Dreamy Media BD

জন্ডিস দূর করার উপায়

Jaundice

জন্ডিস (Jaundice) আমাদের সকলের কাছে পরিচিত। কমবেশি আমরা সকলেই জীবনে একবার হলেও জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছি। বড়দের তুলনায় শিশুরা সবচেয়ে বেশি জন্ডিসের আক্রান্ত হয়। জন্ডিস আসলে কোন রোগ নয়, জন্ডিস বিভিন্ন রোগের উপসর্গ। এই রোগ হওয়ার মাত্রই দ্রুত সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত, না হলে এই রোগ থেকে অন্যান্য ভয়াবহ রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে দেখা যায় জন্ডিস হওয়া মাত্রই মানুষজন কবিরাজের দ্বারস্থ হয়। কবিরাজ ঝাড় ফুকের মাধ্যমে জন্ডিস ভালো করার চেষ্টা করে। শেষমেষ ভালো তো হয়ই না বরং শরীরের ভেতর নানা রোগ তৈরি করতে থাকে। জন্ডিসকে সাধারণ কোন রোগ ভেবে ফেলে রাখা উচিত নয়। তাই আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানাবো কিভাবে দ্রুত জন্ডিস ভালো করবেন। জন্ডিস রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে এবং লক্ষণগুলো চিহ্নিত করতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়া শুরু করুন।

জন্ডিস কি

রক্তে যদি বিলিরুবিনের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায় তাহলে তাকে জন্ডিস বলে। বিলরুবিন শরীরের টিস্যু ও রক্তে উৎপাদিত হয়। সাধারণত লাল রক্ত কণিকা যদি কোন কারণে ভেঙে যায় তাহলে হলুদ রঙের বিলরুবিন তৈরি হয়। মূলত লিভার দ্বারা ফিলটার করার পর  বিলরুবিন শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। যদি কোন কারনে রক্ত থেকে লিভারে বিলরুবিন প্রবেশ না করে আর লিভার দ্বারা ফিল্টার না হয় তখন শরীরে বিলরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যায় যা জন্ডিসের কারণ হয়। আমাদের দেহের রক্তে বিলুরুবিনের স্বাভাবিক ঘনত্ব হল ১.২ mg/dl। আর যদি জন্ডিস হয় তাহলে রক্তে বিলুরুবিনের মাত্রা ৩ mg/dl এর উপরে চলে যায়। ই রোগে বিলরুবিনের মাত্রা প্রতি ডেসিমিটারে তিন মিলিগ্রাম অতিক্রম করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের মধ্যে জন্ডিস দেখা যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও হতে পারে। সাধারণত জন্ডিসের লক্ষণ গুলোর উপর ভিত্তি করে ডাক্তাররা জন্ডিসের ধরন নির্ণয় করে এরপর সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করে। সময় মত যদি জন্ডিসের চিকিৎসা না করা হয় তাহলে লিভার ফেলিওর হতে পারে। 

জন্ডিস কেন হয়

জন্ডিস কোন রোগ নয়, এটা বিভিন্ন রোগের উপসর্গ। জন্ডিস হলে রক্তের বিলরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। কয়েকটি উপায়ে বিলরুবিনের মাত্রা বাড়তে পারে। এরমধ্যে কয়েকটি কারণ হলো:

  • ভাইরাসের আক্রমণের ফলে জন্ডিস হতে পারে। যেমন, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস এ,হেপাটাইটিস সি।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি নিজের শরীরের বিরুদ্ধে কাজ করে।
  • অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন করলে।
  • বিরল জেনেটিক রোগের মাধ্যমে।
  • পিত্তথলিতে ক্যান্সার হলে।
  • পিত্তথলিতে পাথর হলে।
  • হিমোলাইটিক এনিমিয়া রোগ হলে।
  • অগ্নাশয়ে টিউমার হলে।
  • কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণেও জন্ডিস হয়।

জন্ডিসের ধরন

জন্ডিসের তিনটি প্রধান ধরন আছে। এগুলো হচ্ছে,  প্রি-হেপাটিক জন্ডিস, পোস্ট -হেপাটিক জন্ডিস, এবং হেপাটোসেলুলার জন্ডিস। প্রি-হেপাটিক জন্ডিস হেমলাইটিক জন্ডিস নামেও পরিচিত। লক্ষণের বৃদ্ধিতে ডাক্তার রোগীকে বিভিন্ন টেস্টের মাধ্যমে জন্ডিসের ধরন নিশ্চিত করেন এবং এরপরে চিকিৎসা শুরু করেন।

জন্ডিসের লক্ষণ

জন্ডিস হলে শরীরে কিছু লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা যায়। তবে জন্ডিসের কিছু উপসর্গ অন্যান্য রোগের সাথেও মিলে। তাই ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হতে হবে যে জন্ডিস হয়েছে কি না। নিচে  জন্ডিসের কয়েকটি লক্ষণ ও উপসর্গ দেওয়া হলো:

১) জন্ডিসের প্রধান লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি হল ‌ শরীরের ত্বক এবং চোখের রং হলদেটে ও ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।

২) প্রসাব গাঢ় হলুদ ও কমলা রঙের হয়। প্রসাবের সাথে অতিরিক্ত বিলিরুবিন যাওয়ার কারণে এমনটা হয়।

৩) শরীরে অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব হয়।

৪) তলপেটে ব্যথা হয়। তলপেটে ব্যথা জন্ডিসের একটি মারাত্মক লক্ষণ। এই লক্ষণটি প্রকাশ করার সাথে সাথেই রোগীকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নেওয়া প্রয়োজন।

৫) শরীরের ওজন কমে যাওয়া। এ সময় ক্ষুধামন্দা দেখা যায়। এছাড়া পিত্তরস উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে খাদ্য হজমেও ব্যাঘাত ঘটে। এজন্য শরীরের ওজন দ্রুত কমতে থাকে।

৬) বমি হওয়া। লিভারের কাজে সমন্বয় থাকে না যার জন্য বমি হয়।

৭) জ্বর আসে। জন্ডিসের অন্যতম প্রধান আরেকটি লক্ষণ হলো জ্বর আসা। সাধারণত শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হলে জ্বর আসে। এক্ষেত্রেও বিষয়টা একই। তবে অতিরিক্ত জ্বর আসা মোটেও ভালো নয়।

৮) ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। জন্ডিস হলে পিত্তথলি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না এবং সঠিকভাবে পিত্তরস পরিবহন করতে পারে না, যার কারণে ক্ষুধামন্দা  দেখা দেয়‌।

৯) মোলের রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়। জন্ডিস হলে লিভারের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটে যার কারনে বিলরূবিন উৎপাদন ব্যাহত হয়। এইজন্য এই সময় মলের রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়।

১০) শরীরে চুলকানি হয়। হাতে, পায়ে, মুখে, মাথায় ইত্যাদি স্থানে চুলকানি হয়। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি হতে পারে।

১১) অনিদ্রা: সময় শরীরের অবস্থা ঠিক না থাকায় ঘুম হয় না। বিশেষ করে রাতে একদমই ঘুম হয় না। আবার যদি ঘুম আসে তাহলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

জন্ডিস

জন্ডিস হলে করণীয়

১) চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ধরনের ঔষধ গ্রহণ করবেন না।

২) প্রচুর তরল খাবার খান।

৩) প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন

৪) পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।

৫) বিশুদ্ধ পানি পান করুন।

৬) বাইরের খাবার পরিহার করতে হবে।

৭) শরীরের রক্ত নেয়ার প্রয়োজন হলে নতুন সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।

৮) নরম ও সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে।

৯) অ্যালকোহল গ্রহণ করা যাবেনা।

১০) নিয়মিত বিলিরুবিন চেকআপ করুন।

১১) জন্ডিসের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।

কিভাবে জন্ডিস ছড়ায়

জন্ডিস ভাইরাস সাধারণত রোগীর মলে থাকে যার কারণে রোগ ছড়াতে পারে। এছাড়াও দূষিত পানির মাধ্যমে জন্ডিস ছড়াতে পারে। আপনি যদি এই রোগ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চান তাহলে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করুন। নিজের সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন নিয়মিত গোসল করুন। এছাড়াও খাদ্য খাওয়ার আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেওয়া উচিত যাতে জন্ডিস ও অন্যান্য রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি না থাকে।

জন্ডিসের চিকিৎসা

যেহেতু জন্ডিস কোন রোগ নয় এটি রোগের উপসর্গ তাই জন্ডিসের তেমন নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসাও নেই। তবে জন্ডিসের লক্ষণগুলো দেখা দেওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের কাছে যাবেন চিকিৎসক বিভিন্ন টেস্টের মাধ্যমে বুঝতে পারবে যে আপনার কিসের অভাবে জন্ডিস হয়েছে এবং ওই রোগের চিকিৎসা করবে। আবার জন্ডিসের জন্য যদি অন্য কোন রোগ হয় তাহলে সেটিও বলবে। যেমন জন্ডিসের কারণে যদি চুলকানি হয় তাহলে চুলকানি নিরাময়ে কলেস্টাইরামিন ঔষধ দেবে। আর ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এ সময় অযথা ঔষধ গ্রহণ করা যাবে না তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

জন্ডিস টেস্ট

জন্ডিস নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে চিকিৎসকরা সাধারণত বিলরুবিন ব্লাড টেস্ট করে থাকেন।

বিলরুবিন ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা নির্ণয় করা হয়। এই টেস্টটি করার জন্য রোগীর শরীর থেকে রক্ত নেওয়া হয়। রক্ত নেওয়ার ৪ ঘন্টা আগে থেকে রোগী কোন প্রকার খাবার ও পানীয় পান করতে পারবে না। ল্যাবরেটরীতে নিয়ে রক্তে বিলিরুবিন  মাত্রা নির্ণয় করা হয়। যদি কনজুগেটেড বিলরুবিন ০.৩ mg/dL এর কম হয় এবং টোটাল বিলরুবিন ০.১ থেকে ১.২ mg/dL এর মধ্যে হয় তাহলে বিলরুবিন ব্লাড টেস্টটি নরমাল আসবে। আর যদি এর থেকে বেশি হয় তাহলে রোগীকে জন্ডিস আক্রান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

বিলিরুবিন ব্লাড টেস্ট ছাড়াও ডাক্তার রোগীকে আরো কয়েকটি টেস্ট দিতে পারে। সেগুলো হলো: 

  • লিভার ফাংশন টেস্ট
  • হেপাটাইটিস ভাইরাস প্যানেল।
  • লিভার ফাংশন টেস্ট‌।
  • লিভার বায়োপসি।
  • CBC বা কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট।
  • আ্যবডোমিনাল সিটিস্ক্যান।
  • আ্যবডোমিনাল আল্ট্রাসাউন্ড।
  • ম্যাগনেটিকরেসোন্যান্স কোলানজিওপ্যানক্রিয়েটোগ্রাফি (MRCP)
  • কোলেস্টেরল লেভেল।
  • প্রোথ্রোম্বিন টাইম।
  • এন্ডোসকপিক কোলানজিওপ্যানক্রিয়েটোগ্রাফি(ERCP)

জন্ডিসের ঘরোয়া চিকিৎসা

জন্ডিসের ওষুধ যত কম সেবন করা যাবে ততই ভালো তাই ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে জন্ডিস দূর করা ভালো। জন্ডিস দূর করার কিছু ঘরোয়া কার্যকরী পদ্ধতি হলো:

১) আখের রস: আখ আমাদের দেশে বেশ সহজলভ্য। জন্ডিস দূর করতে দিনে কয়েকবার আখের রস পান করুন। নিয়মিত আখের রস পান করা জন্ডিসের জন্য বেশ উপকারী। তবে হ্যাঁ বাহিরে বিক্রি করা আখের রস পরিহার করুন। চেষ্টা করুন বাড়িতে আখের রস বানিয়ে খাওয়ার।

২) পেপে পাতা: পেপে পাতাতে পাপাইন নামক এনজাইম থাকে। এটি জন্ডিস নিরাময়ে বেশ কার্যকর। পেপে পাতা ও মধু একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিয়মিত সেবন করুন।

৩) কালোজিরা: কালোজিরাকে সবরোগের মহাঔষধ বলা হয়। কালোজিরাতে থাকা উপাদান জন্ডিস নিরাময় বেশ কার্যকর।

৪) ছাগলের দুধ: ছাগলের দুধে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান আছে যা শরীরের জন্য বেশ উপকারী। ছাগলের দুধে থাকা অ্যান্টিবডি জন্ডিস নিরাময়ের সাহায্য করে। এজন্য জন্ডিস দূর করতে প্রতিদিন এক কাপ ছাগলের দুধ পান করুন।

৫) পানি: জন্ডিস আক্রান্ত হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা‌ অত্যন্ত জরুরী। এতে করে শরীরের ইমিউনিটি বাড়বে এবং ডিহাইড্রেশন হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমবে। এছাড়াও রেচন ক্রিয়াতে পানি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এ কারণেই জন্ডিস হলে প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৭-১০ গ্লাস পানি পান করুন । পানির সাথে গ্লুকোজ অথবা স্যালাইন মিশে খাওয়ার চেষ্টা করুন।

৬) ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: যেকোনো রোগেই ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এটা দ্রুত হজমে সাহায্য করে। জন্ডিস রোগীরা বাদাম, ওটমিল ,সবজি ইত্যাদি খাবার খেতে পারেন।

৭) ইমিউনিটি বাড়ায় এমন খাবার: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এই জাতীয় খাবারগুলো। এ সময়ে শরীরে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তাই এগুলো মোকাবেলা করতে প্রয়োজন পরে শক্তির। তাই জন্ডিস রোগিরা দুধ ,ডিম, প্রোটিন ,ফল ,মধু ,শাকসবজি ইত্যাদি খাবেন।

৮) হারবাল টি: এটি জন্ডিস রোগীদের জন্য খুব উপকারী। হারবালটি হজমের জন্য খুবই উপযোগী। এছাড়াও এতে আছে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার অনেক উপাদান।

৯) দ্রুত হজম হয় এমন খাবার: দ্রুত হজম হয় এমন খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। যেমন, তরল খাবার, ভেজিটেবল ,জুস ,স্যুপ ইত্যাদি। এ সময় রান্নায় হলুদ দিবেন না কারণ জন্ডিস রোগীরা হলুদের গন্ধ সহ্য করতে পারেনা।

১০) চিনি: জন্ডিস রোগীদের জন্য চিনি বেশ উপকারী। তবে সেটা সরাসরি চিনি খাওয়া নয়, চিনির বদলে আখের গুড়, আখের রস, গুড়ের শরবত ইত্যাদি খাবেন।

১১) লেবুর শরবত: লেবুর রসে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা লিভারের জন্য বেশ উপকারী। জন্ডিস হলে নিয়মিত ৩-৪ গ্লাস মধু মিশ্রিত লেবুর শরবত পান করুন।

১২)আনারস: আনারস লিভার থেকে পিত্তরস রূপে জমে থাকা বিলিরুবিন বের করে দিতে সাহায্য করে। তাই জন্ডিস হলে বেশি বেশি আনারস খাবেন। চাইলে আনারসের জুসও খেতে পারেন। 

১৩) মুলার জুস: মুলা এবং মুলা পাতার জুস জন্ডিসের জন্য বেশ উপকারী। এটি খিদে বাড়ায় এবং পেট পরিষ্কার করে। এজন্য নিয়মিত  মোলা ও মুলা পাতা ভালো করে  ছেঁচে  রস বের করে পান করুন।

১৪)পুদিনা পাতা: জন্ডিস থেকে মুক্তি পেতে পুদিনা পাতা বেশ কার্যকর। যকৃতের বিভিন্ন কাজে পুদিনা পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই প্রতিদিন চার থেকে পাঁচটি প্রতিটা পাতা খাওয়ার চেষ্টা করবেন অথবা কোন জুসের সাথে পুদিনা পাতা খাবেন।

১৫) দই: প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ  দই রক্তে বিলোরুবিনের লেভেলকে কমিয়ে আনতে পারে। তাই প্রতিদিন অল্প পরিমাণে টক দই খাবেন এটা জন্ডিসের জন্য বেশ উপকারী।

১৬) টমেটোর রস: টমেটোর রসে আছে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপেন। এটি রক্ত বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। তাই জন্ডিস হলে নিয়মিত টমেটো খাবেন।

১৭) ষোল: জন্ডিস হলে প্রতিদিন এক গ্লাস ষোলের সাথে অল্প পরিমাণে গোলমরিচের গুড়া  মিশিয়ে পান করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

জন্ডিস হলে যেসব খাবার খাবেন

 জন্ডিস হলে যকৃত ও পিত্তথলির উপর চাপ পড়ে না এমন খাবার খাওয়া উচিত। সঠিক খাবার খেলে এবং পূর্ণ বিশ্রামে থাকলে এমনিতেই জন্ডিস সেরে যায়। তাই চলুন জেনে নেই জন্ডিস হলে যেসব খাবার খাওয়া উচিত:

১) গোটা শস্য: কার্বোহাইড্রেট এর চাহিদা পূরণের জন্য ওটস, রুটি ,বাদামি চাল ইত্যাদি খেতে পারেন। গোটা শস্যতে প্রচুর পরিমাণে আসও ভিটামিন থাকে যা ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে।

২) প্রোটিন: খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন মাছ,মাংস, মুরগির মাংস, ডাল পরিমাণ  রাখতে হবে। তাহলে রোগী দুর্বল হয়ে পড়বে না। অনেকে এভাবে জন্ডিস হলে মাছ-মাংস খাওয়া যাবে না কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল।

৩) ফল: তরমুজ ,আনারস ,পেঁপে ,পাকা আম ,কলা, জলপাই ,আঙ্গুর ,কমলা ,এভোকেডো ইত্যাদির মতো সহজপাচ্য ফল প্রতিদিন খাবারের তালিকায় রাখতে হবে।

৪) সবজি: গাজর, মুলা ,বিট , ব্রকলি, টমেটো ,ফুলকপি, মিষ্টি আলু ,মিষ্টি কুমড়া, পাতাকপি ,পালং শাক ইত্যাদি সবজি জন্ডিস রোগীর জন্য খুব ভালো।

৫) এন্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার: এন্টি এক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার জন্ডিস রোগীর জন্য খুবই ভালো। এগুলো শরীরের  রোগ ক্ষমতাও বাড়ায়। নিয়মিত বাদাম খেতে পারেন। এছাড়াও সামান্য আদা কুচি বা আদার রস বা আদা চা ও খাওয়া যেতে পারে। এগুলো যকৃতের জন্য ভালো।

৬) পানি: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। তবে খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত পানি পান করার প্রয়োজন নেই। পানি শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়। ডাবের পানি, আখের রস শরীরে পানির চাহিদা পূরণ করে। তবে রাস্তার পাশে থেকে আখের রস পান করবেন না ঘরে তৈরি করে পান করার চেষ্টা করুন।

জন্ডিস হলে যা খাওয়া যাবেনা

চিনি বা অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত তেল মসলাযুক্ত খাবার, কাচা লবণ, গরুর মাংস ,ছাগলের মাংস,ট্রান্সফেট, অ্যালকোহল, স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত খাবার ইত্যাদি খাওয়া যাবেনা।

সবশেষে,

জন্ডিস কোন রোগ নয় তাই বলে একে অবহেলা করার কিছু নেই। জন্ডিস থেকে সৃষ্টি হতে পারে বড় কোন রোগ। তাই জন্ডিসের লক্ষণগুলো প্রকাশ করার সাথে সাথেই এর সঠিক চিকিৎসা করুন। ঘরোয়া উপায় চিকিৎসা করার পরও যদি জন্ডিস দূর না হয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।

আরো পড়ুন –

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents