মিশরের পিরামিড থেকে শুরু করে আগ্রার তাজমহল কিংবা চীনের মহাপ্রাচীর সভ্যতা বিকাশের শুরু থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হাজারও ছোট -বড় স্থাপত্যকর্ম মানুষকে আকৃষ্ট করে। ভারতীয় উপ -মহাদেশেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শত শত স্থাপত্য শিল্পকর্ম যা আজও পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব প্রেমীদের কাছে টানে। এসব শিল্পকর্মের মধ্যে রয়েছে রাজ -রাজাদের বিশাল আকৃতির প্রাসাদ, মসজিদ কিংবা মন্দির।
তেমনই মধ্যযুগীয় স্থাপত্য শিল্পকর্মের অনন্য নিদর্শন সিরাজগঞ্জ জেলার সলংগা থানার অন্তর্গত হাটিকুমরুল ‘নবরত্ন মন্দির’। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এ মন্দিরটি ইতিহাস -ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে যুগ যুগ ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নবরত্ন মন্দিরটি স্থাপনে সাম্প্রদায়িক সাম্প্রীতির এক অনন্য নজির পরিলক্ষিত হয়। একজন মুসলিম শাসকের অর্থায়নে তারই হিন্দু তহশিলদার দ্বারা এটি নির্মাণ করা হয়। স্থানীয়ভাবে এটি ‘দেলমঞ্চ’ নামে পরিচিত।
সিরাজগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ১৯ কি. মি. দূরে উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল গ্রামে প্রতিষ্ঠিত মন্দিরটির সর্বাঙ্গ পোড়ামাটির কাব্য গাঁথা। নবরত্ন মন্দিরকে ঘিরে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি শিব মন্দিরসহ আরও তিনটি ছোট মন্দির। প্রতিটি মন্দিরের দেয়ালই পোড়ামাটি কারুকার্য খচিত। বাংলাদেশে প্রাচীন মন্দিরগুলোর অন্যতম এটি।
আরো পড়ুন…… পরশুরাম প্রাসাদ
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মন্দিরটি নির্মাণকালীন কোনো শিলালিপি না থাকলেও কিছু পাঠজাত বিবরণ থেকে জানা যায় যে , ১৭০৪ -১৭২৮ খ্রিস্টাব্দে নবাব মুর্শিদ কুলি খানের শাসনামলে তার তহশিলদার রামনাথ ভাদুরী স্থাপন করেন এই নবরত্ন মন্দিরটি। উঁচু একটি বেদীর উপর তিনতলা বিশিষ্ট এ মন্দিরটি ইট, চুন সুরকি মসল্লা দিয়ে নির্মিত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এ মন্দিরটি। প্রায় ১৫ বর্গ মিটার এলাকাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত মন্দিরের প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ১৫.৪ মিটার এবং প্রস্থ ১৩.২৫ মিটার। নিচতলায় চারদিকে চারটি বারান্দা বিশিষ্ট একটি গর্ভগৃহ রয়েছে। শিল্পকর্মের অনন্য নিদর্শন হাটিকুমরুল ‘নবরত্ন মন্দির’। প্রতিটি বারান্দার বাইরের দিক থেকে সাতটি ও ভেতরের দিকে রয়েছে পাঁচটি খিলাল প্রবেশ পথ। ছাদপ্রান্তে আংশিক বাঁকানো রয়েছে। মূল অবস্থায় মন্দিরের দেয়ালের ইট ও টেরাকোটার উপরে দেব -দেবী, লতাপাতা ও ফুলের চিত্রখচিত পোড়ামাটির অপূর্ব কারুকাজ। যা ইতিহাসবিদ ও দর্শণার্থীদের আকৃষ্ট করেছে। তবে বার বার সংস্কারের কারণে অধিকাংশ কারুকার্য ধ্বংস হয়ে গেছে। নির্মাণকালীন সময়ে স্থাপনাটির উপরে পোড়ামাটির ফলক সমৃদ্ধ নয়টি রত্ন বা চূড়া নির্মাণ করা হয়েছিল। যার সবগুলোই এখন ধ্বংস হয়ে গেছে।
এ মন্দিরটি ঘিরে আরও তিনটি মন্দির রয়েছে। নবরত্ন মন্দিরের উত্তর -পূর্ব দিকে শিব- পার্বতী মন্দির, দক্ষিণপাশে পুকুরের পাড় ঘেঁষে রয়েছে টেরাকোটায় কারুকার্য খচিত আরও একটি শিব মন্দির। পশ্চিমে রয়েছে জোড় বাংলা মন্দির। এসব মন্দিরগুলোও একই ধরনের পোড়ামাটির কারুকাজে সুসজ্জিত ছিল। নবরত্ন মন্দিরের পাশেই কৃষক কাসেম আলী শেখের বাড়ি। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বাপ -দাদার আমল থেকেই নবরত্ন মন্দিরটি দেখে আসছি। এর গায়ে অনেক ছোট ছোট মূর্তি ছিল, সেগুলো খসে পড়ে গেছে। শিব মন্দিরটির উপরে একটি পোড়া মাটির কলসির মতো চূড়া ছিল। সেটাও ভেঙে পড়ে গেছে। একই এলাকার প্রবীর কুমার দাস ও দিলীপ কুমার দাস বাংলানিউজকে বলেন, এক সময় এ মন্দিরটি অবহেলিত ছিল। এখানকার হিন্দুরাও পূজা -অর্চনা করতো না। প্রায় ৮ বছর ধরে এখানে দুর্গা পূজা করা হচ্ছে। হিন্দু -মুসলিম সবাই এখন আনন্দঘন পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করে। শিল্পকর্মের অনন্য নিদর্শন হাটিকুমরুল ‘নবরত্ন মন্দির’। নবরত্ন মন্দিরের কেয়ার টেকার মহাব্বত আলী শেখ বলেন, এ মন্দির দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ আসে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা এখানে এখনো পরিদর্শন করতে আসেন। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রভাষক বলেন, ধারণা করা হয় এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মন্দির। মন্দিরের দেয়াল এবং প্রবেশদ্বার কারুকার্য খচিত মধ্যযুগীয় শিল্পকর্মে পরিপূর্ণ। মানবসভ্যতার অন্যতম প্রাচীন শিল্পকর্মের মধ্যে পোড়ামাটির শিল্পকর্ম অন্যতম। যেটা এই মন্দিরে ছিল এবং এখনো কিছু কিছু রয়েছে। সে সময় পাথর এবং ধাতব অপ্রতুলতার কারণেই হয়তো ভারতীয় শিল্পীরাও মৃৎশিল্পের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়েছিল।
তিনি বলেন, এ মন্দিরটি নির্মাণকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক সাম্প্রীতির এক অনন্য নজির দেখতে পাওয়া যায়। বাংলা, বিহার উড়িষ্যার নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁনের শাসানামলে তারই অর্থায়নে এটি নির্মাণ করেন তহশিলদার রামনাথ ভাদুরী। শাহজাদপুর রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির কাস্টোডিয়ান বলেন, অপূর্ব কারুকার্য খচিত নবরত্ন মন্দিরটি সব ধরনের পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এটিই সব থেকে প্রাচীন ও চমৎকার একটি মন্দির। ইতোমধ্যে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে সংরক্ষণ করেছে। এ স্থাপনাটির সৌন্দর্য্যবর্ধন ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের জন্য প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। খুব শিগগিরই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে এ মন্দিরটি পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় করে তোলা হবে।
কথিত আছে, এই গ্রামের এক সময়ের সমৃদ্ধিশালী বরেন্দ্র কায়স্থবংশীয় রায় পরিবারের গোবিন্দরাম রায় নামক এক ব্যক্তি ব্যয়বহুল এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। তবে এ নিয়ে ঐতিহাসিক ও গবেষকরা বিভিন্নভাবে মতপ্রকাশ করেছেন।
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে রাধারমণ সাহা কর্তৃক প্রকাশিত পাবনা জেলার ইতিহাস গ্রন্থে মন্দিরটি প্রসঙ্গে লেখা আছে, ‘ইহা ইষ্টক ও পরিচূর্ণ দ্বারা নির্মিত ছিল। ইহা ত্রিতল বেদমন্দির ও প্রত্যেক তলে তিনটি প্রকোষ্ঠ বর্তমান ছিল। সর্বসমেত ৯টি প্রকোষ্ঠ বর্তমান থাকায় এর নাম নবরত্ন মন্দির হয়েছে। এর গায়ে নানা প্রকার কারুকার্য ও নানারূপ দেবদেবীর মূর্তি খোদিত ছিল। বর্তমানে মন্দিরটি একেবাইে বিনষ্ট হলেও ওই সমুদয় শিল্পকর্মের নিদর্শন অদ্যাপি ইতস্ত বিক্ষিপ্ত ইষ্টকাবলীয় কার্যাদিতে প্রতীয়মান হয়। মন্দিরে রাধাবল্লভ নামক বিগ্রহ স্থাপিত ছিল। এখন পর্যন্ত এখানকার রায়বংশীয়গণের গৃহদেবতা স্বরূপে পূজিত। প্রথম তলে পূজোপকরণ সামগ্রী রক্ষিত হতো। দ্বিতীয় তলে পূজোক ও পরিচালকবৃন্দ বাস করিতেন। তৃতীয় বা সর্বোচ্চ তলে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত ছিল। ইহার তলদেশের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ উভয় দিকেই প্রায় ৬০ হাতের উপর ছিল। ইহার উচ্চতা এতই অধিক ছিল যে, বহুদূরবর্তী প্রদেশ হইতে তারা দৃষ্টিগোচর হইতো। অধুনা মন্দিরটি বিনষ্ট হইলেও ভগ্নাবশিষ্ট অংশের উচ্চতা পচিশ হাতের কম নহে।’
অন্যদিকে ভবানীনাথ রায় নামক এক লেখক তার ‘হিন্দু বিজ্ঞান সূত্র’ নামক এক গ্রন্থে এই মন্দির সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন, ‘ইহার উচ্চতা এত অধিক ছিল যে, জনপথে তৎকালীন বঙ্গের রাজধানী ঢাকা হইতে যাতায়াত কালে নবাব এই মন্দিরের চূড়া দেখতে পান এবং ঈর্ষাপরবশ হয়ে তা ভাঙার নির্দেশ দেন। মন্দির স্বামী পরিবারস্থ লোকেরা তার পূর্বাভাস বুঝতে পেরে সপরিবারে বিগ্রহসহ কিছুদিনের জন্য স্ব -গ্রাম ত্যাগ করিতে বাধ্য হন। মুসলমানগণ পোতাজিয়া আক্রমণ করে। তাদের কাউকে দেখতে না পেয়ে পরিত্যক্ত দ্রব্যাদি লুণ্ঠন করত মন্দিরের মধ্যে হিন্দু ধর্ম বিগর্হিত কার্যাদি সম্পাদন করেন এবং অগ্নি প্রদানে সমস্ত বাটি ভস্মীভূত করেন। তদবধি মন্দিরটি হতশ্রী হইতে থাকে। ’
তবে ইতিহাস গবেষক আক্তার উদ্দিন মানিক এসব তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। সিরাজগঞ্জের ইতিহাস ও ঐতিহ্য গ্রন্থে তিনি লিখেছেন, ‘উপরের বক্তব্যগুলি অনুমান মাত্র। এটাকে সত্য হিসাবে সর্বাংশে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি নবরত্ন মন্দিরের অস্তিত্ব রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিনাজপুরের কান্তজী’র মন্দির, সিরাজগঞ্জের হাটিকুমড়– লের নবরত্ন মন্দির এবং পোতাজিয়ার নবরত্ন মন্দিরগুলো সবই নবাবী আমলে নির্মিত হয়েছিল। নবাবদের হিন্দু বংশীয় দেওয়ান বা জমিদারগণ ওই মন্দিরসমূহ নির্মাণ করেন। পোতাজিয়া নবরত্ন মন্দিরটিও ওই সময়ের, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কথিত পোতাজিয়া নবরত্ন মন্দিরের নির্মাতা গোবিন্দরাম রায় ঢাকার নবাবদের দেওয়ানরূপে কর্মরত ছিলেন। এরূপ কথাও উল্লেখিত রয়েছে। ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ যাতায়াত নৌকাপথে করতে গেলে পোতাজিয়া গ্রামটি কোনোভাবেই চোখে পড়ার কথা নয়। কারণ পোতাজিয়া গ্রামটি প্রত্যন্ত গ্রাম জনপদ। কোনোভাবেই এটা পদ্মা বা যমুনা নদীর যাত্রাপথে চোখে পড়ার কথা নয়। আরও দুই একজন লেখক এই নবরত্ন মন্দির সম্পর্কে নানা মন্তব্য করলেও এর ধ্বংসের প্রকৃত কোনো কারণ আজ পর্যন্ত জানা যায় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূমিকম্প বা কোনো দস্যুদলের আক্রমণেও এই নির্মাণটি ধ্বংস হতে পারে বলে এরূপ অনুমান করাই যথাযথ বলে মনে করা হয়।’
গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুর অঞ্চলের মহারাজার বকেয়া রাজস্ব আদায়ের ভার রামনাথ গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুর অঞ্চলের মহারাজার বকেয়া রাজস্ব আদায়ের ভার রামনাথ ভাদুড়ীর ওপর অর্পিত হয়। রামনাথ দিনাজপুরে উপস্থিত হলে রাজা তাঁকে মোটা অঙ্কের অর্থ দেন এবং কিছু সময় চেয়ে নিয়ে বিদায় করেন। তখনো দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরের নির্মাণকাজ চলছিল। রামনাথ মন্দিরটি দেখে মুগ্ধ হন। রাজার কাছ থেকে পাওয়া অর্থে নিজ বাড়িতে অনুরূপ দেবালয় নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। দিনাজপুর থেকে মজুর ও কারিগর এনে হাটিকুমরুলের নবরত্ন মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
ভিন্ন একটি কিংবদন্তিতে বলা হয়, রামনাথ ভাদুড়ী দিনাজপুরের তৎকালীন মহারাজার বন্ধু ছিলেন। ভাদুড়ী তাঁর বন্ধুকে নবাবের কাছে রাজ্যের রাজস্ব পরিশোধে একবার সাহায্য করেছিলেন। বিনিময়ে রাজা দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরের আদলে সিরাজগঞ্জের মন্দিরটি গড়ে দেন।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে মন্দিরটিতে স্থায়ী কোনো দেবদেবীর বিগ্রহ স্থাপিত হয়নি। তবে দোল উৎসবে রাধাকৃষ্ণ ও গোপাল বিগ্রহ তৈরি করে পূজা-অর্চনা করা হতো। হাজারো ভক্তের পদচারণে মুখরিত হয়ে উঠত মন্দির প্রাঙ্গণ। নবাবি আমলের পতনের সঙ্গে সঙ্গে ভাদুড়ী পরিবারেরও ঔজ্জ্বল্য কমতে থাকে। ক্রমান্বয়ে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে মন্দিরটি। গায়ে গজায় বট-পাকুড়গাছ। তবে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রশাসনিক কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে একেবারে ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছিল এটি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে মন্দিরটি প্রাচীন পুরাকীর্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। আশির দশকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর সংস্কার করে। ২০০৮ সালে আরেক দফা সংস্কার করে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী-রংপুর অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা কালের কণ্ঠকে জানান, উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। নবরত্ন মন্দিরের কাছে ও আশপাশে আরো তিনটি মন্দির রয়েছে। এরই মধ্যে দোচালা ও এক চূড়াবিশিষ্ট মন্দির দুটি সংস্কার করা হয়েছে। শিব মন্দিরটির রাসায়নিক পরীক্ষার কাজ হয়েছে। এখানে সীমানাপ্রাচীর করা প্রয়োজন। এর জন্য আরো কিছু জমি অধিগ্রহণ করা দরকার। ওপর অর্পিত হয়। রামনাথ দিনাজপুরে উপস্থিত হলে রাজা তাঁকে মোটা অঙ্কের অর্থ দেন এবং কিছু সময় চেয়ে নিয়ে বিদায় করেন। তখনো দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরের নির্মাণকাজ চলছিল। রামনাথ মন্দিরটি দেখে মুগ্ধ হন। রাজার কাছ থেকে পাওয়া অর্থে নিজ বাড়িতে অনুরূপ দেবালয় নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। দিনাজপুর থেকে মজুর ও কারিগর এনে হাটিকুমরুলের নবরত্ন মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
ভিন্ন একটি কিংবদন্তিতে বলা হয়, রামনাথ ভাদুড়ী দিনাজপুরের তৎকালীন মহারাজার বন্ধু ছিলেন। ভাদুড়ী তাঁর বন্ধুকে নবাবের কাছে রাজ্যের রাজস্ব পরিশোধে একবার সাহায্য করেছিলেন। বিনিময়ে রাজা দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দিরের আদলে সিরাজগঞ্জের মন্দিরটি গড়ে দেন।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে মন্দিরটিতে স্থায়ী কোনো দেবদেবীর বিগ্রহ স্থাপিত হয়নি। তবে দোল উৎসবে রাধাকৃষ্ণ ও গোপাল বিগ্রহ তৈরি করে পূজা-অর্চনা করা হতো। হাজারো ভক্তের পদচারণে মুখরিত হয়ে উঠত মন্দির প্রাঙ্গণ। নবাবি আমলের পতনের সঙ্গে সঙ্গে ভাদুড়ী পরিবারেরও ঔজ্জ্বল্য কমতে থাকে। ক্রমান্বয়ে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে মন্দিরটি। গায়ে গজায় বট-পাকুড়গাছ। তবে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রশাসনিক কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে একেবারে ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছিল এটি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে মন্দিরটি প্রাচীন পুরাকীর্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। আশির দশকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর সংস্কার করে। ২০০৮ সালে আরেক দফা সংস্কার করে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের রাজশাহী-রংপুর অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা কালের কণ্ঠকে জানান, উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। নবরত্ন মন্দিরের কাছে ও আশপাশে আরো তিনটি মন্দির রয়েছে। এরই মধ্যে দোচালা ও এক চূড়াবিশিষ্ট মন্দির দুটি সংস্কার করা হয়েছে। শিব মন্দিরটির রাসায়নিক পরীক্ষার কাজ হয়েছে। এখানে সীমানাপ্রাচীর করা প্রয়োজন। এর জন্য আরো কিছু জমি অধিগ্রহণ করা দরকার।
ঢাকা থেকে সড়কপথে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে পশ্চিম সংযোগ সড়কের সিরাজগঞ্জ সড়কের চৌরাস্তায় নামতে হবে। সেখান থেকে সিরাজগঞ্জ সড়ক। রিকশা বা ভ্যানে ২ কি. মি. উত্তরে হাটিকুমরুল। এরপর যেতে হবে মেঠোপথে। ১ কি. মি. গেলেই হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির