Dreamy Media BD

ইলন মাস্ক: বিশ্বকে বদলে দিচ্ছে যে উদ্যোক্তা

ইলন মাস্ক বিশ্বকে বদলে দিচ্ছে যে উদ্যোক্তা

ইলন মাস্ক হলেন দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী একজন আমেরিকান উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ী যিনি টেসলা, স্পেসএক্স এবং নিউরালিংক সহ বেশ কয়েকটি সফল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইলন মাস্ক তার উদ্ভাবনী চিন্তা ভাবনা এবং ঝুঁকি নেবার ক্ষমতার জন্য বিখ্যাত। যেমন মানুষকে মঙ্গলে পাঠানো, বিলিয়ন বিলিয়ন ডরার খরচ করে রিইউজেবল রকেট তৈরি, ইন্টারনেটের জগতের বিপ্লব আনা,  কিংবা বায়নিক মানুষ বানানোর – প্রজেক্ট, অথবা মানবতার জন্য উপকারী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করা।

ইলন মাস্কের কোম্পানি গুলো পরিবহন, মহাকাশ গবেষণা, ইন্টারনেট , ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি  এবং ফিন টেক সহ বেশ কয়েকটি শিল্পকে আমুলে বদলে দিচ্ছে।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলা মাস্কের ব্যবসা সফল কোম্পানি গুলোর অন্যতম। এটি তাকে পৃথিবীর ধনির তালিকায় শীর্ষে নিয়ে আসে।

ইলন মাস্ক একইসাথে একজন জনপ্রিয় ও বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। নিন্দুকেরা তাকে নারীবাদ বিরোধী নামে তকমা দিয়েছে। তবে যাই হোক না কেন, এতে কোন সন্দেহ নেই যে তিনি আজ বিশ্বের অন্যতম মেধাবী উদ্যোক্তা, ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি।

ইলন মাস্কের জীবনী

ইলন মাস্ক ১৯৭১ সালের ২৮ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ার জন্মগ্রহণ করেন। তার মা, মায়ে মাস্ক, একজন পেশাদার ডায়েটিশিয়ান এবং বিখ্যাত সুপার মডেল। জানলে অবাক হবেন, গত বছর ৭৪ বছর বয়সে, মায়ে মাস্ক স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেডের সুইমস্যুট সংস্করণের প্রচ্ছদে মডেল হন।

মায়ে এবং মাস্কের বাবা এরোল, বিয়ের প্রায় ১২ বছর পর বিবাহ বিচ্ছেদ করেন। মায়ে মাস্ক তার জীবনী গ্রন্থে লিখেছেন যে, তিনি বিয়েটি আগেই শেষ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় ডিভোর্স অ্যাক্ট ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল না। আইনটি পাস হওয়ার বছরে তার মা বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ততদিনে তারা দুই ভাই, দুজনেই বাবার সাথে চলে যান।

সকালের সূর্যই বলে দেয়, দিনটি কেমন যাবে 

এলন মাস্কের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই ঘটে, তার ভিতরের উদ্যোক্তাটি সেই ছোট বেলায় নারা দেয়। মাত্র ১০ বছর বয়সে মেধাবি মাস্ক নিজে নিজে প্রোগ্রামিং শিখেন।  ১৯৮৩ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে, একটি কম্পিউটার ম্যাগাজিনে,  ৫০০ ডলারে নিজের তৈরি “ব্লাস্টার” নামে একটি ভিডিও গেম বিক্রি করেন।

ইলন মাস্ক এর শিক্ষাগত যোগ্যতা 

ইলন মাস্ক ১৭ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকার সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়া এড়াতে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য যান। কেননা, তখন দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৮ বছর হলে, বাধ্যতামূলক ২ বছরের জন্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হত। একই বছর, তিনি কানাডার নাগরিকত্ব লাভ নেন, কারণ তিনি ভেবেছিলেন যে এভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়া সহজ হবে।

ইলন মাস্ক ১৯৯২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন এবং পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসা এবং পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়ন করতে। তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং এরপর পদার্থবিজ্ঞানে দ্বিতীয় স্নাতক ডিগ্রিটি অর্জন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসার পর, মাস্ক ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শক্তি পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি অর্জনের জন্য যান। কিন্তু মাত্র দুই দিন পর নিজের প্রথম কোম্পানি শুরু করতে তিনি স্ট্যানফোর্ড ছেড়ে চলে যান।

ইলন মাস্কের কর্মজীবন ও কোম্পানি গুলি 

তিনি একজন জাত উদ্যোক্তা, তাইতো শুরুর দিন থেকেই তিনি তার উর্বর মস্তিকের প্রতিফলন দেখান। ইলন মাস্ক ১৯৯৫ সালের গ্রীষ্মে, স্ট্যানফোর্ডের পিএইচডি ছেড়ে,  সিলিকন ভ্যালিতে চলে আসেন।

 

ইলন মাস্কের ১৫ মাসের ছোট ভাই কিম্বল মাস্কও কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক হওয়ার পর তার সাথে যোগ দিতে ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে আসেন।  ইন্টারনেট জনপ্রিয় হয়ে উঠলে, ভাইয়েরা ইন্টারনেট বিজনেস ডিরেক্টরি সহ একটি কোম্পানি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এভাবেই ইলন মাস্ক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।

প্রথম সাফল্য জিপ২

মাস্ক ভাইদের প্রচেষ্টায় জিপ২ শেষ পর্যন্ত এঞ্জেল বিনিয়োগকারীদের দলে ভিড় করে এবং একটি লাভজনক সংস্থা হয়ে ওঠে। ১৯৯৯ সালে ভাইয়েরা জিপ২ ৩০৭ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে।

এক্স.কম প্রতিষ্ঠা

এরপর ইলন তার নিজস্ব অনলাইন আর্থিক পরিষেবা সংস্থা এক্স.কম প্রতিষ্ঠা করেন। এক্স.কম এর কয়েক মাস পরে পিটার থিল এবং আরও দুজন মিলে কনফিনিটি নামের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, যার সদর দপ্তর একই ভবনে ছিল। অনেকেই মনে করে যে, এই এক্স.কম কে আবার জাগিয়ে তুলতে টুইটারের নতুন নাম এক্স (X) নাম দিয়েছেন তিনি।

পেপালের আগমন

২০০০ সালের মার্চ মাসে দুটি কোম্পানি একত্রিত হয়ে তাদের প্রধান পণ্য, পেপাল নামে যাত্রা শুরু করে। পেপাল একটি অনলাইন ব্যক্তিগত অর্থ লেনদেনের মাধ্যম, যা বিশ্বব্যাপী ফ্রিলান্সারদের কাছে অনেক জনপ্রিয়।  ২০০২ সালের অক্টোবর মাসে অনলাইন নিলাম সাইট ইবে কে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের পেপাল কিনে নেয়। ইলন মাস্ক, যিনি ১১.৭% শেয়ারের মালিকানা নিয়ে পেপালের বৃহত্তম শেয়ার হোল্ডার ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পেপালও বিক্রি করে দেন।

যুদ্ধ এবার পৃথিবী রক্ষারঃ স্পেসএক্স < সোলার সিটি < টেসলা মোটরস

পেপাল ছেড়ে যাওয়ার পর, তিনি তিনটি স্বতন্ত্র জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন। তার জন্য প্রয়োজনে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন অথবা নেতৃত্ব দিয়েছেন। জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় জ্বালানী নির্ভরতা কমাতে – টেসলা মোটরস , পৃথিবীর বাইরে আরেক বসবাসের গ্রহের খোঁজে – স্পেসএক্স  এবং মানব প্রজাতির অপ্রচলিত ঝুঁকি। নবায়ন যোগ্য জ্বালানির জন্য সোলার সিটি সহ বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেন।

ইলন মাক্স মঙ্গল গ্রহে মানব কলোনি স্থাপনের প্রকল্প হাতে নিয়েছেন।

ইলন মাস্কের স্পেসএক্সঃ পৃথিবী ছাড়িয়ে নতুন বাস্থানের খোঁজে 

২০০৩ সালে, মাস্ক একটি বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান কোম্পানি স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠা করেন। স্পেসএক্স বেশ কয়েকটি  রকেট এবং মহাকাশযান তৈরি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ফ্যালকন ৯ এবং ড্রাগন মহাকাশযান। স্পেসএক্স এমন একটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট তৈরির করছে যা মহাকাশ ভ্রমণের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনবে। আর এই কাজ করতে গিয়ে ইলন মাস্ক প্রায় দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলেন।

ইলন মাস্কের টেসলা 

২০০৪ সালে, মাস্ক একটি বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি টেসলা মোটরসের সহ-প্রতিষ্ঠা করেন। টেসলা বেশ কয়েকটি পুরস্কার-বিজয়ী বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে মডেল এস সেডান এবং মডেল এক্স এসইউভি। টেসলা গাড়িগুলি স্ব-চালিত (ড্রাইভারলেস),  কিরিত্রিম বুধধিমত্তা দিয়ে চালিত।

ইলন মাস্কের নিউরালিংক

মাস্ক নিউরালিংক প্রতিষ্ঠাতা, এই কোম্পানি মস্তিষ্ক-কম্পিউটার ইন্টারফেস তৈরির কাজ করছে। এর লক্ষ্য এমন প্রযুক্তি তৈরি করা যা মানুষের মন দিয়ে কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।

ইলন মাস্কের স্টারলিংক

Starlink স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে, যাতে তারা পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে ইন্টারনেট সংকেত পাঠাতে পারে। এই স্যাটেলাইটগুলো লো-অরবিট  ল্যাটেন্সি এবং উচ্চ-গতির ইন্টারনেট গতি প্রদান করতে পারে। এর জন্য কোন সাবমেরিন কেবল প্রয়োজন হয় না।

Starlink এখনও পুরোপুরি বাণিজ্যিক নয়, কিন্তু এটি ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি দেশে  পরীক্ষামূলক সেবা প্রদান করছে, তার মধ্যে বাংলাদেশও আছে।

ইলন মাস্ক ও টুইটার

ইলন মাস্কের টুইটার কেনার সিদ্ধান্ত ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত হয়। তিনি টুইটারের ৯.১% শেয়ার কিনেন, যা তাকে কোম্পানির বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার করে তোলে। এর জন্য তাকে $৪৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে  হয়।

মাস্ক টুইটারকে “একটি জনসাধারণের সম্পত্তি” বা পাবলিক প্রপার্টি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চান।  তাই ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত বিতর্কিত ব্যক্তিরাও টুইটারে ফিরছে।

টুইটার হাতে নেবার সাথে সাথে ইলন মাক্স বেশকিছু বিতর্কিত সিধান্ত নিয়েছেন যা ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করেছে, যেমনঃ ব্যাপক ছাটাই, টাকার বিনিময়য়ে ব্লু টিক, অনেক বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া ইত্যাদি।

এক নজরে ইলন মাস্ক 

 

বিষয় তথ্য
জন্ম ২৮ জুন, ১৯৭১
জন্মস্থান দক্ষিণ আফ্রিকা
জাতীয়তা দক্ষিণ আফ্রিকান, কানাডীয়, মার্কিন নাগরিক (বর্তমান)
শিক্ষা পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে – স্নাতক, অর্থনীতি এবং পদার্থবিজ্ঞান
পেশা ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, প্রকৌশলী, উদ্যোক্তা
কোম্পানি টেসলা মোটরস, স্পেসএক্স, নিউরালিংক, ওপেন এআই, দ্য বোরিং কোম্পানি
সম্পদ ১৯২.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত)
বিবাহ গ্রাসিস বুয়ি (বর্তমান), জসলিনের উইলসন, তালুলাহ রাইলে, গ্রিমেস – ৪ জন
সন্তান ৯ জন
উক্তি “আমি কখনো হার মানিনি। মৃত্যু এলে কিংবা একেবারে অক্ষম হয়ে গেলে তবেই কেবল আমি হার মানব।”
বিখ্যাত হওয়ার কারণ উদ্ভাবনী চিন্তা ভাবনা, উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য, সফল কোম্পানি, ঝুকি নেবার ক্ষমতা

ইলন মাস্কের সাফল্যের রহস্য

ইলন মাক্স যেখানেই হাত দিয়েছেন সোনা ফলেছে, চলুন দেখি কি এর রহস্য। তার সফল হওয়ার কয়েকটি কারণঃ

  • উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা: মাস্ক একজন দূরদর্শী উদ্যোক্তা যিনি  যে কোন জিনিসের গভিরে চিন্তা করতে পারেন। ও পৃথিবীর বিদ্যমান সমস্যাগুলির সেরা বিকল্প খুজেন।
  • তার উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য: মাস্ক সবসময় বৃহৎ আকারে চিন্তা করেন। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন, কিন্তু তিনি মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর  মত পাগলাটে স্বপ্ন দেখেন।
  • তার সফল কোম্পানি: মাস্কের দুটি কোম্পানি, টেসলা এবং স্পেসএক্স, উভয়ই বিশ্বব্যাপী শিল্পে নেতৃত্ব দিচ্ছে। টেসলা বিশ্বের বৃহত্তম বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা, এবং স্পেসএক্স বিশ্বের সবচেয়ে সফল বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা।
  • ঝুকি নেওয়ার ক্ষমতাঃ সেটা তিনি তার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নিয়েছেন, বর্তমানে আমারা তার সাফল্যগুলি জানি, কিন্তু এই রকম প্রায় ৪০+ বিফল কোম্পানিও আছে।

ইলন মাস্কের ও মঙ্গলে বসবাস প্রকল্প

তিনি বিশ্বাস করেন যে মানুষকে একদিন মঙ্গল গ্রহে বাস করতে হবে, কেননা খুব দ্রুতই হয়ত পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পরবে। পৃথিবী ছাড়া দ্বিতীয় বসবাসের জায়গা খোঁজার  লক্ষ্যে তিনি একটি প্রোজেক্টের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

মাস্কের প্রোজেক্টের লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে মঙ্গলে এক হাজার মানুষ পাঠানো। তিনি বিশ্বাস করেন যে মঙ্গল গ্রহে বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই আমাদের কাছে রয়েছে, তবে এটিকে আরও উন্নত এবং সাশ্রয়ী মূল্যের করে তুলতে হবে।

মঙ্গল অভিযানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলি

  • ইলন মাস্কের মঙ্গল অভিযানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হল মহাকাশ ভ্রমণের ব্যয় কমানো। তার বিশ্বাস করেন যে পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট গুলি এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে। তার স্পেসএক্স ইতিমধ্যেই ফ্যালকন ৯ রকেট পুনঃব্যবহারের জন্য ডিজাইন করেছে এবং সফল উৎক্ষেপণ করেছে। কোম্পানিটি আরও বড় এবং শক্তিশালী পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট তৈরির উপর কাজ করছে।
  • মঙ্গল গ্রহে বসবাসের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ হল খাদ্য এবং পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। স্পেসএক্স মঙ্গলে খাদ্য এবং পানি উৎপাদনের জন্য গবেষণা কাজ করছে। কোম্পানি টি একটি কৃষি প্রযুক্তি তৈরি করছে, যা মঙ্গলের মাটিতে ফসল ফলাতে সাহায্য করবে, এবং পানি পুনঃ প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাও তৈরি করছে।
  • মাস্কের মঙ্গল অভিযানের জন্য আরও একটি চ্যালেঞ্জ হল, মঙ্গলের বিপজ্জনক পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়া। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল খুব পাতলা, এবং এতে অক্সিজেন খুব কম। এছাড়াও, মঙ্গলের পৃষ্ঠে প্রচুর পরিমাণে বিকিরণ থাকতে পারে।
  • মঙ্গলের এক দিন, পৃথিবীর দিনের সমান কিন্তু বছর পৃথিবীর চাইতে দের গুন বড়।
  • মঙ্গল গ্রহে কোন নদী বা সাগর নেই । তবে, মঙ্গলের পৃষ্ঠে প্রচুর পরিমাণে বরফ রয়েছে। স্পেসএক্স মঙ্গলের বরফ থেকে পানি এবং এর  উৎপাদনের প্রযুক্তি তৈরির উপর কাজ করছে।

মাস্কের মঙ্গল অভিযান একটি সাহসী এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগ যদি মাস্কের এই প্রজেক্ট সফল হয়, তাহলে এটি মানবজাতির জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।

আরও পড়ুনঃ ডার্ক ওয়েব: ইন্টারনেটের রহস্যময় অপরাধের জগৎ

ইলন মাস্কের বিতর্কিত দিক

ইলন মাস্ক একজন বিখ্যাত উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ী, কিন্তু তিনি বার বার বিতর্কের মধ্যেও জড়িয়ে পড়েছেন। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিতর্ক গুলোর মধ্যে একটি হল তার নারীবাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি।

ইলন মাস্ক বেশ কয়েকবার নারীবাদ বিরোধী কথা বলে বিতর্কিত হয়েছেন। ২০১৮ সালে, তিনি টুইট করেছিলেন যে “নারীবাদ ক্যান্সার“।

তার নারীবাদ বিরোধী আরও কিছু মন্তব্য, “নারীরা পুরুষদের সমান সক্ষম, কিন্তু তাদের আলাদা শক্তি এবং দুর্বলতাও রয়েছে“।

ইলন মাস্কের ভক্তরা যুক্তি দেন যে তিনি নারীবাদ বিরোধী নন, বরং তিনি কেবলমাত্র তথ্য দিচ্ছেন। তারা বলে যে নারী এবং পুরুষ আলাদা, এবং এই পার্থক্যগুলি স্বীকৃত হওয়া উচিত।

নারীবাদ সম্পর্কে তার বিতর্কিত মন্তব্য ছাড়াও, মাস্ক তার কর্মচারীদের প্রতি আচরণের জন্যও সমালোচিত হয়েছেন। অভিযোগ করা হয় যে তিনি একটি টক্সিক অফিস কালচার তৈরি করেছেন এবং কর্মচারীদের প্রতি সংবেদনশীল নন। খুব তুচ্ছ কারনে ছাটাই করেন।

ইলন মাস্ক তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারনে বারবার জন্যও সমালোচিত করা হয়েছেন। মার্কিন নির্বাচনে  তিনি রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট উভয় প্রার্থীদের অর্থ দান করেছেন। এবং তিনি এমন সব মন্তব্য করেছেন যা রাজনৈতিক ও LGBTQ উভয় কমিউনিটিকে বিব্রত করেছে।

এখানে কিছু নির্দিষ্ট বিতর্কিত মন্তব্য:

  • ২০১৮ সালে, তিনি টুইট করেছিলেন যে “নারীবাদ ক্যান্সার“।
  • ২০২০ সালে, তিনি কোভিড-১৯ মহামারী সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়িয়েছিলেন।
  • ২০২২ সালে, তিনি টুইটারকে কেনার পর, তিনি নিয়মিত টুইটারে আপত্তিকর বা বিভ্রান্তিকর বিষয়বস্তু পোস্ট করেছিলেন।

অনেকেই মনে করেন, মাস্কের বিতর্কিত মন্তব্য গুলি তার সাফল্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ইলন মাস্কের কিছু ফেইল প্রজেক্ট যা খুব কম লোকেই জানে

ইলন মাস্ক একজন সফল উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ী, তবে তিনি কিছু ব্যর্থ প্রকল্পের সংখ্যাও কম না। এই প্রকল্প গুলি সাধারণত উচ্চাভিলাষী এবং প্রযুক্তিগত ভাবে চ্যালেঞ্জিং ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাফল্য পায় নি।

এখানে কিছু প্রকল্পে দেওয়া হল:

  • দ্য বোরিং কোম্পানি: এই কোম্পানিটি একটি দ্রুত এবং সস্তা টানেলিং ব্যবস্থা তৈরির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কোম্পানিটি বেশ কয়েকটি পরীক্ষামূলক টানেল তৈরি করেছিল, কিন্তু এটি এখনও একটি বাণিজ্যিক ভাবে চালু হয় নি।
  • নস্টালজিক ইন্টারেকটিভ: এই কোম্পানিটি ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকের ক্লাসিক ভিডিও গেমগুলি পুনঃপ্রকাশ করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কোম্পানিটি বেশ কয়েকটি গেম  পুনঃপ্রকাশ করেছিল, কিন্তু এটি কখনও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় নি ।
  • দ্য হাইপারলুপ: এই প্রযুক্তিতির লক্ষ্য ছিল একটি অপারেটিং ট্রেনের মাধ্যমে বায়ুশূন্য টানেলে দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যম তৈরি করা। কোম্পানিটি বেশ কয়েকটি পরীক্ষামূলক টানেল তৈরি করেছিল, কিন্তু প্রজেক্টটি কখনো বাণিজ্যিকভাবে সফল হয় নি।
  • দ্য থেরিয়াম রিঅ্যাক্টর: এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল একটি নিরাপদ এবং উচ্চ মানের পারমাণবিক চুল্লি তৈরি করা যা থোরিয়াম মৌল ব্যবহার করবে। প্রকল্পটি ২০১৯ সালে বাতিল করা হয়েছে।

এই প্রকল্পগুলির ব্যর্থতার বিভিন্ন কারণ ছিল। কিছু ক্ষেত্রে, প্রযুক্তিগুলি বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব বা চ্যালেঞ্জিং ছিল। অন্য ক্ষেত্রে, মাস্কের কোম্পানিগুলির জন্য বাজেট বা সময় পর্যাপ্ত ছিল না। এবং কিছু ক্ষেত্রে, মাস্কের নিজের আগ্রহের পরিবর্তন বা অন্যান্য প্রকল্পগুলিতে বেশি মনোযোগি হবার কারণে প্রকল্পগুলিকে বাতিল বা ব্যর্থ হয়েছিল।

ইলন মাস্ক এর মাসিক আয় কত?

ইলন মাস্ক বতমান বিশ্বের একজন সেরা ধনী ব্যক্তি। ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত, তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৯২.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার সম্পদের বেশিরভাগই তিনি টেসলা এবং স্পেসএক্স থেকে আয় করেছেন।

ইলন মাস্কের মাসিক আয়ও অনেক বেশি। ২০২২ সালে, তিনি প্রতি মাসে গড়ে ২৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছেন।

এখানে ইলন মাস্কের একটি ধারণা পেতে:

  • প্রতি সেকেন্ডে তিনি ১,৪২,৩৫৩ ডলার আয় করেন।
  • প্রতি মিনিটে তিনি ৮৫৫,০০০ ডলার আয় করেন।
  • প্রতি ঘণ্টায় তিনি ৫১.৩ মিলিয়ন ডলার আয় করেন।

তবে, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে তার আয়ের বেশিরভাগই তার কোম্পানিগুলির শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে। যদি শেয়ারের মূল্য হ্রাস পায়, তাহলে তার আয়ও হ্রাস পাবে।

ইলন মাস্ক কোন ধর্মের?

ইলন মাস্ক ধর্মবিশ্বাসী নন। তিনি বলেছেন যে তিনি “কোন ধর্মকে বিশ্বাস করেন না” ।

মাস্কের বাবা, এরোল মাস্ক, একজন দক্ষিণ আফ্রিকান খ্রিস্টান, এবং মা, মেই মাস্ক, একজন দক্ষিণ আফ্রিকান প্রোটেস্ট্যান্ট। তবে, মাস্ক বলেছেন যে তিনি তার পিতামাতার ধর্মের সাথে কক্ষনো টান অনুভব করেননি।

মাস্ক বলেছেন যে তিনি “বিজ্ঞানের একজন বড় ভক্ত” এবং তিনি “বিশ্ব সম্পর্কে একটি বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গি” আঁকতে চেষ্টা করেন।

তবে, মাস্ক বলেছেন যে তিনি “ধর্মকে সম্মান করেন” এবং তিনি “ধর্মের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন“। তবে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে ধর্মে বিশ্বাস করেন না।

ইলন মাস্কের সেরা উক্তি

এখানে ইলন মাস্কের সেরা ১০টি উক্তির একটি তালিকা রয়েছে:

“আমি কখনই হার মানিনি। মৃত্যু এলে কিংবা একেবারে অক্ষম হয়ে গেলে তবেই কেবল আমি হার মানব” __ইলন মাস্কে

 

“আপনি যদি সত্যিকারের কিছু করতে চান, তাহলে আপনাকে সাহসী হতে হবে। আপনাকে ব্যর্থতার ভয় ছাড়তে হবে।” __ইলন মাস্কে

 

“আপনি যদি একটি সমস্যার সমাধান খুঁজছেন, তাহলে সেই সমস্যার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করবেন না। সমাধানের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন।”__ইলন মাস্কে

 

“আপনি যদি বড় কিছু করতে চান, তাহলে আপনাকে বড় চিন্তা করতে হবে।” __ইলন মাস্কে

 

“আপনি যদি নতুন কিছু তৈরি করতে চান, তাহলে আপনাকে ঝুঁকি নিতে হবে।” __ইলন মাস্কে

 

“আপনি যদি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান, তাহলে আপনাকে কাজ করতে হবে।” __ইলন মাস্কে

 

“আপনি যদি একটি সুন্দর ভবিষ্যত তৈরি করতে চান, তাহলে আপনাকে এখনই কাজ শুরু করতে হবে।” __ইলন মাস্কে

 

“আপনি যদি একটি বাস্তব পরিবর্তন আনতে চান, তাহলে আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে।” __ইলন মাস্কে

 

“আপনি যদি একটি সুন্দর পৃথিবী তৈরি করতে চান, তাহলে আপনাকে সৎ হতে হবে।” __ইলন মাস্কে

 

ইলন মাস্ক একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু  এই সময়ের অন্যতম উদ্ভাবনী এবং সফল উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনি একজন। এলন মাস্কে আপনি পছন্দ করতে পারেন কিংবা অপছন্দ করতে পারেন, কিন্তু তাকে উপেক্ষা করতে পারবেন না।

এই একটি মানুষ তার কর্মে ও কীর্তিতে আধুনিক দুনিয়ার বুকে বিশাল এক ক্ষত করে যাচ্ছে, যার চিহ্ন পৃথিবী বয়ে বেড়াবে শত শতাব্দী ধরে।

লেখাটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে, আরও লেখা পড়ুনঃ

source: 

 

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents