বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্য বেশ ভূমিকা পালন করে আসছে এই বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানসমূহ। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে খুলনা বিভাগের একটি জেলা হচ্ছে বাঘেরহাট। যার প্রাকৃতিক শোভায় সুশোভিত বাগেরহাট জেলায় রয়েছে বহু দৃষ্টিনন্দন স্থান।
বাগেরহাট জেলার দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে, একটি হলো প্রাচীন আমল থেকে এই জেলা জুড়ে রয়েছে বহু পৌরাণিক মসজিদ এবং এবং এলাকা জুড়ে বিভিন্ন নদ-নদীর প্রবাহ। তবে মসজিদগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ মসজিদই জেনারেল খান জাহান আলী কর্তৃক নির্মিত।
এছাড়াও বাগেরহাট জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে নানান নদ-নদী,নদীগুলো হলো:-গোসাইরখালী, পানগুচি,মংলা নদী, মধুমতি নদী, দারাটানা, হরিণঘাটা, বলেশ্বর, পশুর নদী ও বাংড়া। বাগেরহাটের আগেরকার নাম ছিল খলিফাবাদ। এই জেলার প্রধান দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে রয়েছে মসজিদগুলো।
তাছাড়াও আপনি প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে, নদীর সমূহের কূলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে পারেন। নদীর চরে হালকা পা ভিজিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটতে পারেন, আপনার মন একেবারে প্রশান্ত হয়ে যাবে। নদীর প্রতিটা ঢেউয়ের সাথে যেন মনে হয় একেকটা গানের সুর বেজে উঠছে।
আসুন বাগেরহাট জেলার কয়েকটা দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে আসি, যেমন:১.ষাট গম্বুজ মসজিদ। ২.মংলা বন্দর। ৩.খান জাহান আলীর মাজার, বাগেরহাট। ৪.কোদলা মঠ। ৫.ঘোড়া দিঘী। ৬.রনবিজয়পুর মসজিদ । ৭.জাদুঘর। ৮.খাঞ্জেলী দিঘী। ৯.চুনাখোলা মসজিদ। ১০.বিবি বেগনী মসজিদ। ১১.চন্দ্রমহল ইকো পার্ক।
১.ষাট গম্বুজ মসজিদ
বাগেরহাটের অদূরে ঘোড়া দিঘী নামক স্থানে অবস্থিত রয়েছে এই ষাট গম্বুজ মসজিদটি। যার দূরত্ব বাগেরহাট শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার। ১৫ শতাব্দীতে নির্মাণ করা হয়। ১৬০৫ বর্গফুট এলাকায় জুড়ে রয়েছে এই ষাট গম্বুজ মসজিদটি।
মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট লম্বা ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেওয়ালগুলো প্রায় ৮·৫ ফুট পুরু রয়েছে।
সুলতানি আমলে এই এলাকার গভর্নর খান জাহান আলী এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। সেই সময় সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল বাগেরহাট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ষাট গম্বুজ মসজিদটি সমগ্র এশিয়ার সবচাইতে অন্যতম সুন্দর মসজিদ গুলোর মধ্যে একটি।
মসজিদটিতে সর্বমোট ৭৭ টি গম্বুজ রয়েছে। যা ১১ টি করে ৭ সারিতে বিভক্ত এবং মসজিদের ৪ কোনায় ৪টি গম্বুজ রয়েছে। এগুলোর নকশা গোলাকার এবং এরা উপরের দিকে সরু হয়ে গেছে। এদের কার্নিশের কাছে বলয়াকার ব্যান্ড ও চূঁড়ায় গোলাকার গম্বুজ রয়েছে।
মিনার গুলোর উচ্চতা, ছাদের কার্নিশের চেয়ে বেশি। সামনের দুটি মিনারে প্যাঁচানো সিঁড়ি আছে,সেগুলোর মধ্যে দুইটি ব্যবহৃত হয় আযান দেওয়ার জন্য। এদের একটির নাম রওশন কোঠা এবং অপরটির নাম আন্ধার কোঠা। মসজিদের ভিতরের অংশ তুলনামূলকভাবে অন্ধকার।
মসজিদে ১১টি খিলানযুক্ত দরজা এবং ৭ টি জানালা রয়েছে। মসজিদের মোট গম্বুজ সংখ্যা ৭৭ টি হলেও তার মধ্যে ৬০ টি পাথরের স্তম্ভ রয়েছে, আর এ-থেকেই ষাট গম্বুজ নামটি এসেছে। মসজিদটির গায়ে কোন ধরনের শিলালিপি নেই।
লোকেশন | কিভাবে যাবেন |
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অদূরে ঘোড়া দিঘী নামক স্থানে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ ।যার দূরত্ব বাগেরহাট শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার। | দূুরুত্ব কম হওয়ায় বাগেরহাট জেলা থেকে সিএনজি বা অটো রিকশা করে যেতে পারবেন ষাট গম্বুজ মসজিদে। |
২.মোংলা বন্দর
মংলা বন্দর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমু্দ্র বন্দর। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত মংলা বন্দর টি। এটি খুলনা শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিনে অবস্থিত। ডিসেম্বরের এক তারিখ ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মংলা বন্দর।
মংলা বন্দরটি পণ্য খালাসের জন্য ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। মংলা বন্দরটিতে সর্বোচ্চ ২২৫ মিটার লম্বা জাহাজ প্রবেশ করতে পারে। মংলা বন্দরে প্রতিবছর প্রায় ৪০০ টি জাহাজ নোঙরের মাধ্যমে ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন পন্য আমদানি রপ্তানি করে থাকে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সুন্দরবনের হিরন পয়েন্টে একটি রেস্ট হাউজ নির্মাণ করেছে নাবিকদের থাকার কথা চিন্তা করে। এই বন্দরে পণ্য বোঝাই ও খালাসের জন্য ১১টি জেটি,৭টি শেড এবং ৮টি ওয়্যারহাউজ রয়েছে। মংলা বন্দরটি বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
অন্যান্য অভ্যন্তরীণ নদী বন্দর ও খুলনায় রেল টার্মিনালের সাথে সংযুক্ত রয়েছে মংলা বন্দরটি। ১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বর বিদেশি জাহাজের জন্য বন্দর উন্মুক্ত হলে জাহাজ নোঙ্গরের অধিক সুবিধার কথা ভেবে ১৯৫৪ সালে বন্দরটি মংলায় বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়।
নদীর গভীরে রয়েছে বারোটি ভাসমান নোঙ্গর স্থান। এই মংলা বন্দরে বেশিরভাগ জাহাজ আসে, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা থেকে তবে বিশ্বের প্রায় সকল বন্দরের সাথেই মংলা বন্দরের সংযোগ রয়েছে। বন্দরটি দেশের আমদানি রপ্তানির প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
এছাড়াও ভার, নেপাল, ভূটানকে মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এটি একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হবে। তাই এ বিষয়কে সামনে রেখে, বন্দরের আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে।
লোকেশন | কিভাবে যাবেন |
খুলনা শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত মংলা বন্দরটি। এটি বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার সেলাবুনিয়া মৌজায় পশুর নদী ও মোংলা নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত রয়েছে। | বাগেরহাট থেকে রূপসাগামী বাসে করে প্রথমে কাটাখালি বাস স্ট্যান্ডে আসবেন, সেখান থেকে মংলাগামী বাসে করে মংলা বন্দরে পৌঁছাতে পারবেন। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। |
৩.খান জাহান আলীর মাজার, বাগেরহাট
খান জাহান আলী ছিলেন একজন মুসলিম ধর্ম প্রচারক। তিনি বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার স্থানীয় শাসক ছিলেন। উনার অন্যান্য কয়েকটা নামও রয়েছে, উলুঘ খান,খান-ই-আজম ইত্যাদি। হযরত উলুঘ খানজাহান আলী ১৩৬৯ সালে দিল্লিতে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন।
তার পিতার নাম ছিল, আকবর খা এবং মাতার নাম আম্বিয়া বিবি। ধারণা করা হয়, খান জাহান আলীর পূর্বপুরুষগণ তুরস্কের অধিবাসী ছিলেন। খান জাহান আলী ১৩৮৯ সালে সেনাবাহিনীতে সেনাপতির পদে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।
খান জাহান আলীর প্রথম স্ত্রীর নাম সোনা বিবি।এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম রুপা বিবি বা বিবি বেগনি ধর্মান্তরিত মুসলমান ছিলেন। খানজাহান আলী উনার দুই স্ত্রীর নাম অনুসারে সোনা মসজিদ এবং বিবি বেগনি মসজিদ নামে মসজিদ নির্মাণ করেন।
খাঞ্জেলি দিঘীর উচ্চ পাড়ে এক উচ্চ ভূমিতে তার সমাধি সৌধটি নির্মিত করা হয়েছে। এর আয়তন প্রায় ৪২×৪২ ফুট এবং প্রাচীরের উচ্চতা ২৫ ফুট,এর ছাদে একটি আকর্ষণীয় গম্বুজ রয়েছে। সমাধি সৌধের ভিতরে একটি প্রস্তর নির্মিত বেদিতে হযরত খান জাহান আলীর মাজার শরীফ।
মৃত্যু তারিখ, দাফন তারিখ ছাড়াও আল্লাহর নাম,কোরআন শরীফের কয়েকটি সূরা। এবং তাঁর উপর আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক ইত্যাদি লেখা শিলালিপিতে লিপিবদ্ধ আছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন ধরনের মানুষ উনার মাজার শরিফ জিয়ারত করতে আসেন।
খান জাহান আলী মাজারের সমাধির দক্ষিণ পূর্বে আরও একটি ঐতিহাসিক নয় গম্বুজ মসজিদ অবস্থিত রয়েছে। মসজিদের ছাদে রয়েছে ৯টি অর্ধ বৃত্তাকার গম্বুজ। গম্বুজগুলোকে স্থায়িত্ব প্রদানের জন্য মসজিদের অভ্যন্তরে ৪টি বিশেষ স্তম্ভ রয়েছে।
নয় গম্বুজ মসজিদের কাছে রয়েছে আরও একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। নাম জিন্দাপীর এর মসজিদ ও মাজার। এটি বর্তমানে বাংলাদেশের প্রন্ততান্ত্রিক অধিদপ্তরের অধীনে সংরক্ষিত একটি নিদর্শন।
লোকেশন | কিভাবে যাবেন |
বাগেরহাট শহর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে খান জাহান আলীর মাজার শরীফ। এবং খুলনা থেকে ২২ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বদিকে অবস্থিত। | বাগেরহাট জেলা থেকে সিএনজি বা অটো রিকশা করে যেতে পারবেন খান জাহান আলীর মাজার শরীফে । লোকাল এ যাওয়ার থেকে রিজার্ভ করে যাওয়াটাই আপনার জন্য ভালো হবে। বাগেরহাট মহাসড়কে বাস থেকে নেমে ৫ মিনিট সময় লাগবে হেঁটে মাজারে যেতে। |
৪.কোদলা মঠ
কোদলা মঠটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থল ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে অযোধ্যা গ্রামে অবস্থিত রয়েছে। এই কারনে এটি অযোধ্যা মঠ নামেও পরিচিত। তবে কোদলা মঠ নামেও পরিচিত আছে। কোদলা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী গ্রামের নাম।
বাগেরহাট শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে পুরাতন রূপসা বাগেরহাট সড়কের যাত্রাপুর বাজার হতে প্রায় ৩ কিলোমিটার ভিতরে, বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের অযোধ্যা গ্রামে প্রাচীন ভৈরব নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত এই কোদলা মঠ বা অযোধ্যা মঠটি।
বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর তাদের বিভিন্ন নির্দেশিকায় একে কোদলা মঠ নামে ব্যবহার করে থাকে। এই সম্পূর্ণ মঠটিই একসময়ে পোড়ামাটির ফলকে আচ্ছাদিত ছিলো। এটি একটি প্রাচীন হিন্দু ধর্মের মন্দির।
এই কোদলা মঠের বিশেষ আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে এর বাইরের কারুকাজ গুলো অপূর্ব সমৃদ্ধ অলঙ্করণ। এর উচ্চতা আনুমানিক ১৮.২৯ মিটার। ইটের তৈরি মঠের প্রাচীর গুলোর পুরুত্ব হচ্ছে ৩.১৭ মিটার ও ভেতরের বর্গাকার প্রত্যেক দেয়ালের দৈর্ঘ্য ২.৬১ মিটার। দেয়ালের পালিশ করা লাল ইট গুলি অতি উচ্চ মানের।
পোড়ামাটির অলংকরনে নির্মিত মধ্যযুগীয় এ মন্দিরটি স্থাপত্য শিল্পের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। কোদলা মঠের স্থাপত্য সম্পূর্ণ ভিন্ন ও স্বতন্দ্র। নান্দনিক কারুকার্যমন্ডিত এই কোদলা মঠে উড়িষ্যা অঞ্চলের খ্রষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর দিকে “রেখা” নমুনার পদ্ধতিতে নির্মিত মন্দির গুলোর প্রভাব রয়েছে।
লোকেশন | কিভাবে যাবেন |
বাগেরহাট জেলা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে কোদলা মঠটি । বাগেরহাট সড়কের যাত্রাপুর বাজার হতে প্রায় ৩ কিলোমিটার ভিতরে, বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের অযোধ্যা গ্রামে প্রাচীন ভৈরব নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত এই কোদলা মঠটি। | বাগেরহাট শহর থেকে অটোরিকশা করে অযোধ্যা গ্রামের কোদলা মঠ যেতে সৃময় লাগবে ৩০ মিনিট বা কিছু কম বেশিও হতে পারে।
সিএনজি রিজার্ভ করে গেলে আপনার জন্য ভালো হবে। রিজার্ভ যাওয়া আসার ভাড়া পড়বে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা। |
৫.ঘোড়া দিঘী
খান জাহান আলী প্রথম যখন এই অঞ্চলে পদার্পণ করেন, তখন উনার সৈন্যদের জন্য একটি ব্যারাক তৈরি করেন। এবং সেই অঞ্চলের নাম হয়ে উঠে ব্যারাকপুর। পরবর্তীতে সৈন্যদের প্রয়োজনীয় খাবার পানি সরবরাহ করার জন্য একটি দিঘী খনন করা হয়, যা ঘোড়া দিঘী নামে পরিচিত।
বাগেরহাট জেলা সদরের ষাট গম্বুজ ইউনিয়নের সুন্দরঘোনা গ্রামে খান জাহান আলীর প্রশাসনিক /হাবেলী কেন্দ্র গড়ে তোলেন তাঁর নিকটে ষাট গম্বুজ মসজিদের পশ্চিম পাশে অবস্থিত এই ঘোড়া দিঘী।খান জাহান আলী ছিলেন এই ঘোড়া লীগের প্রতিষ্ঠাতা।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, খান জাহান আলী প্রতিদিন ঘোড়ায় চড়ে এই দিঘী প্রদক্ষিণ করতেন বলে এর নাম দেওয়া হয়েছিল ঘোড়া দিঘী। আরেকটা সূত্রে জানা যায, একটি ঘোড়া এক দৌড়ে যতদূর যেতে পারতো , ততদূর পর্যন্ত এই বিশাল দিঘী খনন করা হতো।
এজন্যই এ দিঘীর নাম দেওয়া হয় ঘোড়া দিঘী। এর গভীরতা প্রায় ২০ থেকে ২৫ ফুটের মধ্যে থাকে। এর দৈর্ঘ্য হচ্ছে ২ ,০০০ ফিট এবং প্রস্থ ১,২০০ ফিট। বারো মাসই পানি থাকে এই দিঘীতে। ঘোড়া দিঘীটি ষাট গম্বুজের সবচেয়ে পাশে হওয়ায়, অনেকে এটাকে ষাট গম্বুজের দিঘী ও বলে থাকে।
লোকেশন | কিভাবে যাবেন |
বাগেরহাট জেলা সদরের ষাট গম্বুজ ইউনিয়নের সুন্দরঘোনা গ্রামে খান জাহান আলীর প্রশাসনিক কেন্দ্র গড়ে তোলেন তাঁর নিকটে ষাট গম্বুজ মসজিদের পশ্চিম পাশে অবস্থিত এই ঘোড়া দিঘী। | বাগেরহাট জেলা থেকে সিএনজি বা অটো রিকশা করে যেতে পারবেন এই ঘোড়া দিঘীতে। লোকাল এর থেকে আপনার জন্য যাতায়াতের সুবিধা হবে সিএনজির রিজার্ব করে যাওয়া। |
৬.রণবিজয়পুর মসজিদ
বাগেরহাট জেলা সদর থেকে প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে ১.৫০ কিলোমিটার পূর্বে ষাট গম্বুজ ইউনিয়নের রণ বিজয়পুর গ্রামে এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি রণবিজয়পুর মসজিদ নামে পরিচিত।
এই মসজিদটি অনেকের কাছে ফকির বাড়ি মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদটির একটি আদি নামও আছে, দরিয়া খাঁর মসজিদ। বাংলাদেশের এক গম্বুজ মসজিদের মধ্যে রণবিজয়পুর মসজিদ সর্ববৃহৎ একটি মসজিদ। খান জাহান আলী রীতির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইমারত এই মসজিদটি।
১৯৬১ সালে রণবিজয়পুর মসজিদকে সংরক্ষিত স্থাপনা বা পোড়াকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এবং সংস্কার ও করা হয়েছে। স্থানীয়দের কাছে জানা যায়, কোনো এককালে এখানে যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল ,সেই যুদ্ধে বিজয়ের স্মরণে এই জায়গার নামকরণ করা হয় রণবিজয়পুর।মসজিদের প্রাচীর প্রায় ১০ ফুট চওড়া।
এর আয়তন বাইরের দিকের ৫৬ বর্গ ফুট এবং ভিতরের দিকের আয়তন ৩৬ বর্গ ফুট। মসজিদের পশ্চিম দিকে তিনটি মেহরাব আর বাকী তিনদিকের দেয়ালে ৩টি করে দরজা বিদ্যমান। ফুলের নকশা করা তিনটি মেহরাবের মধ্যে, মাঝখানের মেহরাব টি অনেকাংশ বড়। বর্গাকার কার্নিশ যুক্ত মসজিদের চার কোনায় খান জাহানি স্থাপথ্যে নির্মিত গোলাকার ৪টি মিনার রয়েছে।
লোকেশন | কিভাবে যাবেন |
বাগেরহাট জেলা সদর থেকে প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে ১.৫০ কিলোমিটার পূর্বে ষাট গম্বুজ ইউনিয়নের রণ বিজয়পুর গ্রামে, এক গম্বুজ বিশিষ্ট রণবিজয়পুর মসজিদটি অবস্থিত রয়েছে। | বাগেরহাট জেলা থেকে আপনি অটোরিকশা ভাড়া করে রণবিজয়পুর মসজিদে যেতে পারবেন। আবার বাগেরহাট, খুলনা মহাসড়ক হয়ে খান জাহান আলীর মাজারের প্রধান গেটের বিপরীতে রণবিজয় সড়ক ধরে মিনিট দশেক হেঁটে ও যেতে পারবেন। |
৭.জাদুঘর
বাংলাদেশ সরকার এবং ইউনেস্কোর যৌথ সমন্বয়ে ১৯৯৫ সালে ৫২০ বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে জাদুঘরটি নির্মিত হয়। কিন্তু জাদুঘরটি সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত হয়ে অনেক পরে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। জাদুঘরে প্রবেশের জন্য টিকেটের মূল্য ১৫ টাকা। এবং শিশু-কিশোরদের জন্য মাত্র ৫ টাকা।
এছাড়াও সার্কভুক্ত বিদেশি পর্যটকদের জন্য টিকেটের মূল্য ৫০ টাকা,ও অন্যান্য বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১০০ টাকা। জাদুঘরে রয়েছে অলংকার করা পোড়া মাটির ফলক, শিলালিপি, প্রাচীন মূর্তি, বিভিন্ন বিরল পাথরের সংগ্রহ এবং পোড়ামাটির তৈজসপত্র।
সপ্তাহের একদিন রবিবারে জাদুঘরটি বন্ধ থাকে। গ্রীষ্মকালে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত জাদুঘরটি খোলা থাকে এবং শীতকালে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা অবধি খোলা থাকে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট পর্যন্ত সাময়িক বিরতিতে জাদুঘরটি বন্ধ থাকে।
ষাট গম্বুজ মসজিদের সাথে অবস্থিত জাদুঘর ভবন নির্মানে ইসলামী স্থাপত্য কলা প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সারাদেশের মসজিদ ও পুরাতাত্ত্বিক স্থাপত্যের ছবি এবং খান জাহান আলীর ঐতিহাসিক কুমিরের মমি বাগেরহাট জাদুঘরের বিশেষ আকর্ষণ।
লোকেশন | কিভাবে যাবেন |
বাগেরহাট থেকে ৫.৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাগেরহাট জাদুঘর। | বাগেরহাট জেলা বাস স্ট্যান্ড থেকে ইজিবাইক বা ইঞ্জিন চালিত রিক্সা করে জাদুঘরে পৌঁছাতে পারবেন। |
৮.খাঞ্জেলী দিঘী
হযরত খান জাহান আলী মাজারের দক্ষিণ দিকে আয়তনে প্রায় ২০০ বিঘা জমি জুরে খাঞ্জেলী দিঘী অবস্থিত রয়েছে। খান জাহান আলী কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড় নামে কয়েকটি কুমির এই দিঘীতে ছেড়েছিলেন। দুইটা কুমিরই খুবই বিশাল সাইজের ছিল, কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড়,যেগুলো পড়ে মারা যায়।
মাজারের ভক্তরা বা যারা বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে মাজার জিয়ারতে আসতো, তারা দিঘীর এ কুমিরগুলোকে হাঁস, মুরগি, ভেড়া,খাসি সহ নানা ধরনের মানতের পশু উৎসর্গ করে দেন। পরবর্তীকালে কিছু মিঠা পানির কুমির এই খাঞ্জেলী দিঘীতে ছাড়া হয়। এর নামকরন সম্পর্কে বিভিন্ন কিংবদন্তি প্রচলিত রয়েছে।
কেউ বলেন, বুদ্ধ ঠাকুরের মূর্তি প্রাপ্তির জন্য এর নাম হয়, “ঠাকুর দিঘী”। এবং অন্য এক কথায়, খান জাহানকে দেশীয় হিন্দুগণ ভক্তিভরে ঠাকুর বলে ডাকত এবং তারই বিশেষ তত্ত্বাবধানে এ দিঘী খনন করা হয়ে বলে তাদের ভক্তিভাজন ঠাকুরের নাম অনুসারে ঠাকুর দিঘী বলা হতো।
খান জাহানের প্রিয়তম বন্ধু ছিলেন পীর আলী মোহাম্মদ তাহের। তিনি পূর্বে ব্রাহ্মণ ছিলেন এবং উনার নাম ছিল শ্রী গোবিন্দ লাল রায়। থাকে আদর করে ঠাকুর বলে সম্বোধন করতে খান জাহান আলী।
লোকেশন | কিভাবে যাবেন |
খুলনা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে খান জাহান আলীর সমাধিসৌধ অবস্থিত। এবং বাগেরহাট শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিণ -পশ্চিমে,খুলনা বাগেরহাট মহাসড়ক থেকে ৩০০ গজ দুরে এই দিঘীর অবস্থান। বাস থেকে নেমে এটুকু পথ আপনাকে হেঁটে যেতে হবে। | বাগেরহাট জেলা থেকে সিএনজি বা অটো রিকশা করে যেতে পারবেন খান জাহান আলীর মাজার শরীফে, তার কিছুটা দক্ষিণ দিকেই রয়েছে এই দিঘী।
পায়ে হেঁটে যেতে হবে। লোকাল এ যাওয়ার থেকে রিজার্ভ করে যাওয়াটাই আপনার জন্য ভালো হবে। তাহলে আর কিছুটা পথ হেঁটে যেতে হবে না। |
৯.চুনাখোলা মসজিদ
বাগেরহাট জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো প্রায়ই ষাট গম্বুজ মসজিদের আশেপাশেই অবস্থিত রয়েছে। ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ধান ক্ষেতের মধ্যে চুনাখোলা গ্রাম। এবং এই চুনাখোলা গ্রামে অবস্থিত রয়েছে চুনাখোলা মসজিদ।
এককালে প্রচুর চুনাপাথরের নির্যাস পাওয়া যেত বলে এর নাম হয়েছে চুনাখোলা। এই মসজিদটি ১৫ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছে। বর্গাকৃতির এই মসজিদটির বাইরের দিক লম্বায় প্রায় ৪০ ফুট। এবং ভেতরের দিকে প্রায় ২৫ ফুট।
দেওয়াল গুলো প্রায় ৭ থেকে ৮ ফুট চওড়া। মসজিদটির উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ১টি করে এবং পূর্ব দিকে ৩ টি প্রবেশাদ্বার রয়েছে। প্রতিটি মিহরাবের গায়ে রয়েছে নানা রকম ফুল ও লতা পাতার কারুকাজ। সম্পূর্ণ ছাদ জুড়ে অর্ধগোলাকৃতির বিশাল গম্বুজটি ভিতরের দিকে স্কুইঞ্চের উপর স্থাপিত।
খান জাহানের রীতি অনুযায়ী গোলাকার এবং নির্দিষ্ট দূরত্বের ঢালাই করা ব্যান্ড দ্বারা বিভক্ত। মসজিদের বাইরে চারটি কোনায় চারটে মিনার রয়েছে। বর্তমানে এ অলংকরণ গুলি শুধু মিহরাবের কুলুঙ্গিতে, খিলানোর উপরে এবং বাঁকানো কার্নিশে লক্ষ্য করা যায়।
এই চুনাখোলা মসজিদে এখনো নিয়মিত নামাজ আদায় করা যায়। স্থানীয়দের মতে, মসজিদটি খান জাহান আলীর কোন এক কর্মচারী নির্মাণ করেছিলেন।
লোকেশন | কিভাবে যাবেন |
বাগেরহাট জেলার ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ধান ক্ষেতের মধ্যে চুনাখোলা গ্রাম। এবং এই চুনাখোলা গ্রামে অবস্থিত রয়েছে চুনাখোলা মসজিদটি। | বাগেরহাট জেলার বাস স্ট্যান্ড থেকে ষাট গম্বুজ মসজিদের উত্তর পশ্চিম দিকের পথ ধরে ঘোড়া দিঘীর পাশ দিয়ে সোজা পশ্চিমের পথে যেতে হাতের বামে দেখতে পাবেন বিবি বেগনীর মাজার।
আরেকটু ভিতরে গেলেই চুনাখোলা মসজিদ দেখা যায়। এখানে আপনি রিক্সা করে যেতে পারেন, অথবা আই হেঁটেও যেতে পারেন। রিক্সা ভাড়া পড়বে ৫০ টাকার মতো। |
১০.বিবি বেগনী মসজিদ
বাগেরহাট জেলার ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে আনুমানিক ৮০০ মিটার পশ্চিমে ঘোড়াদিঘীর পাড়ে অবস্থিত এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি প্রাচীন বিবি বেগনী মসজিদটি। মসজিদটি ইটের তৈরি। মসজিদটি সিংড়া মসজিদের আদলে তৈরি হলেও এর কিবলা দেয়ালের ভিতর দিকে রয়েছে অর্ধবৃত্তাকার খিলান যুক্ত তিনটা মিহরাব।
বাংলাদেশের প্রত্নতন্ত্র অধিদপ্তর কতৃক মসজিদটির ব্যাপক সংস্কার ও মসজিদের মূল পরিকল্পনার আদলে পূর্ণ:নির্মিত হয়েছে। মসজিদের বাইরে মিনার সহ প্রতি দিকের দৈর্ঘ্য ১৬.১৫ মিটার ও ভিতরে ১০.৫৮ মিটার এবং দেয়ালগুলো ৩.০৪৮ মিটার পুরু।
ইমারতের হলঘরটি একটি বৃহৎ গোলার্ধ আকৃতির ইটের গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত যা অর্ধগম্বুজাকৃতির স্কুইঞ্চের উপর বসানো । এগুলোর উচ্চতা ছাদের বাকানো কার্নিশের সীমা ছাড়িয়ে যায়নি।
স্থানীয় লোকদের মতে, বিবি বেগনী ছিলেন খান জাহান আলীর একজন স্ত্রী। কবরের উপরই খান জাহান ইমারতটি নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরে এখনও খনন কাজ শুরু হয়নি বলে এ অভ্যন্তরে কোনো কবর ফলক আছে নাকি নাই,জানা নেই।
লোকেশন | কিভাবে যাবেন |
বাগেরহাট জেলার ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে আনুমানিক ৮০০ মিটার পশ্চিমে ঘোড়াদিঘীর পাড়ে অবস্থিত এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি প্রাচীন বিবি বেগনী মসজিদটি। | বাগেরহাট জেলার বাস স্ট্যান্ড থেকে ষাট গম্বুজ মসজিদের উত্তর পশ্চিম দিকের পথ ধরে ঘোড়া দিঘীর পাশ দিয়ে সোজা পশ্চিমের পথে যেতে হাতের বামে দেখতে পাবেন বিবি বেগনীর মসজিদটি। রিকশা ভাড়া পড়বে ৪০ টাকার মতো। হেঁটেও যেতে পারেন। |
১১.চন্দ্রমহল ইকোপার্ক
বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলায় রঞ্জিতপুর গ্রামের কাছে একটি পিকনিক স্পট রয়েছ। তাজমহলের আদলে তৈরি চন্দ্রমহল । এটি একটি চমৎকার ও আকর্ষণীয় শিল্প নিদর্শনা। ২০০২ সালে চন্দ্রমহলের প্রতিষ্ঠাতা সেলিম হুদা তার স্ত্রী নাসিমা হুদা চন্দ্রার নামানুসারে প্রায় ৩০ একর জমির উপরে এই ইকো পার্কটি তৈরি করেন।
প্রখর রোদের আলো যখন মহলের উপরের দিকে সোনালী অংশে পড়ে, তখন এই দৃশ্যটি দেখে মনে হয় যেন,দামী কোনো ধাতব পদার্থ দিয়ে নির্মিত হয়েছে মহলটি। মহলটি পানি দ্বারা বেষ্টিত। মহলের ভিতর পৌঁছানোর জন্য পানির নিচে থেকে নেয়া হয়েছে পাকা রাস্তা। ভিতরে যাওয়ার সময় আপনার চোখে পড়বে রাস্তার মাঝপথে পুরু কাঁচের উল্টো পাশের বড় বড় মাছগুলি।
এখানে নির্মাণ করা হয়েছে, পর্যটকদের জন্য নানান প্রস্তর শিল্প,বাস ও বেত শিল্প, মৃওিকা শিল্প,মানুষ ও বিভিন্ন ধরনের প্রানীর মূর্তি। এবং মাটি দিয়ে নির্মিত হয়েছে পল্লী সংস্কৃতির নানান স্মৃতি কথা। গ্রামীন নারীর জীবনযাত্রার ছবি ফুটিয়ে তুলা হয়েছে এ শিল্পের মাধ্যমে। মূলত, মধ্যযুগের মানুষদের জেলে,কৃষক,ধোপা তাদের জীবনযাত্রা কেমন ছিলো, তা ফুটানো হয়েছে এই শিল্পের মাধ্যমে।
আরও রয়েছে ১৯৭১ সালের রাজাকারদের জন্য কৃত্তিম ফাঁসির মঞ্চ। পানির উপর বাঁশের তৈরি কুটির ও রেস্তোরাঁ। মাছ চাষ করা হয়েছে ছোট ছোট দিঘী গুলোতে। ইট, সিমেন্টের তৈরি কাকড়া,ঝিনুক ও পানসী নৌকা রয়েছে পুকুরের মধ্যে।
কৃত্রিম রেললাইন, বাঘ, হরিণ, ডাইনোসরের মূর্তি। কাঠের তৈরি একটি বড় ঘর, তার পাশেই রয়েছে রান্নার সব ব্যবস্থা। দর্শনার্থী বা আপনারা যাতে নিজেদের মতো করে পিকনিক করতে পারেন। সে বিবেচনা করেই এ পিকনিক স্পটটি নির্মাণ করা হয়েছে।
চন্দ্রমহল ইকো পার্কের প্রায় সব জায়গায়ই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানান প্রকারের সবজি চাষ, বিভিন্ন প্রজাতির আম চাষ এবং প্রচুর ফলোজ বৃক্ষ ও রোপন করা হয়েছে। ইকো পার্কে চারপাশে লাগানো হয়েছে প্রচুর নারিকেল গাছ, আরও বিভিন্ন ধরনের গাছ গাছালি। এই গাছ-গাছালিতে সবুজের সমারোহ ফুটিয়ে তুলেছে চন্দ্রমহল ইকো পার্কের সৌন্দর্য।
লোকেশন | কিভাবে যাবেন |
বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলায় রঞ্জিতপুর গ্রামের কাছে একটি পিকনিক স্পট রয়েছ। যা চন্দ্রমহল ইকো পার্ক নামে পরিচিত। | খুলনা মংলা মহাসড়কের পাশে, রঞ্জিতপুর গ্রামে চন্দ্র মহল অবস্থিত। বাগেরহাট থেকে খুলনায় চলাচলকারী বাসে করে চন্দ্রমহল যেতে পারেন। বাগেরহাট শহর থেকে আসা যাওয়ার জন্য ব্যাটারী চালিত যানবাহন ভাড়া করতে পারেন। |
ঢাকা টু বাগেরহাট বাস পরিবহন
ভ্রমন প্রিয় বন্ধুগ, আপনাদের ভ্রমণকে সহজ করে তুলতে ঢাকা থেকে বাগেরহাটে যে সকল বাস চলাচল করে, সে সকল বাসের নাম এবং টিকিট মূল্য সহ, বাসের সময়সূচি নিম্ন টেবিলে প্রদান করা হলো:
বাসের নাম | প্রথম ট্রিপ | শেষ ট্রিপ | টিকিট মূল্য |
সৌদিয়া পরিবহন | 8.15am | 11:00pm | 400 টাকা |
সোহাগ পরিবহন | 8.15 am | 10.45pm | 450 টাকা |
হানিফ এন্টারপ্রাইজ | 8.15am | 11:00pm | 500 টাকা |
টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস | 5.15am | 11:00pm | 450 টাকা |
সেন্টমার্টিন হুন্ডাই | 8.15am | 11:00pm | 430 টাকা |
এমাদ এন্টারপ্রাইজ | 8.15am | 11:00pm | 450 টাকা |
দিগন্ত পরিবহন | 8.15am | 11:00pm | 450 টাকা |
বনফুল পরিবহন | 6.30am | 10:00pm | 450 টাকা |
ঈশান পরিবহন | 8.15am | 11:00pm | 450 টাকা |
হামিম পরিবহন | 8.15am | 11:00pm | 450 টাকা |
আরা পরিবহন | 8.15am | 11:00pm | 450 টাকা |
দোলা পরিবহন | 8.15am | 11:00pm | 450 টাকা |
সুন্দরবন এক্সপ্রেস | 8.15am | 11:00pm | 450 টাকা |
পারজাতক পরিবহন | 6.30am | 10:00pm | 450 টাকা |
একে ট্রাভেলস | 7:00am | 11:45pm | 450 টাকা |
পরিশেষে, ভ্রমণ করতে আমরা সকলেই পছন্দ করি। তবে পছন্দের জায়গা নির্ণয় এবং যাতায়াত সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আমরা অনেকেই চিন্তিত হই। তাই আপনি এই আর্টিকেলটা যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন, তবে বাগেরহাট জেলার দর্শনীয় স্থান সম্বন্ধে এবং যাতায়াতের সুযোগ-সুবিধা সম্বন্ধে জানতে পারবেন। .সুস্থ থাকুন নিরাপদে ভ্রমন করুন,ধন্যবাদ।
আরো পড়ুন –