অরুণাচল (Arunachal) প্রদেশ হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত। এবং অরুণাচল প্রদেশটি প্রকৃতির গুপ্তধন হিসেবে পরিচিত,তাছাড়া ভোরের আলোকিত পাহাড় ভূমি হিসেবেও পরিচিত রয়েছে। যা অরুণাচল প্রদেশের প্রধান চিত্রানুগ বৈশিষ্ট্য ও বহু সংখ্যক পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
অরুণাচল প্রদেশের কিছু জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান রয়েছে। বমডিলা, ইটানগর, জিরো, তাওয়াং, পাসিঘাট। এই পর্যটনীয় স্থানগুলো যেন এক একটা শান্তির নীড়। শ্বাসরুদ্রাকর দৃশ্য দেখার জন্য অবশ্যই আপনাকে অরুণাচল প্রদেশে ভ্রমণে আসতে হবে। বিখ্যাত উদ্যান নামদফা জাতীয় উদ্যান, সেসা অর্কিড অভয়ারণ্য, পাখুই বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য,এগুলো সহ আরো বেশ কয়েকটি বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য বা উদ্যান, চিড়িয়াখানা, রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খেলা করে স্থান গুলোতে।
অরুণাচল প্রদেশ বিখ্যাত,অ্যাডভেঞ্চার উৎসাহীদের জন্য একটি দুর্দান্ত গন্তব্য স্থান। রাফটিং, ট্রেকিং,ক্যাম্পিং, ক্লাইম্বিং এবং বন্যপ্রাণী সাফারির মতো ক্রিয়াকলাপ গুলিতে লিপ্ত হতে পারেন। এতটাই সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করে অরুণাচল প্রদেশের দর্শনীয় স্থানগুলি।
অরুণাচল প্রদেশের রাস্তায় অনেক ঢাল রয়েছে। বাইক ভ্রমন যাদের পছন্দ তাদের জন্য খুব রোমাঞ্চকর একটা পরিবেশ থাকবে এখানে। অরুণাচলের উপত্যকা থেকে পর্বত পর্যন্ত ২,০০০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে ট্রান্স অরুনাচল ড্রাইভ তৈরি হয়েছে।
অরুণাচলে নতুন ড্রাইভিং গন্তব্য হিসেবে কিছু স্থানকে যুক্ত করা হয়েছে, গোরির, কাম্বু, মেরিয়াং, বোমাজি, গেকু। উত্তর পূর্ব ভারতের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থানগুলোর একটি অরুনাচল। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে নয় অন্যান্য সবদিক থেকেই অরুণাচল একটি বেস্ট জায়গা।
১. দিরাং (Dirang)
দিরাং মনাস্ট্রিটি আকারে বেশ বড়, শান্ত, ভাব গম্ভীর নিরিবিলি পরিবেশ। অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা অরুণাচলের ছোট্ট একটি জনপদ। এই জনপদের পাশেই রয়েছে আরেকটি সৌন্দর্যের স্থান সাংতি ভ্যালি। দিরাং এ ঘুরতে এসে, অবশ্যই পাশের সাংতি ভ্যালিটা পর্যবেক্ষণ করে যাবেন। এই জায়গার মুখ্য আকর্ষণ হল অতিথি পাখি যা ব্ল্যাক নেকড ক্রেন। বেশিরভাগ সময় এদের শীতের মৌসুমে দেখা যায়।
অতিথি পাখিগুলা অন্যান্য সিজনের থেকে শীতের মৌসুমে ঘুরতে আসেন এই সাংতি ভ্যালিতে। দিরাং থেকে সাংতি ভ্যালিতে যাওয়ার পথে শিপ ব্রিদিং ফার্মের চত্বরটি চোখের সামনে ভেসে উঠে। দিরাং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও এখানে আরো একটি ঐতিহাসিক বিশেষ স্থান রয়েছে। কিছু জায়গা পরপরই এই দর্শনীয় স্থানগুলোই দিরাং এর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলে। এখানে রয়েছে দিরাং জং। ১৯৫৯ সালে ভারত সরকার দলাই লামাকে প্রথম সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়।
বৌদ্ধদের অস্তিতের স্বীকৃতি স্বরূপ একটি লম্বা ও চার দেওয়াল বিশিষ্ট একটি অংশ যার মধ্যে রয়েছে মন্দির, প্রশাসনিক কার্যালয় ও সন্ন্যাসীদের থাকার জন্য জায়গা। জায়গাটি হিমালয়ের বুকে অবস্থিত। প্রকৃতির মধ্যখানে শান্তি প্রিয় স্থানে।
দিরাং থেকে তাওয়াং এ যাওয়ার পথে দর্শনীয়, আকর্ষণীয় কিছু স্থান পাবেন, হট স্প্রিং, চুগ ভ্যালি এবং ১৯৬২ সালের চীন ভারত যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত নয়ুকমাডং ওয়ার মোমোরিয়াল। অরুণাচল ভ্রমণে এসে অবশ্যই আশেপাশের সব দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করে যাবেন।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
অরুণাচল বমডিলা থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দিরাং অঞ্চলটি। | অরুণাচলের ভালুকপং থেকে তাওয়াং যাওয়ার বাসে চলে যেতে পারবেন দিরাং এ। অথবা শেয়ার গাড়ির মাধ্যমেও পৌঁছে যেতে পারেন দিরাং এ।
ভালুকপং থেকে দিরাং এ যেতে সময় লাগবে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টার মতো । |
২. ভালুকপং
আসাম সীমান্তের কাছে অরুণাচল প্রদেশের পাহাড় আর সবুজ অরণ্যে ঘেরা সৌন্দর্যের এই রমনীয় স্থান ভালুকপং। এই সুন্দর শহরের মধ্যখানে রয়েছে জিরো পয়েন্ট আর হলুদ রংয়ের তোরণদ্বার। শান্ত নদী, পাহাড় আর বিশাল অরণ্য মিলে রচনা করেছে এক সৌন্দর্যের পাহাড় অপার্থিব সৌন্দর্য। অরুণাচলের উত্তর দিক থেকে নেমে আসা সুন্দরের রানী কামেং নদী এখানে এসে জিয়াভরলি নাম নিয়েছে। দক্ষিণ দিকে আসাম উত্তরের অরুণাচল মিলে একাকার।
এক কথায় বলতে গেলে অসাধারণ, অমায়িক, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রদান সৌন্দর্য এই ভালুকপং। পড়ন্ত বিকেলে জিয়ারভলি নদীর ধারে হাঁটতে হাঁটতে মনের অস্থিরতা দূর করে অনেকটা প্রশান্তি পাওয়া যায়। সূর্যাস্তের এই সময়টা উপভোগ করা সত্যিই অসাধারণ। ভালুকপং এ এসে আবার নানান প্রজাতির পাখির সাথে দেখা হয়ে যাবে। তার মধ্যে আবার নীলকন্ঠ পাখির সংখ্যাটাই বেশি। তাছাড়া মৎস্য জেলে শিকারিদেরও জয়জয়কার খেলা হয় এই ভালুকপং নদীতে।
কিছু দূরে আবার পড়বে ভারতের সর্ববৃহৎ অর্কিড রিসার্চ সেন্টার টিপি। এখানে আবার নানা ধরনের দুর্লভ প্রজাতিসহ ৭,৫০০ তারও বেশি অর্কিটের সাথে দেখা মিলবে। তার পাশেই আবার সৌন্দর্যের রানী ঝর্ণা।
এইটুকুই শেষ নয় আরো রয়েছে, এখানে বিশাল অরণ্য, জঙ্গলে নানা ধরনের পশু পাখি। এই জঙ্গলটার আবার ঘনত্ব বেড়ে মিশে গেছে নামেরি ন্যাশনাল পার্কে। এই অঞ্চলটির অপরূপ সৌন্দর্যের জন্যই পর্যটকদের কাছে এতটা আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
লোকেশন | ভ্রমন গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
তেজপুর থেকে ভালুকপং ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। | অরুণাচলের গুয়াহাটির পল্টন বাজার থেকে বাসে করে পৌঁছে যেতে পারবেন ভালুকপং এ। অথবা শেয়ার গাড়ীর মাধ্যমেও তেজপুর থেকে যেতে পারবেন ভালুকপং দর্শনীয় স্থানে।
ট্রেনের মাধ্যমে যাতায়াত করতে পারেন, তেজপুরের গৌহাটি রেলস্টেশন থেকে ভালুকপং। তবে টাটা সুমোতে শেয়ারে গেলে সময়ের অনেকটা সাশ্রয় হয়। |
৩. ইটানগর
অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী হচ্ছে এই ইটানগর। ছোট্ট এই শহরে রয়েছে নানা দর্শনীয় স্থান সাথে আছে দোকানপাট, বাজারহাট সবকিছুই। বিভিন্ন ধরনের প্রন্ততান্ত্রিক নিদর্শন ছাড়াও অরুণাচলের নানা উপজাতির সমাজ ও সংস্কৃতি সম্বন্ধেও জানতে পারবেন এখানে আসলে। ইটানগরের কাছেই রয়েছে ১১ শতকের ইটা, দুর্গ ও ধ্বংসাবশেষ। ইটানগরে যাবে অথচ জওহর মিউজিয়াম পর্যবেক্ষণ করবেন না সেটা তো হয় না। বিখ্যাত জওহর মিউজিয়াম ইটানগরে অবস্থিত।
মিউজিয়াম টি আবার সপ্তাহে একদিন সোমবারে বন্ধ থাকে। অন্যান্য দিনগুলোতে সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা পাবেন। এবং তার কিছু দূরে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে, আরেকটি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে পিকচার পোস্ট কার্ডের মতো গঙ্গা লেক।ইটানগরের পুরনো শহর নাহারলাগুন দেখতে অনেকটা ছবির মতনই সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। এখানে আবার লোকাল সাইট সিংয়ে দেখতে পাবেন পোলো পার্ক, বৌদ্ধ মন্দির, চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন। আসলে জায়গাটি অপরূপ সৌন্দর্যের সুভাস চড়ায়।
এখানের সৌন্দর্যের প্রতীক বলা যায় পার্ক, চিড়িয়াখানা এগুলোকে। আপনার পরিবার নিয়ে চলে আসুন ভ্রমণে অরুণাচলের ইটানগরে। বিখ্যাত পোলো পার্ক, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন গুলো ঘুরে যাবেন। অরুণাচলের রাজধানী হিসেবে ইটানগর একটি বিখ্যাত খ্যাতিপূর্ণ জায়গা। বিশাল জায়গা জুড়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপত্য রয়েছে ইটানগরে। ঐতিহাসিক প্রতিটি স্থাপত্যের পিছনে এক একটা করে ঘটনা অবলম্বন রয়েছে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
অরুণাচলের ভালুকপং থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ইটানগর। | ভালুকপং থেকে অথবা তেজপুর থেকে বাসে করে পৌঁছে যেতে পারবেন ইটানগরে। অথবা গাড়ি রিজার্ভ করেও যেতে পারবেন।
তাছাড়া জিরো পয়েন্ট থেকে ইটানগরে যেতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টার মতো। |
৪. বমডিলা
অরুণাচল প্রদেশের কামেং জেলার ছোট্ট একটি শহর বমডিলা। প্রাকৃতিক সুন্দরের সাথে শান্তভাবে জড়িয়ে রয়েছে বমডিলা শহরটি। উঁচু নিচু পাহাড়ের সাথে ভিলাধর্মী ঘর বাড়ি, ছুঁয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির আবাস।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৪৩৮ মিটার উঁচুতে অবস্থিত বমডিলা অঞ্চলটি। এখানে বেশিরভাগ লোকজন মনিপুরী এবং মনপা উপজাতিদের বসবাস। পাহাড়ে ফলবাগানের মধ্যে বেশিরভাগই স্ট্রবেরি গাছ দেখা যায়। গাছের মধ্যে লাল লাল স্ট্রবেরি থোকায় থোকায় ঝুলে রয়েছে।
এখানে আবার আকর্ষণীয় একটা দৃশ্য দেখা যায়, মনপা অঞ্চলে মনপা উপজাতিরা বিরাট লাল, সাদা, সবুজ, হলুদ রঙ্গের কাপড়ের উপর বৌদ্ধ মন্ত্র লিখে টাঙ্গিয়ে রাখেন। উপরের এই জায়গা থেকে নিচের দিকে তাকালে অপরূপ এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এখানে অরুণাচলের বিভিন্ন উপজাতি গোষ্ঠীর সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা, উৎসব প্রভৃতিবিষয়, কর্মকান্ড বিষয়গুলোর যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। প্রতিটি থলিতে থলিতে রাশি রাশি পুথির মধ্যে সাজিয়ে রাখা হয়েছে এখানকার ইতিহাস।
নিচে আবার ছোট খাটোর মধ্যে একটি বাজারও রয়েছে। বাজারের মধ্যে থুবটেক মনাস্ট্রি ও আছে। মনাস্ট্রির মধ্যে ছায়াছন্দ বন্য ধুপের গন্ধ বাতাসের সাথে মিশে এক রহস্যময় ইতিহাসের আবাস দেয়। এটি বমডিলার একটি পুরনো গুম্ফা। অরুণাচলে ভ্রমণের প্রতিটি জায়গায আপনাকে আকৃষ্ট করবে। হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য সংস্কৃতি নিয়ে এক একটা জায়গা গড়ে উঠেছে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
অরুণাচলের তেজপুর থেকে ১৬৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রয়েছে বমডিলা।
এবং ভালুকপং থেকে বমডিলার দূরত্ব প্রায় ১৬১ কিলোমিটার। |
অরুণাচলের তেজপুর থেকে বাসে করে পৌঁছে যেতে পারবেন বমডিলাতে। ভালুকপং থেকে ছোট গাড়ি করে বা রিজার্ভ করেও যেতে পারবেন। ভাড়া পড়বে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
অথবা টাটা সুমোতে শেয়ারে করে যেতে পারবেন,এভাবে গেলে সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন। সময় লাগবে ৭ থেকে সাড়ে ৭ ঘন্টার মতো। |
৫. অনিনি
অরুণাচল প্রদেশের অন্যতম বিখ্যাত পর্যটন স্থান অনিনি। সারা বিশ্বের দর্শকদের আকর্ষণ করে সৌন্দর্যতম স্থানটি। দীবান বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যে বসবাসকারী বিশাল প্রজাতির বন্যপ্রাণীর রাজ্য বিখ্যাত অনিনি। গ্রীষ্মের শীতল হাওয়া ও মনোরম হিমালয়ের সাক্ষী হতে পারেন অরুণাচল প্রদেশে ভ্রমণে গিয়ে। এই জায়গায় অনেক এডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটি মূলক স্থান রয়েছে। উঁচু উঁচু পর্বত গিরিপথে ট্রেকিং এবং আরো কিছু ধরনের ট্রেকিং। শীতল ঘণ সাদা কুয়াশা দ্বারা আবৃত প্রাকৃতিক পরিপূর্ণ এ সৌন্দর্য। সবুজে ভরপুর ল্যান্ডস্কোপ দ্বারা পরিবেষ্টিত। স্থানীয় উপজাতিদের সাথে কিছুটা ভিন্ন সময় কাটাতে পারেন। মনোরম পরিবেশে শান্তি প্রিয় একটি স্থান অরুণাচল প্রদেশ।
প্রকৃতিকে ছোঁয়ার সাথে প্রকৃতির ভিন্ন একরূপ উপভোগ করার জন্যই অরুণাচল প্রদেশে ভ্রমন। অরুণাচল প্রদেশের যাওয়ার ভালো কিছু সময় হচ্ছে অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাসে। রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অন্বেষণ করা অনেকটা সহজ হয়ে ওঠে। এই সময় আকাশটা পরিষ্কার থাকে। ঝড় বৃষ্টির সময় আসলে ভ্রমণের আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়। অরুণাচল প্রদেশে ভ্রমণে এসে অবশ্যই অনিনি স্থানটি পর্যবেক্ষণ করতে ভুলবেন না। অনিনি জায়গাটি যেমন সৌন্দর্যপূর্ণে ঘেরা, তেমন এই জায়গাটির বিশাল গুণ রয়েছে। অনিনি অনেক ঐতিহাসিক স্থানের ইতিহাস গুলোকে আঁকড়ে ধরে রয়েছে। সে ঐতিহাসিক সময়ের ইতিহাস গুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে চলে আসুন অরুণাচল ভ্রমণের উদ্দেশ্যে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
অরুণাচল থেকে অনিনির দূরত্ব প্রায় ১৭০ কিলোমিটার। | অরুণাচল থেকে যেকোনো লোকাল বাসে করে পৌঁছে যেতে পারবেন অনিনিতে।
সবচেয়ে ভালো হবে শেয়ারের মাধ্যমে টাটা সুমোতে যাতায়াত করলে। অথবা আপনি রিজার্ভ গাড়ি নিয়েও যেতে পারেন। |
৬. সাংতি
অরুণাচল প্রদেশের পশ্চিম কামেং জেলায় অবস্থিত একটি সুন্দর এবং অফবিট স্থান, সাংতি। যারা প্রকৃতি প্রেমী এবং ভ্রমণ প্রিয় মানুষ তাদের জন্য খুবই পারফেক্ট একটি জায়গা সাংতি স্থানটি। পাশেই রয়েছে শান্তিপ্রিয় একটি গ্রাম। উপত্যকার বিরল প্রজাতির কালো গলার সারস পাখি বা ব্ল্যাক নেকড ক্রেনের দেখা পাবেন এখানে। এটা মূলত দেখা যায় বেশিরভাগ সময় শীতকালে। সেই সময় তারা এ স্থানে এসে বাসা বাঁধে।
সাংতি উপত্যকার পাহাড়ি নদীগুলা এখানকার আকর্ষণ কারে। নদীর সঙ্গেই রয়েছে গ্রাম। গ্রামে বাস করেন মহাযান বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মংপা উপজাতির দল। এই সুন্দর দৃশ্যের বাড়ি গুলো কাঠ এবং পাথরের তৈরি। গ্রামের চাষিরা প্রধানত ভুট্টা চাষ করেন এখানে। তাই গ্রাম বা দোকান গুলো জুড়ে রয়েছে ভুট্টার তৈরি খাদ্য। তার এক পাশে রয়েছে একটি বৌদ্ধ গুম্ফা। এইসব কিছু নিয়েই সাংতির গ্রামের সৌন্দর্য ফুটে উঠে। সাংতি উপত্যকায় চাইলে আপনি ক্যাম্পিংও করতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অনুমতি লাগবে। নদীর ধারে, জঙ্গলে ক্যাম্পিং করার কয়েকটা সাইট রয়েছে এবং ক্যাম্পিং এর জিনিসপত্র ভাড়াও পাওয়া যায় এখানে।
সাংতি উপত্যকাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য দুই থেকে তিন দিন আপনি এখানে রাত্রি যাপন করতে পারেন। সাথে আপনার ক্যাম্পিংটাও হয়ে যাবে। ভারতের মধ্যেই যে এত সুন্দর আকর্ষণীয় জায়গা পড়ে আছে, সেটা অনেকেরই অজানা।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
অরুণাচলের দিরাং শহর থেকে সাংতি উপত্যকার দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। | অরুণাচলের দিরাং থেকে লোকাল বাসে খুব সহজে পৌঁছে যেতে পারবেন সাংতি উপত্যকায়।
অথবা গাড়ি রিজার্ভ করেও যেতে পারেন। সময় লাগবে প্রায় ২ থেকে ৩ ঘন্টার মতো। |
৭. জিরো ভ্যালি (Zero Valley)
অরুণাচলের পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে আকর্ষণীয় একটি স্থান হচ্ছে জিরো ভ্যালি। যা হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত রয়েছে। সবুজ শ্যামলের ঘেরা ছোট্ট একটি গ্রাম,যা নির্মল জনপদে আবৃত। আপতানি উপজাতিদের জীবনযাপন, তাদের বসবাস চলাফেরা কাছ থেকে উপভোগ করতে চলে আসুন জিরো ভ্যালিতে। শহরের কোলা হোল থেকে বেরিয়ে, শান্তির একটি জায়গায় নির্ভেজাল প্রাকৃতিক পরিবেশে চলে আসুন কিছু সময়ের জন্য।
গ্রামের প্রতিটা কুড়ে ঘর যেন এক একটা শান্তির নীড়। বিরল উদ্ভিদের বিস্তৃত পরিসর,এবং বিস্তীর্ণ ধানের খেত। এমন একটা শান্তিপ্রিয় জায়গা জিরো ভ্যালি। সবুজের বাগান, সাথে হাজারো পাখির কোলাহল, এর যেন এক পাখির কল কাকলিতে ভরা সুভাস।জিরো ভ্যালি গ্রামটি ভারতের অন্যতম বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। যেমন দেখতে অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ায়, তেমনি প্রশান্তির ও স্থান বলা যায়। গ্রামের প্রতিটা কোনায় কোনায় ছড়িয়ে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
গ্রামের প্রতিটি সৌন্দর্য চোখ ধাঁধানোর মতো। একদিকে যেমন সবুজ ঘন ধানের ক্ষেত, অন্যদিকে ঠিক তেমনি তাল গাছের নিচে গরু ছাগলের হাট। অরুণাচলের প্রতিটি দর্শনীয় স্থানই অপরূপ সৌন্দর্য ছড়ায়। অরুণাচলে ভ্রমণে এসে তার আনাচে কানাচে প্রতিটা স্থানই পরিদর্শন করে যাবেন। এই মুহূর্তগুলো আপনার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। জিরো ভ্যালি পরিপূর্ণ সৌন্দর্যে ঘেরা একটি শান্তির নীড়।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
অরুণাচল থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১০২ কিলোমিটার এর মতো। | অরুণাচল থেকে লোকাল বাসে করে পৌঁছে যেতে পারবেন জিরো ভ্যালিতে।
অতএব আপনার জন্য ভালো হবে শেয়ারের মাধ্যমে যাতায়াত করলে। |
৮. তাওয়াং
তাওয়াং এ দেখার মত একটি বিশেষ মঠ রয়েছে। তাওয়াং এ অবস্থিত বিশেষ দেশের বৃহত্তম মঠটি গাল্ডেন নামগেই লাতসে নামে পরিচিত। যার সুন্দর একটি অর্থ রয়েছে, স্বচ্ছ রাতের স্বর্গীয় স্বর্গ। অরুণাচল প্রদেশের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিকভাবে উল্লেখযোগ্য রয়েছে তাওয়াং। ২০ শতক পর্যন্ত, তিব্বতের একটি অংশ ছিল এই তাওয়াং। কিন্তু এখন ভারতের সাথে সংযুক্ত হওয়ায়, এখন এটি একটি ভারতীয় অঞ্চল। উঁচু পাহাড় উপত্যকার উপর ছোট ছোট ঘর গুলো দূর দুরান্ত থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। রংবেরঙের কাঠের, টিনের ঘরগুলো যেন খুবই শান্তিময় স্থান। যখন তাওয়াং তিব্বতের একটি অংশ ছিল, তখন এতটা বড় অঞ্চল ছিল না।
শহরের যাক চমক পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণই আলাদা, গ্রামের এই ছোট ছোট পাহাড়ি অঞ্চল গুলো। খুবই মনোরম পরিবেশে এখানকার জনপদের বসবাস। অরুণাচল প্রদেশের প্রতিটা স্থানই এরকম শান্তিপূর্ণ। এজন্যই মূলত সারা বিশ্বের লোকদের এত আকর্ষণ এই অরুণাচলের প্রতি। সাংস্কৃতিক ভাবেও এই অঞ্চলটি খুবই বিখ্যাত তাওয়াং। অরুণাচলের বিখ্যাত স্থানটি অনেকে আবার সিনেমার শুটিং এর জন্য এসে দেখে যান।
তাওয়াং এর প্রতিটা জায়গায়ই অন্যরকম এক অনুভূতির সৃষ্টি করে। যা অন্যান্য জায়গা থেকে সেই ফিলিংসটা পাওয়া যায় না। তাওয়াং এর সেই অন্যরকম অনুভূতির পেতে চলে আসতে পারেন,সুদূর ভ্রমণে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
ভারতের অরুণাচলের সাংতি উপত্যকা থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। | অরুণাচলের রাজধানী ইটানগর থেকে বাসে করে পৌঁছে যাবেন তাওয়াং এ।
গাড়ি রিজার্ভ করে ও যেতে পারেন আবার শেয়ারের মাধ্যমেও যেতে পারেন। এটাই আপনার জন্য ভালো হবে। |
৯. ডং ভ্যালি
এটি ভারতের একটি বিশিষ্ট অংশ যা সূর্যালোকের প্রথম সূর্য রশ্মি দেখে। তাই এই ডং উপত্যকায় সূর্যোদয় মহিমান্বিত। এই জায়গার সূর্য রশ্নি জমি এবং বনে একইভাবে জীবনকে উষ্ণ করে তুলে। দূর থেকে দেখলেই বুঝা যায় জায়গাটির রূপ ফুটে উঠেছে। ডং উপত্যকা হল সেই জায়গা যেখানে ভ্রমণকারীরা মহিমান্বিত সূর্যোদয়ের সাক্ষী হতে পারে। এবং ভোর তিনটার মধ্যে পর্বত শৃঙ্গের আরোহন করে। পূর্বতম ভারতের গ্রাম এই ডং উপত্যকা।
অরুণাচল প্রদেশের মধ্যে ক্যাসকেডিং নদী থেকে শুরু করে বিভৎস পর্বত পর্যন্ত এটুকু জায়গার মধ্যে দর্শনীয় সবকিছুই রয়েছে। যেমন পাহাড়, ঝর্ণা, লেক, বনভূমি, বিভিন্ন ধরনের পশু পাখির অভয়ারন্য। সবকিছু মিলিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য যেন রূপ পরিবর্তন করছে। শহরের কোলাহলপূর্ণ ব্যস্ত জায়গা থেকে, নিজেকে কিছু সময়ের জন্য প্রশান্তি দিতে, চলে আসুন অরুণাচল প্রদেশের এই বিখ্যাত স্থানগুলো ভ্রমণ করতে। সবুজ ঘন পাহাড় জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে, ছোট ছোট ছড়ার মত খাল বিল।
এই ছোট ছোট জায়গাগুলোই তৈরি করে বিরাট একটি দর্শনীয় স্থান। যা পরিপূর্ণভাবে একটি নামে পরিণত হয়, যেমন ডং ভ্যালি। এই উপত্যকায় সূর্যোদয়ের মুহূর্তটা যেন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। অরুণাচল প্রদেশের প্রতিটা স্থানীয়ই এক একটা স্বর্গের টুকরো। ডং ভ্যালির দর্শনীয় জায়গা গুলো আপনাকে মুগ্ধ করে তুলবে। এক একটা জায়গার প্রতি অন্যরকম অনুভূতি প্রকাশ পায়।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
ইটানগর যা অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী সেখান থেকে ডং ভ্যালি এর দূরত্ব প্রায় ১১০ কিলোমিটার। | অরুণাচলের রাজধানী ইটানগর থেকে বাসে করে পৌঁছে যেতে পারবেন ডং ভ্যালির শহরে। সেখান থেকে মোটরবাইক বা অটোতে করে চলে যাবেন ডং ভ্যালিতে।
অথবা আপনার জন্য ভালো হবে ইটানগর থেকে শেয়ারের মাধ্যমে ডং ভ্যালিতে পৌঁছে যাওয়া। |
১০. ট্যালি উপত্যকা (Talley Valley)
শুধু গন্তব্যই নির্দিষ্ট নয়, এই পথ নিয়ে যায় উপত্যকায় তা খুবই সুন্দর। এবং প্রাচীন উপজাতির রীতিনীতি সংস্কৃতির অন্তরদৃষ্টি দেয় যা এর সাথে তাল মিলিয়ে চলে। জায়গাটিতে রুদ্রতাপ বেশি থাকার পরেও, খুব একটা গরম অনুভব করা যায় না। এই উপত্যকার বসবাসকারী স্থানীয় উপজাতিরা আশেপাশের বনভূমির প্রতি খুবই রক্ষণশীল দায়িত্ব পালন করেন। ফলে জায়গাটি সবুজে পরিপূর্ণ থাকে সবসময়। টালি উপত্যকার সুনির্দিষ্ট একটি সুনাম রূপেও রয়েছে এটি।
যে এত কড়া রোদের মধ্যেও, এর সবুজ প্রকৃতির কোন ক্ষতি সাধিত হয় না। সবুজ গাছপালার আবরণে ঘন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে টালি উপত্যকার কিছু জায়গা। অনেকটা স্বস্তি পাওয়া যায় এই জাশগার নির্মল বাতাসে নিজেকে কিছু সময়ের জন্য যারা প্রকৃতির বুকে বিলিয়ে দিতে চান। তাদের জন্যই, এরকম শান্তি প্রিয় নিরিবিলি আবাসস্থল এই টালির উপত্যকা। শীতের সিজনে জায়গাটি ভ্রমণ করতে অনেকটা ভালো লাগে।তবে সেই সময় ঘন কুয়াশায় জায়গাটি অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সে অন্ধকারে যদি ভ্রমন করেন, অবশ্যই সতর্কতার সহিত পথ পরিদর্শন করে চলবেন। এই বনভূমি গুলো আশেপাশের লোক সমাগমের স্থানগুলোকে, দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করে রাখে।
ট্যালি উপত্যকার আকর্ষণীয় স্থানগুলো দেখে মনে হয় রাজা হীন রাজ্য। ঐতিহাসিক প্রাচীন স্থাপত্যগুলো পড়ে আছে শুধু ইতিহাসের পাতায় ঘটনাবলী তুলে ধরার জন্য। প্রাচীন আমলে অনেক নির্মমতার সম্মুখীন হতে হয়েছে জায়গাটিকে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
রাজধানী ইটানগর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার এর মতো। | ইটানগর থেকে যেকোনো লোকাল বাসে করে সহজে পৌঁছে যাবেন ট্যালি উপত্যকায়।
তার চেয়েও ভালো হবে শেয়ারের মাধ্যমে ভ্রমণ করলে। |
১১. মেচুকা উপত্যকা
অরুণাচল প্রদেশের মধ্যে বিখ্যাত আরেকটি স্থান হচ্ছে মেচুকা উপত্যকা। মেচুকা উপত্যকায় আকর্ষণীয় একটি উৎসব হচ্ছে লোসার উৎসব। এই উৎসবে অংশগ্রহণ করতে বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা আসেন। রাজ্যের পশ্চিম সিয়াং জেলায় অবস্থিত এই বিখ্যাত জায়গা মেচুকা উপত্যকা। অরুণাচল প্রদেশের এই মেচুকা উপত্যকাটি সারা বছর ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্বারা কঠোরভাবে প্রহরায় থাকে। যাতে অবৈধভাবে কোন লোক ডুকে উশৃংখল করতে না পারে।
ভারতীয় দর্শনীয় জায়গা গুলোর মধ্যে এটি একটি অন্যতম পরিচ্ছন্ন জায়গা। এবং এই জায়গায় দূষণ কেবল একটি মিথ। জায়গাটিতে লোক সমাগমের হার বেশি থাকলেও, খুব একটা পরিবেশ দূষণ হয় না। কারণ এখানকার অনেক নিয়ম-নীতি রয়েছে। যা অনুসরণ করে লোকজন চলাফেরা করে। মূলত সেই জন্যই জায়গাটি এত পরিচ্ছন্ন থাকে সবসময়। উঁচু নিচু কয়েকটি পাহাড় ঘিরে এট সৌন্দর্য বাড়িয়েছে মেচুকা উপত্যকায়।মেচুকা উপত্যকার ইতিহাস ঐতিহ্যের লেখা রয়েছে অনেক নিদর্শন এর নাম। জায়গাটি আগে এরকম এত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছিল না। বর্তমানে কর্তৃপক্ষের লোকজন জায়গাটির দায়িত্ব নেওয়ায়, মেচুকা উপত্যকাকে দূষণমুক্ত আবর্জনা মুক্ত করেছে।
অরুণাচলের প্রতিটা উপত্যকাই জনবহুল স্থান হিসেবে পরিচিত। প্রতিটা স্থানেরই এক একটা করে ইতিহাস রয়েছে,যা নিদর্শন হিসেবে বিখ্যাত হয়েছে এই জায়গাগুলো। কয়েকটা জায়গাকে পুনরাবৃত্তি করে, নতুন করে সাজানো হয়েছে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
অরুণাচল প্রদেশের দর্শনীয় স্থান ট্যালি উপত্যকা থেকে দূরুত্ব হবে প্রায় ২২ কিলোমিটার এর মতো। | ট্যালি উপত্যকে ভ্রমনে আসলে অবশ্যই সেখান থেকে যেকোনো ছোট গাড়ির মাধ্যমে চলে আসতে পারবেন মেচুকা উপত্যকায়।
অথবা ইটানগর থেকে শেয়ারের মাধ্যমেও জার্নিটা এটা করতে পারবেন। |
১২. সেলা পাস
অরুণাচল প্রদেশের সৌন্দর্যের প্রতীক বলতে পারেন এই সেলা পাস জায়গাকে। সবচেয়ে নির্মল স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত একটি স্থান সেলা পাস। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তার উচ্চতা প্রায় ১৩,৭০০ ফুট এবং তার চারপাশে হৃদ রয়েছে মোট ১০১ টি। এই অঞ্চলে সেলা পাসকে বৌদ্ধদের দ্বারা একটি পবিত্র স্থান হিসেবেও বলা হয়। এখানে আবার আকর্ষণীয়, পর্যবেক্ষণের জন্য সুবর্ণ একটি সুযোগ বা সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে রয়েছে সেলা লেক।
হৃদের মধ্যে আকর্ষণীয় হৃদ হচ্ছে নীল হৃদ। অরুণাচল প্রদেশের ভ্রমণকারীদের জন্য খুবই মনোরম একটি স্থান। অন্যান্য আরো অনেক হৃদ রয়েছে তবে এই হৃদটিতে অন্যতম কিছু দৃশ্য অবলোকন করা যায়। সেলা পাস জায়গায় প্রবেশের জন্য প্রথমেই রয়েছে বিশাল একটি আকর্ষণীয় গেইট। রংবেরঙের বিভিন্ন কাপড় বা কাগজপত্র দিয়ে, খুবই আকর্ষণীয় করে সাজানো। তাই স্থানীয় লোকরা অনেকে এটাকে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে ধরেন।অরুণাচলের দর্শনীয় সেলা পাসের প্রতিটি জায়গাই খুবই আকর্ষণময়ী। তাছাড়া সৌন্দর্যের প্রতীক সেলা লেক বা হৃদ রয়েছে। অরুণাচলের প্রতিটি জায়গায় আপনার ভ্রমণের জন্য সুবর্ণ সুযোগ।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
অরুণাচলের সাংতি উপত্যকা থেকে সেলা পাসের দূরত্ব ৫০ কি.মি। | অরুণাচলের রাজধানী ইটানগর থেকে বাসে করে পৌঁছে যেতে পারবেন সেলা পাসে।
অথবা শেয়ারের মাধ্যমেও যেতে পারেন এটাই আপনার জন্য ভালো হবে। |
১৩. চ্যাংলাং
অরুণাচলের একটা অদ্ভুত এবং বিখ্যাত একটি স্থান হচ্ছে চ্যাংলাং। ল্যান্ডস্কেপের বড় উঠানামা করে ২০০ থেকে ৪৫০০ মিটার পর্যন্ত। প্রকৃতি অপরূপেক সৌন্দর্য প্রকাশ করে এখানে। জায়গাটির প্রতি পর্যটকদের খুবই আকর্ষণ থাকার কারণে, এটাও একটা পর্যটন স্থান হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। মায়ানমারের সীমানা স্পর্শ করা পাটকাই পর্বত শ্রেণীর মনোরম হৃদয় ছোঁয়া দৃশ্য গুলো এই অঞ্চলের অন্যতম সেরা দর্শনীয় স্থান। ভারতের মধ্যে চ্যাংলাং এর দর্শনীয় স্থান হচ্ছে,,, এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলো হচ্ছে, নামপং, বিজয়নগর, জরামপুর এবং মিয়াও। এই একেকটা স্থানে এসে, নতুন অনেক কিছু জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। প্রাচীন আমলের অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে এখানে।
অরুণাচল প্রদেশের সবগুলো জায়গায়ই, স্বর্গের টুকরো মনে হয়। চ্যাংলাং এ অবস্থিত জায়গাগুলোকে স্বর্গের টুকরো বলে মনে হয়। পাহাড়ের উপর বিরাট সৌন্দর্য নিয়ে গঠিত হয়েছে ছোট ছোট টিনের ঘরগুলো। পাহাড়ের কোনায় কোনায় টিনের ঘর গুলো দেখতে সত্যি অসাধারণ এক দৃশ্য চোখে ভেসে উঠে। পাহাড়ের সৌন্দর্যকে আরও দ্বিগুণ করে দেয় এই রংবেরঙের টিনের ঘরগুলো। সাথে বিভিন্ন ধরনের ফল ফুলের গাছ।
শহরের কর্মব্যস্ততার মধ্যে আমরা, গাছ লাগিয়ে পরিবেশ সুন্দর করার তেমন একটা সুযোগ পাই না। কিন্তু এরকম দর্শনীয় স্থানগুলোতে যখন ভ্রমণ করতে আসি, কর্ম ব্যস্ততার জীবনে আর ফিরে যেতে মন চায় না। সৌন্দর্যে ঘেরা পরিবেশগুলো আপনাকে এরকমই আঁকড়ে ধরবে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
অরুণাচলের রাজধানী ইটানগর থেকে চ্যাংলাং এর দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। | চ্যাংলাং এ পৌঁছানোর জন্য রয়েছে বাসের যাতায়াত সুবিধা।
অথবা শেয়ার মাধ্যম, বা গাড়ি রিজার্ভ। |
১৪. বুমলা পাস
পাথরের স্তুপ স্মৃতিস্তম্ভ এবং ইন্দ্র চীন বর্ডার পার্সোনাল মিটিং পয়েন্ট হচ্ছে মূলত বুম লা পাসের তিনটি প্রধাণ আকর্ষণীয় স্থান। বুৃমলা পাস এই স্থানটিকে অরুণাচল প্রদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।চীন ভারত যুদ্ধের পর ১৯৬২ সালের বুমলা পাসের সাথে সংযুক্ত ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এই জায়গায় প্রবেশ করতে হয়। জায়গাটি কিছুটা গাছপালা হীন।
চীন ভারত সীমান্তে অবস্থিত ঐন্দ্রজালিক গন্তব্যে, প্রাকৃতিকতার সাথে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন। চীন থেকে পালিয়ে বেড়াতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য, মহামহীন দালাইলামা ভারতে পৌঁছানোর জন্য এই পথ ব্যবহার করতে হয়। খুব একটা জনসাধারণের চলাচল নেই এখানে। নিস্তব্ধ জায়গাটি যেন নির্বাক অনুসারীদের অনুসরণ করে চলে। চোখে পড়বে শুধু উঁচু-নিচু পাহাড়। বসবাসরত লোকজনের মাত্রা কম হওয়ায়, নিস্তব্ধতার হারটি এখানে বেশি। নির্বাক নিস্তব্ধ এই জায়গাটি, অন্যরকম একটা সৌন্দর্যে ভরপুর।
চীন ভারতের সীমান্তে ইন্দ্রজালিক গন্তব্যের একটি স্থান হচ্ছে এই বুমলা পাস। নামটা যেমন একটু অন্য রকমের এই স্থানগুলো ঠিকই অন্যরকম অনুভূতি প্রকাশ করে। ইটানগর থেকে সহজেই এক গাড়িতে চলে আসতে পারবেন এই বুমলা পাসে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
ইটানগর থেকে বুমলা পাসের দূরত্ব প্রায় ৮২ কিলোমিটার এর মতো। | ইটানগর থেকে বাস সংযোগ রয়েছে বুমলা পাসের। অথবা গাড়ি রিজার্ভ করেও যেতে পারবেন।
সবচেয়ে ভাল হয় শেয়ারে গেলে। |
১৫. আলো
সবুজ উপত্যকা এবং পাহাড়ের উচ্চ শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য দেখার জন্য অবশ্যই আপনাকে অরুণাচলের বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান আলোতে আসতে হবে। স্থানটির সৌন্দর্য এতটাই চারিদিকে বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে রয়েছে যেন, অন্ধকার কেটে যাওয়ার পর সূর্য আলো দিচ্ছে। দর্শনার্থীদের মন্তব্য, আলোর এই স্থানটিকে স্বর্গের চেয়ে যেন কম কিছু মনে না করা হয়। আলোতে বসবাসকারী লোকদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধি গুলো যেন ঐতিহাসিক নিদর্শন এর বিবর্তন। স্থানটি খুবই আকর্ষণীয় একটি স্থান ।
বিভিন্ন উপজাতির লোকজন এ আলোর বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট গ্রামে বসবাসরত অবস্থায় আছেন। এক একটা গ্রাম যেন এক একটা ফুটন্ত ফুল। বিভিন্ন ধরনের অতিথি পাখির আবাসস্থল হিসেবেও বলতে পারেন। ঈগল নেস্ট ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি এখানে একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় জায়গা। পাখি প্রিয় মানুষদের জন্য অবশ্যই বেস্ট একটি জায়গায় এই ঈগল নেস্ট। অরুণাচলে ভ্রমণে এই সুন্দরতম স্থানটি মিস করে যাবেন না।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
ইথানগর থেকে আলো স্থান এর দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। | ইটানগর থেকে যেকোন বাসেই আলো দর্শনীয় স্থানের সামনে এসে নামা যায়।
অথবা রিজার্ভ গাড়ি করে আসতে পারেন, বা শেয়ারের মাধ্যমেও আসতে পারবেন,এটাই ভালো হবে আপনার জন্য। |
১৬. উচ্চ দিবাং উপত্যকা
অরুণাচল প্রদেশের শীর্ষস্থানীয় স্থানগুলোর মধ্যে এটি একটি অন্যতম স্থান উচ্চ দিবাং উপত্যকা। এই উচ্চ দিবাং উপত্যকাটি একটু অদ্ভুত ধরনের। ৯,১২৯ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে রয়েছে বিস্তৃত এই উপাত্যকাটি।ভারতের সর্বনিম্ন জেলাটি এখন বর্তমানে বৃহত্তম জনবহুল একটি জেলা হয়ে উঠেছে। এই জায়গাটির মধ্যে রয়েছে কয়েকটি তিব্বতি উপজাতি। এবং স্থানীয় একটি ইদু মিশমিস বসবাস করে।
পাশে উঁচু উঁচু পাহাড় নিচে সমতল স্থানে জনবহুল স্থানটি গড়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক এই স্থানের সৌন্দর্য যেন অপরাহ্ন। বইয়ের পাতায় বা টিভির পর্দায় দেখে এর সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে না। উপভোগ করতে চলে আসুন অরুণাচল প্রদেশের স্থানগুলোতে। উঁচু নিচু পাহাড় গুলো বেয়ে বেয়ে যখন উপরের চূড়ার দিকে অগ্রসর হবেন, সেখান থেকে নিচের দিকে তাকালে যেন মনে হয় পাখির মত ডানা মেলে ঝাঁপ দেই। নীল আকাশের নিচে, স্রোতহীন নদীর পাশে নির্বাকের মত দাঁড়িয়ে রয়েছে পাহাড় গুলো।
এই সুন্দর জায়গা গুলো এক নজর যদি ভ্রমণ করতে না পারেন, তবে নিজের মধ্যেই কি রকম একটা আফসোস হবে। অফুরন্ত সৌন্দর্য নিয়ে এক একটা জায়গা নিদর্শিত হয়েছে। জায়গাগুলোর প্রতি আলাদা একটা মায়া অনুভূতি কাজ করে।বেরিয়ে পড়ুন শিকড়ের টানে প্রাকৃতিক পরিবেশ কে আপন করে নিতে। কিছু সময়ের জন্য প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করুন। নিজেকে বিলিয়ে দিন দেখবেন প্রকৃতি আপনাকে প্রশান্তি করে ফিরিয়ে দিবে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
উচ্চ দিবাং উপত্যকার, অরুণাচলের রাজধানী ইটানগর থেকে দূরত্ব প্রায় ১১০ কিলোমিটার। | যাতায়াতের ব্যবস্থা ভালো হওয়ায়, অরুণাচল থেকে অরুণাচলের যে কোন স্থানে অতি সহজেই যাতায়াত করা যায়।
বাসের মাধ্যমে আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন উচ্চ দিবাং উপত্যকায়। অথবা রিজার্ভ গাড়ির মাধ্যমে যেতে পারেন, অথবা শেয়ারের মাধ্যমে যেতে পারেন। |
১৭. নামদফা জাতীয় উদ্যান
অরুণাচল প্রদেশের মধ্যে বিখ্যাত একটি আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে নামদফা জাতীয় উদ্যান। এখানে সবার আগে যেটা চোখে পড়ে তা রেড পান্ডা, অরুণাচল প্রদেশের মূল্যবান অধিকার এটা। পরিবেশটা শান্ত সৃষ্ট কিন্তু অনেক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে প্রায় ২০টির মত এলাকা রয়েছে। যেখানে আপনি লাল পান্ডাদের ঘন পরিবারের একমাত্র প্রজাতি দেখতে পাবেন তবে নাম দফা জাতীয় উদ্যানটি সবথেকে বেশি জনপ্রিয়। এখানে বিখ্যাত রেড পান্ডার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
এই অঞ্চলগুলির লক্ষ্য রেড পান্ডার জনসংখ্যা কে রক্ষা করা এবং সংরক্ষণ করা। অরুণাচল প্রদেশের জাতীয় উদ্যান যতগুলো আছে সবগুলোই যেন অনেক অজানা তথ্য কে জানতে সাহায্য করে। কর্তৃপক্ষ এই রেড পান্ডার প্রতি সহায়ানুভূতিশীল। রেড পান্ডাদের সাথে কিছুটা স্মৃতিময় সময় কাটাতে অবশ্যই আপনি অরুণাচল প্রদেশের বিখ্যাত এই স্থানে আসবেন। এদের সৌন্দর্যের কাছে হার মেনে এদের সাথে কিছুটা সময় কাটাতে চলে আসুন নামদফা জাতীয় উদ্যানে।
রেড পান্ডাদের অঞ্চলে ওরাই রাজা। উদ্যানে রয়েছে আরো বিভিন্ন ধরনের পশুপাখি, হাতি,হরিণ, চিতাবাঘ, বানর, বাঘ, মেঘলা চিতা, তুষার চিতা, চিতা, মর্মর বিড়াল ইত্যাদি। পশু পাখি সবাইকে নিয়েই উদ্যানটি একটি পরিপূর্ণ উদ্যান হিসেবে পরিচিত। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চলে আসুন অরুণাচলের এই উদ্যান গুলো পর্যবেক্ষণ করতে। উদ্যানের বানর গুলোর সাথে অনেক পর্যটক আবার খেলাও করেন। অনেক মজার দৃশ্য দেখা যায় বানরের সাথে। এই বন্য সৌন্দর্য এবং নির্মল প্রকৃতির অন্বেষণ করতে চলে আসুন অরুণাচল প্রদেশে ভ্রমণে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
অরুণাচলের ইটানগর থেকে নাম দফা জাতীয় উদ্যান এর দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার এর মতো। | ইটানগর থেকে যেকোনো গাড়ি রিজার্ভ করে অতি সহজেই পৌঁছে যাবেন নামদফা জাতীয় উদ্যানে। |
১৮. পাসি ঘাট
অরুণাচল প্রদেশে দেখার জন্য আদর্শ একটি স্থান পাসি ঘাট। প্রাকৃতিক জাঁকজমকপূর্ণ একটি সুন্দর শহর পাসি ঘাট, অরুণাচল প্রদেশের প্রবেশদ্বার। অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী সিয়ং নদীর তীরে অবস্থিত। আপনি চাইলে অ্যাডভেঞ্চারও যোগ দিতে পারেন, নদীতে কায়াটিং, রাফটিং এবং দুর্দান্ত দৃশ্য মাছ ধরার জন্যও কিছু উপায় রয়েছে। প্রকৃতিপ্রেমী, ক্যাম্পার, অ্যাডভেঞ্চার সন্ধান কারীদের জন্য আদর্শ একটি জায়গা। শহরটি পর্যটনের জন্য শীর্ষ গন্তব্য স্থান।
সিয়ং নদীর তীরে অবস্থিত পাসি ঘাট জায়গাটি অপূর্ব সৌন্দর্যের অধিকারী। অরুণাচলের পাসি ঘাট স্থানটি প্রাচীন আমলের ঐতিহাসিক ইতিহাসের কিছু নিদর্শন নিয়ে গঠিত রয়েছে। ঐতিহাসিক সময়ের ইতিহাস গুলোকে জানার জন্যই পর্যটকদের ভ্রমণের উদ্দেশ্য। পাসি ঘাট জায়গাটি আপনার মধ্যে অন্যরকম ভালো লাগার সৃষ্টি করে দিবে। চারপাশে সবুজে ঘেরা পরিবেশ নিয়ে একটি অঞ্চল পাসিঘাট। অপূর্ব সৌন্দর্যের মহিমান্বিত সৃষ্টির এক অনন্য জায়গা।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
অরুণাচল থেকে পাসি ঘাট এর দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার এর মতো। | যাতায়াতের জন্য খুবই ভালো সংযোগ রয়েছে বাসের মাধ্যমে, অরুণাচলের রাজধানী ইটানগর থেকে পাসি ঘাটের।
তাছাড়া শেয়ারের মাধ্যমেও যাতায়াত করতে পারবেন। এটাই আপনার জন্য ভালো হবে। |
১৯. রোয়িং
দিবাং নদীর প্রতিবেশী রোয়িং অঞ্চলটি। অরুণাচল প্রদেশের সেইসব দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি রোয়িং। যা সত্যিকার অর্থে তার এই নামটিকে সমর্থন করে কাজের ক্ষেত্রে। শহরটি খুবই শান্ত পরিবেশে মনোরম দিবাং নদীর পাশে শান্তভাবে বসে আছে। ট্রেকার থেকে শুরু করে ইতিহাস প্রেমি, সবার জন্য দেখার মত জানার মতো অনেক কিছু রয়েছে এই শহরে। সবচেয়ে অপূর্ব একটি দৃশ্য রঙ্গিন সূর্যাস্তের কারণে এখানে ট্রেকিং একটি নিখুঁত দুঃসাহসিক কাজ।
এখানে সব সৌন্দর্যতম স্থানগুলোর পাশাপাশি, দুর্গ, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য আরও বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে আপনি ভ্রমণ করার মত। সবুজের বুকে ছিটিয়ে পড়া অনেক প্রাকৃতিক ছোঁয়া। প্রকৃতির সাথে থাকলে প্রকৃতি ও আপনাকে আপন করে নিবে। দিবাং নদীর তীরে অবস্থিত এই সৌন্দর্যের আবাসস্থল রোয়িং। রোয়িং স্থানগুলো দেখার জন্য দূর দুরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন। এতটাই সৌন্দর্য প্রকাশ করে এর আশেপাশের পাহাড়, নদী নালা,চূড়া,উদ্যান গুলো।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
রোয়িং এর দূরত্ব প্রায় অরুণাচল থেকে ১১২ কিলোমিটার দূরে। | লোকাল বাসের মাধ্যমে অরুণাচল শহর থেকে পৌঁছে যাবেন, রোয়িং এ।
অথবা রিজার্ভ গাড়ির মাধ্যমে বা শেয়ার গাড়ির মাধ্যমে সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন রোয়িং এ। |
২০. নুরানাং জলপ্রপাত
প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকদের জন্য আরো একটি বিশাল সৌন্দর্যের স্থান রয়েছে প্রকৃতিরই মধ্যে নুরানাং জলপ্রপাত যার নাম। সুদূর উঁচু থেকে পাহাড়ের বুক ভেয়ে প্রতিনিয়ত নিচে নামছে, এই সুন্দরী নুরানাং জলপ্রপাত। সত্যি জায়গাটি খুবই আশ্চর্যজনক ও সৌন্দর্যে ঘেরা।
যারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ক্যাপচার করতে ভালোবাসেন তারা নির্মূল পরিবেশে আশ্চর্যের জনক ভাবে ফটোতে ফ্রেমবন্দি করে রাখতে পারেন এই সুন্দর দৃশ্য। সমস্ত মধুচন্দ্রিমার জন্য অরুণাচল প্রদেশের সুন্দর এই জায়গাগুলো অন্বেষণ করুন। পরিবারের সাথে নিয়ে একটা সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করতে পারেন। অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং জেলাতে অবস্থিত এই সুন্দরতম স্থানটি। ফটোগ্রাফি উৎসাহীদের জন্য খুবই উপকারী একটি স্থান। শীত সিজনে এর আকর্ষণ আরো বেড়ে যায়।
নুরানাং জলপ্রপাত টি দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা সৌন্দর্যের টানে ভ্রমণে চলে আসেন। কোনো ক্লান্তি ছাড়া ২৪ ঘন্টা যেমন ঝরনাটি ছুটে চলছে, তেমনি শন শন আওয়াজ ভেঁসে আসছে। আশেপাশের জনবহুল গ্রামগুলোর সৌন্দর্যকে আরো দ্বিগুণ করে দিয়েছেন। জলপ্রপাত টি দেখতে যেমন সৌন্দর্য ছড়ায়, এর কিছু ভয়ংকর ঐতিহাসিক ঘটনাও শোনা যায়। তবে সেই ঘটনাগুলো লোকমুখে শোনা, এখন বর্তমানে সেরকম ভয়ের কোন কিছু নেই। তাছাড়া এখানে গার্ডও রয়েছে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
ইটানগর থেকে নুরানাং জলপ্রপাতের দূরত্ব প্রায় ১১০ কিলোমিটার। | অরুণাচলের ইটানগর থেকে বাসে করে পৌঁছে যেতে পারবেন নুরানাং এ। সেখান থেকে যেকোনো ছোট গাড়ির মাধ্যমে পৌঁছে যেতে পারবেন জলপ্রপাতে। |
২১. পাখুই বন্যপ্রাণী
অরুণাচল প্রদেশের কামেং জেলার পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই পাখুই বন্যপ্রাণী। বন্য পশুদের ও পাখিদের বিশাল সংখ্যক প্রজাতি দেখতে পাবেন এই পাখুইতে। প্রাকৃতিক পরিবেশেদের সাথে খুবই মানিয়ে নিয়েছে। ২০০২ সালে ভারত সরকার ঘোষণা দেন যে, অভয়ারণ্যটিকে একটি বাঘ সংরক্ষণাকার হিসেবে বিবেচনায় রাখা হবে। এ কারণে অনেক সময় অনেক জায়গায় পার্ক টিকে পাখুই টাইগার রিজার্ভ হিসেবে পরিচিত দেওয়া হয়। পাখুইতে প্রচুর পরিমাণে বাঘ রয়েছে।
কামেং জেলার হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত পাখুই বন্যপ্রাণির জায়গা। এখানে বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন জাতের পশু পাখি রয়েছে। পাখিদের মধ্যে চুড়ুই,বাবুই, কোকিল, ময়না,টিয়া, কাক, আরো বিভিন্ন জাতের। পাখিগুলোর কল কাকলিতে প্রফুল্ল হয়ে থাকে সব সময় পাখুই বন্যপ্রাণীর জায়গাটি।
তেমনি ভাবে পশুদেরও হাট বলা যায় এই জায়গাটিকে। সিংহ, চিতাবাঘ, খেক শিয়াল, বানর, কয়েক জাতের হরিন ইত্যাদি। তার কিছু দূরে রয়েছে ইটা দুর্গ। এটি একটি ইটা ফোর্ট প্রাচীন দুর্গ। যা পেপাম পার জেলায় অবস্থিত রয়েছে। এই দুর্গের অহম শাসকদের দ্বারা নির্মিত করা হয়েছিল তিন কক্ষের তিনটি দরজা।
স্থানীয় লোকরা জানান, দুর্গটি নির্মাণ করতে প্রায় ৮০ লক্ষ ইট এবং ৪৫ ঘন মিটার পাথর ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রাচীন আমল থেকে পুরো দেশবাসীর কাছেই দুর্গটি খুবই বিখ্যাত। এই দুর্গের সাথে ঐতিহাসিক আমলের অনেক ঘটনা বলির স্মৃতি রয়েছে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
অরুণাচলের ইটানগর রাজধানী থেকে পাখুই বন্যপ্রাণী এর দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার। | অরুণাচলের শহর থেকে বাসে করে চলে আসতে পারবেন পাখুই শহরে। সেখান থেকে আবার লোকাল বাসে বা ছোট গাড়ির মাধ্যমে পৌঁছে যেতে পারবেন পাখুই বন্যপ্রাণী উদ্যানটিতে।
সবচেয়ে ভালো হবে শেয়ারের মাধ্যমে অরুণাচলের শহর থেকে একেবারে বন্যপ্রাণীর উদ্যানে পৌঁছে যাবেন। |
২২. মালিনীথান
অরুণাচল প্রদেশের বিখ্যাত ঐতিহাসিক নিদর্শন হচ্ছে মালিনীথান। ৭ থেকে ৮ শতাব্দি পুরনো এক ধ্বংসাবশেষ মন্দিরের নাম। ইতিমধ্যে জানা যায়, খনন বিশেষজ্ঞদের একদল মন্দিরের সুসজ্জিত জিনিসপত্র সহ অন্যান্য অনেক জিনিস উদঘাটন করেছেন।দেবদেবীর প্রতীক মূর্তি, খোদাই করা স্তম্ভ, ফুলের নকশা, পশু, অজ্ঞাত অতীতের স্বাক্ষর প্যানেল উদঘাটন করেছেন। উনারা আরো বলছেন আরো বিভিন্ন ধরনের জিনিস আছে পাওয়া যাবে। ঐতিহাসিক স্থানে এসে অজানা অনেক তথ্য খুঁজে পাবেন।
কর্ম ব্যস্ততার মাঝে মধ্যেও এরকম ঐতিহাসিক স্থানগুলো ভ্রমণ করা উচিত। নিশ্চয়ই আমাদের প্রাচীন আমলের অনেক কথা অজানা রয়েছে, সেজন্য আমাদের প্রাচীনকালের ঐতিহাসিক নিদর্শন গুলো পরিদর্শন করা উচিত। মালিনীথান এর ধ্বংসাবশেষ স্থানটি ঐতিহাসিক কিছু ঘটনার সাথে জড়িত। ইতিহাসের পাতাকে নতুন করে স্মরণ করার জন্য, আমরা অরুণাচল প্রদেশের সেই ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ মন্দিরের স্থানে পরিদর্শন করব। সেই সময় এখানে অনেক দেব দেবী, মা প্রতিমারা ছিলেন। আজ সবকিছুই শুধু স্মৃতিবিজড়িত ইতিহাস।
তাছাড়া এখানকার মন্দিরগুলো বহুলাংশে অরুণাচল প্রদেশের তিব্বতি প্রভাবকে প্রতিফলিত করে থাকে। ঐশ্বর্যশালী অতীতের অন্বেষণে ও পরিদর্শনে আগ্রহী দর্শনার্থীদের জন্য এই এই দর্শনীয় স্থানটি সপ্তাহের প্রতিদিনই উন্মুক্ত থাকে।
লোকেশন | ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন |
---|---|
অরুণাচল প্রদেশের ইটানগর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার এর কাছাকাছি। | এটা নগর থেকে বাসে করে সহজেই পৌঁছে যাবেন মালিনীথান শহরে। সেখান থেকে ছোট গাড়ি করে বা মোটরবাইকে করেও যেতে পারবেন।
আবার,শেয়ারের মাধ্যমেও পৌঁছে যাবেন ধ্বংসাবশেষের সেই স্থানে। |
সর্বশেষ, অরুণাচল প্রদেশে ভ্রমণে এসে আপনি সমস্ত প্রাচীন নিদর্শন গুলোর সাথে সবগুলা দর্শনীয় স্থান, কিছুটা পাশাপাশি থাকার কারণে একসাথেই পরিদর্শন করতে পারবেন। গ্রীষ্মকালে বিশুদ্ধ বসন্তের হাওয়া উপভোগ করতে পারবেন, এবং তৃণভূমিতে প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে সুন্দর সুদূর পর্যন্ত হাঁটতে যাবেন।
এবং শীতকালে তুষারে আবৃত্ত হয়ে থাকে পর্বতমালা। একটি নিখুঁত ছুটির গন্তব্যের জন্য এই রকম স্থানেই ভ্রমণে আসতে পারেন। এখানকার স্থানীয় লোকদের রন্ধনপ্রণালী গুলোও একটু ভিন্ন ধরনের। অরুণাচল প্রদেশের প্রতিটা স্থানীয় পরূপ সাজে সজ্জিত।
দেখে শুনে সতর্কতার সহিত, রাস্তা পারাপার হবেন। সুস্থ থাকুন, নিরাপদে ভ্রমন করুন। ধন্যবাদ।
আরো পড়ুন –