Dreamy Media BD

পাইলস থেকে মুক্তির উপায়

Piles

পাইলস এমন একটি রোগ যা খুবই যন্ত্রনাদায়ক। একে অর্শ ,গেজ বা হেমোরয়েডও বলা হয়। এই রোগের কারনে মলদ্বারের ভেতরে ও বাইরে এবং মলদ্বারের নিচের অংশে ফোলা ভাব দেখা যায়। এ কারণে মলদ্বারের বাইরে ও ভিতরে এক জায়গায় আঁচিল তৈরি হয়। আঁচিল মাঝে মাঝে ভেতরে থাকে আবার কখনো বেরিয়ে আসে। আমাদের দেশে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষই কোন না কোন বয়সে পাইলসের সমস্যায় ভোগে। সময়মতো এই রোগের চিকিৎসা না করলে গুরুতর পর্যায়ে যেতে পারে। এই জন্য রোগীকে সঠিক সময় পাইলসের চিকিৎসা করানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি দুরারোগ্য রোগ। প্রাথমিক অবস্থায় বাড়িতে ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ দূর করা সম্ভব। তবে তীব্রতার উপর ভিত্তি করে কখনো কখনো চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োজন হয়। এবং তীব্র আকার ধারণ করলে অপারেশন করতে হয়। এই রোগ থেকে মুক্তির সহজ কিছু উপায় আছে। চলুন তাহলেই উপায় গুলো সম্পর্কে জেনে নিই:

পাইলস কি

আমাদের শরীরে হওয়া গোপন ক্ষতিকর রোগ গুলোর মধ্যে পাইলস অন্যতম। পাইলস আমাদের দেহের পায়ুপথ ফুলে সৃষ্টি হওয়া এক জটিল রোগ। এর আরেকটি নাম হচ্ছে অর্শরোগ। আমাদের দেহে বৃহদান্ত্রের  শেষাংশে রেকটাম  নামের একটি বস্তু থাকে যার বাহিরের ও ভিতরের অংশ দেখতে বালিশের মত ও রক্ত শিরার জালিকা থাকে। এগুলোর প্রসারনের কারণে মূলত সৃষ্টি হয় পাইলস।

পাইলস কিভাবে হয়

এই রোগ হওয়ার আসল কারণ এখন পর্যন্ত গবেষণা করেও জানা যায়নি। তবে নির্দিষ্ট কিছু কারণ এবং অভ্যাসের জন্য আমাদের দেহে এই রোগ বাসা বাঁধে। ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মানুষের মধ্যেই এই রোগ বেশি দেখা যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৩০ বছরের নিচের কারো এই রোগ হতে পারে আর ২০ বছরের নিচের মানুষের এই রোগ হয় না বললেই চলে। এই রোগে মহিলাদের চাইতে পুরুষরাই বেশি আক্রান্ত হয়। এই রোগটি বহিরাগত কোন বস্তু দ্বারা সৃষ্ট রোগ নয়, এটি মূলত নির্দিষ্ট কিছু অভ্যাস ও নির্দিষ্ট কিছু কারণের  জন্য সৃষ্ট একটি রোগ। এই রোগকে  অ্যাপেন্ডিক্স, এজমা ও টনসিল এর সাথে তুলনা করা যায়। আমাদের কিছু ভুলের কারণে দেহের নির্দিষ্ট একটি সংবেদনশীল অংশ পরিবর্তন হয়ে এই রোগের সৃষ্টি হয়।

আমাদের পায়ু পথে থাকা রেকটামের চারিদিকে রক্তশিরাগুলো দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রসারিত ও সংকুচিত হয়। কিন্তু যখন কোন সংক্রমণ এই অংশে আক্রমণ করে তখন এই শিরা গুলো  অতিরিক্ত মাত্রায় ফুলে যায় এবং এই শিরাগুলো ফুলে এই রোগের সৃষ্টি করে। এই অবস্থাকে হেমারয়েডস বলা হয়। এই শিরা গুলো ফুলে যাওয়ার কারণে  অতিরিক্ত রক্ত চাপের সৃষ্টি হয় এবং একসময় শিরা গুলো ফেটে যায় ফলে রক্তক্ষরণ হয়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের সাথে চুলকানিও দেখা যায়। পায়ু পথের নিচের অংশ ফুলে যাওয়ার কারণে মলত্যাগের সময় পায়ুপথ দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়। যা প্রচন্ড যন্ত্রণাদায়ক এবং অস্বস্তিকর। যদি কোন মানুষ দীর্ঘকাল ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভোগে তাহলে তার পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

পাইলস হওয়ার কারণ

পাইস মূলত হয়ে থাকে নির্দিষ্ট কিছু কারণ ও অভ্যাসের জন্য। এগুলো হচ্ছে:

১) অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা এই রোগের অন্যতম প্রধান কারণ।

২) পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

৩) অতিরিক্ত সময় টয়লেটে বসে থাকা।

৪) মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দেওয়া।

৫) দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভোগা।

৬) দীর্ঘ সময় একটি স্থানে দাঁড়িয়ে থাকা।

৭) টাইট পোশাক পর।

৮) ভারী কাজ করা।

৯) পায়ুতে যৌন মিলন করলে।

১০) অতিরিক্ত কায়িক শ্রম করা।

১১) স্থূলতা।

১২) লিভারে  রোগ থাকলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

১৩) গর্ভকালীন সময়ে।

১৪) হরমোনের প্রভাব।

১৫) ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার কম খেলে।

১৬) দীর্ঘদিন ধরে ডায়রিয়া রোগে ভুগলে।

১৭) বংশগত কারণে।

পাইলস কি

পাইলসের প্রকারভেদ

পাইলস সাধারণত দুই প্রকার।

১) অভ্যন্তরীণ পাইলস

২) বাহ্যিক পাইলস

এই প্রকারভেদটি মূলত মলদ্বার থেকে এর দূরত্বের উপরে ভিত্তি করে করা হয়েছে। এদের অবস্থান পায়ুপথ থেকে ২-৪  সেন্টিমিটার এর মধ্যে।

অভ্যন্তরীণ পাইলস:

প্রথম পর্যায়: এই পর্যায়ে পাইলসের অবস্থান ভিতরের দিকে হয়ে থাকে এবং মলদ্বারের ভেতরে তা ফুলে অবস্থান করে। এই পর্যায়ে পাইলস বাইরে বের হয়ে এসে প্রলেপ গঠন করে না।

দ্বিতীয় পর্যায়: মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের ফলে পাইলস বের হয়ে আসে। কিন্তু পরে তা নিজ থেকেই ঠিক হয়ে যায়।

তৃতীয় পর্যায়: রোগের মাত্রা বেড়ে যায়। যার কারনে পাইলস বের হয়ে আসলেও তা আর নিজ থেকে ঠিক হতে পারে না। এর জন্য নিজে তা ঠিক করে নিতে হয় যে কারনে  যন্ত্রণা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

চতুর্থ পর্যায়: এই পর্যায়ে এসে পাইলস অতিরিক্ত পরিমাণে ফুলে যায়। অতিরিক্ত  ফুলে যাওয়ার কারণে মলত্যাগ ছাড়াও বের হয়ে আসে। বের হয়ে আসলে তা নিজে থেকে তো ঠিক হয়না এমনকি নিজেও ঠিক করে দেয়াও যায় না যে কারণে তা বাইরেই থেকে যায়। এর জন্য ওই স্থানে প্রলেপের সৃষ্টি হয়। এই পর্যায়ে এসে গেলে অপারেশন ছাড়া ঠিক করার আর কোন উপায় থাকে না।

বাহ্যিক  পাইলস:

বাহ্যিকও পাইলস মূলত পায়ু পথের বাইরে সৃষ্টি হয়। পায়ুপথের বাইরের অংশে ছোট ছোট গোটার সৃষ্টি হয়। এগুলো প্রচুর পরিমাণে চুলকানি হয়। বাহিক্য পাইলস প্রচুর যন্ত্রণাদায়ক হয় এবং কোথাও বসার সময় যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায়।

বাহ্যিক পাইলসের লক্ষণ

এ রোগের কিছু সাধারন লক্ষণ আছে যা বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় পাইলসের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। তবে বাহ্যিক্য ও অভ্যন্তরীণ পাইলস লক্ষণগুলো আলাদা হয়। চলুন পাইলসের লক্ষণগুলো জেনে নেই:

সাধারণ লক্ষণ:

১) পায়ুপথের মুখে চুলকানি হয় এবং পায়ুপথে ব্যাথা করে।

২) মলত্যাগের সময় ও মলত্যাগের পরে রক্তক্ষরণ হয়। 

৩) মলদ্বারের চারিপাশে ছোট ছোট শক্ত গোটা হয়।

বাহ্যিক পাইলসের লক্ষণ:

১) পায়ু পথের চারিপাশে প্রচন্ড চুলকানি হয়।

২) পায়ুপথের মুখের ও চারপাশের অংশ ফুলে যায় এর ফলে প্রচন্ড ব্যথা হয়।

৩) কোথাও বসতে গেলে ব্যথা করে।

৪) পায়ুপথ দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়।

অভ্যন্তরীণ পাইলসের লক্ষণ:

১) মলত্যাগের সময় ব্যাথাহীন রক্তপাত হয়।

২) সমস্যা যখন বেড়ে যায় তখন রক্তপাতের সময় ব্যাথা হয়।

৩) মলত্যাগের সময় পাইলস বের হয়ে আসে।

৪) মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ অনুভব হয়।

পাইলস রোগ নির্ণয় এবং পরীক্ষা

পাইলস থেকে মুক্তির উপায় খোঁজার পূর্বে সবার আগে যেটা জরুরী সেটা হল পাইলস রোগ নির্ণয় করা। পাইলস রোগ নির্ণয়ের জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি আছে। নিচে পদ্ধতি গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো:

১)ডিজিটাল রেকটাল পরীক্ষা: পাইলস আছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য একটি গ্লাভড, লুব্রিকেটেড আবৃত্ত আঙ্গুল মলদ্বারে প্রবেশ করানো হয় যাতে ফোলাশিরা অনুভব করা যায়।

২) অ্যানোস্কোপি: মলদ্বারের আস্তরণ দেখার জন্য একটি আলোক নল ব্যবহার করা হয়। এতে করে খুব সহজেই  নিশ্চিত হওয়া যায় পাইলস আছে কিনা। 

৩) সিগমডোস্কপি: একটি ক্যামেরা সহ আলোক টিউব ব্যবহার করা হয় মলদ্বারের নিচের অংশ‌ ও ভেতরের অংশ‌ দেখার জন্য।

এই পরীক্ষাগুলো খুবই অস্বস্তিকর কিন্তু বেদনাদায়ক নয়। এই পরীক্ষাগুলো আ্যনেস্থেসিয়া ছাড়াই ডাক্তারের কক্ষে পরীক্ষা করা হয়। এইজন্য আপনাকে কষ্ট করে হসপিটালে থাকার প্রয়োজন হয় না।

আর আপনার লক্ষণ গুলোর পাইলসের নাকি ক্লোন ক্যান্সারের তা নিশ্চিত করার জন্য একটি কোলোনোস্কোপি করা হয়। এই পদ্ধতির জন্য আ্যনেস্থেসিয়ার প্রয়োজন হয়।

পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা

পাইলসের চিকিৎসা নির্ভর করে পাইলস কোন পর্যায়ে আছে। সাধারণ পর্যায়ে পাইলসকে ঘরোয়া উপায়ে  দূর করা সম্ভব। চলুন জেনে নেই পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে:

১) মুলার জুস: এই সবজিটি পাইলস সমস্যার জন্য অত্যন্ত উপকারী। আপনি যদি নিয়ম করে মুলার রস খান তাহলে আপনি অর্শ বা পাইলস থেকে খুব সহজে মুক্তি পাবেন। প্রথমদিকে মুলার রস খেতে আপনার অসুবিধা হতে পারে তাই প্রথমদিকে অল্প অল্প করে খাবেন। আস্তে আস্তে যখন আপনার অভ্যাস হয়ে যাবে তখন প্রতিদিন নিয়ম করে এক গ্লাস মুলার রস খাবেন। এভাবে নিয়মিত মুলার রস খেলে অতি দ্রুত পাইলস থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।

২) লেবু ও  আদার রস: ডিহাইড্রেশন পাইলসের অন্যতম প্রধান কারণ। আপনি নিয়মিত আদা ও লেবুর রসের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খাবেন। এতে আপনার শরীর হাইড্রেট হবে সেই সাথে পাইলস থেকেও মুক্তি পাবেন।

৩) মলত্যাগের সময় বসার ধরন: অনেক সময় ভুল পদ্ধতিতে মলত্যাগে বসার কারণে অতিরিক্ত চাপের প্রয়োজন হয়। যখন কমোডে মলত্যাগ করবেন তখন পায়ের নিচে একটি টুল দিয়ে বসবেন এবং একটু সামনের দিকে ঝুঁকে বসার চেষ্টা করবেন।

৪) কাঁচা পেঁয়াজ: পাইলসের কারণে মলদ্বারে যে রক্তক্ষরণ হয় সেটা কমাতে কাঁচা পেঁয়াজ খান। কাঁচা পেঁয়াজ শুধু রক্ত পড়া কমাতে নয় অন্ত্রের যন্ত্রণাও কমাতে সাহায্য করে।

৫) বেদানা: পাইলসের সমস্যা দূর করতে বেদেনা বেশ কার্যকর। এর জন্য প্রথমে বেদনার দানা গুলো ভালো করে ছাড়িয়ে নিন এবং একটি পাত্রে পানি ও এই দানাগুলো নিয়ে ফোটাতে থাকুন যতক্ষণ পর্যন্ত পানির রং না বদলায়। পানির রং বদলানোর পর একটি ঠান্ডা করুন এবং সেকে নিন। এবার এটা নিয়ম করে দিনে দুইবার পান করুন। নিয়মিত পান করলে খুব তাড়াতাড়ি পাইলস দূর হয়ে যাবে।

৬) ডুমুর: ডুমুর পাইলসের সমস্যার সমাধানে অনেক ভাল কাজ করে। এইজন্য কয়েকটি শুকনো ডুমুর নিয়ে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে উঠে এই পানি অর্ধেক পান করতে হবে এবং অর্ধেক রেখে দিতে হবে বিকালে পান করার জন্য। কিছুদিন এভাবে পান করলে নিজেই ফলাফল বুঝতে পারবেন।

৭) হলুদ: পাইলসের সমস্যার সমাধানে হলুদ বেশ উপকারী। এজন্য আপনাকে কয়েকটি কাঁচা হলুদ ও পানি নিয়ে ভালোভাবে ফুটাতে হবে। এবার এই ফোটানো পানি নিয়মিত পান করতে হবে। এভাবে নিয়মিত পান করলে খুব দ্রুত পাইলস থেকে মুক্তি পাবেন।

৮) কলা: কলা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে সবচেয়ে বেশি উপকারী। কলা কোন কষ্ট ছাড়াই মল ত্যাগ করতে সাহায্য করে। কলা খেলে মন ত্যাগ করার সময় কোন প্রকার চাপ প্রয়োগ করতে হয় না। এইজন্য কলা খেলে পাইলসের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। আর কলা যদি সয়াবিনের দুধ দিয়ে খান তাহলে আরো ভালো উপকার পাবেন।

৯) ডাল: ডাল পাইলসের সমস্যা সমাধানের জন্য খুবই উপকারী। এই সমস্যার সমাধান করতে, খেসারি লাল ,মসুরির ডাল ,তিসী ডাল ইত্যাদি  খাদ্য তালিকায় যোগ করুন।

পাইলস

পাইলসের চিকিৎসা 

পাইলসের বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে,

১) লেজার থেরাপি

২) আলট্রয়েড

৩) ইঞ্জেকশন

৪) রিং লাইগেশন

ইনজেকশন, ক্রায়োথেরাপি এবং আল্ট্রয়েড হল প্রাথমিক চিকিৎসা। রোগের মাত্রা যদি বেড়ে যায় তাহলে লেজার থেরাপি আর রিং লাইগেশন করা হয়।

এই রোগের যদি সঠিক চিকিৎসা না করা হয় তাহলে ক্যান্সারের রূপ নিতে পারে। এইজন্য শেষ পর্যায়ে যাওয়ার আগেই সঠিক চিকিৎসা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা হলো রিং লাইগেশন এতে শতভাগ রোগ নিরাময় হয়। তবে এই চিকিৎসাটি যাদের অবস্থা শোচনীয় তাদের জন্যই করা হয়। আবার এই চিকিৎসাটি অনেক ব্যয়বহুল তাই সব রোগী এই চিকিৎসাটি করতেও পারে না তাই ডাক্তাররা সবাইকে এই চিকিৎসাটির পরামর্শ দেয় না। যাদের রোগ চরম আকার ধারণ করে এবং এই চিকিৎসাটি করতে সক্ষম তাদের ক্ষেত্রেই ডাক্তাররা রিং লাইগেশনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

যে সকল রোগীর রিং লাইগেশন প্রয়োগ করা হয় না তাদের লেজার থেরাপি পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয়। লেজার থেরাপি ও রিং লাইগেশনের এর মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য নেই। এই পদ্ধতিতে একটি লেজার বীমের মাধ্যমে আক্রান্ত সেলগুলোকে ঠিক করা হয়। আর রিং লাইগেশনে পাইলস কেটে অপসারণ করা হয়। এই দুইটি পদ্ধতিতেই পায়ুপথের কিছু অংশ কাটার প্রয়োজন হয় যার কারনে একই পরিমাণের কষ্ট অনুভব করতে হয়। পায়ুপথের অস্ত্র প্রচার করার কারণে ক্ষত হয় আর এই ক্ষত শুকাতে অন্য সাধারণ ক্ষতর চাইতে একটু বেশি সময় নেই। এটি  ক্ষত ঠিক হতে ১ থেকে ২ মাস সময় লাগে ।

পাইলসের এলোপ্যাথিক ঔষধের নাম:

পাইলস সারানোর জন্য কিছু এলোপ্যাথিক ঔষধ আছে। এ ওষুধগুলো  দীর্ঘ জ্বালাপোড়া, চুলকানি, ব্যথা, রক্তপাত ইত্যাদি  উপসর্গ নিরাময় করে। চলুন তাহলে জেনে নেই পাইলসের এলোপ্যাথিক ঔষধ গুলো সম্পর্কে:

১)Daflon 1000mg: দীর্ঘদিন ধরে যারা পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন তাদের চিকিৎসায় এ ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে, বেশি পাইলস হলে প্রথম চার দিন সকালে, দুপুরে, রাতে, ১ টি করে খান। ও পরবর্তী তিন দিন শুধু সকালেও রাতে ১ টি করে খান। দীর্ঘস্থায় পাইলসের জন্য সকালে একটি করে টানা তিন মাস খান।

২)Normanal 500mg: পাইলসের এলোপ্যাথিক ঔষধ গুলোর মধ্যে এটা বেশ কার্যকর। যাদের মলদ্বারে ফোলা, তীব্র জ্বালা যন্ত্রণা ,পায়খানা করার পর রক্ত যায় ও প্রচুর ব্যথা হয়, তাদের জন্য এই ওষুধটি।

খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে, টানা ১মাস প্রতিদিন সকালে, দুপুরে ও রাতে ১ টি করে খেতে হবে। আর যখন পাইলস মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে আসবে তখন সকালে দুপুরে ও রাতে ১ টি করে টানা এক মাস খেতে হবে।

৩)Daflon 500mg: পাইলস এর চিকিৎসায় এই ওষুধটি বেশ কার্যকর। খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে, প্রথম তিনদিন সকালে দুপুরে ও রাতে ২টি করে খাবেন, এরপর তিনদিন সকালে ও রাতে ২টি করে খাবেন। এরপরের ১৫ দিন সকালে ১টি ও রাতে ১টি করে খাবেন।

৪) Erian: এই মলমটি পাইলসের কারণে হওয়া জ্বালাপোড়া ব্যথা চুলকানি ইত্যাদি উপশমে কাজ করে।

৫) Lignocain gel: পায়খানা করার সময় জ্বালা যন্ত্রণা কমানোর জন্য এই জেলটি ব্যবহার করতে পারেন। পায়খানা যাওয়ার 15 মিনিট আগে এটি ব্যবহার করুন।

৬) Osmolax: পাইলসের সমস্যা সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রতিদিন রাতে তিন চামচ করে এই সিরাপটি খান।

পাইলসের হোমিও ঔষধের নাম

পাইলসের জন্য কয়েকটি ভালো হোমিও চিকিৎসা আছে। নিয়মিত হোমিও ঔষধ সেবন করলে পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়া যায়। হোমিও চিকিৎসায় চিকিৎসকরা  পাইলস রোগের চিকিৎসার জন্য সকালে সালফার এবং সন্ধ্যায় নাক্স ওষুধটি দিয়ে থাকেন। এই দুইটি ঔষধ   সরাসরি পাইলসকে  নিরাময় করে না তবে কোষ্ঠকাঠিন্যকে নিরাময়ের এর মাধ্যমে পাইলসকে  নিরাময় করে। চলুন তাহলে  পাইলসের কিছু হোমিও ঔষধের নাম জেনে নেই:

১) নাক্স 

২)সিপিয়া

২)এলু সকোট্টিনা

৩)পিউনিয়া

৪)  এস্কিউলাস হিপ

৫)নাইট্রিক এসিড

৬) গ্রাফাইটিস

৭) হেমামেলিস‌

৮) মিউরেযেটিক এসিড

৯) সালফার 

পাইলস হলে যে খাবারগুলো খাবেন

প্রচুর পরিমাণে পানি ফাইবার সমৃদ্ধ ফল কিংবা শাক-সবজি, মটরশুঁটি, ডাল,গাজর ,ফুলকপি,আঙ্গুর, কিসমিস,ঢেঁকিতে ছাটা চাল, পেপে, পেঁয়াজ,কলা, আলুবোখারা, আপেল, টমেটো, শসা, বাঁধাকপি ইত্যাদি।

পাইলস হলে যা খাবেন না

পাইলস রোগের যে খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা:

১)পনির বা চিজের মত দুগ্ধজাত খাবার।

২)চা ও কফি 

৩)মাংস 

৪)অতিরিক্ত মসলা যুক্ত খাবার

৫)চিপস 

৬) ময়দা ও চিনি

 ৭) দুধ

৮)ফাস্টফুড 

৯)ধূমপান

১০) মদ 

১১) আইসক্রিম

পাইলস এবং মলদ্বার ফিসারের মধ্যে পার্থক্য কি

মলদ্বারের ফাটল ও পাইলস একই ধরনের উপসর্গ সৃষ্টি করে। যেমন ,চুলকানি, ব্যথা ও রক্তপাত। ফুলে যাওয়া শিরা পাইলসের সৃষ্টি করে ।আর মলদ্বারে আস্তরণ ছিড়ে গেলে তাকে মলদ্বারের ফিসার বলে। এই উপসর্গগুলো দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন এবং পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নিবেন।

অন্য কোন অবস্থার কারণে পাইলসের উপসর্গ দেখা যায়

বিভিন্ন গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডিসঅর্ডার, রেকটাল  রক্তপাত ইত্যাদি পাইলসের মত উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। এর মধ্যে এমন কিছু রোগ আছে যা জীবনের জন্য হুমকিস্বরপ। এই কারন এই লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

অন্ত্রের রোগ যা রক্তপাতের কারণ হতে পারে:

১) আলসারটিভ কোলাইটিস

২) ক্রোনের রোগ।

৩) কোলন ক্যান্সার।

পাইলসের জটিলতা

পাইলস তেমন গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি না করলেও কখনো কখনো অস্বস্তিকর ও বেদনাদায়ক হতে পারে। তবে কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পাইলস জটিল আকার ধারণ করে। যেমন:

১) বাহ্যিক পাইলসে রক্ত জমাট বাঁধা

২) সংক্রমণ।

৩) রক্তশূন্যতা।

৪) স্কিন ট্যাগ।

৫) স্ট্র্যাংগুলেটেড‌ পাইলস।

সবশেষে,

ঘরে বসেই পাইলস সমস্যার সমাধান করা যায়। একটু নিয়ম করে চললেই পাইলস বা অর্শ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এবং পাইলস রোগকে অবহেলা না করে এর লক্ষণ গুলো প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন। সঠিক চিকিৎসা এবং নিয়মকানুন মেনে চললে পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

আরো পড়ুন –

 

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents