ২০০১ সালে। আর সেই সাথে ২০০৯ সালে নওরোজ উৎসবটি ইনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় মানবতার সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক নিদর্শন হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আরো পড়ুন – নেপালের বিখ্যাত রক্তাক্ত উৎসব গাধিমাই

নওরোজ উৎসবটি দেখতে কেনো পৃথিবীর প্রান্ত থেকে লোকেরা ভীড় জমায়:

১.  আমাদের সবারই জানার কথা যে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এখন প্রতি বছর বর্ষবরণে উৎসব বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করা হয়ে থাকে।  ইরানি নববর্ষের এই নওরোজ উৎসবটি কিন্তু আমাদের জানা অন্য যে কোনো দেশের, যে কোনো জাতির নববর্ষের উৎসবের চেয়ে একদম আলাদা এবং বিশেষ।

কেননা বাংলা নববর্ষ থেকে শুরু করে পৃথিবীর নানান ভাষা-ভাষীর মানুষদের নববর্ষের উৎসব যত আনন্দময় উৎসব মুখর এবং জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই পালিত হোক না কেন, তা কিন্তু সচারাচর নববর্ষের প্রথম দিনের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। সেদিক থেকে খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন একমাত্র ফারসি নববর্ষই কিন্তু একটা দীর্ঘ সময় জুড়ে (১ ম থেকে ১৩ তম দিন পর্যন্ত) পালিত হয়ে থাকে। কারণ নওরোজ বা নববর্ষ হচ্ছে ইরানি জাতির সব চেয়ে বড় উৎসব। এই আনন্দঘন দিনগুলোর অভিজ্ঞতা অর্জন করতেই এখানে বিশাল পরিসরে পর্যটকদের ভীর জমে প্রতি বছর।

২. বিশ্বের প্রাচীনতম যেসব উৎসব এখনও পালন করা হয় তাদের মধ্যে নওরোজ হচ্ছে অন্যতম একটি উৎসব। জনপ্রিয় এ নওরোজ উৎসবটি ইরানীয়দের  সংস্কৃতির বিরাট বড় একটি অংশ হিসেবে বেশ সমাদৃত। এই উৎসবটি আজ যে শুধু ইরানের জাতীয় উৎসব,তা কিন্তু একেবারেই না।

এটি এখন ইরানের সীমাবদ্ধতার গন্ডি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পরেছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন জাতিতে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটা দেশ হচ্ছে তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান, আজারবাইজান, তুরস্ক, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ও ইরাকে যেখানেও এ উৎসব পালিত হয় জাতীয় পর্যায়ে। এছাড়াও নওরোহ উৎসবটি কম-বেশি পালিত হয় পাকিস্তান, জর্জিয়া এবং ভারতেও। সাধারণত নওরোজ নামে খ্যাত এই ফার্সি নববর্ষের উৎসবটি শুরু হয় বিশ কিংবা একুশে মার্চ এ।

সব চেয়ে বিশেষ ব্যপারটি হলো, বসন্ত ঋতু শুরু হওয়ার সাথে সাথেই এ নববর্ষ উৎসবটি শুরু হয় বলে এ উৎসবের সময় প্রকৃতি এক অপরূপ সুন্দর রূপে সেজে উঠে। যার ফলে স্থানীয় সাধারণ মানুষ জন সহ পর্যটকদের কাছে আরও উপভোগ্য হয়ে উঠে নববর্ষের এ অনুষ্ঠানটি। তাই এ সময় বিভিন্ন দেশের মানুষজন সেখানে ভ্রমনে গিয়ে অনেক আনন্দ পায়। এ জন্যেই এই উৎসবের সময় পৃথিবীর নানান প্রান্ত থেকে বিভিন্ন দেশের মানুষ, বিভিন্ন জাতির মানুষ এখানে চলে আসে উৎসবটিতে সামিল হতে।

৩. ইরানিরা সাধারনত নববর্ষের প্রথম দিন থেকে ১৩ তম দিন পর্যন্ত এ নওরোজ উৎসব পালন করে থাকে। এ উৎসবটির জন্যে রাষ্ট্রীয়ভাবেও সে দেশটিতে অন্য যে কোনো উৎসবের চেয়ে বেশি দিন ধরে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ উৎসব উপলক্ষ্যে দেশটির স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছুটি থাকে সাধারনত প্রায় দীর্ঘ এক মাস ধরে। ফারসি নতুন বছর শুরু হয় একদম বসন্তের সুন্দর সূচনার মধ্য দিয়ে।

বসন্তে প্রকৃতি ঠিক যেমন নতুন করে সেজে উঠে, গাছে গাছে পুরোনো পাতা সব ঝড়ে গিয়ে নতুন নতুন পাতা গজাতে থাকে, ফুলে আর ফুলে মুখরিত হতে থাকে চারদিকটা, নাম না জানা অনেক চেনা অচেনা পাখির কণ্ঠ থেকে যখন ভেসে আসে সুন্দর গানের সুর, চারদিকটা মোহনীয় হয়ে উঠে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে, ঠিক তখন প্রকৃতি আর ইরানি জাতি বসন্ত এবং নতুন বছরের আনন্দে একাকার হয়ে যায়। আর এ সৌন্দর্য এবং সংস্কৃতির প্রেমে মুগ্ধ হয়ে তাদের সাথে একটু আনন্দের সময় কাটাতে প্রতি বছর পর্যটকদের পাড়ি জমে এ দেশে।

৪. ইরানি এ নওরোজ উৎসবটি যেহেতু শুধু মাত্র ইরানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। সুপ্রাচীন কাল থেকে চলে আসা এ উৎসবটি এখন বিস্তৃত হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও। অর্থাৎ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন দেশের মানুষেরা আসে এ উৎসবটি উপভোগ করার জন্যে। ভিন্ন ভিন্ন দেশের মানুষদের সংমিশ্রণে উৎসবটি যেনো আরও জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে উঠে। আনন্দ মুখর পরিবেশে প্রতি বছর উৎসবটি পালিত হয় জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে।

৫. এ উৎসবের বিশেষ একটা ব্যপার হলো নওরোজের আগেই ইরানিরা তাদের ঘর ও দোর পরিষ্কার এবং পরিচ্ছন্ন করেন। আর পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতার এই কাজে তারা পাড়া প্রতিবেশি এবং আপনজনদের সাহায্য সহায়তা করে থাকেন। ঈদ বা নওরোজের অনেক আগেই তারা তাদের পুরোনো সব রকম আসবাবপত্র কিংবা জরাজীর্ণ জিনিস ফেলে দিয়ে একদম নতুন জিনিস কিনে আনে। নতুন জামা কাপড়, নতুন জুতা ইত্যাদি বিভিন্ন কেনার যেনো হিড়িক পড়ে যায় একদম।

শুধু তাই নয় কিন্তু! নওরোজের এই উৎসবে অতিথিপনাতেও কোন কমতি রাখেন না । মেহমানদারির জন্য তারা প্রতি বছর ব্যাপক পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ফল, মিষ্টি এবং অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী কিনে থাকেন। এক এলাহি আয়োজনে তারা পর্যটকদের সমাদর করে থাকেন। ভালোবাসা ও সম্মানের সাথে তাদের আপ্যায়ন করেন। এ সময়টাতে স্থায়ী বাজার ছাড়াও কিন্তু অনেক অস্থায়ী বাজার কিংবা মেলার আসর একদম জমজমাট হয়ে ওঠে। এসব কিছুর জন্যে পর্যটকরা অনেক আনন্দ পান, আর তাই তারা এ সময়টাতে ছুটে আসেন।

. ইরানি জাতির নওরোজ অথবা ফারসি নববর্ষের উৎসব পালনের ইতিহাস বেশ অনেকটাই প্রাচীন হলেও কিন্তু ইসলামের আবির্ভাবের পর মূলত ইরানে নওরোজ উৎসবের রীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দেয়। তারপর থেকে ইসলামী বিভিন্ন আচার বিভিন্ন অনুষ্ঠান যুক্ত হতে থাকে এ উৎসবের সঙ্গে। সাধারনত ইরানি মুসলমানরা বিশেষ দোয়া পাঠের মধ্য দিয়েই নওরোজ বা নববর্ষ শুরু করেন।

আর এ মোনাজাতে তারা বলে থাকেন যে-‘হে দৃষ্টি ও অন্তরের পরিবর্তনকারী এবং দিন ও রাতের পরিচালনাকারী আর অবস্থার পরিবর্তনকারী (মহান আল্লাহ), আমাদের অবস্থাকে আপনি সর্বোত্তম অবস্থায় রূপান্তরিত করুন।’ নওরোজের উৎসবের প্রথমেই মূলত সবাই এ দোয়া পাঠ করেন। এ সময় পবিত্র কুরআন, তসবিহ এবং ‘হাফসিন’ নামে পরিচিত সাতটি বিশেষ সামগ্রী সহ আরও ভিন্ন ধরনের কিছু জিনিস সামগ্রী তাদের সামনে টেবিলে বা দস্তরখানে থাকে। এসব কর্ম কান্ড স্থানীয় লোকজন সহ পর্যটকদেরও বেশ আনন্দ দিয়ে থাকে। তাদের উৎসুক মনের খোরাক হয়।

ইরানিদের নববর্ষ
ইরানিদের নববর্ষ

৭. আরেকটি ব্যাপার যেটি পর্যটকদের উৎসুক করে তোলে এখানে আসতে তা হচ্ছে ইরানিদের একে অপরের সুন্দর বন্ধন আর সম্পর্কের মূল্যায়ন দেখে। ইরানিরা নওরোজের দিন সাধারনত বাবা-মা সহ নিকটাত্মীয় এবং ঘনিষ্ঠজনদের সাথে সাক্ষাৎ করে থাকেন। এ সময় বেশ কয়েকদিন সরকারি ছুটি থাকার কারনে ইরানিরা দেশের বিভিন্ন বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানে সফর করে থাকেন এবং কেউ কেউ আবার দেশের বাইরেও যান বেড়াতে। আবার অনেক ইরানি নওরোজের শুরুর দিনটিতে পবিত্র কোনো স্থানে কাটাতে বেশি পছন্দ করে থাকেন।

যেমন ধরুন, অনেকেই পবিত্র মাশহাদ শহরে গিশে বিশ্বনবী হযরত মুমহাম্মাদ (সা.)‘র পবিত্র আহলে বাইতের একজন সদস্য হযরত ইমাম রেজা (আ.)‘র মাজার জিয়ারত করে আসেন। অনেকে এ উপলক্ষে আবার পবিত্র কোম শহরে অবস্থিত হযরত ইমাম রেজা (আ.)‘র বোন হযরত মাসুমা (সা.)‘র মাজারে ভ্রমন করেন। আবার কেউ বা ইরাকে হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)‘র মাজারে কিংবা আহলে বাইতের অন্য কোনো সদস্যের মাজারে গিয়ে নববর্ষ শুরু করেন। ইমামদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মাজারেও কিন্তু এ সময় প্রচুর ভীড় দেখা যায়। পরিবারের সকলে মিলে তারা একসাথে এসব করে থাকেন। তাদের এই একত্বতা কিন্তু পর্যটকদের বেশ মুগ্ধ করে।

৮. ফারসি প্রথম মাস অথবা ফারভারদিন মাসের ১ তারিখ থেকে শুরু হওয়া এ নওরোজ উৎসবটি মূলত শেষ হয় ১৩ তারিখে। ১৩ তারিখে ইরানিদের মধ্যে কেউ-ই ঘরে আবদ্ধ থাকেন না। তারা সেদিন ঘরের বাইরে নানা দর্শনীয় স্থান এবং মনোরম প্রাকৃতিক স্পটে সময় কাটান। বিশেষ করে উদ্যান,পাহাড়, ঝর্ণা, পার্ক-এসব স্থানে তারা চাদর বিছিয়ে কিংবা তাঁবু খাটিয়ে খোশগল্প করে করে মজাদার খাবার খেয়ে সময় কাটান। এ সময় এ স্থানগুলোকে নতুন রূপে সুন্দর করে সাজানো হয়। যা স্থানীয় লোকজন এবং পর্যটক সকলেরই খুব পছন্দ হয়। তাই স্থানীয়রা ছাড়াও পর্যটকরাও এ সময় এই সুন্দর সুন্দর স্থানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন।

৯. বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের এ উৎসবটি আরও পছন্দ হবার আরেকটি কারন হলো- এ সময় তারা ধনী গরিব নির্বিশেষে সবাই এক হয়ে যান। ধনীরা গরিবদের পাশে দাঁড়ান।
যে কোনো ইদ কিংবা উৎসব হচ্ছে মানবীয় আনন্দের এক অপার উৎস। মানুষ আনন্দ-উৎসব ছাড়া কখনই বেঁচে থাকতে পারে না। তবে আল্লাহর স্মরণ মানুষকে সবচেয়ে বড় প্রশান্তি জোগায় আর দেয় অপার মানসিক সুখ। নওরোজ উপলক্ষ্যে তাই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় এ আনন্দকে সমান ভাবে ভাগ করে নেওয়ার জন্য অনেক ইরানি কিন্তু বিশেষ বিশেষ ত্রাণ তহবিলে অর্থ কিংবা নানা ধরনের জিনিসপত্র দান করে থাকেন। আর এসব অর্থ কিংবা জিনিস গরিব, অভাবগ্রস্ত ও এতিমদের দান করা হয়। এই চিত্র পর্যবেক্ষন করে সকলেই খুব আনন্দিত হোন।

নওরোজ উৎসবের প্রধান প্রধান আকর্ষণ

★ নওরোজ উৎসবের প্রধান আকর্ষের কারন-ই হচ্ছে নওরোজ উদযাপন।

প্রতি বছর এ উৎসবটিতে অংশ নেয় বিভিন্ন ধর্মীয় পটভূমি ও ঐতিহ্যের মানুষ জন। মনে করা হয়ে থাকে যে এই উৎসবটি আমাদের এ মহাবিশ্বে একটি বার্ষিক পুনর্জীবীকরণ ও মনের শক্তির পরিষ্কারের প্রতিনিধিত্ব করে যায়। এই বিশ্বাস তারা তাদের অন্তরে লালন করে থাকে সারা বছর ধরে। নওরোজের এ দিনটিতে তারা সবাই খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে তাদের ঘর বাড়ি খুব সুন্দর ভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে। তারপর সবাই নতুন নতুন পোশাক পরে এবং তার সাথে সাথে নিজেদের মধ্যে উপহার বিতরণ করে। এর মাধ্যমে তাদের মধ্যকার সম্পর্কগুলো সুন্দর করে নেয়। তাদের এই রীতি চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। আর এই রীতির রেশ ধরেই তারা তাদের উৎসব উদযাপন করে সকলেই একসাথে এক হয়ে যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে আসা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

★ নওরোজের এ বিশেষ দিনটির বিশেষত্বই মূলত এর ঐতিহ্যকে ঘিরে। এ উৎসবের আকর্ষনের কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে এর ঐতিহ্য।

এই উৎসবটি হচ্ছে মূলত সেই সমস্ত লোকেদের মধ্যে অত্যন্ত উৎসাহের সমেত উদযাপিত হয়, যারা নিজেদের ও সকলের সমৃদ্ধির জন্যে প্রার্থনা করতে এবং তাদের সকল পাপের জন্যে ক্ষমা বিশেষ প্রার্থনা করতে অগ্নি মন্দিরে যান। ভক্তরা বিশেষ করে এসব উদ্দেশ্যে তৈরি ঐতিহ্যবাহী এবং সুস্বাদু সব ধরনের খাবার উপভোগ করে থাকেন। যেমন ধরুন- পুলাভ এবং মুগ ডাল সহ আরও অন্যান্য নানান ধরণের বিশেষ বিশেষ খাবার।

এছাড়াও নওরোজের প্রধান আকর্ষনীয় ঐতিহ্যের  ব্যপার গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে- পরিবারের সকলের টেবিলের চারপাশে একত্র হওয়া। এটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য যা বিশেষভাবে পালন করা হয় এ দিনে। তাদের পরিবারের সকলেই সেদিন টেবিলের চারপাশে একত্র হয়। ব্যপারটা এমন যে একটা পরিবারের সকল সদস্য উজ্জ্বলতা, বিশুদ্ধতা এবং সম্পদের প্রতীক সকল বস্তু দিয়ে সজ্জিত সাধারণ একটি ঘরে জড়ো হয়। আর এই ব্যপারটি বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে পৃথিবীর নানান প্রান্তের মানুষদের।

★ নওরোজের দিন প্রস্তুত করা ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খাদ্য নওরোজ উৎসবের প্রধাণ আকর্ষনের একটি।

খাবার অনেক গুরুত্ব বহন করে থাকে এ নওরোজ উৎসবটি উদযাপনের জন্য। নওরোজের এই দিনটিতে তৈরি করা হয় নানান রকমের ঐতিহ্যবাহী সব খাবার।  না, শুধু ঐতিহ্যবাহী বললে ভুল হবে। এসব খাবার ওরা এতোটাই যত্ন করে তৈরি করে থাকে যে এগুলো যেমন তাদের ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে, ঠিক একই সাথে খুব সুস্বাদুও যা তাদের সবাই খুব পছন্দ করে। নওরোজের এই দিনটিতে প্রস্তুত করা ঐতিহ্যবাহী কিছু পার্সি সুস্বাদু খাবারের মধ্যে আছে চিংড়ি, ধানশাক, মেথি সেবা দহি, বেরি পুলাও এবং ফারচা সহ আরও অনেক রকমের মজাদার খাবার।

★ নওরোজ উপলক্ষে স্থানীয় মানুষদের পরিধান করা বিশেষ পোশাক উৎসবটির জন্যে খুবই আকর্ষনীয় বিষয়।

নওরোজ উৎসবের বিশেষ প্রধান আকর্ষনের মধ্যে একটি হচ্ছে নওরোজের জামাকাপড় অর্থাৎ পোশাক। আর এ পোশাক গুলো নওরোজের দিনের জন্যে বিশেষ গুরুত্ববাহীও বটে। নওরোজের এই প্রাণবন্ত উৎসবে মহিলাদের পরিধানে থাকে ঐতিহ্যবাহী বেশেষ ধরনের এক প্রকার শাড়ি, যাকে সাধারণত বলা হয়ে থাকে ঐতিহ্যবাহী গাড়া শাড়ি। আর পুরুষদের পরিধানের পোশাকে থাকে সাধারণত তাদের নতুন এবং সেরা সব পোশাক। এখন, তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক গুলো নিয়ে না বললেই না।  তাদের এসব ঐতিহ্যবাহী পোশাকের মধ্যে রয়েছে বিশেষ করে সুদ্রা এবং কুস্তি নামে খ্যাত একটি লম্বা মসলিন এক ধরনের শার্ট, ঢিলেঢালা সুতির একটি ট্রাউজার্স এবং একটি চায়না সিল্ক স্কাল ক্যাপ সমেত একটি সাদা কাপড় থেকে বানানো একটি কোমর কোট। তাদের এই পোশাক গুলো পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষনীয়।

শেষ কথা:

কোনো ধর্মকে ছোট করা, কটাক্ষ করা বা উপহাস করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়।  শুধু মাত্র আপনাদের জানার জন্য তথ্য প্রদান করছি। আর এসকল তথ্য ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত। এখানে আমাদের নিজেদের কোনো বক্তব্য বা পরামর্শ নেই।

 

 

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents