Dreamy Media BD

ভিয়েতনাম যুদ্ধ – ইতিহাস, কারণ ও ফলাফল

ভিয়েতনাম যুদ্ধ

যুদ্ধ মানেই হানাহানি, রক্তারক্তি, জীবন নিয়ে খেলা। যুদ্ধ মানেই সশস্ত্র সংঘর্ষ। যুদ্ধ মানেই কাছের মানুষের বুকে দুরুদুরু। যুদ্ধ মানেই আত্মত্যাগ, দেশের জন্য, জাতির জন্য। তেমনি এক যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ। ভিয়েতনাম যুদ্ধ বিশ্বের ইতিহাসে এমন একটি যুদ্ধ যেখানে কোনো পরাশক্তি টিকতে পারে নি। এটি ছিল মূলত দ্বিতীয় ইন্দোচীন যুদ্ধ এবং সরকারিভাবে উত্তর ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের মধ্যেকার লড়াই। 

ভিয়েতনামে ফরাসী ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে মূলত এই সংঘাতের সূচনা ঘটে। ভিয়েতনাম যুদ্ধে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকা প্রথমবারের মতো শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছিলো। কি অবাক হচ্ছেন? তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক ভিয়েতনাম যুদ্ধের ইতিহাস, ভিয়েতনাম যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল এবং এই যুদ্ধে আমেরিকার পরাজয়ের কারণ। 

ভিয়েতনাম যুদ্ধের ইতিহাস

১৯ শতক থেকে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে থাকা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র হচ্ছে ভিয়েতনাম। ভিয়েতনামের উত্তর দিকে রয়েছে চীন, লাওস ও কম্বোডিয়া। অর্থাৎ এই তিনটি দেশ হলো ভিয়েতনামের প্রতিবেশি দেশ। পূর্বে এই তিনটি দেশই ছিল ফ্রান্সের উপনিবেশ। এই কারনে এই দেশ তিনটিকে আগে ফ্রান্সের উপনিবেশ ইন্দোচায়না বলা হতো।

১৮০৭ সালে ফ্রান্স এখানে আসে এবং ১৯৪১ সাল পর্যন্ত টিকে ছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর সময় জাপান, ফ্রান্স সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে ছিল। সুযোগ পেয়ে জাপান এ সকল দেশগুলোকে আক্রমণ করে এবং ইন্দোচীনকে নিজেদের দখলে নিয়ে আসে।

এভাবেই ১৯৪১-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এই দেশগুলো জাপানের অধীনে ছিল।

১৯৪৫ সালে আমেরিকা কর্তৃক জাপানের ধ্বংস হওয়ার মাধ্যমে ২য় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটলেও তখনও ভিয়েতনাম জাপানের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। অন্যদিকে, ভিয়েতনামের দক্ষিন দিকে ব্রিটেনের সৈন্যরা জাপানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। যার ফলে, দক্ষিন অঞ্চলের জাপানিজ সৈন্যরা ব্রিটেনের কাছে আত্মসমর্পন করেছিলো। এভাবেই উত্তর এবং দক্ষিন কোরিয়ার মত ভিয়েতনামও দুটি পরাশক্তির কাছে হস্তগত হয়ে দুটি দেশে বিভক্ত হয়ে গেল।

বহিরাগত দুটি শক্তি এসে যুদ্ধের মাধ্যমে ফ্রান্সের উপনিবেশ দখল করে নিলো বলে ফ্রান্সও চুপচাপ এই বিভাজন মেনে নেয়নি।  

তখন ফ্রান্স পুরনো কর্তৃত্ব ফিরে পেতে চাইলে, ব্রিটেনের তেমন আপত্তি না থাকা স্বত্তেও চীন ভিয়েতনামের উত্তর দিকের কর্তৃত্ব ছেড়ে দিতে নারাজ হয়। ১৯৪৬ সালে ফ্রান্সের এই চাওয়া থেকেই একটা যুদ্ধ বেঁধে যায়, যার নাম প্রথম ইন্দোচায়না যুদ্ধ, যা টিকেছিলো ১৯৪৬-১৯৫৪ সাল পর্যন্ত।

কমিউনিস্ট নেতা হো চি মিন এর নেতৃত্বে ভিয়েতনামের স্থানীয় অধিবাসীরা স্বাধীনতা দাবী করেছিলো, যা ছিলো এ যুদ্ধ সঙ্ঘটিত হবার প্রধান কারন। হো চি মিনের পার্টি ভিয়েত মিন আগে থেকেই সক্রিয় থাকলেও 

এ সময় তা আরো বেশি প্রতিবাদী হয়ে উঠে। তাই ১৯৪৬ সালে আধিপত্যের জেরে আবার যুদ্ধ বেধে যায় ফ্রান্সের সাথে। ৬ বছরের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ঔপনিবেশিক ডানপিটে শক্তি ফ্রান্স হেরে যায় ভিয়েতনামের কাছে। 

এরপর ১৯৫৪ সালে ঐতিহাসিক জেনেভা চুক্তি তৈরী হয়। এই চুক্তিতে বলা হয় যে, ইন্দোচীন অঞ্চল অর্থাৎ ভিয়েতনাম, লাওস,কম্বোডিয়া থেকে ফ্রান্স তার ঔপনিবেশিক শক্তি সরিয়ে নিবে এবং এসব অঞ্চলে তাদের দাবী প্রত্যাখ্যান করবে। যার পর ভিয়েতনাম, লাওস,কম্বোডিয়া এই তিনটি দেশ সম্পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করবে।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভয়াবহতা
ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভয়াবহতা

ভিয়েতনাম যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল

একদিকে উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট নেতা হো চি মিন এর নেতৃত্বে কম্যুনিজম চর্চা, অন্যদিকে, দক্ষিন ভিয়েতনামের নেতা নদিম দিয়েং যিনি ছিলেন ঘোর কমিউনিজম বিরোধী এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থক। বুঝতেই পারছেন, এখানেও যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী। 

ব্যস! বেধে গেলো দাঙ্গামা! গোটা পৃথিবী তখন দুভাগে বিভক্ত। একভাগে দক্ষিন ভিয়েতনামের সাপোর্টে ক্যাপিটালিস্ট পশ্চিমা দেশ গুলো আর  অন্য ভাগে ছিলো উত্তর ভিয়েতনামের সাপোর্টে কমিউনিস্ট দেশ গুলো। 

আসলে দক্ষিন ভিয়েতনামের নেতা নদিম দিয়েং ছিলেন একজন ক্যাথলিক এবং দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা। স্বৈরশাসকের মতো তিনি রাজত্ব করতেন। নিজে ক্যাথলিক হওয়া স্বত্ত্বেও ভিয়েতনামের মতো একটি বৌদ্ধ রাষ্ট্রে তিনি বহু বুদ্ধিস্টদের অমানবিকভাবে হত্যা করেন। সাথে বৌদ্ধদের উপর আরোপ করেন নানান বিধি-নিষেধ। এসব কারনে আস্তে আস্তে নদিম দিয়েং এর জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকলে তার বিরুদ্ধে গড়ে উঠে দুর্বার এক আন্দোলন। দুটি দেশ এক হয়ে যাক, এটিই ছিল দেশবাসীর মূলমন্ত্র এবং একমাত্র জোরালো দাবী।

আমেরিকার নদিম দিয়েং কে সমর্থন করার সবচেয়ে বড় কারন ছিলো, আমেরিকা তখন কমিউনিজমের বিস্তার লাভ যেকোনো উপায়ে প্রতিহত করতে চেয়েছিলো। আমেরিকা সবসময়ই চেয়ে এসেছে পুরো পৃথিবী শাসন করতে। কাজেই দুই ভিয়েতনাম এক হয়ে গেলে এবং সেখানে কম্যুনিজম প্রতিষ্ঠা হয়ে গেলে এর প্রভাব পড়তো আশেপাশের বাকি দেশগুলোতে, যা আমেরিকা কখনই চায়নি। আর এ জন্যই তারা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে দক্ষিন ভিয়েতনামকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করছিলো এবং প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছিলো। যেকোনো মূল্যে একটি দেশে কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে দেবে না আমেরিকা। 

শুরুতে এই যুদ্ধের সাথে আমেরিকা সরাসরি জড়িত না থাকলেও “গলফ অফ টনকিনের’ ঘটনার পর আমেরিকা সরাসরি এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে উত্তর ভিয়েতনামের সাথে।

যদিও পরবর্তীতে জানা যায় এই ঘটনা যুদ্ধে সক্রিয় হবার জন্য আমেরিকার করা মঞ্চস্থ এক নাটক মাত্র। 

আমেরিকা বারে বারে বহু সংখ্যক সৈন্য পাঠিয়েছিলো উত্তর ভিয়েতনাম এবং যুদ্ধে সবরকমের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিল তারা। পরিসংখ্যান বলে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও এতটা বোমা ব্যবহৃত হয় নি যতটা বোমা আমেরিকানরা উত্তর ভিয়েতনামের সাথে যুদ্ধে ব্যবহার করেছিলো। 

এছাড়াও এই ভিয়েতনাম যুদ্ধে বিভিন্ন নিউক্লিয়ার উইপেন ব্যবহার করেছিলো আমেরিকা। এর মধ্যে ছিলো নিপমের মতো ক্যামিকেল যা গোটা জঙ্গলে এক নিমিষেই আগুন ধরিয়ে দিতে পারে। 

সবচেয়ে করুণ ব্যাপার হচ্ছে, এই ক্যামিকেল এজেন্টের আগুন থেকে কেউ রেহাই পায়নি। সাধারণ নারী, শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের গায়ে আগুন লেগে যায় এই ক্যামিকেলের জন্য। দগ্ধ হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা গেছে লাখ লাখ মানুষ। 

এ ভিয়েতনাম যুদ্ধ গেরিলা যুদ্ধ হওয়ায় এ যুদ্ধটি বিভিন্ন জঙ্গলে, গিরিপথে, নদীর ধারে, গুহায়, পাহাড়ে সংগঠিত হয়েছিল। তাই মার্কিনি সৈন্যরা শুরুতে তেমন সুবিধা করতে পারেনি। মার্কিনিদের বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিলো শুরুতে কারন তারা এই জঙ্গলের সাথে পরিচিত ছিল না। পরে তারা ব্যবহার করে এজেন্ট অরেঞ্জ নামক এক ধরনের ক্যামিকেল যা দিয়ে গাছের পাতা ঝরিয়ে ফেলত তারা, যাতে হেলিকপ্টারে করে গেরিলা যোদ্ধাদের কার্যকলাপ উপর থেকে দেখতে পারে। ভিয়েতনাম যুদ্ধে তাই পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে গেরিলা বাহিনীর সফলতার পেছনে একটি মূখ্য কারন হচ্ছে তাদের যুদ্ধ কৌশল। যুদ্ধ চলাকালীন তারা কখনো একসাথে দলবেঁধে থাকেনি বা বড় কোনো ঘাটি গাড়েনি। তারা জানত, তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করা হচ্ছে। বরং তারা মাটির নিচে সুড়ঙ্গপথ তৈরি করতো এবং সেটা ব্যবহার করে অপরপক্ষকে ঘায়েল করতো। 

১৯৬৮ সালে নির্বাচনে নিক্সন জয়লাভ করে প্রেসিডেন্ট হন। ক্ষমতায় এসে তিনি ১৯৭০ সালে উত্তর ভিয়েতনাম থেকে সৈন্য সরিয়ে দক্ষিন ভিয়েতনামে সৈন্য বাড়াতে থাকেন। এরপর ১৯৭৩ সালে প্যারিস শান্তি চুক্তির মাধ্যমে উত্তর ও দক্ষিন ভিয়েতনামের সাথে থার্ড পার্টি হিসেবে থাকা আমেরিকাকে সরিয়ে নেয়া হয় এবং উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দিয়ে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। 

প্যারিস শান্তিচুক্তির দু বছর পর চীনের সহায়তায় উত্তর ভিয়েতনাম, দক্ষিন ভিয়েতনামকে আক্রমণ করে বসে এবং সাইগন দখল করে নেয়। 

সে বছরের এপ্রিলে অর্থাৎ ১৯৭৫ সালে দুই ভিয়েতনামকে এক করে সোশালিস্ট রিপাকলিক অফ ভিয়েতনাম নামে এক ইউনিফায়েড ভিয়েতনামের জন্ম দেওয়া হয়।

প্রায় ৫৮,০০০ মার্কিন সৈন্য নিহত হয় আর প্রায় দেড়লাখের বেশি সৈন্য আহত হয় এ যুদ্ধে।  প্রায় দশ থেকে বারো লাখ ভিয়েতনামের সাধারণ জনগন মারা যায় এবং বহু নিরপরাধ মানুষকে মার্কিন সেনাবাহিনী নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে, যা এই যুদ্ধকে স্মরনীয় করে রেখেছে।

War Monumental

ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার পরাজয়ের কারণ

ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার জড়ানোর মূল কারন ছিলো আমেরিকার ভয়। ভিয়েতনাম যদি সম্পূর্ণভাবে কমিউনিস্ট দেশ হয়ে যায় তাহলে আশেপাশের দেশগুলোতেও কমিউনিজম ছড়িয়ে পড়বে, আর তা হতে দিতে চায়নি আমেরিকা। এভাবেই মূলত এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলো আমেরিকা, যে সংঘাত কেড়ে নিয়েছিলো লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষের প্রাণ। 

এ যুদ্ধে আমেরিকার পরাজয়ের বেশ কিছু কারন ছিলো। তার মধ্যে অন্যতম কিছু কারন হচ্ছেঃ 

১. যুদ্ধের দায়িত্ব এবং পরিসর ছিলো বিশাল 

বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গিয়ে যুদ্ধ চালানো ছিল আমেরিকার জন্য বিশাল এক দায়িত্ব। যুদ্ধ চলাকালীন পুরো এক দশকে ১০ লাখেরও বেশি সৈণ্য মোতায়েন করা ছিলো ভিয়েতনামে। এই যুদ্ধে মার্কিনের অর্থ ব্যয়ও নেহায়েত কম ছিলো না। ২০০৮ সালে মার্কিন কংগ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়য়, যুদ্ধের মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার যা আজকের মূল্যে ৯৫ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এবং কোরিয়াতেও যুদ্ধ চলাকালীন তারা এর চেয়েও বেশি অর্থ এবং সৈন্য কাজে লাগিয়েছে। তাই ভিয়েতনাম যুদ্ধের ফলাফল নিয়ে মার্কিন নেতাদের মনে আত্মবিশ্বাসের কোনও ঘাটতি ছিল না। তারা ধরেই নিয়েছিলো তারা বিজয়ী হবে। এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই হয়তো তাদের পরাজয়ের মূল কারন ছিলো। 

২. অনুপযুক্ত মার্কিন বাহিনী

মার্কিন বাহিনীকে যে ধরনের পরিবেশের মধ্যে গিয়ে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়েছে, সে ধরনের পরিবেশে কাজ করা কোনো বড় আকারের সামরিক বাহিনীর জন্য বেশ কষ্টসাধ্য ছিল বলে জানিয়েছেন ব্রিটেনের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতির ওপর একজন বিশেষজ্ঞ ড. লুক মিডাপ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে গহীন অরণ্যে গিয়ে যুদ্ধে টিকে থাকাটা নেহাতই মুখের কথা নয়। 

৩. গেরিলা যুদ্ধ

ভিয়েতনামীরা যুদ্ধে গেরিলা কায়দা অনুসরন করায় মার্কিনীরা তেমন সুবিধা করে উঠতে পারেনি। অপরিচিত গহীন অরন্যে বা পাহাড়ে, গূহায় মার্কিনীদের যুদ্ধ করার ট্রেনিং ছিলো না। গেরিলা বাহিনীর সুড়ঙ্গ বানিয়ে পালটা আক্রমনে তাই মার্কিনীরা খুব সহজেই ধরাশায়ী হয়ে পড়ে। 

৪. দক্ষিন ভিয়েতনামের শিথীলতা

ভিয়েতনামের যুদ্ধ একটি ব্যতিক্রমী নৃশংস সংঘাত হওয়ায় এখানে বিভিন্ন ক্যামিকেলের মাধ্যমে পরিবেশ সহ লাখো মানুষের ক্ষতি সাধন করা হয়েছিলো। দক্ষিন ভিয়েতনামের মানুষও এর ভুক্তভুগী ছিলো বলে তারা একসময় আর আমেরিকাকে মেনে নিতে পারেনি। তারা যুদ্ধ থেকে কোনোমতে পালিয়ে বেঁচে ফিরতে চেয়েছিলো। তাদের এই শিথীলতা আমেরিকার পরাজয়ের জন্য অনেকাংশে দায়ী। 

৫. কমিউনিস্টদের জোরালো মনোবোল

ভিয়েতনামীদের কাছে তেমন ভারি, আধুনিক অস্ত্র না থাকলেও তারা বুদ্ধিতে এবং মনোবলে শক্তিশালী ছিলো। তারা জানতো তাদের স্বাধীনতা লাগবেই। 

৬. দক্ষিন ভিয়েতনামের দূর্নীতিগ্রস্থ সরকার

দক্ষিন ভিয়েতনামের নেতা নদিম দিয়েং এর দূর্নীতিগ্রস্থ মনোভাব এবং বুদ্ধিস্টদের প্রতি তার অত্যাচারের কারনে দেশের মানুষ তার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলো। সর্বত্র দুর্নীতি দক্ষিণ ভিয়েতনামের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে পঙ্গু করে দিয়েছিলো। এমনকি সে সময় ঘুষ না দিয়ে কেউ সামরিক বা বেসামরিক কোন পদ অধিকার করতে পারতো না।

পরিশেষ

অনেকেই মনে করেছিলো আমেরিকার মত পরাশক্তির সাথে ভিয়েতনামের মতো দেশ পেরে উঠবে না। কিন্তু আমেরিকার কাছে থাকা অত্যাধুনিক অস্ত্র, উড়োজাহাজ এবং ক্ষেপনাস্ত্রকে হার মানিয়ে ভিয়েতনামীরা দৃঢ় মনোবল আর গেরিলা যুদ্ধনীতি দিয়ে বাজিমাত করে দিয়েছিলো। এই যুদ্ধের মাধ্যমে ভিয়েতনাম যে শুধু নিজেদের স্বাধীনতা আনে তাইই নয়, বরং তারা গোটা দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার মুক্তির সূর্যোদয় ঘটায়। তাই আমেরিকার এই পরাজয় মার্কিন রাজনীতির ইতিহাসে এক কলংকজনক অধ্যায়।

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents