Dreamy Media BD

৬ দফা আন্দোলন – বাঙালি মুক্তির সনদ

৬ দফা আন্দোলন

দীর্ঘদিন ব্রিটিশদের রাজত্ব ও শাসন শেষে ভারতীয় উপমহাদেশে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। শুধুমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রায় ১২০০ মাইল দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব বাংলাকে একীভূত করে পাকিস্তান নামে এই রাষ্ট্রের উত্থান হয়। পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানের প্রদেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার পর ১৯৫৬ সালের সংবিধানে এর নাম দেওয়া হয় পূর্ব পাকিস্তান। 

পূর্ব পাকিস্তান জনসংখ্যায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় পাকিস্তানের মোট রপ্তানি আয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ রপ্তানি হতো পূর্ব পাকিস্তান থেকে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সুবিধা পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় নগন্য ছিল। এভাবেই আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে বছরের পর বছর পূর্ব পাকিস্তান ক্রমাগত বৈষম্যের শিকার হতে থাকে। ফলে অচিরেই পূর্ব পাকিস্তান গুরুতর অর্থনৈতিক দৈন্যের সম্মুখীন হয় এবং এরই ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হয় ছয় দফা আন্দোলন।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছয় দফা আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বলা হয়ে থাকে, বাংলার মাটিকে চিরতরে স্বাধীন করার বীজ বপন করা হয়েছিলো ১৯৬৬ সালের এই ছয় দফার দাবির মধ্যে দিয়ে।

৬ দফা আন্দোলনের পটভূমি

১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সৃষ্ট হওয়া যুদ্ধের সময় পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ছিল সম্পূর্ণ অরক্ষিত। অথচ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই অঞ্চলের অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের সুরক্ষার কোনো গুরুত্বই ছিল না। কিছুটা ভারতের দয়ার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল পূর্ব বাংলাকে, যেন ভারত দয়া করলে বেঁচে যাবে পূর্ব বাংলার জনগন। নইলে ভারত যদি সে সময় পূর্ববঙ্গে আক্রমণ চালাতো, তাহলে ১ হাজার ২০০ মাইল দূরত্ব থেকে পশ্চিম পাকিস্তান কোনোভাবেই এই বাংলাকে রক্ষা করতে পারত না।

অন্যদিকে তখনকার যুদ্ধের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈনিকেরা সাহসের সঙ্গে ভারতের সামরিক আক্রমণের মোকাবিলা না করলে ভারত, পাকিস্তানের লাহোর পর্যন্ত দখল করে নিতো।

এদিকে পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সুবিধায় কোনো ভারসাম্যই ছিলো না। বাংলার মাটিতে ফলা বিভিন্ন সোনার ফসল, সোনালী আঁশ পাট থেকে শুরু করে যা কিছু রপ্তানী হতো, সবকিছুরই দখলদারিত্ব নিতো পশ্চিম পাকিস্তান। ক্রমানয়ে ভেঙে পড়া পূর্ব পাকিস্তানের এই অর্থনৈতিক নাজুক অবস্থা মেনে নিতে পারেননি দেশের জনগন।

তাই ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বাংলার বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি পেশ করেন। এই ৬ দফা দাবি পেশ করার অন্যতম লক্ষ্য ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং পশ্চিম পাকিস্তানের এ পরিকল্পিত শোষণের হাত থেকে বাঙ্গালীর চির মুক্তি। 

৬ দফা আন্দোলনের ইতিহাস

ছয় দফা আন্দোলনের ইতিহাস কিন্তু রাতারাতি রচিত হয়নি মানে এটা তাৎক্ষনিক কোন কর্মসূচী ছিল না। এর প্রস্তুতি ছিল দীর্ঘদিনের, প্রায় ২৬ বছরে আগে থেকে। ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব, ১৯৪৭ এর ভারত ভাগ, আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম, ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনের যুক্তফ্রন্টের বিজয়, এরপর ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন ইত্যাদি এসব গুরুত্বপূর্ন রাজনৈতিক কার্যকলাপই ছিলো ৬ দফা আন্দোলনের ভিত্তি। 

১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ভারতের ১৭ দিনের যুদ্ধের পর তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় তাসখন্দে তৈরি হওয়া চুক্তি নিয়ে ১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে পাকিস্তানের বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদদের অংশগ্রহনে যে জাতীয় সম্মেলন হয়, তাতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমেদকে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধু অংশগ্রহন করেন। সম্মেলনের বিষয় নির্ধারণী কমিটির সভায় বঙ্গবন্ধু ছয় দফা পেশ করেন, যদিও এই সম্মেলনে ৬ দফা দাবি অগৃহীতই থেকে যায়।

ঐদিনই পাকিস্তানের নামকরা এক পত্রিকায় শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হিসেবে চিহ্নিত করে একটি লেখা প্রকাশিত হয়। ফলে শেখ মুজিব নিজেই ৬ ফেব্রুয়ারির সম্মেলন বর্জন করেন এবং দেশে ফিরে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সামনে ৬ দফা দাবি পেশ করেন। 

পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের কমিটির সভায় ৬ দফা প্রস্তাব এবং দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি পেশ করেন। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান বিরোধীদলীয় সম্মেলনে ৬ দফা পেশ করেন। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আমাদের বাঁচার দাবি: ৬ দফা কর্মসূচি শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রচার করা হয়। 

২৩ মার্চ লাহোর প্রস্তাবের সঙ্গে মিল রেখে আনুষ্ঠানিকভাবে ৬ দফা উত্থাপন করা হয়। ৬ দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেল রাষ্ট্র। ৬ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে এই ফেডারেল রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসন দিতে হবে। 

Sheikh Mujibur Rahman Announcing 6 Points At Lahore
image source: wikipedia.com

৬ দফার দাবিসমূহ

দাবি ১ : শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি

৬ দফা দাবির প্রথম দাবির মূলকথা ছিলো, লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেশনে পরিণত করতে হবে। এই ফেডারেশনের মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকার থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে।

দাবি ২ : কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা

২য় দাবিতে উল্লেখ ছিলো, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা কেবল মাত্র দু’টি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ক্ষেত্র দুটি হচ্ছে, দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। বাকি বিষয়গুলো অঙ্গ রাজ্যগুলিতে ন্যস্ত করতে হবে।

দাবি ৩ : মুদ্রা ও অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা

মুদ্রার ব্যাপারে এই দাবিতে নিচে উল্লেখিত ২ টির যে কোন একটি প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে।

১। সমগ্র দেশের জন্যে দু’টি পৃথক, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে। 

অথবা,

২। সমগ্র দেশের জন্যে কেবল মাত্র একটি মুদ্রাই চালু থাকতে পারে। 

তবে এক্ষেত্রে শাসনতন্ত্রে এমন একটি ফলপ্রসূ ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচারের পথ বন্ধ হয়ে যায় এবং এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভ ও পৃথক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি গ্রহণ করতে হবে।

দাবি ৪ : রাজস্ব, কর, বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা

এই দাবিতে উল্লেখ থাকে, ফেডারেশনের অঙ্গ রাষ্ট্রগুলোর ট্যাক্স বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনরকম ট্যাক্স নির্ধারনের ক্ষমতা থাকবে না। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় পরিচালনার জন্য অঙ্গ-রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর সব রকমের ট্যাক্সের শতকরা একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে।

দাবি ৫ : বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা

     এই দাবিতে কতগুলো শর্ত উল্লেখ করা থাকে। সেগুলো হচ্ছে, 

  • ফেডারেশনভুক্ত প্রতিটি রাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে।
  • বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলোর এখতিয়ারাধীন থাকবে।
  • কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত কোন হারে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোই মিটাবে।
  • অঙ্গ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা করজাতীয় কোন রকম বাধা-নিষেধ থাকবে না।
  • শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলোকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ এবং স্ব-স্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে।

দাবি ৬ : আঞ্চলিক বাহিনী গঠনের ক্ষমতা

সর্বশেষ দাবিতে, আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলোকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীন আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে- এমনটাই উল্লেখ থাকে।

ছয় দফার প্রতি জনসমর্থন

পশ্চিম পাকিস্তানের নির্যাতন-নিপীড়নের পটভূমিতে যখন ছয় দফা দাবি পেশ করা হয়, তখন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এর প্রতি জনসমর্থন বৃদ্ধি পেতে থাকে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো দাবির পক্ষে এত অল্প সময়ে জনসমর্থন পাওয়া খুবই বিরল। এর পেছনে অবশ্য পুরোটাই অবদান শেখ মুজিবের। 

এসময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সমগ্র পূর্ব বাংলার নানান জায়গায় সফর শুরু করেন। এমনকি তিনি যে জেলায় বা অঞ্চলে জনসভা করতেন, সেখানেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হতো এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হতো। তিনি জামিন পেয়ে আবার অন্য জেলায় সভা করতেন। এভাবে মাত্র দুই মাসের মধ্যে পরপর তিনি আটবার গ্রেপ্তার হন।  পরবর্তীতে তার সঙ্গে তার দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা শুরু হয়। সমগ্র বাংলাদেশ থেকে ছাত্রনেতা, শ্রমিকনেতাসহ অগণিত নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করে মামলা দায়ের করা হয়।

১৯৬৬ সালের ১৩ মে আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ দিবস পালন উপলক্ষে জনসভা করে এবং ৭ জুন পুরো দেশব্যাপী হরতাল ডাকা হয়। 

পাকিস্তানি শাসকদের দমন ও পীড়ন এবং গ্রেপ্তার সমানতালে বাড়তে থাকে সাথে এর প্রতিবাদে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ঐক্যবদ্ধতাও বাড়তে থাকে। সময়ের সাথে এভাবেই ছয় দফা আন্দোলনের সঙ্গে পূর্ব বাংলার সর্বস্তরের মানুষ, সর্ব পেশার মানুষ যেমন রিক্সাওয়ালা, কলকারখানার শ্রমিক, বাস-ট্রাক-বেবি ট্যাক্সিচালক, ভ্যানচালক, খুদে দোকানদার, মুটে-মজুর, দিনমজুরসবাই একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন। 

ছয় দফার প্রতি জনসমর্থন
ছয় দফার প্রতি জনসমর্থন

৬ দফা আন্দোলন বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ

৬ দফা আন্দোলন যেন সমগ্র বাঙালির স্বাধীনতার চেতনামূলে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলো। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পুরো দাবি বা আন্দোলনের কোথাও প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার কথা বলা হয়নি। তবে ৬ দফা দাবির প্রত্যেকটি দাবিই যেন স্বাধীনতার সংকেত দেয়। এর প্রতিটি দাবিই যেন বাঙালিদের স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করে। কেননা, এই আন্দোলনের ভেতরে বাঙালি জাতীর মুক্তির বীজ নিহিত ছিল। এজন্যই ৬ দফা ছিল বাঙালির জাতীয় মুক্তির সনদ। বিশিষ্ট সাংবাদিক ওবায়দুল হক বলেন, ৬ দফা হলো স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রিম জন্মসনদ। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা চেতনায় এই আন্দোলন এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, একে ম্যাগনা কার্টা বা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদও বলা হয়।

৬ দফা আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

পূর্ব বাংলার স্বায়ত্ত্বশাসন দাবির প্রেক্ষিতে ছয় দফা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। ছয় দফা আন্দোলন শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করে বাঙালির তথা পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনে।

৬ দফা আন্দোলনের প্রধান তাতপর্যপূর্ন ভূমিকা হচ্ছে, বাঙ্গালির মনে বাঁচার দাবি এবং মুক্তির চেতনা ঢোকানো। বাঙালি জাতির ক্রান্তিকালে আপোসহীন নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ৬ দফা কর্মসূচিতে পূর্ব বাংলার জনগণের মুক্তির পথ উন্মোচন করেন।


এছাড়াও এই আন্দোলনের পর জাতীয়তাবাদের পূর্ণ বিকাশ ঘটে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র
নির্বিশেষে সকলেই ঐক্যমত হন। এর ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনা রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়।

এ আন্দোলন তৎকালীন সময়ে মানুষের মধ্যে অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করেছিলো। এটি ছয় দফার অন্যতম তাৎপর্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এই অধিকার সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে বাঙালিরা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে মুক্তির মুক্তির পথ খুঁজে পায়। এছাড়াও দীর্ঘদিন শাসক চক্রের শোষণের যাঁতাকলে পৃষ্ট পূর্ব বাংলার জনগণ ছয় দফার ভিত্তিতে অনেক আশা এবং আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।

 

১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ফলে ছয় দফা আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্র শুরু করে। এসময় আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা দায়ের করেন। এর প্রতিবাদে বাঙালিরা গণআন্দোলন গড়ে তোলে যা পরবর্তীতে ১৯৬৯ এর অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নেয়।

৬ দফার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পরিলক্ষিত হয় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তির আহবানে শেখ মুজিবের এক ডাকে বাংলার আপামর জনতা এক হয়েছিলো সশস্ত্র সংগ্রামে যোগ দিতে। এই অনুপ্রেরণার উৎস মূলত ছয় দফা দাবি। যেহেতু ৬ দফা আন্দোলন ছিল একটি গণমুখি আন্দোলন তাই এই ৬ দফা আদায়ের জন্য বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়।

পরিশিষ্ট

গণমানুষের প্রত্যাশা ও অভিব্যক্তির মূল্যায়ন ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনই রাজনৈতিক সাফল্যের সবচেয়ে বড় শক্তি। এটাই হচ্ছে ছয় দফা দাবির মূল শিক্ষা। তাইতো পাকিস্তানের মতো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠে নিজেদের দাবি জানাতে পেরেছিলো বাঙ্গালীরা, নিজের রক্ত দিয়ে ছিনিয়ে এনেছিলো স্বাধীনতা। 

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents