Dreamy Media BD

স্টিভ জবস: একজন টেক-টাইটানের জীবনী

স্টিভ জবস

স্টিভ জবস (Steve Jobs) এর জীবনের গল্প রূপকথাকেও হার মানায় , একসময় যে ছেলেটা খাবারের জন্য রাস্তায় কোকের বোতল ঢুকাতো, তিনি মৃত্যুর সময় রেখে যান ১০ বিলিয়ন ডলার। তার হাতেই প্রতিষ্ঠা পায় বিখ্যাত কোম্পানি  অ্যাপল। তাকে বলা হয় “ টেক-টাইটান” এবং তাকে এনিমেশন জগতের পথিকৃৎ বলা হয় । তিনি প্রতিষ্ঠা করেন পিক্সার এনিমেশন। তার হাত ধরেই আসে আইফোন, আইপড ,ম্যাকিন্টোস  কম্পিউটার সহ প্রযুক্তি দুনিয়ার সেরা পণ্যগুলি।আবার তাকেই নিজের তৈরী কোম্পানি থেকে বহিস্কার হতে হয়েছিল।  এমনই সব অজানা তথ্য নিয়ে লেখা হয়েছে  প্রযুক্তি জগতের বিস্ময় স্টিভ জবসকে নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি।

স্টিভ জবস এর জীবনী

প্রতিটা মায়ের জন্যই পৃথিবীতে সন্তানের আগমন সর্বোচ্চ সুখ বয়ে আনে , কিন্তু ১৯৫৫ সালে কিশোরী Joanne Carole Schieble এর স্টিভ জোবসে জন্ম দিয়ে চিন্তায় পরে যান , কেননা তিনি ছিলেন তখন আমেরিকায় আসা এক জার্মান অভিবাসী অবিবাহিত কলেজ ছাত্রী। পিতা ছিলেন সিরিয়ান অভিবাসী  আব্দুল্লাহ ফাতাহ জান্দালি।

তাই বাধ্য হয়ে তিনি , স্টিভ জবসকে পল এবং ক্লারা জবস দম্পতির কাছে দত্তক দেন।  তাদের থেকেই জবস তার নাম পান স্টিভ পল জবস

তবে জবস দম্পতির আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না , তাই ছোট থেকেই স্টিভ জবসের জীবন ছিল সংগ্রামে ভরপুর।

আরও পড়ুনঃ ডার্ক ওয়েব: ইন্টারনেটের রহস্যময় অপরাধের জগৎ

স্টিভ জবসের শিক্ষা জীবন

তিনি কখনো ভার্সিটির সিঁড়ি পর্যন্ত যান নি, এমনকি কলেজের গন্ডিও পেরোননি।  জবস কুপারটিনো জুনিয়র হাই স্কুলে এবং হোমস্টিড হাই স্কুলে থেকে প্রাথমিক শিক্ষা নেন ।   ১৯৭২ সালে স্কুলের  পড়াশোনা শেষ করে ভর্তি হন পোর্টল্যান্ডের রিড কলেজে।  কিন্তু লেখাপড়া তাকে বেশিদিন আটকে রাখতে পারেননি , তাই দ্রুতই কলেজ থেকে ড্রপআউট হন তিনি।

ছোটবেলা থেকেই তার , লেখাপড়ার চাইতে পালিত মেকানিক বাবার গ্যারেজের প্রতি বেশি আগ্রহ ছিল।  পাশাপাশি তিনি ইলেকট্রিক জিনিসপাতি সংগ্রহ করতে ভালো বাসতেন।  কলেজে থাকার সময় তিনি নিয়মিত  হিউলেট-প্যাকার্ড কোম্পানির লেকচারগুলোতে অংশগ্রহণ করতেন।  হিউলেট-প্যাকার্ড সংক্ষেপে বিখ্যাত hp ল্যাপটপের উৎপাদক কোম্পানি। ইলেক্ট্রনিক্স এর উপর আগ্রহ ও সংগ্রহের খাতিরে  hp এর প্রতিষ্ঠাতা এর সাথে খাতির হয় , পরবর্তীতে তিনি এখানে সামার যবে ইন্টার্নির সুযোগ পান।

স্টিভ জবসের পেশাজীবন

তার জীবনের শেষটা সুন্দর হলেও প্রাথমিক জীবন মতো পেশাজীবনের  শুরুও ছিল অনেক কষ্ট ও সংগ্রামের।

কলেজের লেখাপড়া অনেক ব্যায়বহুল হওয়ায় তার এত নিছক টাকার অপচয় মনে হওয়ায় কলেজ ছেড়ে দেন।  কলেজ ছাড়ার কারণে তার সিট্ বাতিল হয়ে যায় , তাই তাই সারাদিন ঘোরাফেরা করতেন আর রাতে বন্ধুদের রুমের মেঝেতে ঘুমাতেন। পকেটে কোনো টাকা ছিল না , তাই কোকের বোতল কুড়িয়ে যে টাকা পেতেন তা দিয়ে খাবার কিনে খেতেন।  প্রতি রবিবার সাত মাইল হেঁটে ওই এলাকার

ভারতীয় হিন্দুদের হরে কৃষ্ণ মন্দিরে যেতেন।  মন্দিরে দেওয়া রবিবারে ফ্রিতে ভালো প্রসাদ খেতে।  যেহেতু সারাদিন ঘোরাঘুরি করে কাটান , ক্যাম্পাসের দেওয়ালে ক্যালিগ্রাফি দেখে , শিকার জন্য ভর্তি হন ক্যালিগ্রাফি কোর্স “চা র্স লুহলো” তে।  পরবর্তীতে তিনি বলেছিলেন , “যদি আমি ওই কোর্সে না যেতাম তবে ম্যাকের কখনোই বিভিন্ন টাইপফেস বা সামঞ্জস্যপূর্ণ ফন্টগুলো থাকতো না।”

এপলের আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ উজনাইক এর সাথে তার পরিচয় হয় ১৯৭১ সালে।  তিনিও স্টিভ জবসের মতো ইলেকট্রনিকসের নানা জিনিস ও কাজ ভালোবাসতেন। এবং তারা একসাথে নানা জিনিস তৈরী করেছিলেন , কিন্তু তা দিয়ে পেতে খাবার জুলছিল না , তাই Atari কোম্পানিতে ঘণ্টায় 5 ডলারে টেকনিশিয়ানের চাকরি নেন স্টিভ জবস।

স্টিভ জবসের ভারতে ভ্রমণ

কিন্তু লেখাপড়ার মতো চাকরির গন্ডির জীবন তার কাছে ভালো লাগছিলো না , চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন ভারতে।  লক্ষ্য ছিল অত্যাধিক জীবন গ্রহণ করবেন। ১৯৭৪ এর মাঝামাঝি সময় জবস ভারত আসেন সাথে ছিল রিড কলেজের বন্ধু ড্যানিয়েল কোটক।নিম কারোলি বাবার সাথে সাক্ষাত্‍ করার জন্য জবস তার কৈঞ্চি আশ্রমে যান  কিন্তু  নিম কারোলি বাবা ১৯৭৩ মারা গিয়েছিলেন, তাই তার আশ্রম ছিল শুন্য।  এরপর তারা চলে যান হরিয়াখান বাবার আশ্রমে। প্রায় পুরো উত্তর ভারত বসে করে ভ্রমণ করেন , বিভিন্ন আশ্রমে। দিল্লি থেকে উত্তর প্রদেশ, সেখান থেকে ফিরে হিমাচল প্রদেশ এরপর পুনরায় দিল্লি ফিরে আসেন। এখানেই তিনি বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নেন, ৭ মাস ভারতে থেকে আবার আমেরিকাতে ফিরে যান।

স্টিভ জবস এর সফলতার গল্প

ভারত থেকে ফিরে স্টিভ জবসের যেন পুর্নজনম হয় , এরপর গল্পটা সফলতার। চলুন দেখে নেই তার সেই রোমাঞ্চকর জার্নির স্মরণীয় কিছু অধ্যায়ের।

Steve Jobs (টিভ জবসে), Steve Wozniak and the road to Apple I computers
Steve Jobs (টিভ জবস), Steve Wozniak and the road to Apple I computers

স্টিভ জবসের অ্যাপল প্রতিষ্ঠা

অবশেষে ১৯৭৬ সালে পুরোনো বন্ধু ওজনিয়াকের সাথে একটি গ্যারেজ ভাড়া নিয়ে এ্যাপল কোম্পনি শুরু করেন।  ওজনিয়াক একজন অসম্ভব মেধাবী প্রকৌশলী , গ্যারেজ থেকেই বানিয়ে ফেলেন একটা কম্পিউটার , সেই যুগে কম্পিউটার মানেই ছিল বিশাল রুম ভর্তি যন্ত্রের সমাহার , কিন্তু তাদের কম্পিউটারটি একটা ডেস্ক বা টেবিলেই এতে এঁটে জেট।  পরে তারা এর নাম দেন APPLE 1। তাদের কম্পিউটারটি খুব দ্রুতই বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে , তাই পরের বছর আরো উন্নত ভার্সন APPLE II তৈরী করেন তারা।

মাত্র ২০ বছরে ১৩০০ ডলার দিয়ে শুরু করা কোম্পানি দিয়ে মাত্র ২৫ বছরেই স্টিভ জবস ২৫০ মিলিয়ন ডলারের মালিক হন। আর  অ্যাপল এখন থ্রী ট্রিলিয়ন ডলারের  বিশাল এক প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে চার হাজারেরও বেশি মানুষ কাজ করে!

স্টিভ জবসের অ্যাপল থেকে বহিস্কার

আমরা যে কম্পিউটারের মাউস বেবহার করি ও বর্তম গ্রাফিকাল ইন্টারফেস দিয়ে কম্পিউটার চলি এই দুই প্রযুক্তির শুরু হয়েছিল ১৯৮১ সালে স্টিভ জবসের হাত ধরে।

এপল দিন দিন অনেক বড় কোম্পানি হয়ে উঠছিলো , বাড়তে থাকে শেয়ার হোল্ডারদের সংখ্যা।  এরই মধ্যে তারা নিয়ে আসে ” ম্যাকিন্টশ কম্পিউটার“।  কিন্তু বেশিরভাগ আইবিএম ব্যাবহারকারী এই নতুন যুগান্তকারী কম্পিউটারের সাথে অভস্থ হতে পারছিলো , আর বিভিন্ন কারণে কোম্পানির ব্যবসা খারাপ হতে থাকে।  সেইসময় কিছু কর্মচারী তাকে বদমেজাজি বলে অপবাদ দেন ও অন্নান্য অংশীদাররা একজোট হয়ে তার বিরুদ্ধে অভভুথানের চেষ্টা করেন।

যে জন স্কালীকে অ্যাপলের প্রধান নিবাহী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য  পেপসি কোলা থেকে এনেছিলেন, তিনি  স্কালীকে জিজ্ঞাসা করেন,

তুমি কি তোমার জীবনের বাকিটা সময় চিনির পানীয় বিক্রয় করে কাটাতে চাও, নাকি আমার সাথে এসে বিশ্বকে বদলে দিতে চাও?

সেই স্কালীর মাধ্যমেই অ্যাপলের পরিচালনা পরিষদ জবসকে জবসকে ম্যাকিন্টশ বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন।  এই ধাক্কা নিতে পারেননি তিনি ধীরে ধীরে  নিজের অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দেন , শেষে সিদ্ধান্ত নেন যে অ্যাপলের ছেড়ে তৎকালীন রাশিয়াতে নতুন কম্পিউটার কোম্পানি খুলবেন।   এভাবেই অ্যাপলে স্টিভের প্রথম অধ্যায় শেষ হয়।

 স্টিভ জবসের নেক্সট ইনকর্পোরেটেড (NeXt Inc) প্রতিষ্ঠা

অ্যপল থেকে বের হয়ে এসে ৭ মিলিয়ন ডলারে শুরু করেন নতুন পাসনাল কম্পিউটার কোম্পানি ,  নেক্সট ইনকর্পোরেটেড।  যার যুগান্তরকারী পণ্য ছিল নেক্সট কম্পিউটার।  কিন্তু শুরুতে তিনি আর্থিক সংকটে পড়েন , তাই সেই সময়ের বিখ্যাত বিনিয়োকারী প্রতিষ্ঠানের সাহায্য চান।  তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন  রস পেরটের, যিনি তার এই কোম্পানিতে অনেক টাকার বিনিয়োগ করেন।  ১৯৯০ সালে বাজারে আশা নেক্সট ওয়ার্কস্টেশন কম্পিউটার তার প্রাক্তন কোম্পানি অ্যপল এর লিসার সাথে পেরে উঠছিলো না।  তাই , আবার তিনি এর দ্বিতীয় সংস্করণ নেক্সটকিউবও  নামে একইবছর নিয়ে আসেন।  এটিকে তিনি বিশ্বের প্রথম “ইন্টারপার্সোনাল ” কম্পিউটার বলেন।  এর ফিচারগুলো ছিল নজরকারা।  এঁটে ইমেইলের সাথে প্রথমবারের মত ভয়েস, স্থিরচিত্র, গ্রাফিক্স এবং ভিডিও চিত্র  পাঠানো যেত।

তার ভাষায়

 “ইন্টারপার্সোনাল কম্পিউটার মানুষের যোগাযোগ এবং দলীয় কাজকর্মে বিপ্লব বয়ে আনবে।”

এবং আসলেই এটা বিপ্লব বয়ে এনেছিলি , সাথে ছিল প্রচুর অর্থ।  ১৯৯৪ সালে  নেক্সট ইনকর্পোরেটেড কোম্পানি থেকে ১.০৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মুনাফা ঘোষণা দেন। ১৯৯৬ সালে এই কোম্পানি আরেক যুগান্তকারী সফটওয়্যার  ওয়েবঅবজক্টস তৈরী করে, যা পরবর্তীতে  অ্যাপল স্টোর,মোবাইলমি সেবা, এবং আইটিউনস স্টোর বানাতে ব্যবহার হয়।

Why Pixar Would Not Exist Without Steve Jobs, The Surprising Relationship - Hollywood Insider
Why Pixar Would Not Exist Without Steve Jobs, The Surprising Relationship pic: Hollywood Insider

 স্টিভ জবসের  পিক্সার প্রতিষ্ঠা

স্টিভ জবসের নেক্সট ইনকর্পোরেটেড শুরুর পরের বছরেই জবস লুকাস ফিল্মের গ্রাফিক্স বিভাগ হতে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে গ্রাফিক্স সেকশনটি কিনে নেন।  পরবর্তীতে যার নাম দেন “পিক্সার”।  তার এই পিক্সার থেকেই ডিজনির সাথে ১৯৯৫ সালে পৃথিবীর প্রথম এনিমেশন চলচিত্র  টয় স্টোরি মুক্তি পায়।  টয় স্টোরি তে তিনি নির্বাহী প্রযোজক হিসাবে কাজ করেন।  তার এই নতুন প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক সফলতা ও সুনাম বয়ে আনে।

পিক্সার ও ডিজনির যৌথ উদ্যোগে কিছু বক্স-অফিস হিট চলচ্চিত্র হল:

  •  এ বাগ’স লাইফ (১৯৯৮);
  • টয় স্টোরি ২ (১৯৯৯);
  • মন্সটার্স, ইনক. (২০০১);
  • ফাইন্ডিং নেমো (২০০৩);
  • দ্য ইনক্রেডিবলস (২০০৪);
  • কার্স (২০০৬);
  • র‌্যাটাটুই (২০০৭);
  • ওয়াল-ই (২০০৮);
  • আপ (২০০৯);
  • টয় স্টোরি ৩ (২০১০)।

ফাইন্ডিং নেমো, দ্য ইনক্রেডিবলস, র‌্যাটাটুই, ওয়াল-ই, আপ এবং টয় স্টোরি ৩ এই সিনেমাগুলি বিখ্যাত একাডেমী পুরস্কার পেয়েছে  অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র হিসেবে।

২০০৬ সালে ডিজনি জবসের পিক্সারকে কিনে নেয় , ফলে অল-স্টক লেনদেনের মাধ্যমে  দ্য ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির সবচেয়ে বড় শেয়ার হোল্ডারে পরিণত হন।  যা কিনা  ডিজনি পরিবারের সদস্য রয় ই. ডিজনির শেয়ারের থেকেও বেশি ছিল।

স্টিভ জবসের অ্যাপলে ফিরে আসা

স্টিভ যেসব তার নতুন দুই কোম্পানি নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেও অ্যাপল দিন দিন বাজার থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করেছিল।  তাই , অ্যাপলে এর নির্বাহীরা স্টিভ জবসের নেক্সটকে কেনার সিদ্ধান্ত নেন।  ফলস্বরূপ ১৯৯৬ সালে, অ্যাপল নেক্সটকে ৪২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয়।এর মাধ্যমে স্টিভ জবসের নিজের তৈরী কোম্পানিতে আবার প্রত্যাবর্তন হয়।  ফিরেই জবস , অ্যাপল কে আবার লাভজনক করতে কিছু যুগান্তকারি উদ্যোগ নেন:

  • “আইম্যাক” ডেক্সটপের কম্পিউটার বাজারে আনেন
  • মার্কেটিং ও বিপণন পলিসি উন্নত করেন
  •  প্রধান নির্বাহী গিল আমেলিওকে সরিয়ে দেন
  •  “অন্তবর্তীকালীন”  থেকে অ্যাপলের স্থায়ী প্রধান নির্বাহীতে হন
  •  জবস নিউটন, সাইবারডগ এবং ওপেনডকের মত অলাভজনক প্রজেক্ট বন্ধ করে দেন
  • প্রযুক্তি দুনিয়া কাঁপিয়ে দেওয়া বহনযোগ্য মিউজিক প্লেয়ার আইপড, আইটিউনস ডিজিটাল মিউজিক সফটওয়ার এবং আইটিউনস স্টোর চালু  করেন
  • ২০০৭ সালে বাজারে যুগান্তকারী আইফোন নিয়ে আসেন

শারীরিক সমস্যার কারণে তিনি আবার ২০১১ সালে অ্যাপল এর প্রধান নির্বাহী বা SEO পদ থেকে পদত্যাগ করেন।  এর ফলে তাৎক্ষণিক বাজারে অ্যাপল এর শেয়ারের 5% দরপতন ঘটে।  যদিও তিনি তখন অব্দি কোম্পানির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বহাল ছিলেন।

স্টিভ জবস এর বই ও মুভি

তিনি নিজে কোন বই লিখেন নি বা মুভি করেন নি।  কিন্তু তাকে নিয়ে অনেক বই ও মুভি আছে।

স্টিভ জবস কে নিয়ে লেখা বই বই

  • স্টিভ জবস, ওয়াল্টার আইজাকসন
  • আইস্টেভ: স্টিভ জবস তাঁর নিজের ভাষায়, জর্জ বিহাম
  • Becoming Steve Jobs, ব্রেন্ট শ্লেন্ডার ও রিক টেটজেলি
  • স্টিভ জবস ও দর্শন: ভিন্নভাবে চিন্তা করার জন্য, সম্পাদনা করেছেন শ্যান ই. ক্লেইন
  • Creativity, Inc.: Overcoming the Unseen Forces That Stand in the Way of True Inspiration by Edwin Catmull of Pixar
  • Steve Jobs: The man who thought different by Karen Blumenthal

স্টিভ জবস কে নিয়ে চলচ্চিত্র

স্টিভ জবসের পুরস্কার সম্মাননা

স্টিভ জবস তার কর্মজীবনে অনেকগুলি পুরস্কার এবং সম্মাননা পেয়েছিলেন, যার মধ্যে অন্যতম:

  • ১৯৮৪: এআইআইএ অ্যাওয়ার্ড, বর্ষসেরা কম্পিউটার ম্যাকিনটোশের জন্য
  • ১৯৮৫: টেকনিকাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স
  • ১৯৮৫: টাইম ম্যাগাজিনের ব্যক্তিত্ব
  • ১৯৮৮: আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাকাডেমির সদস্য
  • ১৯৯৭: এআইআইএ অ্যাওয়ার্ড, বর্ষসেরা প্রোডাক্ট, আইম্যাকের জন্য
  • ২০০২: ডব্লিউএনপি অ্যাওয়ার্ড
  • ২০০৪: ফোর্বস ম্যাগাজিনের শক্তিশালী ব্যক্তি
  • ২০০৭: ইউরোমনি অ্যাওয়ার্ড, বিশ্বের সেরা উদ্যোক্তা
  • ২০০৯: আইইইই অ্যাওয়ার্ড,  প্রকৌশলীদের জন্য

স্টিভ জবস এর সকল তথ্য

বিষয় তথ্য
পূর্ণ নাম স্টিভেন পল জবস
জন্ম ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৫, স্যান ফ্রান্সিসকো, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
পিতা-মাতা পিতা: আব্দুলফাত্তাহ জান্দালি, মা: জোয়ান শিবল (পরে জোয়ান সিম্পসন)
স্ত্রী লিউনি পাওয়েল জবস
সন্তান রীড  জবস  ( ১৯৯১), এরিন  জবস  (১৯৯৫), এভ জবস  (১৯৯৮)
দত্তক পিতা-মা পল এবং ক্লারা জবস
রক্তের বোন মোনা সিম্পসন
উচ্চ বিদ্যালয় হোমস্টেড হাই স্কুল, কুপারটিনো, ক্যালিফোর্নিয়া
কলেজ রিড কলেজ, পোর্টল্যান্ড, অরিগন (ড্রপ আউট)
এপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ১৯৭৬, স্টিভ ওজনিয়াক এবং রোনাল্ড ওয়েন সহ
অন্যান্য উদ্যোগ নেক্সট কম্পিউটার, পিকসার অ্যানিমেশন স্টুডিও
পেশা উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক , শিল্পকর
সম্পত্তি মৃত্যুর সময়ে আনুমিত মৌলিক মূল্য: ১০.২ বিলিয়ন (২০১১)
প্রধান সাফল্য – এপল এবং ম্যাকিন্টোশ কম্পিউটারের উন্নতি  . আইফোন, আইপ্যাড এবং আইপডের পরিচয় ।।পিকসারের সম্পাদনা এবং Toy Story বানানো
সেবামূলক প্রতিষ্ঠান দি স্টিভেন  পি. জবস  ফাউন্ডেশন
মৃত্যু ৫ অক্টোবর, ২০১১, পালো আল্টো, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

স্টিভ জবস এর উক্তি

তিনি খুব ভালো বক্তা ছিলেন , তার কিছু বিখ্যাত বাণী আছে যা , তরুণদের মাঝে অনেক জনপ্রিয়:

”ব্যবসায় চমৎকার জিনিসগুলো কখনোই একজন একক ব্যক্তি করেন না। মানুষজন দলবদ্ধভাবে সেগুলো করেন।”- স্টিভ জবস

”উদ্ভাবনই একজন নেতা ও একজন অনুসরণকারীর মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে দেয়।”– স্টিভ জবস

”একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে ফোকাস করে পণ্যের ডিজাইন করা সত্যিই কঠিন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না তারা কী চান যতক্ষণ না তাদের সামনে একটি পণ্য হাজির করা হয়।“ – স্টিভ জবস

“ আমার কাছে কম্পিউটার হচ্ছে এমন একটি অসাধারণ টুল যা আমরাই তৈরি করেছি। এটা মনের বাইসেকেলের সমতূল্য বললেও ভুল হবে না। ” – স্টিভ জবস

”কখনো কখনো জীবন আপনার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করবে। তখন বিশ্বাস হারাবেন না।”– স্টিভ জবস

’আপনার সময় সীমিত, সুতরাং অন্য কারো জীবন যাপন না করে বরং নিজের জীবনটাই যাপন করুন।“ – স্টিভ জবস

”বিশ্বের সেরা ধনী হওয়া আমার কাছে মুখ্য বিষয় নয়, …বরঞ্চ রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় নিজেকে যেন বলতে পারি যে, হ্যাঁ সত্যিই আমি দারুণ কিছু করেছি।“ – স্টিভ জবস

”মানুষের সঙ্গে সহজ ব্যবহার করা আমার কাজ নয়। আমার কাজ হচ্ছে, মানুষকে দিয়ে আরও ভাল কিছু করানো।”– স্টিভ জবস

”এই মুহূর্তে আপনিই হলেন নতুন। কিন্তু সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন আপনি বুড়িয়ে যাবেন এবং দূরে সাফ হয়ে যাবেন। খুক বেশি নাটকীয়তার জন্য দু:খিত, কিন্তু এটা পুরোপুরি সত্য।“ – স্টিভ জবস

”আমি অনেক কিছুই না কিনে বসে থাকি, কারণ আমার কাছে সেগুলো হাস্যকর মনে হয়েছে।” – স্টিভ জবস

”সক্রেটিসের সঙ্গে একটি সন্ধ্যা কাটানোর জন্য আমি আমার সব প্রযুক্তি দিয়ে দিতে রাজি।” – স্টিভ জবস

”যে লোকেরা ভাবতে পারে যে তারা পৃথিবী বদলে দিতে পারে, তারা সেটাই করে দেখায়।“ – স্টিভ জবস

”আমি মনে করি মৃত্যু হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে অসাধারণ উদ্ভাবন। এটি জীবন থেকে পুরোনো ও সেকেলে জিনিস মুক্ত করে।“ – স্টিভ জবস

স্টিভ জবস এর শেষ কথা | Connecting the Dots, Love and Loss, and Death

কখনও বিশ্বিদ্যলয়ের দরজায় পা না দেওয়া , স্টিভ জবসের ২০০৫ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের “কানেকটিং দা ডট” শিরোনামে দেওয়া বক্তব্যটিকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা বক্তব্যের অন্যতম বলে বিবেচনা করা হয়।

বক্তব্যর প্রথম অংশে তিনি, তার নিজের দিবনের সংগ্রামের দিনের গল্পগুলি বলেন।

দ্বিতীয় অংশে,   তার বৌ পাওয়েলের সাথে তার দেখা ও প্রণয়ের কাহিনী শেয়ার করেন।

তৃতীয় অংশে, তিনি তার জীবন দর্শন ও ক্যান্সারের দিনগুলি মৃত্যুর চিন্তা কিভাবে তার জীবনকে প্রভাবিত করেছে তা নিয়ে বলেন।

স্টিভ জবস এর মৃত্যু

স্টিভ জবস অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর, মাত্র ৫৬ বছর বয়সে, ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আল্টোতে তার নিজ বাড়িতে  মৃত্যু বোরন করেন।

স্টিভ জবস কে নিয়ে কিছু প্রশ্ন -উত্তর | FAQ on Steve Jobs

স্টিভ জবস এর ধর্ম

স্টিভ জবস নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ হিসাবে পরিচয় দিতেন।  তার জন্মদায়ী মা খ্রিস্টান ও বাবা মুসলিম ছিলেন এবং পালিত মা-বা ক্যাথলিক খ্রিস্টান ছিলেন।  যদিও তাকে কখনো ক্রিস্টেন ধর্ম চর্চা করতে দেখা যায় নি।

জবসের একজন বন্ধু এবং সহকর্মী, জন স্কুলি, বলেছেন যে জবস “ধর্মের ধারণা” বিশ্বাস করতেন, কিন্তু তিনি “কোন ধর্মের মধ্যে ছিলেন না”।

তাই, জবসের ধর্মীয় বিশ্বাস বিতর্কিত। কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে তিনি একজন প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ ব্যাক্তি ছিলেন, অন্যরাদের বিস্বাস,  তিনি গোপ গোপনে বৌদ্ধ চর্চা করতেন। কেননা তিনি ভারত এসে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন।  এবং তার জীবনের বিভিন্ন সময় বৌদ্ধ ধর্ম দর্শনের প্রভাব দেখা গিয়েছে।  যেহেতু বৌদ্ধ ধর্মে কোন ঈশ্বরের ধারণা নেই এবং  তিনি প্রায়ই বৌদ্ধ মন্দিরে যেতেন। কিন্তু এক সাক্ষাৎকারে, জবস নিজেই বলেছিলেন যে তিনি “কোন ধর্মের অনুসারী নন কিন্তু  ধর্ম সম্পর্কে অনেক কিছু পড়েছেন”।

আইফোন কে তৈরি করেন?

আইফোন তৈরি করে অ্যাপল কোম্পানি তবে, স্টিভ জবস ছিলেন আইফোনের ধারণা এবং উদ্ভবনের  পিছনে প্রধান নায়ক।

আইফোনের তৈরী ছিল একটি দকগত কাজ তাই এর একক কৃতিত্ব কাউকে দেওয়া যাবে না।  তবে, স্টিভ জবসের নেতৃত্বে, অ্যাপলের প্রকৌশলী ও ডিজাইনার আইফোন তৈরী করেন।

আইফোনের প্রথম ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে লঞ্চ হয়েছিল।যা  স্মার্টফোন শিল্পে একটি নতুন যুগের সূচনা করে।

আইফোনের তৈরিতে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি:

  • স্টিভ জবস, অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
  • অ্যাডাম ইভ ও জোনাথন আইভ, আইফোনের প্রধান ডিজাইনার
  • স্টিভ সান্ডার্স ও ক্রিস ওয়াইট, অ্যাপলের প্রধান প্রকৌশলী

এপেল কোম্পানির মালিক কে

অ্যাপল কোম্পানির মালিক হল অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড। এটি একটি পাবলিক কোম্পানি, অর্থাৎ যারা উন্মুক্ত শেয়ার বিক্রি করে। অ্যাপলের শেয়ারগুলি নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে (NYSE) NASDAQ: AAPL নামে তালিকাভুক্ত।

অ্যাপলের শেয়ারগুলির মালিক হলেন বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং বিনিয়োগকারীরা। অ্যাপলের বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার হল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি ভ্যারিসেটাস ক্যাপিটাল, যার কাছে অ্যাপলের মোট শেয়ারের প্রায় 7% রয়েছে। অ্যাপলের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে রয়েছে:

  • কার্লিল গ্রুপ (6.8%)
  • ব্লুবার্ড ক্যাপিটাল (5.8%)
  • ব্ল্যাকরক (5.3%)
  • ভ্যানগার্ড গ্রুপ  (5.2%)
  • স্টেট  স্ট্রিট  কর্পোরেশন  (4.6%)

অ্যাপলের শেয়ারগুলির মূল্য 2023 সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় 140 ডলা।

অ্যাপল ইনকর্পোরেটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) টিম কুক। তিনি 2011 সালে স্টিভ জবসের মৃত্যুর পর থেকে এই পদে রয়েছেন।

তাই ,অ্যাপলের এর কোনো একক বা ব্যাক্তি মালিকানা নেই।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে, আরও লেখা পড়ুনঃ

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents