Dreamy Media BD

পঞ্চগড় জেলার  দর্শনীয় স্থান 

Panchagarh

বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল হচ্ছে এই পঞ্চগড় জেলা।  এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা।  এই বিখ্যাত পঞ্চগড় জেলা থেকেই বহুল আলোচিত হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দেখতে পাওয়া যায়। 

তাই এ জেলাকে হিমালয়ের কন্যা বলা হয়ে থাকে।  ইতিহাস-ঐতিহ্য,জীবনধারা ও প্রাকৃতিক  রূপবৈচিত্রের নিরিখে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবই রয়েছে এই পঞ্চগড় জেলায়।  ১৯৮০ সালে দিনাজপুর জেলা ভেঙ্গে এই পঞ্চগড় জেলা গঠন করা হয়। 

বাংলাদেশের সর্বোত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ে তেঁতুলিয়া মহা সড়কে,অফিসে ছুটি পেয়েছেন বা ঈদ উপলক্ষে ভ্রমণ করবেন না এই যুগে এসে এমন লোক পাওয়া কঠিম। পঞ্চগড় জেলার পশ্চিমে ভারতের, পূর্বে নীলফামারী জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, এবং দক্ষিণে ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলা অবস্থিত। 

এই পুরোনো জনপদে অনেক আকর্ষণীয় স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে, যা পঞ্চগড়  জেলার ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে।  প্রাকৃতিক মনোরম সৌন্দর্যে ভরপুর পঞ্চগড় জেলা মানুষের মন আকৃষ্ট  করে তুলে। আপনি অবশ্যই একবার হলেও আসবেন ঐতিহাসিক  নিদর্শন ও দর্শনীয়  স্থানগুলো দেখার জন্য। 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ও মনোরম পরিবেশ এ পঞ্চগড় জেলার মধ্যে রয়েছে অনেক দর্শনীয় স্থান।  যা আপনি একবার দেখলে পরে আবার আসার জন্য আকৃষ্ট হবেন। ছুটির দিন বা ঈদ হোক কোনো উৎসব, ভ্রমণ আর ঘুরাঘুরি সবার পছন্দের মধ্যে একটি।

পঞ্চগড় নাম থেকেই  বোঝা যায়, এই পঞ্চগড় জেলা পাঁচটি গড় নিয়ে গঠিত হয়েছিল, এই পাচঁটি গড়ের মধ্যে অন্যতম একটি গড় হচ্ছে মিরগর।  পঞ্চগড় সদর উপজেলা হতে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ধাক্কামারা ইউনিয়নে এই মিরগড়টি অবস্থিত রয়েছে। কিন্তু মিরগড়ের অধিকাংশই ভারতের মধ্যে চলে গেছে। 

প্রাচীন এ জনপদে রয়েছে চমকপ্রদ নামকরণ, যে পাঁচ গড়ের সমাহারে এই পঞ্চগড় সেগুলো হলো, মিরগড়,ভিতরগড, হোসেনগড় , রাজনগর ও দেবনগর।  এবার আসুন, এই সুন্দর সবুজে ঘেরা অপরূপ পঞ্চগড় জেলার কিছু ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে আসি, 

মহারাজার দিঘী
মহারাজার দিঘী

 ১.মহারাজার দিঘী

পঞ্চগড় জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অমরখানা ইউনিয়নে অবস্থিত রয়েছে ঐতিহাসিক সেই পুকুর যার নাম মহারাজার দিঘী। ১৫০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক এক রাজ্যে মহারাজা পৃথু রাজত্ব করাকালীন সময় এই দিঘীটি খনন করেন। 

মহারাজার দিঘী একটি বিশালায়তনের জলাশয়। পাড়সহ এর আয়তন  প্রায় ৮০০ × ৪০০ গজ। জলভাগের আয়তন হচ্ছে প্রায় ৪০০ × ২০০ গজ। সেখানকার স্থানীয়রা জানান মহারাজার দিঘীর পানির গভীরতা প্রায় ৪০ ফুট। পাড়ের উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট।

মহারাজর এই দিঘীতে রয়েছে মোট ১০টি ঘাট। প্রতিবছর বাংলা নববর্ষের সময় দিঘীর পাড়ে মেলা বসে। বিভিন্ন ধরনের গাছ-গাছালিতে ঘেরা রয়েছে মহারাজর দিঘীর চারপাশ। মহারাজার দিঘীর জল খুব স্বচ্ছ।  শীতকালে এখানে প্রচুর পাখি আসে ।

বছরের অন্যান্য সময় অনেক পাখি এখানে বিচরণ করতে দেখা যায়। সরকার ২০১৮ সালে এই দিঘী এলাকাকে পাখির অভয় আশ্রয় হিসেবে ঘোষণা করেছেন।  দিঘীর চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে  আছে প্রচুর প্রত্নতান্ত্রিক নিদর্শন। 

স্থানীয় লোক মুখে শুনা যায়, সেই পৃথু রাজা তার পরিবারের লোকজন ও ধনরত্ন সাথে করে নিয়ে“কীচক” নামক এক নিম্নশ্রেণী দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়ে, তাদের দ্বারা   ধর্মনাশের ভয়ে এই দীঘিতে আত্নহনন করেছিলেন।

লোকেশন কিভাবে যাবেন
পঞ্চগড় জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অমরখানা ইউনিয়নে অবস্থিত রয়েছে ঐতিহাসিক সেই পুকুর মহারাজার দিঘী। পঞ্চগড় সদর বাস টার্মিনাল থেকে তেঁতুলিয়া বা বাংলাবান্ধাগামী বাসে বোর্ড বাজার যাবেন।সেখানে নেমে রিকশা বা ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা করে যেতে পারবেন মহারাজার দিঘীতে। তাছাড়াও পঞ্চগড় থেকে প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে সারাদিনের জন্য ঘুরতে পারবেন।

 ২.চা বাগান

চা বাগানের কথা শুনলেই আপনার সিলেটের কথা মনে পড়ে, তাই না? কিন্তু আপনি কি জানেন! দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সমতল ভূমিতে যে বাণিজ্যিক ভাবে চা চাষ সম্ভব হচ্ছে, তা আপনি এখানে না আসলে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করাটা কঠিন হয়ে যাবে।

প্রায় ১৫০ বছর আগে বাংলাদেশে চায়ের উৎপাদন শুরু হলেও পঞ্চগড়ে তা ১৯৯৮ সালে প্রথম চা চাষ শুরু হয়। সেই সময় শিল্পপতি কাজী শাহেদ আহমদ ভারতের চা বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে, পঞ্চগড়ের জমি পতিত থাকতে দেখে সেখানেই চায়ের চাষ শুরু করে দিয়েছিলেন।

বর্তমানে পঞ্চগড়ে দুই শতাধিক চা বাগান রয়েছে।এবং চা চাষের মোট জমির পরিমান ২২৫৫.৫৪ একর। অর্গানিক পদ্ধতিতে চা চাষের ক্ষেত্রে কাজী টি এস্টেটই অগ্রপথিক রুপে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। 

পঞ্চগড় জেলা সদর থেকে তেঁতুলিয়ার দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। যাত্রা পথে আপনি যেদিকেই তাকাবেন শুধু সবুজ, শ্যামলে ভরপুর,বিশাল চা-পাতার সমাহার চোখে পড়বে। পঞ্চগড় বেড়াতে এসে, অবশ্যই চা বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভুলবেন না। 

সন্ধ্যার পর পরই এইসব চা বাগান গুলোতে নেমে আসে একেবারে ভিন্ন এক স্বর্গীয় সৌন্দর্য। আকাশে যখন চাঁদ উঠে, তখন মনে হবে যেন আপনি মেঘের উপর ভেসে বেড়াচ্ছেন। চা পাতার উপরে চাঁদের আলো পড়ে সৃষ্টি হয় মায়াবি এক  অপরুপ রুপ।

লোকেশন কিভাবে যাবেন
পঞ্চগড় জেলা সদর থেকে তেঁতুলিয়ার দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। তেঁতুলিয়া বাসস্ট্যান্ড হতে লোকাল পরিবহনে কমলা বা চা বাগান দেখতে যেতে পারেন। অথবা সিএনজি বা রিকশা রিজার্ভ করেও সারাদিন ঘুরাঘুরি করে চা বাগান উপভোগ করতে পারবেন।

 ৩.ভিতরগড় দুর্গনগরী

৬ষ্ঠ শতকের দিকে পৃতু রাজা তার রাজধানী হিসেবে ভিতরগড় দুর্গ নির্মাণ করেন।  দুর্গটি পঞ্চগড় জেলা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অমরখানা ইউনিয়নে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় মধ্যযুগের অন্যতম এক নিদর্শন এই ভিতরগড় দুর্গনগরী অবস্থিত।

 ১২৫৭ সালে পাল বংশের সুলতান মুঘিসউদ্দিন কামরুপ রাজ্য আক্রমণ করলে এই ভিতরগড় দুর্গটি সুলতানি শাসনে চলে যায়।  প্রায় ২৫ বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত ভিতরগড় দুর্গটি চারটি ক্ষুদ্র নগরীতে বিভক্ত ছিল। 

প্রতিটি নগরী মাটি ও ইটের মিশ্রণে তৈরি সুউচ্চ দুর্গ প্রাচীর ও বিশাল পরিখা দ্বারা ঘেরা।  এছাড়াও ভিতরগড়ে কাচারি ঘর, মন্দির ও কয়েকটি দিঘী ছিল।  মন্দির সংলগ্ন অঞ্চলটি এক সময় গৌর প্রাগজ্যোতিষপুরের অংশ হিসেবে ছিল। 

২০০৮ সালে গড়ের অভ্যন্তরীণভাগ  খনন কালে ৮ম শতকে নির্মিত তামা ও লোহার তৈরি জিনিসপত্র, মৃৎ পাত্রের তৈজসপত্র এবং দুটি প্রাচীন মন্দিরসহ মোট ২২ টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায়। 

সবচেয়ে ভিতরের গড়ে ছিলো রাজার প্রাসাদ এবং বাইরের নগরীর ছিরৎলনামক স্থানে নিম্নবর্গের মানুষ বসবাস করত।  

লোকেশন কিভাবে যাবেন
পঞ্চগড় জেলা থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অমরখানা ইউনিয়নে অবস্থিত রয়েছে এই ভিতরগড় দুর্গনগরী।  পঞ্চগড়ের বাসস্ট্যান্ড থেকে তেঁতুলিয়া বা বাংলাবান্ধাগামী বাসে বোর্ড বাজারে নেমে যেতে পারবেন, বোর্ড বাজার থেকে অটোরিক্সা করে ভিতরগড় দুর্গনগরীতে  পৌঁছাতে পারবেন, অটোর ভাড়া পড়বে ২০- ২৫ টাকা।

অথবা পঞ্চগড়ের বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি বা কার রিজার্ভ করেও যেতে পারবেন ভিতরগড় দুর্গনগরী।

মির্জাপুর শাহী মসজিদ
মির্জাপুর শাহী মসজিদ

৪.মির্জাপুর শাহী মসজিদ

মির্জাপুর শাহী মসজিদটি পঞ্চগড় জেলায় আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে অবস্থিত রয়েছে। মসজিদের নির্মাণ সম্পর্কে, পারস্য ভাষায় লিখিত মধ্যবর্তী দরজার উপরিভাগে একটি ফলক রয়েছে।

ফলকের ভাষা ও লিপি অনুযায়ী ধারণা করা হয়, মুঘল সম্রাট শাহ আলমের রাজত্বকালে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। মসজিদের সম্মুখভাগে আয়তাকার টেরাকোটার নকশা গুলোর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে :তা একটির সাথে অপরটির কোনো মিল নেই,প্রতিটাই পৃথক পৃথক। 

সেখানকার লোকদের কাছে, ঐতিহাসিক এই মীর্জাপুর শাহী মসজিদটির নির্মাণ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।  আবার প্রত্নতত্ত্ববিদগণ ধারনা করেন যে, মুঘল শাসক শাহ সুজার শাসনামলে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মির্জাপুর শাহী মসজিদের সার্বিক তত্ত্বাবধান করে।

শাহী মসজিদটির শিলালিপি ঘেঁটে প্রত্নতাত্ত্বিকগণ ধারণা করেন এই মির্জাপুর শাহী মসজিদটি ১৬৫৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট,প্রস্থ ২৫ ফুট। এবং এক সারিতে ৩টি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদটির নির্মাণ কারুকার্যের নিপুনতা ও দৃষ্টিনন্দন নকশাসমূহ এখনো দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে।

তার পাশেই আরেকটা দর্শনীয় স্থান রয়েছে, এই আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামেই অবস্থিত, আটোয়ারী ইমামবাড়া। এটি ঐতিহাসিক মির্জাপুর শাহী মসজিদের কাছেই অবস্থিত এবং বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি প্রন্থতান্ত্রিক নিদর্শন। 

ইমামবাড়াটি একটি প্রাচীন আয়তাকার ইমামবাড়া।  পুরো এই ইমামবাড়াটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট।  এর প্রবেশ মুখে বৃহত্তর আকৃতির একটি প্রাচীর রয়েছে। যা প্রবেশের পথ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই নির্মাণকারী বা নির্মাণকাল সম্পর্কে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। 

লোকেশন কিভাবে যাবেন
মির্জাপুর শাহী মসজিদটি পঞ্চগড় জেলায় আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে অবস্থিত রয়েছে। পঞ্চগড় সদর থেকে আটোয়ারি যাওয়ার বাসে করে মির্জাপুরে নামতে হবে। বাস ভাড়া পড়বে ১৫-২০ টাকা। এখন থেকে পাঁয়ে হেটে ৫,৬ মিনিট লাগবে অথবা ইজিবাইকে করে পৌঁছে যেতে পারবেন মির্জাপুর শাহী মসজিদে।

তাছাড়াও আপনি পঞ্চগড় থেকে সারাদিনের জন্য প্রাইভেটকার বা সিএনজি রিজার্ভ করেও নিতে পারবেন।

 ৫.বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট 

১৯৯৭ সালে নির্মিত হয় মহানন্দা নদীর তীর ও ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন প্রায় ১০ একর জমিতে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর টি। বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরের মাধ্যমে ভারত, নেপাল এবং ভুটানের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। 

বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট গেলে ইট, পাথর সিমেন্টের দ্বারা নির্মিত বিশাল আকৃতির একটা জিরো এর দেখা মিলবে, আর এই জিরোই আপনাকে বলে দিবে যে আপনি বাংলাবান্দা জিরো পয়েন্টে চলে আসছেন।  এখানেই বাংলাদেশের সীমান্ত শেষ এবং ওপার বাংলা ভারতের সীমান্ত শুরু। 

এখানকার চাঁরপাশ সবুজ শ্যামলের ছায়াঘেরা,খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট ফটকের কাছে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের জাতীয় পতাকা টানানো থাকে। কিন্তু অনুমতি ছাড়া সেখানে প্রবেশ নিষেধ। 

বাংলা বান্দা থেকে ভারতের শিলিগুড়ি শহরের দূরত্ব মাত্র ৭ কিলোমিটার এবং এবং দার্জিলিং এর দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার।  বাংলাবান্ধা থেকে নেপালের কাকরভিটা সীমান্তের দূরত্ব  মাত্র ৩০ কিলোমিটার। 

নেপালের সাথে বাংলাদেশের এক বাণিজ্য চুক্তির আওতায় পণ্য আমদানি রপ্তানির মাধ্যমে বন্দরটি প্রথম যাত্রা শুরু করে। পরে তা ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ভারতের সাথে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ভারতের সাথেও পণ্য আমদানি রপ্তানি শুরু হয়। 

এ বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে নেপালে পাঠ,সীসা,ফলের রস,ব্যাটারি, ওয়েস্ট কটন,কাঠ ও প্লাস্টিক রপ্তানি করা হয়। তাছাড়াও ভারত থেকে প্রতিদিন গড়ে ১,০০০ মেট্রিক টন পাথর আমদানি করা হয়ে থাকে এবং নেপাল থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০০ মেট্রিক টন ডাল আমদানি করা হয়ে থাকে।

তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট।  তাই এইবার ভ্রমণে আপনি পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার প্লান করে থাকলে, আপনার প্লানে অবশ্যই যুক্ত করে নিতে পারেন সুন্দর এই দর্শনীয় বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট স্থানটি। 

লোকেশন  কিভাবে যাবেন
পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়া এবং তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট। পঞ্চগড় সদর থেকে তেঁতুলিয়ার পথে সারাদিন নিয়মিত বিরতি লোকাল বাস চলাচল করে। জনপ্রতি  বাসের টিকিটের মূল্য পড়বে ৫০-৬০ টাকা। তেঁতুলিয়া বাজারে নেমে আপনি সিএনজি বা ব্যাটারি চালিত অটোতে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে আসতে পারবেন। 

 ৬.রক্স মিউজিয়াম

১৯৯৭ সালে পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের তৎকালীন  অধ্যক্ষ নাজমুল হক ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেন ব্যতিক্রমী এই জাদুঘরটি। বাংলাদেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর বা রক্স মিউজিয়াম। পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরে এই জাদুঘরটি অবস্থিত রয়েছে।

২০০৮ সালে সরকার রক্স মিউজিয়ামের জন্য একটি দ্বিতীয় তলা ভুবন  নির্মাণ করেন।  তবে বড় বড় পাথরগুলো পড়ে আছে কলেজের বাইরে,কলেজের আঙ্গিনায় এখানে সেখানে। জাদুঘরের ভিতরে থরে থরে সাজানো রয়েছে হরেক রকমের পাথর। বাইরে সাজিয়ে রাখা পাথরগুলো নানা স্থান থেকে সংগৃহীত করা হয়েছ।  

আরও রয়েছে প্রাচীন কালের মানুষের ব্যবহার করা বিভিন্ন জিনিসপত্র। রক্স মিউজিয়ামের অভ্যন্তরীণ ও উন্মুক্ত দুই রকমের গ্যালারি রয়েছে, গ্যালারি গুলোতে রয়েছে, পাললিক শিলা ও নুড়ি পাথর, সিলিকা বালি, হলুদ ও গাঢ় হলুদ বালি, সাদামাট,  খনিজ বালি, রং ও বৈশিষ্ট্যের আগ্নেয় শিলা, বিভিন্ন আকৃতি, পলি ও কুমোর মাটি, লাইমস্টোন এবং চ্যাপ্টা পাথর।

বহু বছরের পুরনো ইমারতের ইট,পোড়া মাটির মূর্তিও দেখা যায় । নদী থেকে পাওয়া ৩০০ বছরের পুরনো  বিশাল দুটি নৌকা ও ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে জাদুঘরের ঠিক মাঝখানে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এগুলো ব্যবহার করা হতো বলে গবেষকরা মনে করেন।  নৌকাগুলো বেশ কিছু বড় বড় পাথর এবং একটি শাল গাছ দিয়ে তৈরি, যার দৈর্ঘ্য হচ্ছে ২২ ফুট।

শুধু তাই নয়, পাথরের উপরে লেখা চীন, নেপালি লিপির মুদ্রন দেখা যায় এখানে। বারো রকমের রঙিন বালু এই মিউজিয়ামকে করেছে সমৃদ্ধ।  নানা নদীর তলদেশ থেকে কুড়িয়ে আনা হয়েছে বালু আর মাটি,যা আপনাদের মতো দর্শনার্থীদের জ্ঞানের পিপাসা মিটাতে সহায়তা করবে। 

লোকেশন  কিভাবে যাবেন
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরে এই জাদুঘরটি অবস্থিত রয়েছে। পঞ্চগড় বাস টার্মিনাল থেকে বা রেলওয়ে স্টেশন থেকে স্থানীয় পরিবহনের মাধ্যমে যেমন,সিএনজি অথাবা অটো রিক্সা করে আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন রক্স মিউজিয়ামে। ভাড়া পড়বে ২০ থেকে ২৫ টাকা।

এবং মিউজিয়ামে প্রবেশ করার জন্য টিকেট লাগবে, টিকিটের মূল্য ১০ টাকা। 

বারো আউলিয়া মাজার
বারো আউলিয়া মাজার

  ৭.বারো আউলিয়া মাজার

পঞ্চগড় উপজেলার সদর হতে ৯ কিলোমিটার উত্তর -পূর্বে মির্জাপুর ইউনিয়নে বারো আউলিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ ভূমিতে অবস্থিত বারো আউলিয়ার  মাজার শরীফ।  ১২ জন ওলী খাজা বাবার নির্দেশে চট্টগ্রামসহ পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে আস্তানা গড়ে তুলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। 

আমরা অনেকেই আছি যারা এই বারজন ওলীর নাম জানি না। তো আসুন সেই বারজন ওলীর নাম জেনে নেই। সেই বারজন ওলী হচ্ছেন:

১, হযরত নিয়ামত উল্লাহ শাহ্ (রা)

২,হযরত হেমায়েত আলী শাহ্ (রা)

৩,হযরত কেরামত আলী (রা)

৪,হযরত আজহার আলী (রা)

৫, হযরত হাকীম আলী (রা)

৬,হযরত মনসুর আলী (রা)

৭,হযরত মমিনুল শাহ্ (রা)

৮,হযরত শেখ গরীবুল্লাহ (রা)

৯,হযরত আমজাদ আলী মোল্লা (রা)

১০,হযরত ফরিজউদ্দিন আখতার (রা)

১১,হযরত শাহ্ অলিউল্লাহ (রা)

১২,হযরত শাহ্ মুক্তার আলী (রা)

তাদের মৃত্যুর পর এই ১২ জন সুফি সাধককে আটোয়ারী উপজেলাতেই সমাহিত করা হয়।  তাই এই ১২ জন ওলীর সমাধিকে কেন্দ্র করেই এই বারো আউলিয়ার মাজার শরীফ গড়ে উঠেছে।  পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে বারো আউলিয়া মাজার শরীফ পাকা করা হয় ১৯৯০ সালে।

সময়ের সাথে সাথে আশেপাশের জায়গায় পুকুর, মাদ্রাস,  মসজিদ, গোরস্তান ও এতিমখানা নির্মাণ করা হয়।  প্রতিবছরই বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার আউলিয়া মাজার শরীফ প্রাঙ্গনে ওরশ মোবারক, কোরআন খতম, ওয়াজ মাহফিল ও তবারক বিতরনের আয়োজন করা হয়। 

এই আয়োজনের সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লির আগমন ঘটে আউলিয়া মাজার শরীফে। এই আয়োজন গুলো ছাড়াও প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গার মানুষ তাদের মানত নিয়ে আউলিয়া মাজার শরীফে আসেন। এবং গরু, ছাগল, মুরগি, চাল, টাকা ইত্যাদি দান করেন। 

লোকেশন  কিভাবে যাবেন
পঞ্চগড় উপজেলার সদর হতে ৯ কিলোমিটার উত্তর -পূর্বে মির্জাপুর ইউনিয়নে বারো আউলিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ ভূমিতে অবস্থিত বারো আউলিয়ার  মাজার শরীফ। পঞ্চগড় সদর থেকে আপনি লোকাল বাসে করে আটোয়ারী উপজেলায় এসে স্থানীয় পরিবহনের মাধ্যমে বারো আউলিয়ার মাজার শরীফে পৌঁছাতে পারবেন।

 ৮.কাঞ্চনজঙ্ঘা

বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা হল পঞ্চগড়,যেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। তার তিন দিকেই ভারতের প্রায় ২৮৮ কিলোমিটার সীমানা-প্রাচীর দিয়ে ঘেরা।

শীতের সময় মেঘমুক্ত আকাশে তুষারশুভ্র পাহাড়ের চূড়া রোদে চিকচিক করে উঠে আর ঠিক তখনই কাঞ্চনজঙ্ঘার সেই মোহনীয় শুভা উপভোগ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে।  তেঁতুলিয়ায় আসলে ভালোভাবে দেখা যাবে হিমালয় কাঞ্চনজঙ্ঘা ও এভারেস্ট চূড়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর দৃশ্য /সৌন্দর্য যা সকাল,বিকেল ও রাতের বেলা বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। 

 প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই জেলাকে ঘিড়ে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক ধরনের চা বাগান এবং পিকনিক কর্নার। তার পাশাপাশি আপনি উপভোগ করতে পারবেন এই কাঞ্চনজঙ্ঘার  নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। যা আপনি নিজ চোখে না দেখলে কখনো বিশ্বাস করতে পারবেন না। 

তাইতো শীত এলেই প্রকৃতিপ্রেমীরা ভীর জমায় পঞ্চগড়ে, পঞ্চগড়ের সেই ঐতিহাসিক মনোরম প্রকৃতি উপভোগ করার জন্য। পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া উপজেলার, তেতুলিয়া ডাকবাংলো, তেতুলিয়া বাইপাস, ভজনপুর করতোয়া সেতুসহ বিভিন্ন স্থানের ফাঁকা জায়গা থেকে খুব সকালে মেঘ এবং কুয়াশামুক্ত নীল আকাশে খালি চোখেই দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্যের মনোরম সেই দৃশ্য। 

তাছাড়াও পঞ্চগড়ের ভিতরগড় এলাকা থেকে সবচেয়ে স্পষ্ট দেখা যায়  কাঞ্চনজঙ্ঘা।  বছরের সব সময় কিন্তু কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা পাওয়া যায় না।  কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে হলে আপনাকে আসতে হবে, অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়, যখন আকাশে মেঘ থাকে না,এবং কুয়াশা পড়াও শুরু হয়নি, এই সময়ই  আপনি দেখতে পারবেন তেঁতুলিয়া থেকে বরফের ঢাকা ধবল পাহাড়ের চূড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা।  

লোকেশন  কিভাবে যাবেন
পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকেই আপনি কাঞ্চনজঙ্ঘা উপভোগ করতে পারবেন।  কাঞ্চনজঙ্ঘার বিভিন্ন স্থানে বেড়ানোর জন্য পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে গাড়ি বা মাইক্রোবাস ভাড়া করে যাওয়া ভালো।  সারাদিনের জন্য রিজার্ভ কারের ভাড়া পড়বে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা।আর মাইক্রোবাসের ভাড়া পড়বে ২৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। 

পঞ্চগড় শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এসব ভাড়ার গাড়ি পাওয়া যায়। 

  ৯.তেঁতুলিয়া ডাক বাংলো

ঐতিহাসিক তেঁতুলিয়া ডাকবাংলা টি অবস্থিত রয়েছে,পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে ভারতের সীমান্তবর্তী মহানন্দা নদীর তীরে। কুচবিহারের রাজা ভূমি থেকে প্রায় ১৫-২০ মিটার উঁচু গড়ের উপর এই ডাক বাংলোটি নির্মাণ করেছিলেন।

এছাড়াও এ স্থান থেকে হেমন্ত ও শীতকালে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দেখা যায়। এখন বর্তমানে জেলা পরিষদের অধীনে থাকা তেঁতুলিয়া ডাক বাংলোটিতে একটি পিকনিক কর্নার নির্মাণ করা হয়েছে।

বর্ষাকালে মহানন্দা নদীতে পানি থাকলে এর দৃশ্য খুবই আকর্ষণময় এবং আরও বেশি মনোরম হয়। শীতকালে ডাক বাংলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য অনেক পর্যটকের আগমন ঘটে। এত সুন্দর শান্তিপ্রিয়, মনোরম পরিবেশে ভ্রমণের জন্য আপনাকেও আমন্ত্রিত। 

লোকেশন  কিভাবে যাবেন
পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে ভারতের সীমান্তবর্তী মহানন্দা নদীর তীরে। পঞ্চগড় সদর থেকে তেঁতুলিয়া যাবেন, তেঁতুলিয়া বাজারে নেমে সেখান থেকে স্থানীয় পরিবহনের মাধ্যমে তেতুলিয়া ডাকবাংলাতে যেতে পারবেন। 
গোলকধাম মন্দির

১০.গোলকধাম মন্দির

পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের শালডাঙ্গা গ্রামে অবস্থিত। পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার প্রাচীন একটি মন্দির এই গোলকধাম মন্দির। বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে অবস্থিত এই প্রাচীন স্থাপনা গোলকধাম মন্দিরটি। 

গোলকধাম মন্দিরটি ১৮৪৬ সালে স্থাপিত হয় ও কৃষ্ণ গোস্বামীর স্মৃতি  রক্ষার্থে নির্মাণ করা হয়।  দেবীগঞ্জ উপজেলা সদর হতে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে মন্দিরটি অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রত্নতও্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতান্ত্রিক স্থাপনা। 

মন্দিরটি অষ্টাদশ শতকের স্থাপত্যের একটি খুব সৌন্দর্যজনিত ও চমৎকার নিদর্শন। এই মন্দিরটির স্থাপত্য কৌশল গ্রীক পদ্ধতির অনুরূপ করা হয়েছিলো। মন্দিরটি ৬ কোণা বিশিষ্ট  একটি উঁচু প্লাটফর্মের উপর নির্মিত। 

মন্দিরের চারপাশে প্রচুর গাছপালা রয়েছে।  এবং মন্দিরের ভিতরে একটি মাত্র কক্ষ রয়েছে। মন্দিরটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিকট তীর্থ স্থান হিসেবেও পরিচিত। সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকেরা প্রতিদিন এখানে পূজা অর্চনা করে থাকেন।

লোকেশন  কিভাবে যাবেন
পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের শালডাঙ্গা গ্রামে অবস্থিত। দেবীগঞ্জ উপজেলা সদর হতে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে মন্দিরটি অবস্থিত। পঞ্চগড় জেলা সদর থেকে লোকাল বাসে দেবিগঞ্জ হয়ে রিক্সা/ইজিবাইক নিয়ে ১২ কিলোমিটার উত্তর, পশ্চিমে অবস্থিত গোলকধাম মন্দির পরিদর্শনে যেতে পারবেন। 

পঞ্চগড় শহর থেকে সারাদিনের জন্য,  জায়গা ঘুরে দেখার জন্য মাইক্রোবাস বা কার রিজার্ভ করে নেওয়াই ভালো। রিজার্ভ কারের ভাড়া পড়বে ২০০০-২৫০০ টাকা। এবং মাইক্রোবাসের ভাড়া পড়বে ২৫০০-৩৫০০ টাকা।

 ১১.বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির। 

প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো এই বদেশ্বরী  মহাপীঠ মন্দিরে রাজা দক্ষের কন্যা ও ভোলানাথ শিবের স্ত্রী সতীর বাম পায়ের গোড়ালির অংশ রয়েছে।  তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দিরের বিশেষ গুরুত্ব। 

পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের করতোয়া নদীর তীরে এই সুদর্শন বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দিরটি অবস্থিত রয়েছে।  সুন্দর,মসৃন কারুকার্য বিশিষ্ট ও নানান ধরনের রঙ্গে ফুটে উঠেছে বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দিরটি। ২ দশমিক ৭৮ একর জায়গা জুড়ে স্থাপিত মন্দিরের নাম অনুযায়ী বোদা উপজেলার বোদা নামকরণ করা হয়েছে।  বর্তমানে মন্দিরটি বাংলাদেশ প্রত্নতন্ত্র অধিদপ্তরের অধীনে একটি সংরক্ষিত প্রত্নতত্ত্ব। 

শিব যখন সতীর মরদেহ কাঁধে নিয়ে পৃথিবীর সব জায়গায় উন্মাদের মতো ঘুরতে থাকেন এবং  প্রলয়নৃত্য শুরু করেন তখন নিরুপায় হয়ে স্বর্গের রাজা বিষ্ণু দেব তা সহ্য করতে না পেরে  চক্র দিয়ে সতীর দেহ খণ্ড, বিখন্ড করে দেন।  সতীর পুরো দেহ ৫১ টি খন্ডে বিভক্ত হয়।  

এই ৫১টি দেহ খন্ডের মধ্যে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে একটি ও পঞ্চগড়ের বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দিরে একটি খন্ড পতিত হয়। মহামায়ার খন্ডিত  অংশ যেখানে পড়েছে তাকে পীঠ বলা হয়। বদেশ্বরী মহাপীঠ তারই একটি মন্দির। মহামায়াবতীর খণ্ডিত সেই পতিত অংশকে কেন্দ্র করে বদেরশ্বরী মহাপীঠ মন্দির গঠিত হয়।  

লোকেশন কিভাবে যাবেন
পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের করতোয়া নদীর তীরে এই সুদর্শন বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দিরটি অবস্থিত রয়েছে। বাসে করে আপনি পঞ্চগড় জেলা থেকে বোদা উপজেলায় যাবেন। সেখান থেকে রিক্সা করে বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দিরে পৌঁছাতে পারবেন।  

অথবা আপনি পঞ্চগড় জেলা থেকে সিএনজি বা অটো রিক্সা রিজার্ভ করে নিয়ে যেতে পারেন।

কাজী এন্ড কাজী টি স্টেট
কাজী এন্ড কাজী টি স্টেট,

১২.কাজী এন্ড কাজী টি স্টেট, তেঁতুলিয়া

 পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায়, রওশনপুর নামক গ্রামে অবস্থিত রয়েছে এই কাজী এন্ড কাজী টি স্টেট টি। পঞ্চগড় শহর থেকে কাজী এন্ড কাজী টি স্টেট এর দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার।  আধুনিকতা আর প্রকৃতি যখন একসাথে মিশে যায়,তখন এক অকৃত্রিম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। 

বাংলাদেশের একমাত্র অর্গানিক চা বাগান এটি।  সৌখিনতার উদ্দেশ্যে মানুষ কিনা করতে পারে দেখুন, তারই উজ্জ্বল এক নিদর্শন হচ্ছে এই কাজী এন্ড কাজী টি স্টেটের ব্যক্তিগত বাংলো এবং অফিস কার্যালয়ের পুরো জায়গাটি। 

ভিতরে একটা লেকও আছে, তার ঠিক পাশেই কয়েকটা কটেজ এবং লেকের ঠিক মাঝেই ব্রিজ পাড়ি দিয়ে যাওয়া যায়,ক্লান্তি নিরসনের বিশ্রামাগারে।  ব্রিজ থেকে শুরু করে লেক,বিশ্রামাগার, হাঁটার রাস্তা, কাঠের কটেজ,বাংলো সবকিছুতেই নান্দনিকতার ও আভিজাত্যের স্পষ্ট ছাপ পাবেন।  

গেট দিয়ে যখন ভিতরে ঢুকবেন তখন হাতের ডান দিকেই দেখতে পাবেন লতাপাতায় ঘেরা অন্ধকারাচ্ছন্ন এক প্রবেশ পথ। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ,সবুজের মেলা পেরিয়ে যখন আপনি সেপথের শেষ প্রান্তে আসবেন, তখন আধুনিকতার ছোয়ায় কিছু দৃষ্টিনন্দন কটেজ আপনার দৃষ্টি কাড়বে,অপরূপ সৌন্দর্যে মহিমান্বিত। 

 

লোকেশন  কিভাবে যাবেন
পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায়, রওশনপুর নামক গ্রামে অবস্থিত রয়েছে এই কাজী এন্ড কাজী টি স্টেট টি। পঞ্চগড় শহর থেকে কাজী এন্ড কাজী টি স্টেট এর দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। পঞ্চগড় শহর থেকে গাড়ি বা মাইক্রোবাস ভাড়া করে যাওয়াটাই আপনার জন্য ভালো হবে।  সারাদিনের জন্য ঘুরতে রিজার্ভ কারের ভাড়া পড়বে প্রায় ২০০০-২৫০০ টাকা এবং মাইক্রোবাসের ভাড়া পড়বে ২৫০০-৩৫০০ টাকা। 

শহরের চৌরাঙ্গ মোড়ে বা পঞ্চগড় বাস স্টেশনের পাশেই এসব ভাড়ার গাড়ি পাওয়া যায়।  

ঢাকা টু পঞ্চগড় বাস পরিবহন 

ঢাকা থেকে পঞ্চগড় ভ্রমনের জন্য বেশ কিছু মান সম্পূর্ণ সার্ভিস প্রদানকারী বাস পরিবহন রয়েছে। যে কোনো জায়গায় ভ্রমনের জন্য প্রয়োজন আরামদায়ক এবং বাজেট কেন্দ্রীক যানবাহন। তাই আপনার সুবিধার জন্য আমরা ঢাকা থেকে পঞ্চগড়গামী বেশ কয়েকটি বাসের লিস্ট করেছি।

ঢাকা থেকে পঞ্চগড় যেহেতু লং ডিস্টেন্স সেজন্য এখানে এসি এবং নন এসি দুই ধরনের বাসই সচল রয়েছে। এ জন্য আপনার ভ্রমণের সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমরা এসি এবং ননএসি উভয় বাসের তথ্য দিয়ে টেবিলটি সাজিয়েছি। 

পাশাপাশি ভাড়ার পরিমাণ ও উল্লেখ করেছি যাতে করে আপনি আপনার বাজেটের ভিতরে ভালো মানের বাস নির্বাচন করে পঞ্চগড় ভ্রমণ করতে পারেন। নিচের টেবিল থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সংগ্রহ করে নিন এবং আপনার ভ্রমণকে আরও সহজ করে তুলন। 

ঢাকা-পঞ্চগড় এসি বাসের ভাড়া ও সময়সূচি-২০২৩

বাসের নাম বাসের ব্র্যান্ড বাসের ধরণ ভাড়া
নাবিল পরিবহন স্ক্যানিয়া (Scania) বিজনেস ক্লাস ১৯০০
নাবিল পরিবহন হিনো (Hino) ইকোনমিক ক্লাস ১৩০০
হানিফ এন্টারপ্রাইজ ভলভো (Volvo) বিজনেস ক্লাস ১৯০০

ঢাকা-পঞ্চগড় ননএসি বাসের ভাড়া ও সময়সূচি-২০২৩

বাসের নাম বাসের ব্র্যান্ড বাসের ধরণ ভাড়া
শ্যামলী পরিবহন হিনো (Hino) ইকোনমি ক্লাস ১০৫০
হানিফ এন্টারপ্রাইজ হিনো (Hino) ইকোনমি ক্লাস ১১০০
নাবিল পরিবহন হিনো (Hino) ইকোনমি ক্লাস ১১০০
রোজানা এন্টারপ্রাইজ হিনো (Hino) ইকোনমি ক্লাস ৮৫০

ঢাকা টু পঞ্চগড় ট্রেন পরিবহন 

আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা বিভিন্ন কারনে  বাসে ভ্রমণ করতে পারেন না তবে ভ্রমণ পিপাসু। তাই এ সকল ভ্রমণ পিপাসু বন্ধুদের জন্য আমরা ঢাকা টু পঞ্চগড়গামী ট্রেন পরিবহনের তথ্য সংগ্রহ করেছি। নিচের টেবিল থেকে ট্রেনের সময়সূচি, বিরতি স্টেশন এবং শ্রেনীভেদে ভাড়ার ডাটা প্রদান করা হলো।

ঢাকা টু পঞ্চগড় ট্রেনের সময়সূচী

স্টেশনের নাম ছুটির দিন ছাড়ায় সময় পৌছানোর সময়
ঢাকা টু পঞ্চগড় নাই ২২ঃ৪৫ ০৮ঃ৫০
পঞ্চগড় টু ঢাকা নাই ১২ঃ৩০ ২১ঃ৫৫
বিরতি স্টেশন নাম ঢাকা থেকে (৭৯৩) পঞ্চগড় থেকে (৭৯৪)
বিমান বন্দর ২৩ঃ১২ ২১ঃ২৫
সান্তাহার ০৪ঃ১০ ১৭ঃ০৫
পার্বতীপুর ০৫ঃ৫০ ১৫ঃ১৫
দিনাজপুর ০৬ঃ৩২ ১৪ঃ২০
পীরগঞ্জ ০৭ঃ২১ ১৩ঃ৩৩
ঠাকুরগাঁও ০৭ঃ৪৭ ১৩ঃ০৭

ঢাকা টু পঞ্চগড় ট্রেনের টিকিটের মূল্য

স্টেশন শোভন চেয়ার এসি চেয়ার এসি কেবিন
ঢাকা – পঞ্চগড় ৫৫০ ১০৫৩ ১৯৪২
ঢাকা – পার্বতীপুর ৪৪০ ৮৪০ ১৫৬৩
ঢাকা – দিনাজপুর ৪৬৫ ৮৯২ ১৬৪৯
ঢাকা – ঠাকুরগাঁও ৫২০ ৯৮৯ ১৮৩৩

সর্বশেষে,ভ্রমণ করতে আমরা সকলেই পছন্দ করি।  তবে পছন্দের জায়গা নির্ণয় এবং যাতায়াত সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আমরা অনেকেই চিন্তিত হই। তাই আপনি এই আর্টিকেলটা যদি মনোযোগ দিয়ে পড়েন, তবে পঞ্চগড়ের  দর্শনীয় স্থান সম্বন্ধে এবং যাতায়াতের সুযোগ-সুবিধা সম্বন্ধে জানতে পারবেন। 

অবশ্যই আপনার কোন কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা সর্বদাই  উত্তর দিতে প্রস্তুত। সুস্থ থাকুন নিরাপদে ভ্রমন করুন,ধন্যবাদ। 

আরো পড়ুন –

 

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents