প্রতি বছরের মতো এবারও আইফোন ১৫ (iPhone 15) দিয়ে চমক নিয়ে এসেছে অ্যাপল, গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্বের ৪০ টি দেশে বিক্রি শুরু হয়েছে। বরাবরের মতোই , বাজারে আসার সাথে সাথে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ক্রেতারা। আর অ্যাপল এবার গ্রাহকের দীর্ঘদিনের এক চাওয়া পূরণ করেছে , নতুন আইফোন ১৫ সিরিজের সবগুলি ফোনের খুঁটিনাটি ও দাম জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
কি কি ফোন থাকছে আইফোন ১৫ (iPhone 15) সিরিজে ?
অ্যাপল তাদের বিশেষ ইভেন্টের মাধ্যমে ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩-এ আইফোন ১৫ সিরিজ উন্মোচন করেছে। এই সিরিজে চারটি মডেল রয়েছে:
- আইফোন ১৫
- আইফোন ১৫ প্লাস
- আইফোন ১৫ প্রো
- আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স
আইফোন ১৫ ডিসপ্লে:
আইফোন ১৫ সিরিজের সবগুলি মডেলেই লিকুইড রেটিনা XDR ডিসপ্লে রয়েছে, যা হাই রেজোলিউশন এবং ব্রাইডনেস প্রদান করে। আইফোন ১৫ এবং আইফোন ১৫ প্লাসের ডিসপ্লে ৬.১ ইঞ্চি, আইফোন ১৫ প্রো এবং আইফোন ১৫ ম্যাক্সের ডিসপ্লেগুলি ৬.৭ ইঞ্চি।
আইফোন ১৫ প্রসেসর:
আইফোন ১৫ সিরিজের সমস্ত মডেলে একটি এ১৭ বায়োনিক চিপসেট (প্রসেসর) রয়েছে যা শক্তিশালী এবং হাইলি প্রসেসিং ক্ষমতা সম্পন্ন প্রসেসর। ফলে গেমিং, ও অন্যান ভারী কাজে সুপার স্মোথ গতি পাওয়া যাবে। তাই এটিতে ফোনের গতি বৃদ্ধির পাশাপাশি নিউরাল ইঞ্জিন ও মেশিন লার্নিংয়ের সুবিধাও পাওয়া যাবে এই ৩ ন্যানো মিটারের প্রসেসরে।
আইফোন ১৫ ক্যামেরা:
আইফোন ১৫ এবং আইফোন ১৫ প্লাসের পিছনে ৪৮ মেগাপিক্সেল প্রধান ক্যামেরা, সাথে একটি ১২ মেগাপিক্সেল আল্ট্রা-ওয়াইড ক্যামেরা এবং একটি ১২ মেগাপিক্সেল টেলিফটো ক্যামেরা রয়েছে।
আইফোন ১৫ প্রো এবং আইফোন ১৫ ম্যাক্সের পিছনে একটি ৪৮ মেগাপিক্সেল প্রধান ক্যামেরা, একটি ১২ মেগাপিক্সেল আল্ট্রা-ওয়াইড ক্যামেরা, একটি ১২ মেগাপিক্সেল টেলিফটো ক্যামেরা এবং একটি ১২ মেগাপিক্সেল লাইডার সেন্সর রয়েছে।
বরাবরের মতো আইফোন তার ক্যামেরার পিক্সেল না বাড়িয়ে মানের দিকে খেয়াল রেখেছে।
আইফোন ১৫ ব্যাটারি:
আইফোন ১৫ এবং আইফোন ১৫ প্লাসের ব্যাটারি ক্ষমতা ২৮১৫ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ার, আইফোন ১৫ প্রো এবং আইফোন ১৫ ম্যাক্সের ব্যাটারি ক্ষমতা ৩০৯৫ মিলিঅ্যাম্পিয়ার আওয়ার।
আইফোন ১৫ প্রো এবং আইফোন ১৫ ম্যাক্সের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য:
- টাইটানিয়াম বডি
- লাইডার সেন্সর
- প্রোমোশন ডিসপ্লে (আইফোন ১৫ প্রো)
- 5G নেটওয়ার্ক সাপোর্টেড
- নেক্সট লেভেল গেমিং এক্সপেরিয়েন্স
- স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জরুরী সস সিস্টেম
- হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার অ্যাপল দ্বারা তৈরিকৃত
- ম্যাগসাইফ দ্রুত চার্জিং (আইফোন ১৫ প্রো এবং আইফোন ১৫ ম্যাক্স)
আরও পড়ুনঃ ডার্ক ওয়েব: ইন্টারনেটের রহস্যময় অপরাধের জগৎ
আইফোন ১৫ রং/কালার
ব্ল্যাক টাইটেনিয়াম, হোয়াইট টাইটেনিয়াম, ব্লু টাইটেনিয়াম এবং ন্যাচারাল টাইটেনিয়াম এই চার রঙে পাওয়া যাবে আইফোন ১৫ প্রো এবং আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স।
আইফোন ১৫ রং/কালার
আইফোন ১৫ সিরিজে আপনি চারটি রঙ পাবেন:
ব্ল্যাক টাইটেনিয়াম, হোয়াইট টাইটেনিয়াম, ব্লু টাইটেনিয়াম, এবং ন্যাচারাল টাইটেনিয়াম।
আইফোন ১৫ অ্যাকশন বাটন
আইফোন ১৫-তে থাকবে একটি নতুন অ্যাকশন বাটন, যা ব্যবহারকারীদের সহজে বিভিন্ন কাস্টমাইজেশন সেটিংস এবং কার্যক্রম নির্ধারণে সাহায্য করবে।
এই অ্যাকশন বাটনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ফোকাস মোড সহজেই অন করতে পারবে, ফোন সাইলেন্স করার সময় ফ্ল্যাশলাইট অটোমেটিকভাবে বন্ধ করা যেতে পারে, ক্যামেরা অ্যাপ সহজেই চালানো যেতে পারে, এবং ভয়েস রেকর্ডিং চালু করা যাবে।
আইফোন ১৫ সিরিজে স্টোরেজ
- আইফোন ১৫: 128GB, 256GB, 512GB
- আইফোন ১৫ প্লাস: 128GB, 256GB, 512GB
- আইফোন ১৫ প্রো: 128GB, 256GB, 512GB, 1TB
- আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স: 128GB, 256GB, 512GB, 1TB
আইফোন ১৫ সিরিজে টাইপ সি চার্জার
আইফোনের নতুন প্রজন্ম, আইফোন ১৫, এ অবশেষে টাইপ সি চার্জার যুক্ত করা হয়েছে। ঘোষণাটি আইফোন ব্যবহারকারীদের দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল, লাইটনিং পোর্টের পরিবর্তে টাইপ সি চার্জার।
অ্যাপল এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ হিসেবে বলেছে যে এটি তাদের গ্রাহকদের জন্য আরও সহজে ডিভাইসগুলি চার্জ করার সুযোগ দেবে। টাইপ সি চার্জার বর্তমানে বেশিরভাগ Android ফোনে ব্যবহৃত হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয় যে ২০২৪ সালের অক্টোবরের ১ তারিখ থেকে এই অঞ্চলে বিক্রির জন্য বাজারে আসা সব স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ডিজিটাল ক্যামেরা, পোর্টেবল স্পিকার ও অন্যান্য ছোট ডিভাইসে ইউএসবি-সি চার্জিং সুবিধাযুক্ত করতে হবে। এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য ছিল ভোক্তাদের জন্য চার্জিং ডিভাইসগুলিকে আরও সহজে এবং সাশ্রয়ী করে তোলা।
অনেকেই মনে করছেন , মূলত অ্যাপলের একচেটিয়া বিজনেস বন্ধের জন্য এ কৌশল নিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কারণ বাদে প্রায় সব জনপ্রিয় মোবাইলেই ইউএসবি- টাইপ সি চার্জিং সুবিধা ছিল।
আইফোন ১৫ এ থাকছে সনি
সনি গ্রুপ এবার থেকে অ্যাপল কে ‘স্টেট-অফ-দ্য-আর্ট’ ইমেজ সেন্সর সরবরাহ শুরু করছে। সনির এই নতুন ইমেজ সেন্সর প্রচলিত সেন্সরগুলির সাথে তুলনা করে, প্রতিটি পিক্সেলের স্যাচুরেশন সিগন্যাল লেভেলকে প্রায় দ্বিগুণ হারে বাড়াতে সক্ষম হবে। তবে, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, শুধুমাত্র আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্সে টেলি-ফটো ক্যামেরার জন্য পেরিস্কোপ লেন্স সিস্টেম ব্যবহার করা হবে। আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্সে থ্রি এক্স অপটিক্যাল জুম সুবিধা ছিল, তবে, ১৫ প্রো ম্যাক্সে এটি সিক্স এক্স অপটিক্যাল জুম সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
আইফোন ১৫ সিরিজের দাম
আইফোন ১৫-এর দাম শুরু হবে $৭৯৯ থেকে, আইফোন ১৫ প্লাসের দাম শুরু হবে $৯৯৯ থেকে, আইফোন ১৫ প্রো-এর দাম শুরু হবে $১০৯৯ থেকে এবং আইফোন ১৫ ম্যাক্সের দাম শুরু হবে $১১৯৯ থেকে। এই দামগুলি আন্তর্জাতিক বাজারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য
আইফোন ১৫ এর স্পেসিফিকেশন
বৈশিষ্ট্য | বিবরণ |
ডিসপ্লে | ৬.৭ ইঞ্চি সুপার রেটিনা এক্সডিআর ডিসপ্লে, ১২০Hz প্রোমোশন রিফ্রেশ রেট এবং HDR সমর্থন |
চিপ | A17 বিয়োনিক চিপ |
RAM | ৮GB |
স্টোরেজ | ১২৮GB, ২৫৬GB, ৫১২GB, বা ১TB |
পিছনের ক্যামেরা | ৪৮MP মূল ক্যামেরা, ১২MP আল্ট্রা-ওয়াইড ক্যামেরা, ১২MP টেলিফটো ক্যামেরা ৩x অপটিক্যাল জুম সহ |
সামনের ক্যামেরা | ১২MP ট্রুডেপথ ক্যামেরা |
চার্জার | ‘টাইপ সি’ |
ব্যাটারি লাইফ | ভিডিও প্লেব্যাকের জন্য সর্বোচ্চ ২০ ঘন্টা |
অপারেটিং সিস্টেম | iOS ১৭ |
অন্যান্য বৈশিষ্ট্য | ফেস আইডি, সিরামিক শিল্ড, ৫G সংযোগ, ম্যাগসেফ চার্জিং, Wi-Fi ৬E, ব্লুটুথ ৫.৩, NFC |
আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স দাম কত বাংলাদেশে
বাংলাদেশে এখন অফিসিয়াল দাম জানা যায় নি । তবে বাংলাদেশ সরকার ইলেকট্রিক পণ্যে ৩২% ইম্পোর্ট ডিউটি নেয় ও আমদানিকারদের শিপিং ইত্যাদি খরচের জন্য , বাংলাদেশের বৈধ বাজারে আইফোন ১৫ আনুমানিক অনেক বেশি হবে।
আইফোন ১৫:
$৭৯৯ ডলার = ৮৭,১৯৩ বাংলাদেশি টাকা + ইম্পোর্ট ডিউটি ২৭,৯৭১ + অন্নান্য চার্জ
মোট = ১, ২৫, ০০০ বাংলাদেশি টাকা (প্রায়)
আইফোন ১৫ প্লাস:
$999 = বাংলাদেশি টাকা + ইম্পোর্ট ডিউটি ৩৪০০০ টাকা + অন্নান্য, বাংলাদেশি টাকা = ১,৬০,০০০ বাংলাদেশি টাকা (প্রায়)
$৯৯৯ ডলার = ১,০৯,২৪৮ বাংলাদেশি টাকা + ইম্পোর্ট ডিউটি ৩৩০০০ + অন্নান্য চার্জ
মোট = ১, ৫৫, ০০০ বাংলাদেশি টাকা (প্রায়)
আইফোন ১৫ প্রো:
$১০৯৯ ডলার = ১,২০,০০০ বাংলাদেশি টাকা + ইম্পোর্ট ডিউটি ৩৭০০০ + অন্নান্য চার্জ
মোট = ১, ৮৫, ০০০ বাংলাদেশি টাকা (প্রায়)
আইফোন ১৫ ম্যাক্স:
$১১৯৯ ডলার = ১,৩১,০০০ বাংলাদেশি টাকা + ইম্পোর্ট ডিউটি ৪৫০০০ টাকা + অন্নান্য চার্জ
মোট = ২,১০,০০০ বাংলাদেশি টাকা (প্রায়)
*ডলারের দাম , ইম্পোর্ট ডিউটি ও আমদানিকারকের বিভিন্ন চার্জের কারণে দাম কমবেশি হতে পারে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে, আরও লেখা পড়ুনঃ
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি: ভবিষ্যতে কি মানুষের স্থান দখল করে নেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা?
- সার্চ ইঞ্জিন কি : এক ক্লিকেই সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে