Dreamy Media BD

 মিজোরাম এর দর্শনীয় স্থান (Mizoram)

মিজোরাম এর দর্শনীয় স্থান

পাহাড়ি একটা রাজ্য মিজোরাম (Mizoram)। মিজোরাম শব্দের অর্থ পাহাড়ি মানুষের রাজ্য। মিজোরামের রাজধানী হচ্ছে আইজল। এর পুরোটাই পাহাড়ি অঞ্চলে ঘেরা। বাংলাদেশের তুলনায় মিজোরামের আয়তন প্রায় এক তৃতীয়াংশ। আইজলের উত্তর-পূর্ব দিকে আবার রয়েছে মনিপুর অঞ্চল। আসাম ত্রিপুরা এবং মনিপুরের সাথেই রয়েছে এর সীমান্ত। দেখার মত একটি শহর সৌন্দর্যে ঘেরা মিজোরাম।

গাছ গাছালি, পাহাড়ের, পরিবেশের কোনরূপ ক্ষতি না করে, কিভাবে একটি শহর গঠিত করা হয় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে এই আইজল। আইজলের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে রাতের বেলা। সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৌন্দর্য ঘেরা মিজোরাম শহরটি।এর পাহাড়ের প্রতি খাজে খাজেই রয়েছে আঁকাবাঁকা সড়ক। সেই সড়ক গুলোর পাশ প্রায় ২০ থেকে ২৫ ফুট। কোন ভাঙ্গাচুড়া নেই একদম ফ্রেশ। তাই জার্নি করতেও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা যায়। 

আইজলের প্রানকেন্দ্রে রয়েছে একটি মসজিদ। আশেপাশে রয়েছে কিছু মুসলিমের বসবাস। তবে শহরের নব্বই শতাংশ লোকই কিন্তু অন্য ধর্মের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বি। হিমালয়ের পাদদেশে ও মেঘালয় মালভূমির মধ্যে অবস্থিত রয়েছে এই মিজোরাম। যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে রয়েছে বিমানপথ,রেলপথ,ও সড়ক পথের সুব্যবস্থা। মিজোরামের বিমানবন্দরটি তার রাজধানী আইজলে অবস্থিত।

মিজোরামের নিজস্ব কোন রেলপথ নেই। তবে সুবিধা অনুযায়ী শিলচরের রেল স্টেশন ব্যবহার করা যায়। আইজক থেকে শিলচরের ড্রাইভের দূরত্ব ৬ থেকে ৮ ঘন্টা। এবং মিজোরামের সড়ক পথের মাধ্যম গুলো খুবই সুবিধা জনক। 

আইজল
আইজল

১. আইজল (Aizawl)

মিজোরামের রাজধানী হচ্ছে আইজল (Aizawl), যার বয়স প্রায় ১১২ বছর। শহরটি খুবই সৌন্দর্যে ঘেরা এবং চারিদিকে ফুলের বাগান ছড়িয়ে রয়েছে। শহরের আনাচে কানাচে যে কোন জায়গায় ফুলের সুভাস পাওয়া যায়। আইজল শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪ হাজার ফিট উপরে অবস্থিত। শহরের দক্ষিণ গা ঘেঁষে কর্কটক্রান্তি রেখা বয়ে গেছে। সারা বছরের যে কোন মাসেই এখানে প্রকৃতির পরিবেশ সবসময় মনোরম থাকে। 

ভ্রমণের জন্য বছরের যে কোন সময়ই আপনার জন্য পারফেক্ট। বড়দিনের সময়টা শহরের একটি আলাদা সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলে। মিজোরামের মধ্যে প্রাচীন একটি জাদুকর রয়েছে। প্রাচীন ইতিহাসের অনেক সাক্ষ্য বহন করে এই জাদুঘরটি। সৃষ্টিকর্তা যেন নিজের হাতে প্রকৃতিকে সাজিয়ে রেখেছেন। সবুজ ছায়াঘেরা বিস্তৃত  ফসলের মাঠ সাথে নানান ধরনের ফুলের সুভাস।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এক অপরূপ, লাস্য ময়ী, মোহময়ী, যে জায়গাটি দেখবেন, সে ই প্রেমে পড়ে যাবে। সাক্ষরতার হার প্রায় এই শহরে ৯৮ শতাংশ। শহরের উন্নয়ন গতিটা খুবই দ্রুততমভাবে চলছে। রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে সেরা দর্শনীয় স্থান এই আইজল। সর্বোচ্চ পীঠস্থান হচ্ছে অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক দিক। খুবই সুন্দর্যে ঘেরা দেয়া জায়গা টির শহরের চারপাশ। 

আইজল থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে, তার আশেপাশের সব দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমন করবেন। তাহলে ভাড়ার খরচটা অনেক কম পড়বে, প্রতি স্থানে স্থানে গিয়েও গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারবেন তবে ভাড়াটা একটু বেশি পড়বে। প্রতি কিলোমিটারে ১৯ থেকে ২০ রুপিট মত আসবে চার্জ। এবং ড্রাইভার এর দিনপ্রতি ভাড়া আসবে, ৮০০ থেকে ১০০ রুপির মতো। এখানে সড়কপথের ভ্রমন আপনার জন্য সুবিধা জনক হবে। 

মেঘেদের রাজা মেঘালয়,যা উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর শিলং। তাকে আবার ভারতের খুবই আকর্ষণীয় স্থান স্কটল্যান্ডও বলা হয়ে থাকে। জায়গাটি খুবই সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলের অন্তর্গত মনোরম দৃশ্যের অধিকারী শিলং স্থানটি। শিলং থেকে আইজল, আইজল থেকে শিলং এর যাতায়াত খুবই ভালো। তাই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পর্যটকদের আনাগোনাও বেশি। 

তাছাড়া শিক্ষাব্যবস্থার জন্য স্থানটি খুবই পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয় বলেন বা স্কুল কলেজ, শিক্ষণীয় প্রতিটি স্থাপনাই শিলং এ বেশি রয়েছে। সেই কারণ অনুযায়ী, উত্তর-পূর্ব ভারতের এডুকেশন হাব ও বলা হয় এই জায়গাটিকে। শিলং এর আশেপাশে যতটা শহর রয়েছে বড় বড় প্রতিটা শহরের সাথে আকাশ পথে যোগাযোগের ব্যবস্থা খুবই ভালো। প্রতিটা ভ্রমনকৃত জায়গাগুলিতে পরিদর্শনের জন্য বা রেস্ট এর জন্য সুব্যবস্থা রয়েছে। 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন 
ভারতের মিজোরামের শিলচর থেকে আইজলের দূরত্ব প্রায় ১৭৩ কিলোমিটার।  মিজোরামের অসমের শিলচর থেকে গাড়িতে করে সহজেই পৌঁছানো যায় রাজধানী আইজলে। 

টাটা সুমোতে যেতে পারবেন, ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৪৫০ রুপি করে। 

আইজল টাটা সুমো বা লোকাল বাস করে, ঘুরে বেড়ানো যায় শহরের যে কোন জায়গায়। 

২. তামডিল (Tamdil)

এটি একটি জলাশয়, যার পাশে পিকনিক স্পট হিসেবে জায়গাটি খুবই সুন্দর। এখানে পিকনিক করার মজাই আলাদা, এর আনন্দটা দ্বিগুণ করে তোলে। তামডিল হ্রদের মধ্যে খুবই ভালো মানের মাছ পাওয়া যায়। চিংড়ির বাজারটাও এখানে খুবই জমজমাট। হৃদে আবার নৌকার সুব্যবস্থা রয়েছে, নৌকায় ঘুরে ঘুরে অনেকটা জায়গা পরিদর্শন করতে পারবেন। আশেপাশের জঙ্গলগুলি জিপ গাড়ির মাধ্যমে ঘুরে ঘুরে দেখতে পারবেন। 

তামডিল জায়গাটির সৌন্দর্য অপরিহার্য। মিজোরামের সব জায়গাগুলোই পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় দৃষ্টিগোচর ভাবে এর সৌন্দর্য অপরিসীম। শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান থেকে পাহাড়ি অঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটকদের বেশি আকর্ষণ করে। কারণ জায়গা গুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে আলাদা একটা সৌন্দর্য থাকে। যা শহরের জাঁকজমকপূর্ণ বস্তুতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটা পাওয়া যায় না। তাই পাহাড়ি অঞ্চলগুলো, মনোরম দৃশ্যের সাথে অনেকটা শান্তিপ্রিয় ও হয়। 

এরকম জায়গা গুলোতেই পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে। চলে আসুন মিজোরামের পাহাড়ি অঞ্চলগুলো ভ্রমন করতে। শান্তিপ্রিয় জায়গাগুলোর সৌন্দর্য প্রশান্তির সাথে উপভোগ করবেন। প্রচন্ড রোদের মধ্যেও, গাছের ছায়ার নিচে বসলে হালকা বাতাসের সাথে একটা প্রশান্তি আসে। সে প্রশান্তি অনুভব করতে ভ্রমণে আসবেন মিজোরামের অঞ্চল গুলোতে। মিজোরামের প্রতিটা স্থানই আলাদা সৌন্দর্যে ঘেরা। 

ভারতের সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মতো তামডিলে ও রয়েছে উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের আধিক্য বার্তা। এবং হস্তশিল্পের ঐতিহ্য নিয়ে সমৃদ্ধ অলঙ্করণে ভরা মিজোরামের শহর গুলো। এখানকার মানুষেরা খুবই দক্ষ বুননদার।যার প্রতিফলন তাদের হস্তশিল্পের কারুকার্যের মধ্যে। হস্তশিল্পের প্রতিটা কাজ খুবই নিখুঁতভাবে পরিপূর্ণ হয়। এই হস্তশিল্পের মধ্যেই গ্রাম বাংলার প্রতিফলন তুলে ধরেন। 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন 
মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার।   আইজল থেকে বাসে করে পৌঁছে যাবেন তামডিলে। 

তামডিলের আশেপাশের জায়গাগুলো পায়ে হেঁটেই পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। 

৩. ডাম্পা অভয়ারণ্য (Dampa sanctuary)

এই ডাম্পা অভয়ারণ্যে প্রবেশের জন্য অবশ্যই অনুমতির প্রয়োজন হবে। রাজধানী আইজল থেকে এক গাড়িতেই চলে আসবেন ডাম্পা অভয়ারণ্য ভ্রমণে। মনোরম প্রকৃতির সৌন্দর্য্য ঘেরা অভয়ারণ্যটি। এটি মূলত ব্যাঘ্র প্রকল্পের একটি। এই অভয়ারণ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখি। তবে বর্ষাকালে এখানে জায়গাটা একটু কাদামাখা হয়ে যায়। তবে সৌন্দর্যের কোন কমতি পড়ে না। 

মিজোরামে ভ্রমণে আসলে অবশ্যই আপনি মায়ানমারের কুয়াশা ঘেরা পাহাড় চমফাই পরিদর্শন করে যাবেন। উল্লেখযোগ্য একটা ফংফুই পর্বত শৃঙ্গ ও রয়েছে। আরো রয়েছে সিয়াহা নদী, লুংলেই। রিহডিল হ্রদ ইন্দো মায়ানমার সীমান্তে অবস্থিত। তাছাড়া আকর্ষিত মিজো গ্রাম রেইয়িং ও পর্যবেক্ষণ করবেন। এখানে গ্রামে ঢুকতে হলে  টিকিট কাটতে হবে। 

নীল পাহাড় বা লুংলেই জায়গাটির সৌন্দর্য এতটাই প্রকাশ পায় যেন পর্যটকরা বারবার ছুটে আসেন। মিজোরামের প্রতিটা স্থানই খুবই দর্শনীয়, ও আকর্ষণীয়। ব্যস্ততার শহর থেকে ছুটি নিয়ে কিছু সময়ের জন্য চলে আসুন ভ্রমণে মিজোরামের বুকে।পাহাড়ের সৌন্দর্যটা উপভোগ করলে আলাদা একটা অনুভূতি প্রকাশ হয়। পাহাড় ভ্রমণের সাথে সাথে নিজের মনকেও পাহাড়ের মত বিশাল মনে হয়।  নিজেকে অনেকটা প্রশান্তি ফিল করানো যায়। 

ডাম্পা অভয়ারণ্য এটি সোয়াম্প হরিণদের জন্য খুবই বিখ্যাত একটি অভয়ারণ্য। এমনি সাধারণ হরিণদের থেকে একটু আলাদা এই সোয়াম্প হরিণগুলো। সেটা এদেরকে দেখলেই বুঝা যায়। একটু অন্যরকম এদের গায়ে ডোরাকাটা গুলো। এরা দলবেঁধে থাকতে পছন্দ করে। কোন কিছুর আক্রমণের আবাস পেলে মুহূর্তেই স্থান ত্যাগ করে। শান্ত বিশিষ্ট নির্বাক ভাবে এদের চলাফেরা। 

সর্বপরি খেয়াল থাকে, শিশু সোয়াম্প হরিণ গুলোর প্রতি। তার পাশেই রয়েছে নির্মল একটি হ্রদ। সেখানে গিয়ে তাদের তৃষ্ণা মেটায়। মাতৃত্বের স্নেহ মায়ায় ভরা থাকে প্রতিটা মায়ের মায়ায় ভরা আশ্বস্ত  বুক।

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন 
ডাম্পার দূরত্ব প্রায় ১২৭ কিলোমিটার আইজল থেকে।   মিজোরামের শহর থেকে টাটা সমোতে করে পৌঁছাতে পারবেন ডাম্পায়।

ডাম্পা থেকে তার আশেপাশের স্থানগুলো যেকোন মোটরবাইকে বা পায়ে হেঁটেও পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।  

ভানতাওয়াং জলপ্রপাত
ভানতাওয়াং জলপ্রপাত

৪. ভানতাওয়াং জলপ্রপাত (Vantawang waterfall)

মিজোরামের শৈলশহর বাশের জঙ্গলে রয়েছে একটি জলপ্রপাত। প্রায় ৩৫০ ফুট উচুঁতে রয়েছে এই ভানতাওয়াং জলপ্রপাতটি। এটা শৈল শহরের থেনজলের বাঁশের জঙ্গল। এখানে জঙ্গল হলেও রাত কাটানোর জন্য রয়েছে সুব্যবস্থা। তাই এখানে ভ্রমণে আসলে কোন টেনশন করতে হবে না যে থাকবেন কোথায়। চারপাশের সৌন্দর্যে অপরূপ হয়ে আছে জায়গাটি। 

জলপ্রপাতের সৌন্দর্যটা অন্যান্য দর্শনীয় জায়গা থেকে একটু অন্যরকম। জলপ্রপাত মানেই পানির সাথে যেন আনন্দটাকে ভাগাভাগি করা। পর্যটকদের মনের আনন্দটাই প্রকাশ পায় জলপ্রপাতের সৌন্দর্য দ্বারা। ঝরনার মধ্যে নিজেকে কিছুটা সময় বিলিয়ে দিতে কার না মন চায়। উপরের দিক দিয়ে এরকম জলপ্রপাত আর নিচের দিকে ছোট ধরনের নদী। কিছুটা সময় ভাঁসিয়ে রাখুন দেখবেন, শরীরের সব ক্লান্তি দূর হয়ে মন প্রশান্ত হয়ে যাবে। 

এ যেন আলাদা একটা স্বপ্নপুরী জলপ্রপাতের  দেশ। শান্ত পরিবেশের সাথে জায়গাটিতে শুধু পানির শনশন শব্দই শোনা যায়। কি সুন্দর একপাশে ঝর্ণা দ্বারে বয়ে যাচ্ছে স্রোতহীন জলপ্রপাত। মিজোরামের এই জলপ্রপাতগুলো আলাদা একটা মনোরম দৃশ্যের সৌন্দর্য প্রকাশ করে। পাহাড়ি অঞ্চলগুলো ভ্রমণ করলে আলাদা একটা অভিজ্ঞতার সৃষ্টি হয়। খুবই শান্ত পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে ভ্রমন করা যায়। 

খুব কাছ থেকে জলপ্রপাতের দৃষ্টিগোচর দৃশ্যগুলো উপভোগ করা যায়। শান্ত প্রিয় পরিবেশের, সবুজ প্রকৃতির ছোঁয়ায় জলপ্রপাতের সৌন্দর্য যেন দ্বিগুণ প্রভৃতি লাভ করে। জলপ্রপাতের পাহাড়ের চূড়া থেকে আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো অবলোকন করা যায়। 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন 
আইজল থেকে ভানতাওয়াং এর দূরত্ব ৯৭.৮ কিলোমিটার।  মিজোরামের আইজল থেকে বাসে করে পৌঁছে যাবেন ভানতাওয়াং এ। 

সেখানে পৌছাতে সময় লাগবে প্রায় ৩ ঘন্টা ১৪ মিনিট। 

৫. সীমান্তের ঠেগামুখ

ঠেগামুখের আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থান হচ্ছে ঠেগামুখের বাজার। বিশ্বের শান্তিপূর্ণ আন্তর্জাতিক সীমানা অঞ্চলের মধ্যে মিজোরামের ঠেগামুখ ও বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চল অন্যতম একটি। এতটাই সুন্দর যে পরিপূর্ণ জায়গাটি। দুই দেশের সেনারাই বাংলাদেশ এবং ভারতের, কর্মরত ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন সীমান্তে। সীমান্তে এত বেশি  কড়াকড়ি খুব একটা নেই কিন্তু নাগরিক প্রমাণপত্র থাকতে হবে। এটা খুবই প্রয়োজনীয় একটি পত্র। 

মিজোরামের নীল পাহাড়ের সৌন্দর্য ও ঠেগামুখের গোলঘর খুবই অসাধারণ। আর সবচেয়ে সৌন্দর্যের দৃশ্য হচ্ছে মিজো গ্রামের ছবি আঁকার মতো দৃশ্যগুলো। এজন্য রং তুলিতে আঁকা রঙ্গিন গ্রাম বাংলার দৃশ্য । ঠেগামুখের অপরূপ অরণ্য, সৌন্দর্যের রানী ঝর্ণা, উঁচু নিচু পাহাড় গুলো না দেখলে মিস করে যাবেন। কাজের ফাঁকে কিছুটা সময় বের করে চলে আসুন মিজোরাম ভ্রমণে। জায়গাটা সত্যি খুবই অপরূপ সৌন্দর্য ঘেরা দেয়া।

ঠেগামুখের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে ঠেগামুখের বাজার। যা সপ্তাহের মঙ্গলবার ও শনিবার জমজমাট বাজার বসে। এই বাজার পরিদর্শন করতে অনেক দূর দুরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন।সীমান্তের পাশেই অবস্থিত ঠেগামুখ বাজার, বছর দুইয়েক আগে জুন মাসে নদীর প্রচন্ড স্রোতে ভেসে গিয়েছিল ঠেগা মুখ ক্যাম্পের গোল ঘর। স্রোতের পরে তা আবার নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। এই ক্যাম্পের গোলঘর থেকেই মিজোরামের নীল পাহাড়ের সৌন্দর্য পরিদর্শন করেন পর্যটকরা।

গ্রামের সীমান্তের বাজার গুলোর দৃশ্য, সত্যিই অসাধারণ রূপে উপভোগ করা যায়। সীমান্তের ঠিগামুখ বাজারে গেলে তার অনেকটা পরিপূর্ণতা বুঝা যায়। শহরের থেকে ১০০% ভিন্নতা রূপ উপভোগ করা যায় গ্রামে।

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন 
মিজোরামের ছোট্ট হরিণা থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ঠেগামুখ সীমান্ত।  মিজোরামের আইজল থেকে বাসে করে পৌঁছে যাবেন হরিনায়। 

সেখান থেকে ট্যাক্সিতে বা মোটরবাইকে ঠেগামুখ বাজারে পৌঁছে যাবেন। 

বাজার থেকে তার আশেপাশের স্থানগুলো পায়ে হেঁটে পর্যবেক্ষণ করবেন বা সৌন্দর্য উপভোগ করবেন। 

৬. তড়মিল

তড়মিলের নিকটবর্তী জঙ্গলে প্রানীকুল ও উদ্ভিদকুলের আধ্যিক রয়েছে। এই নির্মল জলের মধ্য দিয়ে আপনি আপনার পছন্দমত নৌবিহার উপভোগ করতে পারবেন। তড়মিল একটি নির্মল হৃদ যা খুবই উপভোগ্য কর জায়গা।তড়মিলের পাশের জঙ্গলটিতে প্রাণীকুল ও  উদ্ভিদ কুলের আবাসস্থল হিসেবে ধরা হয়। অনেক ধরনের প্রাণীর মুখোমুখি হওয়া যায়, এই জঙ্গলে। তবে এগুলোর খুব কাছাকাছি না যাওয়াই ভালো। 

বিদেশি পর্যটকরা এখানে বেশি আসেন। বিভিন্ন জাতের প্রাণী গুলোর ছবি তুলেন, ওদের সাথে কিছুটা সময় কাটান। মূলত নিজেকে কাজের থেকে কিছুটা সময় বিরতিতে রাখার জন্যই ভ্রমণে  আসা। এই প্রাণী গুলোর জন্যই জায়গাটির এতটা সৌন্দর্য বেড়ে গেছে। সময়ের সাথে সাথে প্রাণীদের সংখ্যাটাও বাড়ছে। সাথে নানান ধরনের উদ্ভিদ রয়েছে এখানে। কবি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি গাছ রয়েছে বাগানে। 

এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ এর দায়িত্ব পালন করছেন সংশ্লিষ্টরা। আইজল থেকে বাসে করে সহজেই আসতে পারবেন তড়মিলে। হাতে কয়েকটা দিন সময় নিয়ে মিজোরাম চলে আসুন ভ্রমণে।১-২ দিন করে প্রতিটা জায়গায় ভ্রমণ করে যাবেন। তবে এই মিজোরাম ভ্রমণ আপনার জন্য পরিপূর্ণ পর্যবেক্ষণ হবে। এর প্রতিটা পাহাড়ি অঞ্চলগুলিই সৌন্দর্যের রানী। 

এর পাশের পাহাড়ের পশ্চাৎ ভাগে একটি চিত্রবৎ জলপ্রপাত রয়েছে। যার সৌন্দর্যে আরো দ্বিগুন হয়ে ওঠে তড়মিলের আশেপাশের জায়গা গুলো। অবিশ্বাস্যকর সৌন্দর্য প্রকাশ করে মিজোরামের এই জলপ্রপাত গুলো। 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন 
মিজোরামের আইজল থেকে তড়মিলের দূরত্ব প্রায় ৮৫  কিলোমিটার।  আইজল শহর থেকে বাসের মাধ্যমেই পৌঁছে যাবেন তড়মিলে। 

তড়মিলের আশেপাশের জায়গায় বা জঙ্গলে পায়ে হেঁটেই ভ্রমণ করতে পারবেন। 

৭. ফাঁগুই

মিজোরামের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ, নীল পর্বত নামে পরিচিত এই ফাঁগুই। অনেকে আবার বলেন এই জায়গাটি, ঈশ্বরের আবাসস্থল নামে তাদের কাছে পরিচিত। অর্কিটের জন্য খুবই বিখ্যাত এই মিজোরামের ফাঁগুই জায়গাটি। নীল পাহাড় উপত্যকাটি সবুজ শ্যামলী ভরপুর, বিভিন্ন ধরনের গাছ গাছালি, ফল ফুলের বাগান রয়েছে। ফাঁগুই জায়গাটি ছিমতুইপুই জেলায় অবস্থিত রয়েছে। রডডেনড্রন এর জন্য ও পরিচিতি লাভ করেছে জায়গাটি। 

পর্বতের মধ্যেও অনেক, উঁচু নিচু, ছোট বড় পর্বত রয়েছে। কোথাও কোথাও আবার গহীন জঙ্গল থাকার কারণে পর্যটকরা খুব একটা ভিতরে যেতে পারেন না। আবার অনেকে সাহস করে গিয়েও থাকেন। নীল পাহাড়ের দৃশ্য যেন রূপকথার গল্পকথা। এতটাই সৌন্দর্য প্রকাশ করে মিজোরামের এই ফাঁগুই জায়গাটি। মিজোরামের প্রতিটি জায়গায় ভ্রমণ করে দেখে যান,এর সৌন্দর্য কতটুকু। 

নীল পাহাড়ের চূড়ায় উঠে, মিজোরামের নিচের সব অঞ্চলগুলি উপরের চূড়া থেকে পর্যবেক্ষণ করা যায়। এত উপর থেকে দেখার সৌন্দর্যটা বেশি আকর্ষণীয়। খুবই পরিস্ফুটিত মনোরমায় ঘেরা একটি জায়গা। প্রতিটা দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যেই নীল পাহাড় জায়গাটি যেন অন্যরকম অনুভূতি প্রকাশ করে। নীল পাহাড়ের পাশ দিয়ে ছোট্ট একটি ছড়া রয়েছে। যা এই পাহাড়ের সৌন্দর্য কে আরো দ্বিগুণ করে দিয়েছে। 

ভ্রমনে এসে মিজোরামের পর্বত শৃঙ্গ গুলো অবশ্যই পর্যবেক্ষণ করে যাবেন। সাথে পাহাড়ি অভয়ারণ্যগুলো। এবং তার সাথে রয়েছে আরো কয়েকটি মিউজিয়াম ও।

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন 
আইজল থেকে ফাগুই এর দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার এর মতো।  আইজল থেকে টাটা সমুতে করে সহজেই পৌঁছে যাবেন ফাঁগুইয়ে।

ফাঁগুই এলাকা থেকে তার আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো হেঁটে অথবা মোটরবাইকে করে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। 

মংকাহিয়া লাং
মংকাহিয়া লাং

৮. মংকাহিয়া লাং

১৭০০ খ্রিস্টাব্দে মংকাহিয়ার স্মরণে নির্মিত করা হয় মংকাহিয়া লাং। এটি মূলত একটি খুবই বড় স্মারক পাথর যা মংকাহিয়া প্রস্তর। এই বিখ্যাত জায়গাটি সর্বোচ্চ ৫ মিটার উঁচু।মংকাহিয়া জায়গাটির মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতে উপলব্ধ পশু, মিথুন এবং মস্তক খোদিত রয়েছে। এত বছর তার আগের মংকাহিয়ার স্মরণে নির্মিত এই লাংটি এখনো যে অনেকটা ভালো ভাবে স্থায়িত্ব লাভ করেছে সেটাই কম কিসে।

১৭০০ বছর আগের নিদর্শন জায়গাটি, বেশ প্রফুল্লকর ছিল। মধ্যখানে খুব একটা ভালো অবস্থান ছিল না, জায়গাটির অনেকাংশ ধ্বংসাবশেষ হয়ে গিয়েছিল। সেটা কে আবার নতুন করে সংশোধন করা হয়েছে। কয়েকবার অনেক জায়গা ভেঙ্গে গিয়েছিল, নতুন করে তার সংস্কার করা হয়েছে। এই জায়গার সংশ্লিষ্টরা এই মংকাহিয়ার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন। অনেক প্রাচীনকালের নিদর্শন রয়েছে এখানে। 

আমরা সবাই অবগত রয়েছি যে, ঐতিহাসিক বা প্রাচীনকালের নিদর্শন গুলোর প্রতি আলাদা একটা টান সবারই থাকে। এই নিদর্শন থেকে বা তার আশেপাশের স্থানগুলো থেকে জায়গাটির সৌন্দর্য ফুটে উঠে। অনেক অজানা তথ্য পাওয়া যায়।উত্তরপূর্ব ভারতে মংকাহিয়ার সৌন্দর্য ফুটে উঠে। ঐতিহাসিক স্থানের অনেক নিদর্শন রয়েছে এই স্থানে। মংকাহিয়া প্রস্তরের চারিদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ, সমারোহ। 

মংকাহিয়া লাং এ জায়গাটি ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত একটি সময় হচ্ছে এপ্রিল মাসে। এই মাসে জায়গাটির সবুজ গাছপালার সাথে সাথে ফুলের বাগান গুলো সৌন্দর্যের সুবাসে ভরে যায়। প্রতিটি গাছপালার ফাঁকে ফাঁকি রয়েছে ফুলের সুভাস। 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন 
মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে মংকাহিয়া লাং এর দূরত্ব পড়বে ১১২ কিলোমিটার।  আইজল শহর থেকে টাটা সমুতে করে পৌঁছে যাবেন মংকাহিয়া লাং এ।

রিক্সা বা মোটরবাইক দ্বারা তারা আশেপাশের সব জায়গা গুলো পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। 

৯. লংভনদাওত

আইজল জেলার পূর্বদিকে বিয়েট এবং লংদারের মধ্যে অবস্থিত এই লংভনদাওত জায়গাটি। লংভনদাওত এ কথাটির, সুন্দর একটি অর্থ রয়েছে, যা হচ্ছে প্রস্তর দ্বারা স্বর্গে উপনীত। মিজোরামের এই দর্শনীয় স্থানটি পর্যবেক্ষণ করতে বিভিন্ন দেশ থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। অনেক পর্যটকরা আবার তাদের মন্তব্য উপস্থাপন করেছেন লংভনদাওত এই স্থান সম্পর্কে। স্বর্গের কিছুটা ছোঁয়া পাওয়া গেছে এই প্রস্তর দ্বারা স্বর্গীয় উপনিত স্থানটিতে। নিস্তব্ধহীন, পাখির কিচিরমিচির শব্দে কোলাহিত মনোরমা জায়গাটি।

জায়গাটি পাথর দিয়ে খোদাইকৃত,অত্যন্ত লম্বা ও অপরূপ আকর্ষণীয় একটি স্তম্ভ। যার ব্যাস প্রায় ৭৫ সেন্টিমিটার। এবং উচ্চতা প্রায় তিন মিটারের মতো।জায়গাটির সৌন্দর্যের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। প্রতিটা স্থান পর্যটকদের কাজে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং শিক্ষনীয়। মিজোরামের দর্শনীয় স্থানগুলো আলাদা একটি সৌন্দর্য প্রকাশ করে। 

দিনদিন যেন জায়গাটার সৌন্দর্য বেড়েই চলছে। স্থানগুলোর এক একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। সে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলো থেকে অনেক শিক্ষনীয় জ্ঞান অর্জন করা যাবে। জায়গাটির মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে দিক, সেটা হচ্ছে, পাথরের খোদাই কৃত করা। এই জায়গাটি দেখতে খুবই আশ্চর্যজনক। এত বেশ সৌন্দর্য বহিঃপ্রকাশ, এই দৃশ্যটি পর্যবেক্ষণ করতে পর্যটকদের ভীর জমে যায় লংভনদাওত এ।

মিজোরামের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আকর্ষণীয় অনেক তথ্য পাওয়া যায়। তাছাড়া পর্যটকদের মধ্যে বেশির ভাগই দেখা যায় বিদেশি পর্যটকদের। তারা শুধু পর্যটন করার জন্য নয়, ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি করে রাখার জন্যও আসেন। 

লোকেশন ভ্রমন গাইড / কিভাবে যাবেন 
মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে লংভনদাওত এর দূরত্ব প্রায় ১১০ কিলোমিটার।  আইজল থেকে বাসে করে পৌঁছে যেতে পারবেন লংভনদাওতে। লংভনদাওত বাজার থেকে হেঁটে অথবা অটো রিক্সা করে দর্শনীয় স্থানে পৌঁছে যাবেন। 

মিজোরাম শহর থেকে শেয়ার এর মাধ্যমে যাতায়াত করলে সবচেয়ে ভালো হয়।

১০. সিবুতা লাং

মিজোরামের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য স্থান সিবুতা লাং। মিজোরামের এই দর্শনীয় স্থানটি প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে নির্মিত হয়েছে। এটি স্মারক পাথর বা পালিয়ান প্রদান কর্তৃক নির্মিত হয়েছিলো।জায়গাটি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হওয়ার কারণ। এখানে একটি হতাশ মূলক প্রেম কাহিনীর কাহিনী শোনা যায়। এবং প্রতিশোধের লিপ্সা মূলক এক কাহীনির বর্ণনা দেয় জায়গাটি। 

সেখানকার স্থানীয় লোকরা বলেন, জায়গাটি এতো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে এই হতাশ মূলক প্রেম কাহিনীর জন্য। প্রেমিক দম্পতিদের খুবই করুন অবস্থা হয়েছিল সেই সময়। অনেক ভালোবাসা থাকার পরও দুজন এক হতে পারেননি। এই কাহিনীটার জন্যই মূলত জায়গাটি এতটা পরিচিতি লাভ করেছে পুরো দেশে। স্থানটি ঐতিহাসিক এইজন্য প্রায় ৩০০ বছর আগেরকার নির্মিত এই জায়গাটি। জায়গাটির আলাদা ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে প্রাচীনকালের। 

প্রাচীনকালের প্রতিটা জায়গার মধ্যে ঐতিহাসিক কিছু নিদর্শন থাকে। ওই প্রাচীন নিদর্শন গুলোর প্রতি পর্যটকদের একটি অন্যরকম আকর্ষণ থাকে। যা পর্যবেক্ষণ করতে ছুটে আসেন, মিজোরামের এই জায়গাটিতে। মিজোরামের প্রাচীন সব নিদর্শন গুলো তেমন একটা অক্ষত হয়নি। সংশ্লিষ্টরা ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য প্রাচীন ঐতিহাসিক যুগের থাকার পরও এখন অনেকটা ভালো অবস্থানে রয়েছে প্রাচীন নিদর্শন গুলো। 

এই জায়গাটির জন্য যাদের উপর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বর্ধিত করা হয়েছে। তারা সম্পূর্ণই দায়িত্ব পালন করছেন সিবুতা লাং এর প্রতি। স্থানগুলো খুবই একটা নির্জন জায়গায় অবস্থিত রয়েছে। মিজোরামের প্রতিটা দর্শনীয় স্থানগুলোই নিস্তব্ধতা, নির্জনতার মধ্যে রয়েছে। খুব একটা হই হুল্লোলকর, বিশৃঙ্খলার কোনো স্থান নয়। তাই নিঃসন্দেহে চলে আসতে পারেন মিজোরামে ভ্রমণে। 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন 
মিজোরাম শহর থেকে সিবুতা লাং এর দূরত্ব ৯৮.১ কিলোমিটার।  মিজোরামের শহর থেকে বাসে করে সহজেই পৌঁছে যাবেন সিবুতা লাং এ।

বাসে করে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৩ ঘন্টা ৩ মিনিট। 

১১. ভানহিমালিয়ান এর সমাধি 

একজন বিখ্যাত ব্যক্তি ভানহিমালিয়ান সাইলো চম্ফাইয়ের একজন বিশিষ্ট মহান নেতা ছিলেন। ভানহিমালিয়ান সাইলোর স্মরণে নির্মিত করা হয়েছিল উনার সমাধিটি। প্রতিদিনই উনার ভক্তরা ওনার সমাধি পর্যবেক্ষণ করতে এখানে আসেন। এসে ওনাকে শ্রদ্ধা জানান, এটা সুবিশাল চম্ফাই সমভূমির অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আইজল জেলায় অবস্থিত এই চম্ফাই জায়গাটি। আশেপাশের জায়গাটি প্রাকৃতিক পরিবেশের খুবই সৌন্দর্যতম একটি স্থান। 

ভানহিমালিয়ান সাইলো খুবই বিখ্যাত বিশিষ্ট একজন ব্যক্তি ছিলেন। পুরো মিজোরামের গৌরব ছিলেন। উনার জন্য উনার আশেপাশের জায়গাগুলো বিখ্যাত, দর্শনীয় হয়ে উঠেছে। জ্ঞানী মানুষদের আচরণের মাধ্যমে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়। ব্যক্তিগত কোন পরিচয় না জানলেও তারা যে, বিজ্ঞ জ্ঞানী একজন মানুষ সেটা অত্যন্ত বুঝা যায়। তিনিও ছিলেন সেই লেবেলের একজন বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম একজন। 

সাইলো এর সমাধি দেওয়ার জায়গাও দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে। সমাধির রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। একজন গুণী মানুষ চলে যাওয়ার পর মনে হচ্ছে, কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছে সেখানকার লোকেরা। মিজোরামের এই সমাধি জায়গাগুলো মধ্যে আসলে আসলেই মন খারাপ হয়ে যায়। এরকম গুণী, বিখ্যাত ব্যক্তিরা যখন ওপারে পাড়ি দেন। এরকম একটা মর্মান্তিক দৃশ্য আর কিছু হয় না। সাইলো এর স্মরণেই সমাধি টি করা। 

মিজোরামের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান দেখবেন দর্শনীয় স্থানের প্রতিটা পদক্ষেপই আপনার জন্য সাফল্যময়ী। সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৌন্দর্যের ছড়িয়ে রয়েছে চারিদিক। 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন 
ভারতের মিজোরাম থেকে ভানহিমালিয়াম এর সমধির দূরত্ব প্রায় ১৯৪ কিলোমিটার।  মিজোরামের শহর থেকে বাসে করে পৌঁছে যেতে পারবেন, ভানহিমালিয়ান সমাধির কাছে।

অথবা সিবুতা লাং শহর থেকে অটোরিকশা বা মোটরবাইকে করে পৌঁছাতে পারবেন সমাধিতে। 

সবচেয়ে ভালো হয়,মিজোরামের শহর থেকে শেয়ারের মাধ্যমে একেবারে ভানহিমালিয়ান সমাধিতে এসে পৌঁছাবেন। 

১২. তুলাচাং

মিজোরামের বৃহত্তম মনোলিথ হলো এ জায়গা তুলাচাং। এটি আইজল জেলার তুলাচাং গ্রামের নিকটে অবস্থিত তুলাচাং দর্শনীয় স্থানটি। এটি একটি বিশিষ্ট পাথরের ভূখণ্ড। তুলাচাং এর দর্শনীয় স্থান সেটা হচ্ছে পাথরের ভূখণ্ড। এই পাথরের ভূখণ্ডকে পরিদর্শন করতেই পর্যটকদের আনাগোনা এই জায়গায়। বিশাল একটি পাথরের ভূখন্ড এখানে। 

এ পাথরের ভূখণ্ডের পিছনে আলাদা একটা ইতিহাস রয়েছে। তুলাচাং বিখ্যাত স্থানটি মূলত এই পাথরের ভূখণ্ডের জন্যই পরিচিত লাভ করেছে পুরো দেশে। মিজোরামের প্রতিটা স্থানই খুবই প্রশান্তিমূলক। তুলাচাং এর জায়গাটি খুবই মনোথিল বৃহত্তম স্থিতিশীল একটি দর্শনীয় জায়গা। অনেক পর্যটকরা এখানে ভ্রমণে এসে পাথরের ভূখণ্ডকে পর্যবেক্ষণ করে পাথরের গুহায় ঢুকে পড়েন। তবে এটা কোন নিরাপদ জায়গা নয়।

পাথরের ভুখণ্ডকে খন্ডিত করার জন্য, স্থানীয়দের মধ্যে অনেকে এসে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা এসে বাঁধা দেন, তাই আর খন্ডিত করা হয়নি। ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে রেখে দেওয়া হয়েছে। যে কেউ যেকোনো পরিস্থিতিতে পাথরের ভুখন্ডের গুহায় ঢুকবেন না। কয়েকজন মিলে অথবা কোন মাধ্যমে থাকলে সেটা অন্য কথা। মিজোরামে ভ্রমণের তুলাচাং এর জায়গাটি পর্যবেক্ষণ করে যাবেন। 

প্রকৃতির মধ্যে প্রকৃতির ছোঁয়া থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে প্রকৃতি যখন আবার নতুন করে সৃষ্টি করে, প্রকৃতির জিনিস পাথর দিয়ে ভূখণ্ড, তখন সেই ভূখণ্ড নিশ্চয়ই খুবই শক্তিশালী স্বরূপ প্রদান করে। প্রকৃতির এই পাথরের ভূখণ্ড হয়ে উঠুক ঐতিহাসিক নিদর্শন। 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন 
তুলাচাং, আইজল থেকে এর দূরত্ব ৫৬ কিলোমিটার এর মতো। আইজল শহর থেকে টাটা সমুতে অথবা লোকাল বাসে করে সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন তুলাচাং এ।

১৩. কেভি জান্নাত 

এখানে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল ২০০১ সালে। মোটরবাইক দুর্ঘটনায় যিনি মারা গিয়েছিলেন তার স্মৃতিতে নির্মিত হয়েছে এই কেভি জান্নাত। এটি একটি তিন তলা বিশিষ্ট সমাধি। এই জায়গা পরিদর্শনে গেলে উনার ব্যবহৃত অনেক জিনিসপত্র দেখতে পাবেন। জুতা, জামা কাপড় জিনিসপত্র সংগ্রহের জন্য খুঁজে পেতে সক্ষম হবেন। স্থানীয় মানুষদের হৃদয় কাঁপানোর মত একটি দুর্ঘটনা ছিল। 

খুবই আশ্চর্যজনকভাবে এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল এখানে। স্থানীয় লোকরা জানান, এরকম সড়ক ঘটনা দুর্ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। ঠিক তেমনি এখন পর্যন্ত এরকম সড়ক দুর্ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। তাই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই কেভি জান্নাত টি নির্মিত করা হয়েছিল। এই জায়গার তাৎপর্যপূর্ণ মর্মান্তিক ঘটনায় এটি। একটা দুর্ঘটনা পুরো এলাকাকে কাঁপিয়ে তুলেছিল। 

মিজোরামের আশেপাশে যারা ভ্রমণে আসবেন, একে কেভি জান্নাত দর্শনীয় স্থানটি পর্যবেক্ষণ করে যাবেন। স্থানীয়দের কাছ থেকে অবশ্যই জানতে পারবেন এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার ইতিহাস। এই স্থানটি মূলত এই দুর্ঘটনার জন্যই পরিচিতি লাভ করেছে। এমন একটি স্মৃতি বিজড়িত জায়গাকে পর্যবেক্ষণ করার ইচ্ছা কার না থাকে। তাই দেরি না করে চলে আসুন মিজোরামে ভ্রমণে। মিজোরামের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার ঐতিহাসিক স্থানকে পর্যবেক্ষণ করে যাবেন। 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন 
কেভি জান্নাত, আইজল থেকে এর দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার।  আইজল শহর থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে সহজেই চলে যাবেন কেভি জান্নাতে। 

অথবা লোকাল বাসে বা টাটা সমুতে করে ও যাতায়াত করতে পারবেন কেভি জান্নাতে। 

tam dil lake
তমডিল হ্রদ

১৪. তমডিল হ্রদ 

এই তমডিল নামটি আসলে লোককাহিনী অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে। এই হ্রদটি মাছ ধরার জন্য জলাধারের একটি অংশ বিশেষ। এবং এটি মৎস্য বিভাগ দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। পর্যটকদের সুবিধার জন্য এখানে আবার, অনেক ধরনের লেকসাইড রিসোর্ট রয়েছে। মিজোরামের প্রায় দর্শনীয় স্থানগুলোতেই লেকসাইড রিসোর্ট রয়েছে। গ্রীষ্মকাল বা শীতকালে আসলেও দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। 

ভ্রমণের সাথে সাথে, বিশ্রামের জন্য ও রয়েছে এখানে সুযোগ সুবিধা। এই জায়গাটিতে ভ্রমণে গিয়ে আপনি অনেক নতুন মুখের সাথে পরিচিত হবেন। মিজোরামের স্থানীয়দের আলাদা একটি মিজো ভাষা রয়েছে। যা তারা তাদের নিজেদের মধ্যে ব্যবহৃত করে। এবং অন্যান্য জায়গার লোকদের সাথে অন্য ভাষা ব্যবহৃত করে যেমন, ইংরেজি বা বাংলা। বাংলাও  তারা খুব একটা অভ্যস্ত নয়, তাদের কাছে তাদের মিজো ভাষাটাই ব্যবহৃত হয়।

মিজে ভাষায় অভ্যস্ত তারা। যে অংশটি মাছ ধরার জন্য রয়েছে, সেই অংশে গ্রীষ্মকালে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। অনেক পর্যটকরা এখানে এসে বরশি দ্বারা মাছ উত্তোলন করেন। মাছের জন্য বিখ্যাত এই স্থানটি। হ্রদের পাশে যে কয়টা বিল রয়েছে, সব কয়টা বিলে প্রচুর হাঁসের চাষ করেন স্থানীয়। হাঁস চাষেও লাভবান হন গ্রামের মহিলারা। সবকিছু মিলিয়ে তমডিল হ্রদটি অসাধারণ রূপ ধারণ করে আছে। 

তমডিল হ্রদের আশেপাশের প্রতিটা স্থানই খুবই শান্তপ্রিয় মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। এরকম একটা পরিবেশে ভ্রমন করাটাও একটা তৃপ্তির আবাস। জায়গাটি খুবই দর্শনীয় কোন স্থান নয়,তবে খুবই শান্তি বর্ষিত একটি স্থান। 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন 
মিজোরামের রাজধানী আইজল শহর থেকে তমডিল হ্রদ এর দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার।  আইজল শহর থেকে টাটা সুমোতে পৌঁছে যেতে পারবেন তমডিলে।

অথবা দূরদূরান্তের যাতায়াত মাধ্যমে আপনি শেয়ারের মাধ্যমে যাতায়াত সুবিধাজনক। 

১৫. মিজোরাম স্টেট মিউজিয়াম 

এটা খুবই আকর্ষণীয় মিজোরামের একটি বিখ্যাত স্থান। শহরের ঠিক মাঝ কেন্দ্রে অবস্থিত এই স্টেট মিউজিয়াম। সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক দিক ও প্রদর্শন করে মিজোরামের এই বিখ্যাত স্থানটি। এখানে অনেক ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম নিদর্শন রয়েছে। এই মিউজিয়ামে ভ্রমণে আসলে অবশ্যই আপনার নতুন অভিজ্ঞতার সৃষ্টি হবে। যেমনটা দেখতে সুন্দর তেমনি একটা শিক্ষনীয় স্থান এটি। 

যেহেতু শহরে ঠিক মাঝকেন্দ্রে অবস্থিত এই মিউজিয়াম। তাই লোকজনের আনাগোনার হার টা এখানে একটু বেশি। বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটক এবং যেকোনো পথচারী একবার হলেও ওই মিউজিয়ামকে পরিদর্শন করে যান। স্টেট মিউজিয়াম এর আশেপাশে রয়েছে, আরো ছোটখাটো বিভিন্ন সৌন্দর্যের আড্ডাখানা। একটু দূর পরপরই দেখা যায় কিছু কিছু লোকের সমাগম। জায়গা গুলো খুবই শান্ত প্রিয়, এবং মনোরম দৃশ্যের অধিকার। 

ঐতিহাসিক প্রাচীনকালের অনেক নিদর্শন রয়েছে মিউজিয়ামে। প্রাচীনকালের নিদর্শন, প্রাচীন জিনিসপত্র দেখে নতুন অভিজ্ঞতা সৃষ্টি হয়। প্রত্যেকটা মিউজিয়ামে রয়েছে প্রাচীন জিনিসপত্র তার সাথে বর্তমানের নতুনত্ব। আগেরকার প্রচলিত গুরুত্বপূর্ণ সব জিনিসপত্র সংগ্রহ করে মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখানকার সংশ্লিষ্টরা মিউজিয়ামের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রতিটা পর্যটকেরই আলাদা একটা আকর্ষণ রয়েছে মিউজিয়ামের প্রতি। 

মিজোরামের এই আকর্ষিত মিউজিয়াম গুলো পরিদর্শন করতে চলে আসুন ভ্রমণে। এর প্রতিটা জায়গা খুবই আকর্ষণময়ী এবং সৌন্দর্যে ভরপুর। ঐতিহাসিক প্রাচীন নিদর্শন গুলোর ইতিহাস জানতে মিউজিয়ামে উপস্থিত হন। 

মিজোরামের এই স্টেট মিউজিয়ামে পুরোনো অনেক সরঞ্জাম সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। হাতিয়ারের মধ্যে অনেক কিছু রয়েছে যা আমরা চিনতেই পারি না,তবে প্রতিটা জিনিসের উপরে তার নাম উল্লেখযোগ্য রয়েছে। প্রতিটা জিনিসই খুবই কৌতুহলপূর্ণ আকর্ষণীয়। 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন 
আইজল থেকে মাত্র ৯৫০.০ কিলোমিটার দূরত্ব। 

সময় লাগবে মাত্র ৪ মিনিট। 

আইজল থেকে যেকোন অটোতে বা মোটরবাইক করেও যেতে পারবেন। 

অথবা পায়ে হেঁটেও যেতে পারবেন। আইজলের পাশেই রয়েছে মিউজিয়াম টি। 

হেঁটে যেতে সময় লাগবে প্রায় ১৪ মিনিটের মত। 

১৬. রেইক

এটি মূলত একটি পাহাড়, সবুজ পরিবেশের সাথে বিস্তৃত নদী-নালার সমারোহ নিয়ে গঠিত একটি পাহাড়। এটি পর্যটন গন্তব্য গুলোর মধ্যে একটি যা বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী ও আরো বিভিন্ন জাতের পশু পাখি নিয়ে পাহাড়টি গঠিত রয়েছে। নামানুসারে এর নাম দেওয়া হয়েছে রেইক। এটি একটি এমনই পাহাড় যেখানে আপনি অবিস্মরণীয় ভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন। জায়গাটি খুবই শান্ত প্রিয় সবুজ শ্যামলে ভরা, প্রাকৃতিক পরিবেশ। 

রেইক এর উচ্চতা প্রায় ৫ হাজার ফুটের কিছু বেশি হবে। রেইকে ভ্রমণে আসার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হবে এপ্রিল মাস। এই মাসে এখানে একটা বড় ধরনের উৎসবও হয়। একটি ফুল এখানকার লোকদের খুবই জনপ্রিয়। তাদের এই প্রিয় ফুলের নামে আন্তরিয়াম উৎসব। তাছাড়া প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে উৎসবের মাধ্যমে শিল্প-সংস্কৃতিকে তুলে ধরা। স্থানীয় লোকদের বোঁনা তাঁত শিল্পের বেশিরভাগ জিনিসপত্র উঠে উৎসবে। 

উৎসবে মুখরিত সময় গুলো কাটে খুবই আনন্দে। এক মাস আগে থেকেই স্থানীয়রা মেতে উঠেন উৎসবের ছোঁয়ায়। পর্যটকদের কাছেও সেই উৎসবটা খুবই আনন্দদায়ক এবং উপভোগ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করে।বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা দেখতে আসেন এই উৎসব। এবং তাদের তৈরি জিনিসপত্র সামগ্রী ক্রয় করেন। উৎসবে টানা ৭ দিন চলে এই রেইকের নিজস্ব লোকগীতি ও নৃত্য। 

এর এতটা সৌন্দর্যের কথা দূর থেকে না শুনে চলে আসুন ভ্রমণ। নিজ দৃষ্টিকোণে পর্যবেক্ষণ করবেন। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির অপরিহার্য সৌন্দর্য, এর কোন তুলনা হয় না অতুলনীয়। নীল আকাশ আর সবুজের সমারোহ মিলে তৈরি হয়েছে নৈসর্গিক অপূর্ব দৃশ্য। এই পাহাড়ের সৌন্দর্য প্রকাশ করে শেষ করা যাবে না। তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চলে আসুন মিজোরামের রেইক দর্শনীয় এই স্থানে। নীল আকাশের নিচে সবুজ সমারোহ দিয়ে চারিদিক ঘিরে রয়েছে। 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন 
মিজোরামের আইজল থেকে রেইক এর দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার।  আইজল থেকে বাসে করে বা নিজের গাড়ি করে পৌঁছাতে পারবেন রেইকে। 

অথবা মোটরবাইকেও চলাচল করতে পারেন। 

১৭. দাম্পা টাইগার রিজার্ভ 

১৯৯৪ সালে এটি দাম্পা টাইগার রিজার্ভ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এটি মিজোরাম শহরের পশ্চিম অংশে অবস্থিত। এই স্থানটি বৃহত্তম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। মিজোরামে এসে এরকম একটি জায়গা ভ্রমন করবেন না, তা তো হয় না। মিজোরামের এই জায়গা গুলো পরিদর্শনের জন্য সেরা সময় গ্রীষ্মকাল। হাইলাইটিং বৈশিষ্ট্য গুলোর মধ্যে একটি এই স্থানটি। 

পশ্চিমের এই অংশে অবস্থিত মিজোরামের দাম্পা টাইগার রিজার্ভ। জায়গাটির আশেপাশে পরিদর্শন করার মতো অনেক জায়গাই রয়েছে। বেশ কয়েক জাতের পশু রয়েছে এই অভয়ারণ্যে। অনেক বছর আগে অনেক বাঘের প্রকোপ ছিল এখানে। বাঘের ভয়ে লোকজন এখানে আসতেন না। এখনো আছে তবে আগের মতো তেমন একটা নেই এবং এখানে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোক নিযুক্ত রয়েছে। 

দেখাশোনা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বও রয়েছে। পর্যটকদের যাতে কোন সমস্যা না হয় সেদিকে সবসময় সংশ্লিষ্টরা অবগত রয়েছেন। সব সময় যেন জায়গাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে তাই সবসময় কর্মরত অবস্থায় লোকজন থাকেন। বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা রয়েছে। আগের থেকে অনেক বেশি পর্যটকরা এখন বর্তমানে আসেন। সৌন্দর্যের দিক দিয়ে জায়গাটিকে অনেক পরিবর্তন করেছেন। দাম্পা টাইগার রিজার্ভের সৌন্দর্য মনোমুগ্ধ করে একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। 

দাম্পা টাইগার রিজার্ভের প্রতিটা পদক্ষেপই যেন খুবই আকর্ষণীয় মনোরম পরিবেশ উপভোগ করার মতো। সমুদ্রে ঢেউয়ের সাথে সাম্পান উড়ছে, নীল আকাশের নীচে, সবুজে ঘেরায়ীত পাহাড় বাতাসে দোলে দোলে দাঁড়িয়ে আছে। একবার চলে আসুন ভ্রমণে দেখে যান মিজোরামের স্থানগুলো কতটা আকৃষ্ট করতে পারে আপনাকে। ভ্রমণের প্রতিটা পদক্ষেপই যেন তৃপ্তির হাঁসি হাঁসে। এ যেন এক অনাবিল সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ। 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন 
মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে, দাম্পা টাইগার রিজার্ভ এর দূরত্ব প্রায় ১১৩ কিলোমিটার।  আইজল থেকে টাটা সুমোতে করে পৌঁছে যাবেন দাম্পা টাইগার রিজার্ভে।

অথবা শেয়ার জিপ নিয়ে ও যেতে পারবেন দর্শনীয় স্থানে।

১৮. মুইফাং

মিজোরামের অন্যতম দর্শনীয় জনপ্রিয় একটি পার্বত্য শহর মুইফাং। সবুজ গালিচায় ঘেরা চারিদিক, এযেন অপূর্ব অনন্য একরূপ। পাহাড়ের অনন্য এক অপরূপ ছোয়া পর্যটকদের ছেয়ে যায়। প্রশস্ত উচু নিচু প্রান্তর গুলো, যেন জল রঙের ছবি আঁকা। এখানে কিন্তু একদিনে ভ্রমণে আসলে হবে না। জায়গাটির সৌন্দর্য এতটাই প্রকাশ পায় যেন একদিন আপনি শেষ করতে পারবেন না। হাতে দু তিন দিন নিয়ে আসতে হবে। 

রেইক বলেন বা মুইফাং, মিজোরামের যেকোন স্থানে প্রকৃতির সাথে সবুজ সমারোহের বিচিত্র মিশ্রণ রয়েছে। প্রকৃতি এক অপরূপ লীলাখেলা খেলছে। প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় ভূমিকা রয়েছে মিজোরামের মুইফাং এ। মিজোরামের আইজল শহর থেকে টাটা সুমোতে করে বা শেয়ারে করে আপনি শহরের আশেপাশে যেকোন স্থানে ভ্রমণ করতে পারবেন। মুইফাং এর প্রতিটি জায়গা খুবই দর্শনীয়। মিজোরাম রাজ্যটি পুরো আটটি জেলায় বিভক্ত রয়েছে। 

মিজোরামের তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালে ৩০ ডিগ্রি অবধি সবসময়ই থাকে। এবং শীতকালে ১১ থেকে ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। মিজোরামের সব তথ্য জেনে শুনে ভ্রমণে আসুন।এখানে প্রতিটি ঘরে ঘরে উজ্জল রঙের মিজো পোশাক তৈরি করা হয়। তাছাড়া চম্ফাই শহরের নিকটে রয়েছে মিজোরামের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত ভেন্টাং। এখানে স্থানীয় মেজোদের খাদ্য হচ্ছে ভাত।

ভেন্টাং এর জলপ্রপাতের সৌন্দর্যে সব পর্যটকদের আকর্ষণ করেছে। সেখানকার স্থানীয় লোকরা তাদের মুখে একটা তৃপ্তির হাসি নিয়ে বলেন। এরকম একটা জায়গায় উনারা বসবাস করছেন সত্যি অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার। 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন 
মিজোরামের আইজল শহর থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই মুইফাং। রেইক থেকে বাসে করে আইজল আসবেন, সেখান থেকে আবার লোকাল বাসে মুইফাং এ পৌঁছে যাবেন।

তাছাড়া নিজের গাড়িতেও আসতে পারেন, এখানের রাস্তা যাতায়াত সুবিধা ভালো।

১৯. চাম্ফাই

চাম্ফাই হলো জেলা সদর একটি বিচিত্র শহর। মায়ানমারের পাহাড়ের গাঁ দিয়ে ঘেরা এক উপত্যকা। এই উপত্যকাতে রয়েছে মিজোরামের সর্বাধিক সমতল ভূমি। এখানে ঘরে ঘরে তাঁত বোনা হয়, বাহারি রঙের পোশাক, চাদর, ব্যাগ এ যেন হরেক রকমের রং এর কারসাজি। আর হাতের জাদুর ছোঁয়ায় এক একটা জিনিস যেন এক একটা রহস্যের মুকুট হয়ে উঠে। জিনিসগুলো থেকে যেন চোখ এড়ানো যায় না। 

মিজোরামের মুইফাং থেকে চলে আসবেন এই পাশের চাম্ফাই অঞ্চলে। আসার সময় রাস্তায় পড়বে থানজোয়াল মিজো বয়ন শিল্পের কেন্দ্র। পাহাড়ি অঞ্চল গুলো খুবই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য প্রকাশ করে। চম্ফাইয়ের পাশেই রয়েছে আরেকটি দর্শনীয় স্থান, ভেন্টাং জলপ্রপাত। যা চাম্ফাই জায়গা থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে, খুবই বড় একটি জলপ্রপাত। এক পাহাড়ের চূড়ায় উঠে দেখবেন অন্য পাহাড়ের এই জলপ্রপাতটি। 

কত সুন্দরতম এই দৃশ্য। এই জায়গায় যারা একবার ভ্রমণে আসেন, দ্বিতীয়বার তাদের আসতেই হবেই এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এবং জলপ্রপাতের টানে। এতটাই সৌন্দর্যের জোর রয়েছে চাম্ফাই অঞ্চলের। শুধু তাঁত বোনাই এখানের জীবিকা নয়, তার সাথে রয়েছে ধান চাষ। দর্শনীয় এই জায়গাটিকে বলা হয়, মিজোরামের বৃহত্তম প্রাকৃতিক হৃদ। প্রকৃতির সৌন্দর্যের ছোঁয়ায় যেন অনন্য এক রূপ ধারণ করে। 

চাম্ফাই এর স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁত বুনন এর কাজ টাই বেশিরভাগ করে থাকেন। এখানকার মহিলারা শুধু রান্না বান্নার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে না, তার পাশাপাশি জীবিকা অর্জনের জন্য এই কাজটিও করেন। শিশু-কিশোর পরে সবাই কর্মজীবী মানুষ। ঘরের নারীরাও, ঘরের কাজের পাশাপাশি জীবিকা অর্জন করছে। প্রতিটা অভয়ারণ্যের, জীবজন্তু পশু পাখি সবগুলো পরিদর্শন করেন পর্যটকরা। পশু পাখি তাদের দ্বারা কোনোরুপ ক্ষতি সাধিত হয় না পর্যটকের উপর। 

হস্তশিল্পের স্বতন্ত্র পরিচয় রয়েছে মিজোরামের এই জায়গাটির প্রতি পর্যটকদের কাছে। এখানকার নারীরা অত্যন্ত দক্ষ বুননদার। যে যার জ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে, সুদূর পর্যন্ত এগিয়ে যাচ্ছে এই হস্তশিল্পের মাধ্যমে। 

লোকেশন ভ্রমণ গাইড / কিভাবে যাবেন 
মিজোরামের শহর থেকে চাম্ফাই এর দূরত্ব প্রায় ১৬২.১ কিলোমিটার।  মিজোরাম শহর থেকে বাসে করে পৌঁছে যাবেন চাম্ফাই এ।

পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় ৭ ঘন্টা ৩ মিনিট।

সর্বশেষ, মিজোরামের ভ্রমণ,সংস্কৃতি আনন্দদায়ক দর্শনীয় দিক থেকে অন্যতম একটি দুর্দান্ত জায়গা। এখানে প্রাকৃতিক জাঁকজমকে সৌন্দর্যে ভরপুর উপভোগ করুন মিজোরামের দর্শনীয় জায়গাগুলো। এমন একটি দেশে ভ্রমণে এসে প্রশান্তিতে নিজেকে নিমজ্জিত করুন। 

অনেক অজানা তথ্য সংগ্রহ করুন, জাদুকর এবং চিত্তাকর্ষক জায়গার দৃশ্য সরবরাহ করে। আপনার স্বপ্নের গন্তব্য হবে মিজোরামের দর্শনীয় স্থানগুলো। এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেখতে পাবেন, যা আপনাকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। 

কাজের ফাঁকে ফাঁকে ভ্রমণে আসুন। নিজের মনকে প্রশান্তি রাখুন, সুস্থ থাকুন। 

আরো পড়ুন –

 

 

 

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents