আসাম নীল পাহাড়ের দেশ নামে পরিচিত। কারন এর রয়েছে পূর্ব হিমালয় পর্বতমালা। আবার লাল নদের দেশ নামেও পরিচিত। আসামের নামকরা বিখ্যাত ফ্লেভার যুক্ত এক কাপ চা, আপনার ভ্রমণকে চিরস্মরনীয় করে তুলবে। এখানকার চা একবার যে খায়, সেই জীবন ভর গুনগান গায়।আসামের আকর্ষণীয় উঁচু নিচু্স্থরের সব পাহাড় ও ঘুর্নায়মান সমভূমির আঁকাবাঁকা পথ ধরে প্রবাহিত হয়েছে। আসামে পৌঁছানোর পরই যে জায়গা গুলো আপনাকে আকর্ষিত করবে, বিশ্বের বিখ্যাত চা, বিরল প্রজাপতির একশৃঙ্গ গন্ডার, বৈচিত্র্যময় রঙিন উপজাতি এবং কারো বিশেষ কয়েকটা জায়গা যা আপনি আসামে গেলেই জানতে পারবেন।
মহাব্রহ্মপুত্র নদ তিব্বতের মান সরোবর হৃদ থেকে উৎপত্তি লাভ করে। আসামে ভ্রমণের পূর্বে অবশ্যই আসাম সম্পর্কে আমাদের কিছু ধারণা নেওয়া উচিত। ভারতের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত রয়েছে আসাম শহরটি। আসামের বর্তমান আয়তন ৭৮,৪৩৮ বর্গ কিলোমিটার। দিসপুর হচ্ছে আসামের রাজধানী। বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ২৬.৬ মিলিয়ন। আসামে পরিদর্শনের জন্য সেরা সময় হচ্ছে অক্টোবর থেকে মার্চ মাসে। ভাষাগত দিক থেকে বাংলা, ইংরেজি, অসমিয়া, হিন্দি এই ভাষা গুলো ব্যবহার করতে পারবেন। আসামের উত্তরে রয়েছে ভুটান। এবং পূর্ব দিকে অরুণাচল প্রদেশ। পশ্চিমে বাংলা ও বাংলাদেশ।
বিমান, রেল ও সড়ক পথ দ্বারা বাইরের দেশ বা দেশের বাকি অংশ গুলির সাথে সংযুক্ত রয়েছে আসাম। আসামের বৃহত্তম শহর গুয়াহাটির লোক প্রিয় গোপীনাথ বরদোলই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, এই বিমানবন্দরে বাংলাদেশের ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাতায়াত করা যাবেআসামের শহর গুলিতে ঐতিহাসিক অতীতের একটি মনোরম সংমিশ্রণ ও সংস্কৃতি লক্ষণীয়। আসামের আকর্ষণীয় অনেক পর্যটন স্থান ( Assam tourist places) ভাববিলাসি ঐশ্বর্যশালী পার্বত্য দেশকে ঘিরে রেখেছে। একেকটা দর্শনীয় স্থান একেকটা সৌন্দর্যের রাজ্য।
১. হাফলং (Haflong)
হাফলং এর সবথেকে সুন্দরতম দৃশ্য হচ্ছে এখান থেকে নিচে রামধনুর সাত রং দেখা যায়। হিল আসামের অন্যতম বিখ্যাত পর্যটনের আকর্ষণীয় স্থান হাফলং। প্যারাগ্লাইডিং এবং ট্রেকিং এর মতো রোমাঞ্চকর ক্রিয়া-কলাপের জন্য খুবই জনপ্রিয় স্থান হাফলং। এই বিশাল চমৎকার পাহাড় টি মন্ত্রমুগ্ধ আভা দ্বারা বেষ্টিত। পাহাড়ের চারপাশে শুধু সবুজ আর সবুজ, সবুজের সমারোহ। একটি অকল্পনীয়, অসামান্য, আকর্ষণীয় দৃশ্য, যা পাহাড়ের উপর থেকে নিচের দিকে একবার তাকালে আর চোখ ফেরানোর ইচ্ছে করে না।
হাফলং এর আরেকটি বিখ্যাত আকর্ষণীয় দৃশ্য হচ্ছে পানিমুর জলপ্রপাত। এই জায়গাটা এতই বিখ্যাত যে এখানে বলিউড সিনেমার কিছু শ্যুট ও হয়েছে। শহীদ কাপুর এবং কঙ্গনা রানাউথ অভিনীত রেঙ্গুনের কিছু দৃশ্য এই হাফলং এর পানিমুর জলপ্রপাতের। এ ধারার পানিগুলো এতো শান্তভাবে বয়ে চলছে, দেখে আপনার মনে হবে যেন এ রকম স্বচ্ছ পানিতে পা ভিজিয়ে বসে থাকি। সৃষ্টিকর্তার প্রকৃতির লীলাভূমি সত্যি অপরুপ। উনার নিজের হাতে সাজানো বাগান আমাদের এই পৃথিবী। হাফলং সবচেয়ে মনোরম হ্রদ এবং শীর্ষ গন্তব্য স্থান।
হ্রদটি দিমা হাসাও পর্যটন বন বিভাগ এবং দিমা হাসাও স্বায়ত্তশাসিত কাউন্সিল দ্বারা সুরক্ষিত রাখা হয়েছে। এই আদর্শ পর্যটন কেন্দ্রটি শহরের ঠিক মধ্যখানে অবস্থিত,যার কারনে প্রচুর পরিযায়ী পাখির কারনবশত দর্শনার্থীদের বোটিং, ওয়াটার স্পোর্টস, ফিশিং এবং হরেক জাতের পাখি দেখার সুযোগ সুবিধা করে দেয়।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
মূল শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই হাফলং। | আসামের বৃহত্তম শহর গুয়াহাটি থেকে বাসে করে হাফলং এ পৌঁছাতে পারেন। অথবা জিপে শেয়ারের মাধ্যমেও পৌঁছাতে পারেন হাফলং এ। |
২. কামাক্ষ্যা মন্দির (Kamakhya Temple)
এই মন্দিরটি হচ্ছে ভারতের তান্ত্রিক বৌদ্ধদের একটি আসন। তারা এই মন্দিরটিতে ধ্যানমগ্ন হয়ে তাদের ভগবানকে স্মরণ করেন। গীতার কাহিনী অনুযায়ী, পার্বতীর মৃতদেহ যখন বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলেন ভগবান শিব, তখন ভগবান বিষ্ণু সুদর্শন চক্র দিয়ে পার্বতীর মৃতদেহটি টুকরো টুকরো করে ফেলেছিলেন।সেই ইতিহাস অনুযায়ী, পার্বতীর যোনি এখানে এসে পড়েছিল, তারপর থেকে এটি খুবই শক্তিশালী, অত্যন্ত পবিত্র শক্তিপিঠে পরিণত হয় মন্দিরটি। হিন্দুদের জন্য খুবই বিখ্যাত, দর্শনীয় একটি স্থান। হিন্দু,বৌদ্ধরা খুবই শ্রদ্ধার সহিত এই মন্দিরে পুজো সম্পন্ন করেন।
মন্দিরের চারপাশ গাছপালা দিয়ে ঘেরা সাথে শান্ত প্রিয় বাতাস সব সময়ই থাকে। মন্দিরের চারপাশে সব সময় পশু পাখিদের আনাগোনা। খুবই শান্ত প্রিয় একটা জায়গা। ভক্তরা তাদের মনোবাসনা নিয়ে পুজো করতে আসেন, অনেক দূর-দূরান্ত থেকে। অনেক নামকরা বিখ্যাত এই কামাক্ষ্যাকা মন্দিরটি। বক্তারা জানান, এই মন্দিরে কেউ কখনো মনোবাসনা নিয়ে এসে খালি হাতে ফেরত যায়নি। মন থেকে ভগবান শিবকে স্মরণ করে পুজো করলে যে যা চায় সে তাই পায়। দর্শনার্থীদের ভীড় লেগেই থাকে কামাক্ষ্যা মন্দিরে।
ভারতের আসামে আসলে অবশ্যই আপনি কামাক্ষ্যা মন্দিরে ভ্রমণে আসবেন। মন্দিরের চারপাশের সবুজে ঘেরা গাছ পালা, মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আপনাকে আকৃষ্ট করবে। ভারতের ৫১ শক্তিপিঠকে বলা হয় কামাক্ষ্যা মন্দির। মন্দিরটি তীর্থযাত্রী এবং দর্শনার্থী উভয়ের জন্য আসামের সবচেয়ে আকর্ষণীয়, সুপরিচিত পর্যটন স্থান গুলোর মধ্যে একটি।মন্দিরের প্রধান দেবতা হলেন ভগবান শিব, নীলাচল পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই কামাক্ষ্যা মন্দিরটি। উপাসকদের বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টি থেকে রক্ষা করে। এখানে যারা পর্যটক আসেন, সেই দর্শনার্থীদের উপর শান্তি বর্ষিত করেন। এই অপূর্বর জায়গাটি আপনাকে স্বাগত জানাতে মোহিত আছে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
গুয়াহাটি থেকে ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই কামাক্ষ্যা মন্দির। | গুয়াহাটি থেকে রিজার্ভ গাড়ি করে অথবা লোকাল বাসে করে পৌঁছে যেতে পারবেন কামাক্ষ্যা মন্দিরে খুব একটা দূরে নয়, গুয়াহাটি শহরের মধ্যেই অবস্থিত রয়েছে। |
৩. গৌহাটি
একটি নদীবন্দর ও শিল্পশহর বলা যায় গৌহাটি কে। পঞ্চম শতকের শুরুর দিকে এটা ছিল কামরূপ রাজ্যের রাজধানী। এই অঞ্চলটি খুবই সুন্দরময় কারণ এখানে রয়েছে অনেক প্রাচীন থেকে প্রাচীনোতম মন্দির। এটি আসামের বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও বলা যায়। হিন্দুদের তীর্থস্থান হিসেবে এখানে অনেক মন্দির রয়েছে। এশীয় হাতির অন্যতম আবার স্থল হচ্ছে এই রাজ্য গৌহাটি। তাছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন বনে বিভিন্ন ধরনের পশু পাখি পাওয়া যায়। বন্য শিয়াল, বাঘ, হরিণ, হাতি। এশীয় হাতির অন্যতম আবাসস্থল হচ্ছে এই রাজ্য।
পেট্রোলিয়াম, চা, রেশম এবং জীববৈচিত্রের জন্য এই আসাম রাজ্যটি প্রসিদ্ধ। আসাম রাজ্যে সেই প্রাচীনকালের বিখ্যাত বিখ্যাত নানা ধরনের নিদর্শন রয়েছে। বাণিজ্যিকের দিক থেকে গৌহাটিই সেরা স্থান। যানজট হীন, মুক্ত বাতাস সাথে মনোরমা শান্তিপ্রিয় পরিবেশের অধিকারী সংমিশ্রিত এই গৌহাটি। নদীবন্দরের স্থান বলা হয় গৌহাটিকে। বিশাল নদীতে পালতোলা নৌকা যখন হেলে দুলে যাত্রী নিয়ে চলে, কতইনা মধুর সেই দৃশ্য। নদীর পানি যেমন স্রোতে ভেসে যাচ্ছে, মানুষের জীবন ও ঠিক তেমন স্রোতের মতো ভেসে যাচ্ছে। পিছন ফিরে আসার কোন উপায় নেই। ভারতের আসামের প্রতিটা স্থানই আকর্ষণময়ী কারন নানা প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
আসামের গোয়াঁহাটি থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গৌহাটি শহর। | আসামের ডাউকি থেকে ট্যাক্সি পাওয়া যায় শিলং এর। আবার শিলংয়ের পুলিশ বাজার থেকে ট্যাক্সি বা জিপের মাধ্যমে পৌঁছাতে পারবেন গৌহাটি। গৌহাটি যাওয়ার ভাড়া পড়বে টেক্সিতে ১৫০ রুপি এবং জিপে ৮০ রুপি জনপ্রতি।। |
৪. আসাম টেস্ট মিউজিয়াম
১৯৪০ সালে আসাম রিসার্স সোসাইটি এ জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করেন। আসাম রাজ্য সরকার ১৯৫৩ সালে জাদুঘরটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এ জাদুঘরটি ভারতের অন্যতম বৃহৎ সংগ্রহশালা। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কনকলাল বড়ুয়া। প্রাচীনকালে নিদর্শনগুলো এখানে রয়েছে, কারুশিল্প, লোকশিল্প, টেরাকোটার নানা নিদর্শন, লিপি, পাথরের মূর্তি, কাঠ, ধাতু, নানান ধরনের ছোট বড় অস্ত্র, ইতিহাস ঐতিহ্য শিল্প সংস্কৃতি সবকিছু নিয়েই প্রতিষ্ঠিত এই অসাধারণ জাদুঘরটি। সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখে, একটু বিশ্রামের জন্য লাইব্রেরির দিকে যেতে পারেন।
অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটির পরে আপনার বিশ্রাম হয়ে যাবে এবং সাথে অনেক চমৎকার চমৎকার বই ও পড়বেন। অসাধারণ সব বই সংগ্রহ করে ১৯৮৫ সালে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে লাইব্রেরি। চমৎকার একটি লাইব্রেরি রয়েছে। এ বিখ্যাত লাইব্রেরীতে প্রাচীনকালের অনেক শর্টহ্যান্ডের নমুনা সংগ্রহও রয়েছে।
গ্রীষ্মকালে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাসে জাদুঘরটি খোলা পাবেন। সকাল ১০ টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত। এবং শীতকালে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে খোলা পাবেন, সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। সপ্তাহের সোমবারে বন্ধ থাকে। এবং দুপুর ১ টা থেকে দেড়টার মধ্যে বিরতি। জাদুঘরের পাশেই অবস্থিত রয়েছে, যুদ্ধস্মারক উদ্যান। জাদুঘরের বিশাল দিঘিকে ঘিরেই এই স্মারক উদ্যানটি স্থাপন করা হয়েছে। দিঘির সামনের দিকে রয়েছে যুদ্ধস্মারক বিমান ও ট্যাংক। তাছাড়াও আশেপাশে কিছু ভাস্কর্য। ঘুরে ঘুরে দেখার পরে বিশ্রাম করার জন্য বসার ব্যবস্থাও রয়েছে।
উদ্যানটির চারপাশের বিভিন্ন জাতের গাছ গাছালি সাথে হরেক রকমের পাখির কিচিরমিচির শব্দ। মনোরম বাতাসের সাথে খুবই শান্ত প্রিয় একটা পরিবেশ যুদ্ধস্মারক উদ্যানটি। উদ্যানটি পর্যবেক্ষণ করা শেষে এখান থেকে বেরিয়ে পাশে ফেন্সিবাজারের দিকে যেতে পারেন।রেল স্টেশনের কাছেই এই ফেন্সিবাজার। বাজারে রয়েছে আাসামের সেই বিখ্যাত চা। এ চায়ের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামালিয়া আসামিকা। চায়ে একবার চুমুক দিয়ে দেখেন সারাজীবন সেই চুমুকের কথা মনে থাকবে। এতটা অসাধারণ মজাদার, মুখে লাগার মতো একটি চা।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
আসাম থেকে টেস্ট মিউজিয়ামের দূরত্ব প্রায় ২১২ কিলোমিটারের মতো। | আসামের ডাউকি থেকে বাসে অথবা জিপের মাধ্যমে যেতে পারবেন টেস্ট মিউজিয়ামে। এখানে বেশিরভাগ মানুষ জিপ শেয়ারের মাধ্যমে ও যাতায়াত করেন। |
৫. জোড়হাট জিমখানা ক্লাব
আহোম শাসনের শেষ রাজধানী জোরহাটকে আসামের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। মাজুলী মহকুমা জোরহাট জেলার একটি অংশ। জিমখানা ক্লাবটি স্থাপিত হবার পর থেকে এখানে ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। পুরস্কার হিসেবে সব বিজয়ীদেরকে গভার্নরস কাপ প্রদান করা হয়ে থাকে। বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় এবং সর্বোচ্চ পুরনো এখানে অনেক লন টেনিস গ্রাস কোর্ট, বিলিয়ার্ডস,সুইমিং পুল, সিনেমা থিয়েটারে ও সুবিধা রয়েছে। এখানে থাকা নাইন হোল গল্ফ কোর্স এশিয়ার অন্যতম পুরনো গল্ফ কোর্স। সুইমিং পুলের জায়গাটি খুবই অসাধারণ। পরিবেশটা যেমন শান্ত সৃষ্ট, পুলটাও তেমনি নিরিবিলি একটি জায়গায় অবস্থিত।
তার পাশেই ঐতিহাসিক একটা পুরনো ভুবন রয়েছে। ঠেঙ্গাল ভবন, এই ভবনটি আসমের জোড়হাট জেলাতে অবস্থিত। রায় বাহাদুর শিরপ্রসাদ বড়ুয়া ১৯২৯ সালে এখানে একটি ছাপাশাল স্থাপন করা। এবং ১৮৮০ সালে ঠেঙাল ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন।আসামের চারটি রাজসত্রের মধ্যে দ্বিতীয় সারির সত্র হচ্ছে দক্ষিণপাট। অন্যান্য রাজসত্রের মধ্যে শীষ্যের সংখ্যা তুলনায় বেশি। আহোম রাজা জয়ধ্বজ সিংহের সময় প্রথম স্বত্বাধিকারী ছিলেন শ্রী শ্রী বনমালি দেব এবং ১৫৮৪ সালে শকে মাজুলিতে স্থাপন করা হয়।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
গুয়াহাটি থেকে ৩১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আসামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর জোড়হাট জেলার জিমখানা ক্লাব। | গুয়াহাটি থেকে বাসে করে পৌঁছাতে পারবেন জোড়হাট জেলার জিমখানা ক্লাবে। অথবা গাড়ি রিজার্ভ করে বা জিপে শেয়ারের মাধ্যমে ও যেতে পারবেন জোড়হাটে। |
৬. নামরি জাতীয় উদ্যান
এটি অ্যাড্রেনালাইন সন্ধানকারী এবং বন্যপ্রাণী উৎসাহীদের জন্য আসামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য গুলির মধ্যে একটি এই নামরি জাতীয় উদ্যান। এই উদ্ধানটিতে রয়েছে মহিমান্বিত হাতি, চিতা বাঘ, বন্য শুকর, সাম্বার, আর আমাদের বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এই উদ্যানটিতে সবচেয়ে বেশি যেটা আকর্ষণময়, তা হচ্ছে হরেক ধরনের পাখি, উদ্যানের যেদিকেই যাবেন, রংবেরঙের নানা জাতের পাখি আপনাকে স্বাগত জানাবে। শুধু পশুপাখিই নয়, বিভিন্ন জাতের গাছপালাও রয়েছে যা পর্যটকদের আরো বেশি আকর্ষণ করে। অনেক পর্যটকরা আছে যারা শুধু হরেক রকমের গাছপালায় পর্যবেক্ষণ করতে পছন্দ করেন।
আসামের আরেক জনপ্রিয় স্থান, হিমালয়ান নদীর বাঘ। আপনি নামরি নদীতে থামলে হিমালয়ান নদীর বাঘ নামে পরিচিত গোল্ডেন মাহসির সহ বিভিন্ন জাতের মাছের সাক্ষী হতে পারবেন। মাছগুলো দেখতে খুবই সুন্দর বিভিন্ন রং বেরঙের। আসামে আসলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি আসলে কত সুন্দর জায়গায় ভ্রমন করতে আসছেন। উদ্যানের পশুপাখি গুলো মূলত আকর্ষণ করে পর্যটকদের। পাখির কোকিল কন্ঠে ডাক গুলো এতোই মধুর হয় যেন বসলেই ঘুম চলে আসে।
জঙ্গলের চারিপাশে সবুজের সমারোহ, গাছপালা, নদীতে হরেক জাতের মাছ। আহা কতইনা নিরিবিলি নিস্তব্ধ পরিবেশ। আপনি একবার ভ্রমনে আসলে, পুরো আসাম শহরটাই ভ্রমণ না করে যেতেই পারবেন না, এখানকার পরিবেশ, সৌন্দর্য আপনাকে যেতে দিবে না। নামরি জাতীয় উদ্যানে প্রবেশের সময় হচ্ছে সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত। এবং এখানে প্রবেশের মূল্য ভারতীয় টাকায় ৫০ টাকা ও বাইরের দেশের টাকায় ২৫০ টাকা।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
গুয়াহাটি থেকে নামরি জাতীয় উদ্যানের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটারের মতো। | আসামের গুয়াহাটি থেকে বাসে করে নামরি জাতীয় উদ্যানে পৌঁছে যাবেন। |
৭. সুয়ালকুচি
সুয়ালকুচি,যা তাঁতিদের গ্রাম নামেও পরিচিত। তাঁতিরা এখানে রাজ্যের সেরা রেশম তৈরি করে। গ্রামের সৌন্দর্য তো এখানেই প্রকাশ পায় যেখানে অসাধারণ মাটি আর বাঁশের তৈরি ঘরগুলো দাঁড়িয়ে আছে দেখা যায় । বাঁশের তৈরি ছোট ছোট ঘর তাও আবার দুতলা ঘরও আছে মাঝেমধ্যে। সত্যি অসাধারণ সেই দৃশ্যগুলো। এখানকার জাতিগততা এবং দেহাতি আকর্ষণ এটিকে আসামের সবচেয়ে পরিচিত গন্তব্যস্থল। এবং ভ্রমন প্রিয় মানুষদের কাছে এই ছোট সুয়ালকুচি জায়গাটা সত্যি অসাধারণ। মনে রাখার মতো অন্যতম একটি জায়গা।
এখানের অসমীয়া সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে জানুন। তাঁতিদের মান উন্নয়ন ও জীবনধারার অবকাঠামো অন্যরকম। মহিলারা বাচ্চা, সংসারের কাজের পাশাপাশি, তাঁত বুনার কাজ করেন। রেশম তৈরির কাজও এতটা সহজ নয়। সুয়ালকুচি এলাকার চাঁরপাশটা কত সুন্দর। সবুজ গাছ পালায় ঘেরাও ছোট ছোট মাটির ঘর, মানুষগুলো খুবই সহজ সরল। মাঠে ছড়ানো গরু ছাগল, খালের পানিতে একঝাক হাসঁ ঘুরে বেড়াচ্ছে, মাঠে কৃষকের লাঙ্গল, গ্রামীন জীবন গুলো অন্য রকমের অনুভূতির সৃষ্টি করে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
আসামের গুয়াহাটি থেকে সুয়ালকুচি এর দূরত্ব প্রায় ১৭ থেকে ১৮ কিলোমিটার হবে। | গুয়াহাটি থেকে বাসে করে সুয়ালকুচি শহরে পৌঁছে যাবেন। সেখান থেকে রিক্সা বা অটো রিক্সা করে তাঁতিদের গ্রামে পৌঁছাবেন। গ্রামে পৌঁছে পায়ে হেঁটে পুরো গ্রামটি ভ্রমণ করতে পারেন। হেঁটে হেঁটে গ্রাম পর্যবেক্ষণ করার মজাই আলাদা। |
৮. পদম পুখুরী
পদম পুখুরী হচ্ছে মূলত একটি দ্বীপ পার্ক। যা পদ্মের জন্য দর্শনার্থীদের কাছে খুবই পরিচিতি লাভ করছে। পদম পুখুরী ১৯শ শতকের শুরুর দিকে একটি প্রাচীনতম খনন থেকে বিকশিত হয়েছিল। খুবই নিরিবিলি, শীতলতম বাতাসের নির্মম পরিবেশ যোগ করে আসামের এই অন্যতম ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানটি। পদম পুখুরীকে ঘিরে রয়েছে,, দর্শনার্থী ঘুরে বেড়ানোর মতো পর্যাপ্ত জায়গা, পার্কের বাদ্যযন্ত্রের ফোয়ারা, বাচ্চাদের জন্য খেলনা ট্রেন, লোহার সেতু এই আকর্ষণীয় সেতুটির অনুভূতি অন্যরকম কাজ করে। শহরের কোলাহল থেকে নিজেকে একটু প্রশান্তি দিতে, আপনি আসতে পারেন আসামের এই দর্শনীয় স্থানগুলো উপভোগ করতে।
মন ভালো করার মত একটি জায়গা। আসামের প্রতিটা কোনায় কোনায় রয়েছে নানা ঐতিহাসিক স্থান, ঐতিহাসিক কারুকার্য, প্রাচীর। ঐতিহাসিক যেকোনো কিছুর প্রতি আমাদের আকর্ষণ একটু বেশি থাকে। টিভির পর্দায় না দেখে চলে আসুন নিজের স্বচক্ষে পরিদর্শন করতে আসামে।পদম পুখুরীর শান্ত পরিবেশ আপনাকে যেমন মুগ্ধ করবে তেমনি পানিতে ভাসমান শান্ত মাছ গুলো দেখেও আপনার মন প্রফুল্ল হয়ে যাবে। হাজারো দুশ্চিন্তা, প্রেসার নিয়ে চলে আসুন আসামের পদম পুখুরীতে, শান্ত মনে ঘাটে বসে কিছুক্ষণ স্রোতহীন পানি দিকে তাকাবেন, নিমিষেই আপনার সব দুশ্চিন্তা ভেঁসে গিয়ে মন শান্ত হয়ে গেছে।
পদম পুখুরীর আশ্চর্যজনক পরিবেশ আপনাকে আরো আশ্চর্য করে তুলবে, এত বিল, বাদ্যযন্ত্র, বাচ্চাদের খেলনার জায়গা, লোহার সেতু এরকম দর্শনীয় অনেক কিছু থাকার পরেও, খুব একটা উশৃংখলার মধ্যে কখনো পড়তে হয় না। কেমন জানি শৃঙ্খলার সাথে নিরিবিলি পরিবেশে পর্যটকরা ভ্রমণ করে যান।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
আসামের গুয়াহাটি থেকে পদম পুখিরীর এর দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। | গুয়াহাটি থেকে পদম পুখুরী বাসের মাধ্যমে যাতায়াত করতে হবে। পদম পুখুরী থেকে রিকশা করে দ্বীপ পার্কে যেতে হবে। |
৯. মানস জাতীয় উদ্যান
আসামে দেখার মতো সেরা একটি জায়গা,মানস জাতীয় উদ্যান। ইউনেস্কোর প্রাকৃতিক বিশ্ব বিখ্যাত ঐতিহ্যের স্থান এবং একইসাথে একটি প্রজেক্ট টাইগার রিজার্ভ, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, এলিফ্যান্ট রিজার্ভ। আসামের বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানগুলোর পরেই রয়েছে এগুলা। এই উদ্যানটি বিপন্ন সোনালী লাঙ্গুর এবং প্রিয় লাল পান্ডার জন্য পুরোদেশে সুপরিচিতি লাভ করেছে। উদ্যানটির অসম্ভব সুন্দর দৃশ্যাবলী, অপরূপ প্রাকৃতিক ভূখন্ডের কারণে এটি আসামে এটি শীর্ষ দর্শনীয় গন্তব্য গুলোর মধ্যে একটি। যে পর্যটকরা অনন্য প্রজাতি দেখতে চান, তাদের মধ্যে অনেকে ঐতিহাসিক স্থানগুলো পর্যবেক্ষণ, করতে ভালোবাসেন
চারপাশে শুধু বৈচিত্র্যময় বাস্তুতন্ত্রের, তার সাথে রয়েছে পাললিক তৃণভূমি, বনের পাহাড়,গ্রীষ্ম মন্ডলীয় চিরহরিৎ বন। মানস জাতীয় উদ্যান ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাঘের জনসংখ্যার আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। এবং ভারতীয় প্রজাতির সর্বাধিক ঘনত্ব যা রেড বুকে বিপন্ন হিসেবে শ্রেণী বন্ধ করা হয়েছে। জাতীয় উদ্যানটির চারপাশ সবুজ গাছপালা দিয়ে ঘেরা, একেকটা গাছের উচ্চতা অনেক বেশি, লম্বা লম্বা গাছ সাথে গাছের ঘনত্বও বেশি। অসংখ্য পশু পাখি বিরাজ করছে গাছগাছালিতে। উদ্যানের প্রবেশ ফি ভারতীয় মাত্র ৫০ টাকা। সকাল ৭:৩০ থেকে দুপুর ২:৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে মানস জাতীয় উদ্যানটি।
ব্রহ্মপুত্র নদীর আশেপাশে এরকম অনেক দর্শনীয় জাতীয় উদ্যান রয়েছে। ঠিক তেমনি আরেকটি দর্শনীয় উদ্যান হচ্ছে, ওরাং জাতীয় উদ্যান। ওরাং জাতীয় উদ্যানটি ব্রহ্মপুত্রের উত্তর দিকে অবস্থিত। এই জায়গাটি শিং ওয়ালা গন্ডারের আবাস হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। এই উদ্যানের জনপ্রিয়তার আরেকটি বিশেষ কারণ হচ্ছে প্রাণী জগতের প্রচুর সমৃদ্ধ এবং এর ছোট বিলের মতো একটা জায়গায় ৫০টিরও বেশি প্রজাতির নানান ধরনের মাছ রয়েছে। যা পর্যটকদের কাছে নৈসর্গিক আকর্ষন। পরিবেশটা খুবই মনোমুগ্ধকর ও আকর্ষণীয়।
আপনি আসাম ভ্রমনে আসলে কোন জায়গা মিস করে যাবেন না, আসামের কোনায় কোনায় প্রত্যেকটা দর্শনীয় স্থান, একেকটা রাজ্যের মত।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
গুয়াহাটি থেকে মানস জাতীয় উদ্যানের দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়, প্রায় সাত কিলোমিটারের মতো। | আসাম থেকে গুয়াহাটি, সেখান থেকে লোকাল বাসে করে মানস জাতীয় উদ্যানে পৌঁছাতে পারবেন। অথবা আসামের গুয়াহাটি থেকে গাড়ি রিজার্ভ করেও যেতে পারেন। |
১০. কাকচাং জলপ্ৰপাত
আশ্চর্যজনক একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য গড়ে উঠেছে কাকোচাং জলপ্রপাতে। যা জোড়হাটের রাবার এবং কফি বাগানের মধ্যে উচ্চস্বরে গর্জন করতে থাকে। সারা বছর জুড়ে প্রচুর দর্শনার্থীরা এখানে আসেন এই জলপ্রপাত টি উপভোগ করার জন্য। এত সুন্দর জলপ্রপাতটি আপনি না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না। উঁচু পাহাড় বেয়ে শন শন পানির শব্দ নিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি নিচে। পানিটি খুবই স্বচ্ছ এবং হালকা মিষ্টি অনুভব করা যায়। এতটা উপর থেকে পড়ে আবার কিছুটা ভয়ও করে।
এর সৌন্দর্য এতটাই অমায়িক যে, ভয়কে জয় করেও মানুষ ছুটে আসেন এই অপরূপ কাকোচাং জলপ্রপাতটি উপভোগ করতে। সত্যি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি অংশ অপূর্ব, অসাধারণ দৃশ্য। জলপ্রপাতটি নুমালিগড়ের ধ্বংসাবশেষ এবং সবুজ চা বাগানের সৌন্দর্যের দৃশ্য দেখায়।এই উদ্যানটি কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানের সংলগ্নেই অবস্থিত। আপনি কাজিরাঙ্গা উদ্যানে আসলে অবশ্যই এই মানস জাতীয় উদ্যান না দেখে যাবেন না। এটি একটি খুবই আরামদায়ক যাত্রা পথ, সবুজ প্রকৃতির ছায়া তলে যাত্রা শুরু এবং শেষ হবে আসামের সব দর্শনীয় স্থান উপভোগ করে।
অনেক পর্যটকরা আবার জলপ্রপাতকে অনেকটা ভয় করে। অবশ্য কিছুটা ভয় করারই কথা কারণ অনেক জলপ্রপাতে বিভিন্ন সময় খবরের শোনা গেছে অনেক পর্যটনদের প্রাণ গেছে আবার অনেকের প্রাণ সংশয়ে ছিলো। কিন্তু আসামের এই জলপ্রপাত এখন পর্যন্ত এরকম কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি। তাই ভয় কাটিয়ে নির্দ্বিধায় কাকোচাং জলপ্রপাতে আসতেই পারেন।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
কাকোচাং জলপ্রপাতটি জোড়হাটের বোকাখাত থেকে ১৩ মাইল দূরে অবস্থিত রয়েছে। | আসামের গুয়াহাটি থেকে বাসে করে জোড়হাটে পৌঁছাবেন, সেখান আবার লোকাল বাসে করে বা রিজার্ভ কোনো গাড়ি নিয়ে কাকোচাং জলপ্রপাতে পৌঁছে যেতে পারবেন। |
১১. টোকলাই চা গবেষণা কেন্দ্র
টোকলাই চা গবেষণা কেন্দ্রটি বিশ্বের বৃহত্তম কেন্দ্র। এবং প্রাচীনতম চা গবেষণার কেন্দ্রের মধ্যে এটি একটি প্রাচীন কেন্দ্র। ১৯১১ সালে যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আসামের এই ইনস্টিটিউটটি যেখানে চা সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের উদ্ভব হয়েছিল এই সেই জায়গা টোকলাই চা গবেষণা কেন্দ্র। চায়ের পুষ্টি বাড়ানোর জন্য,চায়ের রং বা কালার যাতে ঠিকঠাক থাকে, চাষ এবং প্রক্রিয়াকরণ এই সমস্ত বিষয়ের উপরেই মূলত গবেষণা করা হয়, গবেষণা কেন্দ্রে। ঘন ঘন চাপ প্রক্রিয়াকরণ ট্যুর এবং অতিথিদের জন্য ভ্রমণের স্বাদ গ্রহণের জন্য এই গবেষণা কেন্দ্র সুপরিচিত। চা প্রেমীরা অবশ্যই এই গবেষণা কেন্দ্রে একবার আসবেন।
এর সামনেই একটা বিশাল বটগাছের মতো গাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে, দর্শনার্থীদের ছায়া প্রদান করার জন্য। এর সামনে সারি বাধা ঝাউ গাছ, সাথে নানান ধরনের আরোও বিভিন্ন গাছ রয়েছে। হাজার গরমের সময় হলেও এখানে একটা আলতো বাতাস সব সময়ই থাকে। শান্তির প্রতীক এই বটগাছটি। শ্রমিকরা যখন চা বাগান থেকে চা পাতা উঠায়, এই কুড়ি উঠানোর দৃশ্যটা যে কতটা অপরুপ হতে পারে তা আপনি না দেখলে বুঝতে পারবেন না। আপনি আসামে ভ্রমণে আসলে, অবশ্যই,টোকলাই চা গবেষণা কেন্দ্র না দেখে যাবেন।
এই গবেষণা কেন্দ্রে নিরাপদ ভাবে চায়ের কুড়িকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। চায়ের কালার অথবা স্বাদ পেতে কোনরকম অবৈধতা কোন কিছু ব্যবহার করা হয় না সেটা প্রমাণিত। আসামে এসে পাশেই এরকম একটা গবেষণা কেন্দ্র না দেখেই চলে যাবেন, তা তে হয়না। অবশ্যই আসবেন এই গবেষণা কেন্দ্রটি পর্যালোচনা করে যাবেন।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
আসামের গুয়াহাটি শহরের মধ্যেই অবস্থিত টোকলাই চা গবেষণা কেন্দ্রটি। | গুয়াহাটি থেকে জিপ শেয়ার করে বা অন্য কোন গাড়ি রিজার্ভ করে ও পৌঁছে যেতে পারবেন টোকলাই চা গবেষণা কেন্দ্রে। |
১২. হাজো
আসামের দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকায়, আরেকটি দর্শনীয় স্থানও রয়েছে, হাজো। যা ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে আটকে যায়। সড়ক পথে সুবিধাজনকভাবে দূর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে। এত সুন্দর অমায়িক নিরিবিলি একটি স্থান হাজো। এরকম অপূর্বর দৃশ্য দেখতে কার না ভালো লাগে। অসমীয়া মন্দির সহ পবিত্র আইটেম গুলি দেখতে চান যা পুরো হাজো অঞ্চলকে সাজিয়ে তুলে। পরিদর্শন করতে ভুলবেন না, এবং হায়গ্রীব মাধব মন্দির। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। হাজোী ফ্রি মাত্র ৫০ টাকা।
এই হাজো অঞ্চলটি দূর দুরান্তের দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। অঞ্চলটি যেমন শান্ত প্রিয়, ঠিক তেমনি পবিত্র একটি স্থান। আপনি আসামের গুয়াহাটি দেখতে আসলে, অবশ্যই এই হাজো অঞ্চলে আসতে ভুলবেন না। হাজো অঞ্চলটি আপনাকে স্বাগত জানাতে সব সময় প্রস্তুত। হাজোর প্রতিটি মন্দির যেন একেকটা সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে ঝলকাচ্ছে। প্রতিটা মন্দিরের একেকটা করে ইতিহাস রয়েছে। ইতিহাস গুলো জানতে অবশ্যই আপনাকে আসামের মন্দির গুলোতে পরিদর্শন করতে হবে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
গুয়াহাটি থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে পুরনো তীর্থস্থান অবস্থিত রয়েছে হাজো। | গুয়াহাটি থেকে জিপ শেয়ার করে বা অন্য কোন গাড়ি রিজার্ভ করে ও পৌঁছে যেতে পারবেন টোকলাই চা গবেষণা কেন্দ্রে। |
১৩. তেজপুর
তেজপুর শ্বাসরুদ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যা মুখে বলে শেষ করা যাবে না। আপনি অবশ্যই একবার এসে নিজ চোখে পরিদর্শন করে যাবেন। এতটা অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে কোন স্থান গঠিত হতে পারে, তা এই তেজপুর না দেখলে বুঝতেই পারতাম না। প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক শক্তি দ্বারা বেষ্টিত এই তেজপুর।সরাসরি এই শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদী। তার জন্য এর আকর্ষণ আরো বেশি বেড়ে গেছে। এর ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, থিয়েটার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নিঃসন্দেহে বলতে পারেন এটি আসামের একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। তেজপুরে প্রবেশ করার সাথে সাথে, চারিদিকে একবার চোখ বুলালে দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য দেখা যায়।
শহরের চারপাশে প্রতিটা অঞ্চলে, কিছু জায়গা পরপরই চায়ের দোকান পাবেন। আসাম জায়গাটি তো চায়ের জন্য বিখ্যাত। চারপাশে চায়ের খামার গুলি কেকের উপর বরফের আস্তরণের মতো। সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৌন্দর্যে আমরা সবাই মুগ্ধ, আকৃষ্ট । আসামে ভ্রমণে আসবেন অথচ আসামের বিখ্যাত চা মিস করে যাবেন তা তো হয় না। ভ্রমণ করার সাথে সাথে গ্রামীন ছোট ছোট টং দোকানগুলোর এক কাপ চায়ে চুমুক দিয়ে দেখবেন, কিরকম অন্যরকম একটা ফিলিংস কাজ করে। কথাটা মজাদার সেই চা। এক চুমুকেই শরীর চাঙ্গা হয়ে যায়।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
গুয়াহাটি থেকে বনগাঁও এর দক্ষিণ দিকে তেজপুরের অবস্থান। | গুয়াহাটি থেকে বাসে করে তেজপুর শহরে পৌঁছে যাবেন। সেখান থেকে অটো রিক্সা বা মোটর বাইকে করে অথবা পায়ে হেঁটে পুরো তেজপুর এলাকা ভ্রমণ করতে পারেন। |
১৪. ডিব্রুগড়
পর্যটকদের মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতের শিল্প ও যোগাযোগ পাওয়ার হাউস হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে এই ডিব্রুগড়। আসামের বৃহত্তম শহর, ডিব্রু নদীর নামানুসারে এবং শহরের সাথে সুন্দর সাবলীল পরিবহন সংযোগ রয়েছে ও অন্যান্য শহরের সাথে ও সংযোগ ভালোই। শহরের কোলাহল ছেড়ে কিছুটা সময় ব্যস্তহীন জীবন আরামে কাটানোর জন্য এখানে আসতেই পারেন। ডিব্রুগড়ে এসে পরিবেশের সাথে নানা প্রাণী জগৎ বা উদ্ভিদের সাথে সাক্ষাৎকার করতে পারবেন। প্রচুর উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ সমৃদ্ধ সংস্কৃতির কারণে এটি আসামের অন্যতম একটি দর্শনীয় সেরা স্থান হিসেবে পরিচিত। ডিব্রুগড় অসংখ্য পরিযায়ী নানা জাতের পাখির আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে।
গ্রীষ্মকালীন বা শীতের যেকোনো ছুটিতেই চলে আসুন আসামের দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করতে। অসংখ্য সুন্দর দর্শনীয় স্থান উপভোগ করার সাথে সাথে অজানা অনেক তথ্যও জানা হয়ে যাবে। ডিব্রুগরের সূর্য অস্ত যাওয়ার মুহূর্তটা বা দৃশ্যটা খুবই উপলব্ধি কর। এই দৃশ্যটা আপনার জীবনের সাথে ফ্রেমবন্দি করে রাখতে পারেন। আমাদের জীবন থেকে ব্যস্ত সময়টা কিছু সময়ের জন্য দূরে রেখে, নিজেকে প্রফুল্ল করতে মনে শান্তি জোগাতে, চলে আসতে পারেন আসামের এই দর্শনীয় স্থানগুলোতে। ঐতিহাসিক সব ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখতে পারবেন আসাম কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
গুয়াহাটি থেকে ডিব্রুগড় এর দূরত্ব প্রায় বিশ কিলোমিটার এর মতো। | গুয়াহাটি থেকে জিপে করে অথবা শেয়ারের মাধ্যমে পৌঁছে যেতে পারবেন ডিব্রুগড়ে। ডিব্রুগড় শহর থেকে ছোটখাটো যে কোন যানবাহনে করে,রিক্সা, অটো রিক্সা বা মোটরবাইকে করে ডিব্রুগড়ের দর্শনীয় জায়গাগুলো ভ্রমণ করতে পারেন। |
১৫. বনগাঁও
কামাতপুর রাজ্যের চূড়ান্ত রাজধানী হিসেবে কাজ করছিল এবং বোঙ্গাইগাঁও এর বর্ণিল সংস্কৃতি বনগাঁও এটিকে আসামের অন্যতম সেরা দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলে। দুই ধারে বিলের মত, স্রোতিহীন পানি ভেসে বেড়াচ্ছে। এই অসম্ভব সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। প্রথম দেখা এই বনগাঁও, এর সুন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে আপনার কাছে হয়ে উঠবে চিরচেনা। বিলের পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে যাকে যাকে হাঁস, সাথে বিল ভরা শাপলার ফুলের সুভাস। তার পাশেই মাঠে গরু চড়ানো হচ্ছে, সারি সারি নারিকেল গাছ থেকে নারিকেল পাড়া হচ্ছে।
এজন্য এক গ্রামের অসম্ভব কাল্পনিক সুন্দর দৃশ্য। যা শুধু কল্পনাতেই মানায়, কিন্তু তা নয় এটা হচ্ছে বাস্তবতা। এখানে বাস্তবে আপনি চোখের সামনে কল্পনার এ জগতটাকে উপভোগ করতে পারবেন। বনগাঁও নামটা শুনলেই যেমন একটা তৃপ্তি আসে। আপনার নিজেকে প্রশান্তি দিতে একবার ঘুরে আসুন আসামের এই বনগাঁও অঞ্চলে। বোঙ্গাইয়ের সংস্কৃতি ফুটে উঠে বনগাঁওয়ে দৃশ্যের মাধ্যমে। শহরের যানজটহীন জীবন ছেড়ে, কিছুটা শান্তিপ্রিয় সময়ের জন্য আসামের এইরকম স্থানে আসতেই পারি। এরকম গ্রামের স্থান গুলোতে আসলে, বিলের পানি, হালকা ঠান্ডা বাতাসের অনুভূতিটাই অন্যরকম কাজ করে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
গুয়াহাটি থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বনগাঁও এলাকাটি। | গুয়াহাটি থেকে বাসে অথবা জিপে করে বনগাঁও এর উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। বনগাঁও এ পৌঁছে পায়ে হেঁটে অথবা মোটরবাইকে করে পুরো এলাকাটি ভ্রমণ করতে পারেন। |
১৬. শিলচর
আসামের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক পর্যটন স্থান গুলোর মধ্যে এটি হচ্ছে অন্যতম একটি স্থান শিলচর। এখানকার দৃশ্য গুলো, নির্জন জায়গা, সবুজ প্রকৃতি আপনাকে নির্বাক করে দিবে। আসামের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটি মনিপুর, বাংলাদেশ, মিজোরাম এবং সীমান্তবর্তী বারাই পাহাড়। সীমান্তবর্তী বারাই পাহাড় এর ব্যাখ্যা দিয়ে এর পর্যাপ্ত তথ্য শেষ করা যাবে না। শিলচর জায়গাটি, নিস্তব্ধ, নির্জন, নিরিবিলি জঙ্গল। তার মধ্যে দিয়ে রয়েছে রেললাইন। নির্জন জায়গা দিয়ে যখন হঠাৎ রেল গাড়ির শন শন আওয়াজ হয় নিস্তব্ধ পরিবেশে, সেই সময় একটা অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়।
শিলচর জায়গার চারপাশ সবুজ গাছ গাছালিতে ঘেরা। জঙ্গলে পাখিদের কোলাহল, শুকনো পাতার মর মর শব্দে মাঝে মাঝে সাপ ও ঘুরে বেড়ায়। আসামের চারিদিকের পর্যটন স্থানগুলো খুবই আকর্ষণময়ী। পাহাড় প্রেমেদের জন্য অবশ্যই, খুবই আকর্ষণীয় স্থানটি। পাহাড়ের আনাচে কানাচে লুকিয়ে রয়েছে অনেক পশু পাখি, জানা অজানা নানা তথ্য। যা পাহাড় প্রেমেরাই খুঁজে বের করতে পারবেন। পাহাড় ভ্রমণ করার আলাদা একটা অনুভূতির সৃষ্টি হয়।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
আসামের গুয়াহাটি থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, শিবসাগরের পাশেই অবস্থিত শিলচর। | আসামের গুয়াহাটি থেকে বাসে করে পৌঁছে যেতে পারবেন শিলচর শহরে। শিলচর থেকে টেক্সি করে জঙ্গলের সামনে যেতে পারবেন। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে পুরো জঙ্গল ভ্রমন করতে হবে। |
১৭. শিব সাগর
আসামের সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত গন্তব্য স্থান গুলোর মধ্যে একটি একে আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে শিবসাগর। এটি আহোম রাজাদের আমলে তাদের দেশের রাজধানীও ছিল। বৃহত্তম কৃত্তিম ট্যাঙ্কগুলির পাশাপাশি এখানে রয়েছে দুর্গা মা মন্দির, বিষ্ণু ও গ্র্যান্ড শিবের মতো সৌন্দর্যমন্ডিত স্থানসমূহ। রুদ্রসাগর ও গৌরীসাগর মানব সৃষ্ট বৃহত্তম ট্যাঙ্কগুলির মধ্যে অবস্থিত রয়েছে। শিবসাগরের আশেপাশে একটি দীর্ঘস্থায়ী সভ্যতা সর্বদা বসবাস করে। জায়গাটা সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। অনেক রাত্রিবেলা এই জায়গা গুলোতে ঘোরাফেরা না করাই ভালো।
শিবসাগরের মন্দির গুলোতে বিভিন্ন পর্যটক মনের বাসনা নিয়ে, ভগবান শিবের কাছে বা দুর্গা মায়ের মন্দিরের সাক্ষাতে আসেন। মায়ের দর্ষণের জন্য এখানে পুজো করতে আসেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্গা মায়ের মন্দির থেকে কেউ কখনো খালি হাতে ফেরত যায়নি। যে যখন যা মানত করে আসে, সেই নাকি কোন না কোন ফল পায়। আপনিও আপনার মনের বাসনা নিয়ে, শিব সাগরের দুর্গা মায়ের মন্দিরে আসতে পারেন, একসাথে ভগবান শিব, বিষ্ণু কেও পেয়ে যাবেন। আসামের প্রতিটা মন্দিরই আশ্চর্যজনক কাজ করে থাকে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
আসামের গুয়াহাটি থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শিবসাগর। | আসামের বৃহত্তম শহর গোয়াহাটি থেকে বাসে করে খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন শিবসাগরে। |
১৮. গুয়াহাটি প্ল্যানেটেরিয়াম
পর্যটক যারা জ্যোতিবিদ্যায় আগ্রহী তাদেরই বেশি আকর্ষণময় এই জায়গাটি গুয়াহাটি প্ল্যানেটেরিয়াম। এইসব পর্যটকদের কাছে খুবি গুরুত্বপূর্ণময় স্থান এই প্ল্যানেটারিয়াম টি। শান্তশিষ্ট, নিরিবিলি, গোছালো একটি পরিবেশ। কৌতুক পূর্ণ এবং আকর্ষণ পদ্ধতিতে আশ্চর্যজনক মহাজাগতিক তথ্য আবিষ্কার করতে চাওয়া তরুণ বিজ্ঞানীদের মস্তিকের জন্য একটি দুর্দান্ত অবস্থান। মহাকাশ প্রেমীদের জন্য এবং শিশুদের জন্য প্রোগ্রামের এবং মহাকাশ অনুসন্ধানের জন্য অসংখ্য সুযোগ সুবিধার সাথে, একটি বিশাল সংখ্যা আঁকে প্রতি বছর দর্শক।
লোকেরা সূর্যগ্রহণ এবং উল্কাপাতের মতো অস্বাভাবিক ঘটনা চোখের সামনে দেখতে পারে কারন সুপরিচিত জ্যোতির বিদ্যা গবেষণা সুবিধাটিতে প্রচুর সেমিনার এবং প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় থাকে। গুয়াহাটি প্ল্যানেটেরিয়ামে।প্রবেশের মূল্য মাত্র ৫০ টাকা। প্লানেটেরিয়ামটি খোলা পাবেন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত। এর আশেপাশের পরিবেশটা খুবই শান্ত সৃষ্ট। পর্যবেক্ষণ করার জন্য মনোরমা পরিবেশে খুবই আকর্ষণীয় একটি স্থান এটি। আপনি আসাম ভ্রমণে আসলে অবশ্যই এই গুয়াহাটি প্ল্যানেটেরিয়ামটি এক নজর দেখে যাবেন। ভালো লাগার মত একটি স্থান
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
গোয়াহাটি থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গুয়াহাটি প্ল্যানেটেরিয়াম। | আসামের বৃহত্তম শহর গোয়াহাটি থেকে বাসে করে খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন শিবসাগরেআসামের গুয়াহাটি থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে, মোটর বাইকের মাধ্যমে সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন গুয়াহাটি প্ল্যানেটেরিয়ামে। |
১৯. ডিপোর বিল
আসামের যেকোন দর্শনীয় স্থানের তালিকায় অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, সৌন্দর্যতম আকর্ষণীয় স্থান ডিপোর বিলকে। যা একসময় ব্রহ্মপুত্র নদীর একটি সম্প্রসারণ হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। গুয়াহাটির দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থিত রয়েছে বিলটি।সূর্যাস্তের মুহূর্ত টা দেখার জন্য আদর্শ একটি জায়গা এবং নানা ধরনের পাখি দেখার জন্যও বিখ্যাত একটি জায়গা ডিপোর বিল। শুধু তাই নয়, এখানে আরো রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ওয়াটার লিলি। জলজ ঘাস,ওয়াটার হাইসিন্ত অন্যান্য অদ্ভুত অস্বাভাবিক ধরনের উদ্ভিদ পাওয়া যায় এখানে।
ফটোগ্রাফারদের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান এটি। নতুন দাম্পতিদের সময় কাটানোর জন্য বা আপনার জীবনের কিছু মুহূর্ত ফ্রেমবন্দী করে রাখার জন্য জায়গাটি আদর্শ একটি স্থান। আসামে ভ্রমণে আসলে কখনো এই জায়গাটি মিস করে যাবেন না। বিলের অন্যান্য দিক থেকে আকর্ষণীয় দৃশ্যটি হলো, যাকে যাকে অতিথি পাখি, বকের মেলা। দ্বীপের মধ্যে যখন হাজার হাজার পাখি একসাথে যাক বেঁধে আসে, বিলের সৌন্দর্যটা যে কতটা ফুটে ওঠে তা নিজ চোখে না দেখলে বুঝতেই পারবেন না। অনেক ফটোগ্রাফার পর্যটক আছেন শুধু এই দৃশ্যটা ফ্রেমবন্দি করতেই এখানে ভ্রমনে আসেন।
এতটাই অপরূপ দৃশ্য আসামের এই ডিপোর বিলে লুকিয়ে রয়েছে। আমাদের এই সুন্দর সাধারণ পরিবেশকে, যাকে যাকে পাখিরা আরো অসাধারণ করে ফুটিয়ে তুলে। আসামে এসে অবশ্যই ডিপোর বিলের পাখিদের নীড়ে একবার হলেও আসবেন।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
গুয়াহাটি থেকে ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এই ডিপোর বিল। | আসামের গুয়াহাটি থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে অথবা লোকাল বাসে করে পৌঁছে যেতে পারবেন ডিপোর বিলে। |
২০. আসামের চিড়িয়াখানা
এটি সমস্ত বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি উৎসাহীদের জন্য অবশ্যই দেখতে হবে যারা এই রাজ্যের সবুজ সমারোহের মধ্যে সময় কাটাতে চান। আসামের হেংরাবাড়ি সংরক্ষিত জঙ্গলের গভীরে দেখার জন্য এটি একটি খুবই আকর্ষণীয় স্থান। সবুজ প্রকৃতির মধ্যে পশু পাখিদের একটি রাজ্য। এই রাজ্যটির মধ্যে ৯০০ টিরও বেশি বিভিন্ন ধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণী বসবাস করে। একশিংওলা গন্ডার এখানের বিখ্যাত নামকরা একটা প্রাণী। বিভিন্ন ধরনের পাখি এবং সরীসৃপের সাথে ব্যক্তিগতভাবে সম্পৃক্ত হতে চান। এই কয়েক গুণ পশু পাখির রাজ্য নিয়ে গড়ে উঠেছে এই জঙ্গলের চিড়িয়াখানা।
চিড়িয়াখানায় গিয়ে যাদের সাথে দেখা হবে, চিতাবাঘ, হরিণ, মেঘাচ্ছন্ন চিতাবাঘ, বাঘ, গন্ডার, হাতি, সাপ এবং অন্যান্য আরো অসংখ্য প্রজাতির পশু পাখি রয়েছে। তাছাড়াও এখানে বর্তমানে রয়েছে সাদা গন্ডার,শিম্পাঞ্জি , পুমাস, উটপাখি, জেব্রা, জাগুয়ার, ক্যাঙ্গারু এবং লামা। বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানায় প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের ভীর লেগেই থাকে। চিড়িয়াখানার পরিবেশটা খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, শান্তশিষ্ট পরিবেশের সাথে মানানসই এই আসাম রাজ্য চিড়িয়াখানাটি। চিড়িয়াখানা চারিদিকে নানান জাতের ফলমূলের গাছও রয়েছে।
১৯৫৭ সালে খোলা হয়েছিলো এই হোমটি। চিড়িয়াখানাটি খোলা থাকে সকাল ৭ টা থেকে বিকাল ৪:৩০ টা পর্যন্ত। এখানে প্রবেশের জন্য প্রবেশ ফি মাত্র ৫০ টাকা। অবশ্যই একবারের জন্য হলেও আপনার পরিবারের সাথে আসামের এই চিড়িয়াখানাটি ঘুরে যাবেন। তারই পাশে আসামের আরেকটি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে হুল্লোঙ্গাপার গিবন বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এটি আসামের হুলক গিবন জনসংখ্যার জন্য একটি আশ্রয়স্থল। আসামের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে এটিও আরেকটি সেরা দর্শনীয় স্থান, প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী প্রেমীদের জন্য।
এই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি ব্রহ্মপুত্র নদী এবং চা বাগান দ্বারা বেষ্টিত। চারিদিকে খুবই সুন্দর ভাবে প্রকৃতির ছোঁয়া ডানা মেলে রয়েছে। এই অভয়ারণ্যে চল্লিশ প্রজাতির হুলক গিবন রয়েছে। বন্যপ্রাণী গুলো স্লো লরিস, ক্যাপট লেঙ্গুর, টেইলড ম্যাকাক, অসমিয়া ম্যাকাক, পিগটেল ম্যাকাক, রিসাস ম্যাকাক, এবং কয়েক প্রজাতির গন্ডার ও হাতি রয়েছে অভয়ারন্যে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
আসামের গুয়াহাটির জোরহাট শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, এই গিবন বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। | আসামের গুয়াহাটি থেকে বাসে করে জোড়হাটে আসতে পারেন। সেখান থেকে আবার লোকাল বাসে করে পৌঁছে যেতে পারবেন গিবন বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে। অথবা রিজার্ভ গাড়ি করেও আসতে পারেন। |
২১. মাজুলী দ্বীপ ও উমানন্দ দ্বীপ
আসামের গুয়াহাটির ব্রহ্মপুত্র নদীর মধ্যখানে অবস্থিত এই মাজুলী দ্বীপ টি। পৃথিবীর বৃহত্তম নদী দ্বীপের মধ্যে একটি। ক্ষেত্র মাজুলীর উপর অবস্থিত, এবং ৫টির উপরের বৈষম্য মঠও। বন্যপ্রাণির বিপুল বৈচিত্র আসামে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। একমাত্র আফ্রিকা ছাড়া, অন্য কোন জায়গায় এরকম বণ্য প্রাণীর বৈচিত্র দেখা যায়না। দ্বীপটা খুবই বিশাল আকৃতির নয়, তবে খুব একটা ছোট ও নয়। দ্বীপের পানিতে মাঝেমধ্যে কুমির ও দেখা যায়। বাইরে থেকে জঙ্গলের ভিতরের পাখির অনেক কিচিরমিচির শব্দ শোনা যায়।
শুধু পাখি নয় অন্যান্য পশু পাখির ডাকও শোনা যায়। মাজুলী দ্বীপটা সত্যিই অসাধারণ, খুব একটা নিরিবিলি মনোরম পরিবেশ। বিশেষ করে মাজুলী দ্বীপের সুন্দর আকৃতির জন্য পর্যটকদের আরও বেশি আকর্ষণ করে। শুধু মাজুলী দ্বীপ নয়, আসামের যেকোনো পর্যটন স্থানই খুব একটা উশৃংখলা নেই। সব স্থানগুলোতেই নিরাপদতা বজায় থাকে, এবং শৃঙ্খলার সহীত যেকোনো কাজকর্ম সম্পন্ন করে। আসামের অন্যান্য পর্যটন স্থান এর সাথে, আপনার ভ্রমণের লিস্টে অবশ্যই মাজুলী দ্বীপ ও রাখবেন।
তার পাশেই রয়েছে আসামের আরেকটি দর্শনীয় স্থান উমানন্দ দ্বীপ। এই দ্বীপটি হলো একটি ধর্মীয় দ্বীপ যা জুন মাসে বেশিরভাগ দর্শনার্থীরা এখানে আসেন ভ্রমণ করতে। বছরের অন্যান্য সময় ও পর্যটক থাকেন তবে জুন মাসের মতো এতো ভিড় থাকে না। গুয়াহাটি থেকে সহজেই যাতায়াত করা যায় এই দ্বীপে। দ্বীপটির ছোট্ট সুন্দর একটি নাম রয়েছে, ময়ূর দ্বীপ নামেও পরিচিত। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দ্বীপগুলোর মধ্যে একটি। ভগবান শিব কে উৎসর্গ করা জনপ্রিয় মন্দিরের বাড়ি এই উমানন্দে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
আসামের গুয়াহাটির ব্রহ্মপুত্র নদীর মধ্যখানে অবস্থিত এই মাজুলী দ্বীপ টি। পৃথিবীর বৃহত্তম নদী দ্বীপের মধ্যে একটি। | আসাম থেকে বাসে করে গুয়াহাটি। সেখান থেকে রিক্সা বা অটোতে করে ব্রহ্মপুত্র নদীর ঘাটে পৌঁছালেন। এখান থেকে নৌকার মাধ্যমে মাজুলী দ্বীপটি ঘুরে দেখতে পারেন। |
সর্বশেষ, আসাম ইকোট্যুরিজমের জন্য একটি চমৎকার ও আকর্ষণীয় স্থান। বিশ্বের বৃহত্তম নদী দ্বীপ, ভারতীয় শিংযুক্ত গন্ডারের আবাসস্থল, এরকম অনেক মন কারা দর্শনীয় স্থান আসামে রয়েছে। কাজের বিরতিতে কিছুটা স্বস্তির সময় কাটানোর জন্য চলে আসুন আসাম ভ্রমণে।
আসন্ন গরমে যারা কাজের চাপে নিঃশ্বাস ফেলা ভীড় জন কোলাহল ছেড়ে, নিরিবিলি পরিবেশ চান, তাদের নিশ্চিত গন্তব্য হলো আসাম, আর দ্বিধা বোধ না করে চলে আসুন আসামের দর্শনীয় স্থানগুলো উপভোগ করতে।
এক টুকরো স্বর্গ যেন মেঘের সাথে ভেসে এসে রূপকথা হয়ে আসামে এসে পড়েছে। আসাম ভ্রমণ আপনার জন্য শুভ হোক। নিরাপদে, সতর্কতায় ভ্রমণ করুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
আরো পড়ুন –